আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

ভাগ বসানো মেয়ে....

ভাগ বসানো মেয়ে....

আমি যে কলেজ টায় পড়তাম সেটা ছিল স্কুল এন্ড
কলেজ। সেদিন ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের
মহড়া চলছিল, মহড়া দেখতে আমার মত আর
অনেকে হাজির।
অডিটরিয়ামে কি একটা সেমিনার চলছিল তাই
বানিজ্য ভবনের ছোট্ট ক্লাসটাই মহড়া হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি ই শেষে আসলাম
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার পিঁছু পিঁছু আরও
একটি মেয়ে আসল, বসার জায়গা নেই, আমি ছোট্ট
একতা ধুলোমাখা বেঞ্চ পেলাম
ঝেঁড়েঝুঁড়ে বসে পড়লাম। মেয়েটি বসার কোন
জায়গা না পেয়ে দাড়িয়ে আছে, আমি কি বলব
পাশে বসতে? আবার কি না কি মনে করে?
ভাবতে লাগলাম্, অবশেষে বললাম- এই
যে আপনি চাইলে আমার পাশে বসতে পারেন,
আমার বলতে দেরী হল মেয়েটির বসতে দেরী হলনা, একটা ধন্যবাদ দিলনা।
মহড়া দেখার পাশাপাশি আঁড়চোঁখে আমাকে ও
দেখছিল, আমি যে দেখছিলামনা তা না,
তাইতো কয়েকবার চোঁখাচোঁখি হয়ে গেল। আমার
সিটে ভাগ বসিয়ে পুরো মহড়াটাই দেখল অথচ
আমার সাথে একটা কথাও বললনা। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি, এসময়
টা তে রিক্সা পাওয়া অনেক কষ্টকর।
অবশেষে একজন কে আসতে দেখে আমি ডাক
দিয়ে থামতে বললাম, পিছন থেকে আরও কে একজন
থামতে বলল, ফিরে দেখি সেই মেয়েটি। যেহেতু আমি আগে ডেকেছি তাই আমি পেলাম
রিক্সাটি, মেয়েটি হতাশ
ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। হতাশ হবারই কথা এ
সময় টা তে রিক্সা পেতে বহু হিমশিম
খেতে হবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে বসল,
- সজীব ভাইয়া, আমাকে কি নেয়া যাবে সাথে?
আমিতো থ বনে গেলাম তার মুখে আমার নাম শুনে,
- আপনি আমাকে চিনেন?
- না চেনার কি আছে? আপনাদের বাসার তিন
তলায় তো থাকি আমরা, নতুন এসেছি, আপনি চিনবেন কিভাবে সারাদিন তো বই
নিয়ে রুমেই পড়ে থাকেন্।
- আচ্ছা বসেন, আমি তাকে আমার পাশে বসার জন্য
ভাগ দিয়ে দিলাম। বাসায় পৌছলাম দুজনে। সুমির কথা বলছি, সে ক্লাস নাইনে পড়ে মাত্র,
আমাদের বাসায় এসেছে গত
মাসে আগে আশেপাশে কোথায় জানি থাকত। আমি ছোট বেলা থেকেই ঘরকুনো, আমার
রুমটা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মনে হয়,
বেশির ভাগ সময় আমার খাবার আম্মু
রুমে নিয়ে আসে। তাই নতুন ভাড়াটিয়া কে এল
কে গেল আমি জানিওনা। এরপর থেকে প্রায় আমার
সাথে আসা কিংবা যাওয়া হয়ে যেত কলেজে।
আমাদের বাসায় ও আসা বেড়ে গেছে সুমির,
আম্মুকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করত, আম্মু ও
ওর ভক্ত হয়ে গেছে দেখলাম। শীতকালে চিতই পিঠা টা আমার খুব প্রিয়, তবে ২
টার বেশি খেতে পারিনা। সেদিন আমার
রুমে আম্মু নাস্তা রেখে গেল, দেখি একটা মাত্র
পিঠা, মাকে বললাম একটা কেন? মা বললেন, ২
টাই রেখেছিলাম
একটা সুমি এসে খেয়ে ফেলেছে। দেখেন তো কেমন লাগে ? শেষ পর্যন্ত দেখি এই
মেয়ে আমার খাবারেও ভাগ বসাতে শুরু করেছে। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন শুনলাম আমার
রুমে এসে আমার অনুপস্থিতে আমার ল্যাপটপ, বই
নিয়ে ঘাটাঘাটি করে.. এইচ,এস,সি পরীক্ষার পর আমার
সেনাবাহীনি তে চান্স মিলে গেল, চট্টগ্রামের
ভাটিয়ারি তে চলে গেলাম ট্রেনিং এ, মা আমার
একা হয়ে গেলেন, সুমি হয়ে উঠলো আম্মুর একমাত্র
বন্ধু, সহযোগী সব কিছু। ট্রেনিং এ থাকাকালীন একদিন ফোন করলাম,
সুমি ই ধরল ফোনটা। - আন্টির শরীর খারাপ, তাই
আমি রান্না টা করে দিচ্ছি, আংকেল
এখনো আসেনি বাসায়।-সুমি, আমার মায়ের
দিকে একটু খেয়াল রেখ,
- আবার আমাকে খোঁচা দিবেন না তো আপনার মা'র
ভাগ বসাচ্ছি বলে? - না, দিবনা। মা 'র সাথে কথা হলেই শুধু সুমি'র কথা বলে,
আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা সুমি ঠিকই আমার
মা'র ভাগটাও নিয়ে নিয়েছে। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা, আমার
পোষ্টিং তখন রাঙামাটি। হঠাৎ খবর আসল আম্মু
অসুস্থ। সি,ও থেকে ছুটি মিলার পর
আমি ছুটে চললাম বাড়ির দিকে, একদম
বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া লাগেনি, আম্মু কে সদর
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোট্ট একটা অপারেশন করা হয়েছে আমি জানতাম না,
আমাকে জানানো হয়নি। রক্তক্ষরণ হয়েছে আম্মুর্, রক্তও দেয়া হয়েছে।
সুমি নাকি আম্মুর জন্য রক্ত দিয়েছে। সুমির
প্রতি কেন জানি মাথা নত
হয়ে আসতে থাকে আমার। আমাদের কেউ না অথচ
সব কিছুতেই আছে। এতদিন ভাবতাম শুধু ভাগ
নিয়ে যাচ্ছে আজ দেখলাম মেয়েটি ভাগ দিতেও জানে। আমার আম্মুর শরীরের রক্তেও এখন তার
ভাগ আছে। আম্মুর অপারেশন পর একদম দূর্বল হয়ে পড়েছেন।
কাজকর্ম তো দূরে থাক তাকে দেখতেও একজন
লাগে, সুমির এইচ,এস,সি, পরীক্ষা শেষ, তাই তার
অবসর থাকায় সে ই দেখছে আম্মু কে। আমার বিয়েটা একদম জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে,
মেয়ে দেখা হচ্ছে, আম্মুর কাছে ঘুরেফিরে সুমির
কথায় শুনছি, শেষ পর্যন্ত- আমার সব কিছুতেই
ভাগ বসানো মেয়েটিকেই ঠিক করা হল আমার
জীবনের ভাগ বসানোর জন্য। বাসর রাতে সুমি কে বলা আমার প্রথম
কথা কি ছিল জানেন? 'মেয়ে, শেষ পর্যন্ত তুমি আমার জীবনেও ভাগ
বসালে'? তবে একটা জিনিসে তুমি না কেউ ই ভাগ
বসাতে পারবেনা, সেটা হচ্ছে তোমার
প্রতি আমার ভালবাসা। সুমি ঘোমটা টা একটু
সরিয়ে বলল- 'আমারো'। আমাদের দুজনের ভালবাসাবাসি চলতেই থাকে।
আমার আম্মু ও এতদিনের বন্ধু,
সহযোগী কে পুত্রবধু হিসেবে পেয়ে খুব খুশী। সুখ
দুঃখ ভাগাভাগি করেই আমাদের সংসার চলছে। জানেন? এ মুহূর্তে অনেক খূশি লাগছে আমার।
একটু আগে সুমি ফোন করে জানালো আমাদের
দুজনের ভালবাসায় ভাগ বসাতে একজন
অথিতি আসতে যাচ্ছে। রেশমা আন্টি, আম্মুর
খালাতো বোন, গাইনি ডাক্তার, একটু আগে আম্মু
আর সুমি তার চেম্বার থেকে আসল। এসেই আমাকে ফোন টা করল। পাঠক আপনারাও আসুন আমাদের সুখের
সংসারে ভাগ বসাতে, আমাদের নতুন অতিথির
নামটা ঠিক করে দিয়ে ।

আমার কোচিং কাল এবং উইপোকা সুন্দরীর গল্প

তখন এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ। কোচিং শুরু করবো ভর্তি পরীক্ষার জন্যে। ঠিক করতে পারছিলাম না কোথায় কোচিং করা যায়। যখন ঠিক করলামতখন কিছুটা দেরিও  হয়ে গেছে। এক ভাইয়া বেশ ভালো পড়ানতার কাছে যেয়ে বললামপড়তে চাই। সমস্যা হলকোন ব্যাচেই জায়গা নেই।  নতুন একটা ব্যাচ শুরু হয়েছেসেই ব্যাচের বেশিরভাগই মেয়ে। ভাইয়া কোন উপায়ন্তর না দেখে আমাকে সেই ব্যাচেই ঢুকিয়ে দিলেন।


সুবোধ বালকের মতো আমার কোচিং কাল শুরু হল। কয়েকদিনের মাঝেই টপাটপ কয়েকটা পরীক্ষায় বেশ ভালো করে ফেললাম। প্রতিদিন পরীক্ষায় সবার উপরে থাকার অদম্য আগ্রহ মাথা চারা দিয়ে কেন উঠেছিল জানিনা।  এখনো মাঝে মাঝে ভাবিকি আতেলটাই না ছিলাম!! আর এখন?? এখনকার কথা না বলাই ভালো!!!

অবশ্য রমণী প্রধান ব্যাচে থেকে তাদের চেয়ে বেশি পাওয়ার আনন্দ পুরাপুরি পৈশাচিক। আমার পড়াশুনার আগ্রহ তিনগুন বেড়ে গেলো। তার একভাগ ও যদি এখন থাকতো! ইশ,ভাবতেও দুঃখ লাগে!!

 যাই হোক, এখনকার কথা বলে লাভ নেই। বরং গল্পে ফেরত যাই। রমণীপ্রধান ব্যাচে থাকলে যা হয় আর কি, কাউকেই চোখে লাগেনা।  এমনসময় একদিন ব্যাচের এক সুন্দরী ললনা আমার কাছে এসে উপস্থিত হইলেন। কয়দিন ধরেই খেয়াল করছিলাম,রমণীর ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার না!! ব্যাচের বাকি যে দুটো ছেলে ছিল, তারাও আমাকে বার বার খোঁচাত এই বলে যে উনি নাকি আমার প্রতি একটু অনুরক্ত। আমি তাই একটু দূরে দূরে চলতাম। কিন্তু যা ভয় করেছিলামতাই হল। 

সুন্দরী এসেই শুধালেন -
“এ্যাই শোনতুমি ইংলিশ গ্রামার কোন বই থেকে পড়?
 মনে মনে ভাবলাম বলে দেই যে-ইংলিশ গ্রামার ওরকম ভাবে কোন বই থেকে ঘটা করে পড়া হয়না। পরক্ষনেই ভাবলাম- এটা বলার পর যে প্রশ্নগুলি শুনতে হতে পারে, তা হল-
“তাহলে এতো বেশি নম্বর পাও কি করে!!!?”
“দৈনিক কয় ঘণ্টা লেখা পড়া করো?”
“না পড়ে গ্রামার পারলে তো তোমার বেসিক নিশ্চয়ই ভালো, এতো ভালো বেসিক কি করে হল?”
এরকম প্রশ্ন করে ফেললে আমি খুব বিপদে পড়ে যাবো। কারন এর কোনটারই উত্তর আমার জানা নেই। তাই প্রশ্নবাণের হাত থেকে বাচার জন্য ঠাস করে বলে দিলাম-

“এইতোমহিউদ্দিন-কাসেম এর বইটা থেকে গ্রামার পড়ি। কেন?
রমণী কইলেন-
“ওশোনআমার বইটা না উই পোকায় কেটেছে। তুমি কয়েকদিনের জন্যে তোমার বইটা আমাকে একটু ধার দিতে পারবে?

(আশ্বস্ত হলাম শুনেখালি বইই তো চাইছে,আর তো কিছুনা।) হ্যা হ্যা,অবশ্যই। দিতে পারবো।“

যদিও আমার এই বিনয়ী উত্তরই বোধহয় কাল হল।

“এ্যাই শোনতোমার ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে?

সেরেছে!!! প্রথমে বইপরে ফোন নাম্বার!!! তার পরে আর কি চাইবে তা ভেবে মন শংকিত হল।

“ক্যানফোন নাম্বার দিয়ে কি হবে?”
“না মানেতুমি যদি ভুলে যাও আনতেতাই রাতে মনে করিয়ে দিতাম আর কি।

“না না !!! আমার ভুল হবে না  আমি ঠিক নিয়ে আসবো চিন্তা করোনা।  এই বলে ভুজুং ভাজুং দিয়ে সটকে পড়লাম।

বাসায় এসেই সবার আগে ব্যাগে বই ভরলাম। কোনোমতে ভুলে গেলে বিশাল দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে!!!দুর্ঘটনা ঘটাতে চাই না। এমন অবস্থা যে নাও বলতে পারিনাবলবে-“ভালো ছাত্রতাই দেমাগে তোমার মাটিতে পা পড়েনা।

কি যে অবস্থা!!! :s

পরের দিন রমণীর আগমনের সাথে সাথেই তার হাতে বইখানা ট্রান্সফার করলাম। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছিলাম, আবার কি না কি বলে বসে!

বই পেয়ে রমণী আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল- “আমি তোমাকে দু দিনের মাঝেই বইটা ফেরত দিবো চিন্তা করোনা তোমাকে অনেক থ্যাংকস ।

ইয়েতবে তুমি আমার ফোন নাম্বার টা রাখতে পারো। 

আবারো ফোন নাম্বার !!! আমি আকাশ থেকে পড়লাম – “তোমার ফোন নাম্বার রেখে কি হবে 
“না মানে এবার যদি আমি বইটা আনতে ভুলে যাই- রমণী বললেন,তাহলে তুমি মনে করিয়ে দিতে পারবা। 

“না নাআমার বই লাগবেনা ওটামাথা নাড়লাম আমি !!! আমার আরেকটা বই আছে।”(আসলে বই নাই দরকার হলে কিনে নিবো একটা তবু মাফ চাই)

পরপর দুবার ব্যর্থ হয়ে রমণী চরম অপমানিত বোধ করলেন বোধহয়।
রমণীর লাস্যময়ী দৃষ্টি ক্রমেই বিষদৃষ্টিতে রুপান্তরিত হইলো। আর কিছু না বলে নিজের বেঞ্চে ফেরত যেয়ে হাঁড়ির মতো মুখ করে বসে রইলো। 

এই ঘটনায় ব্যাচের বাকি রমণীরা যে বিশেষ পুলকিত হয়েছিলোতা পরে বেশ বুঝেছি। তাদের হাসাহাসির জন্য রমণী বেশ কয়েক সপ্তাহ অনুপস্থিত থাকলেন। পরে অবশ্য বই একটা কিনতেই হয়েছিলো আমার। :p

১৫ দিন পরে পরীক্ষা দিচ্ছি, এমন সময় বেঞ্চে ঠাস করে কোন একটা ভারী বস্তু অবতরন করলো। চেয়ে দেখি সুন্দরী হন হন করে হাটা দিয়েছেন। বইখানা তার মালিকের  কাছে আবারো ফেরত আসলো।
-তারপর? তারপরে কি হল?
তারপরে যা হওয়ার তাই হল। কেউ তো কারো জন্য সারাজীবন বসে থাকবেনা। কিছুদিন পরে আমার এক বন্ধুর সাথে উইপোকা সুন্দরীর প্রেম হয়ে গেলো।
-তারপর?
তারপর, তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।
এটা কোন কষ্টের গল্প নয়। এখানে কোন বিচ্ছেদও নেই। যে আমার জীবনে আসেইনি কখনো তার সাথে বিচ্ছেদ কি করে হয়? ভালোবাসা কাকে বলে, তখনো জানতাম না। হয়তো তখনো শিখিনি কিভাবে ভালবাসতে হয়। হয়তো ভালবাসতে শিখিনি বলেই এই গল্পের শেষে কোন দুঃখ নেই। পরে অবশ্য জেনেছিলাম ভালোবাসা কাকে বলে। সেটা অন্য গল্প। আরেকদিন বলবো।
অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আমার বন্ধুর প্রতি উইপোকা সুন্দরীর ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি। আমার বন্ধুও তার প্রেয়সীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে। আমি দুর থেকে আমার বন্ধু আর উইপোকা সুন্দরীকে দেখি।
 তাদের ভালোবাসা দেখতে আমার বড় ভালো লাগে।

একটি দূর্ঘটনা ও ভালোবাসা"

শায়লার পাশে চুপচাপ বসে আছে শান্ত। শান্ত মোটেও কোন শান্ত মানুষ নয়! তবে মাঝে মাঝে যখন শান্ত থাকে তখন তার দিকে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে শায়লার! তবে এই সুযোগ সে খুবই কম পায়। কেননা, এই শান্ত যতক্ষণ না বাসায় থাকে ততক্ষণ খুবই অশান্ত থাকে! শান্ত ও শায়লা দুজনই এখন গাড়ীতে, গন্তব্য হাসপাতাল!

প্রায় দেড় বছর আগের এক কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায় শান্ত ও শায়লার বিয়ে হয়! এটা কোন লাভ ম্যারেজ ছিল না, উভয় পক্ষের মুরুব্বীদের ইচ্ছায় ঘটে যাওয়া অ্যারেন্জ ম্যারেজ। বিয়ের আগে তারা দুজন দুজনকে চিনতও না! বিয়ের পরই শায়লা ও শান্ত একে অন্যের পাশে আসল! শায়লা সবসময়ই ভাবত, সে যেন এক স্বপ্নের মাঝে আছে! দেড়টা বছরে সেশান্ত কে অনেক অনেক ভালোবেসেছে, কাছে এসেছে, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেছে! আর এখন শায়লা তার শরীরে অনুভব করছে নতুন প্রাণের অস্তিত্ব, দেহে বয়ে বেড়াচ্ছে তার নিজের ও শান্তর মিলিত সত্ত্বাকে!

হাসপাতাল থেকে ফিরছে দুজন, ডাক্তার জানিয়েছে তাদের মেয়ে হবে! খুশীতে আত্মহারা শায়লা বুঝতে পারছে না সে যে কী করবে! শুধু শক্ত করে শান্তর হাতটা চেপে ধরে রাখছে! প্রাণ ভরে দেখছে শান্তর দুষ্টামী মাখা হাসিটা! আহ্, কী সুখ!

হাসপাতালে শুয়ে আছে শায়লা! এই মাত্র সে তার কন্যাটির জন্ম দিল! মেয়েটি কী ফুটফুটে! কিন্তু এ কী! মেয়ের মুখ দেখে সবাই হাসছে না কেন ?শান্তরও দেখি মুখ কালো! কী হল?

কিছুক্ষনের মাঝেই সবকিছু পরিষ্কার হল শায়লার কাছে। তার কলিজার টুকরা, চোখের মণি, তার মেয়েটি তার কথা বলার শক্তিটা কোথায় যেন হারিয়ে রেখে এসেছে! তাতে কী হয়েছে? শায়লা ভাবে, সবারই কথা বলতে হবে এমন কী কোন কথা আছে !?শায়লা এভাবেই হিসাব মিলতে থাকে, কিন্তু হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হয় শান্ত।

শায়লার মেয়ে স্মরণের আজ তৃতীয় জন্মদিন! স্মরণ কথা বলতে না পারলেও সবই বুঝতে পারে। সে বুঝতে পারে, সে আলাদা। সবাই কত কথা বলে, কিন্তু সে পারেনা! সবাই তাদের বাবা মায়ের সাথে কত্তো আদরে ভালোবাসায় থাকে। কিন্তু স্মরণ জানে, তার মা ছাড়া আর কেউ তাকে ভালোবাসেনা। ছোট্ট স্মরণ এটাউ বুঝতে পারে যে, সে অন্যরকম বলেই তার বাবা তাকে নিয়ে তার মার সাথে থাকেনা। স্মরণ অনেক বার তার বাবার ছবি দেখেছে। ছবিটা দেখলেই তার মনে হয় ঝাঁপ দিয়ে সে তার বাবার বুকের ওপর পড়ে! কিন্তু সামনা সামনি কখনো দেখলে সে আর এমন চিন্তা করতে পারে না!বরং ভয় পেতে থাকে!

শান্তর হঠাৎ ঐ পরিবর্তন শায়লার আজও অবাক লাগে! এই মানুষটাকে সে এত্তো ভালোবেসেছিল! এই মানুষটা তাকে এত্তো ভালোবেসেছি! যে কি না নিজের সন্তানের জন্মের এক বছর পর শায়লাকে উপহার দেয় একটি ডিভোর্স লেটার! স্মরণের জন্মের পর এটিই ছিল শয়লার জন্য তার প্রথম উপহার! মাথার উপর ভাঙা আকাশ, চোখের উপর ভাঙা স্বপ্ন আর বুকের মাঝে স্মরণকে জড়িয়ে রেখেই সে সাইন করে দিয়েছিল।

স্মরণের জন্মের পর শান্ত আবার বিয়ে করে মুক্তিকে। সে আজ প্রায় সাত বছরের ঘটনা। বিয়ের দুই বছর পর মুক্তি জানল সে কখনো মা হতে পারবে না। শান্তও জানল, তার দ্বিতীয় স্ত্রীও তাকে `বাবা' ডাকটি শুনাতে পারব না। ঐদিনই শান্তর আকাশ ভাঙতে থকে।তার নে পরতে থাকে স্মরণর কথা। কিন্তু সে ফিরে যেতে পারে না।এইবার তাকে বাধা দেয় তার বিবেক।

কাফনে মোড়ানো মুক্তির দেহটির পাশে বসে আছে শান্ত। মুক্তি বুঝতো, শান্ত তার সাথে যে ব্যবহারটা করে তা তো তার নিজেরই দোষে। সেই তো ব্যর্থ হল শান্তকে `বাবা' ডাক শুনাতে। দীর্ঘ সাতটি বছর পর তাই আজ মুক্তি চিরতরে মুক্তি দিল শান্তকে, মুক্তি পেল স নিজেও।

মুক্তির মৃত্যুর ১৪ দিন পরঃ স্কুল থেকে ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করেছে স্মরণ। সে হাসপাতালে। ডাক্তার বলেছে, ভয় নেই, ভালো আছে স্মরণ। তবু শয়লার চিন্তা কমে না।৭টি বছর সে একলাটি পার করেছে স্মরণের সাথে।অতীত মনে করে শায়লা-স্মরণের জন্ম, শান্তর চলে যাওয়া, হঠাৎই তার মন হয়, আজ যদি শান্ত থাকত!দুহাত মাথা চপে ধরে সে । এমন সময় তার পিঠ স্পর্শ করেকটি হাত- শান্ত।শান্ত ক্ষমাপ্রার্থী, তার মেয়ের কাছে, স্ত্রীর কাছে।

স্মরণ সুস্থ হয়ে ফিরল বাসায়! জীবনে প্রথমবারের মত সে দেখতে শুরু করল মা বাবা তাকে একসাথে ভালোবাসছে! সত্যিকার ভালোবাসা!

লিখেছেন-Porir Mey Meghoboti

জীবনসঙ্গী

চারপাশে হৈ চৈ, বাড়ী ভর্তি মানুষ। সবার মাঝে চাঞ্চল্য, সব মিলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। হ্যাঁ, উৎসব ই তো। এ বাড়ীতে আজ বিয়ে। একটি ঘরে নানা বয়সী মেয়ে-মহিলাদের হট্টগোলের মাঝে বসে আছে “অবন্তি”। আজ অবন্তি-র বিয়ে। কিন্তু আর দশটা কনের মতো এসব কিছুই সে উপভোগ করছেনা। চারপাশের এই কোলাহল, উৎসব কিছুই যেন তাকে স্পর্শ করছেনা। খুব সুন্দর করে কনে সাজানো হলেও একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় যেন সে প্রাণহীন। স্থির দৃষ্টি, নেই কোন চাঞ্চল্যতা।
একটু আগেও সে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে, চোখ ফুলিয়েছে। কিন্তু এখন চাইলেও কাঁদতে পারছে না। এক মুহূর্তেই মন যেন তার পাথরের চাইতেও কঠিন হয়ে গিয়েছে। বুকের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে, চেহারায় তা ফুটেও উঠছে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও মনের কষ্টগুলো চোখ দিয়ে বের করতে পারছে না অবন্তি। কেন তার সাথে এমন হলো তার কোন হিসেব অবন্তি মেলাতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার শরীরে কেউ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, প্রচণ্ড ভারী এই শরীর নিয়ে সে টলছে। প্রচণ্ড অবসাদ ঘিরে ধরেছে। কি তার অপরাধ? কেন তার জীবনে এমন কঠিন সংকটময় সময়?

ইসহাক করিম ও সায়রা করিম--- অবন্তির বাব-মা। তিন বোনের মধ্যে অবন্তি দ্বিতীয়। দু’বছর আগে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে তার পছন্দের ছেলের সাথে। যদিও বাবা-মার অসম্মতিতে নয়। বড় মেয়ে পাত্র নিজেই পছন্দ করায় ইসহাক সাহেবের প্রথমে যে একটু আপত্তি ছিল না তা নয়। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে পাত্র তারও অপছন্দ হয়নি। ধুমধাম করেই বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। মেজ মেয়ে অবন্তি। স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। জীবন নিয়ে অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী। জীবন কে খুব সুন্দর করে গড়তে চায়, নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে চায়। একমাত্র বিয়ের কথা ছাড়া বাবা-মার খুব বাধ্য মেয়ে অবন্তি। বাবা-মার অসম্মান হয় এমন কোন কাজ সে আজ পর্যন্ত করেনি। তার কাছে তার বাবা-মা ই সব। বাবা-মার একটু সুখের জন্য যে কোন চরম মূল্য দিতেও সে প্রস্তুত। আজকাল অবন্তির মতো এমন একটি মেয়ে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।
-----------------
খাটের মাঝে বসে আছে অবন্তি। ভেবেও কোন কূল-কিনারা পাচ্ছেনা তার দোষ আসলে কোথায়? বিনা দোষে কেন তার এই সাজা? অন্য আর পাঁচটা দিনের মতই আজকের দিনটা শুরু হয় অবন্তি-র। কোন কিছুতেই আলাদা কোন ছোঁয়া ছিল না। দুপুরে খাওয়ার সময় মা তাকে বলল বিকেলে একটু দাদাবাড়ী তে যেতে হবে। অবন্তির বাবা রা দুই ভাই, দুই বোন। চার ভাইবোন আলাদা আলাদা বাড়ীতে থাকলেও মাঝে মাঝে ছুটির দিনে কিংবা উৎসবে সবাই তাদের পৈতৃক বাড়ীতে মিলিত হন। তাই মা বলাতে আজকের দিনটিকেও অবন্তি তেমন কিছুই মনে করেছিল। বরং সে অনেক খুশি হয়েছিল।
কিন্তু অবন্তি যখন আজ এ বাড়ীতে এলো পরিবেশটা তার একটু অন্যরকম-ই লাগছিল। একটা উৎসবের আমেজ রয়েছে, কিন্তু কি উৎসব বুঝতে পারছিলনা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই তাকে ঘিরে ধরলো। যখন জানলো কেন এত সব আয়োজন অবন্তি তার বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আজ রাতে তার বিয়ে। কথাটা শোনার পর ওর মনে হয়েছে ও যেন এক অনুভবশূন্য মানবী। নিজের স্বপ্নগুলোকে ফানুসের মত উড়ে যেতে দেখছিল।
----------------
হঠাৎ ভাবনায় চির ধরলো অবন্তির। বাড়ীর সকলের মধ্যে চাঞ্চল্য বেড়ে গিয়েছে। কারণ, বরযাত্রী এসে পড়েছে। খবরটি শুনে অবন্তির রোমাঞ্চিত হওয়ার বদলে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আর একটু পরেই অবন্তির বিয়ে। সে জানে না কার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে, কে হবে তার জীবনসঙ্গী। ‘জীবনসঙ্গী’... এই শব্দটি নিয়ে, স্বপ্নের পুরুষ কে নিয়ে কত স্বপ্নই না দেখেছিল অবন্তি। তবে কেন এই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা? বুকের মধ্যে কেন এই হাহাকার? তার সাথে এমন কেন হলো, কি তার দোষ? বাব-মার কাছ থেকে এর সদুত্তর অবন্তি পায়নি।
নাহ, বুকের মধ্যের এই হাহাকার অন্য কোন পুরুষের জন্য নয়। অবন্তির অভিযোগ জীবনসঙ্গী নিয়ে কিংবা বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করা নিয়েও নয়। অবন্তি-র অভিযোগ অন্য যায়গায়। তার কষ্ট তার বাবা-মা তাকে বুঝতে পারেনি। তার অভিযোগ এই পন্থায় তাকে বিয়ে দেয়া নিয়ে। বিকেলে তার বাব-মা তাকে যা বলেছে তার সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, বড় মেয়ে নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করায় ইসহাক সাহেবের মনে হয়েছে হয়তঃ অবন্তিও এমন কিছু করতে পারে। কিন্তু অবন্তি কে বিয়ের কথা বললেই ও না করত। বাবা-মার কাছে কিছু সময় চাইত, বলত আগে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপর দেখা যাবে। বিয়ে নিয়ে অবন্তির এমন হেলাফেলায় তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা অবন্তিকে এভাবে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কথাগুলো শোনার পর অবন্তি সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এই কি তবে ছিল কপালে? তার বাবা-মা তবে তাকে এতদিনে এই বুঝেছে!!! অবন্তি ছোটবেলা থেকেই একটু অন্যরকম। এই বয়স পর্যন্ত কখনও তার কোন বয়ফ্রেন্ড হয়নি। সে সবসময় ছেলেদের একটু এড়িয়েই চলেছে। কারণ একটাই, তার বাব-মা। এমন কোন কিছু সে করতে চায়নি যাতে তার বাবা-মা কষ্ট পায়। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোন কাজ সে করেনি যাতে তার বাবা-মার অসম্মান হয়। বাব-মার সম্মানের কথা ভেবে জীবনে অনেক কিছুই সে ত্যাগ করেছে, জীবনটাকে উপভোগ করার অনেক সুযোগ থেকে সে নিজেকে বঞ্চিত করেছে। আর আজ সেই বাবা-মাই তাকে একটুও বুঝতে পারলোনা......?
বরাবরই অবন্তির ইচ্ছা সে বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করবে। কারণ সে জানে তার চাইতে তার বাবা-মা এই পৃথিবীটা কে অনেক বেশি দেখেছে। তাঁদের চাইতে ভালো, উপযুক্ত জীবনসঙ্গী অবন্তি নিজের জন্য বেছে নিতে পারবেনা। এই ইচ্ছেটা আরও প্রবল হয়েছে তার বড় বোনের বিয়ের পর। যেখানে সে জানে বাবা খুশি মনে বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও একটা অতৃপ্তি তাঁর মনে রয়েই গিয়েছে। তাই অবন্তি চেয়েছিলো তার বাবা-মা কে তৃপ্ত করতে। কিন্তু তবুও তাকে আজকের এই দিনটি দেখতে হলো। দোষ তার একটিই, সে আরও কিছুদিন পরে বিয়ে করবে বলেছিল আর বাবা-মা বিয়ের কথা বললে আপাততঃ না করত। কিন্তু তার বাবা-মা সেটাকে ভুল বুঝে নিয়েছে। তাঁরা ভেবেছে হয় অবন্তি বিয়ে করতেই চায়না অথবা নিজের পছন্দে বিয়ে করতে চায়। তাই তাঁদের মনে হয়েছে এটাই অবন্তিকে বিয়ে দেয়ার সবচেয়ে ভাল পন্থা।
------------------

এইমাত্র অবন্তির বিয়ে হয়ে গেল। সব কষ্ট সহ্য করে অনেকটা যন্ত্রের মতোই সে সম্পূর্ণ অচেনা একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল বলল। কারণ সে তার বাবা-মা কে কথা দিয়েছে তাঁদের এতটুকুও সম্মানহানি সে করবে না। এভাবে বিয়ে দেয়ার কারণ জানার পর অবন্তি বিয়ে করতে রাজি হয়নি। সে বলেছিল তার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে, তাকে ভুল বোঝা হয়েছে। তার বাবা-মা তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, তাকে তাঁদের সম্মান রক্ষা করতে বলে। তাঁরা বলে তাঁদের হয়ত বুঝতে ভুল হয়েছে কিন্তু তাঁরা অবন্তির অমঙ্গল চায়না, তার কোন ক্ষতি তাঁরা করেনি। অবন্তি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল; বলেছিল, আমার সাথে বড় অন্যায় করলে তোমরা। আমি তোমাদের অবাধ্য ছিলাম না, শুধু নিজের জীবনের কিছু স্বপ্ন পূরণের সময় চেয়েছিলাম তোমাদের কাছে। তোমরা তাতেই ভুল বুঝলে। এই তোমাদের পছন্দেই বিয়ে করতাম আমি, কিন্তু তোমরা তা বুঝলে না। যেই মুহূর্তগুলো আমার জন্য হতে পারতো আনন্দময় তাতেই তোমরা আজ ভরে দিলে তিক্ততা। বাবা-মা কে নিয়ে করা আমার আজ পর্যন্তের সকল অহংকার কে তোমরা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিলে। আমি তোমাদের সম্মান রক্ষা করবো, আমাকে যা বলবে তাই করবো। কিন্তু আমার সততার মূল্য তোমরা দিলে না। বাবা-মা কে কষ্ট দেয়ার আর পাঁচটা মেয়ের সারিতে তোমরা আমাকেও ফেললে। কোন মেয়ে যে তবে আর এতটা বিশ্বাস তার বাবা-মা কে করতে পারবে না। তোমাদের আমাকে জন্ম দেয়া, লালন-পালনের মূল্যই বুঝি আজ আমাকে দিতে হলো। কিন্তু তোমাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মূল্য আমি পেলাম না। বাবা-মার মুখে চুনকালি দেয়া আর পাঁচটা মেয়ের পরিণতিও আজ আমার হলো। অথচ এর একমাত্র কারণ তোমাদের সামান্য ভুল বুঝাবুঝি। তোমাদের মনের নিছক সন্দেহের মাশুল দিতে হচ্ছে আমাকে। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের একটি দিন হয়ে গেল অভিশপ্ত......
------------------

ফুলে ফুলে সাজানো একটি খাটে বসে আছে অবন্তি। আজ ই ওকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হচ্ছেনা। আজ বিয়েটা হলো, কিছুদিন পরে অবন্তির ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে ঘটা করে মেয়ে তুলে দেয়া হবে। তাই আজ এ বাড়ীতেই ওর ফুলশয্যা। পৃথিবীর আর সব মেয়েদের মতো ফুলশয্যা নিয়ে অবন্তির ও ছিল কতনা স্বপ্ন, কত কৌতূহল। কিন্তু স্বপ্নের সেই রাতটি তার জীবনে পেয়েও সে অনুভুতিশূন্য। এখন পর্যন্ত সে জানেনা কার সাথে সে এই পুরোটা জীবন পার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। অবন্তি তার দাদি-নানি দের কাছে এমন গল্প শুনেছে যে, তাঁদের সময়ে এমনভাবে বিয়ে হতো। কেউ কাউকে দেখত না জানত না, একেবারে ফুলশয্যার রাতে দেখা হতো। শুনে শুনে অবন্তি ভাবতো যে সে বেঁচেছে ঐ সময়ে তার জন্ম হয়নি। কিন্তু, অবন্তি কখনও স্বপ্নেও ভাবেনি যে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া উন্নত বিশ্বের এই সময়ে জন্মেও অবন্তির ভাগ্যে সেই আদিম রীতিই লেখা ছিল।
হঠাৎ ই দরজার শব্দে অবন্তি সচকিত হল। তার বোন-ভাবিরা একজনকে তার ঘরে নিয়ে এলো। তাদের কোন খুনসুটি, হাসিঠাট্টাই অবন্তি কে স্পর্শ করলো না। অবন্তি নিশ্চুপ।
অচেনা অজানা সেই মানুষটি এখন তার পাশে বসা। ঘরে পিনপতন নিরবতা। অবন্তি বুঝতে পারছে না সে কি করবে, কি বলবে। কি ই বা বলার আছে তার? ইচ্ছে করছে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যেতে। তার মনে হচ্ছে সে একটা ঘোরের মধ্যে আছে। এই মুহূর্তে তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো পাশে বসা মানুষটির উপর। সে নিজে না হয় একটি ভুল বুঝাবুঝির শিকার, কিন্তু এই মানুষটির কি সমস্যা? সে কিভাবে না দেখেই একটি মেয়েকে বিয়ে করতে রাজী হলো? সে চাইলে তো অবন্তি কে আজ অন্তত এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

পাশ থেকে গলা পরিষ্কার করার শব্দ এলো।
- অবন্তি, তুমি কি একটু আপসেট?
- (অবন্তি নিশ্চুপ)
- কিছু বলবে না?
- (অবন্তি এবারও নিশ্চুপ, তার চোখ দু’টো দেয়াল ঘড়িতে স্থির)
- তোমার মনে অনেক কষ্ট জমে আছে, তাই না? শেয়ার করবে আমার সাথে?
- এবার অবন্তি একটু যেন ঝাঁঝিয়ে উঠলো..... আমি না হয় জানতাম না কিন্তু আপনার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আমার মতো নয়? আপনি তো নিশ্চয়ই জানতেন। তো আপনি কিভাবে একজন অজানা অদেখা মেয়েকে এভাবে বিয়ে করতে রাজী হলেন?
- বিশ্বাস করো, তুমি যেভাবে ভাবছো আসলে তেমন কিছুই না। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে তুমি আমার অজানা কিন্তু অদেখা এটা ঠিক সত্যি হলনা। দেখো, বিয়ের ব্যাপারে আমি আমার বাবা-মার উপর ই নির্ভরশীল ছিলাম। সেক্ষেত্রে তোমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। আর তোমাকে দেখার কথা বলছ? আমার মা তোমাকে কোথাও দেখেছিল। আর আমার দেখা বলতে তোমার একটি ছবি। মার তোমাকে পছন্দ হওয়ার পরে আমাকে তোমার একটি ছবি দেখায়। এখন তোমার ছবি দেখামাত্র তোমাকে ভাল লাগলে আমার কি দোষ বলো?
- (অবন্তি-র চোয়াল শক্ত হল)
- ন্যাকামি করছি না। সত্যি বলছি। তোমার ছবিটি আমি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে তোমার চোখ। কারণ সেখানে আমি দেখেছি অন্যরকম এক সরলতা, যা ঠিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। আমার মনে হয়েছে এই চোখ স্বপ্ন বুনতে জানে, এর আছে সম্পূর্ণ আলাদা এক স্বপ্নজগত। এই চোখ জানে কি করে স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ঐ চোখের স্বপ্নগুলোকে নিজের করে নিতে বড্ড ইচ্ছে হলো। তাই কোন আনুষ্ঠানিক কনে দেখার প্রয়োজন আমি অনুভব করিনি।
- বাহ, আপনার তো তবে ষোল আনাই পূর্ণ...... কিন্তু আমার ???
- আমি মানছি হয়তো তোমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। এ ঘরে আসার আগে ভাবী আমাকে কিছু কথা বলেছে। যতটুকু জানলাম তোমার সাথে হঠাৎ করেই সব হয়েছে, যার জন্য তুমি হয়ত প্রস্তুত ছিলে না। কিন্তু তোমার সাথে কেন এমন করা হলো তার উত্তর তো আমার কাছে নেই অবন্তি।
- আমার প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই নেই।
- তোমার যখন মনেই হয় যে কারও কাছেই তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর নেই, তবে শুধুশুধু এসব ভেবে কেন আমাদের এই মধুর রাতটি নষ্ট করছ বলতো?
- মধুর রাত! মধুর রাতের মধু চাই আপনার তাইতো? দেখুন সম্পূর্ণ সজ্ঞানে যখন আপনাকে স্বামী হিসেবে কবুল বলেছি তখন এই সম্পর্ক তো আর অস্বীকার করতে পারিনা। তাই যেমন আপনি আমার স্বামী, তেমনি কিছু অধিকারও আপনার আছে। আমার উপর আপনার স্বামীর অধিকার আদায়ে কোন বাঁধা আমি দিবনা, তাই স্বামী হিসেবে আপনার অধিকার আপনি আদায় করে নিতেই পারেন। তাতে যদি আপনার মধুর রাতটি মধুময় হয়......... (যন্ত্রের মতো কথাগুলো বলে গেল অবন্তি)।
- অবন্তি !!! আমি জানিনা তুমি কি ভাবছো আমাকে, আমার কথার মানে এমনটা ছিলনা। তুমি নিজে থেকেই এসব ভাবছো। আমার মনের এমন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি তোমাকে কথাটা বলিনি। তোমার মন খুব অশান্ত আছে, তাই এসব ভাবনা আসছে তোমার মনে।
- (অবন্তি নিশ্চুপ)
- তোমার সমস্যাটা কোথায় আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে কিছু না বললে কি করে জানবো?
- (অবন্তি তবুও চুপ)
- আশ্চর্য !!!! আর কত এভাবে চুপ করে থাকবে, আমি জানতে চাই তোমার সমস্যা কোথায় ??? (কথাটা একটু চেঁচিয়েই বলল)
সেই সন্ধ্যা থেকে হাজার চেষ্টা করেও যা অবন্তি পারছিল না সেই কান্না-ই এবার চোখের বাঁধ ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো।
- I’m so sorry. আমার এভাবে হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠা উচিত হয়নি। আসলে আমি কিছু বুঝতে পারছিনা যে কি হয়েছে? I’m really sorry.
- অবন্তি ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
- অবন্তি, প্লিজ এভাবে কেঁদোনা। তোমার সব কথা আমাকে বলো, আমি শুনতে চাই। আমাদের কি তবে কোনও ভুল হলো? তুমি কি তবে অন্য কাউকে......... ?
- আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই না, কাঁদতে কাঁদতেই বললো অবন্তি।
- তাইতো বলছি আমাকে সব কথা খুলে বলো, যেন কোনরকম ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। কান্না থামাও, বলো আমাকে কি হয়েছে?
- অবন্তি নিজেকে একটু সামলে নিল তারপর একে একে সব কিছু বলতে শুরু করলো,
এই মুহূর্তে সব কথা গুছিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। বিয়েটা আমাকে জোর করে দেয়া হয়েছে ঠিক ই কিন্তু বিয়েতে আমার অমতের কারণ অন্য কোন পুরুষ নয়। আমার কষ্ট অন্য যায়গায়। আমার বাব-মা আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি একটু এড়িয়ে যেতাম। কারণ আমার ইচ্ছে ছিল আগে পড়াশোনা শেষ করবো, তারপর নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করবো। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন। তাই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে স্বপ্ন পূরণের পথে কোন বাঁধা চাইনি। বিয়ে নিয়ে আমার এই এড়িয়ে যাওয়াকে বাবা-মা ভুল বুঝেছে। তারা ভেবেছে হয় আমি বিয়েই করতে চাইনা, নয়ত আমার পছন্দের কেউ আছে। আমার বড় বোন নিজের পছন্দে বিয়ে করায় আমার প্রতিও তাঁদের এমন সন্দেহ এসে যায়। কিন্তু আসলে এমন কিছুই না।
আপনাকে যে কথাগুলো বললাম এগুলোই সত্য। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মার খুব বাধ্য। তাঁদের কোন কথায় কখনও দ্বিমত করিনি, তাঁরা কষ্ট পাবে এমন কোন কাজ করিনি। বিয়েটাও বাবা-মার পছন্দে করার ইচ্ছাই ছিল। কিন্তু আমার কষ্ট ওরা আমাকে ভুল বুঝলো, এত কিছু করেও তাঁদের বিশ্বাস আমি অর্জন করতে পারিনি। তাঁরা আমার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টাও করেনি। আমার স্বপ্নগুলোকে ভেঙ্গে দিল। এই বিয়েটা স্বাচ্ছন্দে করতে আমার কোন দ্বিধা থাকতো না। কিন্তু আমাকে এভাবে ভুল বুঝা, হঠাৎ সবকিছু ঘটে যাওয়া আমি মানতে পারছিনা।
একটু থেমে.........
দেখুন, জানিনা আমার কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে কি না। কিন্তু আমি যা বললাম ঘটনা আসলে এটাই। আমি যা কষ্ট পাওয়ার পেয়েছি, আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। কিন্তু আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করবো না। জীবনের আকস্মিক এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে আমার শুধু একটু সময় দরকার।
- হুমম...... তোমার সাথে সত্যিই অন্যায় হয়েছে। কিন্তু স্বস্তি পেলাম এই জেনে যে কোন ভুল হয়নি।

-----------------

ঘরে প্রচণ্ড নিস্তব্ধতা। অবন্তির চোখ দেয়াল ঘড়িতে স্থির। এই ঘরে শুধুমাত্র ঐ ঘড়িটাতেই প্রাণ আছে বলে মনে হচ্ছে। টিক...টিক...টিক...
হঠাৎ অবন্তি তার হাতে অন্য একটি হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো!
- অবন্তি, জানিনা আমাকে তুমি কতটুকু বুঝবে। সব মেয়ের ই নিশ্চয়ই একজন স্বপ্নপুরুষ থাকে, তোমার সেই স্বপ্নে দেখা মানুষটির সাথে আমার কতটুকু মিল আছে আমি জানিনা। কিন্তু একজন বন্ধু হিসেবে আমি মন্দ হবো না। আজ থেকে আমাকে তুমি তোমার একজন বন্ধু ভাবতে পারো। আর এই যে তোমার হাতটি ধরেছি, ছেড়ে দেবার জন্য নয়। কখনও ভাববে না যে তোমার দেখা স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে গিয়েছে। আমার এই হাতটি ধরেই তুমি এগিয়ে যাবে তোমার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে। আগেই বলেছি ঐ দু’চোখের স্বপ্নগুলোকে নিজের করে নিতে ইচ্ছে হয়েছে। তাই আজ থেকে তোমার স্বপ্নগুলো আমারও। তুমি একা নও, দু’জনে মিলে স্বপ্নগুলোকে বাস্তব রূপ দিব।
অবন্তি আবার কাঁদতে শুরু করলো।
- না, একদম কাঁদবে না। তোমাকে প্রথম দেখার পরই তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছি। ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি সহ্য করা যে কতটা কষ্টের তা হয়তো তুমি জানো না।
অবন্তি, তোমার জীবনসঙ্গী নিয়ে কত স্বপ্ন তুমি দেখেছো আমার জানা নেই। আমার সাথে তার কতটুকু মিল পাবে তাও জানিনা। তুমি নিজেও কিন্তু তা জানার চেষ্টা একটি বারের জন্যও করনি।
- মানে? অবন্তি অবাক হয়ে তাকাল
- যাক, মানেটা আমাকে আর বলে দিতে হল না।
- অবন্তি কিছু না বুঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল
- এই এতক্ষণ আমরা পাশাপাশি বসে আছি, কিন্তু একটিবারের জন্যও তুমি আমার দিকে ফিরে তাকাওনি। স্থির দৃষ্টিতে ঐ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থেকেছ, কিন্তু আমি কে, দেখতে কেমন এসব জানার কোন চেষ্টাই তুমি করোনি।
- অবন্তি কথাটা বুঝতে পেরে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল
- হা...হা... এই যাহ, কিছু না বললেই মনে হয় ভাল ছিল। যাক অন্তত আমার দিকে তাকালে তো। এখন যতই চোখ নামিয়ে নাও না কেন শুভদৃষ্টি টা কিন্তু হয়েই গেল। ছবিতে তো ঐ চোখে কত তাকিয়ে থেকেছি, কিন্তু এত কাছে থেকেও স্বপ্নভরা চোখ দুটো দেখার সুযোগ ই ঠিকমত পেলাম না। ঠিক আছে, ঐ চোখে হারিয়ে যেতে না হয় আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবো।
অবন্তি আজ থেকে তুমি আমাকে তোমার খুব ভাল একজন বন্ধু ভাবতে পারো। তোমার জীবনের সব আনন্দ-দুঃখ তুমি আমার সাথে শেয়ার করতে পারো। তুমি এগিয়ে যাও, আমি তোমার সাথে আছি। নিজেকে মানিয়ে নিতে যত সময় তোমার প্রয়োজন, তুমি পাবে। আমি সকালেই চলে যাব। আর আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যতদিন পর্যন্ত তুমি নিজ থেকে আমাকে ভালবাসতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত স্বামীর অধিকার আদায়ের কোন চেষ্টা আমি করবো না।
- অবন্তি একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
- মনটা একটু হালকা লাগছে? দেখো, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাত তো শেষ হয়ে এলো। অনেক কথাই হলো কিন্তু আমার সম্পর্কে তুমি কিছুই জানলে না। এমনকি, মনে হয় তুমি আমার নামটাও জানো না। যদিও অনেক সময় আছে জানার বোঝার, তবুও টুকটাক কিছু তো এখন ই বলা যায়। আমি অর্ক। অর্ক রায়হান... ... ...

বাকি সময়টা এভাবেই কথা বলে কেটে গেল। সকালে অর্ক চলে গেলে দুপুরের মধ্যেই অবন্তিরা নিজেদের বাড়ীতে ফিরে গেল।
------------------------

অর্ক রোজ ফোন দেয়। তাদের অনেক কথা হয়। দুজন দুজন কে জানছে বুঝছে। কিছুদিনের মধ্যেই অবন্তি একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলো। অর্ক সবসময় একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ফোন দেয়। ঘণ্টার ৩০মিনিট এবং ৪৫ মিনিট যে কোন একটি সময়ে। যেমন- ৫:৩০ বা ৭:৪৫, ৮:৩০ বা ১০:৪৫। এই দুটো সময়ের পিছনে একটা কারণ আছে, যা অবন্তি ধরতে পারলো। প্রথম সময়টি ছিল যখন অর্ক প্রথম অবন্তির হাত ধরেছিল, আর দ্বিতীয়টি যখন অবন্তি প্রথম অর্ক-র দিকে তাকিয়েছিল। সেই রাতে অবন্তি অনেকটা সময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকায় মুহূর্তগুলো ওর চোখে পড়েছিলো। কিন্তু অবন্তি কখনও ভাবতেও পারেনি যে অর্কও ঐ সময়গুলো লক্ষ্য করেছে এবং প্রতিটা সময়ে ঐ মুহূর্তগুলো মনে করে চলেছে। এই প্রথম অবন্তির মনে অর্ক-র প্রতি প্রচণ্ড এক ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল। অবন্তি যখন অর্ক কে ব্যাপারটা বলল অর্ক খুব অবাক হয়েছে অবন্তি কিভাবে বুঝলো ভেবে..... তারপর খুব হাসল। অবন্তি এই প্রথম অর্ক-র এমন প্রাণখোলা হাসি শুনল। খুব ভাল লাগলো ওর।
অবন্তি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে তার স্বপ্নের পুরুষটি অনেকাংশে অর্ক-ই। ও যথেষ্ট কেয়ারিং তাতে কোন সংশয় নেই, এছাড়াও আছে আরও অনেক মিল। অবন্তির মতো অর্কও চাঁদ, জ্যোৎস্না রাত, বৃষ্টি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালবাসে। মাঝে মাঝে অর্ক-র কিছু পাগলামি তে মজা পায় অবন্তি। তার মতে যেহেতু তাদের বিয়েটা হয়েছে একটু পুরনো রীতিতে তাই সে পুরনো রীতি মেনে অবন্তি কে চিঠি লিখবে। অবন্তি-র অনেক অনুরোধে বাই পোস্ট না পাঠিয়ে সে ই-মেইল করে। কিন্তু ই-মেইল হয় পুরো চিঠির আদলেই। রোজ ফোনে কথা হওয়ার পরেও চিঠির আকার এত বড় কিভাবে হয় তা অবন্তি ভেবে পায়না। সেইসব চিঠির উত্তরে অবন্তি চিঠির আকারের অর্ধেকেরও কমই লিখতে পারে।

এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। অবন্তি ধীরে ধীরে কিছুটা সহজ হয়ে উঠছে, একসময় অর্ক কে অবন্তির সত্যিই ভাল লাগতে শুরু করলো। প্রায় ছ’মাস পরে ঘটা করে অবন্তি অর্ক-র ঘরে গেল। অবন্তি অনেকটা সহজ হয়ে এলেও ওর মাঝে এখনও রয়েছে অনেক জড়তা।
-----------------------

কয়েকদিন পর... ... ...

আজ খুব সুন্দর জ্যোৎস্না রাত, আকাশে কি সুন্দর চাঁদ। জানালায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে অবন্তি অনেক ভাবলো। অর্ক তার কথা রেখেছে, সে একজন বন্ধু হিসেবে অনেক সাপোর্ট করেছে তাকে। সে নিজেও এখন সব মানিয়ে নিতে পারছে। এসব কিছুই অর্ক-র সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না। অর্ক তার দায়িত্ব পালন করেছে, এবার অবন্তির পালা। অর্ক-র জীবনটা সুন্দর করে সাজানো এবার ওর দায়িত্ব। ওদের জীবনটা খুব সুন্দর করে সাজাবে অবন্তি।

অর্ক কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অবন্তি জানেনা। তাই ওর কথাতে চমকে ওঠে...
- আজ চাঁদ টা কি সুন্দর দেখেছো অবন্তি?
- হুমম...
- কি ভাবছিলে?
- কিছু না।
- কি দেখছ এভাবে?
- তোমাকে।
- আমাকে দেখার কি আছে?
- অনেক কিছু। Thanks a lot… যদিও এই Thanks তোমার সামনে অনেএএক ছোট। আমি সত্যিই তোমার কাছে কৃতজ্ঞ.
- Thanks for what?
- For everything you have done for me.

বেশ কিছুটা সময় তারা একে অন্যের চোখে তাকিয়ে থাকে। এ দৃষ্টি যেন অপলক... ...
অবন্তি ফিসফিসিয়ে বলে—
- Will you be mine?
- I’m always yours… … But from this moment you are mine…. বলে অর্ক অবন্তিকে জড়িয়ে ধরলো।

অবন্তির মনে হয় এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব সুখ শুধুই ওর। পৃথিবীর আর কারও প্রতিই ওর কোন রাগ বা অভিমান নেই। বরং সবার কাছে ও কৃতজ্ঞ।
ওরা দুজন দুজনের ভালোবাসার মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো। বাতাসে ভেসে এলো গানের সুর---

“এ লগনে তুমি আমি একই সুরে মিশে যেতে চাই,
প্রাণে প্রাণে সুর খুঁজে পাই...
এ তিথি শুধু গো যেন তোমায় পাওয়ার,
এ শুধু গানের দিন এ লগনও গান শোনাবার... ।।“

লিখেছেন-ভোরের পাখি

"অতঃপর তাকে পাওয়া"

বৃষ্টি বেশ ভাল লাগত রিফাতের। একদম ঝমঝমানো বৃষ্টি না, আবার একদম ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও না। এ দুটোর ঠিক মাঝামাঝি বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হত সে। তবে গত দু বছর ধরে বৃষ্টি হোক আর নাই হোক রিফাতের ভেতরে এক ঠাণ্ডা ঝড় বয়ে চলেছে অবিরত। বিয়ের পর থেকেই যেন কোন কিছুই ব্যাটে বলে হচ্ছে না। একা একাই নিউইর্কের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানসিক প্রশান্তির জন্য কিন্তু কিছুতেই যেন হিসেব মিলছে না। ভাল
বেসেই বিয়ে করেছিল আনিসাকে। যদিও আনিসার আগের নাম ছিল আনা। বিয়ের পর ধর্মান্তরিত হয় সে। তবে হতে পারে নি খাঁটি বাঙালি বউদের মত একজন যা রিফাতের তথা বাঙালি ছেলেদের আজন্ম এক সুপ্ত বাসনা। যার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবকিছুই কানাডা, আমেরিকা বা মেক্সিকোর মত পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব রীতি-নিয়মের বলয়ে আবদ্ধ তারই বা কি দোষ। একসময় মনে হত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঐ মনে হওয়া পর্যন্তই। শেষমেশ যা হবার তাই হল। আলাদা ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি, মনমানসিকতা, চাহিদার দুজন মানুষের মাঝে আর যাই হোক, সংসার করা সম্ভব না – দেরিতে হলেও এ উপলব্ধি তারা করতে পারে। এরপর আর কি! বিয়ের তিন বছর পর ডিভোর্স!

প্রথম ভালবাসার মানুষের সাথে সংসারের ইতি টানলেও স্মৃতিগুলো প্রতি নিয়ত অসহ্য রকমের যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে রিফাতকে। এ অবস্থার মধ্যেও জীবিকার তাগিদেই নিউইয়র্কের এক দোকানে কর্মজীবন অব্যহত রাখল। আমি নায়লা। ইতিমধ্যে আমিসহ তার অন্যান্য কলিগরাও ব্যপারটা জেনে গেছে। খারাপ সময়ে ছেলের পাশে থাকার জন্য রিফাতের মা হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে চলে এলেন দেশ থেকে। বাপহারা রিফাতের মা’ই যেন সবকিছু।

রিফাত প্রচণ্ড ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের। যাই বলবে সেটা যেভাবেই হোক করে ছাড়বে। এতটা জেদ দেখে আমি খুব অবাক হতাম। শুধু যে অবাক হতাম তা না, মাঝে মাঝে খুব বিরক্তও হতাম। একই জায়গায় কাজ করা লাগত বলে ঝগড়া হত প্রায় প্রতিদিনই। সব কিছুই ওর মত হওয়া লাগবে কেন! আমার কি মতামতের কোন দাম নেই! একবার খুব সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে ওর সাথে তুমুল ঝগড়া হল। অবস্থা এতটাই খারাপ হল যে আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। বাসায় গিয়ে খুব কাঁদলাম। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি, ‘আচ্ছা, ও এমন কেন?’ এরপর থেকে আমার মাঝে কি যেন একটা নেই নেই ভাব কাজ করত কিন্তু ধরতে পারতাম না। পরে বুঝতে পারি রিফাতের সাথে ঝগড়া করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজগুলোরই একটা। ফোনালাপ চলতে লাগল আস্তে আস্তে। যত দিন যাচ্ছে কথা বলার সময় ততই বাড়তে লাগল। অথচ কয়েক ঘণ্টা কথা বললেও যেন মনে হত কয়েক মিনিট কথা হয়েছে। অনেক রাত কেটে গেছে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়ে। কখনও কখনও ঘুম পাড়িয়ে দেয়া লাগত ওকে। মজার ব্যপার হল ফোনেও ঝগড়া চলত। প্রতিবারই ওর রাগের কাছে আমি হেরে যেতাম। প্রতিবারই আমাকেই ঠাণ্ডা করা লাগত রিফাতকে। কিন্তু আমিতো এরকম মেয়ে না। তবু কেন যেন ও সামনে থাকলে আমি আর আমি থাকতাম না। তাহলে কি আমি ওকে… যাহ! কি ভাবছি। আমার কি মাথা খারাপ যে এমন একগুয়ে টাইপের ছেলের সাথে সংসার করব। এ নিয়ে তেমন একটা ভাবতাম না যদি ওর কথা আমার মাঝে কোন আলোড়ন সৃষ্টি না করত। ওর কথাতে বুঝতে পারতাম ও আমার প্রতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম ওর গলা টিপে ধরলেও আমাকে ও আগে প্রপোজ করবে না। যা করার আমাকেই করতে হবে।

বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়াতে বাসা থেকে আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু হয় জানতে পারলাম। টেনশান গেল বেড়ে। আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম রিফাতকে আর অন্য কারও হতে দেব না। এও বুঝতে পারি ঘৃণা করার জন্য নির্দিষ্ট কারণ লাগলেও ভালবাসার জন্য কোন নির্দিষ্ট কারণ লাগে না। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ‘তোমায় ভালবাসি’ কথাটা রিফাতকে জানিয়ে দিলাম। আনন্দ, চাপা টেনশান, মানসিক চাপ, আতংক সব মিলিয়ে যেন আমি অন্য গ্রহের মানুষ হয়ে যাই। রিফাত রাজি হবে জানা ছিল তবে আমার পরিবার কিছুতেই মেনে নিল না। খুব স্বাভাবিক কেনই বা মেনে নেবে? রিফাত তখন ভাল কোন পেশায় নিয়োজিত ছিল না। ওর ইনকাম দিয়ে কোনরকমে নিজের চলে যায় কিন্তু সংসার করার মত আর্থিক অবস্থা তখন নেই। তবে ছিল আমার প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা আর মায়া। সব পরিবারই চায় তাদের মেয়ে সুখী হোক। এজন্য অলরেডি স্ট্যাব্লিশ এমন ছেলে খোঁজা হচ্ছিল আমার জন্য। কিন্তু আমার সব সুখ যে রিফাতকে ঘিরে এটা কিছুতেই আমার বাবা-মা মেনে নিল না, কিছুতেই না। আমার পরিবারের একজনকেও পেলাম না আমার পক্ষে থাকতে এমনকি দুলাভাইরাও আমার ঘোর বিপক্ষে। অনেক চড়াই উতড়াইয়ের মধ্যে প্রবাসে আমি আমার গ্র্যাজুয়েশান শেষ করলাম।

আমরা মোট চার বোন, এবং আমিই সবার ছোট; ভাই নেই। সেজ বোনের বিয়ের কথা চলছে। আমি, মা, বড় দুবোন এই চারজন বাংলাদেশে রওনা দিলাম সেজ বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এটেন্ড করার জন্য। তিন মাস পরেই রিটার্ণ টিকিট আমাদের। রিফাতের ধারণা ছিল দেশে গেলে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে পারে, এজন্য আমরা বিকল্প প্ল্যানিং করলাম। তবে তখনও বুঝিনি প্ল্যানগুলো এত কাজে আসবে। এও বুঝিনি আমার মত সাধারণ এক মেয়ের সামনে অপেক্ষা করছে দুঃসাহসিক কিছু অভিযান।
কলাবাগানের বাসায় ফিরেই বুঝতে পারলাম বাবা আমার উপর যথেষ্ট ক্ষ্যাপা। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যখন পাসপোর্ট আর ফোন কেড়ে নেয়া হল। আমি অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম। পায়ের নিচে যেন মাটি নেই আমার। রিফাতের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র উপায় বন্ধ হয়ে গেল আমার। সারা দিন রাত কাঁদলাম। কিন্তু বাসার সবার একই কথা- রিফাতকে ভুলে যাও। তোমার জন্য আরও ভাল ছেলে দেখা হচ্ছে, বিয়ে করে তবেই এখান থেকে যাবে। কথা ফাইনাল। আমিও চাইনি মা-বাবার অবাধ্য হতে। ছোট মেয়ে বলে আলাদা আদর যত্ন সবসময়ই পেয়েছি। কিন্তু রিফাতের চেহারা যখনই আমার মনের অতৃপ্ত আকাশে ভেসে ওঠে তখন আমি আর আমি থাকি না। এখন আসি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর আর চ্যালেঞ্জিং দিনগুলোর প্রসঙ্গে।

তখন রোজার মাস। বাসায় একরকম বন্দি আমি। ঢাকা শহরের পথ ঘাট আমি কিছুই চিনি না। সেহরি খেয়ে সবাই ঘুমে। কেউ সকাল নয়টার আগে উঠবে না। হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। মাকে চিরকুট লিখে সকালে বাসা থেকে পালিয়ে গেলাম দরজা খুলে। দোকান থেকে প্রথমেই ফোন দিলাম রিফাতকে, এরপর প্ল্যান অনুযায়ী রিফাতের দুই বড় ভাইকে ফোন দিলাম। উনারা আমার হবু ভাসুরের বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানেই হল আমার আশ্রয়। কিন্তু বিপত্তি হল আমার কাছে পাসপোর্ট নেই। দেশ থেকে পালাতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যেই। কি যে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাচ্ছে আমার বুঝাতে পারব না। ফোন দিলাম আমেরিকান এম্বেসিতে। ওদের জানালাম, আমি আমেরিকান সিটিজেন। এখানে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আমার পরিবার কিন্তু আমি রাজি নই। ইউএসএ তে যেন ফিরতে না পারি এজন্য আমার পাসপোর্ট এমনকি সেল ফোনও কেড়ে নিয়েছে। প্লিজ, হেল্প করুন। আমি বাসার ঠিকানা আর বড় দুলাভাই এর ফোন নাম্বার ওদের দিলাম যোগাযোগ করার জন্য। রুলস অনুযায়ী এখন আমেরিকান এম্বেসি আমাকে হেল্প করবে। এম্বেসী থেকে দুলাভাইকে ফোন দিয়ে বলা হল আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে এম্বেসিতে এসে পাসপোর্ট ফেরত না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব, প্রয়োজনে এরেস্ট করব। রাগে পরিবারের সবাই অগ্নিশর্মা আমার ওপর। কিন্তু তখন আমার আর করণীয়ই বা কি ছিল। দুলাভাই এসে পাসপোর্ট ফেরত দিল ঠিকই কিন্তু সারাদিন এম্বেসির চারপাশেই ঘুরঘুর করত আমাকে ধরার জন্য। আমি কয়েকদিন পর অবস্থা বুঝে পাসপোর্ট আনতে গেলাম এম্বেসি থেকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। রিটার্ণ টিকিটের তারিখ আগাতে হবে নাহলে আমি যে কোন সময় কট খেয়ে যেতে পারি।

নির্ঘুম রাত যাচ্ছে আমার। বাইরে বের হলেই গা হাত পা কাঁপে। কিচ্ছু ভাল লাগছে না। একদিকে মা-বাবার কান্না আরেক দিকে রিফাত। মা-বাবার আদর ভালবাসা আর রিফাতের ভালবাসা দুটোই দরকার আমার জন্য। আমি কোনটাই হারাতে চাই না। কিন্তু তখন এমন অবস্থা যে কোন একটা আমাকে বিসর্জন দিতে হবে। ইতিমধ্যে আমার হবু শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে খুব পছন্দ করলেন। এমনকি উনার পরিবারের সকলের অপ্রত্যাশিত ওয়েলকাম পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত। রিফাতের বড় ভাই দুজন অনেক চেষ্টা করে আমার টিকিট ওকে করলেন তিনদিন পর। রিফাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্য আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। তবে এ কথা সত্য যে শ্বাশুড়ির সাপোর্ট না পেলে হয়ত আমার আর আগানো হত না। পরিবারের মায়া-মমতা, স্নেহ ত্যাগ করে ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে আমি চলে এলাম নিউইয়র্কে। রিফাতকে জড়িয়ে ধরে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। তার অশ্রুসিক্ত কোমল আলিঙ্গনের উষ্ণতায় আমি আবার শক্তি ফিরে পেলাম নিজের মধ্যে। আর সময় নেই হাতে। হ্যা, আমরা বিয়ে করে ফেললাম।

এ খবর জানার পর থেকে আমার পরিবারে মুখ দেখানো বন্ধ, সাথে কথা বলাও। রিফাতকে হারানোর আর ভয় নেই এই বিশ্বাস আমার মনের মধ্যে ছিল, আছে, থাকবে। তবে কিছুতেই মা-বাবা মেনে নিলেন না। রিফাতের ইনকাম তেমন না থাকায় কষ্ট করেই দিন চলতে লাগল। যেদিন আমার ছেলে হল সেদিনই রিফাত খুব ভাল চাকরির কনফার্মেশান পেল। আমাদের তখন আনন্দের সীমা ছিল না। প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলাম এবার অন্তত মা-বাবা ঠিক হবেন। কিন্তু না তখনও তারা অনড়। আমি আমার দিক দিয়ে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখলাম না। ভাল খারাপ মিলিয়ে দিন পার করতে থাকলাম আমরা। এক বছর পর আমাদের এক মেয়ে হল। দুই সন্তান এর মুখের দিকে তাকালে কোন দুঃখ কষ্টই যেন আর থাকেনা। ক্লান্তিও দূর হয়ে যায় এক নিমিষে। এরপর থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয় নি।

এখন আমরা খুব হ্যাপি কাপল। বাবা-মার সাথে কথা হয় নিয়মিত। উনারা আলাদা স্টেটে থাকেন। সময় সুযোগ পেলে বাসায় এসে ঘুরে যান। আমাদের এখন বাড়ি আছে। আছে চমৎকার এক গাড়ি যেটাতে করে আমরা সবাই ঘুরতে যাই। বাসার পেছনের বাগানে বাচ্চা দুটো খেলে আর ‘মা’ ‘মা’ ডাক দিয়ে দৌড়ে এসে আমার কোলে ওঠে। এ ভাল লাগার কি কোন তুলনা হয়? এখনও মাঝে মাঝে মনে করি, পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়েটা কি আমি?

লিখেছেন-Rajeen Reasat (রাজিন রিয়াসাত)

কিছু কাল্পনিক কথোপকথন


-হ্যালো, হ্যালো! রিয়া?? 
-কে?? হুজ দিস??
-রিয়া, আমি মুনা। 
-ওহ। হ্যাঁ মুনা বল
-দোস্ত খবর শুনেছিস? হাইকোর্ট নাকি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে। 
আরে এটাতো অনেক আগের খবর। 
-আসলে আমি ফোন করেছিলাম এটা জানার জন্য যে আংকেল তো অনেক বড় পোস্টে আছেন সচিবালয়ে, তুই আসলে কি হবে জানিস কিছু? সরকার কি সিদ্ধান্ত বদলাবে??? 
-আরে ধুর! সরকার কেন সিদ্ধান্ত বদলাবে। মনে হয় না কিছু হবে।
-দোস্ত! তাহলে আমার কি হবে। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করলাম। মেডিকেলে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
-আরে তোর চিন্তা কি?? এবার গোল্ডেন পেয়েছিস।
-আরে গোল্ডেন পেয়েছি বলেই তো আর চান্স শিওর না। শুনেছি এখানে অনেক ধরাধরি হবে। আমার তো বলার মত কেউ নেই।
-হুম। আমি অবশ্য বাপি-কে বলেছি। দেখি বাপি কাল কথা বলবে বলেছে।
-ইয়ে, মানে রিয়া, তুই কি একটু আমার জন্য বলতে পারবি আংকেল কে। প্লিজ দোস্ত আমার জন্য এটুকু কর। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বাব-মার খুব ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হবো।
-ইয়ে মানে মুনা, বাপি ডাকছে রে। এখন রাখি। পরে এব্যাপারে কথা হবে। বাই।



-আব্বু
-কি মা?
-আব্বু, তোমার কি উপরের লেভেলে কারো সাথে পরিচয় আছে? মানে সুপারিশ করার মত?
-নারে মা। আমি সামান্য শিক্ষক মানুষ। আমার কারও সাথে তেমন পরিচয় নেই। তুই কি মেডিকেল নিয়ে বেশী চিন্তা করছিস?
-হ্যাঁ বাবা। সরকার নাকি সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আর সবাই বলছে এবার মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক ধরাধরি হবে। বাবা, আমারতো মনে হয় মেডিকেলে পড়া হবে না।
-আমি কী বলবো রে মা। কপালে থাকলে হবে। তাও আমি দেখি ধরাধরি করার মত কাউকে পাই কিনা। তুই মন খারাপ করিস না মা। একি?? কাদছিস কেন পাগলী??
-আব্বু, আমার খুব খারাপ লাগছে আব্বু। অনেক অ-নে-ক কষ্ট হচ্ছে।
-কাদিস না মা। সবার কপালে সব কিছু থাকেনা।
-তোমার চোখে পানি কেন আব্বু?? আচ্ছা দেখো আমি আর কাঁদছি না। তুমি কেঁদো না বাবা।


-বাপি? ওহ বাপি, ম্যাগাজিনটা রাখো না।
-ইয়েস মাই ডিয়ার। বল কি হয়েছে??
-আচ্ছা বাপি, আমি তো এবার শুধু এ প্লাস পেয়েছি। আর এসএসসিতে শুধু এ। মেডিকেলেতো আবার ভর্তি পরীক্ষা হবেনা। তাহলে আমার কি হবে, বাপি?
-আরে? কি হবে মানে? তোমার বাপি আছে কেন?? আমি কালকেই আবুলকে ফোন দিবো। কোন চিন্তা করো না ডিয়ার। জাস্ট চিল।
-ওহ বাপি! ইউ আর সো সুইট। বাপি, চলো আজ বাইরে খাই।
-হুম। ওকে। গেট রেডি দেন।


-হ্যালো, আপনি কি জনাব আবুল সাহেবের পিএস বলছেন??
-জ্বী না, আমি উনার পিএস এর পিএস বলছি। কি দরকার বইলা ফালান।
-না, মানে আমি আসলে
-আরে, এত আমি, আসলে করতেছেন ক্যান??? সোজা কামের কথায় আসেন। মেডিকেলের লাইগ্যা ফোন দিছেন??
-জ্বী, জ্বী ! আপনি ঠিক ধরেছেন।
-জিপি কত??
-জিপি মানে?? আপনি কি জিপিএর কথা বলছেন?
-ঐ হইলো। কত?
-জিপিএ তো এ প্লাস। তবে দুটা গোল্ডেন না। এসএসসিতে খুব শরীর খারাপ ছিল বলে গোল্ডেন পায়নি।
-ধুর মিয়া। সোনাগুলা নিয়াই ভেজালে আছি। আপনে তো সোনাও পান নাই।
-জ্বী মানে আমি তো না। আমার মেয়ে।
-ঐ হইলো। সরকারীতে হবে না। বেসরকারী মেডিকেলে চেষ্টা করতে পারি। তয় খরচা বেশী পড়বো।
-মানে বলছিলাম কি যে, সরকারীতেই যদি একটু দেখতেন। বেসরকারীতে পড়ানোর ক্ষমতা নাই আমাদের।
-বলেন কি?? আপনি কি করেন আগে এইডা বলেন।
-জ্বী, আমি একজন শিক্ষক।
-ও। বুঝছি। তাইলে ভাই চেষ্টা কইরেন না। অনেক টাকার মামলা।
-কেন ভাই? ২-৩ লাখেও কি হবে না??
-হা হা হা। ধুর মিয়া। আপনার কোন আক্কেলই নাই। এইবারের রেট কত জানেন?? এইবারে সরকারী মেডিকেলের রেট হলো ১০- ২০ লাখ। বেসরকারি ৫-১০, সাথে বেসরকারি মেডিকেলের নিজের ফি তো আছেই।
-ওহ। ঠিক আছে ভাই। ধন্যবাদ।


-হ্যালো, স্লামালাইকুম স্যার।
-জ্বী, আমজাদ সাহেব। কেমন আছেন বলেন?
-স্যার, সবই আপনাদের দোয়া। আপনার শরীরটা ভালো তো স্যার?
-আর বলেন না, এই পোলাপান গুলা কি সব মানব-বন্ধন টন্ধন করতেছে। কেমন লাগে বলেন। ওদিকে ম্যাডাম আবার বলতেছেন সিদ্ধান্ত যেন ঠিক থাকে।
-স্যার, আপনি চিন্তা করেন না। কয়েকদিন পর এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া আমরা তো আর বসে নেই। আমরাও সরকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে মিছিল করার লোক লাগিয়ে দিয়েছি।
-তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
-স্যার, এবার একটা অনুরোধ ছিল।
-বলে ফেলেন।
-স্যার, আমার মেয়েটাকে কিন্তু ঢাকা মেডিকেলেই রাখতে হবে। ও এবার এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু এসএসসিতে নরমাল এ।
-তাহলে তো একটু কেমন হয়ে গেলো না?
-স্যার, কি যে বলেন? আপনার কাছে এগুলো কোন ব্যাপার নাকি? আপনি শুধু বলেন বাকিটা আমি কালই ব্যবস্থা করে ফেলবো।
-হে হে হে। আপনি সাথে সাথেই বুঝে ফেলেন ভাই। যাই হোক সময়মত আমাকে একটু মনে করিয়ে দিয়েন। আর কাল একজন ঠিকাদার পাঠাবো আপনার কাছে। কাজটা দিয়ে দিয়েন। সে আবার আমার শালার শালা হয়। হা হা হা।
-হা হা হা। শালার শালা। খুব কাছের সম্পর্ক স্যার। আপনি চিন্তা করেন না। ওটা আমি দেখছি।

পরিশিষ্টঃ
কথোপকথন লেখার একটা সমস্যা হলো আবেগ দেয়া যায় না। শুধু সংলাপ বলে যেতে হয়। তবে মাঝে মাঝে সংলাপে লুকিয়ে থাকা আবেগটাকে ধারণ করার মত যোগ্যতা লেখকের থাকেনা। আমিও সে যোগ্যতা রাখিনা। শুধু হতাশা আর কষ্টের হাহাকারের উষ্ণতাটা টের পাই। লেখার সময় নিজের জীবনের সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেলো। কত চোখের পানি ঝড়ালে আজকাল উচ্চশিক্ষার সিড়িটা পাওয়া যায়???

লিখেছেন-Tanvir Islam

"লুকায়িত ভালোবাসা"

"লুকায়িত ভালবাসা"
-তোর কি একটু সময় হবে?
-কেন?
-তোর সাথে কিছু কথা ছিল
-আমার কাজ আছে
-তোর কি হয়েছে বলবি? তুই ইদানিং আমাকে এড়িয়ে চলছিস কেন?
-তোকে কেনও এড়িয়ে চলব? তোর সাথে এইসব ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই।

কথাটা বলেই হন হন করে হেটে চলে এলাম । কি বলব ওকে ? কেন ওকে এড়িয়ে চলি? ও মানে অহনা আমার অনেক ভালো বন্ধু । এই বন্ধুত্ব যে কখন কিভাবে ভালোলাগার উপরের পর্যায়ে চলে গেছে বুঝতেও পারিনি । এটাকে ভালোবাসা ব
লব না কিন্তু তার চেয়ে খুব কম কিছুও বলতে পারবনা । কিন্তু এটা কি তা নিয়ে আমার ভাবার অধিকার ও নেই কারণ আমার এক বন্ধু সজীবওকে ভালোবাসে । সজীব আমার সাহায্য চেয়েছে ওকে পাওয়ার জন্য । আমিও কথা দিয়েছি ওকে সাহায্যও করবো . যদিও জানি অহনা সজীব কে কখনও মানবেনা । তবু সাহস করে একদিন বলেই দিয়েছিলাম-

-অহনা শুন আর কতদিন single খেতাব লাগিয়ে ঘুরবি,এবার তো double হয়ে যা
-তাই? কার সাথে হবো , তোর সাথে?
-আরে না , আমার সাথে কেন হবি? কত ভাল ছেলে আছে!
-হম, তা তুই কোন ভাল ছেলের হয়ে চামচামি করতে আসছিস?
-এভাবে কেন বলছিস? বন্ধু হিসেবে তোর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
-এতো চাপাবাজি না করে সরাসরি নাম বল।
-তুই তো চিনিসই আমাদের পাড়ার সজীব।
-সজীব?
-হম, অনেক ভাল ছেলে । তোকে অনেক ভালবাসে
-কিন্তু আমার পছন্দের না।
-কেন?
-কোন কেন টেনো নেই, পছন্দ না তো না। কার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা । তার উপর তোর বন্ধু
-তুই শোন
-ফারিক, এটা নিয়ে আর কোন কথা হবেনা

আমিও ভালমানুষের মত চলে এলাম। এই মেয়ের রাগ যা । একবার রাগলে আমার খবর আছে।

আমার ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স হয়ে গেল আর আমি বাড়ি ছাড়লাম । বাড়ি ছাড়ার পরই বুঝতে পারলাম আমি অহনাকে আসলে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু বন্ধু যেখানে ভালবাসে সেখানে আমি কিভাবে বলি, তাই কিছু বললাম না । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো ।ওর প্রতি আর দুর্বল হতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত নাম্বার বদলে ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। ওকে ভুলার জন্য ভার্সিটির একটা মেয়েকে propose করে বসলাম ।ওর জন্য পাগলামি করলাম বন্ধুদের পরামর্শে ।কিন্তু মেয়েটা পাত্তা দিল না ।আমিও নাছোড়বান্দা । ওর পিছনে লেগেই রইলাম ।মেয়েটার কপাল ভাল যে সে এসবে কোন রিএক্সান দেখায়নি । দেখালে পস্তাতে হত। কারন কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম আমি অহনার সাথে এই মেয়েকে তুলনা করছি।
আরে অহনার সাথে তো এই মেয়ের অনেক মিল ।
দোস্ত অহনা ঠিক এভাবে হাসে
আরে দেখ অহনা হাঁটেও এভাবে

আমি এবং আমার বন্ধুরা বুঝতে পারলাম অহনা ছাড়া আর কাউকে আমার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । তাই মেয়েটাকে সব খুলে বললাম আর মাফ চাইলাম ;মেয়েটা অনেক ভাল তাই বলল
-ভাইয়া , আপনি যাকে এতটা ভালবাসেন তাকে নিশ্চয় পাবেন । সাহস করে তাকে বলে দিন। আমি আপনাদের জন্য দুয়া করব

সিধান্ত নিলাম এবার বাড়ি গিয়ে বলে দিব । বন্ধুর পরোয়া আর করবো না। অহনার ভালবাসা তো ও পাবেই না । ওর জন্য আমার ভালবাসা কেন হারাবো

কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা সবসময় হয়না । তাই তো বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের কাছে শুনলাম অহনা প্রেম করছে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কিই বা করার আছে । ব্যার্থ প্রেমিক হয়েই থাকতে হবে

হঠাৎ করেই একদিন অহনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। ঐ ডাকল
- ফারিক, কবে আসছিস?
-কয়েকদিন আগে
-দেখা করলি না কেন?
-আমাদের সাথে দেখা করার সময় কি তোর আছে?
-মানে কি?
-কিছুনা । শুনলাম প্রেম করছিস?
-ও , এজন্য এত অভিমান?
-অভিমানের কি দেখলি?
-কি করব বল ?তুই তো বললি double হতে
-তাই বলে যার তার সাথে?
-কেন সজীবের সাথে করলে খুশি হতি ?
-তা কখন বললাম?
- তাহলে কার সাথে করবো?
-আমি কি জানি?
-তোর সাথে?
-না, আমার সাথে কেন করবি?
-হায় রে কপাল !তুই এখন বোকাই রইলি
-কেন কি করলাম? তোর মত প্রেম করতে পারিনাই বলে?
-আমি কার সাথে প্রেম করি?
-আমি কি জানি?
-জানার চেষ্টা করছিস?
-না, কিন্তু সবাই বলে
-এটা এমনি বলছি,যাতে কেউ জ্বালাতন না করে
-সত্যি?
-হ্যাঁ রে ছাগল

এই সুযোগ নষ্ট করা যায়না । তাই তো ওর চোখে চোখ রেখে বলেই দিলাম
-অহনা , তোকে আমি অনেক ভালোবাসি

কিন্তু ও পাত্তা না দিয়ে হাসতে লাগল । মেজাজ খারাপ হয়না? হা বা না কিছু না বলে হাসছে
-হাসিস কেন?
-তো কি কাঁদবো?
-তা বলছি নাকি? কিন্তু এভাবে হাসবি নাকি? কিছু তো বল
-গাধা, তোর এই একটা কথা বলতে ৪ বছর লাগলো?
-মানে?
-মানে আমি এটা জানতাম
-তাই? তাহলে বল তোর হ্যাঁ নাকি না?
- না
বলে আবার হাসতে লাগলো। আমি গাধা,ছাগল, বোকা হলেও বুঝতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটিকে আমি পেয়ে গেছি। আর ওকে হারাতে দেব না।

(ভালবাসার মানুষ টিকে বলে দিন ভালবাসি। হয়ত সে আপনার কাছ থেকে এটা শোনার আশায় আছে । আর যদি না বলে তবে ক্ষতি কি ভালবাসলে পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই । কিন্তু তাকে জানাতে তো পারলেন এটাই বা কম কিসের?)

লিখেছেন-Zannatun Naeem Keya