আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

স্বপ্নিলের স্বপ্ন !

স্বপ্নিলের স্বপ্ন !
লেখেছেনঃ- Pranto Sunny

ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্নিল এর ভ্রমন করার খুব শখ । স্বপ্নিল এর ছেলেবেলা কাটে অনেক টা ঘরের ভেতর বন্দী অবস্থায় । ঘরে থাকতে থাকতে একটা সময় স্বপ্নিল নিজেকে ভীষন অসহায় মনে করতো। করার অবশ্য অনেক গুলোই কারন আছে বাবা-মা কেউ তাকে সময় দিতো না । শুধু স্কুলের সময় স্কুলে যাওয়া আর বাসার স্যারের কাছে পড়া এই ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা ।
স্বপ্নিল সব সময় এই জীবন থেকে মুক্তি চাইতো,
একদিন সে কাউকে কিছু না জানিয়েই বাসার থেকে বের হযে যায় অজানার উদ্দেশ্যে । কেউ যেনও তাকে আর বাসার চার দেযালের মধ্যে বন্দি করে না রাখতে পারে ।
বাসা থেকে বের হয়ে সে সন্দিহান !
বাসায় না ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে

[প্রত্যেক দিনের টিফিনের টাকা বাচিয়ে রেখেছিলো ভবিষ্যত্‍ এ কাজে লাগবে এই চিন্তা করে]

সেই কিছু টাকা ছারা তার সাথে আর কিছুই নেই  সে জানেও না দুনিয়া কতোটা নিষ্ঠুর ।
সে কিছুই চেনে না ! তার মনের মধ্যে কথা একটাই সে এই ইট-দালান থেকে পালিয়ে কোথাও স্বাধীন ভাবে বাচবে ।
যেখানে কিছুটা স্নেহ পাওয়া যাবে সে এমন কোনো যায়গার সন্ধান করছে, যেখানে মানুষগুলো একে অন্যকে ভালোবাসবে ।
এই দিকে স্বপ্নিল বাসা থেকে যে নাই হয়ে গেছে এই দিকে কারো কোনো নজর নেই, সবাই সবার কাজে ব্যস্ত ।
স্বপ্নিল তার মনের রাজ্যের খোজে হেটেই চলেছে কিন্তু কোথাও সেই রাজ্যের দেখা পাচ্ছে না সে !
এই শহর থেকে ওই শহর কোথাও নেই সেই রাজ্য, এভাবে চলতে চলতে তার পকেটের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে গেলো ।
তাকে যে সামনে আরো অনেকটা পথ পারি দিতে হবে । সে দেখলো রাস্তার পাশে একটা আইস-ক্রীমের দোকান।
দোকানীকে বলে সে একটা কাজের ব্যবস্থা করে ফেললো।

[ছেলেটিকে দেখে দোকানীর ও খুব মায়া হলো তাই সে তাকে কাজে রেখে দিলো ]

কিছুদিন কাজ করে সে কিছু টাকা জমিযে আবারো বেরিয়ে পরলো সেই রাজ্যের খোজে !
কিন্তু এতোদিনে সে বুঝে গেছে এই যুগের মানুষগুলো খুব-ই স্বার্থপর !
কেউ কারো ভাবনার কদর করতে জানে না ।
সবাই ভাবে টাকাই বুঝি সব সুখ বয়ে আনে !!!
এভাবে দিন গরাতে লাগলো এবং স্বপ্নিল ও টিন-এজার থেকে যুবকে পরিনতো হলো
এতো দিনে অনেক শহর, অনেক রাস্তা, অনেক জনপদ ঘোরা হয়ে গেছে স্বপ্নিলের ..

কিন্তু,
তবুও তার স্বপ্নের রাজ্যের ঠিকানা সে এখনো খুজে পেলো না!
একটা সময় নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে,
সর্বনাশা মদের নেশা তাকে পেয়ে বসলো সে নিজেও বুঝলো না !

এখন মদ ই তার একমাত্র কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার সাথী...
বিভীন্ন দেশ ঘুরে ক্লান্ত, মদের ভযংকর নেশা আস্তে আস্তে তার শরীরটা কে সহ্যের শেষ সীমানায় নিয়ে গেলো ।

একটা সময মুসাফিরের মতো তার মরন হলো ! তার লাশের ও কোনো ওযারিশ পাওয়া গেলো না। এবং একটা গর্ত খুরে লাশটা মাটি চাপা দেওয়া হয়ে গেলো !
এভাবেই মা-বাবার আদর-হীন একটি ছেলে স্বপ্নিল নামক একটি অধ্যাযের পরিসমাপ্তি ঘটলো !

[ বি:দ্র: এটি একটি কাল্পনিক গল্প ! অনেকটা কাল্পনিক আবার অনেকটাই বাস্তবিক, আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অনেক ঘটছে যার ব্যাপারে আমরা হযতো কিছুই জানি না, কিন্তু বাবা-মা রা তাদের সন্তান কে বাসায় আটকে রেখে স্কুলে পাঠিয়েই মনে করে তাদের কর্তব্য শেষ, সন্তানরা ভালোবাসা চায়, একটু আদর চায়, একটু মমতা চায় তাদের কে তা দিন, তাহলে আপনার সন্তানদের আর স্বপ্নিল এর মতো অবস্থার সম্মুক্ষীন হতে হবে না ! ]

নিয়ন আলো

" নিয়ন আলো "
লিখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

মাঠের এক কোনায় কাশেম মামার চায়ের দোকান ।
সিগারেট খাওয়ার জন্য দোকানের পেছনের অংশটা আদর্শ জায়গা ।
প্রতিদিন গভীর রাতে পরপর তিনটা সিগারেট একই সাথে খাওয়ার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে অপুর ।
একা একা বসে সিগারেটে টান দেয় সে ।
ব্রান্ড বেনসন ।
সিগারেটের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ।
সরকারের খেয়ে দেয়ে কাজ নাই, দেশের এত সমস্যা থাকতে সিগারেটের পেছনে লাগছে ।
অপুর মতো যারা হিসাবের টাকায় চলে, তাদের জন্য বিষয়টা খুবই পেইনফুল ।
সিগারেট ছাড়া অপুর পক্ষে সম্ভব না ।
ভার্সিটি পড়ুয়া কোন ছেলে বেনসন এর চেয়ে নিচের কোন ব্রান্ডের সিগারেট খাওয়া একটা প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু!
অপুর খুব কাছের বন্ধু রনি বলেছিল, দোস্ত সিগারেটটা ছাইড়া দে ।
এই ফালতু জিনিসটা খুব ক্ষতিকর ।
না খাইলে কি এমন ক্ষতি ।
অপুর বিষয়টা সহ্য হয়নি ।
মুখের উপর জবাব দিয়েছে, শালা তুই যদি একদিন তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা না বলিস কেমন লাগে ??
সিগারেট না খাইলে আমারো তেমনই লাগে ।
প্রসঙ্গ অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে, রনি সেদিনই জন্মের মতো চেপে গিয়েছিল ।
আর কোনদিন সিগারেট প্রসঙ্গ তোলেনি ।
উদাস ভঙ্গিতে সিগারেটে টান দিচ্ছিল অপু ।
আউউ!
অন্যমনষ্ক থাকায় সিগারেট যে অন্তিম মুহুর্তে পৌঁছে গেছে বুঝতে পারেনি অপু ।
ঠোটে ছ্যাকা লাগছে!
ফোন বেজে উঠল ।
লিটন ভাই ফোন দিয়েছেন ।
জি ভাই বলেন ।
কই তুই ?
ভাই আমি একটু বাইরে আসছি...ক্যাম্পাসে
এত রাইতে...বিড়ি ফুকতে গেছিস !
না মানে ভাই!
হলের বড় ভাইয়ের মধ্যে লিটন ভাই অপুর সবচেয়ে ক্লোজ ।
শোন, তোর বিড়ির বিল মেটানোর জন্য একটা টিউশনি পাওয়া গেছে ।
ইংরেজি আর অংক পড়াতে হবে ।
কাল রেডি থাকিস নিয়ে যাবো ।
ঠিক আছে ভাই ।
স্যার, আজকে পড়ব না ।
কেন ?
ভাল লাগছে না ।
মেজাজটা খারাপ হলেও, মুখটা স্বাভাবিক রেখে অপু বলল ঠিক আছে, যাই তাহলে আজ ।
যাই মানে ?! বসুন আজ আপনার সাথে গল্প করব ।
আমি গল্প করতে পারি না ।
আপনার পারা লাগবে না!
প্রথম যেদিন সৃষ্টিকে পড়াতে এসেছিল, মোটা কাচের চশমার আড়ালে একজোড়া ধূসর মায়াভরা চোখ অপুকে ভীষন আকর্ষন করেছিল ।
অসম্ভব মেধাবী স্টুডেন্ট সৃষ্টি ।
একবারের বেশি কিছু বলতে হয় না ।
ভীষন মনোযোগী স্টুডেন্ট যাকে বলে আর কি ।
মাঝে মাঝে সৃষ্টির সামনে নিজেকে অসহায় মনে হয় অপুর ।
স্যার, আপনার সব কিছুই ভাল, কিন্তু একটা জিনিস ভীষন বাজে লাগে ।
কি ?
আপনার মুখের সিগারেটের গন্ধটা খুবই বাজে । এটাই আপনার একমাত্র খুত!
পৃথিবীতে কোন মানুষই পারফেক্ট নয় ।
উঠছি আজকের মতো ।
অপু কোনমতে পরিস্থিতি সামলে পালাতে চাইছিল ।
স্যার, আর একটু বসেন...আমি আসছি ।
এটা আপনার জন্য ।
কি এটা ?
খুলে দেখেন ।
ভেতরে কালো রঙয়ের একটা টি-শার্ট......রি-স্টার্ট মাই লাইফ টাইপের কি একটা শ্লোগান লেখা ।
কি উপলক্ষ্যে এটা ?
আর আমি তো নিজেই অনেক কালো!
কোন উপলক্ষ্য-টুপলক্ষ্য না...এমনি ।
এইটা পড়লে তো আমাকে কোকিলের মতো কালো লাগবে !
কোকিল না স্যার...কাক !
আজ হেটেই হলে ফিরবে অপু ।
মনটা ভীষন ভাল ।
এই মেয়েটার জন্য সিগারেট ছাড়া যেতেই পারে ।
মুখ থেকে গন্ধ দূর করাই যায় !
সন্ধ্যা হয়ে আসছে ।
ল্যাম্পপোস্ট গুলো থেকে টিম টিম করে মৃদু আলো জ্বলছে ।
সোডিয়াম আলোর বৃষ্টি হচ্ছে যেন!
সৃষ্টিকে পাশে নিয়ে সোডিয়াম আলোর বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও আপত্তি নেই অপুর ।
শুধু চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিতে হবে ।
ঝাপসা চোখে অবাক হয়ে সৃষ্টি তাকিয়ে থাকবে ।
বাল্বের আলো থেকে ছুটে আসা লক্ষ কোটি ফোটনের বৃষ্টিতে ভিজতে থাকবে দুজন ।
ভিজতে থাকবে...ভিজতেই থাকবে....

রংধনু

" রংধনু "
 লেখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

পুকুরের দক্ষিণ পাড়টা বিকেলে বসে থাকার জন্য আদর্শ জায়গা ।
রাফির অন্তত তাই মনে হয় ।
এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ রয়েছে ।
মাস ছয়েক আগে পুকুরের উত্তর কোনের দোতলা বাড়িটায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে ।
ঘটনা সেটা না...ঘটনা হচ্ছে ভাড়াটিয়ার বড় মেয়ে তুলি ।
তুলি মাঝে মাঝে বিকেলে জানালায় দর্শন দেয় ।
পুকুরের দক্ষিন পাড় থেকে সেটা দেখা যায় ।
তুলি যখন দর্শন দেয় বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে রাফির!
এটা হচ্ছে আসল কারন ।
বয়সে প্রায় সমবয়সী হলেও তুলি মেয়েটাকে রাফির বাচ্চাই মনে হয় ।
উদাস একটা ভঙ্গিতে বসে থাকে ।
তাকিয়ে আছে হয়তো কোন জিনিসের প্রতি, কিন্তু মন সেখানে নেই ।
বাবার চাকুরী সূত্রে বছরের মাঝামাঝি সময় এসেছে, ভর্তি হয়েছে রাফির কলেজেই ।
ছেলেদের সাথে কথা-টথা বলে না খুব একটা ।
এই বয়সে অন্য মেয়েরা যেমন চটপটে হয়, তুলি তার উল্টো ।
প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়...নিজ থেকে কিছু বলে না ।
তুলির নির্লুপ্ততা রাফিকে ওর প্রতি আগ্রহী করে তোলে ।
তাই রুটিন করে বিকেলবেলা পুকুর পাড়ে বসে থাকা ।
তুলিকে নিয়ে কত রকম যে ভাবনা মাথায় ঘোরে !
রাফি মাঝে মাঝে ভাবে, নোট নেয়ার অজুহাতে তুলিদের বাসায় যাবে ।
কিন্তু তুলির বাবার মুখখানা যখন ভেসে উঠে ইচ্ছে উবে যায়!
কেমন রাগি রাগি চেহারা, কখনো হাসে বলে মনে হয় না !
মেয়েদের বাপ গুলো এমনই হয় ।
ছেলেদের দেখলে এমন ভাবে তাকায় যেন, এই বুঝি আমার মেয়ের সাথে প্রেম করতে আসছে! এই বুঝি নিয়ে পালিয়ে যাবে !
তাদের ধারনা, এই যুগের ছেলেরা মুরুব্বিদের সম্মান করতে জানে না, বদের হাড্ডি ।
রাফি ভাবে, তুলির বাবা তাদের বয়সে অনেক আকাম করে বেড়িয়েছে তো তাই উনি ছেলেদের দেখলেই উনার সাথে মিলিয়ে দেখেন!
ভাবখানা এমন, বাবা তুমি যতই ভাল মানুষ সেজে থাকোনা কেন...সব বুঝি !
কলেজে বেশ কয়েকবার তুলির সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেছে রাফি, খুব একটা পাত্তা পায়নি ।
তুমি কি জানো আমি তোমার প্রতিবেশী ?
জানি ।
তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলো না কেন ?
এই তো বলছি ।
সাময়িক হাল ছেড়ে দিলেও, রাফি আশা ছেড়ে দেয়নি ।
তাই প্রায়ই পুকুর পাড়ে বসে থাকা ।
কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, তুলির সাইকোলজি বুঝে উঠতে পারছে না রাফি ।
মনমরা হয়ে থাকে সব সময় ।
সামনা-সামনি দেখা হলে সাপের মতো ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকায় রাফির দিকে ।
বুক হিম হয়ে যায় !
সেদিন বিকেলে পুকুর পাড়ে তুলিকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল রাফি ।
রাফিকে দেখেই তুলি প্রশ্ন করে বসল, তুমি প্রায়ই বিকেল বেলা পুকুর ঘাটে বসে থাকো কেন ?
প্রশ্ন শুনে রাফির অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল!
না মানে, পুকুর পাড়ে বসে থাকতে আমার ভাল লাগে ।
আমি জানি তুমি কেন পুকুর পাড়ে বসে থাকো!
রাফির হার্টবিট বেড়ে গেল!
দেখো, রাফি আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো । তোমার আচরনে সেটা বোঝা যায় ।
আমাদের এখন যে বয়স তাতে এটা খুবই স্বাভাবিক ।
তোমাকে আমারো ভাল লাগে, কিন্তু আমাদের রিলেশন কখনোই সম্ভব নয় ।
রাফি এবার বুকে সাহস নিয়ে বলেই ফেলল, কেন নয় ?
তোমার সাথে আমার পরিচয় তো বেশিদিনের নয়, তাছাড়া তুমি আমার অনেক কিছুই জানো না ।
সে সব জানলে তুমি কেন, কোন ছেলেই আমার সাথে রিলেশনে জড়াতে চাইবে না ।
রাফি ভেবে পায় না কি এমন সিক্রেট থাকতে পারে এই মেয়েটার!
বলো আমি শুনতে চাই ।
তোমার শুনতে ভাল লাগবে না ।
তবুও আমি শুনব ।
তুলির মুখে রাফি এরপর যা শুনল, সেটা আসলেই সে চিন্তা করতে পারেনি ।
তুলি যখন সবে ক্লাস সিক্সে পড়ে, তখন সে তার কাজিনের দ্বারা রেপ হয়েছিল!
কাজিন ছিল তার থেকে বয়সে প্রায় দ্বিগুণ ।
এই ঘটনা ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানে না ।
লোকলজ্জার ভয়ে আইনি কোন ব্যবস্থাও তুলির পরিবার নেয়নি ।
সেই থেকে তুলি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা ।
দরকার ছাড়া বাড়ি থেকে বের হয়না ।
বাবা-মা সব সময় চোখে চোখে রাখে ।
ঘরের ভেতর গর্তবাসী হয়ে থাকে ।
অনেক ছেলের কাছে থেকে অনেক অফার সে পেয়েছে, কিন্তু কখনোই রিলেশনের ব্যাপারে এগোয়নি।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
তুলি আর রাফি বসে আছে চুপচাপ ।
কেউ কিছু বলছে না ।
রাফি শুধু ভাবছে, এটা কি মানুষের কাজ হতে পারে ?
রাতে রাফি আর ঘুমাতে পারল না ।
আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে লাগল ।
এই অবস্থায় নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করবে...নাকি ?
তুলির ঘটনা জানার পর, ওর প্রতি রাফির ভালোবাসায় কোন রকম ভাটা পড়েনি , বরং বেড়েছে বহুগুন ।
এই ঘটনায় তুলির তো কোন দোষ নেই ।
বরং এই যুগে প্রেম করে প্রেমিক-প্রেমিকারা সেক্সসুয়াল রিলেশনে জড়াচ্ছে হরহামেশাই ।
যা রেপের থেকেও নিকৃষ্ট কাজ ।
কে যে ভার্জিন, আর কে যে ভার্জিন না তা বোঝা মুশকিল এখন ।
যা থাকে কপালে তুলিকেই তার চাই ।
পরদিন বিকেলবেলা পুকুর ঘাটে রাফি আর তুলি মুখোমুখি বসে ।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ।
দুজনের মনেও মেঘের ঘনঘটা ।
তুলি, আমি মোটেও ভাল ছেলে নই ।
হয়তো পারফেক্টও নই অনেকের মতো ।
শুধু এইটুকুই তোমাকে বলতে চাই, সব কিছুর পরও আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে বুক ভরে শ্বাস নিল রাফি ।
তুলির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
আকাশ থেকে বৃষ্টিও পড়া শুরু হলো সাথে সাথেই ।
দুজনার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে বেশি পানি ঝরাতে পারে ।
রাফি ভাবছে,
এই মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে!
সেই চোখে এখন পানি ঝরছে!
সেই পানি ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে সব কিছু ।
ব্রায়ান এডামসের গানটা রাফির মনে পড়ে গেল, " এভরিথিং আই ডু....................."
রাফি তুলির হাত ধরে গাঢ় গলায় বললো, চলো উঠি ।
তুলি ধরা গলায় বলল, চলো ।

নীল রঙয়ের ভালোবাসা

" নীল রঙয়ের ভালোবাসা "
লিখেছেনঃ  যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু


বৃষ্টিতে আটকা পড়ে টিএসসিতে ১ ঘন্টা ধরে একা বসে আছে আবির ।
পকেটে থাকা বেনসন সিগারেট পানিতে ভিজে নেতিয়ে গেছে ।
মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে ।
ঘণ্টা খানিক ধরে একটা অদ্ভুত দৃশ্য লক্ষ্য করছে আবির । ওর অপজিটে একটা মেয়ে বৃষ্টির পানিতে পা ভিজিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে মতন ।
প্রথম দেখাতেই মেয়েটির প্রতি কেমন যেন টান অনুভব করছে আবির!
লম্বা চুলের অধিকারী মেয়েটির, মুখের স্নিগ্ধতা যে কোন ছেলেকেই প্রথম দেখাতেই আকর্ষন করতে বাধ্য ।
বাম পায়ে পায়েল পড়েছে মেয়েটি ।
আবির একা একা ভাবে, মেয়েটি পাগল নাকি ?!
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি...এই বৃষ্টিতে ভেজা আর অসুখকে নিমন্ত্রন করে নিয়ে আসা একই কথা!
কিন্তু মেয়েটার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নাই ।
কি ব্যাপার আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন ?
আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করেই ফেলল আবির ।
আপনার কোন সমস্যা ?
না মানে, মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ্য হওয়ার চান্স থাকে !
তো আপনার কি ?!
আপনি ডাক্তার নাকি ?
না...ইচ্ছে হলো তাই বললাম । আপনি কি আমাদের ক্যাম্পাসের ?
হুম...।
কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন ?
ইকোনমিক্স...সেকেন্ড ইয়ার । আপনি ?
আমি আবির...সমাজবিজ্ঞান...সেকেন্ড ইয়ার ।
ঘড়িতে দেখুন তো কয়টা বাজে ?
তিনটা ।

আচ্ছা থাকুন...পরে কথা হবে, বলেই মেয়েটি খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল ।
ধুর শালা নামটাই তো জানা হলো না মেয়েটার !

এরপর মেয়েটির সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো ক্যাম্পাসে । চোখে চোখ পড়লেই হাই-হ্যালো।

ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল ।
আবির পরে ওর এক বান্ধবীর কাছে শুনেছিল মেয়েটির নাম তিথি ।
সেদিন সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে দেখা হয়ে গেল তিথির সাথে ।
আরে কি অবস্থা ! কেমন আছেন ?
এই তো...ভালই ।
চলুন চা খাওয়া যাক ।
তিথিকে চা খাওয়ার অফার করে বসে আবির ।
আপনার বয় ফ্রেন্ড আবার কিছু মনে করবে নাতো ?!
আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নাই...ভাবছি আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কিছু মনে করবে কিনা!
আমার গার্ল ফ্রেন্ড ?! হো হো করে হেসে দেয় আবির!
সেদিনই ওদের ফোন নাম্বার বিনিময় হলো ।
এরপর ফোনে প্রায়ই কথা হতো দুজনার ।
মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় দুজনে ক্যাম্পাসে আড্ডা মারত ।
দুজন দুজনার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল খুব তাড়াতাড়ি ।
এমন কোন কথা নেই যা হতো না ওদের মধ্যে ।
আবিরের মুখে পলাশীর সেলিম মামার রং চায়ের গল্প শুনতে শুনতে একদিন তিথি আবদার করে বসল পলাশীতে রং চা খাবে ।
সেদিন সন্ধ্যায় আবির তিথিকে পলাশীতে রং চা খাইয়ে এনেছিল ।
এরপর তারা কখনো টিএসসি, কখনো হাকিম চত্বর, কখনো বুয়েট, কখনো ধানমন্ডি লেক, কখনো স্টার সিনেপ্লেক্সে চুটিয়ে ঘুরে বেড়াত ।
তাদের বন্ধুত্ব্যকে বাকা চোখে দেখার মানুষের অভাবও ছিল না ।
অনেকে ফোড়ন কাটত কিরে শুধু বন্ধু, না কি ভেতরে ভেতরে ইয়ে টিয়ে চলছে !
কিন্তু ওরা এসব কথায় পাত্তা দিত না ।
সমস্যা শুরু হলো যখন তিথি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে গেল ।
আবিরের কিছুই আর ভাল লাগে না ।
ওদিকে তিথির অবস্থাও একই । দিন গোনে কবে ছুটি শেষ হবে!
আবির বুঝতে পারল সে তিথির প্রেমে পড়েছে!
প্রথমে সে এই চিন্তা মাথা থেকে উড়িয়ে দিতে চাইল । কিন্তু যতই এভোয়েড করে ততই তিথির চিন্তা আরো মাথায় চেপে বসে ।
সিগারেট খাওয়ার মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গেছে আবিরের ।
কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। রাতে ঘুম হয় না ।
শান্তিতে আর রাতে ঘুম আসে না...ঘুম আসে ক্লান্তিতে !
ডিসিশন নিয়েই ফেলে যেদিন তিথি ঢাকায় ফিরবে সেদিনই অফার করবে ।
যা থাকে কপালে !
ক্যাম্পাসের পিচ্চি টোকাই গুলাকে খুজে বের করে আবির ।
একটাই কাজ কদম ফুল এনে দিতে হবে ।
পিচ্চিরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে নেমে পড়ে কদম ফুলের সন্ধানে ।
তিথি যেদিন ঢাকায় ফিরল, সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি।
কদম ফুল ম্যানেজ হয়ে গেল সেদিনই ।
পিচ্চি গুলোকে ৫০০টাকা বকশিশ দিল আবির ।
কিন্তু সারাদিনে বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই ।
সন্ধ্যায় তিথির হলের সামনে গিয়ে ফোন দিল আবির ।
আমি তোর হলের সামনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয় ।
তিথি নিচে নেমে আবিরকে দেখে হাসতে হাসতে শেষ !
অগোছালো আবির আজ ব্যাপক স্মার্ট হয়ে আসছে!
কিরে খ্যাত! তুই আবার এত সেজে-গুজে আসছিস ঘটনা কি ?
আবির নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
ফাজলামো বাদ দে...তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে ।
এখানে বলবি নাকি গোল টেবিল বৈঠক করতে হবে ?!
এখানে বলব...শুধু তুই আমার কথা গুলো সিরিয়াসলি শোন।
বল...
আবির অনেক কষ্টে শুধু এইটুকু বলল, আমি তোর পাশে থেকে সারাজীবন বৃষ্টি দেখতে চাই।
আবির কদম ফুল গুলো বাড়িয়ে দিল তিথির দিকে ।
বিমর্ষ মুখে কদম ফুল নিয়ে তিথি হলে চলে গেল । একটা কথাও বলল না আবিরের সাথে ।
আবির তাকিয়ে থাকল তিথির চলে যাওয়ার পথে ।
টপ টপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল ।
হাতের ছাতাটা বন্ধ করে ফেলল আবির ।
আজ সে বৃষ্টিতে ভিজবে ।
অনেকেই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল, একটা ছেলে বন্ধ ছাতা হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে!
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এক ঘন্টা পর হলে ফিরল আবির ।
রাতে প্রচন্ড জ্বর আসলো আবিরের ।
দুদিন কোন জ্ঞান ছিলনা আবিরের ।
আবিরের রুমমেট তিথিকে ফোনে জানিয়েছিল আবিরের অবস্থা ।
এদিকে তিথি এই দুইদিন টেনশনে শেষ ।
তৃতীয় দিন তিথি ফোন দিয়ে বলল, আমি তোমার হলের গেস্ট রুমে বসে আছি তাড়াতাড়ি আসো।
আবির চিন্তা করছে কি ব্যাপার তিথি আমাকে তুমি করে বলল কেন!
গেস্ট রুমে গিয়ে দেখল তিথি শাড়ি পড়ে বসে আছে ।
নীল শাড়ি । আবিরের পছন্দের রং নীল । এটা তিথি জানে ।
আবির মনে মনে ব্যাপক উত্তেজিত ।
আবিরকে দেখে উঠে দাঁড়ালো তিথি ।

তিথির চোখে পানি, ধরা গলায় আবিরকে বলল, চলো বৃষ্টিতে ভিজি!
আবির খুশিতে লাফিয়ে উঠল...চলো !

আবির ভুলেই গেল তার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর!
কিন্তু মেয়েটা কাঁদছে কেন ??

একটা স্টুপিড-এর গল্প

একটা স্টুপিড-এর গল্প
সফিক এহসান
(১৪ এপ্রিল ২০০৮ইং)

চরিত্রসমূহঃ
১। শিমুল ২। মিরা ৩। জেরিন ৪। সোনালী
৫। মিরার মা ৬। মাসুদ ৭। রিক্সাওয়ালা ৮। আইসক্রিমওয়ালা



দৃশ্য-১

(একটি সরকারী কলেজের ক্লাস রুম। ক্লাস হচ্ছে না। ছাত্ররা ক্লাসরুমে যে যার মত গান গাইছে, গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাসের একমাত্র ছাত্রী মিরা দরাজার পাশেই একটা সীটে বসে বই পড়ছে। হঠাৎ ঝড়ের বেগে শিমুল এসে ঢুকলো। )

শিমুল: (ক্লাসে ঢুকেই মিরার সামনে থেকে বইটা টেনে নিয়ে বন্ধ করে ফেলল। ব্যস্তভাবে বলল) মিরা! একটু শুনে যা তো।
মিরা: (বই বন্ধ করে ফেলায় একটু বিরক্ত হয়ে) কীরে বাবা!
শিমুল: (মিরার হাত ধরে টেনে তুলে) খুব জরুরী। আয় না, বলছি।
মিরা: (বিরক্তি ও অনিচ্ছায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে) উহ্ কী হয়েছে বলবি তো?
শিমুল: (মরিয়া হয়ে টানতে টানতে) আরে যেতে যেতে বলছি। খুব জরুরী।
মিরা: (থমকে দাঁড়িয়ে) হাত ছাড়, ব্যথা লাগছে। (জোর করে হাত ছাড়িয়ে নেবে) আগে বল কি ব্যাপার? কোথায় যেতে হবে?
শিমুল: জাহান্নামে! কোন সমস্যা?
মিরা: বিশাল সমস্যা! আমার পড়া আছে।
শিমুল: আয় না দোস্ত (চোখ টিপে) একটু প্রক্সি দিতে হবে। জাস্ট দুই মিনিট লাগবে!
মিরা: (দু’হাত বুকে বেঁধে, গম্ভীরভাবে) কিসের প্রক্সি?
শিমুল: (একটু চারদিকে তাকিয়ে) সেটা যেতে যেতে বলি? এখানে বলা যাবে না।
মিরা: আশ্চর্য! ক্লাস আছে না?
শিমুল: (ঝট করে মিরার ডান হাতে কুনুইয়ের ওপড় ধরে) মাত্র দুই মিনিটে ক্লাস শেষ হয়ে যাবে না! আয় তো। (বারান্দায় দাঁড়ানো মাসুদের দিকে তাকিয়ে) মাসুদ! দোস্ত স্যার আসলে একটা মিস্ দিস তো।
মাসুদ: কই যাস?
(শিমুল মাসুদের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। তারপর মিরাকে নিয়ে সিঁড়ির দিকে হাঁটতে থাকে।)



দৃশ্য- ২

(সিঁড়ির নীচে শিমুল মিরা দাঁড়িয়ে। মিরা উত্তেজিত, শিমুল বোঝাচ্ছে...)
মিরা: কী বললি! আমি দুই মিনিটের জন্য তোর লাভার সাজবো? ফাইজলামী পেয়েছিস!
শিমুল: আরে বাবারে তুই বুঝতে চেষ্টা কর- মেয়েটা দুনিয়ার ফাউল। মাত্র সাত দিন মোবাইলে পরিচয়; চেনে না জানে না ভাল করে, অথচ কলেজে এসে হাজির প্রোপোজ করতে! চিন্তা কর কত বড় ফাউল!
মিরা: প্রোপজ করতেই এসেছে কিভাবে বুঝলি? এমনি দেখা করতেও তো আসতে পারে!
শিমুল: যা করতেই এসে থাকুক, আমি চাই না ব্যাপারটা বেশি দূর গড়াক। মোবাইলে ক’দিন কথা বলেই যে সব মেয়ে প্রেমে পড়ে যায় এদেরকে আমি দু’চোখে দেখতে পারি না।
মিরা: তো এখন আমি কি করব?
শিমুল: তুই জাস্ট এক মিনিটের জন্য যাবি। আমি ওর সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দেব- জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার গার্লফ্রেন্ড। আর এ হচ্ছে জেরিন। ঐযে সেদিন তোমাকে বললাম না? ব্যস, তুই হায় হ্যালো করে হ্যান্ডশ্যাক করে চলে আসবি। ক্লিয়ার!
মিরা: কিন্তু তাতে লাভটা কী হবে?
শিমুল: লাভ কী মানে? আরে আমার গার্ল ফ্রেন্ড আছে শুনলে নগদে ফুটবো না! তোর কি ধারনা, আমার লাভার আছে শুনেও ও আমার পিছে পিছে ঘুরবে?
মিরা: (দুষ্টু হেসে) আমি তা বলি নাই। এসব করলে আমার লাভ কি? উঁ? কী খাওয়াবি?
শিমুল: ছুছা কোথাকার! জীবনে খাস নাই! আচ্ছা যা, তোরে হাবুর দোকানের সিঙ্গারা খাওয়ামনে।
মিরা: সিঙ্গারা! যা ফোট্! অন্য কাউকে মেনেজ কর, আমি পারব না।
শিমুল: আরে কয় কি! আইচ্ছা যা, তুই যা খাইতে চাস খাইস। তুই আমার ধর্মের মা, এখন চল।
মিরা: কী! আমি তোর কী লাগি?
শিমুল: হইল তো বাবা, তুই আমার ধর্মের বউ; এখন চল।
মিরা: খাওয়ার কথাটা মনে থাকে যেন।



দৃশ্য- ৩

(জেরিন ক্যাম্পাসের চত্বরে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখছে। দূর থেকে শিমুল মিরাকে দেখিয়ে দিয়ে কিভাবে কী বলতে হবে তা আরেকবার বুঝিয়ে দিয়ে দু’জনে একসাথে সেদিকে এগুলো)

শিমুল: আমি যদি ভুল করে না থাকি তবে আপনিই জেরিন, রাইট? (হাত বাড়িয়ে দিয়ে) নাইস টু মীট ইয়্যু।
জেরিন: (বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরে) ঢং করার জায়গা পাও না! আমাকে তুমি চেনো না? ফেসবুকে আমার ছবি তুমি দেখ নি?
শিমুল: তা দেখেছি; তবে তুমি ছবির থেকেও অনেক সুন্দর কিনা! একটু কনফিউসড্ ছিলাম।
জেরিন: যাহ্!
শিমুল: (মিরাকে দেখিয়ে দিয়ে) পরিচিত হও- মিরা, এ হচ্ছে জেরিন ঐ যে তোমায় সেদিন বললাম না? আর জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার... গার্লফ্রেন্ড এবং...
(শিমুল কথা শেষ করল না। মিরার দিকে জেরিনের বাড়ানো হাতটা একটু কেঁপে উঠলো। হঠাৎ মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং ইলেক্ট্রিক শক্ খাওয়ার মত কেঁপে উঠে এক পা পিছিয়ে গেল। মিরা একরকম জোর করেই যেন জেরিনের ঠান্ডা হয়ে আসা হাতটা ধরে মৃদু ঝাকুনি দিল। জেরিনের চোখ ছলছল করে উঠছে। কান্না লুকোনোর জন্য তাড়াতাড়ি বলল)
জেরিন: অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে, আজ তাহলে আসি?
শিমুল: আরে না না; সেকি! এখনি চলে যাবে কেন? আসো কোথাও বসি। এটলিস্ট ‘ফাস্ট মীট’টা সেলিব্রেট করা দরকার না। কি বল মিরা?
জেরিন: না ঠিক আছে। আরেকদিন না হয়...
মিরা: আরেকদিন কেন? চলুন কিছুক্ষণ আড্ডা দিই। তাছাড়া আপনি আমাদের ক্যাম্পাসের গেষ্ট, আপনাকে ক্যাম্পসটাও ঘুরিয়ে দেখাই। আমাদের ক্যাম্পাসটা কিন্তু এমনিতে খুব সুন্দর...
জেরিন: না মানে আজ সময় হাতে নিয়ে আসিনি তো। এমনিতেই এদিকে একটা কাজ ছিলো। ভাবলাম শিমুল ভাইয়ের সাথে একটু দেখা করে যাই...তাছাড়া আজ একটু তাড়া আছে... নাইস টু মীট ইয়্যু... (বিষণœ হেসে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে এলো)



দৃশ্য-৪

(কলেজের বাগানের পাশের বেঞ্চে বসে আছে শিমুল আর মিরা। শিমুল প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়ছে। সে বার বার জেরিনের মর্মাহত হয়ে এক পা পিছিয়ে যাবার দৃশ্যটা নকল করে মিরাকে দেখাচ্ছে।)
মিরা: (বিরক্ত স্বরে) ইটস্ ঠু মাচ শিমুল! হাসি থামা।
শিমুল: কেন? কি হয়েছে?
মিরা: বেচারী সত্যি কষ্ট পেয়েছে।
শিমুল: আহারে বেচারী! (বলে আবার হাসতে থাকে)
মিরা: শিমুল! এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! আর যাই হোক একটা মেয়েকে তুই আমার সামনে এভাবে অপমান করতে পারিস না।
শিমুল: তুই হঠাৎ এরকম রেগে যাচ্ছিস কেন?
মিরা: তুই ওর চোখ খেয়াল করেছিস? কথাটা শুনে ওর চোখে পানি এসে পড়েছিল! আমার মনে হয় ও সত্যি তোকে ভালবাসে।
শিমুল: যাহ্!
মিরা: যাহ্ মানে! আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা তোদের পরিচয়টা যেন কিভাবে হল?
শিমুল: ঐযে বললাম- কোন এক প্রোগ্রামে আমার কবিতা আবৃতি শুনেছিল। তারপর নাকি অনেক খুঁজে টুজে আমার নাম্বার জোগার করেছে। গত সাত-আট দিন মোবাইলে বকর বকর, ফেসবুকে চ্যাট আর আজ তো নিজের চোখেই দেখলি।
মিরা: আমি শিওর ও আর দশটা আলাপি মেয়ের মত মোবাইলে বয়ফ্রেন্ড খুঁজে বেড়ানো মেয়েদের মত না। ও সত্যি অনেক কষ্টে তোর মোবাইল নাম্বার যোগার করেছে। মোবাইলে টাইম পাস করা ফালতু মেয়েদের কথাবার্তা, মুভমেন্ট এরকম হয় না। তাই আমার মনে হয় ও সত্যি তোকে...
শিমুল: বাসলে বাসে; হুজ কেয়ার!
মিরা: বাসলে বাসে মানে! একটা মেয়ের মন ভেঙ্গে দিয়ে তুই বলছিস হুজ কেয়ার! ওকে তাহলে প্রথমেই বলে দিতি যে তুই এ ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড না। মেয়েটা তো দেখতে শুনতেও খারাপ না। সাত আট দিন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার কী দরকার ছিল?
শিমুল: দেখ তুই যা ভাবছিস ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। আমি মোটেও ওকে মিষ্টি কথায় ভুলাই নি। তুই আমাকে খুব ভাল করেই চিনিস। আমি আর দশটা ছেলের মত- মেয়ে দেখলেই আইসক্রিমের মত গলে যাওয়া ছেলে না।
মিরা: আমি জানি শিমুল। তুই খুবই ফ্রেস একটা ছেলে। বাট তুই বলতো, মোবাইলে তুই একদিনও ওকে কবিতা শোনাস নি? মোবাইলে কোন কবিতা এস.এম.এস করিসনি? তুই স্বভাবজাত যে ধরনের সততা-সাহিত্য-আদর্শ-দেশপ্রেম-দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলিস, সেসব ওর সাথেও বলিস নি?
শিমুল: হ্যাঁ বলেছি! কিন্তু সেসব তো আমি তোদের সাথেও বলি। মোবাইলে কবিতা তো আমি তানভিরের বার্থ ডে-তেও পাঠিয়েছি। আমি তো এরকমই- না?
মিরা: হ্যাঁ, তুই তোর মতই কথা বলেছিস। এবং তুই সত্যি অনেক এট্রাক্টিভ পার্সোনালিটির ছেলে। আর সে কারণেই তোর সাথে কথা বলে একটা মেয়ে প্রেমে পড়তেই পারে। তাতে দোষের কি আছে?
শিমুল: আছে। দেখ জীবনটা “হঠাৎ বৃষ্টি” ছিনেমা না। একজনের সাথে ক’দিন মোবাইলে কথা বলেই তার সম্পর্কে সব জানা যায় না। আমার কথায় তো ভানও থাকতে পারতো। এই সব স্টুপিড টীন এজার মেয়েরা মোবাইলে ছেলেদের সাথে কথা বলে প্রেমে পড়ে। তার পর ছ্যাঁকা খেয়ে পুরো পুরুষ জাতিকে প্রতারক বলে গালাগাল করে! কারও কারও কাছে এটা মজার খেলা! এন্ড আই হেট দিস টাইপ অব গেম!
মিরা: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আচ্ছা শিমুল- সত্যি একটা কথা বলবি? তুই কি কোন দিনই কোন রিলেশনের ব্যাপারে সিরিয়াস হবি না?
শিমুল: হব না কেন? দেখ ভালবাসা আমার কাছে স্বর্গীয় একটা ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করি লাভ ইজ গড! তাই কারও সম্পর্কে ভাল করে না জেনে না বুঝে ছেলেমানুষী ইমোশন নিয়ে যখন কেউ বলে- আমি তোমাকে ভালবাসি... তখন...। আরে এটা কি ছেলে খেলা!
মিরা: তেমন সত্যিকারের ভালবাসা তুই বুঝবি কিভাবে?
শিমুল: বোঝা যায়! দেখ রিলেশন একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর ব্যাপার। যাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি, যার সাথে আমি অনেক মিশেছি, যার ব্যক্তিত্ব আমাকে সত্যি ছুঁয়ে যায় তাকে ভালবাসাটা...
মিরা: তাহলে লাভ এট ফাস্ট সাইট্?
শিমুল: ফালতু। আমি মনে করি- লাইক এট ফাস্ট সাইট্, লাভ হওয়ার জন্য সময় দরকার। আজকাল লাভ ম্যারেজগুলো বেশির ভাগই টেকে না এই জন্যেই।
মিরা: আচ্ছা একটা কথা বলতো- সত্যি তোকে ভালবাসে এমন কাউকে কি পেয়েছিস? বা কখনও মনে হয়েছে যে...
শিমুল: (অন্য দিকে তাকিয়ে) কি জানি! কেউ তো কোনদিন বলেনি মুখ ফুটে।
মিরা: (একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে) এই তো একটা মেয়ে বলল। মানে বলতে এসেছিল। কিন্তু তুই তো তাকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিরিয়ে দিলি। দেখ ও যে প্রোপজ করতেই এসেছিল সেটা কিন্তু তোর ধারনা। হতেও তো পারতো- ও আসলে তোর সাথে মিশতে চাইছে। তোকে আরও ভালভাবে জানতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনাটা আগেই নষ্ট করে দিলি কেন? এমন তো নয় তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস?
শিমুল: তাহলে তুই আমাকে কি করতে বলছিস?
মিরা: দেখ তুই শুধু শুধুই মেয়েটাকে কষ্ট দিলি। আমার কাছে কিন্তু ওর ইমোশনটাকে ট্রু বলেই মনে হয়েছে। মানলাম সেটা তোর সজ্ঞায় ভালবাসা নয় কিন্তু ইমোশনটা ট্রু। ওকে এভাবে কষ্ট দেয়াটা ঠিক হয়নি। তোর ওকে সবকিছু খুলে বলা উচিৎ। আচ্ছা সত্যি করে বলতো ওর প্রতি কি তোর এ ক’দিনে একটুও দুর্বলতা তৈরী হয়নি?
শিমুল: এতোদিন টের পাইনি। কিন্তু তোর কথা শুনে তো এখন সত্যি উইক হয়ে যাচ্ছি!
মিরা: তাহলে তুই যা, ওকে গিয়ে সব খুলে বল। আমি চাই না আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটা কারও ভালবাসাকে অপমান করুক।
শিমুল: কিন্তু আমি এখন ওকে পাব কোথায়? আমি কি ওর বাসা চিনি নাকি?
মিরা: তাহলে ওকে ফোন দে। দেখ কোথায় আছে! বেশিদূর গেছে বলে তো মনে হয় না। যেভাবেই হোক দেখা কর!
শিমুল: (পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করল। প্রথমবার কেটে দেবার পর আবার চেষ্টা করল) হ্যালো! হ্যালো জেরিন! জেরিন তুমি কোথায়? আরে বাবারে তুমি কোথায় সেটা বল না। বনানী? বাসে? তুমি বাস থেকে এক্ষুণি ফাল দিয়া নামো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। খুব জরুরী! প্লীজ তুমি নামো, আমি আসছি। না না, ফোনে না সামনা সামনি বলতে হবে। প্লীজ নামো তুমি, দোহাই তোমার। নয়তো বিরাট সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি নামো, নেমে রাস্তার পাশে কোন রেস্টুরেন্টে পাঁচ মিনিট বসো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি! আচ্ছা আচ্ছা থ্যাঙ্ক য়্যু, আমি আসছি...। (লাইন কেটে দিয়ে) বনানীর কাছাকাছি আছে। আমি গেলাম তাহলে।
মিরা: আমিও আসবো?
শিমুল: উঁম...; থাক লাগবে না। তুই ক্লাসে যা, আমি পরে ফোন দিম্নে।
শিমুল ব্যস্ত ভঙ্গিতে গেটের দিকে রওয়ানা হল। মিরা সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি সেটা মুছে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত করজোর করে বুকের কাছে জড়ো করে ফিসফিস করে বলল: গড ব্লেস মি। প্লিজ ব্লেস মি। আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও, ধৈর্য দাও... প্লীজ গড ব্লেস মি...প্লীজ...!



দৃশ্য-৫

(শিমুল গেট দিয়ে দ্রুত বের হল। তারপর হঠাৎ ব্যস্ততা কমিয়ে পেছন দিকে ফিরে মুচকি হাসল। ধীরে সুস্থে একটা চলন্ত রিক্সা থামল)
শিমুল: ঐ খালি যাইবা?
রিক্সাওয়ালা: কই যাইবেন?
শিমুল: সংসদ ভবন। জিয়া উদ্যানের গেটে।
রিক্সাওয়ালা: ওঠেন।
শিমুল: কত?
রিক্সাওয়ালা: যা আছে দিয়েন।
শিমুল: না মামা, বলে নাও। পরে “চাইলের দাম বাড়তি, রাস্তা ভাঙ্গা” এসব শুনতে পারবো না।
রিক্সাওয়ালা: চল্লিশ ট্যাকা দিয়েন।
শিমুল: এইতো লাইনে আইছো। বিশ টাকা, যাইবা?
রিক্সাওয়ালা: না মামা, রোদ্দের মদ্দে পুষায় না। ত্রিশ ট্যাকা দিয়েন!
শিমুল: বিশ টাকায় গেলে ঘুরাও।
রিক্সাওয়ালা: না মামা- পঁচিশ!
শিমুল: তাইলে ফুটো! (রিক্সা সত্যি চলে যেতে শুরু করলে) ঐ খাড়াও! (রিক্সায় উঠে) রাগ করলা ক্যান!
(রিক্সায়ালা নিরব হেসে সামনে যেতে শুরু করল।)



দৃশ্য-৬

(জেরিন চন্দ্রিমা উদ্যানে একটা বড় গাছের নিচে বেঞ্চিতে বসে ঘড়িতে সময় দেখছিল। এর মধ্যে শিমুল আসল।)
জেরিন: তুই না, অলওয়েস লেট। পাঁচ মিনিট বলে আধা ঘণ্টা! এরকম জায়গায় এতোক্ষণ বসা যায়? পাবলিক সব একলা একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।
শিমুল: সরিরে বাবা; রিক্সায় করে এলাম। প্লেন নিয়ে তো উড়াল দেই নাই!
জেরিন: হয়েছে, আর অজুহাত দেখাতে হবে না। গরমে গলা শুকিয়ে গেছে, এখন আইসক্রিম খাওয়া।
শিমুল: তোরা না, খাওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝলি না! (দূরে একটা আইসক্রিমওয়ালা পিচ্চিকে দেখে এদিকে ডাকল) একটা চকবার দেতো।
পিচ্চি: দুইজনে একটা খাইবেন ছার?
শিমুল: এতো পাকনামী করিস কেন? আচ্ছা যা দুইটাই দে। কত?
পিচ্চি: পঞ্চাশ ট্যাকা।
শিমুল: সব জায়গায় ২২ টাকা, তোরটা ২৫ কেন?
পিচ্চি: পার্কে বইসা খাইবেন, একটু বেশি দিবেন না?
শিমুল কথা না বাড়িয়ে ৫০ টাকার নোট বের করে দিল। জেরিন এক মনে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
শিমুল: কিরে তুই কি আইসক্রিম খেতে এসেছিস এখানে নাকি কাজের কথা কিছু বলবি?
জেরিন: কথা তো সব তোমার কাছে। আমি চলে আসার পর মিরা আপু কি করল তাই বল।
শিমুল: সেটা পরে শুনিস, আগে তুই কি বুঝলি সেটা বল। আর তুই অমন তাড়াহুড়ো করে চলে আসলি কেন? আমি না বলেছি একসাথে চা-টা খাব, গল্প করব। একটু সময় না নিলে ব্যাপারটা বুঝবি কিভাবে?
জেরিন: সমঝদারকে লিয়ে ঈশারা কাফি হে...! তোর সাথে কি কি কথা হয়েছে ডিটেলস বল। একটা লাইনও বাদ দিবি না।
শিমুল: আচ্ছা ঠিক আছে (বলেই হেসে ফেলবে) তোর অভিনয়টা কিন্তু জটিল হইছে। ওতো পুরা বিশ্বাস করে ফেলছে। আমারে বলে কি- কোনটা অভিনয় আর কোনটা ট্রু ইমোশন তা নাকি ও খুব ভাল করেই বোঝে! বোঝে ঘোড়ার ডিম! তোর চোখে পানি দেখে ভেবেছে তুই সত্যিই আমাকে ভালবাসিস... স্টুপিড একটা!
জেরিন: (একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অন্য দিকে তাকিয়ে) স্টুপিড ও না, স্টুপিড হচ্ছিস তুই। তোরা ছেলেরা ট্রু ইমোশন কখনই ধরতে পারিস না।
শিমুল: মানে কি! ছেলেদের নিয়ে বিশাল থিসিস করছিস মনে হয়?
জেরিন: বাজে বকবি না। ও কী কী বলল ভাল করে খুলে বল।
শিমুল সময় নিয়ে ডিটেলস্ জেরিনকে বলল। সব শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে জেরিন ম্লান হাসলো।
জেরিন: এভাবেই কথা বলল?
শিমুল: হ্যাঁ। এবং তোর কাছে মাফ চাওয়ার জন্য বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠাল!
জেরিন: তুই সত্যিই খুব ভাগ্যবান রে। আমার বিশ্বাস মিরা আপু তোকে প্রচন্ড ভালবাসে।
শিমুল: কি বলছিল তুই! ধুর! তুই বুঝেছিস ঘোড়ার ডিম। এক ফোঁটাও বাসে না। বাসলে অন্তত আজ সেটা স্বীকার করতো। আরেকটা মেয়েকে দেখিয়ে দিয়ে বলতো না “ওকে কষ্ট দিস না”। মেযেরা যা জেলাস!
জেরিন: এ জন্যই বলছি- ও তোকে খুব ভালবাসে। আর সেটা তোকে ইঙ্গিতও করেছে। তুই স্টুপিড বলে ধরতে পারিসনি।
শিমুল: আরে! কখন বলল?
জেরিন: বলেছে, তুই বুঝিস নি। একটা মেয়ে হয়ে তো ও আর মুখ ফুটে বলবে না!
শিমুল: তাহলে তুই কিভাবে বুঝলি?
জেরিন: আমি ওর চোখের ভাষা থেকে বুঝেছি। তুই যখন ওর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় বললি- “জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার... গার্লফ্রেন্ড এবং...” তখন ওর চোখে মুখে যে আনন্দের ঝিলিক, শরীরে যে শিহরন দেকেছি তার অর্থ একটা মেয়ে হিসাবে আমি খুব ভাল করেই ফীল করতে পারি।
শিমুল: কিন্তু তাহলে ও তোর ব্যাপারে এরকম ধারনা করল কেন? আর...
জেরিন: (খুব বিষণœ স্বরে আরেক দিকে তাকিয়ে) সেটা তোর মত স্টুপিড কোন দিনই বুঝতে পারবে না। দেখ- ও ভালবাসাকে মূল্য দিতে জানে। জানে বলেই ও... তুই বললি না মেয়েরা অনেক জেলাস! তুই ঠিকই বলেছিস, মেয়েরা অনেক জেলাস। কিন্তু মিরা আপু সেই জেলাসিকেও ওভারকার করেছে। কজ সী রিয়েলি নো- হোয়াট ইজ ট্রু লাভ!
শিমুল: আরে বাবা আমি বুঝতে পারছিলাম না বলেই তো তোকে নিয়ে যাওয়া। তুই যদি শিওর হোস...
জেরিন: কেন? আমার শিওরিটির ওপর এতো ডিপেন্ড করতে হবে কেন? আমি জীবনে তোর মত স্টুপিড প্রথম দেখলাম যে একটা ফেক নাটক সাজায় একটা মেয়ে তাকে ভালবাসে কিনা জানার জন্য! তুই না এতো বড় বোদ্ধা! কবি মানুষ- তুই বুঝতে পারিস না? আচ্ছা সত্যি করে বলতো- তুই মিরা আপুকে ভালবাসিস কিনা?
শিমুল: আমি ঠিক জানি না! ওর সাথে অনেকদিন ধরে মিশছি। খুব ভাল মেয়ে। আমারা খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু... আমি সত্যি কনফিউসড্! কখনও আলাদাভাবে ফীল করিনি। কিন্তু ও যদি আমাকে... তাহলে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে।
জেরিন: মিরা আপু খুব ভাল মেয়ে। এবং সে তোকে সত্যি ভালবাসে। এর বেশি কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করিস না...



দৃশ্য-৭

রাত দেড়টা। মিরা তার কম্পিউটারের সেভ করা বন্ধুদের ছবি দেখছে। বিশেষ করে শিমুলের ছবিগুলো। ছবি তোলার সময় খুব জোকারী করে শিমুল। একটাতে জিব বের করে চোখ টেরাঁ করে রেখেছে। আরেকটায় মিরার চুলের রাবার দিয়ে মাথায় ঝুটি করেছে। এমনি আরও অনেক ছবি। নবীন বরন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায়, র‌্যাগ ডে’র অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতিসহ নানা ফাংশানের ছবি।
কম্পিউটার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট টিনের কৌটা বের করে মিরা। কৌটার ভেতর থেকে বের করলো মরে শুকিয়ে যাওয়া একটা গোলাপ, একটা গলে নষ্ট হয়ে যাওয়া মিমি চকলেট, একটা চুলের কাঁটা, এক জোড়া মাটির কানের দুল...। এগুলো বিভিন্ন অকেশনে শিমুল তাকে গিফট্ করেছিল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব গুছিয়ে রেখে কম্পিউটার অফ করে দিল।



দৃশ্য- ৮

(অস্থির ভঙ্গিতে কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে শিমুল। হঠাৎ সোনালীকে করিডোরে পেয়ে গেল।)
শিমুল: এই সোনালী শোন!
সোনালী: কি খবর বস্! ভালো তো?
শিমুল: আছি আরকি। আচ্ছা একটা জরুরী কথা ছিল। মিরার কোন খোঁজ খবর জান?
সোনালী: আরিব্বাস! মিরা পড়ে তোমার ডিপার্টমেন্টে আর খোঁজ নিচ্ছ আমার কাছে? এই প্রশ্ন তো আমার করার কথা। আসলেই- কি হয়েছে ওর? তিন-চার দিন ধরে ক্যাম্পাসে দেখছি না যে?
শিমুল: বুঝতে পারছি না। ডিপার্টমেন্ট-এ তো ও একাই মেয়ে। তাই আমরা কেউ কিছু জানি না। মোবাইলও অফ! তাই ভাবলাম তোমারা তো ক্লোজ ফ্রেন্ড। তুমি কিছু জান কিনা!
সোনালী: না। আমিও কাল ফোন দিলাম। বন্ধ! কি জানি কি হয়েছে। কেন খুব দরকার?
শিমুল: হ্যাঁ, ছিল একটু।
সোনালী: (চোখ টিপে) কি বস! ডাল মে কুচ কালা হায়...! কি ব্যাপার? অ্যাঁ?
শিমুল: আরে দূর! সামনে এক্সাম না। প্র্যাকটিকেলে ও আবার আমার গ্রুপে। সেসনাল ওয়ার্ক জমা দিতে হবে আবার। তাই...
সোনালী: ওঁ। আমি আরও ভাবলাম কি না কি! তা গ্রুপের বাকি পাঁচজনের কোন মাথা ব্যথা নাই, তুমি একা সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজছো?
শিমুল: আরে গ্রুপ লিডার হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না। কেউ ফেল করলে তো পুরো গ্রুপের প্রেস্টিজ!
সোনালী: সরি বস! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনি আবার ফাস্ট বয়, ডিপার্টমেন্টের প্রাণ, কলেজের গর্ব, আমাদের...
শিমুল: থাক ভাই, আর পাম দিও না। কাজের কথায় আসি। তুমি তো মিরার বাসা চেন। আমাকে একটু নিয়ে যাবে?
সোনালী: তা নেয়া যায়। আমি এমনিতেও কাল নাগাদ যেতাম। না হয় কাল ওর বাসায় গিয়ে আমি দেখি কি অবস্থা। আমিই ওকে বলব নে যে প্র্যাকটিক্যাল-এ...
শিমুল: না, একটু আর্জেন্ট! আজই যাওয়া দরকার। তুমি প্লীজ একটু মেনেজ করো...
সোনালী: আসলে সমস্যা কি শিমুল...। ওর তো বাবা নেই, বড় ভাই আর দুলাভাই-ই লোকাল গার্জিয়ান। ওনারা আবার একটু কনজারভেটিভ মাইন্ডেড। তো বুঝতেই পারছো... তুমি বাসায় গেলে... তাই বলছিলাম যে...
শিমুল: আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ওর সাথে আমার দেখা হওয়াটা খুব জরুরি। আমি ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারবো না... প্রয়োজনে আমি বাসায় ঢুকবো না, গেটের বাইরে...
সোনালী: না না ঠিক আছে। আই গট ইয়্যু। ঠিক আছে, আজ ছুটির পর...
শিমুল: এখন তোমার কি ক্লাস?
সোনালী: এখন গ্যাপ, এরপরে সোসাল রিলেশন... প্র্যাকটিক্যালটা আজ হবে কিনা...
শিমুল: দূর, বোগাস সাবজেক্ট! তুমি বাসায় পড়ে নিও। নয়তো পরীক্ষার আগে এসো সাজেশন দিয়ে দেব। এখন চল...
সোনালী: কোথায়!?
শিমুল: মিরাদের বাসায়!
সোনালী: পাগল! এখনি যেতে হবে? ক্লাসটা শেষ করে যাই...
: (সোনালীর চোখের দিকে তাকিয়ে) সোনালী প্লীজ। আমার ঘুব আর্জেন্ট!
সোনালী: (কয়েক সেকেন্ড স্থির তাকিয়ে থেকে) ওকে, চল।



দৃশ্য-৯

(দুইবার দরজা নক করার পর মিরা দরজা খুলল।)
মিরা: আরে সোনালী! কি খবর?
সোনালী: আছি তো ভালই। তোর খবর কী? তিন দিন ধরে কোন খোঁজ খবর নাই।
মিরা: এই একটু ঠান্ডা লেগেছিল। মাথা ধোয়ার সময় মোবাইলটাও পড়লো পানিতে। ডিসপ্লে অফ হযে গেছে। এখন মোবাইল বন্ধ না খোলা তাও বুঝি না! আয় ভেতরে আয়। কাল থেকে অবশ্য এমনিতেই কলেজে যেতাম।
সোনালী: আন্টি বাসায় নেই?
মিরা: শুধু আন্টিই বাসায়। ভাইয়া দুলাভাই অফিসে। আপু গেছে মেঝো খালার বাসায়।
সোনালী: ও মিরা! আমার সাথে কিন্তু একজন গেস্ট আছে!
মিরা: গেস্ট! গেস্ট আবার কে?
সোনালী: (ভ্রু রাচিয়ে) বলতো কে?
মিরা: আমি কিভাবে বলব? কে? সোমা?
সোনালী: আরে না! সোমা আবার গেস্ট নাকি? শিমুল!
মিরা: শিমুল! ও হঠাৎ আমার বাসায়?
সোনালী: কি জানি? বলল খুব জরুরী। মারাত্মক এক্সাইটেড!
মিরা: কারণ কি?
সোনালী: আমি কি জানি? তুই কিছু বলেছিস নাকি?
মিরা: আমি আবার কি বলব?
সোনালী: ইশ! নেকু! সত্যি কিছু বলিস নি? তহলে অন্য কোনভাবে বোধহয় টের পেয়েছে বা জেনেছে। খুবই এক্সাইটেড! রিতিমত আউট অব মাইন্ড! আমি শিওর ঐ কেস?
মিরা: যাহ্ গাধা! ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। কইরে পাগলায়?
সোনালী: গার্ল ফ্রেন্ড! কই আগে তো জানতাম না?
মিরা: জানবি কিভাবে। এখনও অন দ্যা ওয়ে। আমিই জানলাম সেদিন! বাদ দে, কই ও?
সোনালী: রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবলাম বাসায় যদি কোন সমস্যা...
মিরা: আরে না, সমস্যা আবার কিসের! নিয়ে আয়।
সোনালী: আচ্ছা দাঁড়া (বলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর শিমুলকে নিয়ে আসলো) মিরা তুই শিমুলের সাথে কথা বল, আমি যাই।
মিরা: যাই মানে! ঘরে আয়!
সোনালী: না রে। আজ যেহুতু আগে এসেছি, বাসার কিছু জরুরী কাজ জমে আছে সেগুলো সেরে ফেলি গে। কাল ক্যাম্পাসে দেখা হবে। আর আমি কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। পরে সব খুলে বলিস।
মিরা: আচ্ছা বাই!
শিমুল: আরে, তুমি চলে গেলে আমি একা যাব কিভাবে? যদি হারিয়ে যাই?
সোনালী: সমস্যা নাই, আপনাকে রাস্তা দেখানোর লোককে তো রেখেই গেলাম!
শিমুল ঘরে ঢুকলে মিরা দরজা আটকে দিল।
মিরা: কিরে, হঠাৎ কি মনে করে?
শিমুল: তোকে দেখতে এলাম। কেমন আছিস তুই? তিন দিন ক্যাম্পাসে যাস না!
মিরা: এই একটু ঠান্ডা-জ্বর লেগেছে। কাল এমনিতেই...
শিমুল মিরার কপালে চট করে হাত রাখল। কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে বলল: কই এখন তো জ্বর নেই!
মিরা চোখ বন্ধ করে স্পর্শটুকু অনুভব করে।
মিরা: নাহ্ এখন নেই। সেরে গেছে। কাল থেকেই ক্যাম্পাসে যাব।
শিমুল: তা জ্বর হয়েছে জানাবি না? ফোনও অফ করে রেখেছিস!
মিরা: মাথা ধোয়ার সময় মোবাইল পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে হেছে। মাত্র তো দুই দিন হলো এইজন্যে কাউকে তেমন কিছু বলিনি। তা তুই হঠাৎ বাসায়, খুব জরুরী কিছু?
শিমুল: হ্যাঁ তোকে দেখা খুব জরুরী ছিল।
মিরা: তারপর জেরিনের কি খবর। সব খুলে বলেছিলি? কি অবস্থা এখন?
শিমুল: আমি ঐ ব্যাপারেই তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। খুবই পার্সোনাল!
মিরা: কি? বল!
শিমুল: (কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বড় করে একটা নিশ্বাস নিল। তারপর মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে) তুই আমাকে ভালবাসিস?
মিরা: আরে আস্তে মা বাসায়! তুই...
শিমুল: (গলার স্বর আরও নামিয়ে) তুই আমাকে ভালবাসিস?
মিরা: (হালকা হেসে) বাসব না কেন? বন্ধুকে বন্ধু ভালবাসবে না। এটা কেমন কথা! তুই আমাকে বাসিস না? মাসুদ-সাগর-তানভির ওরা...
শিমুল: (হাত উচিয়ে থামিয়ে দিয়ে মিরার দু’হাত চেপে ধরে) আমি সেকথা বলিনি...
মিরা: (হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে) তুই পাগল হলি! ঘরের মধ্যে... মা যদি...
শিমুল: (একটুও বিচলিত না হয়ে) ডু ইয়্যু লাভ মি?
মিরা: (কয়েক মুহূর্ত শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কোমল গলায়) ইয়েস আই লাভ ইয়্যু। আই লাভ ইয়্যু সো মাচ! সো?
শিমুল: সো! সো হোয়াট?
মিরা: আর জেরিন?
শিমুল: বাদ দে জেরিন। তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন?
মিরা: কী বলব? সব কথা বলতে হবে কেন? তুই চোখে দেখিস না? কিচ্ছু বুঝিস না! স্টুপিড কোথাকার! (বলতে বলতে চোখ ছলছল করে)
শিমুল: বুঝতাম। কিন্তু কনফার্ম ছিলাম না। ডিরেক্টলি বলিস নি তো কখনও।
মিরা: আমি কেন প্রোপজ করব? একটা মেয়ে হয়ে!
শিমুল: কেন? এটাই বা কোন আইন- যে সব সময় একটা ছেলেকেই আগে বলতে হবে?
মিরা: বাদ দে। জেরিন কেমন আছে বল। ও আমার চেয়েও তোকে বেশি ভালবাসে। দেখলি না প্রোপজ করতে চলে এসেছিল!
শিমুল: ধুর গাধা! জেরিন হচ্ছে আমার কাজিন। তোর কেসটা শিওর হবার জন্য ওকে নিয়ে এসেছিলাম। ও-ই তো সব কনফার্ম করলো!
মিরা: হোয়াট!
শিমুল: ইয়েস ম্যাম।
মিরা: তার মানে তোর নিজের কোন ফিলিংস নেই? আমাকে বোঝার জন্য তোকে রিতিমত স্পাই লাগাতে হল! তোর কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তুই প্লীজ আমার সামনে থেকে বিদায় হ।
শিমুল: আরে এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি ফীল করছিলাম বলেই না ওকে এনে... একটা ভুল বুঝাবুঝি হলে কেমন হতো না ব্যাপারটা?
মিরা: তাই বলে... তুই এতো দিনেও কনফার্ম হতে পারলি না আর জেরিন এসে এক মুহূর্তে সব বুঝে গেল!
শিমুল: কি করব বল- ছেলেগুলো তো একটু স্টুপিডই, তাই না!
মিরা: তাই বলে তোর মত স্টুপিড আমি জীবনে দেখি নাই।
শিমুল: দেখলে তো আগে ঐটার প্রেমেই পড়তি!
মিরা: জাস্ট শাট আপ!
(এই সময় রান্না ঘর থেকে মিরার মা মিরাকে ডাকল।)
মিরা: মা আমি ড্রইং রুমে। একটু এদিকে আসো তো।
শিমুল: কেন? কি হয়েছে?
মিরা: আসই না। একজন গেস্ট এসেছে।
শিমুল: কে এসেছে?
শিমুল: স্লামালাইকুম আন্টি
মিরার মা: ওয়ালাইকুম আসসালাম!
মিরা: মা, ও হচ্ছে শিমুল। আমাদের ক্লাসের ফাস্ট বয়। তোমাকে বলেছিলাম না! আমি কলেজে যাইনি বলে দেখতে এসেছে।
মিরার মা: ওহ্ তুমিই শিমুল? বসো বাবা। ভাল আছ? তোমার বাবা মা কেমন আছেন?
শিমুল: জ্বি আন্টি ভাল, আপনি ভাল আছেন?
মিরার মা: এই তো বাবা, বেঁচে আছি আরকি। তোমরা বস, আমি রান্না চুলায় রেখে এসেছি তো। তুমি কিন্তু দুপুরে খেয়ে যাবে।
শিমুল: আজ না আন্টি, আরেক দিন।
মিরার মা: আরেক দিনেরটা আরেকদিন। আজকেরটা খেয়ে যাও। খবরদার যাবে না কিন্তু! বস চুপচাপ।
শিমুল: এই রে, আন্টি আবার কিছু শোনেননি তো!
মিরা: না, কিছু শোনে নি। তবে মা সব জানে।
শিমুল: সব জানে মানে?
মিরা: জানে মানে- জানে! আমি মাকে কখনও কিছু লুকাই না। লাস্ট থ্রি ডে’স এর আগ পর্যন্ত সবই মাকে বলেছি।
শিমুল: সর্বনাশ! কি বলিস? আমার তো শুনেই লজ্জ্বা লাগছে।
মিরা: (শিমুলের হাত ধরে) সো- ডু ইয়্যু লাভ মি?
শিমুল: (মিরার গালে একটা হাত রেখে) নো!
তারপর দু’জনেই হাসতে লাগলো।



দৃশ্য- ১০

জেরিন এফ.এম এ গান শুনছিল। মোবাইলটা বেজে ওঠায় নাম্বার দেখে বিরক্তির সাথে লাইনটা কেটে দিল। দ্বিতীয়বার আবার রিং হল। এবার বিরক্তির সাথেই ফোন ধরল।
জেরিন: ওই, তুই আর ফোন দেওয়ার সময় পাস না? সুন্দর একটা গান হচ্ছিল!
শিমুল: রাখ তোর গান! গান তো সারা দিনই শুনিস। এখন ব্রেকিং নিউজ শোন- আজ মিরার বাসায় গেছিলাম। এতোক্ষণ ওখানেই ছিলাম, মাত্র বের হলাম।
জেরিন: ওঁ!
শিমুল: তোর ধারণা মোটেই ঠিক না। ও মোটেই শকড্ হয়ে ঘরে বসে ঠিল না। জ্বর হয়েছিল।
জেরিন: তাই নাকি!
শিমুল: হ্যাঁ তাই। গিয়ে সব খুলে বললাম। ওর মার সাথে পরিচয় হল।
জেরিন: ওঁ!
শিমুল: জানিস! ওর মা নাকি আগে থেকেই সব জানতো। আমাকে পেয়ে না খাইয়ে ছাড়লোই না!
জেরিন: তাহলে তো ভালই।
শিমুল: ভাল না ছাই। এমন জামাই আদর করল- আমি তো লজ্জ্বায় শেষ!
জেরিন: তাই নাকি?
শিমুল: তাই নাকি মানে? তুই এমন কাটা কাটা কথা বলছিস কেন? গান আর কোনদিন শুনতে পারবি না?
জেরিন: কই, আমি তো ঠিক ভাবেই কথা বলছি। তুই-ই বেশি এক্সাইটেড হয়ে আছিস।
শিমুল: এক্সাইটেড! হতে পারে। ইন ফ্যাক্ট ফাস্ট লাভ তো!
জেরিন: তাই! ফাস্ট লাভ-এ এতো এক্সাইটমেন্ট? টের পাইনি তো কখনও!
শিমুল: তার মানে কি? তুই আবার কার প্রেমে পড়লি?
জেরিন: না কিছু না। আমি প্রেমে পড়তে যাব কোন দুঃখে! প্রেম করতে কপাল লাগে। তোর কথাই বলছিলাম...
শিমুল: ও, তাই বল। আচ্ছা একটা প্রবলেম আছে। ওর কিন্তু বাবা নেই! বড় ভাই আর দুলাভাই-ই গার্জিয়ান। আব্বু-আম্মু রাজি হবে কিনা তাই নিয়ে টেনশন হচ্ছে। এই ব্যাপারটাতে কিন্তু তোর মাস্ট হেল্প লাগবে!
জেরিন: (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) দেখ তোর এই ব্যাপারটায় আমাকে আর জড়াইস না। আমি আর পারব না...
শিমুল: আরে বলে কি! তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল?
জেরিন: আচ্ছা দেখা যাবে।
শিমুল: দেখা যাবে না, দেখতে হবে। আচ্ছা শোন- সন্ধ্যায় আমি তোদের বাসায় আসছি। সামনা সামনি কথা হবে। এখন রাখি।
জেরিন: ভাইয়া শোন!
শিমুল: কী?...হ্যাঁলো!...কিরে? কথা বলিস না কেন!
জেরিন: কনগ্র্যাচুলেশন!
শিমুল: ওহ্ থ্যাঙ্কস্! আসলে সব তোর জন্যই। থ্যাঙ্ক য়্যু ভেরি মাচ। তুই কিন্তু একটা খাওয়া পাওনা আছিস। তোকে আইসক্রিম...? না চাইনিজ... আচ্ছা যা তুই যা খেতে চাস তাই খাওয়াবো। ওকে? মিরাও বলেছে একদিন তোকে নিয়ে আড্ডা দিবে। একসাথেই খাব সেদিন- কি বলিস? রাখছি এখন; বাই!
লাইন কেটে যাবার পরও জেরিন অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। এফ.এম-এ তখন বাজছিল-
আমারও পরানও যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো.....
মনের অজান্তেই জেরিনের চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। জেরিন সেটা না মুছে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। দু’হাত করজোর করে বুকের কাছে জড়ো করে ফিসফিস করে বলল: গড ব্লেস মি। প্লিজ ব্লেস মি। আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও, ধৈর্য দাও... প্লীজ গড ব্লেস মি...প্লীজ...!

-: সমাপ্ত :-

দ্বিধা

দ্বিধা
লিখেছেন- sesh rater adhar

আজ হাটতে খুব ভাল লাগছে । আকাশটা মেঘলা । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । ছাতাটাও সাথে নেই । থাক ভিজলে কিছু হবে না । শুধু একটু আম্মুর বকুনি, এইটুকুই তো আর কিছুই না । আর অসুখ হলে ভালই লাগে রোদ এর। অন্যরকম ভাললাগা । মা বকে না, বাবাও খোজ-খবর নেয় । মা সারাক্ষণ মাথার কাছে বসে থাকে। "বাবা , একটু ভাল লাগতেছে তোমার ? কিছু খাবে বাবা ?",মা দরদ মাখা গলায় বলে । মা সবসময় তুই করে বলে, অসুখ এর সময় তুমিতে নেমে আসে । শুনতে ভাল লাগেনা, একদম না । মা এর মুখে তুই ই সুন্দর। তুমি বললে পর পর লাগে । যেমন রোদ এর গার্লফ্রেন্ডটা ওর পর । তাইতো তুমি করে বলে । আর এই তুমি এর অজুহাতে কতকিছু । রোদ যখনই ফোন দিবে লিমা বলবে -"আম্মু সামনে। কি করে কথা বলি?"
এরপরই ফোন কেটে দিবে ।
রোদ এর ভাগ্য নামক বস্তুটা খুব একটা মোটাসোটা না । খুবই দুর্বল, রোদের মতই । মা খুব করে বলল ছাতাটা নিয়ে যা। মা কেন বোঝেনা ছেলের এখন বৃষ্টিতে ভেজার বয়স হয়েছে। এখনও কি ছোট নাকি রোদ?এক বছর হল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
একদিন খুব গরমের মধ্যে নিজের নামের থেকে বাঁচার জন্য , মানে রোদের থেকে বাঁচার জন্য হাতে করে ছাতা নিয়ে গেল লিমার সাথে দেখা করতে রোদ।
লিমা বলল - এসব কি নিয়ে এসেছ আমার সাথে দেখা করতে ? রোদের ভিতর ছেলেরা ছাতা নিয়ে ঘুরে? এটা মেয়েদের মানায় । next দিন এসব নিয়ে দেখা করতে আসবে না।
ভাগ্য যেহেতু মোটাসোটা না তাই রোদ জানে আজ বৃষ্টি হবে । কারণ ও আজ ছাতা নিয়ে আসেনি । মা কি রোদকে কখনই বড় ভাববে না?
মা বলে - রোদ, তুই এত বোকা কেন বাবা ? তুই কি কখনই চালাক হবি না ?
"মা আমি বোকা নই, তুমি কেন বুঝ না ? "-একাই ভাবল রোদ ।
"ইশ! তোর মাথার চুল এত বড় হয়ে গেছে , তুই চুল কাটিস না কেন ? চুল বড় রাখলে তোকে গুন্ডা মাস্তানের মতন লাগে। চুল একেবারে ছোট ছোট করে কেটে আসবি ।"
ছেলে বড় হলে চুলও বড় রাখতে হয় মা বুঝে না ।
- তুমি আর চুল কাটবে না । চুল এত ছোট করে কাট কেন ? তুমি কি কোন 5 star হোটেল এর দারোয়ান নাকি? চুল ছোট রেখে চেহারায় একটা পুলিশ পুলিশ ভাব আনতে হবে? কেমন বান্দর বান্দর লাগে তোমাকে চুল ছোট রাখলে তুমি জানো? এখন থেকে চুল বড় রাখবে, ঠিক আছে ?"
লিমা কথাগুলো বলেই রোদের মাথায় হাত দেয়- এহ! কি জঘন্য! তুমি মাথায় তেল দাও? মাথায় তেল দিয়ে আর কখনও আমার সাথে দেখা করতে আসবে না। ছিঃ ছিঃ! আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে। তুমি এত বড় হয়ে গেছ তাও মাথায় তেল দাও? এই, তোমার মাথায় এগুলা কি তেল?
-সরিষার তেল ।
- ওহ ! সরিষার তেল মাথায় দিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছ? তুমি কি মানুষ? ছোট বাচ্চারা মাথায় তেল দেয়। তুমি ছোট বাচ্চা নাকি? আর মাথায় তেল দিবে না , ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
- এইতো ভাল ছেলে।
পরদিন থেকে তেল দেওয়া বন্ধ।
-রোদ তোর মাথার চুল অমন শুকনা শুকনা লাগছে কেন? মাথায় তেল দিস নাই?
-মা, আমি ছোট ছেলে না। আমি বড় হইছি। আমার তেল দিতে ভাল লাগে না।
-কি বলিস? ভাল না লাগলেও দিতে হবে। মাথায় তেল দিলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। তেল দিবি নিয়মিত। তোর বাবার থেকে তুই বড় হয়ে যাস নায়। তোর বাবা এখনও মাথায় তেল দেন।
দুজনকেই ভালবাসে রোদ। তাই বাসায় মাথায় তেল দেয় আর লিমার সাথে দেখা করতে গেলে মাথা শ্যাম্পু করে শুকিয়ে তারপর যায়।
-তুমি গোল গলার টিশার্ট পরে এসেছ আবার? তোমাকে বলেছিলাম কলারওয়ালা টিশার্ট পরতে। কী সব ৫০ টাকা দামের টিশার্ট পর তুমি ?
-৫০ টাকায় টিশার্ট পাওয়া যায় নাকি ? আমারটার দাম মোটেও ৫০ টাকা না ।
- চুপ কর আর কথা বইল না । আমি যা বলেছি তা পরবে এখন থেকে। বেশি কথা বলবে না। তোমার এই ৫০ টাকা দামের টিশার্টগুলো ফেলে দিবে।
বাসায় গিয়ে সব গোল গলার টিশার্ট বের করল রোদ। এক ছেলে রোদের কাছে ২ টাকা চেয়েছিল, ছেলেটাকে ধরে নিয়ে এসেছে রোদ। সব গোল গলার টিশার্ট ছেলেটাকে দিয়ে দিবে। ছেলেটা এতগুলা নতুন ড্রেস পেয়ে খুব খুশি।
- কিরে কি করিস?
-মা, ছেলেটার জামা কাপড় নেই। তাই ওকে আমার সব গোল গলা টিশার্ট দিয়ে দিছি। গরীব মানুষ।
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে।
-হঠাৎ এই কাজ করলি কেন ?
-মাঝে মাঝে ভাল কাজ করতে হয়।
-তা বেছে বেছে ঐ টিশার্ট গুলোই দিলি কেন ? তোর তো অনেক পুরাতন শার্ট আছে। আর ঐ ছেলে কি শুধু টিশার্ট পরেই ঘুরবে? প্যান্ট লাগবে না? গায়ে নতুন টিশার্ট আর নিচে ছেঁড়া প্যান্ট, কেমন লাগবে?
- যা দিছি তাই অনেক । আর পারব না দিতে ।
রোদ গিয়েই কল করল লিমাকে । ১০ বার করল । ধরল না । ৩০ মিনিট পর মেসেজ আসল- আম্মু আর ছোট ভাই সামনে । কথা বলতে পারব না । রাতে কথা হবে । আমি তোমাকে কল করব।
রোদ বাহিরে অপেক্ষা করছে । রাত ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর রুমে চলে গেল ।  ১১.১৫ তে কল করল লিমা । দৌড়ে বাহিরে চলে আসল রোদ । কথা বলল কতক্ষণ হঠাৎ ই বৃষ্টি নামল ।
রোদ বলল - আমি রুমে চলে যাই ? বৃষ্টি নামছে ।
-হ্যাঁ যাও।
-আচ্ছা তাহলে রাখি ?
-রাখবে মানে ? সারাদিন কল করো, আর এখন আমি কথা বলতে চাচ্ছি তুমি বলবে না ?
-রুমে গিয়ে কথা বলব কি করে? আমরা তোমাদের মতন নাকি ? তোমরা ফ্ল্যাটে থাক । তোমার রুম আলাদা। আর আমরা একটা রুম আর একটা বারান্দা নিয়ে ভাড়া থাকি। আমার রুম আলাদা না। রুমে বসে কথা বললে আম্মু শুনে ফেলবে । কি করে কথা বলব ?
-যাও যাও, মায়ের কোলে গিয়েই বসে থাক।
-রাগ করতেছ কেন? সারাদিন আমি কথা বলতে চাই , তখন তো বল না। বল আম্মু সামনে, ছোট ভাই সামনে। আর এখন আমার ব্যাপারটা বুঝবা না ?
-আমাকে কিছু বুঝতে হবে না। যাও তুমি। তুমি আর কখনও আমার সাথে কথা বলবে না। মায়ের কোলেই থাক।

লিমা কল কেটে দিল।
-রোদ, এই বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে কি এত রাতে? কার ফোন আসে তোর প্রতিদিন ?
-আম্মু , আমার ফ্রেন্ড।
- ফ্রেন্ড এর সাথে ঘরে বসে কথা বলা যায় না ?
রোদ কিছু বলে না। শুধু চুপচাপ ঘরে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ে। জীবনটা অনেক বিষাক্ত মনে হচ্ছে রোদের। সবার জীবনই কি এত বিষাক্ত? বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছা করছে রোদের। সারাদিন কথা বলতে পারেনা লিমা। রোদ তো রাগ করে না। রাতে কথা বলতে একটু সমস্যা হলেই লিমার এমন করতে হবে ? আর মা-ই বা কেমন? ছেলে বড় হইছে না? কথা বলার মানুষ তো থাকবেই। বুঝে না, লিমাও না, মা ও না। ধ্যাৎ! জীবন এত কষ্টের কেন ? কিছু একটা করতে হবে।
সেই কিছু একটা করার জন্যই হাঁটছে রোদ। এখনও বৃষ্টি নামেনি। লিমা দাঁড়িয়ে আছে বাধানো একটা বট গাছের নিচে। রোদ এসে দাঁড়াল লিমার সামনে।
লিমা বলল-কি জরুরি কথা বলবে বল ।
-মন দিয়ে শুনবা। মাঝখানে রাগারাগি করবা না। ঠিক আছে ?
- আচ্ছা ।
-আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । আমি তোমার সাথে কখনও রাগারাগি করি না । কিন্তু তুমি সারাদিন আমাকে বকাঝকা করো । আমি জানি আমার ভিতর অনেক বিরক্তিকর কিছু আছে যা তুমি সহ্য করতে পার না । তুমি চাও তোমার বয়ফ্রেন্ডটা তোমার মনের মতন হোক। যে কোন মেয়েই এটা চাইবে। আমার ভিতর আরও বিরক্তিকর অনেক কিছু আছে। আস্তে আস্তে তোমার চোখে পড়বে হয়ত। আমি এমনই লিমা। আমি ছোটবেলা থেকে মানুষের সাথে কম মিশি। আমার বেশি মানুষ ভাল লাগে না। আমার কোন বন্ধু ছিল না। আমি কারও সাথে খেলতাম না। খেলতে গেলে আমাকে নিয়ে সবাই হাসি ঠাট্টা করত, মজা করত। আমি খেলা পারতাম না। ছোটবেলা থেকে শুধু পড়ালেখাটাই পারছি। আমার ভিতর আর কোন extraordinary গুন নাই। জানো আমি সেই ছোট বেলা থেকে আমার ঘরে অভাব দেখতে দেখতে বড় হইছি। এখন আমি আমার খরচ চালাতে পারি টিউশনি করে। কিন্তু এমন দিনও গেছে আমি না খেয়ে থাকছি। আমার আব্বু প্রায়ই অসুস্থ থাকত, তাই কাজ করতে পারত না। সেজন্য খাবারও থাকত না ঘরে। কিন্তু কখনও আম্মুকে বলিনি, আম্মু ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও। আমি কষ্ট সহ্য করতে পারি। আমার আম্মু পারে না, আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। একবেলা খাবার না থাকলে আম্মু কাঁদত, আমি খেতে পারতেছি না তাই। আমার আব্বু আম্মু আমাকে অনেক ভালবাসে। এত অভাবের মধ্যেও আমার পড়ালেখা বন্ধ করেনি। আমার ভিতর একটাই ভাবনা ছিল, বড় হয়ে আব্বু আম্মুর কষ্ট দুর করব। প্রেম ভালবাসা এসব নিয়ে ভাবিনি কখনও। কিন্তু আমার জীবনে তুমি আসার পর থেকে আমার ভাবনা বদলে গেল । কিভাবে যেন তোমাকে ভালবেসে ফেললাম। অনেক বেশি ভালবেসে ফেললাম। আমার কোন বন্ধু ছিল না। তাই ছোটবেলা থেকেই আমার আম্মু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি আমার মাকে অনেক ভালবাসি তোমাকেও অনেক ভালবাসি। কাকে বেশি বাসি সে তুলনা এখানে নেই। কারন দুই ভালবাসা পুরোপুরি অন্যরকম। একটার সাথে অন্যটার তুলনা হয় না। কিন্তু তোমার সাথে রিলেশন হবার পর থেকে, দুই ভালবাসায় বার বার তুলনা চলে আসছে। তুমি আমাকে চাচ্ছ একরকম করে, আর আমার মা চাচ্ছে অন্যরকম করে। তুমি চাচ্ছ তোমার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আর মা চাচ্ছে তার ছোট্ট রোদ হিসেবে। আমি অনেক চেষ্টা করছি বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে চেঞ্জ করার। তোমার ভালবাসার কারনেই এত চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি পারলাম না। এত তাড়াতাড়ি কেউ বদলে যেতে পারে না । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু আমি আসলেই কারও বয়ফ্রেন্ড হতে পারব না। তবে কারও ছোট্ট রোদ হয়ে থাকতে পারব। আমাকে মাফ করে দিও। আমি আসলেই পারব না চেঞ্জ হতে। আমি এমনই। আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি যদি কখনও এই ছোট্ট রোদটাকে ভালবাসতে পার, এসো আমার কাছে ফিরে ।
রোদ আর লিমা দুজনেরই গাল বেয়ে পানি পড়ছে। লিমা এক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।
লিমা বলল- আমাকে মাফ করে দাও রোদ। তোমাকে চেঞ্জ হতে হবে না।তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি চেঞ্জ হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসব। তুমি অনেক ভাল ছেলে। আমি তোমাকে হারালে জীবনের অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলব। তুমি জানো একটা ইংলিশ proverb আছে-" every wife finds her 1st son into her husband, but every husband finds his 2nd mother into his wife."আমার মানসিকতা যতদিন পর্যন্ত এমন করতে না পারব ততদিন আমার জন্য অপেক্ষা করো। রোদ, আমি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি ?
-আচ্ছা ।
লিমা রোদকে জড়িয়ে ধরল।
ধরে বলল - আমার জন্য অপেক্ষা করবে তো ?
- হ্যাঁ করব।
- আচ্ছা আমি আসি।
লিমা হেঁটে যেতে লাগল। রোদ সেদিকে তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল লিমা। হয়ত আবার কখনও দৃষ্টির ভিতর চলে আসবে। হঠাৎ আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। রোদ বৃষ্টিতে ভিজছে। লিমার কথা খুব মনে পড়ছে। ও থাকলে একসাথে দুজন হাত ধরে ভেজা যেত। কিন্তু হঠাৎ -ই রোদ দৌড়ে গিয়ে গাছের নিচে দাঁড়াল। না, বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না। মা বকা দিবে। আর অসুখ হলে মা পর পর হয়ে যায়। তুমি করে বলে। আমি আমার মাকে পর করতে চাই না।
আমি শুধু আমার মায়ের ছোট্ট রোদ!!!
বড় হতে চাই না!!!

ভালবাসার বৃষ্টি (গল্প)

ভালবাসার বৃষ্টি (গল্প)
লিখেছেনঃ Ami Sopnil
 
‘এই সোনিয়া দেখ দেখ সেই ছেলেটা, আজকেও কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে’ জানালার পাশ থেকে ফারিহা ডাক দেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ছেলেটা কে দেখছে ওদের পেছনে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল কার পেছনে ঘুরছে সেটা বের করতে পারছে না ওরা চার বান্ধবী। কারন ওরা চারজনই এক সাথে কলেজে আসে আবার এক সাথেই বের হয়ে যায়, ঘুরতে গেলেও একসাথে। তাই ছেলেটা ওদের কে যখনই দেখে এক সাথে। কাকে পছন্দ করে সেটা একে অন্যের উপরে চাপিয়ে দিলেও প্রত্যেকের মনে সূক্ষ্ম আশা ছেলেটা যেন তার পেছনে ঘুরে। এই ফিল টা প্রত্যেক মেয়ের কাছেই অনেক স্পেসাল। ফারিহার ডাক শুনে সোনিয়া, তন্বী দৌড়ে আসে। মীম যেখানে ছিল সেখানেই বসেই থাকে। দেখছে ছেলেটাকে, বুঝলি সোনিয়া ছেলেটার মোটেও ড্রেস সেন্স ভাল না, দেখছিস কি পড়ে আছে, ক্ষেত কোথাকার, তন্বী বলে উঠে। আরে ধুর এই ছেলের আবার ড্রেস সেন্স। কি যে বলিস, সায় দেয় সোনিয়া। এই মীম তুই বসে বসে কি করছিস, বিদ্যাসাগরের ছোট বোন হতে চাস? এদিকে আয় ছেলেটা কে দেখ, মনে হয় তার আর কাপড় নেই, বলে হিহি করে হেসে উঠে ফারিয়া। বিরক্ত হয় মীম। ফারিহা দেখতে অনেক সুন্দর, সম্ভবত কলেজের সেরা সুন্দরী। প্রায়ই দেখা যায় কিছু ছেলে পেলে ওর পেছনে ঘুরছে। তাতে অবশ্য ফারিয়া বেশ মজাই পায়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। ছেলেটা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তারপরও মীম এর কাছে ছেলেটাকে অনেক কিউট লাগল। মীম ফারিহার মত আহামরি সুন্দর না হলেও আট দশটা মেয়ের সাথে দাড়ালে ওকে আলাদাই লাগবে।


ক্লাস শেষ করে ওরা যখন কলেজ থেকে বের হচ্ছে তখনও ছেলেটি সেই একি জায়গায় দাড়িয়ে। চল ওকে গিয়ে ধমক দেই,প্রস্তাব দেয় সোনিয়া। তন্বী, ফারিহা তো এক পায়ে খাড়া, বাধা দেয় মীম। আরে বাদ দে। বাসায় কাজ আছে, চল চলে যাই। এই দাড়া, তুই এত ভীতু কেন রে মীম? ছেলেটাকে ভড়কে দিব, অনেক মজা হবে, তন্বী বলে উঠে। কি আর করা ইচ্ছে না থাকলেও মীমকে যেতে হয়।

এই আপনি আমাদের পিছু নেন কেন? কলেজের সামনেও প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকেন, আপনার সমস্যাটা কি? আপনি জানেন ইভটিজার বলে আপনাকে পুলিশে দিতে পারি? সোনিয়া বেশ রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল, আশা করল ছেলেটা ভয় পাবে।

কিন্তু ছেলেটা ভয় তো পেলই না বরং ওদের অবাক করে দিয়ে সুন্দর হাসল। বলল, না আপনারা পারেন না, কারন আমি তো ইভটিজিং করিনি বরং আপনারা এখানে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। জানেন আপনাদের বিরুদ্ধে ১৫৭ ধারার কেস করতে পারি? নিরীহ একটা ছেলেকে হুমকি দেবার অজুহাতে। থতমত খেয়ে যায় সোনিয়া, চুপ করে থাকে সে।

প্রথম দেখাতেই ভালবাসা, এতে বিশ্বাস করেন? ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলল। উত্তরের আশায় না থেকে নিজেই জবাব দিল আমিও করতাম না, কিন্তু এখন করতে বাধ্য হচ্ছি, তাকে দেখার পর থেকে লাইফ টা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে আছে মন, চিন্তা ভাবনা যেন তাকে কেন্দ্র করে বৃত্ত হয়ে চারপাশে ঘুরছে। রাতগুলো নির্ঘুম, স্বপ্নগুলো কেমন জানি এলোমেলো। মনে হচ্ছে তার জন্য সব কিছু করা যায়, হা সব কিছু। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, সে আসবে বলে, আমায় বলবে, এই অনেক হয়েছে এখন হাতটা ধর, দেখতো টিপটা ঠিকমত হয়েছে কিনা? বলতে বলতে ছেলেটার চোখ দুটো স্বপ্নিল হয়ে উঠে, দেখতে ভালই লাগে ওদের।

আপনি কাকে পছন্দ করেন? সোনিয়ার প্রশ্নে থামে ছেলেটা। যদিও ওরা ভেবে নিয়েছে কে হতে পারে।

সরি তার নাম বলা যাবে না, আমি চাচ্ছি সে যাতে নিজেই সেটা বুঝতে পারে কাকে আমি ভালবেসেছি। অনেকের মাঝে থেকেও আমার অনুভূতি গুলো যেন সে ধরতে পারে। ততদিন পর্যন্ত আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব তার পথ চেয়ে। আচ্ছা আমি আপনাদের দেরী করিয়ে দিচ্ছি,সরি । যদিও আমার খুব ভাল লাগছে। বাই দা ওয়ে আমি বৃত্ত।


এই চল যেতে হবে বকবক শুনলে হবে না। ফারিহা ওদের টেনে নিয়ে আসে। ফারিহা দেখছিস ও কত্ত রোমান্টিক? রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে তন্বী বলে। ইস আমাদের তন্বী সেই খেত ছেলের প্রেমে পরে গেল, হায় প্রেম! কিছুক্ষণ আগেও যার ড্রেস সেন্স নিয়া প্রশ্ন ছিল, এখন কিনা তার প্রেমেই পরে গেল। পাশ থেকে সোনিয়া বলে উঠে। এবার তন্বী খেপে যায়। বলে আমি না হয় ড্রেস সেন্স নিয়া বলছি, আর তুই সাহসী সিংহী, ছেলেটার সামনে গিয়ে এমন বিলাই হইলি কিভাবে?? হুম? বল বল?

আরে আমি কি জানতাম নাকি ও কিসব ধারা টারার কথা বলে আমাকে ভড়কে দিবে, বলে সোনিয়া, তাকিয়ে দেখে মীম হাসছে। কিরে এতক্ষণ তো চুপ ছিলি এখন তোর কি হল? এত হাসির কি আছে।

এত সাহসী একজন কে ভয়ে সিধিয়ে যেতে দেখে হাসব না, তোকে ছেলেটা বোকা বানাল বলে হাসছি। ১৫৭ ধারা হল পার্কিং ছাড়া রাস্তার পাশে গাড়ি রাখার কেস, মীম হেসে জবাব দেয়।

তুই জানলি কিভাবে? এবার তন্বী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। আরে ওই দিন আমাদের গাড়ি এই কেস খায়, ট্রাফিক পুলিশ কে বলতে শুনছি।

তুই তখন বললি না কেন? ফাজিল কোথাকার। সোনিয়া রেগে যায়। হিহি ! আমি যদি বলে দিতাম তাহলে কি তোর ওই সাহসী রূপ দেখতে পারতাম?? হাহাহা ,হাসতে থাকে মীম।

এই তোরা থামতো। কি সব শুরু করছিস। ফালতু একটা ছেলেকে নিয়া হাসাহাসি। ফারিহা কৃত্রিম রাগ দেখায়। ওর কথা শুনে বাকিরা ফিক করে হেসে দেয়। তন্বী বলে, আসলেই কত ফালতু ছেলে নইলে কি আর ধবল রোগীর প্রেম এ পরে? আমরা কি ছিলাম না ! হে হে! আসলেই, রোগীর জন্য বেচারার ঘুম নষ্ট, দিন রাত খালি পাউডার আপার স্বপ্ন, সোনিয়া যোগ করে। এই খবরদার ফাজলামি করবি না। ফালতু কথা শুনতে একদমই ভাল লাগে না। হয় তোরা চুপ কর নইলে আমি গেলাম। ফারিহা এবার সত্যই রেগে যায়। আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর তোকে খেপাব না, তবে এটা ঠিক তোর কপাল ভাল। এত কিউট, রোমান্টিক একটা ছেলে তোকে পছন্দ করে, এত দিন ধরে তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, কল্পনা করা যায়, তাও আবার এই যুগে, যেখানে ২ মিনিটে প্রেম আর ৪ মিনিটে ব্রেক-আপ। তুই স্পেশাল রে দোস্ত, আসলেই স্পেশাল। আমার জন্য দাড়ালে তো এক পায়ে রাজি হতাম, বলে মীম। অফ যা তো তোরা বললেও শুনতে ভালই লাগছিল ফারিহার।

কিছুদিন কলেজ বন্ধ ছিল, কলেজ যেদিন খুলল সেদিন ই ছুটির পর আবার বৃত্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ওরা। ফারিহাই শুরু করে, ভাব নিয়ে বলে দেখুন আপনার মত ছেলে অনেক দেখেছি, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার পেছনে ঘুর ঘুর করেন,তার প্রেমে পরে যান, তার জন্য হেন করবেন তেন করবেন। যতসব সস্তা মেন্টালিটি। শুনুন প্লিজ আমাদের আর ডিস্টার্ব করবেন না। নাহলে আমরা স্যারদের জানাতে বাধ্য হব।

‘আপনার কেন মনে হল যে আমি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার প্রেম এ পরে যাই, আর এমন যদি হত তাহলে তো আমি সবার আগে আপনার প্রেম এ পরতাম। কিন্তু আমি তো আপনাকে পছন্দ করি না। আমি ভালবাসি মীম কে। মীম আমি জানি না তোমার জবাব কি হবে, তবে যাই হোক আমি আর পারছি না। এভাবে দিনের পর দিন তোমার অপেক্ষায় থেকে আমি ক্লান্ত। আমি আগামী কাল ঠিক এসময় তোমার জবাবের অপেক্ষায় থাকব, বলে হাটা শুরু করে বৃত্ত। হতভম্ব মীম তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। ও স্বপ্নেও ভাবেনি ফারিহাকে বাদ দিয়ে বৃত্ত ওকে প্রপোজ করবে ।

একটা ছেলে ওকে এত ভালবাসে, এত দিন ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই কেমন জানি লাগে। বুকের বাম পাশে কেমন জানি অচেনা অনুভূতি। এ অনুভূতির সাথে সে কখনোই পরিচিত না। কিশোরী একটা মেয়ের জন্য এই অনুভূতির মূল্য অনেক। রাতের আকাশ দেখতে ভাল লাগছে, গুন গুন করে গান গাইতে ইচ্ছে করছে। মন ভরে আছে অচেনা এক ভাল লাগায়। কখন সকাল হবে কখন কলেজে যাবে এই চিন্তায় ঘুম আসছে না ওর, নিষ্ঠুর রাত যেন ফোরাতেই চাচ্ছে না। সোনিয়া কল দিয়েছিল, জানতে চেয়েছিল ওর জবাব কি হবে, মীম সত্য কথায় বলে দিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব বান্ধবীরা জেনে গেছে ব্যাপার টা, সোনিয়াটা যা ফাজিল। আপন মনে হাসে মীম।

ফিজিক্স ক্লাস শেষ হতেই ফারিহার ডাক, তুই নাকি হা বলবি? ছেলেটার ব্যাপারে জানিস কিছু? নাকি এমনিতেই প্রেমে পরে গেলি। তুই কি আজীবন গাধীই থাকবি?

কেন কি হয়েছে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে মীম।

আরে বলিস না ওই ছেলে দুনিয়ার বদ, ওর কাজ ই হচ্ছে সহজ সরল মেয়েদের মিষ্টি কথা বলে পটানো, কত মেয়ের যে সর্বনাশ করছে। আর তুই কিনা ওর প্রেমে পরে গেছিস। কয়েক দিন আগে দেখিস নি এক RJ কে লাইভ প্রোগ্রামে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করল আর কয়টা মেয়ের সর্বনাশ করবি তুই? এরা হচ্ছে মুখোশ-ধারী শয়তান। এদের মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করতে নেই।

ফারিহার কথায় যেন পায়ের নিচে মাটি সরে গেল মীমের। এও সম্ভব? ছেলেটা কে তো এমন মনে হয়নি। মনটাই খারাপ হয়ে গেল ওর। অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করল, তুই সিউর তো?

আমি কি তোর সাথে মিথ্যে বলব? তুই বি সেকশনের ইলা কে চিনিস না? ওকেও প্রপোজ করেছে। দাড়া ইলা কে ডেকে আনি। বলে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল ফারিহা।

ভীষণ কান্না পাচ্ছে মীমের। ঠোট কামড়ে কান্না চাপার চেষ্টা। কেন এমন হল? সাজানো স্বপ্নগুলো তাই বলে এভাবে ভেঙ্গে যাবে? ভালবাসা ছিল না জীবনে ভালই তো ছিল সে, কেন ভালবাস তে গেল? কেন একটা মানুষের নিষ্ঠুর খেলায় সে কষ্ট পাবে। অভিমান গুলো একসময় প্রচন্ড ক্ষোভ এ পরিণত হয়। ইলা এসে কি বলল তার কিছুই মাথায় ঢুকেনি। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদতে পারলে হয়ত ভাল হত।

কলেজ ছুটির পর বের হবে হঠাৎ ঝুপ বৃষ্টি। কি আর করা যাদের কাছে ছাতা নেই সবাই গেট এর পাশের ছাউনি তে আশ্রয় নিল। এই মীম দেখ বদমাশটা ছাতা হাতে এদিকে আসছে,ফাজিল কোথাকার, একটা শিক্ষা দিতে পারলে ভাল হত। মীম পারবি ব্যাটাকে একটা চরম শিক্ষা দিতে? ফারিহা উৎসাহের সাথে বলল। এই না না বাদ দে তো এসব, আমার ভাল লাগছে না, প্রতিবাদ করল সোনিয়া। এই হাঁদারামটাকে আজকে না তোর জবাব দেয়ার কথা? যা জবাব দিয়ে আয়। দেখিস আবার রাজি হয়ে না যাস। কত্ত কিউট ছেলে রে, খোঁচা মারে ফারিহা। ফারিহার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে যায় মীমের, বৃষ্টি ভিজতে ভিজতে ওর দিকে এগিয়ে যায়। দূর থেকে দেখে ফারিহা, ছেলেটা ছাতা হাতে দৌড়ে আসে, মীম এর উপর ছাতা ধরে, তখনি এক ঝটকায় ছাতা টা ফেলে দেয় মীম। মীম উত্তেজিত ভাবে কি যেন বলে বৃত্তকে, বৃত্ত ও কিছু বলে জবাব দেয়। ফারিহা সোনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায় যখন দেখল মীম ছেলেটা কে চর মেরেছে। ছেলেটার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল সে কতটা অবাক হয়েছে। জ্বর নিয়ে বাসায় ফিরল মীম। বিছানায় পরে সারাদিন ই কাঁদল। কিছুতেই ব্যাপারটা ভুলতে পারছে না। জ্বরের কারণে কয়েকটা দিন কলেজে যাওয়া হয়নি। এ কয় দিনে মীম কেমন জানি হয়ে গেছে, শুকিয়ে একদম কাঠ। দল বেধে ওকে দেখতে আসল সোনিয়া, ফারিহা, তন্নি। ওর অবস্থা দেখে ফারিহার কান্না পেয়ে গেল। হিংসার বশীভূত হয়ে বান্ধবীর এর বড় ক্ষতি করে ফেলবে বুঝতেই পারেনি। ও তো বুঝতে পারেনি যে মীম ছেলেটা কে এত ভালবেসে ফেলবে। মীম কে সব খুলে বলল। ওরা ভাবতেও পারেনি ফারিহা এমন করতে পারে, বৃত্তের ব্যাপারে যা বলেছিল সব মিথ্যে। ফারিহা কে বাদ দিয়ে মীম কে প্রপোজ করায় সে জেলাস ফিল করে বলে এমন করেছে। ইলাকেও সে শিখিয়ে দিয়েছিল। ফারিহার কান্না দেখে মীম ওকে মাফ করে দেয়। যা হবার তো হয়েছেই। ফারিহা কথা দেয় সবাই মিলে ওরা বৃত্তকে খুঁজে বের করবে। শুধু নামটাই ওরা জানে, বৃত্ত কোথায় থাকে, কোন ইউনিভারসিটিতে পড়ে কিচ্ছু জানে না। তাই ফেসবুক ই এক মাত্র ভরসা। হাজার হাজার বৃত্ত, কিন্তু সেই বৃত্ত কে তো আর পাওয়া যায় না, সবার আবার প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি নেই। এভাবে সময় চলে যায় ওরাও এক সময় ক্ষান্ত দেয়। শুধু ভুলতে পারে না মীম। প্রথম ভালবাসা কি এত সহজে ভোলা যায়। হোক না সেটা একদিনের ভালবাসা।

প্রায় দুমাস পর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে চার বান্ধবী শপিং করে বের হবে এমন সময় তন্বী বলে এই দেখ তো ছেলেটা বৃত্ত না? আরে তাই তো, মীম দেখ, ফারিহা বলে। ভয়ে ভয়ে তাকায় মীম, যদি আশা ভেঙ্গে যায়। আসলেই তো ছেলেটা বৃত্তর মত দেখতে, তবে ভীষণ রোগা, গায়ের রঙ টাও কেমন, বৃত্ত আরো ফর্সা। পাশের মেয়েটা কে আবার? গার্ল-ফ্রেন্ড নাতো? সোনিয়া জিজ্ঞেস করল।

মীম অবশ্য এত কিছুর ধার ধারতে গেল না গার্ল-ফ্রেন্ড হলে হবে। সোজা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, এত দিন কথায় ছিলে তুমি? জান ক্লাসের জানালার পাশে দাড়িয়ে কত অপেক্ষা করেছি তুমি আসবে বলে? এলে না কেন আমার রাগ ভাঙ্গাতে, জানি ভুল টা আমার, কিন্তু ক্ষমা চাইবার সুযোগ তো দিবা। অশ্রু টলমল চোখে মীম বলে। পাশের মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থাকে।

আপনি আমাকে কিছু বলছেন? কই আমি তো আপনাকে চিনি না, ছেলেটা বলল। বৃত্ত কেন আমাকে আরও কষ্ট দিচ্ছ? আমার উপর তুমি এখনো রেগে আছ? গত দুটা মাস আমি কিভাবে যে কাটিয়েছি তা যদি বোঝাতে পারতাম। কান্না ভেজা কণ্ঠে মীম বলে।

ও আপনি বৃত্তের পরিচিত? খুব অবাক হয় ছেলেটা । ও আমার যমজ ভাই। দুমাস আগে একটা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়, আস্তে আস্তে বলে ছেলেটা।

শুনে আর স্থির থাকতে পারে না মীম, মাথা ঘুরে আসে ওর। আকাশ যেন ভেঙ্গে পরছে । মেঝেতে পরার আগেই ছেলেটা ধরে ফেলে ওকে, কানে কানে হেসে বলে এত ভালবাস আমাকে? আমি তো এতক্ষণ মজা করলাম, ওইদিনের পর অবশ্য ভাবি নাই তুমি আমাকে ভালবাসতে পার, বলে বুকে জড়িয়ে ধরে বৃত্ত। সেই দিনের মত করে আজ ও বৃষ্টি নামে, হাত ধরে দুজন নেমে যায় বৃষ্টি ভিজবে বলে। পাশ থেকে সেই মেয়েটা বলে উঠে, ভাইয়া নিউমোনিয়া বাধিয়ে দুমাস বিছানায় ছিলা আবার থাকতে চাও? এই শব্দ গুলো কানে যায়না, ওরা বৃষ্টি ভেজায় মগ্ন। এ বৃষ্টি ভালবাসার বৃষ্টি, যা মুছে দেয় সব দুঃখ কষ্ট। চলুন না ওদের সাথে ভালবাসার বৃষ্টিতে ভিজি...

ღভালোবাসা দিবসেღ

ღভালোবাসা দিবসেღ
লিখেছেনঃ Ami Sopnil 

এই দিশা কোথায় ছিলি? স্কুল তো অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে! মা রাফার সাথে ছিলাম, ওর কিছু বই কেনার দরকার ছিল, কিনতে গিয়ে লেট হয়ে গেল, জবাব দেয় দিশা। যদিও মাকে মিথ্যা বলতে হল। মাকে তো বলা যায় না যে অভির সাথে ছিলাম। আজ ভালোবাসা দিবস কোথাও একটু ঘুরতে যাব তা না, বাসায় বসে কাটাতে হবে। ভাগ্যিস আজ স্কুল খোলা ছিল নয়ত অভির সাথে দেখাই হত না। আর না দেখা হলে ওর ৩ রাতের ঘুম নাই হয়ে যেত আর আমাকেও ওর কথা ভেবে জেগে থাকতে হত। ইস যদি গল্প করা যেত সারারাত কি মজাই না হত। কিন্তু ওর এস এস সি পরীক্ষা চলছে আর রাতে কারো সাথে কথা বলি শোনলে বাবা এমন বকা দিবে,আফসোস করে দিশা। আজ তার মন অনেক অনেক ভালো, অভির সাথে দেখা হল, এক সাথে আইসক্রিম খাওয়া হল। আচ্ছা আইসক্রিম তো প্রায়ই খায় কিন্তু আজকের মত এত ভালো তো লাগেনি কোনদিন? ভালবাসার মানুষটা সাথে থাকলে চারপাশ এমন রঙ্গিন হয় কেন? সব কিছুকেই ভাল লাগে, আচ্ছা এই সুখ কি সারাজীবন থাকবে? ভাবে দিশা। অভি তার পকেট মানির টাকা থেকে ওর জন্য গিফট এনেছে আজ।প্যাকেট তা খুলতে চাইলে সে বলে বাসায় নিয়ে দেখো। পছন্দ না হলে আমার খুব খারাপ লাগবে। খুশিতে জড়িয়ে ধরল অভিকে,কখন যে অভির গালে চুমো বসিয়ে দিল টেরই পেলনা দিশা। তাকিয়ে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে আছে অভি, দিশার দিকে তাকাতেই পারছে না। উফ অভি কে নিয়ে আর পারা গেল না, ছেলেটা এত লাজুক। এই শোন এটা তোমার ভ্যালেন্টাইন গিফট, আর হা এই গিফট এর সাথে কিছু চকলেট ফ্রি আছে নাও, বলে দিশা। এখন আমাকে যেতে হবে নইলে মা চিন্তা করবে। চলে আসার সময় খুব খারাপ লাগছিল দিশার, মনে হচ্ছিল কি যেন ফেলে আসছে সে, অভির অনেক প্লান ছিল দিনটা ঘিরে। কিন্তু কি আর করা। রুমের দরজা লাগিয়ে প্যাকেট টা খুলল দিশা, দেখে তিন সেট কাচের চুড়ি, কাজল, এক জোড়া নূপুর আর একটা ভয়াবহ সুন্দর ছোট আয়না। আয়নার উপর তাকাতেই নিজেকে দেখতে পেল সে, ভাল করে তাকাতেই দেখল ছোট করে লেখা সরি দিশা তোমার চেয়ে সুন্দর কিছু খুঁজে পেলাম না । দেখে দিশা বিশ্বাস ই করতে পারছিল না অভি এত রোমান্টিক একটা ছেলে। ওকে এত ভালবাসে। কান্না চলে আসে তার। ফোনটা হাতে নেবার সাথে সাথেই কাকতালীয় ভাবে অভির ফোন আসে, হ্যালোর জবাব না দিয়েই দিশা পাগলের মত বলতে থাকে আই লাভ ইউ অভি। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি...।

unpublished!!

যে ভালবাসা হারাতে নেই

যে ভালবাসা হারাতে নেই
লিখেছেন- sesh rater adhar


- আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? আমি দাঁড়িয়ে আছি তো।


বিছানায় শুয়ে ভাবছে আবির আসলে আর কতক্ষণ লাগবে।


- কি হল? কই তুমি?
- এইতো বের হলাম। বাস এ উঠবো। কতক্ষণ লাগে তা তো জানি না। তবে তারাতারি আসার চেষ্টা করব।


আসলেই বের হয়েছে আবির। খুব প্রিয় এক জায়গা থেকে। ঘুম। সারাদিন বিছানার সাথে লেপটে থাকতে পারে। শরীরের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এই ছেলে এত ঘুমায়। মারিয়া যে কয়েকটা দিন দেখা করেছে সবসময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কোনদিন আগে এসে পৌঁছাতে পারেনি আবির। মারিয়া নিজেও বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছে। ওর অনেক দিনের ইচ্ছা আবির অপেক্ষা করবে, আর মারিয়া বলবে, রাস্তায় অনেক জ্যাম। তাই দেরি হল। আজই হয়ত সেইদিন।
আবির কোনমতে উঠে রেডি হয়ে নিল। আবিরের নিজেরও অনেক ইচ্ছা একদিন আগে যাওয়ার। কিন্তু কোনদিনই হয় না। এই ঘুম আর জ্যাম সব কিছুর জন্য দায়ি। প্রতিটা বার লেট আর প্রতিটা বার শাস্তি। ওহ, সে কি শাস্তি। ভাবাই যায় না।

বাসের জন্য প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা শেষে অবশেষে বাস আসল। মনে মনে অনাগত শাস্তির কথা ভাবছে আবির। খুব ভাল করেই জানে আজকের প্রশ্নের উত্তর দিতেও ব্যর্থ হবে। আজ পর্যন্ত একটা দিনও উত্তর দিয়ে শাস্তি থেকে পার পায়নি আবির। বাসে উঠার পর জানালার পাশে বসল। পাশে কেউ নেই। ২ সিটের অধিকারী হয়ে খুবই খুশি আবির। সব সময় ভাগ্য এত ভাল হয় না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সব ভেঙ্গে এক মানুষ এসে আবিরের পাশে বসল। ২ সিটের সুখ এখন হাফ সিটে নেমে এসেছে। এত বড় শরীর নিয়ে পাশে যে মানুষটা বসে আছে তার দেড় সিটেও মনে হয় হচ্ছে না। ২ সিট পেলে সে হাসি মুখে দাঁত বের করে বসে পরবে। ধন্যবাদও দিবে না একবার আবিরকে। মারিয়ার সাথে দেখা হলে তো এমনিতেই শাস্তি অপেক্ষা করছে। তার আগে এই কোন শাস্তি পাচ্ছে আবির?
লাস্ট যেদিন দেরী করে গেল, মারিয়া রাগি রাগি চোখ করে বলল- দেরী হল কেন এত? প্রতিদিন আমি অপেক্ষা করব? কি পাইছ তুমি?
- জ্যাম ছিল রাস্তায়।
- প্রতিদিন এক কথা বলবা না। রাস্তায় জ্যাম ছিল? তো তুমি জামেই থাকতা। আমি যদি এর মাঝে অন্য কারও সাথে বসে গল্প করা শুরু করে দিতাম তুমি কিছু করতে পারতা?
- না না। কি বল তুমি? তুমি কত ভাল মেয়ে। তুমি অমন করতেই পার না।


একটু রাগি মুখে তাকাল মারিয়া। মুখটা নিচু করে ফেলল আবির। নিশ্চয় এখনি প্রশ্ন করবে আবিরকে।


- তুমি তো বাসে আসছ, তাই না?
- হ্যাঁ।
- পাশে কে বসছিল?
- একটা মেয়ে।
- বয়স কত?
- তোমার মত হবে।
- কি কালারের ড্রেস পরেছিল?
- কালো।
- আচ্ছা। ঠিক আছে। আচ্ছা বাসে সিট কয়টা ছিল?
- বাসে সিট? গুনছি নাকি আমি?
- পাশে বসা মেয়ের ড্রেসের কালার দেখতে পারছ আর বাসের সিট গুনতে পার নায়?
- না,ওটা কি সম্ভব নাকি? পাশে বসলে ড্রেস দেখব না?
- তাই দেখ। আমি প্রশ্ন করছি উত্তর দিতে পারনি তুমি। শেষ।
- আজ আবার কি শাস্তি দিবা?
- আজ আমার হাত ধরতে পারবা না। পাশে পাশে ঘুরবা, বসে থাকবা, খাবা একসাথে। কিন্তু হাত ধরতে পারবা না।
- এটা কেমন কথা? আমি কি করে থাকব হাত না ধরে?
- থাকতে হবে। অপরাধ করছ, আবার উত্তরও দিতে পার নায় প্রশ্নের।
- আর এমন হবে না। এরপর থেকে আর দেরী করে আসব না, বিশ্বাস করো।
- না। এর আগেও অনেকবার বলছ। তাও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আর সম্ভব না।
- একবারের জন্যও না? আমি না তোমাকে ভালবাসি? আমি হাত ধরব না?
- না।


সেদিন সত্যিই একবারের জন্যও হাত ধরতে দেয়নি মারিয়া। কয়েকবার ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল আবির। প্রতিবারই হতাশ।


একটু চলার পরই জ্যাম। সহ্য করার মতন না। মাঝে ২ বার মারিয়া ফোন দিল। প্রতিবারই বলল আবির, এই তো চলে এসেছি, আর একটু।
আজ কি প্রশ্ন করতে পারে? বাসে লাইট আছে ৪ টা। জানালা ১২ টা। একটা মাত্র ফ্যান যা ড্রাইভার এর মাথার উপর প্রাণপণ ঘুরে চলছে। selfish ড্রাইভার। খালি নিজেরটাই বুঝে। এইদিকে একজন যে হাফ সিটে বসে টিকে থাকার যুদ্ধ করছে সেই দিকে কোন খেয়াল নেই।
মনে হচ্ছে পাশে বসা লোকটাকে কিছু বলতে কিন্তু পরে আর বলা হল না। জানালা দিয়ে বাহিরের লোকজন দেখছে আবির। কত মিষ্টি করে শাসন করে মারিয়া। রাগ করে কত মিষ্টি করে। এত মিষ্টি ভালবাসার সম্পর্ক হয়ত খুব কম মানুষের ভাগ্যেই থাকে।

- ঐ জোরে চালা বাস।


জানালায় সজোরে বিশাল হাত নিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলল আবিরের পাশে বসা বিশাল দেহী মানুষটা। তার বগলের নিচে যে একজন পরে আছে সেই দিকে একদমই খেয়াল নেই।
ওহ, কি দুর্গন্ধ। কি দোষ করেছিল আবির আল্লাহই জানে। দেড় সিট নিয়েছে সমস্যা নেই। বগলের নিচে এভাবে রেখে বাস থাপড়াতে হবে। আরে বডি স্প্রে না থাকুক, অন্তত ঘামাচি পাউডার তো দিয়ে আসতে পারত। বমি আসছে দুর্গন্ধে।
বমির কথা ভাবতেই হঠাৎ মাথায় একটা কথা আসল, আচ্ছা বাসে উঠলে তো অনেকেই বমি করে। ড্রাইভারদের কখনও বমি আসে না? আসলে তখন কি হত?



আজও মারিয়া আগে চলে আসল। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ছেলেটা প্রতিদিন দেরি করে আসে। এই যে দেরি করে আসলে হাত ধরতে দেই না, রাগ করি, কথা বলি না। তাও একটা দিন আগে আসে না। আর ছেলেটা কেমন যেন, রাগ করে থাকতে পারিনা ওর উপর। চোখের দিকে তাকালেই রাগ চলে যায়। তাই যতটা সময় রাগ করে থাকি ভুলেও চোখের দিকে তাকাই না। চোখের দিকে তাকালেই এমন একটা অসহায়ের মত ভাব করবে যেন কত কষ্টে আছে। আসলে তো সব ঢঙ। তাও পারি না রাগ করতে। আর ফাজিলটাকে শাস্তি দিয়ে যেটা করতে মানা করব ঐটা আরও বেশি করে করবে। ফাজিল, শয়তান। আজ আসুক , আজ আর ফাজিলটার অসহায়ের মত তাকানো দেখে রাগ ভাঙবে না।


জ্যাম ছেড়েছে তাহলে। বেশি সময় লাগার কথা না আর। আসলেই বড্ড বেশি দেরি করে যাওয়া হয়। মেয়েটা প্রতিদিন একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। একটু সময় মত একদিনও যাওয়া হয় না। খারাপ লাগে অনেক, কিন্তু ঘুম না ভাঙলে আমার কি করা?

আবির বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনিতেই মারিয়ার জন্য মন খারাপ। আজ ও শাস্তি পেতে হবে। তার উপর পাশের দানবের যন্ত্রণা। কিছুক্ষণ ধরে অন্য এক যন্ত্রণা দিচ্ছে লোকটা। বাসের হেল্পার পিচ্চিটা যখনি বলছে, বায়ে পেলাস্টিক, বায়ে পেলাস্টিক।
আর আবিরের পাশের লোকটা উঠে উঠে জানালা দিয়ে " পেলাস্টিক " দেখার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে আবিরকে তার শরীরের সুগন্ধে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে যাচ্ছেন। আজব মানুষ।


বাস থেকে নেমে তারতারি একটা রিকশা নিয়ে গেল। রিকশা থেকে নেমে আস্তে করে মারিয়ার সামনে এসে দাঁড়াল আবির। আবির বলতে শুরু করল - জানো, আজ এত জ্যাম......
- চুপ। আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
- না, দেরি করলাম তো তাই।
- সে তো প্রতিদিনই করো, আর প্রতিদিন এসে একই কথা বল।
- সত্যি কথা বিশ্বাস করো...
- চুপ। বাসে আসছ তো?
- হ্যাঁ।
- বাসে চাকা ছিল কয়টা?
- লাইট ৪ টা, জানালা ১২ টা, ফ্যান একটা selfish ড্রাইভার এর মাথার উপর।
- এগুলো জানতে চাইছি? চাকা কয়টা ছিল?


বাসে চাকা কয়টা ছিল একটু চিন্তা করলেই বলা যাবে। কিন্তু মাথায় কোন কিছু ঢুকছে না এখন।মাথায় একটাই চিন্তা মারিয়া আজ কি শাস্তি দিবে।


- বলতে পারবা না, তাই তো?
- ঠিক মনে করতে পারছি না।
- আজ বাসা থেকে আসার সময় ভেবে এসেছিলাম, আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিব। একসাথে খেতে বসলেই তো বল, একটু খাইয়ে দাও না। ভেবেছিলাম আজ তোমার ইচ্ছাটা পূরণ করব। আজও তুমি দেরি করে আসলা। তোমার ইচ্ছাটা আর পূরণ হচ্ছে না।


আবির মুখ ঘোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল। কোন কথা বলল না। মারিয়াও চোখ নিচের দিকে দিয়ে তাকিয়ে আছে। আবিরের মুখের দিকে তাকানো যাবে না। প্রতিদিন দেরি করবে আর মাফ করে দিবে। কখনও না। মারিয়ার কষ্ট হয় না?
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মারিয়ার হঠাৎ মনে হল আবির চুপ করে আছে কেন? আজ আর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে না কেন? মারিয়া মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকাল। আবিরও মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

মারিয়া আবিরের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল- এই কি হইছে? এমন চুপ করে আছো কেন? আজ আর রাগ ভাঙ্গাবা না।
- আমি কি ইচ্ছা করে এমন করি? আমার ঘুম ভাঙতে চায় না সকাল বেলা। আর বাস কি আমি চালাই, জ্যাম বাধলে আমি কি করব? আমার খারাপ লাগে না তুমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাক? প্রতিদিন আমাকে শাস্তি দাও।

অসহায়ের মত মুখ করে কথা গুলো বলছে আবির। আবারও রাগ চলে গেল মারিয়ার। হাতটা আরও শক্ত করে ধরল মারিয়া। মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল- আহারে, আমার পাগলটা দেখি রাগ ও করতে পারে। কত্ত রাগ করছ দেখি তো?
- আমাকে খাইয়ে দিবে না,না?
- দিব তো। তোমাকে দিব না তো কাকে দিব বল? আচ্ছা বল, কি খাবা?
- ফুস্কা, আইস ক্রিম, বাদাম ...
- এই এই, আস্তে আস্তে বল। একটা একটা করে বল।
- সবগুলো খাবো।
- হ্যাঁ সবগুলো খাবে। কিন্তু একসাথে তো পারবা না। একটা একটা করে খাবা, আচ্ছা?
- না খাবো না, খাইয়ে দিবে।
- দিব তো, পাগল।


আইস ক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে মারিয়া আবিরকে। আবির খাওয়াতে ব্যাস্ত। আর মারিয়া তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে। বড্ড বেশি কান্না পাচ্ছে মারিয়ার। কষ্টে না। খুশিতে। এত ভালবাসে কেন আবিরকে ও? পাগলটার মাঝে কি আছে? জানা নেই। সব কিছু সবসময় জানতে নেই। ভালবাসে বাসুক। এত কিছু বুঝতে গেলে ভালো লাগাটুকু হারিয়ে যেতে পারে।

- আর একটা খাইয়ে দিবে?

আবির আবারও সেইরকম মুখ করে তাকিয়ে আছে। না করার উপায় নেই।

-আচ্ছা দিচ্ছি।
- একটা কথা বলি?
- বল।
- আমি আর কখনও দেরি করে আসব না। আমাকে প্রতিদিন এভাবে খাইয়ে দিবে?
- দিব।
- আমিও তোমাকে একটু খাইয়ে দেই।
- দাও।


আবির আইস ক্রিমটা নিয়ে মারিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে এখনও মারিয়ার। পাগলটার সে দিকে একদম খেয়াল নেই। শুধু খাওয়া নিয়েই ব্যাস্ত। মারিয়া আবিরের হাতটা আর একটু শক্ত করে ধরল। মনে মনে বলল, তোমাকে অনেক ভালবাসি, ছেড়ে যেওনা কখনও।
আবির বুঝল কিনা জানে না।

আবির সবই দেখছে সবই বুঝছে। সব কিছু সবসময় বুঝতে দিতে নেই। একটু রাগ করুক না মেয়েটা। রাগলে অনেক সুন্দর লাগে দেখতে মারিয়াকে।