আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

চমকে যাওয়া ভালোবাসা

লিখেছেনঃ Mahmud Hasan

মেয়েটা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভাস্কর্যের সামনে দাড়িয়ে আপন মনে নখ কেটেই যাচ্ছে। ঘন ঘন পরছে চোখের পলক। কেমন যেন একটা অস্থির অস্থির ভাব। ভিড়ের একপাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে দেখলে মনে হবে অসহায় চোখে কান্না কান্না ভাব। ভাস্কর্যের বেদীতে দাড়িয়ে নেতাগোছের একটা ছেলে চিৎকার করে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বলছে। ভিড়ের কোলাহলের মাঝে নিজের রেজাল্টটা শুনতে পেল না মেয়েটা। আস্তে আস্তে ভিড় কমে এলো। একটু দ্বিধা, একটু জড়তা কণ্ঠে মেয়েটা ছেলেটার কাছে রেজাল্ট জানতে চাইল। ছেলেটা তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে জানালো সে চান্স পায়নি। কান্না লুকিয়ে মেয়েটা রিক্সায় উঠে গেল। বাসার সামনে রিক্সা থেকে নেমে দেখল সেই ছেলেটিও রিক্সা থেকে নামছে। রিক্সা থেকে নেমেই বলল, আপনি চান্স পেয়েছেন। মেয়েটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিক্সায় উঠে চলে গেল। মেয়েটার মনে হল ছেলেটাকে একটা ঘুষি হাকায়। মাথায় সমস্যা না থাকলে কেউ এমন করে।
এতক্ষন যে পাগল ছেলের পাগলামির কথা বলছিলাম সে ভিক্টোরিয়াতেই পড়ে। বয়সে আমার এক ইয়ার সিনিয়র। প্রথম দিনে ওকে আমার পিছে পিছে বাসায় আসতে দেখে মনে হয়েছিল আর দশটা ছেলের মতই গায়েপরা স্বভাবের। ১৫দিন পর আমাদের ক্লাস শুরু হল। প্রথম দিনই দেখলাম ক্লাসের মধ্যে একদল ছেলে মিছিল নিয়ে হাজির। আর মিছিলের নেতা সে। এরপর প্রায়ই কলেজে দেখা হতো। কিন্তু এমন ভাব করতো যেন প্রথম দেখেছে। সিনিয়র ভাই বলে সালাম দিতে হতো। একদিন আমাকে ডেকে বলল কোন হেল্প লাগবে কিনা। আমাকে সব নোট, চোথা যোগাড় করা, ভাল টিচারের কাছে নিজে যাওয়া, সবই করে দিল। আমার ধারনা ছিল ও আমাকে পছন্দ করে। কিছুদিন পর দেখলাম সবাইকেই একইরকম হেল্প করছে। ক্যাম্পাসের সবাই ওকে পছন্দ করতো। সারাটা দিন মিটিং, মিছিল নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। ফোন করলে ৫ মিনিটের বেশি কথা বলার সময় হতো না।
ওকে প্রথম দেখায় রাগী বলেই মনে হবে। কিন্তু মনটা একেবারে শিশুর মত। ওর কাছে কেউ সাহায্য চেয়ে কাউকে ফেরত যেতে দেখিনি। কাউকে কখনো না বলত না। ওর গুনটাকেই অনেকে দুর্বলতা ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিতো। মানুষটার একটাই দোষ, রাজনীতির জন্য তার জান-প্রান দিতে প্রস্তুত। অথচ রাজনৈতিক নেতারা তাকে ইউজ করতো সে সেটা বুঝতে পারতো না। ওয়ান ইলাভেনের কিছুদিন আগে পুলিশের লাঠি-চার্জে মাথায় আঘাত পেয়ে কুমিল্লার সিডিপ্যাথ হাসপাতালে ভর্তি হল। ক্লাস ফাকি দিয়ে ওকে দেখতে গেলাম। সেদিনই টের পেলাম মানুষটাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি। কিন্তু এতো সুন্দরীর নয়নের মনি সে কি আমাকে পছন্দ করবে। ও হয়তো আমাকে পছন্দ করে কিন্তু ভালবাসে না, অন্তত ওর সাথে কথা বলে তাই মনে হয়। তাই ভালবাসাটা পাথরচাপা দিয়েই রাখলাম। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় ছুটে গিয়ে বলে দেই মনের কথাটা। ভালবাসা আমার নীরবে বালিশ ভেজানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ও সবসময় চমকে দিয়ে আনন্দ পেত। একবার ভ্যালেন্টাইন ডের সকালে ওকে দেখা করতে বললাম। ও ভীষণ রেগে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে আমাকে বকলো। আমি পুরো স্তব্দ হয়ে গেলাম। মন খারাপ করে রানীর দীঘির পাড়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। হঠাৎ দেখি আমার ডানপাশে একগুচ্ছ গোলাপ। কাউকে দেখলাম না আশেপাশে। কখন যে ও আমার বামপাশে এসে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে টের পেলাম না। আমাকে বলল বকা না দিলে নাকি এই মজাটা পেতাম না। আরেকটা ঘটনা বলি। ও তখন ঢাকা ভার্সিটির বোটানির ২য় বর্ষে আর আমি বগুড়া মেডিক্যালের ১ম বর্ষে। ওকে অনেক বলতাম বগুড়ায় আসার জন্য। তার দলের রাজনৈতিক কাজের জন্য আসতে পারতো না। হয়তো ইচ্ছে করেই আমার অবহেলা করতো। আরেকবার বার্থডেতে ১২ টার পর আমাকে ফোন উইশ করে বলল কাল সকাল ৮টায় সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে যেন ওর গিফট টা রিসিভ করি এবং গিফটটা হবে স্পেশাল। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কি হতে পারে ওই গিফটটা। জগজিতের গজল, চাইনিজ হ্যাট নাকি সমরেশ সমগ্র? সকাল বেলা ওখানে গিয়ে যে গিফট পেলাম তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। গিয়ে দেখি সে নিজেই কুরিয়ারের দোকানে বসে আছে। আপনারাই বলুন এর ভাল গিফট আর কি হতে পারে? ও মানুষের চমকে যাওয়া আনন্দিত মুখের সেই খুশির অশ্রুতে টলটল চোখটা দেখতে ভালবাসত।
সবকিছু ভালই চলছিল। হঠাৎ ভার্সিটিতে মারামারি লেগে একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ ওকে বেধড়ক পিটাল। তার বেডিং সহ সব জিনিস রাস্তায় ফেলে দিল। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পর জানা গেল তার পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। পায়ে অপারেশন করায় তাকে প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। প্রতিটা উইকেন্ডে ছুটে যেতাম ওকে দেখার জন্য। ক্লাসমেটরা জানতো আমি বাসায় যাই। আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন আমি ওকে কতটা ভালবাসি। প্রতিদিন এত কথা বলি, তবুও কখনো ভালবাসার কথা বলতে সাহস করিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় ও অনেক নিষ্ঠুর…সবকিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে। একটা মেয়ে তার পিছনে তিন বছর আঠার লেগে আছে…অথচ তার কোন বিকার নেই। আমার প্রথম প্রফ পরীক্ষার পর বাসা থেকে বিয়ের তোরজোড় শুরু হয়ে গেল। প্রফের ১৫ দিনের ছুটিতে বিয়ে নিয়ে মায়ের অনেক প্যানপ্যানানি শুনতে হল। হঠাৎ একদিন মেজাজ খারাপ করে ঠিক করলাম ওকে সবকিছু খুলে বলব, যা আছে কপালে। ও আমার কথা শুনে নির্লিপ্তভাবে বলল সে এনগেজড। আর কিছু বলার রুচি হল না। রিক্সায় উঠে শেষবারের মত তাকালাম। একটু আশা ছিল যে সে হয়তো আমাকে চমকে দিয়ে কিছু একটা বলবে। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। বাসায় এসে চুপচাপ বালিশে মুখ লুকিয়ে কাদলাম। ৪-৫ দিন পর রাতের বেলা মা জোর করে উঠিয়ে ভাত খাওয়ালেন। খাওয়ার পর দেখি মা বায়োডাটা নিয়ে হাজির। নতুন বিয়ের সমন্ধ নিয়ে হাজির। মায়ের উপর প্রচণ্ড রাগ হল।অনেক কষ্টে রাগটা চাপলাম। বায়োডাটা খুলে যা দেখলাম তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ওর ছবি দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললাম। সব ওর পূর্ব পরিকল্পনা। মানুষটা আসলে চমকে দিয়ে চরম আনন্দ পায়। রাতে ফোন দিলে বলল…তুমিতো এনগেজড শুনেই চলে আসলে…কার সাথে এনগেজড সেটাতো শুনলে না।
আমাদের বিয়ের ২ বছর হতে চলল। ও এখন সেনাবাহিনীতে এডুকেশন কোরে কর্মরত আছে। এখন ম্যারেজডেতে এমন ভাব করি যেন ম্যারেজডের কথা দিব্যি ভুলে গেছি। যেভাবেই হোক ও ছুটি ম্যানেজ করে ম্যারেজডেতে আসবেই। আমিও এমন ভাব করি যেন অনেক চমকে গেছি। মানুষটা যে আমার চমকে যাওয়া মুখটা দেখতে ভালবাসে। সেদিন সিএমএইচে গাইনি ডাক্তার একটা সুখবর দিলেন। সামনের সাপ্তাহে তার ছুটিতে আসার কথা। তখনি তাকে সুখবরটা দিবো। কেননা এবারতো আমার চমকে দেবার পালা…কি বলেন আপনারা?

(আমার গল্পগুলি যদি আপনাদের হৃদয় একটুও ছুয়ে যায় তবে নিজেকে সার্থক মনে করবো। আপনাদের ভাল লাগলে ভবিষ্যতে আরও লেখার আগ্রহ বোধ করব। সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ। –মাহমুদ হাসান।)

ফেরা

লিখেছেনঃ Durjoy Baidya

ঠিক ভোর ৫-৩০ এর সময় বিতিকিচ্ছিরি শব্দে অ্যালার্ম ঘড়িটা বেজে উঠলো । প্রতিদিনই এই ঘড়ির ডাকেই রিফাতের ঘুম ভাঙ্গে । ক্লাস আর পার্টটাইম চাকরি শেষে রিফাত মরার মতো ঘুমায় । এতো কর্কশ শব্দ ছাড়া ঘুম ভাঙ্গার কোন উপায় নেই । তবে আজকে ঘড়িটার না বাজলেও চলতো । রিফাত কাল সারারাত জেগেই ছিল । শত চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে নি ।
অ্যালার্ম বন্ধ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো সে । পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মাঝে শীর্ষে থাকা এই দেশে কিছুক্ষণ পরই আরেকটা ব্যস্ত দিন শুরু হয়ে যাবে । রিফাতেরও খুব ইচ্ছে হল ঐ ব্যস্ত মানুষগুলোর ভিড়ে মিশে যেতে । আবার পরক্ষণেই একরাশ নৈরাশ্য তাকে ঘিরে ধরে ।
ল্যাপটপটা ওপেন করে সে । একে একে মেইল , এফবি , চেক করে । নাহ , কোথাও কেউ তাকে মনে করে নি । সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো । কিন্তু লাইটারটা কোথাও খুঁজে পেল না । অন্যদিন হলে খুঁজে দেখত একটু, কিন্তু আজকে আর ইচ্ছে করলো না ।
সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল সে । এই দেশের অন্যান্য শহরগুলোর মতো এই শহরের লোকজনও আরেকটা যান্ত্রিক দিনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে । শুধু রিফাতেরই আজ কেন যেন রক্ত-মাংসের মানুষ হতে ইচ্ছে করছে । সে রাস্তার পাশের একটা বেঞ্চে বসল , দেখতে লাগলো অন্যদের জীবনগুলোকে ।
পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করে অহনাকে ফোন করল । একের পর এক রিং বাজল । কিন্তু অহনা ধরল না। অবশ্য রিফাতের এটা জানাই ছিল । আজকে অহনার গায়ে হলুদ । ছেলে এদেশের গ্রিনকার্ডধারি , অনেক টাকা ইনকাম । অহনাকে সুখে রাখবে খুব ।
অহনার সাথে রিফাতের চার বছরের সম্পর্ক । অনেক বাধা-বিপত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের সম্পর্কটা এতদিন টিকে ছিল । কিন্তু হটাত কী থেকে যে কী হয়ে গেল…………………………
গত পরশু রাতে অহনার ফোন আসে।
‘’কেমন আছো , রিফাত?”
“ভাল। তোমার কি খবর? সারাদিন কই থাক? ফোন ধর না কেন? “
“রিফাত , তোমাকে একটা কথা বলি । মন দিয়ে শোন । আমার মনে হয় আমাদের আর যোগাযোগ রাখা উচিত না । আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে । ছেলের স্ট্যাটাস অনেক হাই । “
‘’কি বলছ তুমি এইসব? নিশ্চয় ফাজলামি করছো? আমাকে বোকা বানাচ্ছো, না? “
‘’ আমি মজা করছি না । সত্যি বলছি । তুমি আমাকে ভুলে যাও । এটা তোমার আর আমার –আমাদের দুইজনের জন্যই ভাল । “
এদেশে রিফাত যখন প্রথম পড়তে আসে তখনি অহনার সাথে পরিচয় । রিফাত কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি অহনা এরকম কিছু করতে পারে । তার সমস্ত দুনিয়া যেন প্রচণ্ড ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে । জীবনের প্রতি সমস্ত আগ্রহই তার চলে গিয়েছে ।
নিজের জীবনের এলোমেলো দিকগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে রিফাত সারাদিন কাতিয়ে দিল । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে , তখন সে হেঁটে হেঁটে শহরের একদম শেষপ্রান্তের রেলস্টেশনে এল ।
প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্ছিতে বসলো রিফাত । কাজ শেষ করে মানুষজন ঘরে ফিরে আসছে । চোখে-মুখে পরিত্রিপ্তির পূর্ণ আভাস । স্টেশনটা ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যায়। লোক চলাচল একদম কমে আসে । এমন সময় রিফাতের কাছে এক ভিখিরি এসে হাত পাতে । এদেশের ভিখিরিরাও অবশ্য কোট-প্যান্ট পরে । রিফাত কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ভিখিরিটার দিকে চেয়ে রইল । তারপর পকেট থেকে নিজের মানিব্যাগটা বের করে লোকটার হাতে তুলে দিল । ভিখিরিটার ঘোর কাটার আগেই রিফাত বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়ল ।
ধীর পায়ে হেঁটে এসে সে রেল লাইনে নামল । তার বেঁচে থাকা ব্যাপারটা কেমন যেন অর্থহীন মনে হতে লাগল । রেল লাইন ধরে সে হাঁটতে শুরু করলো পরের ট্রেনের অপেক্ষায় । হাঁটতে হাঁটতে সে একটা টানেলের মধ্যে ধুকে গেল ।
ঐ তো ট্রেনের ক্ষীণ হুইসেল শোনা যাচ্ছে । অনেকদুরে আছে এখনো , কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে । এরপরেই তার দীর্ঘ , ভারি জীবনটাকে আর বইতে হবে না । অসহ্য অনুভূতিগুলোকে সইতে হবে না ,না পাওয়ার কষ্টে আর পুড়তে হবে না ।
হটাত তার মুঠোফোনটা বেজে উঠলো । জীবনের শেষবেলায় এসে আর কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল না রিফাতের । তারপরও কি ভেবে যেন পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করল সে । স্ক্রিনে ভাসছে—Maa is calling…………….
রিফাতের মা বাংলাদেশের এক গ্রামে থাকেন । প্রতিদিনই ছেলের খোঁজ নিতে এ সময় ফোন করেন। রিফাতের মাথার ভিতরটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেল । বুকের ভিতর কোথা থেকে এসে একটা পাথর আঘাত করল । তার মায়ের গায়ের সেই অতি পরিচিত গন্ধটা যেন তার নাকে ভেসে এল । মায়ের হাতে ভাত খাওয়া , মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমানো ———সব কিছু তাকে কোথায় যেন ভাসিয়ে নিয়ে গেল । সে বুঝতে পারল তার তো এমন অনেকেই আছে যারা শত বিপদেও তাকে ছেড়ে যাবে না । তারা শুধু দিতেই জানে , কিছু পাওয়ার সামান্য বাসনাও তাদের নেই । তার মৃত্যুতে তাদের কি অবস্থা হবে ভাবতেই তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল ।
ততোক্ষণে ট্রেন ব্রিজের উপর চলে এসেছে । বাঁচার একটাই উপায় , যেকোনোভাবেই হোক তাকে টানেলের অপর প্রান্তে পৌঁছাতে হবে ।
রিফাত ছুটতে শুরু করল । সে দৌড়াতে শুরু করল তার টানেলের খোলা প্রান্তের দিকে । তাকে সেখানে পৌঁছাতেই হবে ।তার জন্য যে অপেক্ষায় আছে ভালবাসার বিশাল এক পৃথিবী ………………………………।।
Dept. of Petroleum & Mining Engineering , CUET.
FB ID: Durjoy Baidya

আঁধারের আলো

লিখেছেনঃ by Ashes Tz

ঘুম থেকে উঠেই ছেলেটি আবিষ্কার করল খুব আরামদায়ক কোথাও ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক বুঝতেও পারছে না সে,জায়গাটা কোথায়?! চোখ দুটি দিয়ে আবছা আবছা চারিদিকে চেয়ে দেখছে, তবুও সবকিছু স্পষ্ট নয়। রুমটা সাদা, আলিশান ফার্নিচার, সবকিছুই সাদা কাপড়ে আবৃত। ছেলেটি বুঝতে পারল সে এখন হাসপাতালে। তবে এটি যেন তেন হাসপাতাল নয়,খুবই ব্যয়বহুল হাসপাতাল। সে পূর্বের ঘটনা চিন্তা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু মাথা প্রচন্ড ব্যাথা। হাত,পা,মাথার ব্যান্ডিস লাগানো। রুমে নার্স এবং ডাক্তার এল,তারা কি নিয়ে কথা বলছে তার কিছুই বুঝতে পারছে না,নার্স এসে একটি ইনজেকশন দিল,আবার ঘুমিয়ে পড়ল ছেলেটা। সন্ধ্যার সময় চোখ খুলে দেখল একজন যুবতী ডাক্তার আর নার্স কথা বলছেন, ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল ডাক্তারকেঃ
-ডাক্তার,আমি এখানে কেন? কি হয়েছে আমার?
-ও..আপনার জ্ঞান এসেছে তাহলে??
-কি হয়েছিল আমার? আমি কিছুই মনে করতে পারছি না!
-আপনি মারাত্মক জখম হয়েছিলেন, তবে মাথায় খুব একটা আঘাত লাগেনি,তবে রক্ত ঝরেছিল খুব,তাও বেঁচে গিয়েছেন। আপনি ৫দিন কোমাতে ছিলেন তবুও।
ছেলেটি কোন জবাব দিল না, চুপচাপ শুনল। ডাক্তার তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
-নাম কি আপনার?
-আঁধার
-আপনার কারো কি আসার সম্ভাবনা আছে? আত্মীয়,বাবা মা?
-আমার কেউই নেই
-বাবা মা?
-বেঁচে নেই

-আমি দুঃখিত।আজকে আপনি পূর্ণ বিশ্রাম নিন,কাল দেখা হবে,কেমন..।
বাইকটি খুব স্পীডে চলছে রং সাইড দিয়ে,আঁধার এবং তার বন্ধু বসে আছে,বন্ধুটি তাকে বার বার নিষেধ করছে আসতে চালা বাইক,আঁধারের জবাব একটাই,১০লাখ টাকার মামলা,নিজের জীবন দিয়ে দিব তবুও টাকা লাগবেই।আরেকটা বাইক একই গতিতে চলছে।আঁধার খেয়াল করল যে তার বিপরীতপক্ষ বাইকটি স্পীড কমিয়ে দিল আর অনেক পিছে পড়ে রইল,আঁধার একটি মূহুর্তের জন্য পিছনে তাকাল,তখনই তার বন্ধুর চিত্‍কার..”আঁধার সামনে…..”আঁধার সামনে তাকাতেই…
ঘুম ভেঙ্গে গেল আঁধারের,উঠে বসে,খুব ঘামছে সে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ১০টা,উঠে বসে।সেই ডাক্তার এল চেক আপ করতে।ডাক্তার তার অবস্হা দেখে পানি দিল ওষুধ খেতে আর বললঃ
-মিঃ আঁধার,খুব খারাপ দুঃস্বপ্ন দেখেছেন মনে হয়?
-অনেকটা ওরকমই
-আপনি কি বলতে পারবেন,ঐ দিন আপনার কি হয়েছিল?
-বাইক এক্সিডেন্ট

-সেটা আমি যানি,কিন্তু মূল কাহিনীটা কি?
-বাবা মা কার এক্সিডেন্ট এ মারা যান,ব্যাংকে ১কোটি টাকা লোন থাকায় জমিজমা সবকিছু নিয়ে যায় ব্যাংক।তবুও শোধ হয়নি কিছু।থেকে যায় ১০লাখ টাকা।বাইক এ করে রেস লাগাই,রং সাইড দিয়ে বন্ধুদের সাথে,তখনই এক্সিডেন্ট হয়,তারপর এখানে।
-আপনি এখন কোথায় থাকেন?
-আমার বন্ধুর কাছে,আচ্ছা,যে বন্ধুটা আমার বাইকে ছিল সে কি বেঁচে আছে?
-দুজন এসেছিল হাসপাতালে,তার মাঝে আপনি বেঁচে ছিলেন
-ও মাই গড!!!
-আচ্ছা,আমি এখন যাই।সন্ধ্যায় আসব,যদি কিছু লাগে নার্সকে বলবেন।
বেশীরভাগ সময় তার ঘুমেই কেটে যায়।সন্ধ্যা গড়িয়ে এল।আঁধার জেগেই ছিল।ডাক্তার প্রবেশ করতে আঁধার উঠে বসলঃ
-আচ্ছা,আর কোন ডাক্তার আসে না কেন?শুধুই যে আপনি আসেন চেক আপ করতে?
-আপনি আমার কেয়ার এ আছেন,সিনিয়র ডাক্তার আসবে আপনার রিলিজের সময়।ও হ্যাঁ,আপনার জন্য কিছু ফল এনেছি,খেয়ে নিবেন।
-আপনি এত কিছু কেন করছেন?

-patient দের জন্য করতে হয়,আর আপনার তো কেউ নেই খেয়াল করার জন্য তাই আমিই যতটুকু পারছি করছি।
-আপনাকে ধন্যবাদ,আচ্ছা ডাক্তার আমার বাইকটা এখন কোথায়?
-জাহান্নামে (কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠল)আপনি মৃত্যু থেকে ফিরে আসলেন,আবার বাইকের খোঁজ করছেন!!!আজব মানুষতো!
-আমি তো শুধু জিজ্ঞাসা করলাম
-দুঃখিত,আপনার সাথে এভাবে বলা ঠিক হয় নি।আপনি রেষ্ট নিন।
তারপরদিন ডাক্তার এল চেক আপ করতে।আঁধার প্রায় মোটামুটি সুস্হ।তবে একমাস বিশ্রামের প্রয়োজন।ঘাঁ গুলা পুরোটা সেরে উঠে নি।
আঁধার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলঃ
-আমাকে কবে রিলিজ করা হবে?
-২দিন এর মাঝে,কিন্তু আপনি কোথায় উঠবেন?আপনারতো ১মাস বিশ্রামের প্রয়োজন।
-সেটা তো জানি না,১মাস এখানে থাকতে পারব না?
-সে রকম কোন নিয়ম নেই,তবে ব্যবস্হা করা যেতে পারে,আমি দেখছি কি করা যায়।তবে আপনার কোন আত্মীয়কে থাকতে হবে সবসময়,সেখানে কোন নার্সকে রাখা হবে না,কেউই থাকবে না।
-তাহলে আমি একা কি করব?
-সমস্যা নেই,কোন ব্যবস্হা হবেই।


দেখতে দেখতে ২দিন পার হয়ে এল,হাসপাতালেই ব্যবস্হা হল।আলাদা সেকশন আছে।নতুন কক্ষ,নতুন পরিবেশ,সাধারণ বেড,সোফা আর খাবারের টুকটাক আসবাদপত্র।আঁধার চিন্তা করছে কে আসবে,খেয়াল করবে তার জন্য।ডাক্তার আমাকে এখানে রেখে গেল পঁচে মরার জন্য?বোধ হয় সে ভেবেছে আমি ঠাট্টা করছি,এজন্য এখানে রেখে দিলেন যাতে কেউ এসে নিয়ে যাবেন এ ভেবে!সকালবেলায় ডাক্তারটি প্রবেশ করল।আঁধার জিজ্ঞাসা করলঃ
-আমার কি কেউ এসেছে?
-কারও কি আসার কথা আছে?
-না..তবে আপনি যে ব্যবস্হা করলেন,তাই ভাবলাম,কিন্তু এত সকালে চেকআপ করতে এলেন যে?
-আমি এখন আপনার অভিভাবক,ডাক্তার নই।
এ কথা শুনে আঁধার অবাক হল,জিজ্ঞাসা করলঃ
-আপনি আমার জন্য কেন এত করছেন?
-এসব এর জবাব আপনাকে পরে দেব।এখন আপনার জন্য breakfast এনেছি,তারাতারি সেরে ফেলুন।
-আচ্ছা,এখানে আসাতে নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়নি?
-এত ভাবতে হবে না,আমি সব ব্যবস্হা করে ফেলেছি।
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

-আপনার জন্য একটি মোবাইল এনেছি,যখনই প্রয়োজন পড়বে আমাকে ফোন দিবেন।
এভাবে আস্তে আস্তে এক এক করে দিন গড়িয়ে উঠল।আঁধার তাকে ডাক্তার বলত,কখনও নাম ধরে ডাকত না,নাম যানার প্রয়োজনবোধ করেনি।মাঝে মাঝে সে দেখত ডাক্তারটি বাসায় নি গিয়ে সোফার ঘুমিয়ে পড়েছে।একদিন আঁধার বলেই বসলঃ
-আচ্ছা ডাক্তার,আপনি বাসায় যান না মাঝে মাঝে,আপনার পরিবার টেনশন করে না?
-আমি আলাদা থাকি।
-আপনি বিয়ে করেন নি?
-করেছিলাম,কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে ছিল না কখনও
-মানে?
-এত কিছু বুঝতে হবে না।আপনি তারাতারি সুস্হ হতে পারলেই আমার দ্বায়িত্ব শেষ জনাব।
আঁধার সর্বদা এক ধরণের দূরত্ব রাখত,আর ভাবত কেন এত কিছু করছে মেয়েটি তার জন্য?উত্তর খুঁজে পেত না।দেখতে দেখতে পুরোপুরি সুস্হ হয়ে উঠল।শেষদিনে আঁধার হাঁটতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে।ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলঃ
-এখন কোথায় যাবেন?
-যানি না।যে বন্ধুর কাছে থাকতাম সেও মারা গিয়েছে..দেখা যাক,একটা ব্যবস্হা করা যাবে।
-চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
হাসপাতাল থেকে বার হওয়ার সময় আঁধার মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলঃ
-আমার মোট বিল কত হয়েছে?
-ওসব নিয়ে কিচ্ছু ভাবতে হবে না আপনাকে।এসব টেনশন মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।
-আপনি আমার এত উপকার করলেন,আর আপনার নামটিও যানা হল না!
-আমি আলো।
-মানে!!!আপনি জোক করছেন?
-না,আমি আঁধারের আলো।
একথাটি শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আঁধার।মেয়েটি বিদায় দিয়ে চলে গেল ভিতরে।আঁধার পাশের রেষ্টুরেন্টে বসে চিন্তা করছে,ডাক্তারটি কি বলতে চাইল আসলে?এটাই কি তার প্রাপ্য!এ জন্যই কি সে এতকিছু করল তার জন্য?আঁধারের আলো হওয়ার জন্য???
আর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় আঁধারের মাঝে এক ধরণের চাপা কষ্ট অনুভব করল।কোন মূল্যবান কিছু আজ ফেলে এসেছে বোধহয়।
বিকাল হয়ে এল,মোবাইলটি বেজে উঠল।দেখতে পেল ডাক্তারটি ফোন দিয়েছে।
-কোথায় আপনি,জনাব আঁধার?
-আমি হাসপাতালের পাশের রেষ্টুরেন্টে।
মেয়েটি এল আঁধারের কাছে।এবার কোন ডাক্তার বেশে নয়।এসেই বলে উঠলঃ
-আমি জানতাম,আপনি বেশীদূর যাবেন না।আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এর জবাব দিতে এসেছি।আমার বিয়ে
হয়েছিল লাভ মেরেজ।খুব সুখেই ছিলাম আমরা।আমরা ২জনই ডাক্তার।বিয়ের ১মাস হয়েছিল।আমার স্বামীর যে জিনিসটা আমার অপছন্দ ছিল তা হল সে আপনার মত খুব রাফ বাইক চালাত।আমি মানা করতাম শুনতো না।ফলতো ঠিকই পেলাম আমি।আমাকে ছেয়ে একাই চলে গেল দূর দেশে।আমাকে নিয়েও গেল না।একা সময় কাটাতে হচ্ছে।তারপর দেখলাম আপনারও সে অবস্হা।তাই ভাবলাম আপনার ভুল ধরিয়ে দেই আমি।
মেয়েটি কাঁদছে।
আঁধার মেয়েটির হাত ধরে বলল,”আমি যদি এ হাত কখনও না ছাড়তে চাই তাহলে আপনার কি কোন সমস্যা আছে?”
মেয়েটি উত্তর দিল,”শর্ত আছে আমার,..তুমি কখনও বাইক চালাবে না,আমাকে ওয়াদা কর।”
আঁধার বলল,”আপনার ওয়াদা মনে রেখে এ নতুন পথ চলার চেষ্টা করব।চলবেন আমার সাথে?”মেয়েটি উত্তর দিল,”তোমার সাথে পথ চলতেই আজ আমি নিজেকে আঁধারের আলো বলেছি।”
আঁধার চোখ মুছে দিল,কিছুক্ষণ পর আলো বলে উঠল,”এই ছেলে,তুমি আমাকে আপনি বলছ কেন?”"ওকে ম্যাম,আপনাকে আমি তুমি বলব,থুক্কু তোমাকে আমি তুমি বলব,”জবাব এল আঁধারের।।

মরীচিকা

লিখেছেনঃ Mahidul Islam Nakib

১৪ই ফেব্রুয়ারী বলে কথা…! জীবনে প্রথমবারের মত কোন প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরতে যাব। অনেক কষ্টে আজকের দিনটা মেনেজ করেছি।একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই সব কাজ শুরু করলাম। তাড়াতাড়ি গোসল করে নাস্তা করে নিলাম কোনরকম।
মা বলল, “আজ কি হল তোর? এমন ছোটা ছুটি করছিস কেন তুই?”
আমি বললাম বসন্ত এসেছে… মা বলল এ আর নতুন কি… সেটা তো সব সময়ই আসে।
আমি বললাম… নতুন কিছু আছে মা…পরে বলবো ।
এদিকে আমি ব্যস্ত হয়ে পরলাম আমার ড্রেসিং নিয়ে। শার্ট ম্যাচ করেছে কিনা… প্যান্ট ম্যাচ করেছে কিনা… কোনরকমে ড্রেসিং শেষ করে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি বাসা থেকে। মা বললেন… “কিরে, আজ মা কে বলে যাবিনা?” (এমনি সময় কখনও মা কে না বলে বাহিরে যাইনা… যাওয়ার আগে মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন)
আজ বললাম…”অনেক কষ্টে জেল দিয়ে Lovely লুক বানিয়েছি। আজ মাথায় হাত না বুলিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দাও।”
মা বলল… “তুই কি সারা জীবন এরকমই থাকবি? আজ তোর বাবা আসুক…”
আল্লাহ হাফিয বলে বের হয়ে আসলাম।। আসার সময় ছোট বোন ডাক দিয়ে বলল “তোমার মানি ব্যাগ” — ভুল করে রেখে এসেছিলাম।
তাড়াতাড়ি করে মেইন রোড এ এলাম। বাবার চাকরির জন্য আমরা শহরের বাহিরে থাকি। কোন ট্যাক্সি আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাবেনা… সবাই বলে সিটি গেট। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা পেলাম যে আগ্রাবাদ যেতে রাজি হল। বিসমিল্লাহ বলে উঠে পরলাম। বললাম ভাই একটু জোরে চালান। দেরি হলে আমার খবর আছে। এবার ড্রাইভার এর সাথে আলাপ শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তার খবর। বললাম… “আজ ভালবাসা দিবস… ভাবির জন্য কিছু কেনেননি?”
তিনি বললেন গরিবের আবার ভালবাসা…
বড়পোল এসে ট্যাক্সি থামিয়ে দিল।। আমি বললাম… “কি হল আবার?”
সে বলল… ট্যাক্সি আর যাবেনা। নষ্ট হয়ে গেছে। কথা বাড়ালাম না। ভাড়া দিলাম। সে বলল তার কাছে Change নাই। আমি বললাম… “বাকিটা রেখে দেন। ভাবির জন্য ফুল কিনে নিয়ে যেয়েন।” কথাটা সুনে সে আনন্দ পেল নাকি কষ্ট পেল তা শুনার সময় আমার নেই। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা রিকশা নিলাম। তার ফাকে আরও একটা কাজ করলাম…
লাকি প্লাজার সামনে গিয়ে দেখি মহারানী আমার জন্য দাড়িয়ে আছেন! “Ladies First” — কথাটার কথা মনে পড়ল। মনে হয় বেশীক্ষণ হয়নি তিনি এসেছেন।। চোখে মুখে এখনও রাগ দেখা যাচ্ছে না। তিনি কিছু বলার আগেই আমি ট্যাক্সি থেকে নেমে কেনা ফুলগুলো তাকে দিলাম। আমাকে থ্যাংকস বলে আমার গিফটটা এগিয়ে দিলেন। ওমা! এটা কি।। অবাক হলাম। একটা ব্রেসলেট,স্কাই কালার এর স্টোন বসানো।। ওই যে , আমার ফেভারিট সালমান খান এর টা ! অনেক আনন্দ পেলাম। সাইলেন্ট হয়ে গেলাম।
আবার মহারানীর ডাকে নীরবতা ভাঙল। কুশল বিনিময় শেষ করে আজকের প্ল্যান গুলো বাস্তবায়ন এর জন্য রেডি হলাম। যেহেতু Ice-Cream খুব ফেভারিট তাই ঠাণ্ডার মধ্যেও ওটা দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলেন। Ice-Cream নেয়া হল। তিনি আমাকে আগে দিলেন। প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করলাম। ওমা! এটা কেমন Ice-Cream এত শক্ত কেন??? আবার ট্রাই করলাম। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম.. ও ভাই, ইগলু কোম্পানি Ice-Cream শক্ত বানাচ্ছে কবে থেকে? একটু জোরেই বলেছিলাম।
এমন সময় আমার পাকিস্তানি রুম-ম্যাট আমাকে ডেকে বলল, “Yaar!! Kabh tak ice-cream somaj ke mobile khate rowge??”
ধড়পড় করেউঠে বসলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম এতক্ষণ কি হচ্ছিল।
দেখি আমার Nokia C-1 এর কী-প্যাড শেষ। ভাগ্য ভাল ডিসপ্লে তে কামড় পরেনি। পরলেই বা কি? মোবাইল তো হাজার হাজার পাব। এমন স্বপ্ন কি কখনও পাব?
দুঃখ হল বাকিটা দেখতে পারিনি।


উৎসর্গ- অজানা মেয়ে রুদ্মি

বাঁধ না বন্ধন?

লেখক-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

১.
আকাশে মেঘ করছে.. এখানে বসে থাকাটা ঠিক হব কিনা বুঝে উঠতে পারছে না কাঞ্চন.. প্রায় ৩-৪ ঘন্টা হতে চলছে, কিন্তু মানুষটার কোনো নাম গন্ধ নেই.. জায়গাটাকে আরো ভালো করে দেখে নিলো, ভুল জায়গায় চলে আসেনি তো সে? নাহ.. এই তো সেই জায়গা যেখানে গত ২৪ দিন ধরে প্রতিদিন নয়নের সাথে আসে সে, কখনো নিজে আসে আর কখনো নয়ন বাসা থেকে পিক করে নিয়ে আসে.. বাচ্চা-কাচ্চা, বুড়োবুড়ি, প্রেমিক-প্রেমিকা যারাই ছিল সবাই বৃষ্টির ডাকে পিছমোড়া করে ভাগছে.. জোরে গর্জন হয়ে বাজ পরে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই.. কাঞ্চন এক পশলায় ভিজে গেল, আর ওঠার ইচ্ছা হলনা.. ব্যাপারটা কি বৃষ্টির ভালোলাগায়, নাকি মানুষটার প্রতি অভিমানে তা এই মুহুর্তে বোঝাও যাচ্ছে না.. দুইদিন পরে কাঞ্চন এর ফ্লাইট, আর এইটাই হয়তবা যাওয়ার আগে নয়নের সাথে শেষ দেখা হত.. নয়নকে দেওয়া কথা রাখতেই আজ লাল-কালো জর্জেট শাড়ি, লাল চুরি, লাল টিপ আর কাজল দিয়ে সেজে এসেছে কাঞ্চন, এইসব যে ওর খুব পছন্দের.. কিন্তু সব যে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেল.. যাক..
২.
কাঞ্চন আর নয়নের দেখা হয় এই ঘটনার প্রায় ৪ বছর আগে.. গত তিন বছর আগে ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে.. আর তখন থেকে ওরা শুধু বন্ধুই.. যারা এই ব্যাপারটা মেনে নেয় তারা মানে, অনেকে এইটা জেনেও ব্যপারটা মানে না; আর যারা ওদের অতো ভালো চেনে না তাদের কাছে এইটা ভাববার কোনো কারণ নেই যে ওরা শুধু বন্ধু.. কিন্তু যারা ওদের সবচেয়ে কাছের মানুষ তারা এমন কিছু জানে যা নয়ন আর কাঞ্চন দুইজনের কেউই জানে না বা বুঝতে চায় না.. কিন্তু এইবার কাঞ্চনের বাইরে পড়তে যাওয়াটা ওদের দুইজনকেই দুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে.. গত এক মাসে এমন একদিন যায়নি যে ওরা পার্কে দেখা করেনি.. কিছু ঘটার অপেক্ষা দুইজনেরই, কিন্তু কি ঘটবে? আদৌ কি ঘটবে?
৩.
পুরো সময়টা ছটফট করে কাটিয়েছে নয়ন, কিন্তু আজকে প্রজেক্ট এর কাজ না শেষ করলে স্যার উঠতে দিচ্ছিল না, এমনকি মোবাইলটা নিয়ে রেখে দিয়েছেন.. পুরো এক মাসের কাজ একদিনে শেষ করা কি যা তা কথা? ভুল কি নিজের নাকি কাঞ্চন এর? এই সময়টাই ও পেল বিদেশ পাড়ি দেয়ার জন্য.. কখনো যে এমন একটা দিন আসতে পারে ভাবতেও পারেনি নয়ন.. কিন্তু এইভাবে ওকে যেতে দিতে পারছে না সে, কিছু একটা বাকি রয়ে গেছে.. সেইটা কি… ধুর! ভেবে কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না.. কাঞ্চন নিশ্চই অনেক রেগে আছে.. আজকে যাওয়ার আগে শেষ দেখা হওয়ার কথা ছিল… প্রায় ৬ ঘন্টা আগে… নিশ্চই কাঞ্চন অপেক্ষা করে চলে গেছে এতক্ষণে.. বাইরে যেই ঝুম বৃষ্টি! ভাবতে ভাবতে স্যার এর রুম এর সামনে এসে পৌছল সে.. আতিফ ওর প্রজেক্ট জমা দিয়ে বের হয়ে আসছে.. নয়নও ঢুকে জমা দিয়ে বের হলো আর আতিফ কে সাথে নিয়ে বাসার পথে একটা রিক্সা ধরল.. মোবাইল চেক করলো, “29 Missed Calls”.. আতিফ এর জিজ্ঞাসু চোখ..
নয়ন: কিছু বলবি?
আতিফ: তুই কাঞ্চন কে জানাসনি যে আজকে যাবি না?
নয়ন: আমি নিজে কি জানতাম?
আতিফ: নিশ্চই এইটাও জানাসনি যে তুই চাসনা ও যাক?
নয়ন চুপ..
আতিফ: আর এইটাও না যে তুই ওকে কতটা চাস?
নয়ন: আমি ওকে এমন কিছুই বলব না.. অন্তত এখন না.. এখন ও ব্যাপারটাকে ঐভাবে উপলব্ধি করতে পারবে না..
আতিফ: তোর এইটা কেন মনে হচ্ছে?
নয়ন: কারণ ও নিজের বিদেশে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত.. আমি চাই না ওর ভবিষ্যতের পথে বাধা হতে..
আতিফ: Are you serious? তুই এইটাও দেখতে পাসনা, একটা মেয়ে যার কাল বাদে পরশু ফ্লাইট সে নিজের যাওয়ার জন্য ব্যস্ত না হয়ে গত একমাস ধরে প্রতিদিন তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য ব্যস্ত.. তুই কি ওর মনের ব্যস্ততাটা সত্যি উপলব্ধি করতে পারছিস না? আমি কিছুই জানিনা নয়ন, তুই আজকেই ওকে সব খুলে বলবি… জরুরি না যে তোকে ভালোবাসলে ও থেকে যাবে, কিন্তু ও যখন ফিরবে শুধুমাত্র তোর জন্যই ফিরবে…
নয়ন: আমাদের দেখা করা সময় গত সাড়ে ছঘন্টা আগে চলে গেছে… আমি আজ ওকে শাড়ি পরে আসতে বলেছিলাম.. নিশ্চই খুব রেজে থাকবে আমার উপর.. কিন্তু আজকে দেখা হলেও ওকে আমি বলতাম না..
আতিফ: ঠিক আছে.. চল আমরা পার্ক হয়ে যাব, যদি কাঞ্চন ওখানে না থাকে তাহলে আমি এই ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলব না.. আর যদি ও এখনো ওখানে থাকে, তুইই ঠিক করবি কি করতে হবে..
নয়ন: এই, রিক্সা ঘুরাও…
৪.
২০ মিনিট এর মধ্যে পার্ক এর গেইট এর সামনে..
আতিফ: আমি যা বুঝি তা বুঝতে তোর আরো ২০ বছর লেগে যাবে.. তুই ভিতরে যা.. আমি এই রিক্সা নিয়েই যাচ্ছি.. তোর বাসায় আন্টির হাতের ডিনার খেয়ে তবে বাসায় ফিরব.. টা টা!
আতিফ কে আটকানো গেলনা.. যাহ! এখন রিক্সা খুজতে হবে… ছাতা নিলেও অর্ধেক ভিজে গেছে সে.. ভিতরে গিয়েই বা কি লাভ.. খোলা খালি পার্ক, কেউ দেখে ফেললে ড্রাগখোর ভেবে বসবে.. একটাও রিক্সা দেখা যাচ্ছে না.. আতিফটাও পাগল… কিন্তু ওর কথা বিশ্বাস করতে মন চায়.. যদি সত্যি কাঞ্চনও তেমনি করে ভেবে থাকে.. যদি ভিতরে কাঞ্চন বসে থাকে.. কিন্তু তাতে তো কাঞ্চনের অসুস্থ হবার ভয় থাকে.. “এই রিক্সা দাড়াও”… কেমন যেন বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো.. “১ মিনিট দাড়াও, এখনি আসছি”..
দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যা দেখল নয়নের দাড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে গেল.. ছাতা হাত থেকে পরে গিয়ে এক ঝলকে পুরোপুরি ভিজে গেল সে, আর ভিজে গেল মনটাও.. এতটা অবাক ও কখনই হয়নি.. কাঞ্চন বেঞ্চিতে বসে আছে.. থর থর করে কাপছে.. ঠোট কামড়ে ধরে আছে.. ও কাদছে.. বৃষ্টির পানির সাথে চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে যাওয়া সত্তেও নয়ন বুঝলো ও কাদছে.. আস্তে আস্তে আতিফ এর বলা সব কথাগুলো নয়নের মাথায় সাফ হয়ে গেল… ছিঃ আতিফ যা বুঝলো, তা সে নিজে কেন কখনো বুঝলো না? কাঞ্চন এর জন্য ও নিজে যা করে আর কাঞ্চন ওর জন্য যা করে তার গভীরতা বুঝতে এতটা সময় লেগে গেল? আর বুকভরা আশা বহন করেই হয়তবা সে কাঞ্চন কে বিদায় দিত, কিন্তু কাঞ্চন যে বুকে পাথর বেধে যেত.. অনিশ্চয়তার আগুনে পুড়ে.. সারাজীবনের জন্য নয়নের হয়ে থাকার প্রত্যাশা কে মাটিচাপা দিয়ে.. নিজের হতে যাওয়া ভুলের কথা ভেবেই হয়তবা নয়নের ভিতরে নিঃশব্দ একটা কান্না ফুপরে কেদে উঠলো.. দ্রুত গিয়ে ও কাঞ্চনের হাতটা ধরে টেনে পার্কের বাইরে নিয়ে আসলো আর রিক্সায় চড়ে বসলো..
কাঞ্চন নিশ্চুপ.. একটিবার তাকায়নি পর্যন্ত নয়নের দিকে.. কান্নাও বন্ধ, শুধু নিচের দিকে চেয়ে আছে..
নয়ন: এইবার এমনিতে যেতে দিলে তুই নিশ্চই আমাকে মাফ করতি না? বল না কাঞ্চন? আর ফিরে আসতিনা?
কাঞ্চন রাগ আর প্রশ্ন ভরা ভেজা চোখে তাকালো নয়নের চোখে..
নয়ন: তুই বল, তুইও কি বুঝতে পেরেছিলি? আমি তো সব সময় একটু দেরিতেই বুঝি..
আলতো করে কাঞ্চন এর হাত দুটো নিজের হাতে নিলো সে.. কাঞ্চন এখনো সোজা নয়নের চোখে তাকিয়ে আছে..
নয়ন: পারবি না সারাজীবন আমার বুঝাশুনার timetable এর দায়িত্ব নিতে? কিন্তু প্রমিস কর এমন ভয়ঙ্করভাবে আর কখনো শিক্ষা দিবি না.. মানি ব্যাপারটা বড় রোমান্টিক.. কিন্তু আমি যদি এমন কিছু করি তাহলে তোর কেমন লাগবে?
কাঞ্চন এইবার নিচের দিকে তাকিয়ে ফুপরে কেদে উঠলো..
নয়ন কাঞ্চন এর গালে আলতো করে ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, ” তোকে যে বড় ভালবাসি!”
কাঞ্চন কিচ্ছুটি না বলে নয়নকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলো.. এ যে অনেকদিনের জমানো আর্তনাদ…..

ছোট্ট বেলার প্রেম

ষষ্ঠ শ্রেণীতে তখন পড়ি, সময় টা বর্ষাকাল...
বাবা মা চাকুরি করেন সারাদিন বাসায় থাকেন না যার ফলে আমি মানুষের বাসায় থেকে পড়া শোনা করি বলা যায়, সকালে স্কুলে যাই স্কুল থেকে এসে সারাদিন ওইবাসায় থাকি, খাওয়া দাওয়া সেখানেই, কখন ও বাবার বন্ধুর বাসাকখন ও বা নানা বাসা এইভাবে বানরের মতন এক ডাল থেকে আরেক ডালে ঝুলি টাইপ অবস্থা, তবে ম্যাক্সিমাম টাইম রাস্তায় ই থাকি বলা যায় মানুষের বাসায় দেখি মা বাবা কত আদর করে ছেলে মেয়েকে ভাতখাওয়ায় আর আমার বাবামা সারাদিন অফিস থাকে, রাতে বাসায় ফিরলেও কথা হয়না বললেই হয় তাই এসব সিন দেখলে বুকের ভেতর শুন্যতা বেড়ে যায়,
যাই হোক ভ্যানে করে স্কুলে যাই, আমার সাথে সম বয়েসী একটা মেয়ে ও যায় সে পড়ে পাশের গার্লস স্কুলে আমি বয়েজ স্কুলে,
এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব এক কোচিং এপড়ি তখন আবার বাফায় গান ও শিখি, এভাবেই একদিন হঠাৎ ও আমাকে বলল,
- এই নিবিড়,
- বল,
- আমি না তোকে অনেক পছন্দ করি,
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম সারা জীবন এই লাইন সালমানশাহ শাবনুর কে বলে এসেছে, শাবনুর তো বলে নি, এ কথার উত্তরে সালমান শাহ কি বলত? শাবনুর তো লজ্জায় দৌড় দিত।
আমি শাবনুর না, সালমান শাহ তাই বুক ফুলিয়ে বললাম, আমিও তোকে পছন্দ করি।
সে মিষ্টি হেসে জবাবদিল ঠিক আছে যদি করেই থাকিস, আজ স্কুল ছুটির পর কুত্তা ওয়ালা বাসার সামনে কদম ফুল নিয়ে দাঁড়াবি ঠিক আছে?
আমি নায়কের মতন জবাবদিলাম অবশ্যই কিন্তু ভেতরে ভেতরে জমে গেলাম, কুত্তা ওয়ালা বাসায় ইয়া বড় বড় বিদেশী কুকুর আছেগেলেই চিল্লায়, দরজায় লেখা থাকে কুকুর হতে সাবধান, তবে বাড়ির সামনেই একটা কদম গাছ।
যেই কথা সেই কাজ ১২ টায় ছুটি সেই খেয়াল কি আছে টিফিন টাইমেইস্কুল পালালাম, ভয়ে ভয়ে কুত্তা ওয়ালা বাড়ির সামনে গেলাম,
সামনে যেয়ে দেখি কুকুর বিরাল কিছুই নেই বরং বড় পাজেরো একটা গাড়ি ধুচ্ছেন একজন বয়স্ক মানুষ, আমি কাছে গিয়ে দাড়াতেই বললেন,
- বাবু কিছু বলবে?
আমি ভয় পেতে চাইলাম, তবে হাসিমুখ দেখে কেন জানি ভয় আসলো না। বললাম,
- একটা কদম ফুল দেয়া যাবে?
লোকটি হেসে বলল
,- ফুল তো গাছেই মানায় বাবু, তবু তুমি যদি চাও আমি তোমাকে দেব একটা,
ভদ্রলোক ভেতরে চলে গেলেন কিছুক্ষণের মাঝে একটা কদম ফুল এনে বললেন,
- এখন খুশী?
আমি ধন্যবাদের বালাই না করে ফুল নিয়ে হাটা দিলাম, সিনেমার নায়করা ধন্যবাদের বালাই করে না।
অনেকক্ষণ ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছি আর মনে মনে কথা ঠিক করছি, সে সময়া আমার পড়ার দৌড় রবীন্দ্রনাথ আর শরৎচন্দ্র পর্যন্তইকারন গান গেয়ে স্কুলথেকে এসব বই ই পুরস্কার পাই, কোন মতে কিছু ঠিক করে দাড়িয়ে রইলাম রাস্তায়।
স্কুল ছুটি দিল আমি দাড়িয়ে আছি, সে এগিয়ে আসছে, হঠাৎ আমাদের অবাক করে তুমুল বৃষ্টি নামলো,হঠাৎ বৃষ্টি দেখে আমি দৌড়, পেছন ফিরে দেখি সেও আমার পেছন পেছন দৌড়ুচ্ছে,
শেষ পর্যন্ত দুজন গিয়ে থামলাম সেই কুত্তাওয়ালা বাড়ির কদম গাছের তলে, সেখানে তাকে কদম ফুলটি দিলাম, বৃষ্টি আর ঘাম আমাকে একাকার করে ফেলেছে এবং বহু প্রতীক্ষিত লাইন দুটি বললাম,
"তোমার জন্য মরতে পারি ও সুন্দরী তুমিগলার মালা,
এই যে দেখ তোমার জন্য আনছি ফুলের মালা, কন্যা ফিরা চাও"
সে আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ, জীবনে ১ম কোন মেয়ের হাত স্পর্শ করলাম, মনে আছে তার হাতের উষ্ণতা আমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে গিয়েছিল,
যদিও পড়ে বিরাট বিপদে পড়েছিলাম, সিনেমায় যেমন মিশা সওদাগর থাকে আমাদের ক্লাসেও ছিল নাম শাহীন, সে ব্যাপার টা দেখে ফেলেছিল ও পুরো ক্লাসে ছড়িয়ে দিয়েছিল,
"জানস সালমান না ডাললিং লয়া ঘুরে"
পরিশিষ্টঃ কথিত আছে কদম গাছের নিচে বর্ষার ১ম বৃষ্টিতে কোন প্রেমিক তার প্রেমিকা কে ১ম কদম ফুল দিলে তাদের সম্পর্ক কোন দিন ভাঙ্গেনা, আমাদের টাকিভাবে ভাঙল জানিনা,
সেই মেয়েটির নাম আমার মনে নেই কোথায় আছে তাও জানিনা, এর কদিন পড়েই তারা চলে গিয়েছিল ঢাকা ছেড়ে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, সিক্সে পড়া বালকের কষ্ট বিরাট কষ্ট তবে সেই কষ্ট সহজেই ভুলে যাওয়া যায় আমি ও ভুলে গিয়েছিলাম,
এখন ও একজন কে ভালোবাসি, নিজের চেয়ে ও বেশী ভালোবাসি.....

আকাশ-লীনা

- হ্যালো, আকাশ।
- বলো, লীনা।
- তুমি কোথায়?
- আমি একটু দূরে আছি,তোমার সাথে একটু পরে কথা বলি।
এই বলে আকাশ ফোন রেখে দিল। লীনা মন খারাপ করে আর ক্লাস ও করলোনা। বাসায় গিয়ে চুপচাপ শুয়েথাকলো। কিছুক্ষণ পরআকাশ ফোন করলো কিন্তু লীনা আর ফোন রিসিভ করে না। আকাশ একটা মেসেজ্ পাঠালো" sorry honey, i was little bit bz." লীনা আবার ফোন ব্যাক করলো:
- তুমি আজ দেখা করলেনা কেন?
- শোন লীনা, আমি তো সারাজীবন তোমারি আছি। একদিন না হয় দেখা হলোনা।
- আকাশ, আমি কখনো তোমাকে চোখের আড়ালহতে দেবোনা।
- আরে, পাগলি- চোখের আড়াল হবো কেন?
- আমার কেমন জানি ভয় হয়। আমার একটা কথা রাখবা?
- বলো
- তুমি বাইক চালাইয়োনা, প্লিজ।
- আরে, আমার কিচ্ছু হবেনা। আমি সাবধানেতো চালাই। তাছাড়া, তোমার ভালোবাসা আর তোমার দোয়া আমার সাথেই আছেই।
আর কিছু না বলে লাইনটা কেটে দিল লীনা। আকাশ লীনাকে অনেক বেশী ভালোবাসে কিন্তু তা ওভাবে কখনো প্রকাশ করেনা। তাই লীনা আকাশকে মাঝে মাঝে রোবট বলে ক্ষেপায়। আকাশ বলে, তোমার জন্য সব ভালোবাসা রাখা আছে।
আমাদের জীবনটা অনেক অদ্ভূত। আমরা যা চায় তার বেশীর ভাগই আমরা পাইনা। কোথা যেন পড়েছিলাম "তুমি যা চাও। মনের গভীর থেকে একমনে চাও, তাহলে তোমার চাওয়া পূর্ণ হবে"। জানিনা, কথাটা কতটুকু সত্য। তারপরও লীনা এই কথাটা মানে।
একদিন লীনা আকাশের সাথে দেখা করতে গেল। লীনা জানত না, এটাই তাদের জীবনে শেষ দেখা হবে। চুপচাপ দূ'জনে পাশাপাশি বসেছিল। আকাশ বললো, "আজকের বিকেলটা অনেক সুন্দর, তাইনা?" লীনা বলে " সুন্দর না ছাই। মেঘলা আকাশ। আর, বৃষ্টি আমার পছন্দ না। বৃষ্টি হলে কোথাও বের হতে পারিনা, রাস্তায় কাদা।" আকাশ বলে, "বৃষ্টিতেপাকা রাস্তায় খালিপায়ে হাটতে অনেক ভালো লাগে আর ঘুম... ওফ্, কি যে ভালো লাগে, এক কাপ চা আর রবীন্দ্রসংগীত।" কথা শেষ হতে না হতে লীনা বলল " তোমার আর আমার ভালো লাগা কখনো মিলেনা।" আর কিছু না বলে আকাশ মুচকি হাসলো এবং লীনা'র দিকে তাকিয়েরইল। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর হঠাৎ আকাশের ফোন আসলো। তার বন্ধু ফোন করছিল।
লীনা- তুমি কি এখন চলে যাবা?
আকাশ- না আরো কিছুক্ষণ আছি।
লীনা- আচ্ছা, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?
আকাশ- এটা কোন ধরনেরপ্রশ্ন! আমি তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসি।
লীনা- কেন জানি, তোমাকে নিয়ে আমার ভয় হয়। একদিন আমি তোমার আকাশে লীন হয়ে যাবো।
আকাশ- শোন পাগলি, আমাকে নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। এই যে আমি তোমার হাত ধরে আছি। আমি সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো। আর আমাকে এত বেশী ভালোবাস বলে তোমার মনে এই ভয়।
লীনা- জানিনা আকাশ, তোমার মাঝে এমন কি আছে যে তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা।
লীনা'র চোখে পানিতে টলমল করছিল। আকাশেরবুকে মাথা রেখে লীনা বলল,"আকাশ,তুমি আমাকে সারাজীবন তোমার ভালোবাসায় আমাকে আগলে রেখো"
আকাশের চোখেও পানি চলে আসলো, কিন্তু লীনাকে বুঝতে দিলনা।
বিকেল হয়ে এলো। আকাশ লীনা কে বললো"চলো,এইবার উঠা যাক্," এই বলে আকাশ লীনাকে একটা গোলাপ ফুল দিল। লীনাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আকাশ বাইক নিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেল।
ঘন্টা দু'য়েক পর আকাশের এক বন্ধু লীনাকে ফোন করে বললো " লীনা, তুমি একটু ঢাকা মেডিকেলেআস, আকাশ অপেক্ষা করছে।" লীনা কিছুই বুঝতে পারলোনা, ঘন্টা দু'য়েক আগে তো তার সাথে দেখা হলো। লীনা বলল " আকাশ কেমন আছে? আকাশের কিছু হয়নিতো?" আকাশের বন্ধু কিছুই উত্তর দিতে পারলোনা। শুধুবলল, লীনা, একটু তাড়াতাড়ি এসো। লীনা একটা সিএনজি নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে গেলো, আকাশের বন্ধু লীনাকে আকাশের কেবিনে নিয়ে গেল। লীনা আকাশকে দেখে নিস্তব্দ হয়ে গেল।আকাশকে চেনা যাচ্ছেনা। বাইক এক্সিডেন্ট এ আকাশের চেহারা চেনার উপায় যে ছিলনা। লীনা আকাশেরবুকে মাথা রেখে কান্না করতে লাগলো আর বলতে লাগলো "তুমি বলেছিলে,আমাকে সারাজীবন তোমার ভালোবাসায় আগলিয়ে রাখবে, কেন বলেছিলে আকাশ, কেন? আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে?"