আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

এক অদ্ভুদ ভালবাসা

পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাট। দুই বান্ধবী। একজনের জীবন রোমান্টিসিজমে পরিপূর্ণ। অন্যজন তার উল্টো। একজন যখন স্বামীর ভালোবাসার গল্প বলে, অন্যজন তখন গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একদিন স্বামীর ভালোবাসায় টইটম্বুর বান্ধবী চেপে ধরল,

‘আচ্ছা, কী ব্যাপার বল তো?’

‘কোন ব্যাপার?’


‘আমি আমার স্বামীর ভালোবাসার কত গল্প করি তোকে, তুই কিছু বলিস না কেন?’

‘ইয়ে, না মানে...তোরটা শুনতেই ভালো লাগে।’

‘না না, নিশ্চয়ই কিছু গোলমাল হচ্ছে। তুই কখনোই কিছু বলিস না...আজ তোকে বলতেই হবে...।’

‘কী বলব?’

‘ভালোবাসার কথা।’

‘ধ্যাৎ!’

শেষ পর্যন্ত অরোমান্টিক বান্ধবী বলতে বাধ্য হলো যে তার স্বামী মোটেই রোমান্টিক নয়। বাসররাতে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল, কারেন্ট ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে জানালা খুলে বলেছিল, ‘বাপ রে, কত বড় চাঁদ উঠেছে!’ পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে রোমান্টিক ডায়লগ ওই একটাই!

‘বলিস কী! ভালোবেসে তোকে কিছু বলে না?’

‘না।’

‘কোনো উপহারও দেয় না?’

‘না।’

‘হায় হায়, কী বলছিস এসব! এত দিন বলিসনি কেন?’

‘বললে কী হতো শুনি?’

‘আরে বোকা, যে পুরুষমানুষের মধ্যে ভালোবাসা নেই, তার ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে হয়। তুই সেই কাজটাই করিসনি। শোন, আমি তোকে বুদ্ধি দিচ্ছি।’

‘কী বুদ্ধি?’

‘আরে বোকা, স্বামীর ভালোবাসা আদায়ের বুদ্ধি। শোন, তোকে একটা বুদ্ধি দিই...সামনে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে, এই চান্স...তুই করবি কি, ১৩ ফেব্রুয়ারিতে তোর বরকে বলবি...’।

তারপর দুই বান্ধবী অনেকক্ষণ ফিসফাস করল।

১৩ ফেব্রুয়ারি খুব দ্রুতই চলে এল। অরোমান্টিক বান্ধবী রাতে স্বামীর ঘরে চা নিয়ে ঢুকল। গম্ভীর শিক্ষক স্বামী কিঞ্চিৎ অবাক হলো...।

‘চা চেয়েছিলাম নাকি?’

‘না, চাওনি। আমার খেতে ইচ্ছে হলো, তাই তোমার জন্যও বানালাম।’

‘ও।’

স্বামী চা খেতে খেতে বইয়ে মনঃসংযোগ করল। ‘ইয়ে, জানো কী হয়েছে? কাল রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম তোমাকে নিয়ে।’

‘কী স্বপ্ন?’

‘দেখলাম তুমি আমার জন্য ১৪ তারিখে একটা দামি হিরের আংটি কিনে এনেছ।’

‘স্পেসিফিক ১৪ তারিখে কেন?’

‘বাহ, ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন ডে না?’

‘ও আচ্ছা...!’ ব্যস, স্বামী আবার বইয়ে ডুবে গেল। পাশে চা ঠান্ডা হতে লাগল।

পরদিন রোমান্টিক বান্ধবী ছুটে এল,

‘কিরে, বরকে স্বপ্নের কথা বলেছিলি?’

‘হু’

‘কী বলল?’

‘কী আর বলবে...বই পড়ছিল, ফের বইয়ে ডুবে গেল।’

‘দেখবি...ওষুধ ঠিক কাজ করবে...ভ্যালেন্টাইন ডের কথা বলেছিলি তো?’

‘হ্যাঁ।’

আশ্চর্যের ব্যাপার! ভ্যালেন্টাইন ডেতে সত্যি সত্যিই শিক্ষক স্বামী একটা প্যাকেট নিয়ে ঢুকল। গম্ভীর মুখে বাড়িয়ে দিল স্ত্রীর দিকে। স্ত্রী অধীর উত্তেজনায় তৎক্ষণাৎ খুলে ফেলল প্যাকেটটা। না, ভেতর থেকে কোনো হিরের আংটি বেরোল না। বেরোল একটা বই। বইয়ের নাম সোলায়মানী খাবনামা— স্বপ্নে কী দেখলে কী হয়।

সে রাতে শিক্ষক স্বামীর চেয়ে বেশি গম্ভীর হয়ে রইল স্ত্রী। স্বামী যথারীতি বইয়ে নিমগ্ন। পাশে শুয়ে স্ত্রী ভাবছিল, কাল বান্ধবীকে কী বলবে। বেচারা এত বুদ্ধি-পরামর্শ দিল...সব জলে গেল।

পরদিন ভোরে মুখ ধুতে গিয়ে হঠাৎ অরোমান্টিক বান্ধবী আবিষ্কার করল, বাম হাতে ঝকঝক করছে একটা আংটি। চোখ বন্ধ করেই বলা যায় আংটিটা হিরের। বাথরুমের আয়নায় দেখা গেল পেছনে দাঁড়ানো শিক্ষক স্বামীর মুখ...না গম্ভীর মুখ, না। মুখে মিটিমিটি হাসি। ভালোবাসার হাসি বোধহয় এমনই হয়...!

ভালবাসার জন্মদিন

ঘুম ভাঙতেই ধড়মড় করে উঠে বসে ইফতি। আজ যে তাকে অনেক দূর যেতে হবে। অ-নে-ক দূর ! ৫টা বেজে গেছে। নাহ, আর দেরি করলে চলবে না। উঠে পড়ে দ্রুত হাতে সব কিছু গুছিয়ে নিতে থাকে সে। সব কিছু শেষবারের মতো চেক করে দরজাতে তালা দিয়েই এক ছুটে রাস্তায়। যত দ্রুস্ত সম্ভব বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে হবে। ভাগ্য ভালো এই সাতসকালে একটা খালি সিএনজি পাওয়া গেলো। তবুও সিলেট বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনে টিকেট কেটে উঠে বসতে বসতে ততোক্ষণে ঘড়িতে প্রায় ৭ টা। ১৫ মিনিট পরেই ছেড়ে দিলো বাস। আবারও একবার ঘড়ি দেখে নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ইফতি। আজ অনেক বড় একটা রিস্ক নিতে যাচ্ছে সে। অবশ্য এমন রিস্ক যে আগে কখনও নেয়নি তা নয়, তবে আজকের কথা সম্পূর্ণ আলাদা এবং স্পেশালও বটে।

কাল ১০ জুলাই- দীপার জন্মদিন। এর আগের বছরগুলোতে দীপা বাসায় থাকতো বিধায় ইচ্ছে থাকলেও ইফতি ওর জন্মদিনে কোনও উপহার দিতে পারেনি । এই প্রথম সুযোগ পাচ্ছে ইফতি। তাই অনেক দিন আগে থেকেই ভাবছিল কী উপহার দেওয়া যায়। কিন্তু কোনও কিছুই মন মতো হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলো ও নিজেই হবে ওর প্রিয়তমার জন্মদিনের উপহার। যেই ভাবা সেই কাজ। দীপাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে কাউকে কিছু না বলে রাজশাহী রওনা হয়েছে ইফতি। রাতের বাসে সরাসরি যাওয়া যেতো, তাতে কষ্টও কম হতো। কিন্তু রাতের বেলা অবধারিতভাবেই দীপা ফোন দেবে। সহজেই বুঝে ফেলবে যে ইফতি বাসে। এই ভয়ে ইফতি ঠিক করেছে সিলেট থেকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের মধ্যে ঢাকা , ওখান থেকে আবার রাজশাহীর বাস ধরে রাতের মধ্যে রাজশাহী পৌঁছবে। হোটেলে গিয়ে উঠবে,তারপর সকালে দীপার কাছে গিয়ে ওকে চমকে দেবে। মাত্র দিন ১৫ আগেই রাজশাহী থেকে ঘুরে এসেছে ও। কিন্তু নিজের জন্মদিনে অপ্রত্যাশিত ভাবে ওকে দেখার পর দীপা কতোটা খুশি হবে সেকথা ভাবতেই আনন্দে বুকটা ভরে যাচ্ছে ইফতির।

ফোন বাজছে। এই রে ! দীপা ফোন করেছে। কী উত্তর দেবে ইফতি? ইফতির আবার একটা সমস্যা হচ্ছে গিয়ে সে সবার সামনে অবলীলায় মিথ্যা বলতে পারলেও দীপার সামনে মিথ্যা বলতে গেলে সব গুলিয়ে ফেলে। ইফতির তোতলামি শুনে দীপাও সহজেই ধরে ফেলে। একারনেই ইফতি দীপাকে কখনও মিথ্যা বলতে পারেও না,বলেও না। কিন্তু এখন কী করা যায়? ভয়ে ভয়ে ফোন ধরল ইফতি।

* “কোথায় তুমি ?”
* “আমি? ইয়ে...আমি তো বাসে।”
* “বাসে?! কোথায় যাচ্ছ?”
* “ইয়ে মানে ঐ যে আমার একটা ফিল্ড-ওয়ার্ক এর কথা ছিলো না, হবিগঞ্জে ? ওখানেই যাচ্ছি। ফিরতে মনে হয় রাত হবে। আর জানোই তো ওখানে মোবাইল এর নেটওয়ার্ক নেই । তাই ফোন বন্ধ পেলে টেনশন করো না কেমন? নিজের দিকে খেয়াল রেখো, আমি ফিরে এসে ফোন দেবো।”

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফোন রাখল ইফতি। উফফ... রাজশাহী যাওয়া পর্যন্ত সারপ্রাইজ ধরে রাখতে পারলে হয় !

অনেক জ্যাম পেরিয়ে ইফতি যখন ঢাকা পৌঁছল তখন বেলা ২টা বেজে গেছে। একটুও দেরি করা যাবে না। ওদিকে রাজশাহী পৌঁছতে দেরি হলে তখন আবার হোটেল পাওয়া যাবে না। রাতে থাকবে কোথায় তখন ? পড়িমরি করে গাবতলী ছোটে ইফতি। ৪টার বাস ধরে রাজশাহী রওনা হয়ে যাওয়ার পর খেয়াল হল তাড়াহুড়ার মধ্যে সারাদিন কিছু পেটে পড়েনি। থাক, কী আর করা ? সময় মতো যেতে পারলে খাওয়ার অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে।

এরই মধ্যে দীপা অনেকবার ফোন করেছে। প্রথম ক’বার ধরেনি, দুপুরের পর থেকে মোবাইলই বন্ধ করে রেখেছে ইফতি। মিথ্যা বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে এতোটুকু মিথ্যে বলতেই হবে। তবুও মন খারাপ লাগে ইফতির।

পথ যেন শেষ হতেই চায় না। আবারও অনেক বিরক্তিকর জ্যাম পেরিয়ে রাজশাহী পৌঁছাতে রাত ১০ টা বেজে যায় । সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক মুহূর্তেই কোথায় উবে যায় ! হ্যাঁ, সে পেরেছে । এতোখানি কষ্ট সম্ভবত সার্থক হতে চলেছে। হোটেলে রুম নিয়ে ফ্রেশ না হয়েই দীপাকে ফোন দেয় ইফতি।

-“তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ ?” রাগ ঝরে পড়ে দীপার গলায়।

-“আর বোলো না, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের রুমে গিয়েছিলাম , তাই ফিরতে রাত হল।” শুকনো গলায় আবারও মিথ্যে বলা। কিন্তু এ ছাড়া যে উপায় নেই!

অনেকক্ষণ লাগে দীপাকে ঠাণ্ডা করতে। ঘুণাক্ষরেও দীপাকে বুঝতে দেয় না ইফতি যে সে রাজশাহীতেই। একাকী হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে রাত ১২টা বাজার অপেক্ষা। ১২ টা বাজতেই দীপাকে ফোন।

-“শুভ জন্মদিন, সোনামণি !”

ততক্ষণে দীপার বান্ধবীরাও ওর রুমে এসে হই-চই শুরু করে দিয়েছে। স্মিত হেসে ফোনটা রাখে ইফতি। কিছুক্ষণ পর দীপার ফোন এলো। সারা দিনের ক্লান্তিতে ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসতে চায়। তবুও দীপাকে এতোটুকু বুঝতে না দিয়ে অনেক রাত অবধি কথা বলে ইফতি।

সকাল ৬ টায় ঘুম ভেঙ্গে বাইরে তাকাতেই মনটা দমে যায়। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। ইশ, বৃষ্টি নামার আর সময় পেলো না! তাতে কী হয়েছে ? দীপার জন্মদিন যে আজ! ঝড়-তুফান হলেও বসে থাকলে চলবে না। হোটেল থেকে চেক-আউট করে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রাস্তায় নেমে পড়ে সে। বৃষ্টি-স্নাত সকালের অলস শহর। রিকশা পেতে পেতে পুরোপুরিই ভিজে গেলো ইফতি। ইফতি যতবার দীপার সাথে দেখা করতে যায়, সবসময় ফুল নিতে ভোলে না। সাত সকালে কোনও ফুলের দোকানও খোলেনি। আজ ওর জন্মদিনে যাবে, অথচ ফুল ছাড়া ? থাক, কী আর করা যাবে, আগে তো দীপার সাথে দেখা হোক।

হোস্টেলের সামনে এসে দীপাকে ফোন দেয় ইফতি।

* “এই শোন, তোমার জন্য একটা গিফট পাঠিয়েছি, একটু নামবে ?”
* “এই সাত সকালে গিফট?! কার কাছে? কীভাবে?”
* “আহা, নামো না একটু...।”

এই ঝুম বৃষ্টিতে, তাও আবার এতো সকালে- এইসব ভাবতে ভাবতে হোস্টেলের গেটে এসে থমকে যায় দীপা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। কিছুক্ষণ কথা সরে না মুখ দিয়ে। ধাতস্থ হয়ে বলে...

-“তুমি ?!! তুমি কীভাবে এলে?! প্লেনে করে ?!!”

-“শুভ জন্মদিন, সোনামণি।” হাসতে হাসতে দীপাকে বলে ইফতি।

খুশিতে ওকে নিয়ে কী করবে ভেবে পায় না দীপা। হাত ধরে টেনে গেস্ট-রুমে বসায়। দীপার জন্য আনা টুকটাক গিফট গুলো একে একে বের করে ওর হাতে দেয় ইফতি। দীপার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। একছুটে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে নাস্তা এনে খাওয়ায় ইফতিকে।

-তুমি আমাকে এতোটুকুও বুঝতে দাও নি! বিস্ময় কাটতেই চায় না দীপার।

-বুঝে ফেললে তো সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না! হাসতে হাসতে দীপার বিস্ময় উপভোগ করছে ইফতি।

একথা ওকথার পর দীপা ইফতিকে বসিয়ে রেখে চট করে তৈরি হয়ে আসে। ততোক্ষণে বৃষ্টিটাও ধরে এসেছে। টিপ টিপ বৃষ্টিতে রিকশায় দীপার হাত ধরে বসে থাকতে ইফতির মনে হয়- “এই তো স্বর্গ !”

- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -

প্রচণ্ড বজ্রপাতের শব্দে সম্বিত ফিরে পায় ইফতি। বৃষ্টি নেমেছে আবারও। সেই রাতেও এমনই বৃষ্টি ছিল। দীপা সুজয়ের কাছে চলে গেছে আজ কত্তদিন হয়ে গেছে, অথচ এখনও সেই দিনটার এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারে না ইফতি। কে যেন একবার বলেছিল, বছরের একটা বিশেষ দিন বার বার ফিরে আসে, কিন্তু সেই দিনের ঘটনা গুলো আর কোনও দিন ফেরে না।

আজ দীপার জন্মদিন। দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেছে, টেরই পাওয়া যায় না। ইফতির হঠাৎ করে মনে হয়, আচ্ছা, আজকে কি সুজয়ের সাথে সারারাত কথা বলবে দীপা? সুজয়ও কি ওকে চমকে দিতে রাজশাহী গেছে? রিকশায় বসে আজ সারাদিন হাজারও কথা বলতে বলতে রাজশাহীর এ গলি ও গলি ঘুরে বেড়াবে ওরা? দীপার কি আজ একটা বারের জন্যও মনে পড়বে ইফতির কথা? সুজয় ওকে ফুল দেয় তো? ইশ, মেয়েটা খুব চকলেট খেতে ভালবাসে! মনে করে সুজয় ওর জন্য চকলেট নিয়ে গেলে হয়!

অর্থহীন স্মৃতিচারন করতে করতে বারান্দায় এসে দাড়ায় ইফতি। আকাশের দিকে মুখ তুলে মনের অজান্তেই বুকটা চীরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

-“শুভ জন্মদিন, সোনামণি !” অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে সে।

বৃষ্টির জলে ধুয়ে নিয়ে যায় ইফতির অশ্রু।

আমি আর রাত্রি

রাত্রি যখন আমাকে বললো, তার সাথে আমার সংসার ডিশমিশ, তখন আমার কেন যেন কষ্ট হয়নি।একটুও না।কারণ আমি এমন কিছু করিনি যাতে সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব।আমি এতটাই Careless ছিলাম, যে মনে পড়েনা শেষ কোন বিবাহবার্ষিকী অথবা তার জন্মদিনের মত বিশেষ কোন দিনে তার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম শুভ কামনা।আমাদের চার বছরের সংসার আমি নিজের হাতে নষ্ট করেছি, আমি তার জীবনের চাওয়া পাওয়া সবগুলো নিজের হাতে দলিত মথিত করেছি।আজকে কোন অধিকারে আমি তাকে উত্তর দেব? আমি মনে মনে শুধু বললাম রাত্রি আমাকে ক্ষমা করো।আমি কতটাই নীচ যে এই কথাটা তাকে সরাসরি বলার সাহসটুকুও আমার ভেতরে নেই।

রাত্রি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু বলার নাই?ঝগড়া করবেনা?”

আমি অনেক কষ্ট করে হলেও তাকে বলতে পারলাম, “এই অধিকারটুকু আমার নাই। তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো আমি তোমাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি”।

রাত্রি হেসে বললো, “তুমি অনেক ভালো মানুষ এটা কি জানো?”

আমি নীচের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে তাকে বললাম, “হ্যা”।

রাত্রি কথা শেষ করে রান্নাঘরে চলে গেল সকালের নাস্তা বানানোর জন্য।তাকে অনেক ক্লান্ত মনে হলো।কিন্তু আমি জানি সে এখন আমার মত একটা মূক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন করে হাসতে শিখবে। ভাবছি হয়তো আর বছর খানেক পরে সে কোন এক ঝরঝরে সংবেদনশীল পুরুষের হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে কোন এক শপিং মলে।তাকে আহলাদ করে বলবে, এটা ওটা কিনে দিতে।সে অনেক ভালোবাসা পাবে, পাবে বেচে থাকার নিঃশ্বাসটুকু।আচ্ছা তখন যদি ভুলক্রমেও আমার সাথে দেখা হয়ে যায়, আমি কি করবো বলুন তো?এই কথা ভেবেই আমার নিঃশ্বাসটুকু আটকে আসতে চায়।আমি সেই চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি।জানি আজকে অফিসে যেতে দেরী হয়ে যাবে।মুর্শেদ ভাই কি ডেকে আমাকে ঝাড়ি দেবে? যেহেতু দেরী করার কোন মিথ্যা কারণ বলতে পারবোনা,তখন কি করবো?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে প্রধাণ সড়কে এসে পড়লাম জানিনা।চারাপাশে অনেক গাড়ি ঘোড়া।আমি ক্লান্ত বিরক্ত এবং পরিশ্রান্ত।জঞ্জাল নগরীর চলমান যন্ত্রগুলোকে পাশ কাটিয়ে নিজেই এক যন্ত্রবন্দী হয়ে মোহাম্মদপুর অফিসে রওনা হলাম।

অফিসে এসে দেখি মানুষজন আমাকে দেখে বেশ বিরক্ত, দু একজন হাসিমুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি অর্ক ভাই,ভাবীর সাথে ঝগড়া করে আসলেন নাকি?”
আমি হাসিমুখে বললাম, “আপনাদের ভাবী আমাকে বেলই দেয়না,ঝগড়া করবে কি?”

আমার পিওন আসলাম সামনে এসে বিশাল দুঃসংবাদ দিলো।আমাকে মুর্শেদ ভাই ডেকেছে।আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো।বিশাল ঝাড়ির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম আমি।মুর্শেদ ভাইয়ের অফিসে যখন গেলাম তখন উনি হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কাকে যেন বকাঝোকা করছেন।আমাকে দেখে হাসিমুখে ফোনটা রেখে দিলেন পরে আবার কথা বলার আশ্বাস দিয়ে।বুঝলাম কথা হচ্ছিলো নীনা ভাবীর সাথে।মুর্শেদ ভাই আজকে হলুদ রংয়ের হিমুটাইপ শার্ট পরে এসেছেন। নীনা ভাবীর সাথে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন উনি প্রায়ই আমাকে বলতেন “অর্ক দোস্ত তুই যাই করিস হলুদ জামা পড়ে আমার সামনে আসবিনা”।আমি কাকতালীয় ভাবে মুর্শেদ ভাই আর তার বিয়ের দিনে হলুদ একটা স্ট্রাইপ শার্ট পড়ে গিয়েছিলাম। নীনা ভাবী আমাকে বিয়ের মঞ্চের সামনে দেখে অত্যন্ত কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে সরাসরি বললেন, “তুমি এখান থেকে না গেলে আমি বিয়ে করবোনা”।আমি অবাক হলাম, তবে তার কথা শুনে নয়।তার অভিমান ভরা তুমি সম্বোধনের ডাক শুনে।আশিক আমাকে ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষেই জানিয়েছিলো যে নীনা ভাবী আমাকে নাকি পাগলের মত ভালোবাসে।তাহলে কি ও সেদিন সত্যি কথাটাই বলেছিলো?আচ্ছা তাহলে যখন মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম, যখন মুর্শেদ ভাইয়ের হয়ে তার ঘটকালী করেছিলাম তখন কিছু বলে নাই কেন?আমি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে চলে এসেছিলাম।আজকে মুর্শেদ ভাইয়ের হলুদ জামা দেখে হাবিজাবি কথাগুলো মনে হয়ে গেলো।মুর্শেদ ভাইয়ের কন্ঠ শুনে আবার জগতে ফিরে আসলাম।দুরুদুরু বুকে মনে হলো, মুর্শেদ ভাই কি এইসব জানে?

“অর্ক আজকে তোমাকে একটা বিশেষ খবর দেব।আমি তোমাকে এই অফিস থেকে বের করে দিবো ভাবছি।কেমন হবে?”

আমি বোকার মত বললাম, “জ্বী”।

মুর্শেদ ভাই সজোরে হাসতে হাসতে বললেন, “পরের মাস থেকে তুমি চাটগার হালিশহর প্রজেক্টে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করবে।না করে লাভ নাই।আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবোনা এটা তো জানোই,তাই না অর্ক?”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।মুর্শেদ ভাই জানেন আমি কখনো না শব্দটা বলতে পারিনা।আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানীর সাথে সাবডিলারশীপে যারা কাজ করে তাদের সাথেও আমি মিনমিন করে কথা বলি।এইতো সেদিন শাহ সিমেন্টের লোক আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো আমি নাকি কোন প্রকৌশলীই না, কারণ তাদের মত ভালো সিমেন্ট কোম্পানীকে আমি একসেপ্ট করিনি।আজকে যখন এমন একটা প্রমোশন পেলাম, তখন আমি তাকে সামান্য ধন্যবাদটাও কি করে দেব খুজে পাচ্ছিলাম না।চলে যাওয়ার আগে শুধু তাকে বললাম, "জ্বী চলে যাব চাটগা ৩১ তারিখেই"।

মুর্শেদ ভাই আমার কাধে হাত দিয়ে বললেন, “আমি যাচ্ছি তোমার সাথে কাল।তোমার জন্য একটা ছোট্ট বাসা ঠিক করা আছে।আস্তে আস্তে মালামাল শিফট করে নিও”।

আমি মাথা নাড়লাম যার অর্থ ধন্যবাদ।আমি জানিনা মুর্শেদ ভাই কেন আমাকে পছন্দ করেন এতোটা।

আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হলাম।রাত্রির জন্য কিছু ফুল কিনতে হবে, সাথে ওর প্রিয় আইসক্রিম।আজকে ওর সাথে সারারাত গল্প করবো,আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন আকবো।যা আগে করিনি তার সবকিছু করবো।প্রিয় রাত্রি, আমি কি তোমাকে ভালবাসি? তুমিই বলে দাও।

বাসায় যখন পৌছালাম, তখন দেখি কেউ নেই বাসায়।আমি অপক্ষা করতে থাকি রাত্রির নিঃশ্বাসের আওয়াজ শোনার জন্য।সারাটি ঘরে কোথাও রাত্রির অস্তিত্ব অনুভব করতে না পেরে আমি কেন যেন হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে যাই।আমি বসে পড়ি মেঝেতে আর ভাবতে থাকি কখন আবার সে পাশে এসে বসবে।আমার মাথায় হাত দিয়ে বলবে, “খাবেনা?”

রাত কয়টা বাজে তা আমার মনে নেই, শুধু মনে আছে রাত্রির হাতের স্পর্শ।ও আমাকে ফিসফিস করে বলছে, “তুমি কখন খাবে?”আমি শান্ত কন্ঠে বললাম, “খাবোনা”।তারপর সে কোথায় যেন চলে গেল।আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারলাম আমার মাথাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি রাত্রি বাসায় নেই সেই দিনের পর থেকেই। কিন্তু ওর অনুপস্থিতি আমি মেনে নিতে পারছিনা।তাই ওকে আমার আশে পাশে কল্পনা করে নিচ্ছি।কিন্তু যখন ওকে দেখতে পাই এতটা বাস্তব মনে হয়।আমি ঘুমের মধ্যেই ভয় পেয়ে যাই।প্রচন্ড ভয়।

মুর্শেদ ভাই প্রচন্ড জোরে গাড়ি চালাচ্ছে মাতাল হয়ে, আমি একটু বিরক্ত তার এই আচরণে।আজকে আমার ঢাকা অফিসে শেষ দিন উপলক্ষে উনি আমাকে নিয়ে সেলিব্রেশন করলেন ঢাকা ক্লাবে।জনি ওয়াকার এক বোতল খালি করে আমাকে রাগত ভংগীতে বললেন, “ছাগল তুমি লালপানি খাওনা কেন”।

আমি হেসে বললাম, “পানির কোন রঙ নেই”।

আমি বুঝতে পারছিনা মুর্শেদ ভাই কেন এত রেগে আছে। আমার দিকে বারবার তাকিয়ে হাসছে আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছে।আমরা এখন ধান ক্ষেতের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি।উনি হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে আমাকে বললেন, “যাও শুশু করে আসো।আমার গাড়ি নোংরা করবানা”।

আমি বললাম, “ভাইয়া আপনি বোধহয় নিজের জন্য থামিয়েছেন”।

মুর্শেদ ভাই লজ্জা পেয়ে হেসে বললেন,”মাথাটা ঠিক নাই অর্ক।মাইন্ড করোনা।আসো একটু গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশের প্রকৃতি দেখি”।

আমি গাড়ি থেকে নেমে উনার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।উনি ওম শান্তি বলতে বলতে গাড়ির কাছে ফিরে এসে আমার জিজ্ঞেস করলেন, “নীনার সাথে তোমার কয় বছর এফেয়ার ছিলো?”

আমি বললাম, “আমার ছিলোনা।উনি হয়তো আমাকে পছন্দ করে থাকতে পারেন”।

উনি হেচকি দিয়ে বললেন, “মহিলা জাতটা ভালো না অর্ক।আমি পাচ বছর বিয়ে করলাম, সে আমাকে একদিনের জন্যও ভালোবাসেনাই।তুমি কি জোর করে ওকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিছো?”

আমি কিছু না বলে গাড়িতে বসে বললাম, “ভাইয়া দেরী হচ্ছে।চলেন”।

মুর্শেদ ভাই আবার গাড়ি স্টার্ট করে রওনা হলেন।আমি হঠাৎ করে উনাকে বললাম, “ভাইয়া আমার মাথা আজকাল খারাপ হয়ে গেছে”।

মুর্শেদ ভাই হেসে বললেন, “তোমার বউ কি তোমাকে ছেড়ে দিছে?”

আমি বললাম, “হ্যা।আপনি কি করে জানলেন?”

“নীনা বলছে।রাত্রি ওকে মাঝে মাঝে ফোন করে।বউ ছেড়ে দিলে সবারই মাথা খারাপ হয়ে যায়, সো ইটজ নট আনইউজাল”।

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। হঠাৎ করে বললাম, “গাড়িটা ঘোরান।আমি চিটাগাং যাবোনা”।

মুর্শেদ ভাই বললো, “সামনে একটা বিখ্যাত বিরানী হোটেল আছে,ওখান থেকে বিরানী খেয়ে তারপর ব্যাক করবো।ওকে?”

রাত্রি চারটা বেজে বিশ মিনিট তখন।আমি রাত্রির মায়ের বাসায়। ওর মা বাবা সবাই খুব অবাক হয়েছে।একটু পর রাত্রি এসে আমার পাশে বসলো।তার চোখে তখনো অনেক ঘুম এবং বিরক্ত ভাব। সে প্রথমেই আমাকে বললো, “আমি যাবোনা”।

আমি বললাম, “যেতে হবেনা। ওই বাসায় যেতে আমারও ইচ্ছা করেনা।আমি তোমার সাথে এখানে থাকি?”

আমার কথা শুনে রাত্রি কি অবাক হলো? ও আমাকে শান্ত হয়ে বললো, বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।এরপর কিছু খেয়ে তারপর কথা বলো।আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে চুপ করে বসে রইলাম।হঠাৎ করে ও অনেক কাদলো, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদলো।আমাকে জিজ্ঞেসা করলো, “তুমি জানতেনা আমাকে কত ভালবাসো?”

আমি ওর দু হাত ধরে বললাম, “নাহ!এখন যেহেতু জানি তোমাকে আর ছাড়বো না”

রাত্রি অঝোরে কাদতে থাকলো। আমি ওকে থামালাম না।শুধু কাছে টেনে নিয়ে বসে থাকলাম।

আমার বিয়ে

খুবই আজব লাগছিল যখন আমার বিয়ে ঠিক হল। অচেনা একজন এর সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। বাবা-মা এর পছন্দ মতই বিয়ে হয় আমার। দেখতে তেমন ভাল ছিলাম না বলে প্রেম করার সৌভাগ্য হয়নি কখনো। যেদিন আমাকে দেখতে আসে, ছেলেকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে আমাকে ওদের পছন্দ হবে না। কারন ছেলে অনেক সুন্দর। সবথেকে বড়ো কারন হল আমি অনেক কালো। আমাকে কন ...ছেলেই পছন্দ করে না। করবে এমনটি আশাও করি নি।যখন খবর আসলো যে ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে, খুব অবাক হলাম।
বিয়ের দিন সবাই আমাকে বাসর রাত এর ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছিল। আমার খুব অস্বস্তি লাগছিল। আমি খুব শান্ত-শিষ্ট একটা মেয়ে। খুব কম কথা বলি। বাসর ঘরে আমি খুব ভয় এ ছিলাম। সারাদিন বিয়ের ধকল যাউয়াতে অনেক ক্লান্ত ও ছিলাম। ও যখন ঘরে ঢুকল, হটাত হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। কিন্তু কাছে আসার পর সে যা বলল, সেটা শুনে আমি অভিভুত হয়ে গেলাম। সে বলল “তুমি নিশ্চই অনেক ক্লান্ত। খাউয়ার সময় ও বেশি কিছু খেতে পারনি দেখলাম। এখন কিছু খাবে?” আমি না বললাম। সে বলল “আচ্ছা, তাহলে শুয়ে পড়।” তার প্রতি অন্যরকম এক ভাললাগা আমার উপর ভর করে। সম্মানবোধ করি তার প্রতি। কারন সে আমাকে হয়ত বুঝতে পেরেছে।

পরদিন সকালে নাশতার পর আমি আলমারি গুছাচ্ছিলাম। সে হটাত পেছন থেকে এসে আমাকে এমনভাবে জরিয়ে ধরল, যেন সে আমার কতকালের চেনা। তখন একইসাথে ভাল লাগা এবং একরকম নতুনত্ব অনুধাবন করি। আমি সবসময় চুপচাপ থাকতাম। সে আমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করত। তার বাবা-মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। কোন ভাইবন ও নেই। এই দুনিয়া তে আমি ছাড়া তার আপন কেও নেই। একদিন রাত এ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারেও বুঝতে পারি যা তার চোখে পানি। সে আস্তে করে আমাকে বলছে “আমাকে কখন ছেড়ে যেও না। তুমি ছাড়া ত আমার আর কেও নেই।” সেদিন আমি মনে মনে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কখনো তাকে ছেড়ে যাব না।

অফিস থেকে আমাকে প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করত আমি খেয়েছি কিনা। আমি জানি যে আমি না খেলে সেও খাবে না। তার সম্পূর্ণ জগত ছিলাম আমি। অবশ্য আমার প্রতি তার অনেক অভিযোগ ছিল। কারন আমি কখনই তার সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলি না। সবসময়ই জড়তা থাকে। আমি নিজেও সেটা বুঝি। কিন্তু জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারি না। তবে প্রায়ই কেন যেন মনে হতে লাগল আমি তাকে অনেকদিন থেকে চিনি। কোথায় যেন দেখেছি তাকে,বেশ আগে। কিন্তু কিছু মনে করতে পারি না।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল ডিশেম্বার মাসে।পরের বছর ১৪ই জানুয়ারিতে আমার জন্য বিশাল এক চমক অপেক্ষা করছিল। সে আমাকে ফোন করে আমার ছোটবেলার স্কুল এর সামনে আসতে বলে। আমি অবাক হয়ে জাই। তারপরও গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে সে হাতে একটি জংলি ফুল নিয়ে আমার কাছে আসছে। দৃশ্যটি খুব পরিচিত মনে হল। কাছে এসে সে বলল “আমি তমাকে ভালবাসি। তুমিও আমাকে ভালো না বাসলে আমি গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করব।”

আমার হটাত সবকিছু মনে পড়ে। ঠিক এই ঘটনাটি আমার জিবনে ঘটেছিল ১৪ বছর আগে। ক্লাস সিক্স এ পরতাম আমি। একদিন বেশ সুন্দর একটি ছেল এসে আমাকে ঠিক এভাবেই প্রপোজ করেছিল। আগেই বলেছি আমি বেশ কালো। তাই এত সুন্দর একটি ছেলে আমাকে প্রেম নিবেদন করায় আমি অনেক খুশি হয়ে যাই। ছেলেতি আমার দিকে এক্তি জংলি ফুল এগিয়ে দেয়। অনেক লাজুক হউয়া সত্ত্বেও আমি ফুলটি হাতে নেই। হাতে নেয়ার সময় সে আমাকে বলে ফুল হাতে নিয়ে ফেলে দিলে সে আত্মহত্যা করবে। ফুল হাতে নেয়ার পর আমি দেখতে পাই ফুল এর ভেতরে এক ভয়ঙ্কর পতঙ্গ। দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু তবুও আমি হাত থেকে ফুল ফেলি নি এই ভয় এ যে সে যদি আমাকে ভুল বুঝে আত্মহত্যা করে! হয়ত সে জানেও না যে ফুল এর মাঝে একটি কুৎসিত পতঙ্গ আছে।

কিছুক্ষণ পর তার বন্ধুরা হাসতে হাসতে বের হয়। পরে বুঝতে পারি, তারা শুধু মজা করার জন্য এই কাজটি করেছে। তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে “পোকাটা দেখতে ঠিক তোমার মত,তাই না?” প্রচণ্ড অপমানিত হই আমি। সেই ছেলেটিও বলে ওঠে “তুমি কি মনে করেছিলে, তোমার মতো মেয়েকে আমি ভালবাসবো!!!” আমার চোখ ফেতে সেদিন অঝোরে অশ্রু ঝরেছিল।

বুঝতে পারলাম, সেই ছেলেটি এখন আমার স্বামী। সে বলল, “সেদিন তোমার সাথে যে খারাপ ব্যাবহার আমি করেছি, তার ফলও ভোগ করেছি। এক সুন্দরী মেয়েকে আমি অনেক ভালবাসতাম। আমাদের মাঝে সম্পর্কও ছিল। একদিন একটা এক্সিডেন্ট এ আমার পা এর হাড় ভেঙ্গে যায়। ডাক্তার বলেছিল থিক হয়ে যাবে কিন্তু সময় লাগবে। আমি দুষ্টুমি করে ওই মেয়েকে বললাম যে আমার পা আর কখনও ভাল হবে না। তারপর খেয়াল করলাম ও আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একদিন আমাকে সে বলল যে সে পঙ্গু একজনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। সেদিন আমি তাকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমি আসলে ঠিক আছি। কিন্তু আর বললাম না। সেদিন কেন যেন বারবার আমার তোমার কথা মনে হচ্ছিল। তোমার কান্নামাখা মুখটি বারবার চোখ এর সামনে ভেসে উঠছিল। সেদিন আমি ঠিক করলাম যে আমি তোমাকেই বিয়ে করব। অনেক কষ্টে তোমাকে খুঁজে বের করলাম।বিয়ে করলাম। ভেবেছিলাম আগে প্রপোজ করে পরে বিয়ে করব। কিন্তু তোমার ফ্যামিলি তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল। যদি অন্য কারও সাথে তোমার বিয়ে হয়ে যায় সেই ভয়ে আগে বিয়ে করে নিলাম। আজ সেই ঘটনার ঠিক ১৪ বছর সেই একই দিনে আমি তোমাকে আবারো প্রপোজ করছি। এবার মন থেকে। ফুলটি নাও। না নিলে আমি গারির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করব।”
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে বলল “ভয় নেই, এবার কোন কুৎসিত পোকা নেই ফুলটিতে।” আমি তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম, ফুলটি কি নেব কি না।

আপনাদের কি মনে হয়? নেয়া উচিত হবে?যদি নিই তাহলে বাকি জীবন সুখের হবে। যদি না নিই, তবে কি হবে আমি নিজেও জানি না।

(ঘটনা পুরাই কাল্পনিক। কার ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিলে গেলে মাফ চাই)

'এই,এই...প্লীজ উঠোনা লক্ষিটি...এই উঠো...''

'এই,এই...প্লীজ উঠোনা লক্ষিটি...এই উঠো...''

এতক্ষণ তুর্য দেখছিল ওর বস ওর দিকে এতগুলা ফাইল ছুঁড়ে মেরেছেন। কিন্তু তার পর পরই বস হঠাৎ মেয়েদের আওয়াজে কথা বলছেন দেখে পেট ফেটে হাসি এল তুর্যের...তার উপর আবার কি অদ্ভুদ সম্ভাষণ...

''তুর্য ,এই তুর্য...১০ সেকেন্ডে না উঠলে কিন্তু গায়ে পানি ঢেলে দিব আমি।''

চোখ মিটমিট করলো তুর্য। সামনে একটা হাসি হাসি মুখ দেখা যাচ্ছে। প্রথমে বুঝতে পারলনা কোথায় আছে...ভালো মতো তাকাতেই বুঝতে পারল সামনের হাসি হাসি মুখ টা কার। তারমানে স্বপ্ন দেখছিল? যাক বাবা বেচে গেলাম ভেবে আবার চোখ বুজে ফেলল তুর্য।

আবার ওর কাঁধ ঝাঁকাল নিঝুম

'প্লীজ,আমি এখন ঘুমাব...কালকে অফিস আছে''তুর্য মিনমিন করে বলতে চেষ্টা করলো

''আধ ঘণ্টার জন্য ঘুম ভাংলে কিচ্ছু হয়না...দেখি এখন উঠ...নাহলে কিন্তু আমি পানি আনতে গেলাম''

এবার বিনা বাক্যব্যয়ে তুর্য উঠে বসলো। নিঝুমের পক্ষে সব সম্ভব। আরেকবার রাত দুপুরে এরকম না ওঠায় নিঝুম ওর গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলো। ব্যাপারটা মনে করেই ঠাণ্ডায় ওর গা কেপে উঠল।

''মুখটা একটু ধুয়ে আসো...নাহয় আবার ঘুমায় যাবা।''

বাধ্য ছেলের মতো তুর্য বাথরুমে গেলো। বের হয়ে দেখে যে টেবিলের উপর একটা ট্রেতে দুটো মগ রাখা।এরপর তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। রাত দুইটা বাজে।দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল আপনা আপনি। রাত দুপুরে কেন যে নিঝুম এমন পাগলামি করে!

বারান্দাতে টুকটাক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আজকে কি জোছনা নাকি? নিঝুমের আওয়াজ শোনা গেলো

''তুমি বের হয়েছ? একটু কষ্ট করে ট্রেটা নিয়ে এসোনা প্লীজ...''

''আনছি''

বারান্দায় ঢুকে দেখল এক কোনায় মাদুর বিছানো। তার উপর নিঝুম বসে আছে। চাদের আলো নিঝুমের মুখের উপর এসে পড়ছে। এতো স্নিগ্ধ দৃশ্য দেখে কারো মনে কি আর রাগ থাকতে পারে? এম্নিতেই তুর্য নিঝুমের উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেনা। এত মায়া মেয়েটার মাঝে! ও নিঝুমের পাশে গিয়ে বসলো।

''খুব রাগ করেছ আমার উপর?'' হাসি হাসি মুখে জানতে চাইল নিঝুম

''করেছিলাম,কিন্তু এখন আর রাগ নেই''

''হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। তখন বাইরে দেখি কি সুন্দর আকাশ। একা একা দেখতে ভালো লাগবেনা। তাই তোমাকে ডাকলাম '''

হাসল তুর্য ''ভালো করেছ''

হাত বাড়িয়ে কফির মগ টা নিঝুমের হাতে দিল। ওর আসলেই ভালো লাগছে পরিবেশটা। কেমন যেন অন্য জগতের বাসিন্দা মনে হচ্ছে নিজেদের। নিঝুম শক্ত করে তুর্যের হাত ধরে রেখেছে। যেন ছেড়ে দিলে আর তুর্যকে খুজে পাবেনা। আহ! তুর্যের মনে হচ্ছে এই সময়টাকে যদি এখানে আটকে রাখা যেত!!

অফিসে বসে ফাইল চেক করছিল তুর্য। লাঞ্চ টাইম হয়ে এসেছে। এই ফাইলটা শেষ করেই খেতে যাবে। এমন সময় মেসেজ এল। নিঝুমের লেখা। দেখেই তুর্যের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুতে উঠল। মেসেজে লিখা

''একা ঘরে বসে আমি

ভাবছি শুধু তোমায়

তুমি আমার ঘরের বাতি

আঁধারও তাই পালায়''

সাথে সাথে আরেকটা মেসেজ ''জলদি খেয়ে নাও'' লেখা।

প্রায় নিঝুম এই কাজ করে। ছোট ছোট ছড়া লিখে পাঠায়। রাগ করলেও ছড়াই লিখে। অনেক যত্ন করে তুর্য ওর মোবাইলে মেসেজ গুলো রেখে দিয়েছে। তুর্য রিপ্লাই দিল

''তোমাকে অনেক ভালবাসি''

এরপর আরেকটা দিল ''খেতে যাচ্ছি,তুমিও খেয়ে নাও''

এসব ছেলেমানুষি করার কথা তুর্য আগে কখনও ভাবতেও পারেনি। কিন্তু এখন এই কাজগুলো করে ও অনেক আনন্দ পায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল নিঝুম কখনও একটা গিফট পেয়ে এত খুশী হয়না যতটা না একটা মেসেজ বা একটা গোলাপ পেয়ে হয়। নিঝুমের মতো একটা মেয়ে তার মতো ছেলের ভাগ্যে কিভাবে জুটল এটা ভাবতেই তুর্যের অবাক লাগে।

যেদিন নিঝুম কে প্রথম দেখতে গিয়েছিল সেদিনের কথা মনে পড়লে এত ভালো লাগে ওর! একান্তে কথা বলার জন্য যখন ওদের কে সুযোগ দেয়া হয় তখন নিঝুমের প্রথম প্রশ্ন ছিল

''আপনি কি চোখে কম দেখেন?''

তুর্য অবাক হয়ে বলেছিল ''কেন? আমার চোখ তো ঠিক আছে।''

''ঠিক থাকলে আমাকে কেন পছন্দ করলেন?''

''এটা কোন ধরনের প্রশ্ন?'

''আমি তো দেখতে ভালো না। বেশির ভাগ ছেলেই আমার ছবি দেখেই না করে দেয়''

''আমার তো মনে হয় ওই ছেলেগুলোরই চোখ খারাপ''

ফিক করে হেসে দিলো নিঝুম। হাসলে ওর গালে টোল পড়ে। এই হাসি দেখেই নিঝুমের প্রেমে পড়ে গেলো তুর্য।

''প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস

তোমার টোলে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ''

বাসায় এসে সবাইকে জানিয়ে দিল তুর্য,এই মেয়েকেই বিয়ে করবে সে।

চারটা বাজে। এখনি তুর্য অফিস থেকে বের হবে। নিঝুম বারবার কল দিচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে অফিসের দরজায় একটা বাড়িও খেল তুর্য। নিচে নেমে গাড়ির স্টার্ট করতে যাবে তখনি আবার কল আসলো। নিঝুম।

''হ্যাঁ আমি আসছি,১০ মিনিট ওয়েট করো।''

''গাড়ি থেকে নেমে বাইরে এসো।''

''কেন?''

''আমি বাইরে রিকশা নিয়ে এসেছি,আজকে রিকশায় ঘুরবো''

''এখন?''

''জী এখন''

তুর্য নেমে আসলো। বাইরে সত্যি নিঝুম রিকশাতে বসে আছে। মুখে সেই চির চেনা টোল পড়া হাসি। রিকশাতে উঠে বসলো তুর্য। ওর কি রাগ করা উচিত বুঝতে পারছেনা। এই মুহূর্তে কি নিঝুম এসব না করলে হয়না? নিঝুম মনে হয় তুর্যের চেহারা দেখে আন্দাজ করতে পেরেছে।

''খুব জ্বালাই তোমাকে,না?''

কিছু বলল না তুর্য। ও ঠিক করলো আজ নিঝুমের কোনও কথার জবাব দিবেনা।

''এই শোন,রাগ করেছো ভালো কথা। কপাল কুঁচকাও কেন? মনে হচ্ছে ৬০ বছরের বুড়ো লোকের পাশে বসে আছি।আমি যতদূর জানি তোমার এত বয়স হয়নাই। নাকি বিয়ের সময়ে মিথ্যা বলেছিলে?''

তুর্য মুখ শক্ত করে অন্য দিকে আছে, এই মুহূর্তে ওর একটাই চিন্তা কিভাবে ওর পাশে বসা ফাজিল মেয়েটার কথা না শোনা যায়। কারন অলরেডি ওর হাসি পাচ্ছে। আচ্ছা মুশকিল হল দেখি।

''দেখি তো,তোমার দাঁত দেখি... আসলই তো মনে হয়...এই তোমার চুল গুলা কি নকল?'' বলে তুর্যের চুল ধরে হাল্কা টান দিল নিঝুম। তুর্য কটমট করে তাকাতেই বলল

''নাহ, একদম আসল দেখি। আমার তো মনে হচ্ছিল তুমি কিছু করেছো। ওই যে একটা চুলের বিজ্ঞ্যাপন আছেনা? ''টাক সমস্যার তাক লাগানো সমাধান'' ওইটার মতো''

তুর্য আর পারলনা... হোহো করে হেসে উঠল। নিঝুমের সাথে রাগ করে থাকা একদমই অসম্ভব।

''তুমি আসলেই একটা চীজ'' নিঝুম ও তুর্যের সাথে সাথে হাসছে। এত সুন্দর হাসি মেয়েটার! বিয়ের পর এত দিন হয়ে গেলো তারপর ও তুর্য নিঝুমের হাসি যতবার শুনে মনে হয় প্রথমবারের মতো শুনছে। এটা কি শুধু ওর সাথেই হয়?

''কি দেখছ এভাবে?''

''তোমার হাসি'' নিঝুম একটু লজ্জা পেয়ে যায়।

''আমি চাই আমার মেয়ে তোমার মতই হাসবে,টোল পড়া হাসি''

''ছেলেও তো হতে পারে''

''তা পারে। কিন্তু আমি চাই আমার লাইফে আরেকটা ছোট্ট নিঝুম আসুক'' নিঝুম কিছু না বলে তুর্যের হাত ধরল। ওর এই কাজটার মানে তুর্য এখন বুঝে। খুব আবেগপ্রবন হয়ে গেলে নিঝুম কথা বলতে পারে না।শুধু তুর্যের হাত ধরে রাখে। এই একটা সময়ে ''নিঝুম'' নামের সাথে নিঝুমের সাথে মিল পাওয়া যায়। তুর্য বুঝতে পারে নিঝুম ওকে প্রচণ্ড ভালবাসে। ঠিক যেমন ও নিঝুম কে।

''একটু সমস্যা হয়েছে,আপনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, ডাক্তার আসছেন।'' এ কথা বলেই নার্স দ্রুত চলে গেলো। তুর্য বুঝতে পারলনা প্রথমে। কি ধরনের প্রবলেম? নিঝুমের ডেলিভারি তে কোনও জটিলতা আসার কথা না। ওরা ডেইলি চেক আপ করেছে। তখন তো বাচ্চার কন্ডিশন ভালই ছিল।

অস্থিরভাবে পায়চারি করছে তুর্য। অনেক বেশি টেনশন হচ্ছে। ওরা দুজন ঠিক আছে তো? দু রাকআত নফল নামাজ পড়ে আসবে কি? খুব কান্না পাচ্ছে তুর্যর। কেন জানে না।

''এই তুর্য,চেহারা এমন করে রেখেছিস কেন?'' শাওন পাশে এসে দাঁড়াল। তুর্যের খুব কাছের বন্ধু শাওন।

''দোস্ত,নিঝুমের কিছু হবে নাতো? ওর কিছু হলে আমি বাচবোনা''

''আজব তো,তোকে একথা কে বলেছে? ভাবি ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না...আরে বাবা কাঁদছিস কেন মেয়েদের মতো?''

তুর্য কোনও কথা বলল না। ওর শুধু ইচ্ছে হচ্ছে নিঝুমের পাশে ওর হাত ধরে বসে থাকতে। নিঝুম কে বলতে যে তুর্য ওকে কতটা ভালবাসে।

''আল্লাহ পাক,আমার নিঝুমকে ঠিক করে দাও। আমি আর কিছু চাইনা। শুধু নিঝুমের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়'' মনে মনে তুর্য দোআ পরেই যাচ্ছে।

ডাক্তার কে বের হতে দেখে তুর্য জলদি হেঁটে গেলো সামনে। ভয়ে আর দুশ্চিন্তায় তুর্য কিছু বলতে পারলনা। চেহারা দেখে বোধহয় ডাক্তার বুঝে নিলেন তুর্যের অস্থিরতা...তুর্যের হাত ধরে বললেন

''dont worry youngman,তোমার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে। একটু দুর্বলতা ছিল প্রথমে। but she pulled up...আর তোমার পুত্র সন্তান হয়েছে। he is in perfect and healthy condition....congratulations''

তুর্য কোনও কথা বলল না। ওর চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু ঝরছে। তবে কিছুক্ষণ আগে যা ছিল অনিশ্চয়তার,এখন তা হল আনন্দের।

তোয়ালের মধ্যে পেঁচিয়ে একটা ছোট পুতুল কে তুর্যের কোলে দেয়া হয়েছে। এত নরম শরীর যে তুর্যের ভয় লাগছে কোলে নিতে। সে অনেক সাবধানে কোলে নিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকাল। আর অভিভূত হয়ে গেলো।এটা ওর ছেলে! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ওর নিজের অংশ!!! ও একবার ছেলের দিকে আর একবার নিঝুমের দিকে তাকাচ্ছে। নিঝুম বেডে শুয়ে আছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। ওর এখন বিস্রাম দরকার। কিন্তু বাবা আর ছেলের প্রথম দেখা হওয়ার মুহূর্তটা যাতে মিস না করে তাই সে অনেক কষ্টে জেগে আছে।

''কি? নিজেকে বাবা বাবা লাগছে?''

তুর্য লাজুক হাসি দিল।''ও দেখতে একদম তোমার মতো হয়েছে।''

''উঁহু,তোমার মতো''

''আমি ওকে কি ডাকব জানো? সূর্য'...তুর্য পুত্র সূর্য'' তুর্যের মনে হয় নামটা বেশ পছন্দ হল। বেশ কয়েকবার আপন মনে সূর্য বলল সে। এরপর এক হাতে সূর্য কে রেখে খুব সাবধানে অন্য হাত নিঝুমের মাথায় রাখল।

''এখন ঘুমাওতো সূর্যের আম্মু,আমি পাশেই আছি''

''জানি'' মিষ্টি হাসি দিল নিঝুম। এত ধকলের পরও নিঝুমের হাসি অমলিন রয়ে গেছে। তুর্যের হাত টা নিজের হাতে নিল সে। শক্ত করে ধরে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল। পরম নির্ভরতার সাথে ঘুমের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে যেতে নিঝুম অনুভব করলো যে ও একা নয়। দুজন মানুষঅধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওর জন্য।

প্রত্যেক বৃহস্পতিবার বিকেলে তুর্যকে জলদি বাসায় ফিরতে হয়। নিঝুমের কড়া আদেশ। এর হেরফের হতে পারবেনা।এদিন ওদের রিকশা ভ্রমনের দিন।তুর্য অনেক নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ত পালন করে। রিকশায় ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে প্রায় ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নিঝুম অনেক মজা পায় এসব দেখে আর সূর্যকে বলে'' দেখলে আব্বু,তোমার বাবা কিচ্ছু জানে না'' সূর্য তখন প্রবল বেগে মাথা নাড়ে। ওর বাবা সব জানে। আর তুর্য বলে

''ছেলে আমার সবই জানে,

তাইতো শুধু বাবার কথাই মানে''

মা আর ছেলের হাসি তখন দেখে কে।

সূর্য হাসলে বাঁ গালে একটা টোল পড়ে,ঠিক নিঝুমের মতো

লিখেছেনঃ নাজমুন নুসরাত

রুমকি বলল, ‘তুমি একটা আস্ত গাঁইয়া।’

রুমকি বলল, ‘তুমি একটা আস্ত গাঁইয়া।’

কথাটা সে আগেও বলেছে, প্রায়ই বলে, আমি কিছু মনে করি না। কিন্তু সেদিন মেজাজটা সত্যি চড়ে গিয়েছিল। বললাম, ‘কেন? গাঁইয়া কেন? তোমার উপকার করলাম, সেটা অন্যায় হয়ে গেল?’

‘উপকার তো করেছ, কিন্তু শেষে ওই যে কথাটা বললে, সেটা বাংলা সিনেমার ডায়ালগের মতো হয়ে গেল না?’

‘হ্যাঁ, তা একটু হয়েছে, তবে এ ছাড়া আর কী উপায় ছিল?’

ঘটনাটা খুলে বলি—কয়েক দিন ধরে রুমকিকে একটা ছেলে উত্ত্যক্ত করছিল। কলেজগেটে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, গাড়ি থেকে নামলেই কেমন ইশারা করে, ফোন নম্বর জানতে চায় ইত্যাদি। রুমকিই আমাকে জানিয়েছিল এসব কথা। বলেছিল, ‘একদিন তুমি আমার সঙ্গে যাবে?’

আমি রাজি। গেলাম। মোটরসাইকেলে বসা রোদচশমাপরা ছেলেটাকে ভিলেনের মতো মনে হয়েছিল দেখতে। সোজা সামনে গিয়ে ওর চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিয়ে বললাম, ‘মেয়েদের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে মাস্তানি করা ছাড়ো, নইলে…।’

ছেলেটা অবাক, আমার পেছনে দাঁড়ানো রুমকিকে দেখে বলল, ‘আপনি কেন…ও আপনার কী?’

তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে আমি বলেছি, ‘ও আমার প্রিয়তমা।’

সংঘর্ষের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কী বুঝে ছেলেটি কথা বাড়াল না। হঠাৎ মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিয়ে হুশ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি বিজয়ীর দৃঢ়তায় রুমকিকে বললাম, ‘দেখো, ও আর কোনো দিন আসবে না।’

তখনই রুমকি বলল কথাটি, ‘গাঁইয়া’। উপকারের এই প্রতিদান!

আমি গ্রাম থেকে এসেছি। উচ্চমাধ্যমিকে রীতিমতো ভালো রেজাল্ট করে সুযোগ পেয়েছি মেডিকেল কলেজে পড়ার। হোস্টেলে সিট না পাওয়া পর্যন্ত মেসে থাকব ঠিক করেছিলাম। এমনকি হোটেলের একটি রুম নিয়েও থাকতে পারতাম। ছেলের জন্য খরচ করার মতো যথেষ্ট টাকা-কড়ি আছে বাবার। কিন্তু রহমান সাহেব, আমার দূরসম্পর্কের চাচা বাবাকে বলেছিলেন, ‘আমার এত বড় বাড়ি, বউ-বাচ্চা নিয়ে মোটে তিনজনের সংসার, ছেলেটা এখানেই থাকুক।’

সেই থেকে থাকা। আমি নরম মনের মানুষ। রুমকিকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিল আমার। ‘এ’ লেভেলের ছাত্রীটি ঘরে স্কার্ট-টপ্স অথবা হাঁটু দৈর্ঘ্যের জিনসের ট্রাউজার আর স্লিভলেস টি-শার্ট পরে থাকে। বাদামি কটা চোখ, গোলগাল ফরসা মুখ আর পিঠ পর্যন্ত সোজা ঝরঝরে চুল—সব মিলিয়ে একটা আদুরে বেড়ালের মতো।

রুমকি কিন্তু শুরুতে একেবারেই পাত্তা দিত না আমাকে। কেমন একটু অবজ্ঞার ভাব ছিল চেহারায়। ওর এমন আচরণের কারণে এ বাড়ি ছাড়ার কথা ভেবেছি অনেকবার। ও কি আমাকে আশ্রিত ভেবেছে!

কিন্তু এর মধ্যে কয়েকবার আমার কাছে অঙ্ক বুঝতে এসে একটু সমীহের ভাব তৈরি হয়েছে। আমি ইংরেজিতে ভালো, কিন্তু রুমকির মতো ইংরেজিতে ফুটফাট কথা বলতে পারি না। এখন ওকে আমি অঙ্ক করাই, ও আমাকে কম্পিউটার শেখায়। আমি দ্রুত কম্পিউটার শিখি, কিন্তু রুমকির মাথা মোটা, সহজে অঙ্ক বোঝে না। বোঝে না যে তা নিয়ে কোনো সংকোচ আছে বলেও মনে হয় না, উল্টো কথায় কথায় আমাকে ডাকে গাঁইয়া। আসলে বাবা-মায়ের প্রশ্রয়ে মেয়েটার এ অবস্থা। তাঁরা আমাকে বলেন, ‘ওর কথায় কিছু মনে কোরো না, বাবা। ছেলেমানুষ…।’ এত বড় ধিঙ্গি মেয়ে ছেলেমানুষ! শুনে আমার গা জ্বলে, আবার হাসিও পায়।

দিনের অর্ধেক সময় ইংরেজি ছবি দেখে রুমকি। আমাকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, লেওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর কথা বলে। এসব ছবি আমি দেখি না। আমি বাংলা ছবির ভক্ত। গ্রামে পূবালী সিনেমা হলে নতুন ছবি এলেই বন্ধুদের নিয়ে দেখতে যেতাম। আমি রুমকিকে অপু-শাকিব খান, পূর্ণিমা-রিয়াজের কথা বলি। ও শুনে অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে। করে বটে, আবার আমার কাছে বাংলা ছবির গল্প শুনতে আসে। আমি শহুরে ধনীর দুলালি অপুর সঙ্গে গ্রামের সহজ-সরল শাকিব খানের প্রেমের গল্প বলি। শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে রুমকি। বলে, ‘ফানি, অ্যাবসার্ড!’ আমি মিইয়ে যাই।

কয়েক দিন ধরে রুমকিকে কেমন উসখুস দেখাচ্ছে। কেমন জানি আনমনা। আমার বাংলা ছবির অভিজ্ঞতা বলে, মেয়েটা প্রেমে পড়েছে। আমার খুব ভয় হয়। এখন তো ওর ভুলের বয়স, ভুল করে রাংতাকে রুপো ভাবছে না তো মেয়েটা! খুব জানতে ইচ্ছে করে ছেলেটা কে। কিন্তু গেঁয়ো ভাববে বলে সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারি না।

সেদিন ছুটির দিন ছিল। রুমকি পিকনিকে গেছে কলেজ থেকে। আমি একা কী করি, কী করি ভাবতে ভাবতে আমার রুমে ফেলে যাওয়া ওর ল্যাপটপটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে শুরু করেছি। এত বেখেয়ালি মেয়ে, পাসওয়ার্ড দিয়ে যায়নি। কী এক কৌতূহলে (এটা সত্যিকারের গ্রাম্যতা) রুমকির ‘মাই কম্পিউটারে’ ঢুকে পড়লাম। চোখ বুলোতে গিয়ে হঠাৎ ডি-ড্রাইভে ‘মাই লাভ’ নামের একটি ফাইল দেখে কৌতূহল পৌঁছাল চরমে। যা ভেবেছিলাম তা-ই। রুমকি এখানে লিখে রেখেছে অনেক আবেগ-অনুভূতির কথা। কার উদ্দেশে যেন লিখেছে গভীর প্রেমের আকুতি। ভাবছি, ছেলেটা কে? আরও একটু এগিয়ে চমকে উঠলাম হঠাৎ। রুমকি লিখেছে, ‘অল আর হিপোক্রিট অ্যারাউন্ড মি, ইউ আর ওনলি দ্য একসেপশন. দ্যাট ডে ইউ কল্ড মি প্রিয়তমা। ডিড ইউ মিন ইট? আই লাভ ইউ, গাঁইয়া…।’

মেয়েটা প্রেমে পড়েছে বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু কী বোকা আমি! অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যে শাকিব খানের প্রেমে পড়েছে বুঝতে পারিনি।

লেখাপড়া মাথায় উঠল। রাতে ঘুম হয় না। এর মধ্যে হলে সিট বরাদ্দ হয়েছে আমার নামে। এখান থেকে আপাতত না পালালে পরীক্ষা পাসের যে কোনো আশা নেই, তা তো নিশ্চিত। চাচা-চাচিকে বললাম। তাঁরা রাজি হলেন দোনামনা করে। রুমকিকে বলতেই দেখলাম তার চোখে পানি। নায়িকার সেই অশ্রুবিন্দু দেখে আবার শাকিব খান জেগে উঠল আমার ভেতর। বললাম, ‘যত দূরেই যাই, তুমি আমার মনের কাছেই থাকবে, প্রিয়তমা।’

গার্লফ্রেন্ড এবং আমার ক্ষমতা

গার্লফ্রেন্ড এবং আমার ক্ষমতা
 
যাক আবার প্রমানিত হল।কি ভাবছেন যে কি প্রমানিত হল?যেটা প্রমানিত হল সেটা হচ্ছে আমি যদি কোন মেয়েকে পছন্দ করি তাহলে সেই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকে।আর যদি বয়ফ্রেন্ড না থাকে তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে তার বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়।কোথা থেকে হয় আমি জানি না কিন্তু হয়ে যায়।এবং আমি কোন মেয়েকে পছন্দ করার পর তার যে বয়ফ্রেন্ড হবে এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারি।এমনকি ষ্ট্
যাম্প পেপার এ লিখে দিতে পারি।সৃষ্টিকর্তা সবাইকে পৃথিবীতে কোন না কোন ক্ষমতা দিয়ে পাঠায়।আমাকে বোধহয় এই ক্ষমতাটা দিয়েছেন।চিন্তা করছি এটা নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করব নাকি।যে সব মেয়ের বয়ফ্রেন্ড দরকার তারা আমার সাথে যোগাযোগ করবে।আমার ব্যবসার শ্লোগান হবে এমন “আপনি কি একাকী জীবন কাটাচ্ছেন?আপনার কি বয়ফ্রেন্ড দরকার?তাহলে এখনই যোগাযোগ করুন............”।এত কথা বললাম কারন কিছুদিন আগে একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল।আজ একটু আগে তাকে আমার সামনে দিয়ে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যেতে দেখলাম,এবং এটা নতুন না এর আগেও অনেকবার ঘটেছে।এই মেয়েটা আমাদের এলাকায় নতুন এসেছে।দেখতে মোটামুটি ভালই।কি ভাবছেন?যে আমি চেহারা দেখে ভালবাসি তার মানে আমি ভালোবাসা কি জানি না।আপনারা বলবেন যে ভালবাসতে গেলে চেহারা না মন দেখতে হয়।আমিও এক সময় এটাই বিশ্বাস করতাম।কিন্তু দেখলাম পৃথিবীটা “মন দেখে ভালোবাসায়” বিশ্বাস করে না।যদি তাই করত তাহলে মানুষ শাঁকচুন্নির সাথেও প্রেম করতো।যদি তাই হতো তাহলে সবাই তার বাহ্যিক সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টায় থাকতো না,সবাই তার মনের সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতো যেটা কেউই করে না।যদি তাই হতো তাহলে পার্লার গুলো কয়েকদিন এর মধ্যে ভুট হয়ে যেত।আর যারা মন দেখে ভালবাসে তারা অসাধারন ব্যাক্তি।আমি খুব সাধারন একটা মানুষ।তাই শুধু মন দেখে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।যাইহোক আসল কথায় ফিরে আসি।মেয়েটাকে প্রথম দেখে বেশ ভাল লেগেছিল।কিন্তু আজ সে আমার সামনে দিয়ে আরেক জনের হাত ধরে চলে গেল।এবং এই দৃশ্য টা দেখলাম রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময়।এমন সময় আমার পাশে একজনের চায়না মোবাইলে মমতাজের সেই বিখ্যাত গান বেজে উঠলো “বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায়............” ।মেয়েটাকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখে মেজাজ এমনিতেই গরম ছিল গানটা শুনে আরও গরম হয়ে গেল।আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম যিনি এই গানটা বাজাচ্ছেন তার বয়স ৪০-৪২ হবে।আমি তাকে বললাম“কাকার গার্লফ্রেন্ড কি ভেগে গেছে?”আমার প্রশ্ন শুনে তিনি আমার দিকে আগুন চোখে তাকালেন।আমি সেই আগুনে ঘি স্বরূপ একটা ছোট্ট হাসি দিলাম।“অসভ্য কোথাকার,বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় শেখনি?”আমি হাসিমুখে বললাম “জি না সেরকম কোন ইস্কুলে আমি ভর্তি হয়নি।তবে আপনি যে আমার দলের লোক সেটা বোঝা যাচ্ছে।কারন আমার জানামতে কোন সভ্য লোক রাস্তার ধারে দাড়ায় মোবাইলে ফুল সাউন্ড দিয়ে গান শোনে না”।আমার এই কথায় লোকটা বেশ দমে গেল।গজগজ করতে করতে তিনি সেখান থেকে বিদায় হলেন।লোকটা চলে যাওয়ার পর গানটা নিয়ে চিন্তা করলাম,আমার বেলায় বোধহয় গানটা এমন হবে “বান্ধবী যখন বয়ফ্রেন্ড লইয়া চায়ের দোকানের সামনে দিয়া হাইট্টা যায়............”।এমন সময় বন্ধু শিহাব এসে পাশে বসল।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখটা শুকনা।বুঝলাম তার কোন এক গার্লফ্রেন্ড তাকে ছ্যাকামাইসিন দিয়েছে।আমার এই বন্ধুটা একসাথে তিন চারটে প্রেম করে এবং কিছুদিন পর পর তার কোন এক গার্ল ফ্রেন্ড তাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে যায়।তার ফলে দুই একদিন তার মন খারাপ থাকে।আবার দু দিন পর আরেকটা জুটে যায়।কোথা থেকে পায় জানি না।তবে এটুকু জানি তার গার্লফ্রেন্ড দুটোর নিচে কখনও নামেনি।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
-কিরে কোনটা গেল?
-আর বলিস না মেয়ে মানুষ মানেই খারাপ।মৌয়ের যে আরও দুইটা বয়ফ্রেন্ড আছে তা আজকে জানলাম।কত্ত বড় বেয়াদপ মেয়ে চিন্তা কর।তিনটা ছেলের সাথে একসাথে প্রেম করে।
শিহাবের কথা শুনে খুব হাসি লাগলো।সে নিজে যখন একসাথে তিন চারটে প্রেম করে তখন সেটা কোন দোষ না।মানুষ বড়ই আজব প্রাণী।নিজের দোষগুলো সে কখনই খুজে পায় না।
আমি তাকে বললাম “তুই যখন একসাথে তিন চারটে প্রেম করিস তখন সেটা কোন দোষ হয় না তাই না?মানুষ নিজের দোষ কখনই খুজে পায় না বুঝলি।তোকে যদি একটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তোর নিজের দোষ খুঁজতে বলা হয়,তাও তুই তোর একটা দোষও ............?আমার কথা শেষ হল না সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে ড্রাইভার মাথা বের করে বলল “ভাইজান এই বাসাটা কোথায় একটু বলবেন”?শিহাবের মাথা গরম ছিল।ড্রাইভার এর কথা শুনে ধমকের সুরে বলল “ওই মিয়া আমি আপনার কোন জন্মের জান?আর ওই বাসা আপনার নানার বাসার পাশে,এখন সামনে থেকে যান”।ড্রাইভার শিহাবের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল।আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বললাম “সরি ভাই ওনার মাথা একটু গরম আছে,আমি আপনাকে ঠিকানা বলে দিচ্ছি”।ড্রাইভার কে যখন ঠিকানা বলছি তখন গাড়ির পেছন দিকে চোখ গেল।দেখলাম একজন রূপসী বসে মোবাইল এ কি যেন করেছেন।ওকে দেখে মনে হলে এই বার আমি আমার গার্লফ্রেন্ড পেলাম।মনে হওয়ার সাথে সাথে মনটা খারাপ হয়ে গেল কারন সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরেকটা ক্ষমতা দিয়েছেন আর সেটা হচ্ছে আমি যা চিন্তা করি ঠিক তার উল্টোটা ঘটে।তার মানে এইমেয়ে কোন দিন আমার গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।ড্রাইভার কে ঠিকানা বলে যখন আমার জায়গায় ফিরে যাচ্ছি তখন মেয়েটার সাথে একবার চোখাচোখি হল।আমি তার চোখের দিকে দেখে থেমে গেলাম।এমন সুন্দর চোখ আমি খুব কম দেখেছি।আমি মনে হয় মেয়েটার প্রেম এ পড়ে গেছি।সাথে সাথে আমার ক্ষমতার কথা মনে পড়ল।আমি প্রেম এ পড়েছি মানে এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে আর যদি না থাকে তবে কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।আমি আশাহত হয়ে আমার জায়গায় ফিরে গেলাম।

বন্ধুর সাথে মার্কেটে এসেছি কিছু কেনাকাটা করতে।মার্কেটে ঘোরাঘুরি করছি সেই সময় তাকে আবার দেখলাম,সেই “সুনয়না”।একটা দোকান থেকে বের হচ্ছে।আমি তাকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না,চিন্তা করলাম এখন গিয়ে কথা বলব।কিন্তু সাহস হল না।হটাত মনে হল এখন না কথা বললে আর হয়ত সুযোগ পাব না।তাই মনে সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে গেলাম।যখনি তার কাছাকাছি গেছি,তখনি দেখলাম একটি সুদর্শন যুবক তার কাছে গিয়ে বলল “তাড়াতাড়ি করো দেরি হয়ে যাচ্ছে”।সেই ছেলেটার সাথে একটা ছোট বাচ্চা ছিল।ছোট বাচ্চাটি সেই সুনয়নাকে উদ্দেশ্য করে আদো আদো কণ্ঠে বলল “আম্মু দেখ আমি এতা কিনেতি”।আমি তখনি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।আমার যে ক্ষমতাটা সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন সেটা আবার প্রমানিত হল,কিন্তু তিনি যে আমার ক্ষমতাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন তা আমি বুঝিনি।আগে কাউকে পছন্দ হলে তার বয়ফ্রেন্ড পর্যন্ত ব্যপারটা সীমাবদ্ধ থাকতো কিন্তু এখানে আরও বেশী,এই মেয়েটা বিবাহিত।তার মানে এখন থেকে আমি যদি কাউকে পছন্দ করি তাহলে সে বিবাহিত হবে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাকে হাসিমুখে একটা ধন্যবাদ দিলাম।এমন সময় দেখলাম শিহাব আমার পাশে।দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল “কিরে হাসিস কেন?না পেয়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি?”ওর হাসি দেখে মনে হল সিনেমায় নায়ক যেমন উড়ে গিয়ে ভিলেন কে লাথি মারে ওর দাঁতে যদি আমি তেমন করে একটা লাথি মারতে পারতাম,মনটা ভাল হয়ে যেত।আমি বললাম“না পা গোল হবে কেন,পা লম্বাই আছে।তবে মনে হচ্ছে আমার জ্যাকি চেনের কাছে যেতে হবে”।“কেন?”শিহাব বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।“কিভাবে লাথি মেরে মানুষের দাঁত ভাঙ্গা যায় সেটা শিখতে”বলে আমি হাটা শুরু করলাম।মনে মনে বললাম কবি বলেছেন “এক বার না পারিলে দেখ শতবার”।আর আমার তো মাত্র কয়েকবার হয়েছে।আমার একশবার হতে এখনো অনেক বাকি।তাই যতদিন না একশবার হচ্ছে ততদিন আমার গার্লফ্রেন্ড খোঁজার মিশন অব্যাহত থাকবে”।