আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

অপেক্ষা

ღঅপেক্ষাღ
ණলিখেছেনঃ আল আমিন মোহাম্মদ,

অনেকক্ষণ ধরে কফিশপে বসে আছি।কফি খাচ্ছি আর বাইরের তুষারপাত দেখছি। মওসুম শুরুর এই সময়টায় সিডনীতে তুষারপাতের ঘটনা খুবই সাধারণ। এই দৃশ্যটা অন্য সময় দেখতে বেশ ভাল লাগলেও এখন খুবই বিরক্ত লাগছে। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সবসময়য় সম্ভব না, অন্তত কারো জন্য অপেক্ষা করার সময় তো নয়ই। কিছুক্ষন পরপর গেটের দিকে তাকাচ্ছি । অনেকেই আসছে, যাচ্ছে। কিন্ত না, আমি যাকে খুঁজছি তার দেখা মিলছে না। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে আমি আসলে এক ললনার জন্য বসে আছি । সুমনা ওর নাম। ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। অথচ এ পর্যন্ত আমরা কেউই কাউকে দেখিনি । পারিবারিক ভাবেই সবকিছু হয়েছে । অবশ্য এখন দেখাশোনার ব্যাপারটা ফাউ । একারনে প্রথম প্রথম আমি আসতে চাইনি। কিন্ত মা জোর করে পাঠিয়ে দিল। কারন যদি বিয়ের পরে বউ পছন্দ না হয়, তখন তাদের দোষারোপ করব। আমি বলি, কেন তোমরা তো আগেই সবকিছু ঠিক করে ফেলেছ? তাতে কি হয়েছে? যদি তোর পছন্দ না হয় তবে বিয়ে ক্যানসেল। আচ্ছা ঠিক আছে, একদিন গিয়ে দেখে আসব। একদিন নয় তুই আজকেই যাবি। লিঙ্কন স্ট্রীটের ওই কফিশপে ওকে আমি পাঁচটায় আসতে বলেছি। আমি চোখ কপালে তুলে বলি -আজকেই, তাও পাঁচটায়। মা দেখো, এখন বাজে সাড়ে চারটা। এখন বের হতেই বাজবে সোয়া পাঁচটা। আর পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাচটা। মা তুমি ওনাকে বলে দাও, আজ না অন্যদিন। মা বিরক্ত হয়ে বলে-ওর অন্যদিন নাকি কাজ আছে। আজকেই ফ্রী। ও,তাহলে তোমার কাছে শুধু ওর কথারই দাম আছে । কাজ হচ্ছে না দেখে আবার বলি, বাইরে তুষার পড়ছে এখন বেরোলে নিশ্চিত ঠান্ডা লাগবে। তাছাড়া আজ আমার অনেক কাজ আছে ইত্যাদি। মা রাগ করে বলেন, তুই আসলেই তোর বাবার মত । খালি ক্যাচক্যাচ করিস। যা বলেছি, তাই কর। আর যদি তোর একদমই ইচ্ছে না থাকে, তবে নিজে ফোন করে ওকে আসতে মানা করে দে। আমি চললাম ।

মা'র কথামতো কফিশপে বসে আছি। এখানে লোকজন খুব একটা নেই। এদিকে সময় যেমন বাড়তে লাগল, বাইরে তুষারপাতও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু মেয়েটির আসার নাম নেই। আমার রাগ হতে শুরু করলো। মেয়েটি তাহলে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। ঠিক আছে, মহারাণী! সেয়ানা আমিও কম নই। আর আমি তোমার বাধ্যগত ছাত্র নই যে আমি সারাদিন বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আমি তোমার প্রেমেও পড়িনি যে, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। খালি মায়ের পছন্দ বলে বিয়েটা করার জন্য রাজি হয়েছি।

একঘন্টা পার হয়ে গেছে । ভাবলাম মা'কে জানিয়ে রাখি যে, তার হবু বৌ'মা মনে হয় ভুলে গেছে যে তার বেকুব হবু স্বামী তার দর্শন লাভের আশাই কফিশপে তপস্যা করছে। ফোন দিতেই করা একটা ধমক লাগাল মা, আর কিছুক্ষন কেন অপেক্ষা করছি না? সাথে এটাও বলতে ভুললেন না, যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি, তখন তো আর সময়ের কোন বালাই থাকে না। আমি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে ভাবি, বেগম রোকেয়া বৃথা চেষ্টা করেছেন। নারীজাতির উন্নতি হবে কি ভাবে? বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর নারীর জন্য অপেক্ষা কি এক জিনিস? মজনু, দেবদাসের কথা সেই মুহূর্ত্বে মনে করে খুব হাসি পেল। আহ বেকুবগুলো প্রেম করে কি ভুলটায় না করেছিল। হঠাৎ দেখি মায়ের ফোন। মা জানাল, সে আসছে। আমি যেন কোথাও না যাই। ফোন রেখে ভাবি, আমার কপালে সাঙ্ঘাতিক দুঃখ আছে। এই মেয়ে বিয়ে হওয়ার আগেই শাশুড়িকে পটিয়ে ফেলেছে, বিয়ের পরে না জানি আরও কি করবে?
মা'য়ের নিষেধ উপেক্ষা করার মত সাহস আমার নেই। শেষে চোখ বন্ধ করে ভেড়া গোণা শুরু করলাম। হঠাৎ মিহি গলার স্বর শুনে ধ্যান ভাংলো। কি ঘুমুচ্ছিলেন বুঝি?-না একদম না। ‘আমি সুমনা, আপনি নিশ্চয় আকাশ’। ‘জি বসুন প্লিজ’। কথাটা বলতে গিয়ে ওর দিকে ভালোমতো তাকালাম। তাতেই যেন আমার সর্বনাশটা হয়ে গেল। পরিবেশ হালকা করার জন্য ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ভাবে চিনলেন? এই প্রচণ্ড তুষারপাতের বিকেলে বিয়ে পাগল লোক ছাড়া আর কে বাইরে বের হবে বলুন? আর এই শপে এই মুহুর্ত্বে আমি আর আপনি ছাড়া কেউই নেই । তাকিয়ে দেখি আসলেই তো। তাছাড়া অবশ্য আন্টি আপনার একটা ফটো আমাকে দিয়েছিল। তবে আমি খুব সরি। আমার এতটা দেরি করাটা একেবারেই উচিত হয়নি। আসলে কি করবও বলুন? খুবই দরকারি একটা কাজ ছিল । না করে আসলে অনেক ঝামেলা হয়ে যেত। আমি বিগলিত হয়ে বলি, না না ঠিক আছে। কিন্তু মনে মনে ভাবি, সুন্দরী তোমার দেখার পরে একঘন্টা কেন সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারি, ওই মুখের মায়ায় আমি আমি দেবদাস হতেও রাজি। হয়ত আরো কিছু হতে চাইতাম, যদি না ও পাশ থেকে-আপনি কি কিছু বলবেন, না কি? আর কফিশপে ডেকে কি না খেয়ে রাখবেন? আমি ব্যস্ত হয়ে ওয়েটারকে ডাকি। কারন সুন্দরীদের কথা অগ্রাহ্য করতে নেই......



ღভাললাগলে লাইক কমেন্টস শেয়ার করুণღ

ღjrk