আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

আলাপন

আলাপন
লিখেছেন-শায়েরী রায়

- তোমরা এত খারাপ কেনো বলোতো?
- কি ভুল হলো আবার!
- তুমি আমার একার হয়ে থাকতে পারোনা!কেনো অন্য মেয়েদের দিকে তাকাও?
- ও।
- ও কি!আমি মিথ্যা বলি নি।আমি খুব করে খেয়াল করেছি।সুন্দরের পূজারী বুঝলাম,তাই বলে সুন্দরীদের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকায় থাকবা?
কি চুপ কেনো?
- না বলো শুনছি।
- তোমার জন্য শুধু চুল একপাশে মেলিয়ে আসি,বিন্দু টিপটা কি খেয়াল করেছো কখনো!কিংবা হাতে কাঁচের চুড়িগুলো?
এগুলো বলতে ইচ্ছা করেনা,আজ বাধ্য হয়ে বলছি।
- কই দেখি?
- ঢং করবানা!তোমার সব ঢং আমার চেনা। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হলো,তবে কেনো পিছু নিয়েছিলে। কেনো বলেছিলে বাঁচবেনা আমাকে ছাড়া।এখন সব ফুরিয়ে গেছে তাইনা?
খুব বিরক্তি লাগে।ন্যাকামো লাগে। তাহলে কে বলেছিলো ন্যাকামোকে আশ্রয় দিতে?
- কাজল ছড়িয়ে যাচ্ছে!কিছুক্ষণ বাদে পেত্নী লাগবে, ঠিক করো।
- লাগুক পেত্নী। পেত্নীর সাথে প্রেম করতে হবেনা। যাই আমি। তুমি বসে বসে সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করো।
- আহা শুনো না, একটু বসো। অনেক রোঁদ! এই রোঁদে পিছু নিতে গেলে হাঁপায় যাবো।
- বলছেটা কে পিছু নিতে?
- আরে! ঐ!

ক্রিং ক্রিং..ক্রিং ক্রিং....ক্রিং ক্রিং.......
- হ্যালো..
- ঐ একটু বের হওনা। খুব ক্ষুদা পাইসে। চলো হোটেল থেকে কিছু খেয়ে আসি নাহলে কিছু বানায় আনো।
- আমি কি তোমার চাকর নাকি আর তোমাকে না বলেছি বাসায় ফোন দিতে না। বাবা যদি ধরতো ফোনটা?
- ঔ হিটলারকে ভয় পাই নাকি?
- খবরদার হিটলার বলবেনা! আর সময় মতো দেখবো সাহস কতোখানি আপনার।
- আচ্ছা বাদ দাও। বের হওনা একটু।
- পারবোনা।
- তাইলে আর কি। ঐ কথাই। রাণী ভুখা রাখতে চাইলে প্রজার কি দুঃসাহস!
- এখন এতো ভাল ভাল কথা বের হচ্ছে ব্যাপার কি?
- আরে সকালবেলা এক পাখি লোভ দেখাইয়া, হাতের নাগাল থেকে বের হয়ে গেলো।খাচার পাখি আমার!
আটকায় রাখতে হবেনা!
- ইশ্! কতো পাখি আশেপাশে, যাকে ইচ্ছা ধরো না!
- নাহ্। এক পাখিই ওলোটপালোট করে মারছে। আর লাগবেনা।
- ও। খুব জ্বালায় না?
- জ্বালায় মানে! কি সাবধানে রাখতে হয় জানো। কখন কে না কে শিকার করে ফেলে। শান্তিমতো একটু আদরও করতে পারিনা। চোখে চোখে রাখতে হয়!
পাখির রূপ যে কতো, পাখি নিজেও বুঝেনা। কিচিরমিচির করলেও যে শ্রবণসুখ পাই, সে বুঝেনা! কিভাবে বুঝাই বলোতো?
- অন্য পাখিদের দিকে তাকাবেনা!
- আরে কই আর তাকাই! একটু জ্বালা দিয়ে দেখি পাখি আমার জন্য ছটফট করে কিনা।
- ও তাহলে পাখিও বুঝায় দিবে জ্বালা কাকে বলে।
- আরে থাক থাক, এমনেই বুঝি! প্রতিদিন কতো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয় জানো।
বেড়ি লাগায় দিতে হবে পায়ে। উড়ার দেওয়ার পায়তারা করে শুধু। আর এদিকে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়।
- হইসে, আর ঢং করতে হবেনা।
- ঢং। ও আচ্ছা না বললে লুকাই আর সব বলে দিলে ঢং?
- হুম ঢং ই তো। কবি সাহিত্যিকরা বলে মেয়েরা ছলনাময়ী, ঐটা আসলে তোমরা!
- সব যদি বলেই দিই তবে তুমি বুঝে নিবে কোনটা?
- না বললে আমি বুঝবো কিভাবে। আমি মনোবিজ্ঞানী না!
- আমি যে সব বলতেও পারিনা!
- (দীর্ঘশ্বাস) তোমার না ক্ষুদা লাগসে?
- হুম
- কই তুমি?
- তোমার লেবু মিয়ার দোকানে। ব্যাটা তোমার ব্যালকনির সামনে আমার পায়চারি দেখে সন্দেহ করছে!
- কোনদিন যে বিপদে ফালাবা!
- হে হে হে। জলদি বের হও।
- হুম, কি খাবা বলো?
- ইয়ে মানে একটু ভাল্লুবাসাহ দিও! হা হা হা...
- কচু দিবো! ( মৃদু লাজুক হাসি) —

হারিয়ে যাওয়া মেঘ

হারিয়ে যাওয়া মেঘ
লিখেছেনঃ- শেষ রাতের আঁধার

- তারেক , তুমি বুঝতে পারছ না? আমি কি বলছি?
- না।
- তুমি না বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। আমি সত্যি কথা বলছি। সোজা কথা বলছি।
- আমি বিশ্বাস করব না।
- তোমার অবিশ্বাসে আমার কথা বা ডিসিশন কোনটাই পাল্টাবে না।

হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছে তারেক। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে কথাগুলো। কষ্ট পেতে ভাল লাগে না। তাই অবিশ্বাস করছে কথাটা। ভালবাসার মানুষের কথা বিশ্বাস করতে হয়। তবে মাঝে মাঝে কিছু অবিশ্বাস বিশ্বাসের পাল্লা ভারী করে। হিয়ার সাথে ৩ মাসের সম্পর্ক। খুব বেশি সময় তা না। তবুও অনেক ভালবাসায় সম্পর্ক গভীর হয়েছে। গভীরতা অনেক। সম্পর্কে ডুবে গেছে তারেক। ভেসে উঠতে পারছে না। চোখে মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট তারেকের। হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল...
-তুমি আমার সাথে এতদিন অভিনয় করেছ?
- আমি তা বলছি না। তবে আমার নাজিমের সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর, খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। যা পাই তাই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কষ্ট ভুলে থাকার জন্য।তুমি সে সময়টাতে আমার জীবনে এসেছ। আমার কষ্ট দুঃখগুলো ভুলিয়ে দিয়েছ। আমি ঐ সময়টাতে তোমাকে অনেক আপন করে নিয়েছিলাম। কোন সময় যে সম্পর্কটা ভালবাসার দিকে চলে গিয়েছে টের পাইনি। ভালবেসে ফেলেছিলাম । নাজিমকে ভুলে থাকার জন্য তোমার ভালবাসায় সায় দিয়েছিলাম।কিন্তু নাজিম আবার ফিরে আসবে আমি ভাবতে পারিনি। আমি মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম। নাজিম যদি কখনও ফিরে আসে আমি ওকে পাত্তা দিব না। আমার জীবনে ঠাই দিব না।কিন্তু ও আমার কাছে এসে আবার ভালবাসার কথা বলার পর আমার ভিতরে কি যেন হয়ে গিয়েছিল। জানিনা কি। আমি সত্যি দোটানায় পরে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। কিন্তু নাজিম আমার প্রথম ভালবাসা। আমি ওকে ভুলতে পারছি না। আমি তোমার ভিতর সবসময় নাজিমকে খুঁজেছি। নাজিমের মত করে চেয়েছি। তুমি নাজিমের থেকে অনেক ভাল ছেলে। তবুও আমি পারছি না তারেক।
- তুমি নাজিমকেও ভালবাস, আমাকেও বাস। আমার সমস্যা নেই।
- এটা সম্ভব না। একটু বাস্তব হিসেবে দেখ। তুমি যা বলছ তা অসম্ভব। আমার তোমাকে অথবা নাজিমকে যে কোন একজনকেই ভালবাসতে হবে। আর আমার জানিনা কেন নাজিমের প্রতি ভালবাসাটা বেশি। আমার হুট করে কাজটা করা উচিৎ হয় নি। প্লিজ তারেক আমাকে মাফ করে দাও। আমি সত্যি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে। আমরা ভাল বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তারেক। কিছুই বলার নেই। আটকে রাখার পথ নেই। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে খুব। মানুষ তার প্রথম মন থেকে বাসা ভালবাসা ভুলতে পারে না। হারাতে চায় না। হিয়াও চাচ্ছে না। তারেকও পারছে না। ছেড়ে দিতে। প্রথম ভালবাসা হারাতে। তবুও তারেক আস্তে করে বলল।.. " আমার একটা ইচ্ছা ছিল রাখবে?"
- বল।
- শেষ বার তোমার হাতটা একবার ধরতে দিবে? অল্প একটু সময়ের জন্য।

হিয়া হাতটা বাড়িয়ে দিল। তারেক ২ হাত দিয়ে হিয়ার ডান হাতটা ধরল। আলতো করে। ধরে রাখার জন্য না। একটু সময় ছুঁয়ে দেখার জন্য। সব ভালবাসা সবাই ধরে রাখতে পারে না। তারেক ভালবাসতে পারে। ধরে রাখতে পারে না। তারেক একটু হাসি দিয়ে বলল...
- আচ্ছা, ভাল থেক। আমি যাকে ভালবাসি তাকে পেলে ভালবাসার মানুষ হিসেবেই পাব। শুধু বন্ধু হিসেবে না। দোয়া করি সুখে থাক।
- আমাকে মাফ করে দিও তারেক। তুমি ভাল ছেলে। অনেক ভাল।আমি কত খারাপ । তোমাকে কষ্ট দিলাম।আমার পর যে তোমার জীবনে আসবে সে তোমাকে কখনও কষ্ট দিবে না দেখো!!! আচ্ছা আমি আসি।

মনের ব্যাপারগুলো অনেক জটিল। একেক জনের মনের একেক জটিলতা। একেক জনের একেক রকম, আবেগের পাল্টাপাল্টি।নিজের মনের ব্যাপারগুলো নিজেই হয়ত বুঝে না কেউ।
তারেক আকাশের দিকে তাকাল। আজ মেঘেদের কোন তাড়া নেই। কালো মেঘ, সাদা মেঘ, ধূসর মেঘ। কেউ ঝিম মেরে বসে আছে। কেউ ভেসে যাচ্ছে। একটু পর বৃষ্টি হবে। মেঘ অদৃশ্য হবে। মেঘের উপর মেঘ থেকে হবে পানির উপর পানি। বৃষ্টির উপর বৃষ্টি। সব মেঘ ঠিকই বৃষ্টি হয়ে যাবে। কালো মেঘ, সাদা মেঘ, ধূসর মেঘ। কেউ ঝিম মেরে বসে আছে। কেউ ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে তারেকের মিলালে চলে না। তারেক ঝিম মেরে বসে আছে। আর হিয়া চলে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে। তারেকের বৃষ্টি ঝরছে। চোখ থেকে। হিয়া বৃষ্টি ঝরাচ্ছে না। ভেসে যাচ্ছে। ও অন্য কোথাও ঝরাবে।

""লুল কিংবা তেতুল""

""লুল কিংবা তেতুল""
লিখেছেনঃ-পারভেজ এম রবিন

সাকিব সম্প্রতি কিঞ্চিত ক্যাচালে আছে। ক্যাচালের নাম কুলসুম; কুলসুম বানু। এই ভয়াবহুস্টিক ক্যাচাল তার গলায় মুক্তোর মালার মত যেই মহান ব্যক্তি ঝুলিয়ে দিয়েছেন, তিনি রবিন ভাই। রবিন ভাই ফেসবুকে নোট আকারে কিছুদিন পরপর চর্যাপদ টাইপের কিছু কিছু লেখা আপলোড করেন। সেই লেখার টাইটেলে থার্ড ব্রাকেটের মাঝে 'গল্প' লেখা থাকে বলে বোঝা যায় সেটা গল্প। যদি তিনি সেটা লিখে না দিতেন, তবে সেই লেখা ঠিক কী তার মর্মোদ্ধার করতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে কবর থেকে উঠে আসতে হত। সাকিবের মাঝে মাঝে মনে হয়, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কেও যদি কখনও রবিন ভাইয়ের লেখা পড়তে দেয়া হয়, তবে তিনিও সিদ্ধান্ত নেবেন এসব চর্যাপদেরও আগে লেখা বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি রবিন ভাইকে একুশে পদক দেয়ার প্রস্তাবও করতে পারেন। আর এখন ক্ষমতায় আছে লীগ। রবিন ভাইয়ের বাড়ি ফরিদপুর। জেলা কোটায় একুশে পদক পেয়েও যেতে পারেন। মঞ্চে উঠে রবিন ভাই ভাষণ দেবেন, “আমার এই সফলতার পেছনে যেই মহান মানুষটির চেতনা কাজ করছে, তার নাম বঙ্গবন্ধু...”।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, রবিন ভাইয়ের এইসব দুর্বোধ্য এবং অতি উচ্চমার্গীয় (!) লেখা পড়ে তার কিছু ফ্যান জন্মে গেছে। তারা গল্প পড়ে, “ওয়াও!”, “হাউ সুইট” কিংবা “ভেরি নাইস” টাইপের কমেন্ট করে। কুলসুমও রবিন ভাইয়ের সেই টাইপের ফ্যান। ফ্যানের স্তর পার হয়ে সে এখন রবিন ভাইয়ের এয়ারকুলার হবার চেষ্টায় আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রবিন ভাইয়ের অবিবাহিত বউ বিদ্যমান। তার নাম তৃষা। দেখতে একেবারে ডানাকাটা পরী। রবিন ভাইয়ের ধারণা, বাসর রাতে ভাল করে খুঁজলে তার পিঠে ডানা কেটে ফেলার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে। এমন বউ রেখে বিলকিসের দিকে তাকানোর প্রশ্নই ওঠে না।

সুতরাং, রবিন ভাই সাকিবকে বললেন, “সাক্কু, বুঝিসই তো। সিম্পল একটা মামলা। তুই একটু সামলা। এখন থেকে আমার আইডি আমরা দু'জনে চালাব। তুই কুলসুমকে দেখবি। আমি বাকি সব।” শুনে সাকিবের চোখ চকচক করে ওঠে। বাড়িতে অবিবাহিত বউ সাকিবেরও আছে। নাম বিলকিস। সেটা ব্যাপার না। সাকিব ফেসবুকের কিংবদন্তি লুল সালেহ তিয়াসের শিষ্য। সে সালেহ তিয়াসের এমনই হার্ডকোর ফ্যান যে, সালেহ তিয়াসের মত করে নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই লাইক দেয়। নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই লাইক দেয়া না'কি সালেহ তিয়াসের সাইন। সাকিবও সেটা অনুসরণ করে। তার এমন শিষ্য হয়ে একাধিক রমণীকে সামলাতে না পারা কোন কাজের কথা না। সুতরাং, রবিন ভাইয়ের সাথে সাকিবের ডিল হয়।

প্রেম চলতে থাকে। ঠেলাগাড়ির মত চলতে শুরু করে একসময় সেটা মার্সিডিজ বেনজ হয়ে যায়। তিনশ কিমি স্পিড তুলে চলতে শুরু করে এরোপ্লেনের মত উড়াল দেয়।

কুলসুমকে ভালমত পটানো হয়ে গেলে, সাকিব তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে দেয়। বলে সেও রবিন ভাইয়ের মত লেখালেখি করে। কুলসুমও দেখে, রবিন ভাই তাকে পাত্তা দেয় না। তাই তার পেছনে লেগে থেকে লাভ নেই। সাকিবই ভাল। সাথে সাথে কুলসুম সাকিবের কোন লেখা না পড়েই “ওয়াও!”, “হাউ সুইট” বলতে শুরু করে।

সাকিব কুলসুমের সাথে প্রথম এবং নিজের জীবনের সাতশ বত্রিশতম ডেটে যায়। কিন্তু, কুলসুমের জীবনে এটাই প্রথম। সে কিছু ঠিক করতে না পেরে, তার মা'কে নিয়ে আসে। সাকিবের মত পিচ্চি ছেলে দেখে কুলসুমের মা রেগে মেগে মিগ বিমানের ফায়ার হয়ে যান। সাকিব কুলসুম দু'জনকেই দু'টো রাম থাবড়া মারেন। থাবড়া খেয়ে সাকিব ম্যা ম্যা করে কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায়। সেই কান্না দেখে কুলসুমের বুক ভেঙ্গে যায়।

সাকিব বাসায় ফিরে স্ট্যাটাস দেয়:

কাঁচা তেঁতুল খাইতে গিয়া খাইলাম আমি চড়
কুলুর মাম্মি তুই অহনি ট্রাকের তলে পড়

কুলসুম সেই স্ট্যাটাসে লাইক দেয়। কমেন্ট করে, “জান্টুশ, আমার সান্টুশ, প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুমি রাগ কোরো না। আমার আম্মু এই এত্তগুলা পচা। তুমি চলে যাবার পর আমার চোখের পানিতে আমাজন নদ তৈরি হয়েছে। তুমি ফেসবুকের ব্রেকিং পেইজটা দেখ। শিরোনাম আছে - বাংলাদেশে সৃষ্টি হল বিশ্বের দ্বিতীয় আমাজন নদ। প্লিজ তুমি আমাকে একটা কল দাও। আমি তোমার কলের জন্য ওয়েট করে অপেক্ষা করছি।”

এই কমেন্ট চোখে পড়ে সাকিবের অবিবাহিত বউ বিলকিসের। সাথে সাথে সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে তেগুনী হয়ে যায়। সে সাকিবকে কল করে বলে, “তুমি... তুমি... তুমি... আর কখনও আমাকে কল করবা না। তুমি থাকো তোমার ওই কুলসুম বানুকে নিয়ে। তুই... তুই... আর একবার আমার সামনে আসছি তো তোকে... তোকে আমি... টুট... টুট... টুট...” বলেই ফোন কেটে দেয়। ফেসবুকেও সাকিবকে ব্লক করে।

সাকিব গিয়ে হামলে লুল সম্রাট সালেহ তিয়াসের কাছে। তিয়াস ভাই তাকে আশ্বস্ত করেন, তিনি সবকিছু সামলাবেন। এদিকে সাকিবও তার বন্ধুকে দিয়ে কুলসুমকে ফোন করে বলে, “সাকিব, বাংলাদেশের সৃষ্টি হওয়া দ্বিতীয় আমাজন নদে ডুবে মারা গেছে।”

সেই খবর শুনে কুলসুমের হৃদয় বিদারী চিৎকারে আকাশ পাতাল প্রকম্পিত হয়। বাংলাদেশে তৃতীয় আমাজন নদের সৃষ্টি হয়।

এদিকে তিয়াস ভাই কাহিনী সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। তিয়াস ভাইয়ের পাক্কা পাঁচ হাজার ফ্রেন্ডের বিশাল ফ্রেন্ড-লিস্ট। এই ফ্রেন্ড-লিস্ট বানাতে গিয়ে তিনি বর্তমানে ত্রিশ দিনের ব্লকে আছেন। কিন্তু, কাজের কথা হচ্ছে বিলকিস তার ফ্রেন্ড-লিস্টে আছে। সে মাঝে মাঝে তিয়াস ভাইয়ের থ্রিলার পড়ে কমেন্ট করে, “দুঃখে চোখে পানি চলে আসল” কিংবা টুইস্ট পড়ে কমেন্ট করে, “কাহিনীর সহজ সরল বর্ণনা ভাল লাগল।” এবার খোদ তিয়াস ভাই গিয়ে বিলকিসের প্রোপিকে কমেন্ট করলেন, “খাসা তেঁতুল।”

সালেহ তিয়াসের মত সেলিব্রেটি তার প্রোপিকে কমেন্ট করেছে দেখে বিলকিসের ভাবে আর মাটিতে পা পড়ে না। সে তিয়াস ভাইকে নক করে। “হাই, হ্যালো। কারেন্ট গেলো।” টাইপ কথা দিয়ে তাদের চ্যাটিং চলতে থাকে।

বিলকিসের মনে হয় তিয়াস ভাই তার কত দিনের চেনা। মনের সব কথা তার সাথে শেয়ার করা যায়। সে তাকে সাকিবের কথা বলে। বলে যে, “সে থাকতে সাকিব অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।”
তিয়াস ভাই বলেন, “সাকিবকে তো আমি খুব ভাল করেই চিনি। ওর কাজই তো ফেসবুকে সব মেয়েদের সাথে লুলামি করে বেড়ানো। তোমার আগেও সাত-আটশ মেয়ের সাথে ওর রিলেশন ছিল।”
বিলকিস তব্ধিত হয়ে বলে, “কী বলেন ভাইয়া!”
তিয়াস ভাই সাথে সাথে শুধরে নেন, “ইয়ে মানে, সাত আটটা মেয়ের সাথে। তবে খুবই ক্লোজ রিলেশন। তুমি ছোট। তোমাকে এসব না বলাই ভাল।”

বিলকিসের মনে হয় মানুষটা কত ভাল। সাকিবের মত বজ্জাতের সাথে দেখা হবার আগে যদি এর সাথে পরিচয় হত, তাহলে তার আজকে এভাবে কপাল পুড়ত না। অবশ্য তার কপাল সব সময়েই পোড়া। একবার মাছ ভাজতে গিয়ে গরম তেল ছিটকে এসে কপালে লাগল। সেই পোড়া দাগ আজও উঠল না। দিনে দিতে তিয়াস ভাই আর বিলকিসের চ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

মাস-খানেক পরে লুলসম্রাট সালেহ তিয়াসের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ হয়। সেখানে ভেসে ওঠে - In a relationship with Princes Belkes.

সেটা ভেসে ওঠে সাকিবের ওয়ালে। সাকিব স্ট্যাটাস দেয়:

দুই তেঁতুলের চিপায় পড়ে করলাম আমি ভুল
ফেসবুকের এই নীল আর সাদায় সবাই যে হয় লুল

সেই স্ট্যাটাসে তিয়াস ভাই আর রবিন ভাই দু'জনেই লাইক করে।