আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

আজ অনেকদিন পর রাতে ছাদে বসে আছে নাবিলা। সে সচরাচর রাতে ছাদে আসেনা কিন্তু আজ একটি বিশেষ দিন। আজ নাবিলার জন্মদিন। আগে জন্মদিনের দিনটা ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় দিন। এই দিন বাবা-মা, মামা-খালা, কাজিনরা সবাই একসাথে হয়ে সেলিব্রেট করতো। ছোট্ট নাবিলা সবার স্নেহ-ভালবাসার কেন্দ্রে থাকতো।
কিন্তু আজ আর সেই সময় নেই। ওর মায়ের মৃত্যুর পর তার জীবন অবিশ্বাস্য ভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের কাছের মানুষদের অনেকেই আজ
দূরে চলে গেছে। মানুষের ভালো সময়ের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে যায়। সে এখন আর আগের মত নেই। সারাদিনের হাসিখুশি,হাস্যোজ্জ্ব­ল,চঞ্চল নাবিলাকে কবর দিয়ে নতুন নাবিলার জন্ম
নিতে হয়েছে। একদম চুপচাপ ঠান্ডা এক নাবিলা।

নাবিলার মা রাজিয়া আহমেদ মারা গেছেন অনেক বছর হলো। ব্লাড ক্যান্সার তাকে নাবিলার কাছ
থেকে কেড়ে নিয়েছে। রাজিয়া আহমেদের শেষ সময়টা বেশ কষ্টেরই ছিল। ক্যান্সার ধরা পরার পর
একমাত্র ট্রিটমেট ছিল ৩ মাস পর পর রক্ত পাল্টানো। নাবিলার বাবা আতিকুর আহমেদ একজন
বড় মাপের ব্যবসায়ী। স্ত্রীর চিকিত্সার কোন ত্রুটি তিনি করেন নি। তবুও যে যাওয়ার সে তো চলে যাবেই। তিনিও চলে যান।রেখে যান সদ্য
কিশোরে পা দেয়া অবুঝ এক মেয়েকে। আতিকুর আহমেদ স্ত্রীর মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে পারেন নি।
বিষন্নতায় ভুগে অনেকটা পাগলামীই শুরু করেন। ছেলের এরকম আচরণ দেখে আতিকুরের
বাবা তাকে আবার বিয়ে দেন। বিয়ের পর আস্তে আস্তে তিনি সুস্থ হতে থাকেন। একসময় পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠেন। দ্বিতীয় সংসারে তার দুটো ছেলেও আছে। চারজনে দিব্যি ভালো জীবন
কাটাচ্ছে।

সত্ মায়ের কাছে নাবিলাকে রাখতে রাজি হননি তার নানা আবদুল করিম। নিজের কাছে নিয়ে আসেন নাতিনকে। নিজের কাছে রেখেই বড় করে ওকে তোলেন।

সকালে আতিকুর আহমেদ নাবিলাকে ফোন দিয়ে উইস করেছে। সকালে পি.এস কে দিয়ে গিফটও পাঠিয়েছেন।
বাবার ফোন এখন আরে ভালো লাগে না। গিফটটা খুলেও এখনো দেখা হলো না। সত্ ভাইয়েরাও ফোন দিয়েছে। ওদের সাথে আগে সম্পর্ক ভালো ছিল।
এখন আর ভালো নেই। ওদের সাথেও
কথা বলতে ভালো লাগে না। ওদের কথায় আবেগ নেই,
সামাজিকতার করুন বাধ্যবাধকতা আছে। সারাদিনের
অনেকগুলো অনিচ্ছাকৃত ফোনে উইস,আর টেক্সট ম্যাসেজ পড়ে এখন সে ক্লান্ত। রাতের আঁধারের
নিস্তব্ধতায় ক্লান্তি গুলো হারিয়ে যেতে চায়। জীবন থেকে ক্লান্তি ঝেরে ফেলা দরকার।

হঠাত করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি নাবিলার খুব প্রিয়। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছে সে। ওর
মা ও বৃষ্টি ভালবাসতেন। মায়ের রুম
থেকে যে ডায়রী পেয়েছিল সেখানে লেখা আছে। বৃষ্টিতে ভেজার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই যে, বৃষ্টির পানিতে চোঁখের জল বোঝা যায় না। এসময়
কাঁদলে কেউ বুঝতে পারে না। তাই এসময় প্রায়ই কাঁদে সে, কেউ তা বুঝতে পারে না। এখন
কাঁদতে ইচ্ছে করছে না বরং জন্মদিনের
সবচেয়ে সুন্দর উপহার পেয়ে সে খুব খুশি। বৃষ্টি অসম ধারায় সে ভিজেই যাচ্ছে। চোঁখ বন্ধ করে সে কল্পনার দুনিয়ায় হারিয়ে গেল। সেখানে ওর
মা আছে। নাবিলা ছাদে ভিজছে আর তার মা দূর থেকে তাকে বকুনি দিচ্ছে।
সে মাকে বৃষ্টিতে নিয়ে এলো। মা-মেয়ে দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজছে।
কল্পনা থেকে সে বাস্তবে ফিরে আসে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় সে মায়ের ভালবাসা খোঁজ করছে।
মায়ের ভালবাসা খোঁজ করতে হয় না। এদের ভালবাসা নিঃস্বার্থভাবে সহজলভ্য। কিছু মানুষ এটা পেয়েও বোঝে না আর কিছু মানুষ প্রতিটা মুহূর্তে এ ভালবাসার খোঁজ করে যায়।

লিখেছেনঃ Nahid Amin

ভালবাসার গন্ধ

ভালবাসার গন্ধ
লিখেছেন- মুহাইমিনুল ইসলাম অভি

আজ অনেকদিন পর দেখা সুমীর সাথে। এখনো আগের মতোই আছে সুন্দর, স্নিগ্ধ। এইতো আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে, রাস্তার ওপাশেই। ভার্সিটিতে আমার ডিপার্টমেন্ট ছিলো এপারেল আর ওর ইয়ার্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সবাই যখন সবার সাথে নতুন বন্ধুত্ব পাতাতে মশগুল আমার তখন ত্রাহি অবস্থা। একে তো সবার সাথে মিশতে পারি না তার উপর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজনের আগমন, বিভিন্ন উচ্চারণের কথাবার্তা আমাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তাই যখন ভার্সিটি লাইফের দুইমাস পার করার পরও অন্যদের বন্ধুর সংখ্যা দুই অঙ্ক ছুয়ে ফেলেছে আমার তখন কোন বন্ধু নাই। ক্লাসে যাই, ক্লাস করি, বাসায় ফিরে আসি। এইভাবেই চলছিলো। একদিন বারান্দা দিয়ে হাঁটছি তখন ইয়ার্নের রুম থেকে ডাক, এই এইদিকে আয় তো। যা বিটাক মোড় থেকে আমার জন্য এই নোটটা ফটোকপি করে এনে দে। আমিও আদেশ পালনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। শত হোক বড় আপু বলে কথা। ভার্সিটিতে সিনিয়রদের কথা অগ্রাহ্য করবে এমন সাহস কার আছে? তো আমিও ছুট দিলাম, নোট কপি করার জন্য।
আমার সিনিয়র যিনি আমাকে নোট ফটোকপি করতে দিয়েছিলেন তারই নাম সুমী। আমার অবশ্যই তাঁকে আপু বলে ডাকা উচিত কিন্তু কি করবো বলুন, আপু বলে ডাকতে তো মন সায় দেয় না ।
ঐদিন নোট কপি করে এনে দেওয়ার পর ও মিষ্টি করে হেসে যখন থ্যাংক ইউ বলেছিলো তখন আমাকে আর পায় কে? এরপর প্রতিদিনই ওর সাথে দেখা হতো। ওর টুকিটাকি কাজ করে দিতাম। ওর কাজ করতে আমার বেশ আনন্দই হতো। এভাবে দেখা হতে হতে আর কথাবার্তা বলতে বলতে ওর সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। ও একটা পারফিউম মাখতো, বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ ছিলো ওটার। ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় যাওয়া লাগতো তখন ওর জন্য রিকশা করে দেয়ার দায়িত্বটুকু আমার। ক্যাম্পাস থেকে মোড় পর্যন্ত হেঁটে আসার সময়টাই ছিলো আমার দিনের সবচেয়ে আনন্দময় উপলক্ষ। এসময় আমরা পাশাপাশি হাঁটতাম। সারাদিনের ব্যস্ততার সাথে ওর পারফিউমের গন্ধ মিলে এক বুনো গন্ধ তৈরি করতো। ভার্সিটি বন্ধের দিনও আমি এই বুনো গন্ধ খুঁজে বেড়াতাম, বন্ধের দিনেও ক্যাম্পাসে চলে যেতাম এই বুনো গন্ধটার টানে।
এভাবেই চলছিলো বেশ। দিন দিন ভালোবাসার গাছটা মনের মধ্যে আরো শেকড় গেড়ে বসলো। দিন দিন গাছের শাখা প্রশাখা বাড়তেই থাকলো। একদিন শুনলাম কোন এক ভাইয়ার সাথে নাকি ওর রিলেশন চলছে। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। কথাচ্ছলে একদিন বলেই ফেললাম ঐ ভাইয়ার সাথে ওর রিলেশনের কথাটা। মুচকি হাসি দিয়ে ওর উত্তর তুই এটা এতোদিন পরে জানলি?
কিছুই ভালো লাগতো এরপর থেকে। সবসময় চাইতাম এড়িয়ে চলতে। দেখা হলেও খুব একটা কথা বলতাম না। একদিন ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলো ভাইয়ার সাথে। ভাইয়া ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। আমাদের ভার্সিটির টপারদের একজন। জি স্টারের সাথে অলরেডি চুক্তি হয়ে গেছে। পাশ করে বেরোলেই চাকরি। ভার্সিটিতে যতোদিন ছিলাম ততোদিনই ওর কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যেতো ।
সময়ের চেয়ে বড় স্বার্থপর আর কেউ নেই। ও কারো পরোয়া করে না। স্বার্থপর সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরাও স্বার্থপর হয়ে ওঠি, আর তখনই ভালোবাসা আবেগ একপাশে সরে যায়। আস্তে আস্তে আমিও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠি আর ভালোবাসা একপাশে সরে যায়। কিন্তু ওকে ভোলা কখনো সম্ভব ছিলো না কিংবা ভোলার চেষ্টাও করিনি হয়তো ।
আজ অনেকদিন পর ওকে দেখে বেশ আনন্দ লাগছিলো। কাছে যেতেই ঐ বুনো গন্ধটা ঝাপটা মারলো নাকে। আহ!কতদিন পর পরিচিত গন্ধটা আবার পেলাম।
সুমী আপু, কেমন আছো?
ঘুরে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, আরে তুই কেমন আছিস?
ভালো, এই স্কুলের সামনে দাড়িয়ে কি করছো?
আরে আমার মেয়েটা এই স্কুলে পড়ে, এ বছরই ভর্তি করালাম।
বেশ ভালো। তো কি করছো? ইন্জ্ঞিনিয়ারিং ফলাচ্ছো কোথাও না পুরোপুরি হাউজওয়াইফ।
নারে এখন পুরোপুরি হাউজওয়াইফ। চল, বাসায় যাই । তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করবি। ওর দুপুরে আসার সময় হয়ে গেলো। পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা কর। স্কুলটা এখনই ছুটি হয়ে যাবে।
আরে আপু আজকে যাওয়া তো অসম্ভব । কাজ আছে । তুমি তোমার বাসার ঠিকানা দিয়ে যাও আমি অবশ্যই তোমার বাসায় যাবো কথা দিলাম।
কি কাজ এতো? আচ্ছা এই নে ঠিকানা । বাসায় আসিস কিন্তু । যাই রে এখন । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ।
আচ্ছা ঠিক আছে । যাও, আসবো বাসায় ।
চলে যাচ্ছে সুমী । আমি এই দুপুরের চিড়বিড় রোদে ঠিকানা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি । একদম খারাপ লাগছে না । বরং ভালোই লাগছে । শুধু সুমীকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে, খুব ইচ্ছা করছে, সুমী তুমি জানো কি এখনো সময় পেলে আমি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে যাই তোমার বুনো গন্ধটার খোঁজে।

কল্পনা বিলাসিনী

কল্পনা বিলাসিনী
লিখেছেনঃ salma suma

ভেবেছিলাম খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠব... না তা আর হলো না ... আজ ও উঠতে উঠতে ১0 টা বেজে গেল প্রতিদিন যে রকম হয় আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না।
আজ একটা স্পেশাল দিন তাই সব কিছুই স্পেশাল মনে হচ্ছে... ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা সেরে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম ।
আমার সামনে একটা মেয়ে বসে আছে অনেকক্ষন ধরে ... মেয়েটা একা ... দেখে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে কারন মেয়েটা বার বার হাত ঘড়ি দেখছিল
এভাবে কাটছিল সময় ... হঠাত দেখলাম কিছু খারাপ ছেলের নজর পড়েছে মেয়েটার দিকে... তাই এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে... মেয়েটার কাছে গিয়ে দাড়াতেই মেয়েটা আমার দিকে তাকাল এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ।
মেয়েটা একটু শ্যামলা প্রকৃতির... চুলগুলো এলোমেলো... লাল রঙের শাড়ি পড়েছে... খোপায় পড়েছে লাল গোলাপ... খুব সুন্দর করে সাজগোজ করেছে... খুর সুন্দর লাগছে দেখতে... দেখলে যে কোন ছেলেই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাবে।
আমি হটাত্‍ করে বললাম
-আপনি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন ?
-আপনাকে কেন বলব ?
-না অনেকক্ষন ধরে একা একা বসে আছেন ।
-তাতে আপনার সমস্যা কি ?
-না আমার মনে হচ্ছে আপনি যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে এসে ফিরে গেছে ।
-মানে কি আর আপনি কি করে জানলেন ?
-আপনি যখন ফোন দিলেন তখন দেখলাম একটা ছেলে পকেট থেকে ফোন বের করল... ছেলেটা আপনার কাছে এসে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আপনাকে দেখে চলে গেল...

আজ কি আপনাদের প্রথম দেখা করার কথা ছিল ?
-হ্যা আজ ই আমাদের প্রথম দেখা করার কথা ছিল । আচ্ছা ও কি কালারের শার্ট পড়ে এসে ছিল ?
-লাল কালারের শার্ট
-হ্যা । ওর তো লাল শার্ট ই পরে আসার কথা ছিল । দেখতে কেমন ?
-আমিতো ভাল করে খেয়াল করিনি তবে কিছুটা আমার মতোই । আমার মতো উচ্চতা,গায়ের রঙ ও আমার মতোই ।
-কি বলছেন এসব ...না ও এমন হতে পারে না... আপনার মতো কালো, খাট ও হতেই পারে না । আমার ভালোবাসার মানুষ হবে অনেক সুন্দর আর অনেক লম্বা।
-কিন্তু আমি তো শুনেছি প্রেমিকাদের কাছে তার প্রেমিক সব সময় ই সুন্দর ।
-হতে পারে । কিন্তু আমার প্রেমিক আমার মনের মত হতে হবে আমি যে রকম চাই সে রকম হতে হবে ।
এই কথাগুলো শোনার পর আমি চলে এলাম পার্কের বাইরে...পকেট থেকে সাইলেন্ট করা মোবাইল বের করে দেখি ৭৯ টা মিসকল।
আমি ফোন দিলাম
-হ্যালো
-তুমি কোথায় ?
-পার্কের বাইরে ।
-পার্কের বাইরে কি কর?তাডাতাড়ি ভেতরে আস।আমি কতক্ষন ধরে একা একা বসে আছি।
-আমি তো ভেতর থেকেই বাইরে আসলাম এইমাত্র । একটু আগে যার সাথে কথা বলছিলে ওটা ই আমি । তুমি থাকো তোমার মত আর খুজে নিও তোমার মনের মত কাউকে... ভালো থেকো ।
আর আমিও হাটতে থাকলাম সামনের দিকে আমার মনের মত কাউকে খুজে পাবার আশায় ।