'নিঃশব্দ ভালবাসা' আকাশ
কিছুটা মেঘলা হয়ে আছে । পার্কে তাই তেমন কোন মানুষ নেই এখন । নিঃশব্দা
পার্কের একটি ব্যাঞ্চে চুপচাপ বসে আছে । কি যেন ভাবছে সে । আকাশের দিক থেকে
চোখ সরিয়ে পাশের ব্যাঞ্চে বসে থাকে দুজন তরুণ তরুণীর দিকে তাকাল
সে । হঠাত্ করে কি যেন তার মনে পরে গেল । চোখের কোনে অশ্রুকণা জমতে শুরু করল তার । প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার । কিন্তু
বাইরে বলে কাঁদতে পারছে না । অস্তে করে চোখ বন্ধ করলো নিঃশব্দা । একটি অশ্রু কণা এসে তার হাতে পরলো । খুব নিঃশ্ব লাগছে নিজেকে তার । মনে হচ্ছে যেন সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে । নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে তার । নিজেকে বার বার
ধিক্কার দিচ্ছে সে । তিন বছর আগেও তার সুযোগ
ছিল । কিন্তু সে বুঝতে পারে নি । আজ বড় একা সে ।
চোখ দুটো খুললো নিঃশব্দা । চোখ
আবারো ঝাপসা হয়ে আসছে তার । কি ছিল আর সে আজ কি হয়েছে । তিন বছর আগে নিঃশব্দা প্রানবন্তর একটি মেয়ে ছিল
। পড়াশুনা আর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সময় কাটাতো । কিন্তু কি হতে যেন কি হয়ে গেল তার । সব
কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে তার জীবনে । এখন আর কিছুই ঠিক নেই ।
(তিন বছর আগে)
'প্রারম্ভিকা'
নিঃশব্দা চুপচাপ অনলাইনে বসে আছে । কেউ নেই ।
হঠাত্ মনে হল তার কেউ একজন অনলেইনে ঢুকেছে ।
তাকিয়ে দেখলো জিসাত ঢুকেছে ।
সাথে সাথে মুখে বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠলো তার ।
জিসাত কয়েক মাস যাবত তার সাখে কেমন যেন
ব্যবহার করছে । নিঃশব্দার তা মোটেও ভাললাগে না ।
নিঃশব্দা বুঝতে পেরেছে যে জিসাত তার
প্রেমে পরেছে । কিন্তু নিঃশব্দা এটা মোটেও চায়না ।
জিসাত আর নিঃশব্দা খুবই ভাল বন্ধু । বন্ধুক্তের
মাঝখানে সে এই প্রেম ভালবাসা আনতে চায় না । আর
নিঃশব্দা অন্য এক জনকে ভালবাসে । অবশ্য সেই
ছেলে নিঃশব্দাকে ভালবাসে কিনা সেটা নিঃশব্দা জানে না ।
নিঃব্দার কাছে মনে হয় সেই
ছেলেটি তাকে হয়তো তাকে ভালবাসে না ।
নিঃশব্দা জানে ছেলেটি সেটা বুঝে যে নিঃশব্দা তাকে ভালবাসে ।
কিন্তু কেন যেন ছেলেটি তাকে দুরে সরিয়ে রাখে । আর
আরেক জন আছে যে কি না নিঃশব্দার জন্য পাগল
হয়ে আছে । এসব ভাবতে ভাবতে নিঃশব্দা খেয়াল
করলো জিসাত এতক্ষনে তাকে চ্যাট করার জন্য
আমন্ত্রন জানিয়েছে ।
-"কেমন আছিশ ?" জিসাত লিখে পাঠালো ।
নিঃশব্দা তার নিজের চোখ উল্টে লিখলো , "ভাল ।"
-"কি করছিশ ?"
কিছুটা বিরক্ত হয়েই নিঃশব্দা তাকে বললো ,
"নাচতেছি ।"
জিসাত হাসতে হাসতে বললো , "আর কি করছিশ ?"
-"আর গান গাইছি ।"
-"কি গান ?"
-"ঐ যে তপুর নতুন অ্যালবামের গান বের
হলো না আনিলা সহ গানটা গেয়ে ছিলো । সেই গানটা ।
'এক পায়ে নুপূর আমার অন্য পা খালি' গানটা ।"
একটু হেসে জিসাত লিখলো , "কিন্তু আমিতো তোর
পায়ে জুতা দেখছি ।"
নিঃশব্দা অবাক হয়ে গেল , ও
কি করে জানে যে সে পায়ে জুতা পড়ে আছে ! সে জিসাত
কে কৌতহলী হয়ে জিজ্ঞাস করেই ফেললো , "জিস্ , তুই
কি করে জানলৈ ?" জিসাত তখন হেসে বললো , "তোর
প্রো পিক এই দেওয়া আছে ।"
আরে তাই তো নিঃশব্দা এতোক্ষন খেয়ালই করে নি ।
তার প্রো পিক এ একটি মেয়ে বই এর দোকানের
সামনে দারিয়ে আছে । আর তার পায়ে এক
জোরা কফি রং এর জুতা ।
নিঃশব্দা মনে মনে নিজেকে কিছুক্ষন বকলো । প্রচন্ড
রাগ উঠছে তার । সে কেন এতক্ষন খেয়াল করেনি !
কিছুক্ষন চুপ থেকে নিঃশব্দা লিখলো , "ঠিক
আছে আমি এখন বিদায় নিচ্ছি । পড়তে বসতে হবে ।
আর তুইও পড়তে বস । পরে কথা হবে । বাই"
জিসাতের কোন উত্তরের আশা না করেই অফলাইন
হয়ে গেল নিঃশব্দা ।
জিসাত ড্রইংরুমে তার লেপটপ নিয়ে বসে আছে ।
তার মনের আকাশে এখন রোদ মেঘ দুটোই আছে ।
নিঃশব্দার সাথে কথা বললে তার মন এমনিতেই অনেক
ভাল হয়ে যায় । কিন্তু আজ সে চেয়েছিলো তার
অনুভুতিটা নিঃশব্দার কাছে তুলে ধরতে । কিন্তু
কিভাবে শুরু করবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না ।
আর এমনিতেই তারা দুজন খুব ঝগরা করে ।তাদের
বন্ধুক্তটাও ঝগড়ার মাধ্যমে হয় ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে দিন নিঃশব্দাকে দেখেছিল ,
জিসাত সে দিনই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল তার । কিন্তু
তার পরেও তখন বুঝতে দেয় নি তাকে । আজ যখন
তার যাওয়ার সময় হয়েছে তখন বোঝানোর
চেষ্টা করেও পারছে না । আর বলতেও পারছে না কোন
কিছু তাকে । কি করে বলবে , জিসাত তো শুধু তার
সাথে ঝগড়া করে । সব সময় খেপায় নিঃশব্দাকে ।
নিঃশব্দা খুব মিষ্টি একটা মেয়ে । খুব সুন্দর
করে কথা বলে । তার কথার মধ্যে এক ধরনের
চঞ্চলতা আছে । আর এই চঞ্চলতাই
জিসাতকে নিঃশব্দার কাছে আরো টেনে এনেছে ।
নিঃশব্দার টানা টানা চোখ যেন তাকে আরো পাগল
করে ফেলে । আর
দুষ্টমি ভরা কথাতে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে থাকে সে ।
সব মিলিয়ে জিসাতের চোখে খুব সুন্দর
একটা মেয়ে নিঃশব্দা ।
এতো সুন্দর বলেই জিসাত ভয় পায় , এই
মেয়ে যদি অন্য কারো হয়ে যায় । সে যদি অন্য
কাউকে পছন্দ করে ফেলে । এ জন্য সে যত
তারাতারি সম্ভব তাকে তার মনের
কথাটি জানিয়ে দিতে চায় । আরতো কয়েক মাস ।
মার্স্টাস করার জন্য আবার বিদেশ চলে যেতে হবে ।
তখন তো আর সুযোগ পাবে না সে ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য তার , আজও
পারলো না সে নিঃশব্দাকে মনের কথা জানাতে । একেক
সময একেকটা বাধা আসে । কি করে বলবে সে তার
মনের কথা নিঃশব্দাকে ! বুঝতে পারে না সে কিছুতেই ।
নিজের উপর রাগ উঠে তার । আবার পরক্ষনেই
নিঃব্দার কথা মনে করে রাগটা উবে যায় । তবে আর
যাই হোক , বলতেই হবে তাকে । জিসাত
ভাবে কি করে তার মনের কথা নিঃশব্দাকে বলবে । যত
তারাতারি সম্ভব তাকে বলতেই হবে । আরতো কয়েক
মাস পরেই সে USA চলে যাবে ।
জিসাত লেপটপটা বন্ধ করলো ।
আরমোরা দিয়ে উঠলো সোফা থেকে । ড্রইংরুম
থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে গেল জিসাত । বারান্দার
গ্রীল ধরে বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলো ।
আকাশে কিছু মেঘ জমেছে । মেঘ গুলোর
দিকে তাকিয়ে জিসাত যেন তার ছোটবেলার
স্মৃতিতে ডুবে গেল । মেঘগুলোতে যেন সে ছোটবেলার
সকল স্মৃতি খুজে পাচ্ছে।
খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলো নিঃশব্দার । আজ
এতো তারাতারি ঘুম ভাঙ্গাতে লেপটপ
নিয়ে বসলো সে । অনলাইন হতে না হতে আবার
জিসাতের আক্রমন । হ্যালো , হাই বলার পর জিসাত
হঠাত্ নিঃশব্দাকে বললে ,
- "আচ্ছা নিশ্ , তুই আমার সাথে USA যাবি ?"
নিঃশব্দা অবাক হয়ে বললো , "কেন ? আমি তোর
সাথে USA যাবো কেন ?"
- "না মানে , আমি যদি তোকে আমার
সাথে নিয়ে যাই !"
- "আশ্চর্য ! আমি তোর সাথে USA কেন যাব ?"
নিঃশব্দা খুব বিরক্ত হল । জিসাতের মতলব কি ?
মনে মনে ভাবল সে । তার পর আবার বললো , "আমার
বাংলাদেশ ভাললাগে , আমি আমার বাংলাদেশেই থাকব ।
আর যদি আমার USA তে যেতেই হয়
আমি নিজে আসতে পারব । তোর সাথে আমি কেন
যাব ?"
জিসাত অনেক্ষন চুপ করে থেকে শেষের দিকে বললো ,
"আমাকে এখান জরুরি একটা কাজে বাইরে যেতে হবে ।
তোর সাথে পরে কথা হবে । বাই"
এই বলে জিসাত অফলাইন হয়ে গেল ।
নিঃশব্দা কিছুই বুঝতে পারলো না । আর বুঝতেও চায়
না সে । কেন বুঝবে সে ? বুঝে লাভ কি ? সে এখন
কিছুই বুঝতে চায় না । সব কিছু ভুলে গুণ্ গুণ্ করে গান
গাইতে লাগলো নিঃশব্দা -
-"যদি অজানা মনে খোজ আমায়
তাকাবেনা তবু চোখ চলে যায় আমার পানে -- ।"
'অদ্ভুত মেয়ে তো । এতো ইঙ্গিত দেই তার পরও
বোঝে না ।' জিসাত মনে মনে বির বির করছে । তার
পর আবার ভাবলো , 'নাহ্ থাক , মেয়েরাতো এমনই ।
কখনই তারা তাদের মনের কথা মুখ ফুটে বলে না ।
যা বলার ছেলেদেরই বলতে হয় । কিন্তু কি করা যায়
এখন ?
কিভাবে বলবো কথাটি যে আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি ।
নাহ্ , তুই করে বলবো না । তুমি করে বলবো । যাহ্ ,
সে যদি কিছু মনে করে ! পরে যদি আমার সাথে আর
কথাই না বলে !' জিসাত
ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাচ্ছিল ।
এমন সময় জিসাতের মা তার ঘরে ঢুকলো ।
- "কিরে ! কি নিয়ে চিন্তা করছিশ এতো ? এমন
করে মাথা চুলকাচ্ছাশ কেন ?"
- "মা , খুব জটিল একটা পরীক্ষা দিতে হবে ।
কি ভাবে দিব সেটাই চিন্তা করছি ।"
- "কি এমন জটিল পরীক্ষা যে আমার সোনামানিক
কে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ? কি রকম পরীক্ষা ?
- "মা , ও তুমি বুঝবে না । অন্য এক বিষয় এর ।
এটা তোমার বোঝার বিষয় না ।"
- "হুম । বড় হয়েছিশতো , এখন আমাকে বলবিই
বা কেন । যাই হোক , এখন পর্যন্ত
প্রত্যেকটি পরীক্ষার ফল যেমন ভাল করেছিশ ,
দোয়া করি এবারেরটাও যেন সেই রকমই ভাল হয় ।"
জিসাত তার মাকে জরিয়ে ধরে বললো , "দোয়া কর
মা , তোমার ছেলে যেন সকল কিছুতেই জয়ি হয় ।"
- "অবশ্যই , মা বাবারা তো সব সময় সন্তানদের
জন্যই দেওয়া করে ।"
এর পর জিসাত বলল , "ঠিক আছে মা , এখন তুমি যাও
। আমি আরেকটু চিন্তা করি পরীক্ষা নিয়ে ।
- "আরে তোকে তো আসল কথাটাই বলে হয় নি ।
যে কারনে এসেছিলাম । তোর জন্য একটা ভাল
পাত্রী দেখেছি ।খুব সুন্দরী মেয়েটি । নম্র , ভদ্র ,
লেখাপড়ায় ভাল । তোর সাথে ভালই....." মাঝ খান
দিয়ে কথা আটকিয়ে জিসাত তার মা কে বললো , "মা ,
তোমাকে না কতবার বলেছি , এখন আমি বিয়ে করব
না । আগে পড়ালেখা শেষ করি তার পর নিজের
ক্যারিয়ার গঢ়ে তুলি । তার পর দেখা যাবে ।"
- "দেখা যাবে মানে ? আমি কি আর তত দিন বাচঁবো ?
যদি মরে যাই !"
- "মা , তুমি মরবে না । তোমার জন্য আমি তখন
একটা হুলপরী এনে দেব ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে , ঠিক আছে । তাহলে আমি আর
এই প্রস্তাবে এগুই না । তুই যা ভাল মনে করিশ তাই
হবে ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আমাকে একটু ভাবতে দাও
কিভাবে পরীক্ষাটা দিব ।"
- "হেরে , প্রশ্ন কি খুব কঠিন হবে ?
পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাকে বলিশ ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে মা । এখন যাও তো ।"
জিসাতের মা রুম থেকে বের হয়ে গেল । জিসাত আবারও
নিঃশব্দার কথা চিন্তা করতে লাগলো ।
বিকেলের আবহাওয়া আজ খুব সুন্দর ।
সে । হঠাত্ করে কি যেন তার মনে পরে গেল । চোখের কোনে অশ্রুকণা জমতে শুরু করল তার । প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার । কিন্তু
বাইরে বলে কাঁদতে পারছে না । অস্তে করে চোখ বন্ধ করলো নিঃশব্দা । একটি অশ্রু কণা এসে তার হাতে পরলো । খুব নিঃশ্ব লাগছে নিজেকে তার । মনে হচ্ছে যেন সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে । নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে তার । নিজেকে বার বার
ধিক্কার দিচ্ছে সে । তিন বছর আগেও তার সুযোগ
ছিল । কিন্তু সে বুঝতে পারে নি । আজ বড় একা সে ।
চোখ দুটো খুললো নিঃশব্দা । চোখ
আবারো ঝাপসা হয়ে আসছে তার । কি ছিল আর সে আজ কি হয়েছে । তিন বছর আগে নিঃশব্দা প্রানবন্তর একটি মেয়ে ছিল
। পড়াশুনা আর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সময় কাটাতো । কিন্তু কি হতে যেন কি হয়ে গেল তার । সব
কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে তার জীবনে । এখন আর কিছুই ঠিক নেই ।
(তিন বছর আগে)
'প্রারম্ভিকা'
নিঃশব্দা চুপচাপ অনলাইনে বসে আছে । কেউ নেই ।
হঠাত্ মনে হল তার কেউ একজন অনলেইনে ঢুকেছে ।
তাকিয়ে দেখলো জিসাত ঢুকেছে ।
সাথে সাথে মুখে বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠলো তার ।
জিসাত কয়েক মাস যাবত তার সাখে কেমন যেন
ব্যবহার করছে । নিঃশব্দার তা মোটেও ভাললাগে না ।
নিঃশব্দা বুঝতে পেরেছে যে জিসাত তার
প্রেমে পরেছে । কিন্তু নিঃশব্দা এটা মোটেও চায়না ।
জিসাত আর নিঃশব্দা খুবই ভাল বন্ধু । বন্ধুক্তের
মাঝখানে সে এই প্রেম ভালবাসা আনতে চায় না । আর
নিঃশব্দা অন্য এক জনকে ভালবাসে । অবশ্য সেই
ছেলে নিঃশব্দাকে ভালবাসে কিনা সেটা নিঃশব্দা জানে না ।
নিঃব্দার কাছে মনে হয় সেই
ছেলেটি তাকে হয়তো তাকে ভালবাসে না ।
নিঃশব্দা জানে ছেলেটি সেটা বুঝে যে নিঃশব্দা তাকে ভালবাসে ।
কিন্তু কেন যেন ছেলেটি তাকে দুরে সরিয়ে রাখে । আর
আরেক জন আছে যে কি না নিঃশব্দার জন্য পাগল
হয়ে আছে । এসব ভাবতে ভাবতে নিঃশব্দা খেয়াল
করলো জিসাত এতক্ষনে তাকে চ্যাট করার জন্য
আমন্ত্রন জানিয়েছে ।
-"কেমন আছিশ ?" জিসাত লিখে পাঠালো ।
নিঃশব্দা তার নিজের চোখ উল্টে লিখলো , "ভাল ।"
-"কি করছিশ ?"
কিছুটা বিরক্ত হয়েই নিঃশব্দা তাকে বললো ,
"নাচতেছি ।"
জিসাত হাসতে হাসতে বললো , "আর কি করছিশ ?"
-"আর গান গাইছি ।"
-"কি গান ?"
-"ঐ যে তপুর নতুন অ্যালবামের গান বের
হলো না আনিলা সহ গানটা গেয়ে ছিলো । সেই গানটা ।
'এক পায়ে নুপূর আমার অন্য পা খালি' গানটা ।"
একটু হেসে জিসাত লিখলো , "কিন্তু আমিতো তোর
পায়ে জুতা দেখছি ।"
নিঃশব্দা অবাক হয়ে গেল , ও
কি করে জানে যে সে পায়ে জুতা পড়ে আছে ! সে জিসাত
কে কৌতহলী হয়ে জিজ্ঞাস করেই ফেললো , "জিস্ , তুই
কি করে জানলৈ ?" জিসাত তখন হেসে বললো , "তোর
প্রো পিক এই দেওয়া আছে ।"
আরে তাই তো নিঃশব্দা এতোক্ষন খেয়ালই করে নি ।
তার প্রো পিক এ একটি মেয়ে বই এর দোকানের
সামনে দারিয়ে আছে । আর তার পায়ে এক
জোরা কফি রং এর জুতা ।
নিঃশব্দা মনে মনে নিজেকে কিছুক্ষন বকলো । প্রচন্ড
রাগ উঠছে তার । সে কেন এতক্ষন খেয়াল করেনি !
কিছুক্ষন চুপ থেকে নিঃশব্দা লিখলো , "ঠিক
আছে আমি এখন বিদায় নিচ্ছি । পড়তে বসতে হবে ।
আর তুইও পড়তে বস । পরে কথা হবে । বাই"
জিসাতের কোন উত্তরের আশা না করেই অফলাইন
হয়ে গেল নিঃশব্দা ।
জিসাত ড্রইংরুমে তার লেপটপ নিয়ে বসে আছে ।
তার মনের আকাশে এখন রোদ মেঘ দুটোই আছে ।
নিঃশব্দার সাথে কথা বললে তার মন এমনিতেই অনেক
ভাল হয়ে যায় । কিন্তু আজ সে চেয়েছিলো তার
অনুভুতিটা নিঃশব্দার কাছে তুলে ধরতে । কিন্তু
কিভাবে শুরু করবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না ।
আর এমনিতেই তারা দুজন খুব ঝগরা করে ।তাদের
বন্ধুক্তটাও ঝগড়ার মাধ্যমে হয় ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে দিন নিঃশব্দাকে দেখেছিল ,
জিসাত সে দিনই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল তার । কিন্তু
তার পরেও তখন বুঝতে দেয় নি তাকে । আজ যখন
তার যাওয়ার সময় হয়েছে তখন বোঝানোর
চেষ্টা করেও পারছে না । আর বলতেও পারছে না কোন
কিছু তাকে । কি করে বলবে , জিসাত তো শুধু তার
সাথে ঝগড়া করে । সব সময় খেপায় নিঃশব্দাকে ।
নিঃশব্দা খুব মিষ্টি একটা মেয়ে । খুব সুন্দর
করে কথা বলে । তার কথার মধ্যে এক ধরনের
চঞ্চলতা আছে । আর এই চঞ্চলতাই
জিসাতকে নিঃশব্দার কাছে আরো টেনে এনেছে ।
নিঃশব্দার টানা টানা চোখ যেন তাকে আরো পাগল
করে ফেলে । আর
দুষ্টমি ভরা কথাতে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে থাকে সে ।
সব মিলিয়ে জিসাতের চোখে খুব সুন্দর
একটা মেয়ে নিঃশব্দা ।
এতো সুন্দর বলেই জিসাত ভয় পায় , এই
মেয়ে যদি অন্য কারো হয়ে যায় । সে যদি অন্য
কাউকে পছন্দ করে ফেলে । এ জন্য সে যত
তারাতারি সম্ভব তাকে তার মনের
কথাটি জানিয়ে দিতে চায় । আরতো কয়েক মাস ।
মার্স্টাস করার জন্য আবার বিদেশ চলে যেতে হবে ।
তখন তো আর সুযোগ পাবে না সে ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য তার , আজও
পারলো না সে নিঃশব্দাকে মনের কথা জানাতে । একেক
সময একেকটা বাধা আসে । কি করে বলবে সে তার
মনের কথা নিঃশব্দাকে ! বুঝতে পারে না সে কিছুতেই ।
নিজের উপর রাগ উঠে তার । আবার পরক্ষনেই
নিঃব্দার কথা মনে করে রাগটা উবে যায় । তবে আর
যাই হোক , বলতেই হবে তাকে । জিসাত
ভাবে কি করে তার মনের কথা নিঃশব্দাকে বলবে । যত
তারাতারি সম্ভব তাকে বলতেই হবে । আরতো কয়েক
মাস পরেই সে USA চলে যাবে ।
জিসাত লেপটপটা বন্ধ করলো ।
আরমোরা দিয়ে উঠলো সোফা থেকে । ড্রইংরুম
থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে গেল জিসাত । বারান্দার
গ্রীল ধরে বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলো ।
আকাশে কিছু মেঘ জমেছে । মেঘ গুলোর
দিকে তাকিয়ে জিসাত যেন তার ছোটবেলার
স্মৃতিতে ডুবে গেল । মেঘগুলোতে যেন সে ছোটবেলার
সকল স্মৃতি খুজে পাচ্ছে।
খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলো নিঃশব্দার । আজ
এতো তারাতারি ঘুম ভাঙ্গাতে লেপটপ
নিয়ে বসলো সে । অনলাইন হতে না হতে আবার
জিসাতের আক্রমন । হ্যালো , হাই বলার পর জিসাত
হঠাত্ নিঃশব্দাকে বললে ,
- "আচ্ছা নিশ্ , তুই আমার সাথে USA যাবি ?"
নিঃশব্দা অবাক হয়ে বললো , "কেন ? আমি তোর
সাথে USA যাবো কেন ?"
- "না মানে , আমি যদি তোকে আমার
সাথে নিয়ে যাই !"
- "আশ্চর্য ! আমি তোর সাথে USA কেন যাব ?"
নিঃশব্দা খুব বিরক্ত হল । জিসাতের মতলব কি ?
মনে মনে ভাবল সে । তার পর আবার বললো , "আমার
বাংলাদেশ ভাললাগে , আমি আমার বাংলাদেশেই থাকব ।
আর যদি আমার USA তে যেতেই হয়
আমি নিজে আসতে পারব । তোর সাথে আমি কেন
যাব ?"
জিসাত অনেক্ষন চুপ করে থেকে শেষের দিকে বললো ,
"আমাকে এখান জরুরি একটা কাজে বাইরে যেতে হবে ।
তোর সাথে পরে কথা হবে । বাই"
এই বলে জিসাত অফলাইন হয়ে গেল ।
নিঃশব্দা কিছুই বুঝতে পারলো না । আর বুঝতেও চায়
না সে । কেন বুঝবে সে ? বুঝে লাভ কি ? সে এখন
কিছুই বুঝতে চায় না । সব কিছু ভুলে গুণ্ গুণ্ করে গান
গাইতে লাগলো নিঃশব্দা -
-"যদি অজানা মনে খোজ আমায়
তাকাবেনা তবু চোখ চলে যায় আমার পানে -- ।"
'অদ্ভুত মেয়ে তো । এতো ইঙ্গিত দেই তার পরও
বোঝে না ।' জিসাত মনে মনে বির বির করছে । তার
পর আবার ভাবলো , 'নাহ্ থাক , মেয়েরাতো এমনই ।
কখনই তারা তাদের মনের কথা মুখ ফুটে বলে না ।
যা বলার ছেলেদেরই বলতে হয় । কিন্তু কি করা যায়
এখন ?
কিভাবে বলবো কথাটি যে আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি ।
নাহ্ , তুই করে বলবো না । তুমি করে বলবো । যাহ্ ,
সে যদি কিছু মনে করে ! পরে যদি আমার সাথে আর
কথাই না বলে !' জিসাত
ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাচ্ছিল ।
এমন সময় জিসাতের মা তার ঘরে ঢুকলো ।
- "কিরে ! কি নিয়ে চিন্তা করছিশ এতো ? এমন
করে মাথা চুলকাচ্ছাশ কেন ?"
- "মা , খুব জটিল একটা পরীক্ষা দিতে হবে ।
কি ভাবে দিব সেটাই চিন্তা করছি ।"
- "কি এমন জটিল পরীক্ষা যে আমার সোনামানিক
কে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ? কি রকম পরীক্ষা ?
- "মা , ও তুমি বুঝবে না । অন্য এক বিষয় এর ।
এটা তোমার বোঝার বিষয় না ।"
- "হুম । বড় হয়েছিশতো , এখন আমাকে বলবিই
বা কেন । যাই হোক , এখন পর্যন্ত
প্রত্যেকটি পরীক্ষার ফল যেমন ভাল করেছিশ ,
দোয়া করি এবারেরটাও যেন সেই রকমই ভাল হয় ।"
জিসাত তার মাকে জরিয়ে ধরে বললো , "দোয়া কর
মা , তোমার ছেলে যেন সকল কিছুতেই জয়ি হয় ।"
- "অবশ্যই , মা বাবারা তো সব সময় সন্তানদের
জন্যই দেওয়া করে ।"
এর পর জিসাত বলল , "ঠিক আছে মা , এখন তুমি যাও
। আমি আরেকটু চিন্তা করি পরীক্ষা নিয়ে ।
- "আরে তোকে তো আসল কথাটাই বলে হয় নি ।
যে কারনে এসেছিলাম । তোর জন্য একটা ভাল
পাত্রী দেখেছি ।খুব সুন্দরী মেয়েটি । নম্র , ভদ্র ,
লেখাপড়ায় ভাল । তোর সাথে ভালই....." মাঝ খান
দিয়ে কথা আটকিয়ে জিসাত তার মা কে বললো , "মা ,
তোমাকে না কতবার বলেছি , এখন আমি বিয়ে করব
না । আগে পড়ালেখা শেষ করি তার পর নিজের
ক্যারিয়ার গঢ়ে তুলি । তার পর দেখা যাবে ।"
- "দেখা যাবে মানে ? আমি কি আর তত দিন বাচঁবো ?
যদি মরে যাই !"
- "মা , তুমি মরবে না । তোমার জন্য আমি তখন
একটা হুলপরী এনে দেব ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে , ঠিক আছে । তাহলে আমি আর
এই প্রস্তাবে এগুই না । তুই যা ভাল মনে করিশ তাই
হবে ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আমাকে একটু ভাবতে দাও
কিভাবে পরীক্ষাটা দিব ।"
- "হেরে , প্রশ্ন কি খুব কঠিন হবে ?
পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাকে বলিশ ।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে মা । এখন যাও তো ।"
জিসাতের মা রুম থেকে বের হয়ে গেল । জিসাত আবারও
নিঃশব্দার কথা চিন্তা করতে লাগলো ।
বিকেলের আবহাওয়া আজ খুব সুন্দর ।