আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

ভালবাসা শিরোনামহীন

ভালবাসা শিরোনামহীন
লিখেছেন- sesh rater adhar

- আমি একটা কথা বলব।

বলে হঠাৎ করে মিষ্টির সামনে এসে বসল হৃদ্য।

- এতক্ষণও তো বলতেছিলা।
- হ্যাঁ, অন্য কথা।
- আচ্ছা বল।

মিষ্টি অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাল হৃদ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি। যে হাসি খুব খেয়াল করে না তাকালে দেখা যায় না। হৃদ্য অনেক খেয়াল করেই তাকিয়েছে তাই চোখে পরেছে। অনেক দিন থেকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না কথাটা। রিলেশন হয়ে গেল আজ ৩ মাস, এখন পর্যন্ত বলা হল না। ছিঃ,ছিঃ !কি লজ্জার কথা।

মিষ্টি বলল- কি হল? বল। অমন গাধার মত তাকিয়ে আছ কেন? আমাকে দেখনি কখনও?
- হ্যাঁ বলব। একটু সাহস দাও না আমাকে। খুব ভয় লাগছে।
- খুব সিরিয়াস কোন কথা?
- হ্যাঁ । আমি তোমাকে অনেক ভয় পাই।
-এইটাই তোমার কথা?
- না।
- আসো বুকে ফুঁ দিয়ে দেই। ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না? আমি তো আর তোমাকে খেয়ে ফেলব না। বল। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে।
- i love you.

মিষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে রইল হৃদ্যর দিকে। কথাটা পুরোপুরিও মুখ থেকে বের হয়নি হৃদ্যর, বলার মাঝে আটকে যাচ্ছিল। সামনাসামনি আজ প্রথম বলল ভালবাসার কথা। মোবাইল এ মেসেজ এ কত কিছু বলে, সামনে আসলে চুপ। কোন কথাই বের হয় না।

মিষ্টি বলল- এই কথাটা বলার জন্য এত কিছু?এমন পাগল কেন তুমি? জানো, তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার চেয়ে মায়া হয় অনেক বেশি। তুমি কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতন আচরন করো।সামনাসামনি i love you বলবা, তাও এত কিছু....... পাগল একটা।

মিষ্টি হৃদ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হৃদ্য হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠোঁটের কোণায় সেই হাসি নিয়ে বলল- " এই, উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যাব।"

হৃদ্য উঠে বলল-আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- আমি জানি। চল এখন।

দুজন হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা ধরে।আশেপাশে অনেক মানুষ।কেউ কেউ ওদের দিকে আড়-চোখে তাকাচ্ছে, কেউ কেউ ফ্যালফ্যাল করে। সুন্দরী মেয়ের পাশে ছেলে মানুষ দেখলেই মানুষ ভাবে, কি দেখে এই ছেলের সাথে প্রেম করেছে? তার চেয়ে ভাবনাকর্তা নিজেই কত সুন্দর !!!!

- হৃদ্য, তুমি যাও এখন। রাত হয়ে যাবে বাসায় যেতে তোমার। আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
- আমি আসি সাথে?তোমার হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত যাই?
-না না। ওখান দিয়ে বাজে ছেলেরা বসে থাকে। তোমার সাথে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
- একা থাকলে আরও বেশি বলবে। চল আমি যাই।
- লাগবে না।
- আরে লাগবে। চল তো।

হৃদ্য মিষ্টির সাথে ওর হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত গেল। রাস্তায় বখাটেগুলো ছিল। কয়েকটা বাজে কথাও বলল। সবগুলো গা জ্বালা করার মত। মিষ্টিকেই বলেছে কথাগুলো।

হোস্টেলের সামনে এসে হৃদ্যকে বলল মিষ্টি - শুধু শুধু আসলা তুমি। এসে কি হল? ঐ ছেলেগুলো বাজে কথা বলল আর তুমি বেকুবের মতন শুনলা। তুমি তো দেখতে একেবারে পালোয়ান বীরপুরুষের মতন না যে তোমাকে দেখে কিছু বলবে না ওরা। তুমি ইচ্ছা করলেও ওদের কিছু করতে পারবা না।মানা করলাম, তারপরও আসলা।

হৃদ্যর নিজেকে কিছু সময়ের জন্য অনেক ছোট মনে হতে লাগল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল শুধু।

- আমি দেখতে পালোয়ানের মতন হলে তুমি খুব happy হতে?
- সব মেয়েই চায় তার বয়ফ্রেন্ড এর তাকে সেভ করার মতন, security দেবার মতন abilty থাকুক। তোমার মতন হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শুধু কোথাও বসে থাকতেই ভাল লাগে, কোথাও চলাফেরা করতে না।
- তুমি কি আমাকে নিয়ে unhappy?
-না যা হবার হয়ে গেছে। আমি তোমাকে আমার লাইফ এ মেনে নিছি। যাও বাসায় যাও।
- না বাসায় যাব না।ভার্সিটি খোলা , একেবারে হল এ যাব।
- আচ্ছা দেখে শুনে যেও ।

হৃদ্য চলে গেল।
--------------------------------------------

মিষ্টির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আগে থেকেই হৃদ্যর উপর রাগ উঠে ছিল। তার উপর আবার মোবাইল রিসিভ করছে না। এমনি সারাদিন ২৪ ঘণ্টা মিষ্টিকে কল করতে থাকে হৃদ্য। আজ কি হল? না দিচ্ছে কল না ধরছে। কি বলেছে সন্ধায়? তাতেই এত রাগ করতে হবে? যাহ্‌ না ধরল। মিষ্টিও কথা না বলে থাকতে পারবে।মিষ্টি মোবাইলটা বন্ধ করে রাখল।

হৃদ্য হাসপাতালের বেড এ শুয়েই ডাক্তারকে বলল- ডাক্তার আংকেল, আমার মোবাইলটা ?
- রেস্ট নিন। হাত পা নাড়াতে পারছেন না, মোবাইল চাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুমান।
- please, আমার মোবাইলটা খুব দরকার। একটু দিন না।

ডাক্তার টেবিল এর উপর থেকে মোবাইলটা হৃদ্য কে দিল। মোবাইল পেয়েই মিষ্টিকে ফোন করল। switched off মোবাইল। অনেক বার চেষ্টা করল। নাহ, মোবাইল বন্ধ। পরে একটা মেসেজ করল মিষ্টিকে।

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠল সকাল ১১ টার দিকে। মোবাইলটা অন করল। সাথে সাথেই হৃদ্যর মেসেজ- আমি হাসপাতালে । তোমাদের medical college hospital এ। একটু দেখতে আস না আমাকে ।আব্বু আম্মুকে ভয়ে বলিনি। তুমি please আসো। আমার উপর রাগ করে থেকো না, প্লিজ।

মিষ্টি কিছু সময়ের জন্য অনুভুতিশূন্য হয়ে গেল। তারপর তারাতারি হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখল হৃদ্য বেড এ শুয়ে আছে। নাক, গাল, বাম হাত, ডান পা, মাথায় ব্যান্ডেজ। আর ডান হাত দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মাথার কাছে ওর বন্ধু শিমুল বসে বসে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে হৃদ্যর পাশে বসল।কাঁদোকাঁদো গলায় বলল- কি হইছে তোমার? কিভাবে এই অবস্থা?

হৃদ্য মুখ থেকে আপেল বের করে চুপ করে রইল। মিষ্টি বলল- কি হল? কথা বল না কেন?

শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দাঁড়াল। বলল- তোমরা কথা বল। আমি আসতেছি।

মিষ্টি আবারও জিজ্ঞাসা করল- বল,প্লিজ কি হইছে?কিভাবে?

হৃদ্য এতক্ষণে মুখ খুলল- তোমাকে যে ছেলেগুলো বাজে কথা বলেছিল, তাদের মারতে গিয়েছিলাম। একটাও মারতে পারি নায়। ওরাই উল্টা আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিসে। এলাকার মানুষ এনে পরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিছে।
- তোমাকে ওদের সাথে মারামারি করতে যেতে বলছে কে?
- ওরা তোমাকে বাজে কথা বলল আর আমি শুনব? তুমিই তো বলছ যে তোমার সাহসী বীরপুরুষ ছেলে পছন্দ।আমি না মারতে পারলাম, সহ্য তো করি নায় কথাগুলো। কাপুরুষের মত চলে আসি নায় ওদের ভয়ে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার জন্য সব করতে পারব।বিশ্বাস করো আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি তো একা ওরা অনেকগুলা ছিল,সবগুলোর পাঠার মত শরীর,তাই মেরে দিছে আমাকে । আমাকে ছেড়ে যেও না, please.

মিষ্টি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।দু চোখ দিয়ে টলটল পানি করে পড়ছে।
মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বলল-তুমি এমন পাগল কেন?আমি কি না কি বলছি তাতেই তুমি এমন করবা? তোমার যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যেত? আমাকে এত ভালবাস তো কষ্ট দাও কেন?আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি জানি তুমি অনেক ভাল। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক happy. আমাকে মাফ করবা না বল? আমি অমন কথা আর কখনও বলব না। আর এমন পাগলামি করো না !!!!
- এই কাঁদছ কেন? আমার খারাপ লাগছে।
- আচ্ছা কাঁদবো না আর। তুমি আমাকে শুধু ভালবাসবা অনেক বেশি বাসবা, তাতেই হবে। বাসবা না বল?
- হ্যাঁ, বাসব।
- তাহলে i love you বল।
- i love you.তুমি আমকে ছেড়ে যাবে নাত কখনও?
- কখনও না।

মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বসে রইল।হৃদ্য বলল- আপেল খাব। হাত ছাড়ো।
- না ছাড়ব না। আমি খাইয়ে দেই।এই যে হাত ধরেছি, সারাজীবনের জন্য। আর কখনও ছাড়ব না।

ღjrk

বন্ধু আমার একলা প্রহর

বন্ধু আমার একলা প্রহর
লিখেছেন- sesh rater adhar

- বের হচ্ছিছ না কেন এখনও ? তুই কি ওখানে ঐ কাজই করতে যাস না অন্য কিছু ? কি করিস এতক্ষণ ধরে ?

চিৎকার করছে বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আবির। প্রতিদিনকার রেগুলার রুটিন। কত যে সময় লাগে সাব্বিরের? বাথরুমে একবার ঢুকলে আর বের হবার খবর থাকে না। কি করে আল্লাহই জানে!

আবির আর সাব্বির ৩ রুমের একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ২ জন এক রুমে । বাকি ২ রুমে ৫ বড় ভাই থাকেন । সাব্বির আর আবির স্কুল কলেজে একসাথে পড়ত। এখন সাব্বির পড়ে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে computer science and engineering আর আবির পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানে। হলে সিট পেয়েছিল আবির। কিন্তু হলে উঠার পর থেকেই প্রতিদিন রাতে মিটিং-এ ডাক পড়ত। আর সেখানে বড় ভাইদের দেশ উদ্ধারের লেকচার শুনার জন্য বসে থাকতে হত।একদিন লেকচার শুনতে শুনতে হঠাৎ-ই তন্দ্রা চলে আসাতে হাই তুলেছিল আবির।আর সেই হাই তোলার অপরাধে কান ধরে ১ ঘণ্টা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তারপর হল থেকে চলে আসল। আর গেল না ।

এরপর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিল। ৩ রুমেই অ্যাটাচড বাথরুম। কারও সমস্যা হয় না। যত সমস্যা এই দুজনের। তাও সাব্বিরের জন্য।এই যে এখনও বের হওয়ার খবর নাই।আবির আবারও চিৎকার করে উঠল- তুই বের হবি নাকি দরজা ভেঙ্গে ফেলব?
- ছিঃ আবির , তুই এমন অশ্লীল কথাবার্তা বলতেছিস কেন? দরজা ভাঙ্গি মানে ? আমার লজ্জা শরম নাই নাকি ?
- তুই আবারও বাথরুমে বসে কথা বলতেছিস ? আমি বলছি না তোকে এই কাজ না করতে ?
-হেহ ! দুনিয়ার সব জায়গায় বসে কথা বলা সিদ্ধ থাকলে,বাথরুমে বসে কেন নিষিদ্ধ থাকবে ?আমি বলব , আরও বেশি বেশি বলব। গান গাইব আমি বসে বসে। ওহো ...হো....আহা ...আহা ... হাহা ....
-সাব্বির ,আমি তোরে খুন করে ফেলব।আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। বের হ।

সাব্বির বের হয়ে আসল। রাগে তাকিয়ে আছে আবির।
সাব্বির উলটা রাগ দেখিয়ে বলল - তোর জন্য একটু শান্তি মত .....যাহ্‌, তোকে বলে লাভ নেই। মানুষের অনুভুতি তুই বুঝিস না।
- বাথরুমে ২ ঘণ্টা ধরে বসে থাকার মধ্যে কী অনুভুতি আছে? আমি তো দেখছি না কিছু।
-তুই always এমন। আমি তোর বন্ধু না শত্রু মাঝে মাঝে বুঝি না। যা যা। এতক্ষণ চিৎকার করছিস আর এখন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?

আবির লুঙ্গি নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। আবির প্রতিদিন ২ বার গোসল করে। ঠাণ্ডা গরম সবসময় । সকালে একবার বিকালে একবার।আর সাব্বির ২-৩ দিন পর পর। ঠাণ্ডার সময় সপ্তাহেও একবার করে না। তবে কেউ যেন না বুঝে তাই গোসল করার কথা বলে শুধু মাথা ভিজিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে আসে। কত্ত বুদ্ধি !!!!

আবির আর সাব্বির সারাদিনই ঝগড়া করে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। মানুষ তার কাছের মানুষের সাথেই ঝগড়া করে বেশি। বন্ধুত্ব যত বেশি ঝগড়ার মাত্রাটাও তত বেশি। ছোট খাটো বিষয়ে দোষ ধরা ,সব কিছুতে খারাপ দিক খোঁজা, আর তা নিয়ে ঝগড়া। হালকা পাতলা মারামারি। এইতো বন্ধুত্ব। আবির এর রাগ বেশি , কিন্তু মারামারি পারে না। সাব্বির অনেক মোটা, সাব্বিরকে আবির মারলে সাব্বিরের কোনো feelings ই হয় না।

আবির গোসল করে বের হল। সাব্বির সঙ্গীত চর্চা শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালের নিয়মিত কাজ। বারান্দায় বসে একটা গিটার নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় সাব্বির। প্রতিদিন একই গান.... আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি..
গিটার হাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত , আবিরের খুব একটা ভাল লাগেনা জিনিসটা। তবুও সহ্য করতে হয়। কারও তো ভাল লাগে!!সাব্বিরের গানের একজন নিয়মিত শ্রোতা আছে। আবিরদের ফ্ল্যাটের সোজা এক ফ্ল্যাটে এক মেয়ে থাকে।বারান্দায় বসে সাব্বিরের এই গান সেই মেয়ে প্রতিদিন শুনে। এই গানও কারও ভাল লাগে?যে গলা !!!!মেয়েই নাকি সাব্বিরকে একদিন বলেছে-" ভাইয়া, আপনি সেদিন, 'আমার হিয়ার মাঝে' গানটা গাচ্ছিলেন, খুব ভাল লাগছিল।আমার অনেক প্রিয় গান । আমি প্রতিদিন আপনার গান লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।আপনার ভয়েসটা অনেক sweet . "
সেই থেকে ঐ একই গান। আগে তাও একেক দিন একেক গান ছিল। আর এখন গিটার হাতে প্রতিদিন আমার হিয়ার মাঝে।

আবির শার্ট পরতে পরতে বলল- হইছে, থাম এখন। সারারাত তো ফুছুর ফুছুর করে একজনের সাথে প্রেম করলি মোবাইলে। এখন সকালে উঠে আর একজনকে গান শুনাইতেছিস। তুই যে কী!!!
- তুই এত রাগ করিস কেন?তুই এক নিরামিষ । আর আমারেও চাস নিরামিষ বানাইতে। দোস্ত, একটু enjoy কর life. দেখ আমাকে দেখ। শিখ কিছু আমার থেকে।খালি তো পারিস, ঐ সার্কিট মিলাইতে আর বই নিয়া বসে থাকতে।একটু মজা কর ।
- আমি অনেক enjoy করি লাইফ।
- কত যে করিস জানি। একটা গার্লফ্রেন্ড, তার সাথে দিনে ১০ মিনিটও কথা বলতে দেখি না ।
- চুপ কর। তুই গান গা। ঐটাই ভাল ছিল।

আবার শুরু আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে...

আবির বের হয়ে গেল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।যাবার সময় দেখল বড় ভাইরা সবাই ঘুমাচ্ছে। এরা সারারাত card খেলে আর movie দেখে।দিনের বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। উঠে দুপুরের খাবার খায় একবারে। আবিরের তা করলে চলে না। সকালে বুয়া আসেন না। তাই বাহিরে খেতে হয়। প্রতিদিন একই দোকানে সকালের নাস্তা করে।একটা কলা , একটা রুটি।খাবার পর প্রতিদিন দোকানদার বলবে - মামা , কোনটা দিব ?
-মামা, আপনাকে এক কথা প্রতিদিন বলতে হয়? আমি smoke করি না।
- ও, মামা মনে থাকে না।

আবির একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটিতে যায়।আজ একটা মাত্র ক্লাস।
ক্লাস শেষ করে বের হল।অরিন অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছে। মেয়েটার কি কোন কাজ নেই নাকি ? আর মাত্র কয়েকদিন পর admission test.পড়াশুনা কিছু করে বলে তো মনে হয় না। অরিন ঢাকাতে এসেছে intermediate এর সময়। ঢাকার একটা কলেজে পড়ত, কলেজের হোস্টেলে থেকে।এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছে। থাকে একটা গার্লস হোস্টেলে।অরিনের এক বান্ধবী জেনিকে প্রাইভেট পড়াত আবির।মাঝে মাঝে অরিন যেত জেনিদের বাসায়।জেনির থেকেই নাম্বার নিয়ে পরে আবির এর সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা।খুবই ভাব ধরা ছেলে আবির, অরিনের ধারণা।ফোন দিলেই একটা busy busy ভাব দেখাত।অনেক কিছুর পর রিলেশন হল।
আবির ফোন ধরল।
অরিন বলল - কি খবর? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি?
-আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি ? ক্লাসে ছিলাম।আর তোমাকে এত বার কল করতে মানা করছি না?আমার ইচ্ছা হলে আমি তোমাকে এমনিই ফোন দিব ।
-সবসময় এমন করে কথা বল কেন?
- এক type কথা always . আমি রাখি, ভাল লাগছে না।
- আমি TSC তে । তুমি আস।
-তোমার কি আজ আসার কথা?
-না, তুমি আস। সবসময় যেখানে থাকি , সেখানেই আছি।আস ।

আবিরের এসব ভাল লাগেনা। ভাল-বাসা-বাসি ওর কাছে ন্যাকামি লাগে। কোন পাগলে পেয়েছিল , রিলেশন করতে গেল। প্রতিদিনই ঝগড়া হয়। মেয়েরা কথায় কথায় অভিমান করে, রাগ করে। আর আবির কখনই অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মত রাগ ভাঙ্গাতে যায় না। বরং যে কয়টা দিন ঝগড়া ,ঐ দিনগুলোই ভাল থাকে মনে হয়। অভিমান পর্ব শেষ করে অরিন নিজেই আসে কথা বলতে। আবির মাঝে মাঝে ভাবে ,না এত রাগ ভাল না। রাগ কমাতে হবে। কিন্তু হয়ে উঠে না।

- আবির , এই দিকে আয়।

ইলিয়াস ডাক আবিরকে। ইলিয়াস আবিরের ক্লাসমেট , কবিতা লিখে। আবির ছাড়া কেউ ওর কবিতা শুনে না । আবিরের কবিতা কখনই ভাল লাগে না। তাও শুনে। বন্ধুর লেখা বলে কথা। কোন ছন্দ নাই , শুনে বুঝা যায় না গল্প না কবিতা । তবুও আবির কখনও বিরক্ত হয় না।আবিরকে কবিতা শুনানোর পর ইলিয়াস বলে সবসময় - "কেমন হইছে রে?"
আর আবিরের কথা -অনেক সুন্দর দোস্ত। তুই বই বের কর। অনেক চলবে।তোর কবিতার সাথে জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনেক মিল । আমার তো মনে হয় তোর কবিতা তার চেয়েও সুন্দর হয়। খালি বের কর বই , famous হয়ে যাবি।
ইলিয়াস কথাগুলো শুনলে ওর মুখটা লাজুক ভাবে ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ইলিয়াসকে এত খুশি দেখতে আবিরের অনেক ভালই লাগে।
আবির ইলিয়াসের কাছে গিয়ে বলল - কবি, কি খবর?নতুন কবিতা আছে?
- হ্যাঁ রে , নতুন একটা লিখলাম।আমাদের ক্লাস এর নদীকে চিনিস না? ওকে নিয়ে লিখlলাম। তুই কিন্তু আবার ওকে বলে দিস না। ওকে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগে। সব উলট-পালট হয়ে যায়।
- দোস্ত , কি বলিস? আচ্ছা শুনা তারাতারি।
-
ও নদী,
জানো কি,
তোমাকে ভালবেসে
আমি কাঁদি?

তুমি এমন
একবারও দেখ না ,
আমাকে মনে
রাখো না।

আমি বসি
তোমার পিছনে ,
চুল দেখি
ঘ্রাণ শুকি।

তবুও তুমি
বুঝ না,
ভালবাসি
বুঝ না।

- দোস্ত, তুই তো ফাটাইয়া দিছিস। কি লিখলি এইটা? অসাধারণ হইছে। তুই যে এত ভাল লিখতে পারিস আমি জানতাম না, খালি একবার নদীর সামনে যাবি,আর কবিতাটা পড়ে শুনাবি। দেখবি ও পাগল হয়ে গেছে।
-তুই সত্যি বলছিস?
-আমার মিথ্যা বলে লাভ কি বল?তোর মত কেউ কি ওকে কবিতা লিখছে নাকি ? একবার গিয়ে বল, রাজি না হলে আমার রিস্ক।
-নদী কি লাইব্রেরিতে আছে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাই। ওকে কবিতা শুনিয়ে আসি।তুই একটু দোয়া কর।
-ok, যা দোস্ত। কি হয় জানাস।

ইলিয়াস দৌড়ে চলে গেল নদীকে কবিতা শুনাতে। আবিরের কারনে ওর কোন বন্ধুর মন ভাল হয়ে গেল। ভাবতেই ভাল লাগছে। আবিরেরও মন ভাল।
আবির TSC তে আসল। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। আবির গিয়ে দাঁড়াল অরিনের সামনে। অরিনের চোখ ছল ছল। অরিন বলল- তুমি সবসময় আমাকে দাড় করিয়ে রাখো। তুমি এমন কেন?আমার কষ্ট হয় না?
- ওহ! আবার এই টাইপ কথা? আমার শুনতে ভাল লাগছে না । অন্য কিছু বলার থাকলে বল। এসব ন্যাকামি আমার ভাল লাগে না।
-তুমি সারাজীবন এমন থাকবে? সারাদিনে একটু খোঁজখবরও নাও না। একটা sms কখনও কর না। কথা বলতে গেলে ৫ মিনিটের পর বল তোমার বিরক্ত লাগছে।আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
-তোমাকে কখন বললাম, তুমি দেখতে খারাপ?এসব কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পার না? শুনতে একদমই ভাল লাগছে না।চুপ করে থাক।
- তুমি আমাকে ভালবাস না, আমি জানি ।
-হ্যাঁ, ভাল হয়েছে ভালবাসি না।যাও এখান থেকে।আমি ভালবাসি না তাহলে আমার সাথে কথা বলছ কেন?বিরক্তিকর।

অরিন কিছু বলল না।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কাঁদতে শুরু করে দিল।নিঃশব্দ কান্না। মেয়েরা কখনই তাদের প্রতি অবহেলা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু অরিন অনেক সহ্য করেছে। আর না । এভাবে কারও সাথে থাকা যায় না। অরিন চলে গেল চোখ মুছতে মুছতে আবিরের সামনে থেকে।আবিরের কিছুই মনে হল না। মনে হচ্ছে সব আগের মতই আছে।

বাসায় চলে আসল আবির। রুমে গিয়ে দেখল সাব্বির সাজ-গোঁজে ব্যস্ত। ছেলে মানুষ ও কত সাজগোজ করে !!
আবিরকে দেখে বলল- যাবি চল।
-কোথায়?
-এই একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাব। কয়েকদিন ধরে কথা হচ্ছে ফেসবুক এ ।দেখতে না জোস।চল না ।
-এসব কি বাদ দিবি তুই?কোনদিন কোন ঝামেলায় পরিস দেখিস।এতগুলো মেয়ের সাথে তোর relation.
- দোস্ত, তুমি বুঝবা না। আমার তো মনে হয় তোমার প্রবলেম(!!!) আছে,তাই মেয়ে ভাল লাগে না ।
-ভাল হইছে।তোর মত অত মেয়ে আমার লাগে না।
- কি করা বল? কোন মেয়ে একটু সুন্দর করে কথা বললে আর ঠিক রাখতে পারিনা নিজেকে।আর মেয়েরাও আমাকে চায়।
-হ্যাঁ,থাক মেয়ে নিয়ে। যেদিন ঝামেলায় পড়বি সেদিন বুঝবি। তখন আমারে ডাকিস,যাব নি তোমাকে ভাল মত উদ্ধার করতে!!
- তুই কি বন্ধু নাকি?তুই তো আমার শত্রু। তাই বরদোয়া করিস।

এক গাদা body-spray শরীরে দিয়ে বের হয়ে গেল সাব্বির।পুরো রুম এত এলোমেলো হয়ে আছে। দেখলে মনে হয় যেন কিছুক্ষণ আগে ঝড় বয়ে গিয়েছে এখান দিয়ে।আবির সারাদিন রুম গুছিয়ে রাখে,আর সাব্বিরের দায়িত্ব তা এলোমেলো করা । এই ছেলেটা এত অগোছালো আর এত এমন কি করে???আবির খুঁজে পায় না।সারাদিন মেয়ে নিয়ে থাকে। আর কোনদিকে কোন মনোযোগ নেই ।
আবির গিয়ে বারান্দায় বসল। আজ অরিনের সাথে এতটা করা উচিৎ হয়নি।মেয়েটা এত ভালবাসে আর আবির কিনা সবসময় অপমান করে।আবিরও তো ভালবাসে, তাইতো রাগারাগি করে।আবির যাদের ভালবাসে তাদের ভালবাসা দেখাতে পারে না কখনও।তাদের সাথেই বেশি খারাপ ব্যবহার করে।সাব্বিরের সাথে করে, অরিনের সাথে করে।কিন্তু ওরা ভাবে আবির ওদের ভালবাসে না।নাহ! নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।
আবির যেই কাজ কখনই করেনি সেই কাজ আজ করল। অরিনকে কল করল । কল করে আরও একটা অবাক করা জিনিস করল,অরিনকে sorry বলল।

-অরিন, তুমি রাগ করনি তো?
-না।
- তুমি কোথায় এখন?
- রেল-স্টেশনে। টিকেট কাঁটি।
- কেন? কোথায় যাবে?
-আম্মুকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে।তাই একটু বাসায় যাব।
-ওও..আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।আচ্ছা তুমি ২ টা টিকেট কাটো। আমরা দুজন একসাথে যাব। তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।আমি আবার বাস এ চলে আসব ঢাকা।
- সত্যি, বলছ তুমি?
-হ্যাঁ, সত্যি। আমি কি ভাল কিছু করতে পারিনা নাকি? আচ্ছা ট্রেন কয়টায় ?
- সন্ধ্যা ৬ টা আর ৭ টায়।
- ৭ টার টিকেট কিনো। আমাক মেসেজ করে সিট নাম্বারটা বলে দিও। আমি এইদিকে একটু কাজ শেষ করে চলে আসব।
- আচ্ছা।

আবিরের ভাল লাগছে খুব।কিছু পড়াশুনা করে নিল।আবির কিছুটা excited. মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম ডেটিং-এ যাবে। তাও আবার ট্রেন-এ।

..............................................................................

সাব্বির ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে আছে। যেই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা তার আরও ১ ঘণ্টা আগে আসার কথা। এখনও আসেনি। মোবাইল-এ টাকাও নেই যে কল করবে ।

-সাব্বির ...চলে এসেছি।

সাব্বির দেখল ইমা এসে পড়েছে।

- ওহ আস, বস।আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। এত দেরি করলে কেন?
-বোলোনা আর। ভাইয়া এত ঝামেলা করল।বের হতে দিবেই না। কত মিথ্যা বলে বের হলাম।
- ও আচ্ছা। জানো, আমি না কখনও কোন মেয়ের হাত ধরিনি। তোমার হাত গুলো অনেক সুন্দর। আমি ধরি?
- ধর,আমিও কখনও কোন ছেলের হাত ধরিনি।

সাব্বির ইমার হাত ধরল। এর আগেও অনেকেরটা ধরেছে।

- কি সফট তোমার হাত। ইমা তুমি না খুব সুন্দর। i love you. আমার তোমার আগে অন্য কোন মেয়েকে এত ভাল লাগেনি।কত্ত মেয়ে ঘুরে আমার পিছনে ।পাত্তাই দেই না।
-তাই?
- হ্যাঁ, তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে অনেক। ধরব কি আমি?
- জানিনা। (লাজুক ভাবে)

সাব্বির ইমাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কোনভাবেই ইমাকে কাছে পাচ্ছে না। ইমা চোখ বুঝে আছে।সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে সাব্বিরকে।হ্যাঁ, সত্যি একটা অনেক লম্বা মোটাসোটা ছেলে সাব্বিরকে ধরে আছে।সাব্বির ও অনেক মোটা। তবুও ওকে টেনে তুলে ফেলল। তুলেই এক ঘুষি নাকে।
ইমা চোখ খুলেই অনেক ভয় পেয়ে গেল। ওর বড় ভাই সাব্বিরের গলা ধরে মারছে। ইমার বড় ভাই বলল- ইমা,তুই বাসায় যা। আমি আসছি।তারাতারি যা। একবারও তাকাবি না পিছনে।

ইমা দৌড়ে ছুটে গেল। সাব্বিরের দিকে তাকালও না।
সাব্বির বলল- ভাইয়া আর মারবেন না। আর জীবনে প্রেম করব না। মাফ করে দেন।
-কেন রে? প্রেম করার সখ শেষ?এখনও কিছুই হয়নি।চল তোমারে সাইজ করতেছি।

বলেই ছেলেটা সাব্বিরকে আরও কয়েকটা ঘুষি মারল। তারপর কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?সাথে আরও ৩ জন।মোবাইল এ টাকাও নেই যে আবিরকে কল করবে। বড় অসহায় লাগছে নিজেকে।

আবির রেডি হয়ে নিল।নতুন একটা শার্ট আর প্যান্ট পরল।ফার্স্ট ডেটিং বলে কথা।নিজেকে পরিপাটি করে নিল। ৬ টা বাজে এখন। একটু দেরি হয়ে গেল।অবশ্য এখনি বের হলে ৭ তার আগেই যাওয়া যাবে।অরিন ফোন করল আবিরকে।আবির বলল- তুমি ট্রেন-এ গিয়ে বস, আমি রওয়ানা দিয়েছি। আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আবির বের হয়ে একটা রিকশা নিল।কমলাপুর যাবে।কতদুর যাবার পর একটা unkonown নাম্বার থেকে কল আসল।unknown নাম্বার এর কল আবির এখন ধরে না।কিন্তু আজ ধরল যেন কি মনে করে।আবির হ্যালো বলার আগেই সাব্বিরের কান্না জড়ানো কথা - আবির দোস্ত,আমাকে বাঁচা। আমি ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের সামনে। আমাকে মারতেছে।please, দোস্ত আয়।

আবির কিছু বলার আগেই কল কেটে গেল।আবির অস্থির হয়ে উঠল।তারাতারি রিকশা থেকে নেমে একটা সিএনজি নিল। আবাহনী মাঠে যেতে বলল- মামা, তারাতারি যান। ডাবল ভাড়া দিব মামা। তারাতারি।

২০ মিনিট পর ওখানে পৌঁছে আবির। কয়েকজন ছেলের সাথে সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে।ওরা সাব্বিরকে ধরে রেখেছে। আবির ওখানে গিয়ে বলল- ভাইয়া, ওকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? কি হইছে?

-আরে, আবির তুমি? ওকে চিন নাকি?

ইমার বড় ভাই আবিরকে বলল। উনি আবিরের ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই।

- হ্যাঁ ভাইয়া। ও আমার বন্ধু।
- ও, তুমি এত ভদ্র। তোমার ফ্রেন্ড এমন কেন? আজ আমার বোনের সাথে ধরলাম ধানমণ্ডি লেকের ওখানে। যাও নিয়ে যাও।ভাল হয়ে যেতে বইল। তোমার ফ্রেন্ড, তাই কিছু বললাম না।

সাব্বিরকে নিয়ে আসল আবির। দুজন হাঁটছে রাস্তায়।৭ টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। মাঝে অরিন কতবার ফোন দিল।ধরা হল না।দুজনই চুপচাপ হাঁটছে, কেউ কিছু বলছে না। কতক্ষণ পর আবির বলল- দোস্ত চল, রেল-স্টেশন থেকে ঘুরে আসি।

সাব্বির হ্যাঁ না কিছুই বলল না। একটা সিএনজি নিয়ে রেল-স্টেশন এর দিকে যাচ্ছে দুজন।আবিরের মোবাইল বেজেই চলছে। ধরছে না। ধরে কি হবে?৭ টা পার হয়ে গেছে।রেল-স্টেশন এ যখন নামল তখন ৭ টা ১৫ । ট্রেন তো লেট ও করতে পারে।সাব্বিরকে নিয়ে দৌড়ে আবির অরিনের ট্রেন এর দিকে যাচ্ছে।কিন্তু না, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।সাব্বির বুঝছে না আবির কেন এমন করছে।

- দোস্ত কি হইছে তোর? এমন করছিস কেন?
- কিছু নারে। চল কিছুক্ষণ মানুষ দেখি রেল-স্টেশন এর।দেখ কত মানুষ , সবাই কত ব্যস্ত।

আবিরের মোবাইল বেজেই চলেছে। সাহস হচ্ছে না ধরার। মেয়েটা আবার অভিমান করল।ট্রেন চলে যাচ্ছে।আসতে আসতে গতি বাড়ছে।দূরে সরে যাচ্ছে। হয়ত এর থেকেও অনেক দূরে অরিন চলে যাচ্ছে, আবিরের জীবন থেকে।প্রথম কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছা করল। তাও হল না আবিরের।

সাব্বির পাশে এসে বলল- sorry, আবির। আমার জন্যই হল।
- কি হইছে?
- অরিন মেসেজ করল। তোর ওর সাথে যাবার কথা। আমাকে মাফ করে দে।আমি না অনেক খারাপ।আমি তোর কাছে promise করছি আমি ভাল হয়ে যাব। বিশ্বাস কর ,আর এমন থাকব না।আমি ভাবতাম তুই আমাকে দেখতে পারিস না। কিন্তু তুই আমাকে এতটা ভালবাসিস আমি জানতাম না। অরিনের সাথে যাওয়া হল না সে জন্য তুই মন খারাপ করিস না, please.
-ঐ, এত ভাব ধরিস না। বন্ধুর কাছে মাফ কিরে?তুই না বলিস, মেয়ে লাইফ এ একটা গেলে হাজারটা আসবে।
- হাহা, তুই অমন না আমি জানি।ঐ মেয়েকেই তোর জন্য ঠিক করে দিব। অরিন তোকে অনেক ভালবাসে।সব রাগারাগি manage করব আমি।তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

একটু হেসে আবির বলল- বুঝলাম। সাব্বির একটা গান শুনা তো। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে ...ঐটা।

সাব্বির গান গাচ্ছে আর আবির মুগ্ধ হয়ে শুনছে।

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি

বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
আমার হৃদয় পানে
চাইনি আমি .......

দুজন হেঁটে চলছে। অনেক দিনের চেনা বন্ধু তবুও এতদিন অচেনা ছিল। আজ থেকে অনেক বেশি আপন লাগছে।অরিনের জন্য মন খারাপ লাগছে একটু।কিন্তু সাব্বির যখন বলেছে, সব ও ঠিক করে দিবেই। এই বিশ্বাস আছে আবিরের। বন্ধুত্ব মানেই তো বিশ্বাস!!কখনও অন্ধ বিশ্বাস, কখনও দৃশ্যমান!!!!