আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

ছোট্ট বেলার প্রেম

ষষ্ঠ শ্রেণীতে তখন পড়ি, সময় টা বর্ষাকাল...
বাবা মা চাকুরি করেন সারাদিন বাসায় থাকেন না যার ফলে আমি মানুষের বাসায় থেকে পড়া শোনা করি বলা যায়, সকালে স্কুলে যাই স্কুল থেকে এসে সারাদিন ওইবাসায় থাকি, খাওয়া দাওয়া সেখানেই, কখন ও বাবার বন্ধুর বাসাকখন ও বা নানা বাসা এইভাবে বানরের মতন এক ডাল থেকে আরেক ডালে ঝুলি টাইপ অবস্থা, তবে ম্যাক্সিমাম টাইম রাস্তায় ই থাকি বলা যায় মানুষের বাসায় দেখি মা বাবা কত আদর করে ছেলে মেয়েকে ভাতখাওয়ায় আর আমার বাবামা সারাদিন অফিস থাকে, রাতে বাসায় ফিরলেও কথা হয়না বললেই হয় তাই এসব সিন দেখলে বুকের ভেতর শুন্যতা বেড়ে যায়,
যাই হোক ভ্যানে করে স্কুলে যাই, আমার সাথে সম বয়েসী একটা মেয়ে ও যায় সে পড়ে পাশের গার্লস স্কুলে আমি বয়েজ স্কুলে,
এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব এক কোচিং এপড়ি তখন আবার বাফায় গান ও শিখি, এভাবেই একদিন হঠাৎ ও আমাকে বলল,
- এই নিবিড়,
- বল,
- আমি না তোকে অনেক পছন্দ করি,
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম সারা জীবন এই লাইন সালমানশাহ শাবনুর কে বলে এসেছে, শাবনুর তো বলে নি, এ কথার উত্তরে সালমান শাহ কি বলত? শাবনুর তো লজ্জায় দৌড় দিত।
আমি শাবনুর না, সালমান শাহ তাই বুক ফুলিয়ে বললাম, আমিও তোকে পছন্দ করি।
সে মিষ্টি হেসে জবাবদিল ঠিক আছে যদি করেই থাকিস, আজ স্কুল ছুটির পর কুত্তা ওয়ালা বাসার সামনে কদম ফুল নিয়ে দাঁড়াবি ঠিক আছে?
আমি নায়কের মতন জবাবদিলাম অবশ্যই কিন্তু ভেতরে ভেতরে জমে গেলাম, কুত্তা ওয়ালা বাসায় ইয়া বড় বড় বিদেশী কুকুর আছেগেলেই চিল্লায়, দরজায় লেখা থাকে কুকুর হতে সাবধান, তবে বাড়ির সামনেই একটা কদম গাছ।
যেই কথা সেই কাজ ১২ টায় ছুটি সেই খেয়াল কি আছে টিফিন টাইমেইস্কুল পালালাম, ভয়ে ভয়ে কুত্তা ওয়ালা বাড়ির সামনে গেলাম,
সামনে যেয়ে দেখি কুকুর বিরাল কিছুই নেই বরং বড় পাজেরো একটা গাড়ি ধুচ্ছেন একজন বয়স্ক মানুষ, আমি কাছে গিয়ে দাড়াতেই বললেন,
- বাবু কিছু বলবে?
আমি ভয় পেতে চাইলাম, তবে হাসিমুখ দেখে কেন জানি ভয় আসলো না। বললাম,
- একটা কদম ফুল দেয়া যাবে?
লোকটি হেসে বলল
,- ফুল তো গাছেই মানায় বাবু, তবু তুমি যদি চাও আমি তোমাকে দেব একটা,
ভদ্রলোক ভেতরে চলে গেলেন কিছুক্ষণের মাঝে একটা কদম ফুল এনে বললেন,
- এখন খুশী?
আমি ধন্যবাদের বালাই না করে ফুল নিয়ে হাটা দিলাম, সিনেমার নায়করা ধন্যবাদের বালাই করে না।
অনেকক্ষণ ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছি আর মনে মনে কথা ঠিক করছি, সে সময়া আমার পড়ার দৌড় রবীন্দ্রনাথ আর শরৎচন্দ্র পর্যন্তইকারন গান গেয়ে স্কুলথেকে এসব বই ই পুরস্কার পাই, কোন মতে কিছু ঠিক করে দাড়িয়ে রইলাম রাস্তায়।
স্কুল ছুটি দিল আমি দাড়িয়ে আছি, সে এগিয়ে আসছে, হঠাৎ আমাদের অবাক করে তুমুল বৃষ্টি নামলো,হঠাৎ বৃষ্টি দেখে আমি দৌড়, পেছন ফিরে দেখি সেও আমার পেছন পেছন দৌড়ুচ্ছে,
শেষ পর্যন্ত দুজন গিয়ে থামলাম সেই কুত্তাওয়ালা বাড়ির কদম গাছের তলে, সেখানে তাকে কদম ফুলটি দিলাম, বৃষ্টি আর ঘাম আমাকে একাকার করে ফেলেছে এবং বহু প্রতীক্ষিত লাইন দুটি বললাম,
"তোমার জন্য মরতে পারি ও সুন্দরী তুমিগলার মালা,
এই যে দেখ তোমার জন্য আনছি ফুলের মালা, কন্যা ফিরা চাও"
সে আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ, জীবনে ১ম কোন মেয়ের হাত স্পর্শ করলাম, মনে আছে তার হাতের উষ্ণতা আমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে গিয়েছিল,
যদিও পড়ে বিরাট বিপদে পড়েছিলাম, সিনেমায় যেমন মিশা সওদাগর থাকে আমাদের ক্লাসেও ছিল নাম শাহীন, সে ব্যাপার টা দেখে ফেলেছিল ও পুরো ক্লাসে ছড়িয়ে দিয়েছিল,
"জানস সালমান না ডাললিং লয়া ঘুরে"
পরিশিষ্টঃ কথিত আছে কদম গাছের নিচে বর্ষার ১ম বৃষ্টিতে কোন প্রেমিক তার প্রেমিকা কে ১ম কদম ফুল দিলে তাদের সম্পর্ক কোন দিন ভাঙ্গেনা, আমাদের টাকিভাবে ভাঙল জানিনা,
সেই মেয়েটির নাম আমার মনে নেই কোথায় আছে তাও জানিনা, এর কদিন পড়েই তারা চলে গিয়েছিল ঢাকা ছেড়ে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, সিক্সে পড়া বালকের কষ্ট বিরাট কষ্ট তবে সেই কষ্ট সহজেই ভুলে যাওয়া যায় আমি ও ভুলে গিয়েছিলাম,
এখন ও একজন কে ভালোবাসি, নিজের চেয়ে ও বেশী ভালোবাসি.....