আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

আবেগ ও ভালোবাসা

আবেগ ও ভালোবাসা
লিখেছেনঃ অনলী দিগন্ত (dipto sarkar)

ফোন বাজছে, শুনতে পাচ্ছ না?
-বাজুক, বাজতে দাও

মানে কি? আন্টি ফোন করছে মনে হয়
-জানি তো মায়ের কল

তো? এখনি ফোন ধরো।
-পারবো না, পারবো না, পারবো না

বলছি ধরো, আদিখ্যেতা দেখাবে না
-সব সময় mastergiri দেখাবে না একদম

বেয়াদপ, দিব একটা থাপ্পড়
-হা তাই দাও, থাপ্পড় না গলা টিপে মেরো ফেলো আমায়।

ফোন টা ক্রমাগত বেজে চলছে। . . .

হাল্লো আসসালামুয়ালিকুম, আন্টি আমি আকাশ, ওপাশ থেকে rahela বেগম জিজ্ঞেস করল আকাশ? নিশি'র ফোন তোমার কাছে?
-হা আন্টি, ও আমার সাথে দেখা করতে এসেছে ।

ওতো কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি বাসায় পাঠিয়ে দেও।
-জ্বি আচ্ছা ।

আকাশ, গ্রামের এক মেধাবী ছাত্র। বাবা মা অনেক গরিব কিন্তু তাদের অনেক স্বপ্ন এক মাত্র সন্তান আকাশ কে নিয়ে। তাই বাবা মায়ের স্বপ্ন পূর্ণ করতে শহরে পড়তে আসা। আকাশ যে কয়েকটা টিউসনি করে তার মাঝে নিশি একটা ।

নিশি'র বাবা আরিফুল হাসান শহরের সব থেকে বড়লোক ও খমতাধর ব্যাক্তি। সবাই এক নামে চিনে। নিশি তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। অনেক আদুরে তাই অনেক জেদি স্বভাব। যা বলবে তাই করবে। সেটা না হলে শুরু হয় ভাংচুর। ভাবে মা আর ওই স্বভাব কে prosroy দেয়।

নিশি ক্লাস ১০ পড়ছে আর আকাশ নিশি কে দু বছর ধরে পরাচ্ছে, প্রথম দিকে সপ্তাহে ৩দিন পড়ালেও কিছু দিন পর নিশি'র জেদ এ সপ্তাহে ৬দিন পড়ায় ...

পার্ক এর এক কোনে আকাশ ও নিশি বসে :- তুমি আন্টি কে না বলে বাসা থেকে বেরিয়েছ?
-হ্যা, পালিয়ে আসছি। আর পালিয়ে গেলে কাউ কে বলে আসতে হয় না।

পালিয়ে আসছ? কেন?
-তোমায় বিয়ে করবো তাই। এই দেখো বাসা থেকে সব গয়না নিয়ে আসছি। পালিয়ে বিয়ে করবো বলে। শুধু তাই না বাসায় আমার বালিশ এর নিচে চিঠি রাখছি যেটা তা লিখে রাখছি তোমার সাথে পালিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি।

আকাশ অবাক হয়ে নিশি'র পানে তাকিয়ে ভাবতে লাগল, প্রথম যেদিন পড়াতে গেছিলো নিশি'র মা রাহেলা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলো বাবা আমার এই একটা মেয়েই অনেক জেদী তুমি মানিয়ে নিয়ে ওকে একটু পড়াইও। এর আগে অনেক টিচার টিকতে পারে নি ওকে পড়াতে। সেই যে মানিয়ে নেওয়া শুরু, আজ অবধি নিশির সব ন্যায় অন্যায় মানিয়ে নিয়ে চলছে।

নিশি পরীক্ষায় রেসাল্ট ভালো করতেছে তাই ওর মা আকাশকে অনেক আদর করত। আকাশ নিশিকে পরাতে পারত কারন আকাশ নিশির সম্পূন্ন উল্টাটা, শান্ত, ভদ্র। কিন্তু এই ছেলে তার উল্‌টা স্বভাবের মেয়ে নিশির প্রেমে পরে গেলো। নিশির সব পাগলামি, আবদার রাখতে রাখতে নিশিকে ভালো লাগা শুরু। যার জন্য হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছে। আকাশ জানত নিশিকে ভালোবাসা অন্যায়, ওকে পাবে না, তবুও ভালবাসে গোপনে। হঠাৎ একদিন নিশি প্রপোস করে বসে আকাশ কে, আকাশ অবাক হয়ে যায় এবং মানা করে দেয়। সেই থেকে নিশির জেদ, পড়বে না, পরীক্ষা দিবে না। সামনে ক্লাস ৯ এর বার্ষিক পরীক্ষা আর এদিকে নিশির পাগলামি তাই বাধ্য হয়ে বলে আগে পরীক্ষা দাও। নিশি বলে না, আগে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আকাশ জিজ্ঞেস করে কি রকম? আমি ২০টা কাগজে আমাদের প্রেম এবং বিয়ের উপর লিখছি, তুমি তার থেকে একটা কাগজ তুলবা যেটা উঠবে আমরা সেটা করব। উপায় না দেখে একটা কাগজ তুলে যেটাতে লেখা আজকের এই তারিখে পালিয়ে বিয়ে! যার জন্য নিশি পালিয়ে এসেছে বিয়ে করতে।

নিশি পাগলামির একটা সীমা আছে। আমি তোমাকে পারবো না বিয়ে করতে, আমাকে লেখা পড়া শেষ করতে হবে। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। অনেক পাগলামো দেখছি তোমার আর না। তুমি এখনে বাড়ি যাও।
-না যাবো না। তুমি সেদিন কাগজ তুলছিলে কেন?

বাধ্য হয়ে, তোমার পরীক্ষা, পড়বে না, পরীক্ষা দিবে না, তাই কাগজ তুলছি।
-তুমি আমায় ভালবাসো না?
নাহ, আমি আমার বাবা, মা ছাড়া কাউকে ভালবাসি না, চিঠিটা এখনো আন্টি দেখে নাই, তুমি দ্রুত চলে যাও।
-তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো না?

হ্যা সত্যি ভালবাসি না।

নিশি ডুকরে কেঁদে উঠল। . . . .

নিশি কেঁদে চলছে.......
নিশি কান্না থামাও মানুষ দেখছে
-দেখুক........
বুঝতে চেষ্টা কর তোমার সাথে আমার মিলে না। এই সম্পর্ক মূল্যহীন। তোমার বাবা, মা মেনে নিবে না। মাঝখানে আমার লেখা পড়া শেষ করতে পারবো না। তাছাড়া.....
-তুমি যদি আমায় আজ বিয়ে না কর আমি আত্মহত্যা করবো।
কর আত্মহত্যা? আমার কি? তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও। জীবন ও আমার সামনে আসবে না। তোমার মত মেয়েকে বুঝাতে যাওয়াটা বকামি। যত্ত সব নেকামো...
-ওকে আমি মরতে গেলাম

এটা বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড় শুরু করলো। আকাশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগলো যা জেদি অঘটন ঘটাতে পারে। সেও পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো।

আকাশ পিছন থেকে অনেক চিৎকার করেও নিশিকে থামাতে পারলো না। বড় রাস্তা দৌড়ে পার হতে একটা ট্রাক নিশির উপর দিয়ে চলে গেলো।
আকাশ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, আবার দৌড়ে এসে নিশির রক্তে মাখা দেহটা কোলে নিলো। ততক্ষণে নিশি আর এই পৃথিবীতে নেই।তখন চার দিকে আকাশের কান্নার আওয়াজ ও চিৎকার ছড়িয়ে পড়লো...

রাহেলা বেগম বালিশের নিচে চিঠি পেয়ে আরিফুল হাসানকে দিলেন, উনি সেটা পরে রেগে আগুন। ঠিক তখনি খবর পেলেন নিশি আর বেঁচে নাই। কয়েক মুহুর্ত নির্বাক থেকে ঘোষণা করলেন, ছোট লোকের বাচ্চাকে ফাঁসিতে ঝোলাবো। বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

পরদিন খবরের কাগজ গুলোতে খবর বেড়ালো, গৃহ শিক্ষকের হাতে ধর্ষণ হলো ইস্কুল ছাত্রী, হাত পা বেঁধে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যা।

আকাশ গেরেপ্তার হলো। চার দিক থেকে একটাই স্লোগান ধর্ষক আকাশের ফাঁসি চাই..

অতঃপর এরূপ ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি স্বরূপ ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো।

আজ রাতে একটু পর আকাশের ফাঁসি হবে। আকাশ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, অনেক তাঁরা জ্বলছিল সেখানে। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তাঁরা হয়ে যায়। ঐ যে উজ্জ্বল তাঁরাটা ওটা কি নিশি?

আকাশ চিৎকার করে বললো যে ভয়ে তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি সে, ভয় এখন আর নাই।
নিশি আজ আমি আসছি তোমার কাছে, তোমায় ভালোবাসতে।
তখনি আকাশের মনে পরে গেলো বাবা মায়ের কথা। নিজেকে অপরাধী লাগছে তাঁদের স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারল না।
উপরের তাঁরা থেকে চোখ নামিয়ে আকাশ মাটির দিকে তাকিয়ে আপন মনে বলে উঠল, নাহ গরীবের ভালোবাসার অধিকার মরার পরেও নাই।

ছেলেটি ও মেয়েটি

ছেলেটি ও মেয়েটি
লিখেছেনঃ-ফালতু বালক

ছেলেটি পছন্দ করে মেয়েটিকে। মেয়েটিও। প্রতিদিনই ক্লাসে চোখা-চোখি হয় দু'জনের। একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে পারে দু'জনই। তবুও কিছুটা ভয় ও অনেকখানি সংকোচবোধ আড়ষ্ট করে রাখে সর্বদা দু'জনকেই। একে অন্যের প্রতি গভীরতম মমতাবোধ গুলো গোপন থাকে মনেতেই। কোনদিন কেউ ক্লাসে না এলে অন্যজনের দিনটাই নিরামিষ মনে হয়। আর এই জনও ক্লাসে না আসার বাঁধাটিকে বকা দিতে থাকে ইচ্ছামত।

এভাবেই দিনগুলো কেটে যেতে থাকে ধূসর। জ্যোৎস্না রাতের চাঁদটিও ধীরে ধীরে আপন হতে থাকে দু'জনের কাছেই। রোদমাখা উজ্জ্বল বিকেলটিও কাটতে থাকে মেঘমাখা। ঝুম বৃষ্টির দুপুর গুলোতে নিজেদেরকে ভীষণ রকম একলা আবিষ্কার করতে থাকে তারা। নির্ঘুম রাতের দীর্ঘ সময়টিতে ভাবনার বিষয়গুলোও সীমাবদ্ধ হতে থাকে একে অন্যের মাঝে ক্রমান্বয়ে।

সার্টিফিকেট অর্জনের গন্ডি পেরোনোর শেষ দিনটিতেও চোখা-চোখি হয় দু'জনের। কিছুটা কাছা-কাছি আসেও তারা। সৌজন্যবোধ আলাপও তাদের মাঝে হয় কিছুক্ষণ। তারপর, তারপর কিছুটা ভয় ও অনেকখানি সংকোচবোধটুকুকে আঁকড়ে ধরে একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নেয় তারা। হতাশ হয় প্রকৃতি। হতাশ হয় মেঘমুক্ত রোদমাখা আকাশ।

মেয়েটি চুলের খোপা থেকে বেলী ফুলের মালাটি খুলে, ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তায় কিছুটা বিরক্তে। কষ্ট করে শাড়ি পরাটা নিজের কাছেই নিজেরই বেমানান লাগতে থাকে মেয়েটির। আর ছেলেটি ডান পাশের প্যান্টের পকেটে রাখা কিছু অগোছালো বাক্যদ্বারা তৈরী প্রেমপত্রটি পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে পরক্ষণেই কি যেন ভেবে তা রেখে দেয় যথাস্হানে। স্বযত্নে।

অতঃপর, কোন এক বৃষ্টিদিনে মেয়েটিকে ছাতা মাথায় পিচঢালা রাস্তায় একাকী হাঁটতে দেখে ছেলেটি। সকল ভয় ও জড়তাকে বিসর্জন দিয়ে ছুটে যায় সে মেয়েটির কাছে। কাক ভেজা হয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে সিনামা স্টাইলে অদৃশ্য কদম ফুল বাড়িয়ে বলে, "আমার মহা কালের যাত্রী হবে?" মেয়েটি মুচকী হাসে। পবিত্র হাসিটিকে ভেজাতে পারে না বৃষ্টি ফোঁটারা। হতাশ হয় তারা।

এটা একটা অসম্পূর্ন গল্প

এটা একটা অসম্পূর্ন গল্প
লিখেছেনঃ odhora chowdhury meghla (আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন)

চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে সাইফুলের|বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা একটা ঘুপচিঘরে যতটুকু আলো আসা সম্ভব,ঠিক ততটুকুই আলো সাইফুলের ঘরে|আবছা আলোতে ওর মনে হচ্ছে হয়ত এটা বিকেল বেলা| বিছানা ছেড়ে উঠে যে ঘরের দড়জাটা খুলে দেবে সেই শক্তিটুকুও শরীরে নেই|তিন দিনের জ্বরে এখন পর্যন্ত একটা ওষুধ পর্যন্ত পড়েনি|তবু কষ্ট করে উঠে কোনরকমে দড়জাটা খুলে দিল|আরে তাইতো,বিকেল তো হয়ে গেছে|

সাইফুলের মনে হচ্ছে এটাই তার জীবনের শেষ বিকেল|কারন গতবার এমন জ্বরেই সে তার বাবা মা কে হারিয়েছে| ওর মনে হচ্ছে ইতিমধ্যে জমদূতও তাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে|বুঝতে পারছে এটাই মৃত্যুযন্ত্রনা|হয়ত এটাই তার শেষ বিকেল,তবু আল্লাহর কাছ থেকে আর কিছুটা সময় চেয়ে নেয় সে| চোখটা কিছুতেই খোলা থাকতে চাইছে না, তারপরেও সাইফুল আপ্রানচেষ্টা করছে যাতে সে আর কিছুক্ষনবেঁচে থাকতে পারে|কারন ঠিক এই সময়টাতে শহরের সবচেয়ে সেরা কলেজটা ছুটি হয়,আর একটা বিশাল কালো গাড়ি এসে দাড়ায় সাইফুলের ঘরের সামনের রাস্তাটায়|আর তার ভেতর থেকে নামে ওর স্বপ্নের রাজকন্যা| মেয়েটার চেহারায় আহামরি কিছু নেই|তবে অসম্ভব রকম সুন্দর একটা কাঠিন্য আছে| মনে মনে ভাবে এত বড়লোকের মেয়েদেরমাঝে এমন একটু কাঠিন্য ভাব থাকেই|তবে সাইফুলের কাছে এই কাঠিন্যই ভাল লাগে|মেয়েটার নামটা এখনো বলা হয়নি|সাইফুলের সেই স্বপ্নকন্যার নাম মেঘলা|

রাস্তার ওপাশেই বিশাল বড় বাড়িটা|তার দোতলায় থাকে মেঘলা|মেঘলার ঘরটা আর রাস্তার এপারে সাইফুলের ঘরটা একদম সামনাসামনি|মেঘলা বেলকুনিতে এসে দাড়ালেই সাইফুল ওকে দেখতে পায়| মেঘলা যতক্ষন দাড়িয়ে থাকে সাইফুল ঠিক ততক্ষন তার ভাঙ্গা কুটিরের থেকে ওকে দেখতে থাকে|তবে এই দু-তিন বছরেও মেঘলা বুঝতে পারেনি কেউ তার দিকে এভাবেতাকিয়ে থাকে|রোজ নির্দিষ্ট একটাসময়ে মেঘলা বেলকুনিতে আসে|মাঝে মাঝে সাইফুলের মনে হয় হয়ত ও মেঘলাকে দেখবে তাই মেঘলা আসে|আবার নিজেই নিজেকে শাসন করে এইসব ভুলভাল ভাবার জন্য|আবার নিজেকে প্রশ্ন করে,“আমি কি মেঘলাকে ভালবাসি?” ওর মন ওকে জবাব দেয়,“না|মেঘলাকে ভালবাসার সাহস তোর নেই,আর অধিকারও নেই|” আবার নিজেকে সান্ত্বনা দেয়,“মেঘলার মুখের ঐ কাঠিন্যই আমার ভাল লাগে|আর কিছুই না…“

উফ!!বুকের যন্ত্রনাটা তো বেড়েই চলছে,কমছে কই?তবুও মেঘলাকে ভাবতে ভাল লাগছে ওর|এই মেয়েটাকে ভাবতে ভাবতে যদি মরা যায় মন্দ হয়না|“প্রথম কবে মেঘলাকে দেখেছিলাম যেন?ওই তো যেদিন প্রথম আসলাম এই এলাকায়|মেঘলার বাবাই তো দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলেন,একটা চায়ের দোকান করে দিয়েছেন|ওর হঠাত মনে হয়,মেঘলা যদি আমাকে ভাল নাই বাসে তবে আমি যে দুদিন গ্রামে ছিলাম,তখন কেন মেঘলা তার চায়ের দোকানে এসেছিল?
উত্তরটা তার জানা নেই|তবে সাইফুল মেঘলার ব্যাপারে অনেক কিছু জানে|মেঘলার বাড়ির ছুটা কাজের বুয়ার থেকে সব শুনেছে|মেয়েটা কতটা ছেলেমানুষ,বাবার কত আদুরে,সারাদিন কি কি করে সব জেনেছে| তবে সবথেকে ভাল লেগেছে এটা জেনে যে মেয়েটার মনটা খুব নরম|

গাড়ির হর্নে বাস্তবে ফেরে সাইফুল|এই তো গাড়িটা এসে গেছে|মেঘলা নামছে গাড়ি থেকে|আহা সম্পূর্ন সাদা ইউনিফরমে মেঘলাকে তার মনের মতই লাগছে|মেঘলা চলে যাচ্ছে তার বাড়ির পথে|কোনদিন মেয়েটা এদিকে তাকায়না,তবুও সাইফুলের আজ খুব ভাবতে ইচ্ছে করছে,”আজ মেঘলা তাকাবে|তার দিকে এগিয়ে আসবে|”

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সাইফুল|মেঘলা সত্যিই এগিয়ে আসছে তার দিকে|মুখে কোন কাঠিন্য নেই,বরং মুখটা হাসি হাসি|ঈশ হাসলে কি সুন্দর দেখায় মেয়েটাকে!! মেঘলা সাইফুলের ঘরের দড়জায় এসে দাঁড়াল|সাইফুল জানেনাএই অসম্ভবটা কি করে সম্ভব!এর নামহ্যালুসিনেশন|বুকের যন্ত্রনাটাআরো তীব্র হচ্ছে|চোখের কোনে একফোটা পানি চলে এসেছে ওর|খুব ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে মেঘলার হাত টা ধরে ভালবাসি বলতে|কিন্তু পারছে না|চোখের সামনেটা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে|ঝাপসা হচ্ছে মেঘলাও…
আর কিছু ভাবতে পারলনা সাইফুল|তবুও জীবনের শেষ অসম্পূর্ন বাক্যটা উচ্চারন করল,“মেঘলা,তোমাকে সত্যিই…|”

গল্পটা শেষ|আমি এই গল্পের রাইটার|তাই আমি সাইফুলকে মরতে দেবনা|সাইফুল বাঁচবে…
ঐদিন শেষ বিকেলে সত্যিই একজন আসবে|সে সাইফুলের সেবা করে সুস্হ করে তুলবে|তারপর একটু একটু করে মেঘলার অস্তিত্ব ওর মন থেকে মুছে দেবে|তারপর??
আমিও আর জানিনা…
তবে আমি একটু কাঁদব|
বিশাল একটা স্টেশন, এখানে অজস্র মানুষের যাতায়াত প্রতিদিন। ট্রেনের হুইসেল বাজছে, মালপত্র মাথায় নিতে জনে-জনে গিয়ে চিত্কার করে অনুরোধ করছে কুলিরা, প্রিয়জনদের পেয়ে কেউ চিত্কার করে ডাকছে, কারো চোখে অশ্রু – কাছের মানুষদের মিলনে অথবা বিরহে।

মাহফুজ চুপচাপ বসে আছে ওয়েইটিং রুমের কোনার একটা চেয়ারে। এইখানে এত শত-শত মানুষ — তাদের কেউ-ই তার আপন নয়, কাউকে চেনেনা। এখন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেও এক গ্লাস পানি কেউ দিবেনা — একথা ভাবতেই কেমন অস্থির হয়ে উঠলো তার মনটা। তার প্রিয়জনদের কথা ভাবতেই এমন লাগছে। অনেকদিন ধরে আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিল মাহফুজ। রুমের পড়ার টেবিলের উপরে রাখা ডেস্ক ক্যালেন্ডারটাতে দিন কেটে দিতে সে একটা লাল সাইনপেন কিনেছিল, লাল রঙ দিয়ে দাগ দিলে তাতে রাগ বেশি ঝাড়া যায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে সে যত্ন করে কেটেছে একেকটা দিন। আজ সকালে ইস্ত্রি করা শার্টটা বের করে পরেছে, পারফিউম গায়ে দিয়েছে, দিনের পরিশ্রমে যেন তার ছিমছাম পরিপাটি ভাবখানা ছুটে না যায় সেজন্য তার চেষ্টার কমতি নেই। অফিস থেকে বসকে বলে আগেই বেরিয়ে এসেছে, অনেকদিনের এই অপেক্ষার কথা অফিসের কলিগরা আগেই জানত, তারা সবাই মুচকি হেসে বিদায় দিলো দুপুরে লাঞ্চের পরেই।

ওয়েইটিং-রুমে বসে থেকে মাহফুজের কান সজাগ, নতুন কোনো ঘোষণা কিনা, হুইসেল শোনা যায় কিনা নতুন ট্রেন আগমনের। কোন ট্রেন এলেই খোঁজ করছে এটা ‘অরণ্য নীলিম’ কিনা। যাদের অপেক্ষায় এখানে এসেছে সে, তাদের কারো সাথে আবার ফোন নেই, তাই যোগাযোগ করতে পারছেনা। কেবল অপেক্ষার প্রহর গুণে চলেছে, এই বুঝি এলো! কিন্তু অমন অনেকগুলো ট্রেন এলেও তারটার দেখা নেই…

পাশের চেয়ারে পড়ে থাকা জীর্ণ পুরনো পত্রিকাটা হাতে নিয়ে পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় সে – নাহ! মন বসছে না কিছুতেই। উশখুশ করছে মাহফুজ। অনেকদিন পর আসবে সে, তাই ঘরদোর নিজের হাতে পরিষ্কার করেছে সে ক’দিন ধরে। নতুন জানালা-দরজার পর্দা লাগিয়েছে, বিছানার চাদর কিনেছে সাদার ভেতর উজ্বল নীল রঙ্গা ফুলে ছাপানো। এই কন্ট্রান্সটটা তাসনীয়ার অনেক পছন্দ!

হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল সন্ধ্যা প্রায়। দিন প্রায় পুরোটাই চলে গেল। স্টেশন মাস্টারের রুমে উকি ঝুকি দিল সে- চেয়ারটা ফাঁকা দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এলো। এইসবের কোনো মানে হয়? একটা কোনো এনাউন্সমেন্ট পর্যন্ত নেই। প্ল্যাটফর্মে ইতস্তত পায়চারী করতে থাকে সে। স্টেশন মাস্টারের রুমের বাইরের আয়নায় নিজেকে আরেকবার দেখে নিলো সে। যেন পরিপাটি লাগে তাই গেল হপ্তায় শুক্রবার দিন চুল কাটিয়েছে। তাছাড়া একা থাকার সময়টায় সপ্তাহের ছুটির দিনেই অনেক কাজ পড়ে যায় তার –একা একা কাপড় ধোয়া, রান্নাঘরের সিঙ্কে জমানো গাদা গাদা বাসন কোসন ধোয়া এমনি আরো কত কী! আরেকজন তার এইসব কষ্টটুকুর জন্য কতইনা মন খারাপ করে ভেবে ভালোবাসায় মুখটা রক্তিম হয়ে এলো মাহফুজের। হঠাৎ মুখে স্মিত হাসি ফুটে ওঠে তার। পকেটে হাত ঢুকিয়ে কাগজ ছুঁলো সে একটা — তালিকা লিখেছে কাজ ভাগাভাগির। এইটা নিয়ে দু’জনের ঢিশুম ঢিশুম ফাইট হবে সে জানে। তাইতো যত্ন করে লিখে রেখেছে। এতদিন পর দেখা হবে, একটু খুনসুঁটি না হলে হয়? লাজুক হাসিতে নিচের ঠোটটা কামড়ে ধরে মাহফুজ।

মাগরিবের ওয়াক্ত প্রায় হয়ে এলো। গোধূলির আলোতে প্ল্যাটফর্মে একটা ধোঁয়াটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখনো আলো জ্বালানো হয়নি সবগুলো। হঠাৎ দূরে ট্রেনের হুইসেলের শব্দে সম্বিত ফিরে পায় মাহফুজ। বুকের স্পন্দন টের পাচ্ছে সে — ধুকধুক ধুকধুক। আনন্দ, উত্তেজনা আর ভালোবাসার স্পন্দন বুঝি এমনই হয়। এত অপেক্ষার পর যদি প্রিয়জনটি নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে, সুস্থ শরীর আর মনের পরিচয় প্রকাশক একটা হাসি দেয় — সেই আনন্দ, সেই উদ্বেলিত হৃদয়ের অনুভূতি কি কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায়? যারা অমন অপেক্ষা করেনি কোনদিন, তারা কীভাবে বুঝবে অপেক্ষার পরে প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার ভালোবাসা কত তীব্র থাকে, তাতে কত গভীরতা থাকে, সেই হৃদয়ে কত আকুতি থাকে…

অনেক দূরে দাঁড়িয়ে ‘চ’ বগির দরজায় চোখ লাগিয়ে রাখে মাহফুজ। সাদ-নীল স্কার্ফ পরা চিরচেনা মানবীর অবয়ব দেখে যেন আবেগ উথলে উঠে মাহফুজের। তার অপেক্ষার পালা বোধহয় শেষ হল। এক মাস হলো তাসনীয়া গিয়েছিলো মা’র বাড়ি। তার কাছে যেন মনে হচ্ছিলো এক যুগ দেখেনি সে মেয়েটির গভীর মমতামাখা চোখদুটো, দুষ্টুমি ভরা হাসি, শোনা হয়নি অফিস থেকে ফিরে বাসার দরজা খুলেই ভালোবাসামাখা কন্ঠের জিজ্ঞাসা — “আসসালামু আলাইকুম! আজ শরীর মন ভালো তো স্যার”?

লিখেছেনঃ নূরে আদম ডনি

আমার বন্ধু ও একজন বোরকাওয়ালি

আমার বন্ধু ও একজন বোরকাওয়ালি
লিখেছেনঃ Ami Sopnil

বন্ধুদের মধ্যে রাজু আমার খুব কাছের, কাছের এই কারণে সে আমার বাসার কাছেই থাকে, কারণে অকারণে বাসায় এসে পেইন দেয়। বিরক্ত হয়ে কত গালিগালাজ করি তারপরও ব্যাটা দাঁত বের করে হাসে। ছোট বেলা থেকেই দুজন একসাথে পড়ি,স্টুডেন্ট ও দুজন সেইম মানের। ক্লাসে বই পড়ার বদলে তিন গোয়েন্দা পড়ে সময় কাটাতাম। ভার্সিটিতেও এক সাথে ভর্তি হলাম। আমি টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং এ আর ওই ব্যাটা সি এস ই তে।কারণ কি? কারণ কিছুনা সি এস ই নাকি তার চেহারার সাথে যায়, চেহারায় নাকি প্রোগ্রামার প্রোগ্রামার ন্যাচারাল ভাব আছে। যাই হোক বন্ধু আমার প্রেম টেম করে না, আমার মত অবস্থা। সুখে দুখে আমার বাসায় এসে পেইন দেয়া ছাড়া সে এমনি ব্যাপক ভাল, সহজ সরল ছেলে। যদিও আজকাল ভদ্র ভাষায় বোকা ছেলেদের সহজ সরল বলে থাকে। এক্সাম শেষে সবাই বাড়ি থেকে ঘুরে আসে কিন্তু সে বাড়ি যায়না, বেশ কিছুদিন আমার বাসায় ও আসে না। কাহিনী কি ? খোজ নিয়ে জানলাম ফেসবুকে তার একজন ফ্রেন্ড হয়েছে তার সাথেই সারাদিন চ্যাটে ব্যস্ত থাকে। একদিন জরুরী কল দিয়ে বাসায় এনে জিজ্ঞেস করলাম কিরে কি ব্যাপার কাহিনী কি? বাসায় আসিস না, কি করিস সারাদিন। ও একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলল দোস্ত ফেসবুকে একজনকে ভালো লাগসে তার সাথে চ্যাট করি। আমি বলি কস কি দোস্ত। কেমনে কি হইল? ছবি দেখা তো। দাড়া ফেসবুক আইডি বল খুঁজে বের করি। মেয়েটার ফেসবুক আইডিতে তে গিয়ে দেখি, প্রোফাইলে আপাদমস্তক বোরকাপরা একজন খালি চোখ দেখা যায়। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে এইডা কি ! স্ক্রিন তো পুরাই ব্ল্যাক। তুই কি আর ছবি দেখছস নাকি এই চোখ দেখেই প্রেমে পিছলা খাইসস? ও আমাকে বলল আরে চেহারা দিয়ে কি হবে, আমি তো তার মন মানুষিকতা, তার আচার ব্যবহার কে পছন্দ করি। চেহারায় কি আসে যায়। তো আমি বললাম ঠিক আছে তর এতই যখন ভালোবাসা দরকার তাইলে আমাদের বুয়ার মেয়েকে বিয়ে করে ফেল, মেয়েটাও তোকে অনেক ভালবাসবে, জোছনা রাতে বলবে এই হুনো, জানালাডা খুইলা দেও, চানডা কত সুন্দর উঠছে দেখস! তাছাড়া বুয়ার গ্রামে এক খন্ড জমিও তোরে দিবে, চাষ করে খেতে পারবি। যাই হোক ও এই লোভনীয় অফার গ্রহণ করল না, বলে ফাইজলামী রাখ, প্রেম স্বর্গীয় ব্যাপার তোর মত মুর্খ মানব তাহার কি বুঝিবে! তো এখন আমারে হেল্প কর, মেয়েটা কে কেমনে জিগাই তার বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি, যদি কিছু মনে করে।তুই কিছু টিপস দে, কিভাবে তাকে বলি বোরকা ছাড়া ছবি দিতে। আমি বললাম দাড়া ও অনলাইনে আছে? বন্ধু আমাকে তার ফেসবুক আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। দেখলাম মেয়েটা অনলাইনেই আছে।টেক্সট দিলাম কি ব্যাপার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বিজি নাকি? মেয়েটা আনসার দিল, আমার বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি লিখলাম হুহ, সবাই এমনি বলে অথচ চার পাঁচটা বয়ফ্রেন্ড মেইন্টেইন করে করে এমন ভাব নেয় সে এখনো সিঙ্গেল। মেয়ে রেগে গিয়ে বলল আমার সাথে এভাবে বলবা না, আমি ওইসব ফালতু মেয়ে না, প্রেম গুনার কাজ। আমি প্রেম পছন্দ করিনা। বন্ধু তো খেপে বলে যা তোর চ্যাট করতে হবে না, ও খুব রেগে গেছে, তোকে আইডি টা দেয়াই ভুল হইছে, আমি বললাম আরে ব্যাটা তুই না জানতে চাইলি তার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, এখন তো জেনে গেলি বয়ফ্রেন্ড নাই, আর থাকলেও অন্যের সাথে টাঙ্কি মারতে আপত্তি নাই। এ শুনে রাজুর মুখে হাসি। সেদিনের মত বিদায় নিল। তারপর আর খোজ খবর নাই। ভার্সিটিতে একদিন দেখা হল, বলল দোস্ত সে আমাকে তার ছবি দিছে। জিজ্ঞেস করলাম বোরকাঅয়ালী ছবি দিছে? তা বোরকা ছাড়া নাকি সহ? বলল বোরকা ছাড়া । মোবাইল বের করে দেখানোর আগে বলল এমনিতে অনেক সুন্দর সামান্য মোটা এই আরকি। ছবি দেখে আমি আঁতকে উঠলাম, কিরে এ সামান্য মোটা কই? এ জলহস্তী হলেও তো কম বলা হবে, ডাইনোসর এর বাচ্চা কাচ্চার মত দেখতে। দোস্ত আর যাই হোক তুই যা হাল্কা পাতলা মানুষ, তোদের দুইজন কে এক সাথে দেখলে মনে করবে, দেশে দুর্ভিক্ষ আর তার কারণ পাশে নিয়ে ঘুরিস। বাদ দে! দেখলাম বন্ধুর মুখ মলিন। বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, তা মেয়ে নাম্বার দিছে? বলে না দেয়নাই এখনো তবে মেয়েরও আগ্রহ আছে। সে আমাকে প্রতিদিন অফলাইনে থাকলে মেসেজ দেয়,অনেক কেয়ার করে, বাবা মার খোজ খবর নেয়। ও অনেক কেয়ারিং, এমন মেয়ে এই সময়ে পাওয়া অনেক টাফ। দেখতে তেমন নাহলে তাকে আমার ভালো লাগছে, জানিনা তুই কিভাবে নিস, দেখ লাইফে চাওয়ার কি আছে, সুন্দরী বেশি হলে তার ডিমান্ড ও বেশি থাকবে, থাকবে অনেক ছেলের ভিড়। এত কিছু উপেক্ষা করে সে কি আমার জন্য আসবে? আসবে না। আর যাদের পেছনে পোলাপান ঘুরে বেশী তারা এমনিতেই অহংকারী হয়ে যায়, ভাবে একটা গেলে তো আরেকটা তো পাবই। আমার দরকার একজন ভালো মানুষ। ভালো চেহারার না। ও যেমন আমি তাতেই খুশি। বুঝলাম বন্ধু মেয়েটার প্রতি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছে, তাই আর খোঁচালাম না, বললাম কোন হেল্প লাগলে জানাইস। আবার অনেক দিন দেখা নেই। একদিন শুনি মেয়ে নাম্বার দিছে, দেখা করতে বলছে। মিরপুর গিয়ে দেখা করে আসতে হবে। ফাস্ট ডেটিং এ যাবে চরম নার্ভাস। কি পরে যাবে, কি বলবে অবস্থা খারাপ। বললাম গুগলে সার্চ দে, ওমা সে দেখি সত্যি সত্যি গুগলে সার্চ দিল। যাই হোক সেদিন ডেটিং থেকে আসল, মন খুব খারাপ। কিরে কাহিনী কি? বলল বোরকাওয়ালী তাকে একটা বই গিফট দিছে, ফাস্ট ডেটিং এ এমন বই পেয়ে বেচারা শকড। কি বই? হাতে নিয়ে দেখি বইয়ের নাম শয়তানের আসর প্রেম রোমান্টিকতা। হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরার মত অবস্থা, ডেটিং এ গিয়ে এমন বই হবু গার্লফ্রেন্ড এর কাছে থেকে পেলে শকড হবারি কথা। বললাম দোস্ত তুই টেনশন নিস না, মেয়ে দেখবি ঠিক ই কল দিবে। তুই বাসায় গিয়ে ঘুম দে,দেখা করার টেনশনে ঘুমাস নাই। রাতে রাজুর কল পেয়ে অবাক, কারণ রাত বাজে সাড়ে তিনটা। ফোন ধরে বললাম কিরে এত রাতে, কোন ইমার্জেন্সি নাকি? হাসতে হাসতে বলে আরে না, বোরকাওয়ালী কল দিছে। বুঝছিস টি এস সি তে দেখা করতে কইছে। মেজাজ যা খারাপ হল কয়েকটা গালি দিয়ে বললাম শালা এই নিউজের জন্য আমার ঘুমের ১২টা বাজাইলি? তোর বোরকাওয়ালীরে পাইয়া লই। তারপর বন্ধু ডেটিং মেরে বেড়ায়, আজকে ধানমন্ডি লেক তো কালকে সংসদ ভবন। একদিন জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বোরকাওয়ালী কি ডেটিং এ বোরকা পরে আসে? মুখ দেখা যায়? নাকি চোখের দিকে চেয়েই তোর দিন চলে যায়? ও হেসে বলে না,আমি যে ড্রেস পরতে বলি সেটা পরে আসে। বল্লা বাব্বাহ তোর দেখি উথাল পাথাল প্রেম তা কিস করছিস? অ লজ্জা পেয়ে বলে আরে দুর হাত ই ধরি নাই এখনো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোর গার্ল-ফ্রেন্ড তুই হাত ধরবি না? ও বলে আরে পরহেজগার মানুষ কি না কি মনে করে। বললাম এমন পরহেজগার যে ডেটিং মেরে বেড়ায় না। নেক্সট টাইম দেখা করলে হাত ধরবি। তবে হা হাত ধরার আগে তুই ডাম্বেল নিয়ে প্র্যাকটিস করিস বাসায়, বলা যায় না যদি আলগাতে না পারিস। ইস্পাত কঠিন দৃষ্টিতে আমি অফ হয়ে গেলাম। কয়েকদিন পর হঠাত ফোন, ফোনে বন্ধুটা কাঁদছে। জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি? তোর কি হইছে তুই এখন কই? বলে দোস্ত মেয়েটা আমার সাথে চিট করছে, সে নাকি আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি, বন্ধু হিসেবে দেখেছে, আমার খারাপ লাগবে বলে বলেনি এতদিন। বললাম তোর সাথে দেখা করার আগ্রহ তো সেই দেখাত, ক্লাস বাদ দিয়ে দেখা করতে বলত। এই মেয়ে তো মহা ফাজিল। তোর সাথে অভিনয় করছে এত দিন? রাজু হ্যাঁ বলে জবাব দেয়। এখন নাকি মেয়েটা রাজুর অন্য বন্ধুদের কাছে ওর বদনাম করে,বলে ও ভালো ছেলে না, ও এই সেই। মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ে গুলো এমন করে কেন? ভালো ছেলেগুলো কে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে কিছু দিন পর লাইফটাকে বরবাদ করে দেয়। কি লাভ হয় তাদের, সাময়িক কিছু ভালোলাগা ছাড়া। আমার কেনও জানি মনে হয় এই মেয়ে গুলো জীবনে সুখ তেমন একটা পাবেনা। সময় ই তাদের কে সেই শিক্ষা দিবে। আজ আমার বন্ধু টা অসুস্থ, কোনভাবেই ঘুমাতে পারছেনা। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন প্লীজ।


ღ গল্পটি ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্টস দিয়ে লেখককে আরো নতুন নতুন নতুন গল্প লিখতে উৎসাহিত করুন। ღ

"প্রতিশোধ"

"প্রতিশোধ"
লিখেছেনঃ অনলী দিগন্ত (dipto sarkar)

সানাইয়ের সুর এত করুন হয় কেন? মনে মনে রিয়াকে বিয়ে করতে চাইছিলাম।

আজ সত্যি সত্যি বিয়ে করে ঘরে তুললাম, তবুও সানাইয়ের সুর এত করুন লাগছে আমার?

রিয়া আমাকে বিয়ে করতে চায়নি। চাইবে বা কেন? আমি যে ওদের আশ্রিত ছিলাম। কে আমার বাবা, কে আমার মা, আমি জানি নাহ। শুধু এটুকু জানি রিয়ার বাবা তথা আশরাফ তালুকদার আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে নিজ সন্তানের মতো মানুষ করেছে।

রিয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা অন্যরকম। ছোটবেলায় যেমন রিয়া আমার সাথে কিছু খেলত না। ঠিক বড় হয়েও কখনো আমার সাথে হাঁটতে বের হয়নি। প্রয়োজন ছাড়া কখনো একে অপরের সাথে কথা বলিনি। আমাদের দেখা সাক্ষাত্‌ হত কম। ছোটবেলা থেকে, হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া শেষ করছি। শুধু ছুটির দিন গুলোতে রিয়াদের বাসায় থাকতাম। চাকুরি নেওয়ার পর নিজের একটা বাসা হয়েছে। একা একা থাকি, কাজের বুয়া রান্না করে দেয়। রিয়ার বাবা আমাকে সন্তান স্বরূপ দেখলেও, আমি রিয়ার কাছের মানুষ ছিলাম না, আবার দূরের মানুষ ও ছিলাম না।

হঠাৎ একদিন আশরাফ আঙ্কেল ডেকে বলল.. -শুভ, বিয়ে করবে না? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। -পছন্দের কোন মেয়ে আছে? না, তেমন কেউ নেই

হঠাৎ বলে বসল

-রিয়াকে বিয়ে করবে

আস্তে করে বললাম রিয়া কি রাজি হবে?

-রাজি থাকা না থাকা কোন ব্যাপার না, তুমি রাজি থাকলে হল।

আপনি আমার অভিভাবক, যা ভালো বুঝেন।

দুই দিন পর, রিয়া আমার সাথে দেখা করে জানায় দিল, ও আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। যেভাবে হোক বিয়ে বন্ধ করতে হবে। আমি বললাম কারন ছাড়া মানা করে দিব কিভাবে? রিয়া জানাল ও রাজ নামে একজনকে ভালবাসে, তাকে বিয়ে করবে। রাজকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।

আঙ্কেলকে সব জানালাম, উনি রাজকে দেখতে চাইলেন। রিয়া অনেক চেষ্টা করেও, রাজকে আঙ্কেলের সামনে নিয়ে আসতে পারল না। পারবে কি করে? রাজের সাথে অনলাইনে পরিচয় রিয়ার, বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। রাজকে রিয়া কখনো চোখে দেখেনি, শোনেনি তার কণ্ঠ। তবুও ভালবাসে পাগলের মত। তাঁদের ভালোবাসা শুধু অনলাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবুও রাজের সাথে একদিন চ্যাট না হলে রিয়া ঠিক থাকতে পারে না, এতটাই গভীর ভালবাসা।

আঙ্কেল ভেবে অস্থির, কোথাকার কোন রাজ, সামনেও আসে না। রিয়ার মা বেঁচে নেই, এদিকে একরোখা ও জেদি মেয়ে। তার উপর এক মাত্র সন্তান। রিয়ার পাগলামো দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই বাধ্য হয়ে জোর করে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ের আগ মুহূর্তে রিয়া ওর বাবার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে দিব্বি দিল, -আমার মুখ কোন দিনেও দেখতে চাইবেনা আর, যদি দেখ সেটা যেন আমার মরা মুখ হয়। এরপর রিয়া এক ফোঁটা চোখের জল বিসর্জন না দিয়ে আমার বৌ হয়ে এল।

আমি সন্তপনে বাসর ঘরে ঢুকলাম। রিয়া বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আমাক দেখতে চেঁচিয়ে উঠল, -খবরদার, আমার কাছে আসবেন না। আমি দ্রুত দরজা লাগায় দিলাম। -দরজা লাগালেন কেন? বিয়ে করা বৌয়ের রুমের দরজা লাগাবো না তো কার লাগাবো। রিয়া ভীতু ভীতু চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ার পাশে বসলাম

রিয়া দূরে সরে গেল। -আমি আপনার সাথে থাকব না। জানেন তো আমি রাজকে ভালবাসি। আপনি অন্য রুমে চলে যান।

আজ রাত আমাকে এই রুমে থাকতে হবে...... -কেন থাকবেন? আপনি কি আমার উপর জোর করবেন?

জোর করবো কেন? আমার কয়েক জন বন্ধু রয়ে গেছে। তাই বৌ রেখে অন্য রুমে শুতে পারি না। বিষয়টা খারাপ দেখাবে। চিন্তা করোনা আমি মেঝেতে শোবো, তুমি উপরে থেকো। বলে বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরলাম।

বিয়ের তিন দিন হয়ে গেল, আঙ্কেল মানে আমার শ্বশুর ফোন দিয়ে বার বার রিয়াকে নিয়ে যেতে বলছে। রিয়া যাবে না কোনোদিন ওই বাড়ি সেটাই বলছে বার বার। বাধ্য হয়ে একাই গেলাম। রিয়া যায়নি তাই শ্বশুর জানাল কয়েকদিন পর উনি নিজে আসবেন।

অফিসে কাজ করছিলাম, শ্বশুরের কল, -বাসায় এস তো এখনে, আমি তোমার বাসায়, রিয়া আমাকে দেখে রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। কিছুতেই রুমের দরজা খুলছে না। দ্রুত চলে এলাম বাসায়, আমাক দেখে রিয়ার বাবা বলল তুমি একটু দেখত, আমি অনেক ডাকা ডাকি করলাম রিয়ার সারা শব্দ নেই। আমিও অনেক ডাকলাম, সারা পেলাম না।

অবশেষ রুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে দেখতে পেলাম রিয়ার লাশ, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলতেছে..............

রিয়াকে দাপনের দুই দিন পর, রিয়ার বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম, আমাক কাঁদতে কাঁদতে বলল, -রিয়া মরার জন্য আমি দায়ী, তোমার বাসা না গেলে রিয়া মরত না। আসলে এগুলা আমার পাপের শাস্তি।

এভাবে বলছেন কেন? -শুভ, আমি তোমাকে রাস্তায় কুঁড়ে পাইনি।(কেঁদে কেঁদে) আমি সব জানি, আপনি আমার বাবাকে খুন করছেন। চমকে উঠে বলল -তুমি কিভাবে জানো? তিন বছর আগে, লেখা পড়া শেষ করে যখন এ বাড়িতে আসলাম, তখন আপনার একটা ডায়েরী আমি পড়েছিলাম কৌতূহল বসত, আর সেখানে সব লেখা ছিল। আমার সব সমায় ইচ্ছা হতো আপনাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। তাই এই বাসা ছেড়ে আমি আলাদা বাসা ভাড়া করে একা একা থাকি। -আমাক মারলে না কেন? আমি তো ভাবছিলাম আমার সম্পত্তিতে তোমার লোভ নেই, তাই মেয়ের বিয়ে দিলাম তোমার সাথে।

আপনাকে মারি নাই, কারন আমার মা আপনাকে ভালবাসত, তাছাড়া মেরে ফেললেও আপনার উপযুক্ত শাস্তি হত না। আর আপনার সম্পত্তিতে আমার লোভ নাই। -তোমার মাকে অনেক ভালবাসতাম, কিন্তু আমার বাবা মেনে নিতে চায়নি আমাদের সম্পর্কটা, তাই তোমার মায়ের বিয়ে অন্য খানে হয়ে গেল।

আমি সব পড়ছি.. -বাবা মারা যাওয়ার পর চাইছিলাম তোমার বাবাকে মেরে ফেলে তোমার মাকে বিয়ে করবো। মেরেও ফেললাম, কিন্তু তোমার মা তোমার বাবার শোকে পাগলী হয়ে গেল...... ওই অবস্থায় তোমার মা তোমার জন্ম দিয়ে মারা গেল। আমি জানতাম না তোমার মা pregnant ছিল, জানলে মারতাম না তোমার বাবাকে।

আমার বাবা, মা দু জনে মারা গেল আপনার জন্য। আপনি আমার দায়িত্ব নিয়ে পাপ মোচন করতে চাইছিলেন? -হ্যাঁ, আমি অনুতপ্ত। আপনি অনুতপ্ত? এতে আপনার পাপ মোচন হয়ে গেল? আপনাকে আমি তিলে তিলে মারব। -আমি আজ বড় নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ, আমাক আর কি মারবে তুমি?

নিঃসঙ্গতা দিয়ে তো কেবল শুরু করছি, এই যন্ত্রণায় মারব আমি আপনাকে। আপনার মেয়েকে কেড়ে নিছি। আর আপনাকে উপহার দিছি নিঃসঙ্গতা যা আপনাকে প্রতিটা মুহূর্তে কুঁকড়ে মারবে। -তুমি কেড়ে নিছ মানে?

রাজ কে জানেন? আমি রাজ। আপনার মেয়ে সেটা জানে না। অনলাইনে প্রেমের জালে আমি ফাঁসিয়েছি ওকে। রিয়ার ভাল লাগার দিক গুলো জানতাম, তাই সহজে আমার জালে আটকায় ফেলছি। এর পর দু বছর ধরে প্রেম করে, আমার উপর পাগল বানিয়ে দিয়েছি। বিয়ের দিন থাকে রাজ যোগাযোগ করেনি। যে মেয়ে একদিন রাজকে ছাড়া থাকতে পারত না সে একটানা ৭ দিন কাটিয়ে দিল। এসবের জন্য আপনাকে দায়ী করছে। আপনি গেছেন আমার বাসায়, ওর মুখ দেখছেন। ওর দিব্বি ছিল আপনার উপর তাই পৃথিবী থেকে চলে গেছে।

তাই আপনি রিয়ার মিত্যুর জন্য দায়ী। যে খেলা আপনি শুরু করছিলেন আমার বাবাকে খুন করে, আমি সেই খেলার সব কষ্ট আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে শেষ করছি সেই খেলা। এখন আপনি মিত্যু পর্যন্ত এই কষ্ট নিয়ে ধুকে ধুকে বেড়ান।

আমি চলে আসার সমায় পিছনে খুব জোরে কান্নার আওয়াজ পেলাম। মনে মনে বললাম আশরাফ তালুকদার কাঁদ, জোরে জোরে কাঁদ, যত বেশী কাঁদবে তত আমার বাবা, মায়ের আত্মা শান্তি পাবে........ (সম্পুন্য কাল্পনিক)