আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২

“এক অজানা ভালবাসা”



এক অজানা ভালবাসা
মোঃমাসুদ রানা

এই রিফাত দোস্ত একটা নাম্বার দে না।দোস্ত তুই না আমার দোস্ত আমার এই হাল দেখে কি তোর একটু মায়া হয় না।তুই যখন তোর বউরে নিয়ে আমার সামনে দিয়া লাইন মারস আমার কি একটু খারাপ লাগে না।আমারো তো মন চাই তোর মত একটা গার্লফ্রেন্ড আমার থাকবে।আমাকে অনেক ভালবাসবে। অনেক জোরা-জোরি করার পর রিফাত আমাকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ইমা এর নাম্বার দিল। ইমা সম্পর্কে প্রথমে এতটা জানতাম ন।সে যাই হোক নাম্বার পেয়েছি মনে হচ্ছে আলাদিনের একটা প্রদিপ পেয়েছি।সাথে সাথে নিচে চলে গেলাম রির্চাজ করব বলে।১০০ টাকা রির্চাজ করেছি অনেকক্ষন কথা বলব।ফোন দিয়ে কি বলব আগে তো এমন কারও সাথে আগে তো কথা বলিনি।তো রাতে কল দিব ভাবলাম।সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেছে এসব ভাবতে ভাবতে।রিফাত যদি জানতে পারে এখনো কল দেইয়নি।আমার পেইসটিজ এর ১২x১২=২৪ টা বাজাবে।তো ৮ টায় কল দিলাম।
ঐ পাশ থেকে মিষ্টি একটা গলা শোনা গেল।
হ্যালো কে বলছেন?
কি বলব বুঝতেছি না।হাত-পা এর দিকে তাকালাম দেখি কাপছে।তো পেসটিজ এর কথা ভেবে সাহস করে বলেই ফেললাম ভূত এর রাজ্যের ভূত।
আপনি ভূত হোন আর জাই হোন কে আপনি কার কাছে ফোন দিছেন এবং কেন?
প্রথমের মিষ্টিগলাটা এমন তেতো হয়ে গেল নিমিষেই। আর কথা না বলে লাইন কেটে দিলাম।
সকালে একটা মেসেজ পাঠালাম।কোন রিপ্লাই আসলো না।আমি প্রতি ঘন্টায় মেসেজ পাঠাতাম।জানতে চাইতাম কি করছে আর ভালবাসার কিছু উক্তি তো আছেই।একদিন ওপার থেকে রিপ্লাই আসলো কে আপনি এত মেসেজ পাঠান কেন।সত্যি করে বলেনতো আপনি কে?
যাক ভাগ্যের লাড্ডু তাহলে ফেটেছে।তো শুরু করলাম এ জার্নি বাই প্রেম।
প্রতিদিন আমাদের কথা হতো।আমরা আমাদের সম্পর্কে সবই বলতাম।আমার আসল পরিচয় টা বাধে।আমি ইমা এর প্রতি আমার দুর্বলতা লক্ষ করলাম।সত্যি আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।যাই হোক ইমা যতদিন আমাকে না বলবে আমিও ওকে বলব না।তখন সময়টা ছিল ২০১১ সাল।আমি রাফি কে বললাম দোস্ত ইমার সাথে একদিন দেখা করিয়ে দিবি।
রাফি বলল কথা না বলিস তোরা নিজেরাই গিয়ে দেখা কর না।না দোস্ত আগে ওকে দেখব ও আমাকে দেখে পছন্দ করবে কিনা। তাই পরদিন রাফি এর সাথে ওর ভার্সিটিতে গেলাম।সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল রাফি।হঠাত একটা মেয়ে এসে বলল আরে দোস্ত তোর বউ কই কখন থেকে খুজতেছি।রাফি আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিল এটাই ইমা। এক পলকে তাকিয়ে রইলাম।এ যেন আকাশ থেকে নামানো এক অপরূপ সুন্দরী পরী।আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল রাফি।ইমা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শাকিল।ইমা তো মুখ চেপে হাসতে শুরু করল।রাফির কানে কানে কি জানি বলে হাসতে শুরু করল।পরে রাফির কাছে শুনতে পেরেছিলাম আমাকে আবুল বলেছে।
ইমাকে আর কল দেইয়নি রাগ করে তাই রাতে ইমা আমাকে মেসেজ করল কি আজ কোন মেসেজ পাঠাওনি কেন।রিপ্লাই দিলাম মেসেজ এর আজ অনেক মন খারাপ।ইমা আমার কথা শুনে আমাকে হাসানোর জন্য তার ভার্সিটিতে আজ দেখা আবুল মার্কাছেলেটির কথা বলছে।আমার তো গা টা আরও জ্বলে উঠছে।সে তো জানে না সেই ছেলেটিই আমি।আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না তাই লাইন কেটে মোবাইল এর সুইচ অফ করে ভাবতে লাগলাম।মনে পড়ে গেল শাহরুখ খানের রাব নে বানা দে জুড়ি ছবির কথা।আমাকেও স্মার্ট হতে হবে।বর্তমানের কথা ভেবে তো বাবাকে বললাম আমার এইভাবে ক্লাসে যেতে ভাল লাগে না।বাবা গ্রামের মানুষ সহজ সরল ছিল তাই যা চাইতাম তাই দিত।বাইক কেনার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিল।ভাল একটা বাইক কিনেফেললাম।কাটা-ছেড়া পেন্ট আরো কত কি।সবি ইমার জন্য।ওকে দেখাব আমার ভালবাসা কাকে বলে সংজ্ঞা সহ উদাহরন।আমার ভার্সিটিতে আমাকে নিয়ে সবার মুখে এখন আমার বিশাল পরিবর্তন এর কথা শুনা যায়।
ইমা আমাকে প্রায় বলত দেখা করতে কিন্তু সাহস হয়নি যদি সেই আবুল মনে করে আমাকে রুটির ছ্যাক দেই।ইমাকে বলতাম ভূতেরা দেখা করতে পারে না।দিন যত যায় আমাদের সম্পর্ক আরোও গভীর হতে থাকল।আজ তারিখটা ০৭-১১-২০১১।রাফি কে বললাম চল আজ আবার তোর ভার্সিটিতে যাব।আবুল যে সুপার ম্যান হতে পারে তার একটা প্রমান তো আমার দিতে হবে।যেই আবার তার ভার্সিটিতে গেলাম অন্যরা তো আমাকে আর আমার বাইক দেখে তাকিয়ে আছে কিন্তু যখন ইমার সামনে গেলাম।একটা হেব্বি মুডে দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু জানতাম না আবুল তো আবুলি।আবারও আমাকে দেখে হাসতে শুরু করল।আর এক মূহর্ত না।বাসায় এসে মোবাইল অফ করে শুয়ে পড়লাম।আজ ১০ তারিখ মোবাইল অন করলাম।দেখি মেসেজ এর অভাব নাই।সব গুলো পড়ে আমার তো অনেক ভাল লাগছে।সব গুলাই ছিল ইমার।রাফির কাছে ইমার কথা শুনতে গেলাম।রাফি বলল আজ ২দিন দরে দেখছি ও সবসময় আনমড়া হয়ে বসে থাকে।কারো সাথে কথা বলে না।আর কত দেরি করবি নিজের পরিচয়টা এখন দিয়ে দে।অনেক ভাবলাম যা হবার হবে এইবার বলেই দিব আমার নাম শাকিল।আর আমিই সে আবুল।আর দেরি না করে ইমাকে ফোন দিলাম।আমার লাইন কেটে দিচ্ছে আজব তো।আবার দিলাম কেটে দিচ্ছে।কিছুক্ষন পরে কল ধরল।ঐ পাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম।আমার খুব খারাপ লাগছে ওর কান্না দেখে।ওর কথা আমি তোমাকে খুন করব ভূত হয়েছো না।সামনে এসো একবার তোমাকে চাপড়াইতে চাপড়াইতে ভূতগিরি ছুটাব।অনেক কষ্ট করে তার রাগ থামালাম।ওকে নিজে থেকেই বললাম চল কাল দেখা করি।ও তো আমার কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারছে না।তো ঠিক আছে আমরা কাল পার্কে দেখা করব।তুমি একটা নীল শাড়ী পরে আসবা। আর আমি কি পরব বললাম না ইমা জানতে চাওয়ার পরেও।
পরদিন একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়লাম।কারন সাদা রঙ ইমা ও আমার খুব পছন্দ।বাসা থেকে বেরিয়ে ইমাকে ফোন দিলাম ইমা বলল ও আমার আগেই এসে পরেছে।এখন ৯ টা বাজে।আজ ১১ টা গোলাপ ফুল কিনলাম ইমাকে দেওয়ার জন্য।১০.৩০ বাজে এখন পার্কে প্রবেশ করলাম।ইমাকে খুজতেছি।অবশেষে পেলাম।নীল শাড়ীতে ওকে খুব সুন্দর লাগছে।আমাকে আসতে দেখে ও মুচকি মুচকি হাসতেছে।ওর কাছে গিয়ে বললাম আপনি আমাকে দেখলে এত হাসেন কেন।
ইমা বলল হাসি আসে তাই।ইমা আরো জিজ্ঞাসা করল আপনি আজ পার্কে কেন কেউ আছে নাকি।এই বলে আরো হাসতে লাগল।কিছু বললাম না এক পলকে তাকিয়ে রইলাম।এই যে মিঃ এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না।এই বলে ইমা মোবাইল বের করে কল দিতে লাগলো।১১.১১ বাজে  আমি ইমাকে বললাম ফুল গুলি একবার দরবেন ও দরল।
আমি ইমাকে ১১ বার I LOVE YOU বললাম।ইমা আমার কথা শুনে তো অবাক মোবাইলটা বের করে ওর কল রিসিভ করে বললাম আমাকে চিনতে পারছেন আমিই হচ্ছি সেই ভূতের রাজ্যের ভূত ।ইমার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করল।আমাকে কিছু না বলে ওঠে চলে যেতে লাগল।আমি বসে পরলাম আর ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছুক্ষন পর আমার পাশে কে যেন এসে বসল।এই যে মিঃশাকিল ওরফে ভূতের রাজ্যের ভূত আমাকে চিনতে পারছেন।আমি ইমা না আমি ইমার পেত্নী।এখন তোমার রক্ত পান করব আবুল ভূত কোথাকার।এই বলে ওর মাথাটা আমার বাহুর সাথে জড়িয়ে ধরল।
আজ প্রায় ১ বছর হয়ে গেছে।আজ ১১-১২-১২ তারিখ আজ আমাদের বিয়ে।এখন রাত ১২ বাজে ওকে১২.১২ তে আবারো সেই দিনের কথা মনে করিয়ে  গুনে গুনে ১২টা গোলাপ দরিয়ে ১২ বার I LOVE YOU বললাম. ওর কান্নাবেজা চোখে অপলক দৃষ্টিতে সুখের আবেশে ও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
তাই সবসময় বলি ইমাকে ভালবাসি তাই ভালবেসে যাই।

(আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন)