আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ღভালোবাসার লাল গালিচা সংবর্ধনাღ

ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৫ღ
ভালোবাসার লাল গালিচা সংবর্ধনা
লিখেছেন- মোঃ মাসুদ রানা
............................................................।।
“তুজে দেখা তোয়ে জানা না সানাম
পেয়ার হোতা হে দিওয়ানা সানাম”
এই রানা উঠ আর কত ঘুমাবি।লেখা-পড়া নাই সারাদিন টই টই কইরা টোটো কোম্পানির চাকরী করছ।রাতে কি চুরি করছস।
এই অসাম গানের সাথে আমার লাইলী কে নিয়া সপ্ন দেখতেছিলাম বাবা এসে ঘুম ভেঙ্গে দিল।
(বাবা তুমি কি বুঝবা নিজের প্রেম তো ঠিকি করছ,নিজেও তো লাইন মারছ মা তো আমাকে বলছে)
আমার মা-বাবার লাভ মেরেজ।
যাই হোক বাবা আমাকে সকাল সকাল বাজার করতে বলছে। কানে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমাকে বাজার করতে পাঠাবে।যাক পকেটে আরো কিছু টাকা আসবে আগামী কাল ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস আমার জানেমান লাইলী কে নিয়া ঘুরতে পারুম।তারাতারি ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম বাজারের দিকে।এমন সময়ে মোবাইলে কল।
আমার জান কল দিয়েছে।
রানা তুমি কোথায়?কাল তোমার জন্য একটা চমক আছে এখন বলব না।
আরে বলবা না তো এখন বললা কেন।আর পারি না তোমাকে নিয়া।আমারে জানের নাম তুষা।
কত কি প্লেন করি রেখিছি কাল কি করব।ফুচকা খাব, ঘাস দিয়ে বানানো একটা পায়েল ওকে পরিয়ে দিব।
বাজার শেষ করে বাসায় আসলাম। দেখি বাবা রিক্সা থেকে নামছে।বাবার হাতে শপিং বেগ।বাসায় ঢুকে দেখি মা এর জন্য নতুন শাড়ী ও নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনেছে।
বুজতে পারলাম না কিছুই।যাই হোক কাল বাসা থেকে সকাল সকাল বের হতে হবে।
রাতে খাবার পর ঘুমাতে যাব এমন সময় বাবা এসে আমাকে বলল।
রানা কাল সারাদিন বাসায় থাকিস তো আমি আর তোর মা একটু বের হব রাত হবে ফিরতে।তোদের খালামণিদের বাসায় যাব। রাহুল কে স্কুল থেকে নিয়ে যাবি আর নিয়ে আসবি।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল।আমি তো কাল আমার লাইলি কে কথা দিছি ওরে নিয়া সারাদিন ঘুরব।
কি করব কি করব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে চিন্তায় একাই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
যাই হোক আমি একটা অসাধারন ব্যবস্থা করে ফেললাম।রাহুলকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম বাসার চাবিটা হাতে নিয়ে।রাহুল আবার স্কুল এ যেতে পছন্দ করে না।মা-বাবা বের হয়ে যাবার পর আমি রাহুল কে নিয়ে বাসায় এসে পরলাম। রাহুল তো বেজায় খুশি তার স্কুল এ যেতে হবে না।আমি পাশের বাসার ছোট পিচ্চি মেয়েটাকে এনে দিয়ে গেলাম রাহুলের সাথে খেলার জন্য।
।আমি তুষাকে ফোন দিয়ে বললাম তুমি বিকাল ৩ টায় টিএসসিতে আসবে।
আলমারি থেকে একটা লাল পাঞ্জাবি বের করলাম। আর ২ টায় বের হয়ে পরলাম।
যাক ভালই ভালই হচ্ছে সব।তুষার জন্য কতগুলো লাল গোলাপ কিনলাম।আমি পার্কে ঢুকার পর দেখি তুষা বসে আছ।
আমি অনেক অবাক হইলাম।ও একটা নীল শাড়ী পরে আছে। আজ পর্যন্ত কোনদিন তুষা শাড়ি পরেনি। শাড়ি আমার কাছে অনেক পছন্দ। ও কে আমি অনেক বার বলেছি শাড়ী পরার জন্য।আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠল।
তুষার পাশে বসলাম এবং তাকে মন ভরে দেখতে লাগলাম।
ঠিক যেন আমার অপরুপ সুন্দরী বউ।
আমি তুষাকে লাল গোলাপ গুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার পকেটে রাখা ওর জন্য ঘাসের পায়েল টা পড়িয়ে দিয়ে বললাম
"Love is like a portrait in my mind that transforms into a person whenever I see you. My Valentine."

তুষা প্রায় কেদেই দিল।আমি ওর চোখের পানি মুছতে লাগলাম।
চোখের পানি মুছার পর আমার মাথা টা উপরের দিকে তুলে তো আমি অবাক।তুষার পিছনে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
বা...............বাবা তুমি এখানে? মা তো পাশে থেকে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
তাহলে কি আজ মা-বাবা তাদের ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে বের হয়েছে?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মা বাবার হাত টেনে পার্কের বাহিরে উদ্দ্যেশে যেতে থাকল।বাবা আমাকে বলছে বাবা বাসায় আসো তোমার জন্য আমার লাল গালিচা অসাধারন সংবর্ধনা আছে।তারাতারি চলে এসো।

ভালো লাগলে লাইক দিয়ে আপনাদের মতামত জানান
 

লেখক/এডমিন>মোঃমাসুদ রানা

ღনির্বাক ভালবাসা….......ღ

ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৪ღ
নির্বাক ভালবাসা….......
লিখেছেনঃ অনিক বাসাক

দোকান এ দাড়িয়ে খেলনা দেখছি । আজ পাশের বাড়ির এক ছোট্ট বোন এর ৩ তম জন্মদিন। ওদের বাড়ির সাথে আমাদের অনেক ভাল সম্পর্ক। তাই যেতে ই হবে। তার উপর ছোট্ট মণিটা আধো আধো করে বলে গিয়েছে যে ভাইয়া ভাইয়া তুমি আসবে কিন্তু। না হলে আমি কান্না করব..................
তো না গিয়ে কিভাবে থাকব। কিন্তু কি যে খেলনা দিব পাচ্ছি না ভেবে। হটাত একটা পুতুল এর দিকে চোখ আটকে গেল। ঠিক যেমন রূপকথার গল্পে থাকে। অনেক ক্ষণ কেমন যেন আনমনে তাকিয়ে থাকলাম... আমার এতটাই ভাল লাগল যে আমি দুই টা কিনে ফেললাম। একটা গিফট দিব আর একটা রেখে দিব। যেদিন আমার ভালবাসার মানুষ এর সাথে দেখা হবে সেদিন তাকে দিব।

এতক্ষণ এ চোখ পরল ঠিক পাশে দারিয়ে থাকা এক রাজকন্যার দিকে। ঠিক আমি যে পুতুল টা কিনলাম ঠিক সেই রকম। চোখ যেন পরতেই চায় না। সে ও কি যেন গিফট কিনছে আর আমার দিকে চেয়ে মিট মিট করে হাসছে............ একটা ছেলে কে এভাবে পুতুল কিনতে দেখলে হয়ত হাসি পাবার ই কথা...... হা হা হা হা ...।।

আমি তার থেকে একটু আরাল এ দাঁড়ালাম, আর তাকে আরাল থেকে দেখতে লাগলাম। একটু পর সে চলে গেলে আমি ও চলে আসলাম। আর দু চোখ এ নিয়ে এলাম কোন এক অজানা রাজকন্যার সুন্দর ওই মুখ এর স্বপ্ন । কিছু তেই যেন ওই চোখ এর চাহুনি, ওই ভাবে পিট পিট করে হাসা , কিছু ই ভুলতে পারছি না.........।

সন্ধার পর জন্মদিন এর অনুষ্ঠান এ গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমি যেন কি দেখে চমকে গেলাম। যেন অনেক গুল সোনার ভিতর একটা হীরের টুকরো ঝলমল করছে। এত্ত গুল ছোট্ট শিশুর মাঝে তাকে যেন আর ও অনেক মিষ্টি লাগছে। হম। এই সেই মেয়েটি যাকে আমি আজ দেখেছিলাম। .....................

তাকে এখানে পাব এ তো কল্পনার ও বাহিরে। একজন এর থেকে জানতে পারলাম এটা এই বাড়ির অ্যান্টির কেমন যেন কাছের আত্মীয় ,। সোফা তে বসে আমি একমনে সুধু তাকে ই দেখে যাচ্ছি , যার জন্মদিন এ এসেছি সে যে কখন এসে ঠিক টার জন্য আনা উপহার টা আমার হাত থেকে নিয়ে গেছে তাও ঠিক পাই নি।

একটু পরে খাবার দেওয়া হলে মেয়েটা কোথাও জায়গা না পেয়ে আমার পাশে এসে বসে। আমার মন এর ভিতর তখন যেন ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। চেষ্টা করছি কথা বলার পারছি না। শেষ এ কষ্ট করে হুট করে বলে ফেললাম কেমন আছেন? মেয়ে টা চমকে ওঠার মতন করে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল।
আমি ভাবলাম আমাকে চেনে নি হয়ত। তাই দোকানের দেখাদেখির কথা টা বললাম। আবার ও প্রশ্ন করলাম যে কেমন আছেন? কিন্তু কোন উত্তর নাই।
নিজেকে কেন যেন অপমানিত মনে হচ্ছে। আর ও কিছু বললাম কিন্তু কোন উত্তর দিল না।
নাহ এই রকম অপমান আর ভাল লাগল না। আমি বেশ জোরে করে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম – এই যে আপনি নিজেকে কি মনে করেন? অনেক সুন্দরী তাই এতো অহঙ্কার? বোবা নাকি যে একটা কথারও কি উত্তর দিতে পারলেন না। বোবা হয়ে আছেন কেন? .........।

আমার বলা টা মনে হয় অনেক বেশি জোরে হয়ে গিয়েছিল। তাই তো দেখলাম সবাই আমার দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু সবচে অবাক হলাম যখন দেখলাম মেয়েটার চোখ এ জল। সে মুখ টা চেপে ধরে দৌরে পাশের ঘর এ চলে গেল। কিছু ই বুঝতে পারলাম না।

পরিবেশ টা স্বাভাবিক করে যার জন্মদিন তাঁর মা আমার কাছে এলেন। আমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতেই অ্যান্টি বললেন যে তুমি এটা কি করলে?!! তুমি জান ? ও সে সত্যি বোবা। ক্লাস থ্রি তে থাকতে একটা দুর্ঘটনার পর থেকে ও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আর তুমি আজ ওইটাই ওকে সবার সামনে এভাবে মনে করিয়ে দিলে?

অ্যান্টি চলে গেল। আমি যেন আমার নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে নগণ্য কীট বলে মনে হতে লাগল। একটা তিব্র অপরাধ বোধ আমাকে যেন আঁকড়ে ধরে গলা টিপে মেরে ফেলছে.........।। নাহ... আমি অনেক ভয় নিয়ে আস্তে আস্তে পাশের ঘর এ ঢুকলাম...।।

আমার সেই রাজকন্যা একটা খাট এর উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। সামনে যেতে দেখি সে কাঁদছে। শব্দ করে কান্নার থেকে এই নির্বাক কান্না যে এতটা তিব্র বেদনার হয় আজ প্রথম বুঝলাম...............
আমি রাজকন্যার পা এর সামনে মেঝেতে বসে পরলাম। আমাকে দেখে ই ও নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করল। আমি দু হাত জোর করে ওর সামনে বসে রইলাম। ইশারা তে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে আমি জেনে শুনে করি নি। কোন দিন ইশারা তে কাউকে কিছু বুঝাই নি। তাই মনে হয় বুঝানোর ব্যাপার টা গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একটা বানর পাগল এর মতন হাত নড়াচ্ছে...............।।
আমার এ রকম দেখে দেখি রাজকন্যা হেসে ফেলেছে............। আমি বুঝাতে পারব না কি সুন্দর সেই হাসি। চোখ এ এখন ও জল গুল লেগে আছে আর মুখ এ সবে মাত্র হাসি ফুটল। মনে হল ভোঁর এ দূর্বা ঘাস এর উপর চিক চিক করা একটা শিশির বিন্দু...।।

রাজকন্যা ইশারা তে বুঝাল যে সে বলতে পারে না কিন্তু শুনতে পারে , তাই আমি মুখ এ বলতে পারি তাকে । সে মেঝে থেকে আমাকে উঠে আসতে বলল। আমি যেয়ে তাঁর পাশে বসি। ধীরে ধীরে কথা সুরু হয়। মানে সে ইশারা তে বুঝাল, আর আমি মুখ এ বলতে লাগলাম । আমি এর আগে অনেক বোবা মানুষ কে দেখেছি কিন্তু তারা ইশারা তে কি বুঝায় টা বুঝি নি। কিন্তু রাজকন্যা যা বুঝাতে চাচ্ছে তাই আমি ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি। কেন এতটা বুঝতে পারছি বুঝতে পারছি না। রাজকন্যা ও কিছুক্ষণ পর জানতে চাইল যে আমি কিভাবে তাঁর সব কথা এত ভাল করে বুঝতে পারছি? আগে নাকি এত জলদি তাঁর কথা কেউ বুজতে পারে নি।
কথা টা শুনে আমার অনেক ভাল লাগল। কিছু ক্ষণ এর ভিতর আমারা অনেক ভাল বন্ধু হয়ে যাই, আমাকে ওই দুই টা পুতুল কেনার কথা জিজ্ঞাসা করল... আমি বললাম যে জীবনে যাকে সবচে বেশি ভালবাসব, যাকে সারা জীবন এর জন্য জীবন সাথী করে নিব তাঁর হাতে ওটা তুলে দিব......... সে দেখি মিটিমিটি করে হাসছে...... আমি তাকে বলি সে ফেসবুক ব্যবহার করে কি না। সে তাঁর আইডি আমাকে দিল। ...........................
অনুষ্ঠান ও এদিকে শেষ,রাজকন্যা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। আমার বুক এর ভিতর টা ধুক করে উঠল...। হয়ত আর দেখা হবে না............
ও টা টা জানিয়ে বাড়ি চলে গেল আর এদিকে আমি তো বাড়ি এসে ই ফেসবুক খুলে রাজকন্যা কে অ্যাড দিলাম। ৩০ মিনিট পর দেখি রাজকন্যা অনলাইন এ ।
সে দিন টা রাতে অনেক ক্ষণ কথা হল চ্যাট এ । রাজকন্যা নিজে থেকেই বলল যে সে নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল কারন তাঁর কথা গুল আমি অনেক ভাল বুঝতে পারি।

আমি তাকে ভয় এ ভয় এ জিজ্ঞাসা করলাম যে তাঁর মোবাইল আছে কি না, তাহলে যখন ফেসবুক এ আসব তখন তাকে মিসস কল দিলাম। সে উত্তর দিল হম আছে তো। কথা বলতে পারি না তাই বলে কি এসএমএস ও লিখতে পারব না? হা হা হা ...............।
সে তাঁর নাম্বার দিল , ওই দিন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।

সকাল এ উঠে কিছু ভাল লাগছিল না। বার বার রাজকন্যার মুখ টা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মাত্র একদিন পরিচয় তাতে ই এই অবস্থা ?...... এ আমার কি হল? তবে কি তাকে মার্কেট এ প্রথম দেখে আমার যে ভাললাগা সৃষ্টি হয়েছিল টা ভালোবাসা তে রুপান্তর হয়েছে? ভাবছিলাম যে তাকে এসএমএস দিব কি না,...।। মোবাইল টা হাতে নিতে ই অবাক!!!!! রাজকন্যার এসএমএস। >>> শুভ সকাল।
আমি আর দেরি না করে এসএমএস দিলাম তুমি কই? কি কর? সকাল এ নাস্তা করেছ?

। এসএমএস সেন্ড করেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম... এ আমি কি রকম এসএমএস দিলাম। আমি তাকে প্রথম দিন এই ভালবেসে ফেলেছি তাই বলে কি এই রকম এসএমএস দিতে হয়? রাজকন্যা এখন কি ভাববে? আমাকে অনেক খারাপ ছেলে ভাবছে হয়ত...।। আমি কি তাকে হারিয়ে ফেলব?

ভাবতে ভাবতে রাজকন্যার এসএমএস>> বাব্বা বন্ধু আমার এত চিন্তা? হা হা হা হম খেয়েছি। আমি এখন বাড়িতেই। বসে আছি।

আমি এসএমএস দিলাম যে আমি ফেসবুক এ আছি। তুমি সময় পেলে এস। কিছু ক্ষণ পরে ই সে এল। কথা হল কিছু ক্ষণ। আমার প্রতিটা ক্ষণ যেন এখন সুধু তাঁর জন্য অপেক্ষা করা। সারা দিন ভাবি সুধু সে কখন ফেসবুক এ আসবে। কিচ্ছু আর ভাল লাগে না। সারা দিন সুধু তাঁর কথা। .....................

আমাদের নিয়মিত কথা হতে লাগল ফেসবুক এ ।এর মাঝে ৩ – ৪ দিন তাঁর সাথে দেখা ও করেছি। আমি অনেক অল্প সময় এ ওর সবচে কাছের একজন হয়ে উঠেছি ।
ও নিয়মিত আমার খোঁজ নিত। সকাল এ খেয়েছি কি না, পরেছি কি না, ঠিক মতন ঘুম পারছি কি না সব সব..................... আমার এলোমেলো জীবন টা যেন দূর থেকে ও সাজিয়ে দিচ্ছিল। তবে কি সে ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে?? ভাবতাম কিন্তু সাহস করে বলতে পারি নি......... যদি সে হারিয়ে যায়। আমি কোন দিন তাকে হারাতে চাই না।
আমরা মাঝে মাঝে ই বিকাল এ দেখা করতাম। আমাদের একটাই প্রিয় জায়গা ছিল, লেক এর পার এর ছায়া ঘেরা একটা বেঞ্চ। যে দিন দেখা করতাম ওই জায়গাতেই। ও যখন ইশারা তে আমাক কিছু বলত মনে হত যারা কথা বলতে পারে তাদের সব কথাও আমি এত পরিস্কার বুঝতে পারি না। কত কথা হত আমাদের...... কিন্তু এক অদ্ভুত নিরবতা...।

এদিকে আমার মন এর ভিতর টা অস্থির হয়ে উঠতে থাকে। আমি যতই ভাবি রাজকন্যা কে কিছু বলব না তবু যেন নিজের ভিতর টা আর ও অস্থির হতে থাকে।
ভাবলাম সে কি ভাববে ? আমি জানি আমি তাঁর অনেক অনেক প্রিয় একমাত্র মানুষ কিন্তু কেন? আমি রাজকন্যার সব কথা বুঝতে পারি তাই? নাকি সে আমাকে ভালবাসে? আমি আর এই দ্বিধা সহ্য করতে পারছিলাম না।
কিন্তু তাঁর সামনে গেলে বলতে পারি না। তাই আজ সিদ্ধান্ত নিলাম আজ যে করেই হোক ফেসবুক এ বলে দিব...............।
রাত এ সে ফেসবুক এ আসল। আমি সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে তাকে লিখলাম>>

“রাজকন্যা আমি তোমাকে আমার মনের রাজ্যে রাজকন্যা করে রাখতে চাই! তোমাকে প্রথম যে দিন দেখেছিলাম সেদিন ই ভালবেসে ফেলেছি......। জানি না আমি তোমার যোগ্য কি না। কিন্তু সুধু এই টুকু জেনে রাখ , মন এর যে যায়গা তে ভালোবাসা টা যত্নে রেখে দেই সেই যায়গা তে তোমার নাম লিখা হয়ে গিয়েছে। তুমি আমাকে গ্রহন না করলেও আমি কোন দিন অন্য কাউকে আর ভালবেসে আমার মন এ বসাতে পারব না। ওই যায়গা টা সুধু ই তোমার..........................................।“

অনেক ক্ষণ রাজকন্যার কোন উত্তর পাচ্ছি না। অনেক্ষন পর সে লিখল>
>> তা হয় না। তোমার সুন্দর একটা জীবন এর সাথে আমার নির্বাক জীবন মিলবে না। আজ তুমি যেটা ভালোবাসা ভাবছ তা ভালোবাসা নয়। এটা হল আমার উপর তোমার করুনা। আমি তোমার থেকে এটা আশা করি নি...।। হয়ত আমাদের আর দেখা হবে না.........

রাজকন্যা চুপ হয়ে গেল। আর আমার মনে হতে লাগল আমার ভিতর থেকে কে যেন আমার হৃদয় টা ছিরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। জীবনে প্রথম আর শেষ বার এর মতন কাউকে ভালবাসলাম...। আর আজ তাকে হারিয়ে ফেললাম.........।

সারা টা রাত দু চোখ এর জলে কাটল...।। রাজকন্যা কি সত্যি আমাকে ভালবাসে না? নাকি ভালবাসে? না হয়ত সুধু ই বন্ধু ভাবে......
কখন দু চোখ এর পাতা এক হয়ে গিয়েছে জানি না। সকাল এ ঘুম ভাঙতেই মনে হতে লাগল হে সৃষ্টিকর্তা আমার ঘুম কেন ভাঙ্গালে...। তাঁর থেকে সারা জীবন এর জন্য চিরনিদ্রা তে শুইয়ে দিলে ই তো পারতে।

নাহ আজ রাজকন্যার কোন এসএমএস নাই। ফেসবুক খুলে দেখি রাজকন্যা তাঁর আইডি বন্ধ করে দিয়েছে............।

কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারচিলাম না। আজ ভালোবাসা দিবস।। আর আজ ই আমার জীবন থেকে আমার ভালোবাসা হারিয়ে গেল। ভালোবাসা নয়।। সে তো আমার জীবন।। তাই বলা যায় যে জীবন হারিয়ে গেল...।। এভাবে প্রান হীন জীবন রেখে কি লাভ!!

অনেক ভয় নিয়ে রাজকন্যা কে এসএমএস দিলাম যে >> রাজকন্যা বন্ধু হিসাবে তোমার সাথে আমি শেষ বার দেখা করতে চাই...। আমাদের সেই লেক এর ধার এ ...আজ বিকাল ৪ টায়।
আমার বিশ্বাস ছিল সে আসবে। কারন সে যে আমার জীবন। আর আমার জীবন কে আমার থেকে ভাল কে চিনবে।

আমি অপেক্ষা করছি.........।। হম ওই তো আমার রাজকন্যা আসছে...
রাজকন্যা এসে আমার পাশে বসল... কিন্তু আমার দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। কিচ্ছু বলছে ও না।
কি হল তাঁর...।।
আমি আর কিছু বললাম না......... সুধু তাঁর হাত এ সেই পুতুল টা তুলে দিলাম, যেটা আমি কিনছিলাম যে , তাকে ই দিব যাকে আমি আমার জীবন সাথী করে নিব...।

পুতুল টা হাতে নিয়ে রাজকন্যা আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল...। এতক্ষণ পর আমি লক্ষ্য করলাম যে রাজকন্যার চোখ এ জল। তাই তো সে চোখ তুলে তাকাচ্ছিল না...।

সে আমাকে ইশারা তে বলল যে তুমি তো এটা তাকে ই দিতে চেয়েছিলে যাকে তুমি তোমার জীবন সাথী করে নিবে।। তবে আমাকে দিচ্ছ কেন? তুমি তো আমাকে আজ এসএমএস দিলে যে আমাদের আর দেখা হবে না... তবে এটা আমাকে কেন দিচ্ছ?

আমি বললাম হম। সত্যি তো। বন্ধু হিসাবে আমাদের আর দেখা হবেন না। .........।

এখন আমাদের দেখা হবে ভালবাসার মানুষ হিসাবে। কারন তুমি আমার জীবন...। আমার ভালোবাসা। তুমি কথা বলতে পার না তো কি হয়েছে... যারা বলতে পারে তাদের থেকে ও যে আমি তোমার এই নির্বাক কথা অনেক বেশি বুঝি...।। তবে বলা আর না বলার মাঝে পার্থক্য কই। ? আর তোমাকে করুনা কোন দিন ও করি নি। কারন নিজের জীবন কে করুনা করা যায় না। সুধু ই ভালোবাসা যায়। অসীম ভালোবাসা...........................।।

রাজকন্যা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠল...। আজ এই কাঁদা তে শুধু ই ভালোবাসা। আমাকে সে বুঝাল যে সে ও আমাকে তাঁর জীবনে এর থেকে বেশি ভালবাসে। কিন্তু সে চায় নি যেন তাঁর নির্বাক জীবন টার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়.........। তাই বলতে পারে নি...। আর আমার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিল............।।

পাগলী কোথাকার...। একদম পাগলী......।

রাজকন্যার চোখ এর জল মুছিয়ে দিতে ই সে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আর আমার বুক এর ভিতর মাথে রেখে বিন্দু বিন্দু করে চোখ এর জল ফেলতে লাগল............।
কাঁদুক...। কিছু কিছু চোখ এর জল কখনো মুছে দিতে হয় না ..................

আমি ও আমার রাজকন্যার মাথায় একটা আলত করে চুমু দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরি.....................
হোক না নির্বাক ভালোবাসা, তাতে কি...। তাঁর এই নীরবতা যে সব কথা কেও হার মানায়........................।

ღহয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়ღ

ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৩ღ
হয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়
লিখছেন-এহসান আহমেদ

হানিফ পরিবহন এর বাসে বসে ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছি । জীবন এ কখনই এত দূর যাওয়া হয় নি । খুয়েট এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুলনা যাচ্ছি তো , আসলে জীবন যুদ্ধে পদার্পণ করতে যাচ্ছি তাই কিছুটা ভয় লাগসে । কিন্তু কখনও ভাবি নাই যে এই জীবন যুদ্ধের মাঝে যে আমার জীবন টা বদলে যাবে ?
সকাল ৭ টার বাস তাই সকাল সকাল এ বাবা মার কাছ থেকে দুয়া নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে আমার বাস এ উঠার কথা তাই বাস ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগেই বাস কাউন্টার এ এসে পরলাম । যেহেতু আমি আজ অনেক নার্ভাস তাই সিগরেট টা কেন যেন তাই একটু বেশি খাচ্ছিলাম । বাস কাউন্টার এর পাশে একটা চায়ের দকান ছিল তাই ওখানে দারিয়ে আনমনে সিগরেট টা টানছিলাম , হটাত একটা ডাকে পেছনে তাকালাম , দেখলাম একটি মেয়ে আমাকে বলছে “ ভাইয়া হানিফ পরিবহন এর বাসের কাউন্টার কোনটা ? আমি কিছুটা অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে চেয়ে ছিলাম , মেয়ে টি আবার জিজ্ঞাস করল ? আসলে আমি ছোটবেলা থেকে মেয়েদের পচাতে ভালবাসি , এবার ভাবলাম কি আজিব মেয়ে তার চোখের সামনেই কাউন্টার কিন্তু সে দেখতেই পারছে না, তখন আমার মন চাইছিল মেয়েটার সাথে একটু দুষ্টামি করতে কিন্তু কেন জানি মেয়েটার নিস্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলতেই পারলাম না তাই বাধ্য হয়ে বলে দিলাম যে কাউন্টার টি আমার পিছনে । তখন মেয়েটি মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে বলল সরি ভাইয়া “আমি না আসলে এরকম ই চোখের সামনেই সবই থাকে কিন্তু দেখেও চিনতে পারি না”
আমি বললাম হা এটা অবশ্য একটি ভাল দিক ই বটে , মেয়ে টি আর কোন কিছু জিজ্ঞাস না করে কাউন্টার এর বেতর চলে গেল আমিও বাস এর অপেক্ষায় দারিয়ে আছি ।
একটুখন বাদেই খুলনার বাস এসে গেল, আমিও যথারিতি আমার সিট এ বসে পরলাম। এরপর যা হল সেটা কল্পনাতেও কখনও ভাবি নাই ! দেখলাম সেই মেয়েটি আমি যে বাস এ যাচ্ছি সেই বাস এ উঠছে এবং একসময় মেয়েটা আমার পাশের সিট এ এসে বসলো ! আমি চুপ চাপ ভদ্র ছেলের মত বসে রইলাম ! আমি বাইরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে সব দেখসি হটাত মেয়েটা বলল “সবকিছুই কত দ্রুত ছুটে চলসে তাই না” আমি বললাম হাঁ তা তো অবশ্যই সবকিছুই খুব দ্রুত ছুটে চলছে, আমি আপনি সবাই ! তারপর মেয়েটা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছিল আর আমি যেন কেন টা খুব অবাক হয়ে সুনসিলাম আর ভাবসিলাম এমন মেয়েও হয় পৃথিবীতে ? যে কিনা এক মুহূর্তের মধ্যে কাওকে আপন করে নিতে পারে ! আসলে আমার ও কেন জানি মেয়েটার সম্পরকে জানতে ইচ্ছা করছিল তাই আমিও তার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম , কথায় কথায় জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সোহানা , উত্তরায় থাকে এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এ পরে , মেয়ে টা বলল তার কোন মা নাই, ছোট বেলায় তার মা মারা যায় তাই তার বাবা আর একটা বিয়ে করে কিন্তু তার সৎ মা তাকে একদম এ দেখতে পারে না । এছারা সে আর অনেক কথাই বলল যেগুলো বলতে পারলাম না। সে আজ তার নানুর বাড়ি যাচ্ছে যশরে তার মামার বিয়েতে ! যেতে যেতে পাটুরিয়া চলে এলাম , চরম যানজট থাকায় ফেরিঘাট এ ৬ ঘণ্টার ও বেশি সময় লেগে গেল। এর মধ্যে মেয়েটার সাথে আরও অনেক কথাই হল সে আমার সব কিছু জানতে চাইল , কি করি কই থাকি আর কত্ত কি। আমি বার বার কেন যেন তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকি , অনেকে বলতে পারেন যে বাস এর মধ্যে কোন মেয়ের সাথে কয়েক ঘণ্টার পরিচয় ! এর মাঝে কি তার সাথে কি প্রেম এ পরা যায় ? যারা এই প্রশ্ন টা করবেন তাদের বলছি > আমি কখনও কারও প্রেম এ পরি নি , প্রেম কি জিনিস সেটা হয়ত বুঝি না কিন্তু এটুক বলতে পারি কারও প্রেম এ পরতে হয়ত বেশি সময় লাগে না ।
যাই হোক আমাদের বাস ছুটে চলসে গন্তব্বের উদ্দেশে সাথে সাথে আমারাও । রাস্তা যত ফুরিয়ে আসছিল আমার বুকের বেতর টা যেন কেমন লাগসিল, আমি আনমনে তার ভাবসি আর সে অনরগল বলেই যাচ্ছে। হটাত মেয়েটা চুপ আমি, তার দিকে তাকাতে দেখি সে আমার দিকে চেয়ে আছে । আমাকে জিজ্ঞাস করল আপনার কি মন খারাপ ?? আমি বললাম না তো , সে বলল তাহলে চুপ করে কি ভাবছেন ? আমি বললাম কাওকে হারাবার প্রহর গুনছি ! জানেন মেয়েটা আর কোন কথাই বলে নি বাকি সময় টা জুড়ে। আমি বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম , একাবার লক্ষ করে বুজেছি যে মেয়ে টা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন প্রায় বিকাল এবং বাস টা প্রায় এর যশোর এর কাছাকাছি । একসময় বুজলাম মেয়েটা ঘুমাচ্ছে আমার কাঁধ এ মাথা রেখে। আমি আর কিছু বললাম না কিন্তু কেন জানই খুব ভাল লাগছিল ও অনেক খারাপ ও লাগছিল। যাইহক একসময় বাস টা যশোর এসে পরল, যশোর এর যাত্রী রা সবাই বাস থেকে নামছিল কিন্তু সে তখন ও অঝর ঘুম এ মঘ্ন আমার কাঁধ এ মাথা রেখে । আমি তার ঘুম ভাঙ্গালাম , সে নিজেকে আমার কাঁধ এ পেয়ে অনেকটা লজ্জা পেল,আমাকে সরি বলল।আমি তাকে বললাম its ok । সে তার ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নেমে যাচ্ছিল , কেন জানি বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছিল , আর আমার মনটা তত বার এ দুকরে কেঁদে উঠছিল, মন বলছিল এই দেখাই কি শেষ দেখা ? আর কি দেখা হবে না , আর কি কোনদিন তার কাছ থেকে এইভাবে তার কথা সুনতে পারব না ? কখনও কি সে আমার কাঁধ এ মাথা রেখে ঘুমাবে না ??? আমি কি তার প্রেম এ পরেছি নাকি এ শুদুই অনুভূতি ?? যদি তাই হয় তবে সে কেন পেছন ফিরে তাকাল ?? আমি তার চোখে দেখেছি কাওকে ফেলে যাওয়ার কষ্ট! আমি না আজ ও রাতে ঘুমতে পারি না ? বার বার তার ওই নিষ্পাপ মুখখানি আমার চোখে ভেসে আসে ? কেন আমি তাকে ভুলতে পারি না ? সে কি কি আমার মত কষ্টে আছে ? সে কি আমার কথা ভাবে ? আমি আজও তার অপেক্ষায় আছি , আজ প্রতিদিন বাস এ তাকে খুজি আর ভাবি কখন সে আমার পাশের সিট এ এসে বসবে ?
তাই তো আজও রাতে কাঁদি একা একা আর বলি “হয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়” !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

ღবিষণ্ণ বিকেলেღ

ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০২ღ
বিষণ্ণ বিকেলে
লিখেছেনঃ-Ami Sopnil

এই শুভ তুমি আমাকে বাসায় দিয়ে আসবা প্লীজ? আমার খুব জ্বর জ্বর লাগছে,একা যেতে পারব না,মম কাতর স্বরে জিজ্ঞাসা করল শুভকে।আচ্ছা তুমি-তো রিতু কে নিয়ে যেতে পার,আমি গেলে একটু কেমন দেখায় না? ইতস্তত হয়ে শুভ জবাব দেয়।শুভর জবাবে হতাশই হতে হয় মমকে।আচ্ছা এই ছেলেটার অনুভূতি বলতে কি কিছুই নেই?কারও জ্বর আসছে শুনলে তো কপালে হাত দিয়ে অন্তত দেখে।এটাও কি বুঝিয়ে দিতে হবে,ভাবে মম।তার জ্বরটর কিছুই না।আজ ১৪ফেব্রুয়ারি ইচ্ছে শুভর সাথে রিক্সায় একটু ঘুরে বেড়াবে।কলেজে ভর্তির সেই প্রথম দিন থেকেই এই অদ্ভুত ছেলেটাকে ভালবেসে বসে আছে সে।ও যেমন হাসি খুশি শুভ ঠিক তার উল্টো,সে চুপচাপ থাকতেই বেশী পছন্দ করে।তাই মমকেই নানা অজুহাতে গিয়ে কথা বলতে হয়।ক্লাস নোট নেয়া,স্যার কি পড়াল,পিকনিকে যাবে কিনা,কলেজে আসেনি কেন নানা অজুহাতে গায়ে পরে কথা বলতে হয় তার।কি আর করা ক্লাসের সবাই বুঝলেও যে বুঝার সেই যদি না বুঝে।রিতু তো প্রায়ই বলে বাদ দে তো ওই বলদটার কথা,কত ছেলে পরে আছে তোর জন্য আর তুই কিনা ওই হাবাগোবা বলদটাকে নিয়ে আছিস।মম কাউকে বুঝাতে পারেনা।ছেলেটার গম্ভীর হয়ে চুপচাপ থাকাটাই যে ওর বেশী ভাল লাগে।ভাল লাগে ছেলেটা যখন এলোমেলো চুল নিয়ে ক্লাস এ এসে একটা কোনায় বসে থাকে,টিফিন পিরিয়ডে মাঠের এক কোনায় বসে আকাশ দেখে।ইচ্ছে করে গিয়ে বলতে,এই আমাকে তোমার আকাশটা দিবে?
রিতু তার বয়-ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে যাবে,সো তোমাকেই যেতে হবে বলে রিক্সা থামায় মম,শুভর হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠায়।এই তুমি রিক্সার পাশঘেষে আছ কেন?আমার ছোঁয়া লাগলে কি তোমার কুষ্ঠ হবে?? বলে হাঁসতে থাকে মম।লজ্জায় শুভর গাল লাল হয়ে যায়।মমর ইচ্ছে করে ছেলেটার গাল ছোঁয়ে সব লজ্জা ভেঙ্গে দিতে কিন্তু কি আর করা এমন একটা ছেলেকে সে ভালবেসেছে তার কাছে যদি বলা হয় আমার না রাতে ঘুম হয়না,খেতে ইচ্ছে করেনা,খালি উদাসী হয়ে যাই,মন খুব খারাপ থাকে,কি করব বলত? সে নিশ্চিত বলবে তো আমি কি করব,ডাক্তার দেখাও।মমর অনেক ইচ্ছে ছেলেটার হাত ধরে রেল লাইনে হেটে দিগন্তে হারিয়ে যেতে,বাদল দিনে এক ছাতার নিচে গা ঘেঁসে অনেক টা পথ হেটে যেতে মাঝে মাঝে মাথার উপর থেকে ছাতা সরিয়ে দিবে বৃষ্টি ভিজবে বলে।জোছনা রাতে সাগর তীরে শুভর কোলে মাথা রেখে জোছনা পোহাবে আর বিয়ের পর দুজন মিলে ভুত এফ এম শুনবে।ভুতের ভয়ে যখন মমর শরীর থরথর করে কাঁপবে তখন শুভ দুহাতে শুক্ত করে তার বুকে জড়িয়ে রাখবে,মম তখন শুভর বুকে মাথা রেখে নিঃচিন্তে ঘুমিয়ে পরবে।মম সব সময় নিজে রান্না করবে আর ওরা একি প্লেট এ একসাথে খাবে এজন্য মা রান্না ঘরে আসতে দিতে না চাইলেও সে রান্না শিখছে।এখন অনেক কিছুই বানাতে পারে সে।একদিন শুভর জন্য তার প্রিয় খাবারটা রান্না করে নিয়েও এসেছিল কিন্তু সেদিন শুভ কলেজে আসেনি।সেদিন যা কান্না করেছিল মম।আজ ভালবাসা দিবস,সবাই যার যার মত ভালবাসার মানুষের সাথে ঘুরতে বের হয়েছে তারও ইচ্ছে ছিল শুভর সাথে ঘুরে বেড়াতে কিন্তু শুভকে বললে তো সে আর যাবে না তাই জ্বরের অভিনয়টা করতে হল।সেতো একটা মেয়ে,আর একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে একটা ছেলেকে প্রপোজ করবে।সে যদি না করে দেয়,আর কথা না বলে,এমনিতেই ফাজিল তিথি শুভর সাথে টাঙ্কি মারার চান্স এ থাকে।ওর কাছে থেকে নোট নিয়ে যায়,রাতে ফোন দেয়,সারাক্ষণ শুভর আশপাশে থাকার চেষ্টা করে।দেখে মাঝে মাঝে গা জ্বলে যায় মমর।কিন্তু কি করবে সে কান্না করা ছাড়া।এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার সামনে চলে আসে ওরা।পথে তেমন কোন কথাও হয়না।শুভ বাসায় আস,আম্মুর সাথে দেখা করে যাও বলে মম।আরেক দিন যাবে বলে হাটা শুরু করে শুভ।পাশেই ওর বাসা হেটেই যাওয়া যায়।শুভর চলে যাওয়া দেখে মমর মনে হচ্ছিল হৃদয়ের একটা বড় অংশ যেন ওর কাছ থেকে দুরে হারিয়ে যাচ্ছে,মনে অসাড় একটা অনুভূতি।কি করবে বুঝতে পারছিল না সে।দম বন্ধ হয়ে আসছে মমর,কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না,ভীষণ কান্না পাচ্ছে ।সে কি আবার শুভ কে ডাকবে? শুভ একা যেও না আমাকেও সাথে নিয়ে যাও প্লিজ?আমার পৃথিবী যে এখন তোমাকে ঘিরে ।
বাসায় এসে শাওয়ার নিতে নিতে অনেক কাঁদল সে,কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিল না,এমন কেন হচ্ছে,ও তো ভালই ছিল,কেন ভালবাসতে গেল,সে তো কার জন্য কাঁদতে চায় না,চায় না কারো ভালবাসায় হারাতে তবুও এমন কেন হয়।বালিশে মাথা গুজে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় আসল সে।বিষণ্ণ বিকেল।এই সময় টা ওর মন খারাপ থাকে খুব,নিজেকে খুব একা মনে হয়।ঝুপ করে সন্ধ্যা নামলেও মন কিন্তু আর ভাল হয়না।রাতের ঘুম নাই হয়ে গেছে সেই কবে।নিজেকে ইদানীং জম্বি জম্বি লাগে তার,সাজতে ইচ্ছে করে না,কার জন্য সাজবে সে? কত দিন শপিং করে না।শপিং এ গেলে খালি শুভর জন্য টি শার্ট কিনতে ইচ্ছে করে,শুভর জন্য অনেক গুলো কিনে রেখেছে কিন্তু দিতে পারেনি ভয়ে,যদি ফিরিয়ে দেয়।বন্ধুদের সাথে আড্ডাও এখন পানসে মনে হয়।বই মেলায় যাবে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না।
ক্ষুধা লেগেছে, ফ্রিজ থেকে খাবার বের করতে গিয়ে শুনে ওর নামে একটা গিফট এসেছে। কে দিতে পারে ভাবতে ভাবতে গিয়ে প্যাকেট টা হাতে নিল দেখে।নাম নেই।প্যাকেট খুলে দেখে অনেক সুন্দর একটা ব্রেসলেট।জিনিশটা অনেক পরিচিত লাগল। নিচে একটা ছোট্ট চিরকুট।লিখা মম প্রথম তোমাকে যেদিন দেখি কলেজে ভর্তি ফর্ম নেবার সময়,সেদিন তোমাকে মোটেও আমার ভাল লাগেনি।একটা মেয়ে এতটা চঞ্চল হয় কিভাবে? আমার যে চুপচাপ শান্ত মেয়ে ভালো লাগত। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার দিন তুমি যখন আমার সামনের কোনে বসে চুপচাপ পরীক্ষা দিচ্ছিলে তখন আমি পরীক্ষা ভুলে তোমার দিকে স্মমোহনের মত তাকিয়ে ছিলাম।সেদিন থেকে তোমার কথা বলা,বন্ধুদের সাথে তর্ক,তোমার হাসি, তোমার স্নিগ্ধটা, তোমার সব কিছুই আমার আমার ভীষণ ভাল লাগতে শুরু করে।তখন আমার মনে হয়েছিল তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।তোমার হাত ধরে তোমার কথা শুনেই সারাটা জীবন আমি কাটিয়ে দিতে পারব।আমি জানিনা তুমি আমাকে কতটুকু পছন্দ কর বা সেটা শুধু ক্লাসমেট হিসেবেই নাকি অন্য কিছু সেই ভয়ে কখনো বলা হয়নি।আমার যে হারাবার ভয় বেশী।আচ্ছা ব্রেসলেট টা পছন্দ হয়েছে?মনে আছে আমারা সব ক্লাস মেটরা সেদিন বসুন্ধরা সিটি গিয়েছিলাম,একটা দোকানে তুমি ব্রেসলেট টা পছন্দ করেছিলে,টাকা ছিল না বলে কিনতে পারনি,সেদিনই আমি কিনে রেখেছিলাম কিন্তু ভয়ে দিতে পারিনি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও,যদি জিজ্ঞেস কর কোন অধিকারে তোমাকে দিতে গেলাম।মম কত রাত যে কেটে গেছে তোমার ভাবনায়।প্রতিটা মুহূর্তে ভাবি শুধু তোমায়। তুমি যদি সামনে থাক তাহলে আমার পৃথিবী আলোকিত থাকে,চলে গেলেই মন খারাপের দেশে হারিয়ে ফেলি নিজেকে।মম এর নাম যদি ভালবাসা হয়,মনের অজান্তে আমি তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।আমি জানিনা না তোমাকে পাব কিনা তবুও আমি তোমার বাসার নিচে অপেক্ষা করছি প্লিজ একটু আস।নাইবা ভালবাসলে তবুও আজকের মত তোমাকে দেখি।নিচে লেখা নামটা দেখে ভীষণ বিরক্ত হয় মম।সাজেদুল ইসলাম।ক্লাসে সাজেদ নামে দুইজন আছে দুটাই পেইন সারাক্ষণ ভ্যান ভ্যান করে।কোন গাধা টা এটা দিল ভাবছে সে।এই গাধাটা কি জানে না সে যে শুভকে পছন্দ করে? ক্লাসের সবাই যেখানে জানে সেখানে না জানার তো কথা না।নাকি শুভকে যে পছন্দ করে সেটাকে মজা হিসেবে ভেবেছে।এখন নিচে গিয়ে বুঝিয়ে বলে আসতে হবে।কারো ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে খারাপ ই লাগবে ওর।
সিঁড়ি থেকে নেমে দেখে টি শার্ট পরা একটা ছেলে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে পার্কিং লটে,আশে পাশে আর কেউ নেই।ওর দিকে মুখ ফিরে তাকাতেই কি যেন হয়ে যায় মম দৌড়ে ছেলেটার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে,দু হাতে শুক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মমর প্রথম ভালবাসা আজ পাশে এসেছে।অভিমানে বলে এত দিন বলনি কেন?আমি যে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।আমাকে এত কষ্ট দিতে পারলে তুমি।হতভম্ব ছেলেটা আলিঙ্গন থেকে বের হতে চায়,মম আরও শুক্ত করে জড়িয়ে রাখে।কেউ দেখলে দেখুক।এই ছেলেটা ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে,সেই শাস্তি আজ তাকে পেতেই হবে।কোন ভাবেই ছাড়বে না সে।এখন মনে পড়ল শুভর ভালো নাম সাজেদুল ইসলাম।অপ্রত্যাশিত আনন্দে মমর চোখে পানি চলে আসে।অবাক হয়ে দেখে লাজুক ছেলেটার চোখেও পানি।এই গাধা তুমি কাঁদছ কেন? শুভ জবাব দেয় আমার বাবুই টা যে কাঁদছে। মমর বিকেলটা এখন আর বিষণ্ণ নেই,মেঘমুক্ত ভালবাসাময়।

ღমেঘবৃষ্টিღ

ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০১ღ
মেঘবৃষ্টি
লিখেছেনঃ- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

জানলার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল মেঘ। কি যেন ভাবছিল । 'জানলাটা লাগিয়ে দাও, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে' - হঠাত্‍ মায়ের কথায় চমকে উঠল সে । জানলা দিয়ে আবার তাকাল । এই মধ্য দুপুরেও অন্ধকারহয়ে আছে চারদিক । এমন দিন কখনই ভাল লাগত না তার । কেমন যেন একটা মন খারাপ করা পরিবেশ । এখন অবশ্য তার কোন রকমই লাগেনা । রোদ , বৃষ্টি কোন কিছুই তার মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না । সবসময় একই রকম লাগে । জানলার কাচঁটা টেনে লাগিয়ে দেয় । তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় । এই বারান্দাটা তার খুব প্রিয় । অনেক আনন্দ , অনেক কষ্ট , অনেক কান্নার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বারান্দাটার সাথে । বারান্দাটা তার ঘরের সাথে লাগানো । বারান্দায় আসলেই অনেক কথা মনে পড়ে যায় তার । সন্ধ্যায় বা রাতে লোডশেডিং হলে বারান্দায় শুয়ে আকাশের তারাগুলো দেখতে খুব ভাল লাগত তার । আর মন খারাপ হলেই বারান্দায় এসেবসে থাকত । কত দিন মধ্যরাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে কেঁদেছে সে তার কোন হিসাব নেই । এখন আর সে এ বারান্দায় সচরাচর আসে না । বারান্দার সাথে জড়িয়েথাকা দুঃখগুলো মনে করতে চায়না বলেই হয়ত আসে না ।
"মেঘ, তোমার ফোন এসেছে" - মায়ের কথা শুনে ঘরে যায় সে । অনেক দিন হয়ে গেছে মোবাইল ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে । ও কাউকে ফোন করে না । কেউ যদি করে তাহলে ওর বাসার নাম্বারে করে । বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ প্রায় হয় না বললেই চলে ।বন্ধু বলতে স্কুল কলেজের বন্ধুরা । ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কারো সাথে বন্ধুত্ব করেনি সে । একা একা ভার্সিটিতে যায় , ক্লাস করে , তারপর চলে আসে । কারো সাথে তেমন কথা বলে না । অথচ একটা সময় ছিল যখন একদিন বান্ধবীদের সাথে দেখা না হলে বা বাসা থেকে বেরুতে না পারলে হাঁপিয়ে উঠত সে । আর সারাদিন মোবাইলে কথা তো চলতই । মোবাইলে কথা বলার জন্য মার কাছে কম বকা খায়নি সে ।
মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরে সে-
-হ্যালো কে ?
-হ্যালো মেঘ , আমি রূপা । কেমন আছিস তুই ?
-ও , ভাল । তুই ?
-আছি কোনরকম । আমার কথা আর বলিস না । খোঁজ খবর তো নিস না । ঢাকায় থাকা যে কিকষ্টের তা আর কি বলব ! মাঝে মাঝে ইচ্ছেহয় পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে সিলেট চলে আসি । আগের দিনগুলা খুব মিস করি রে । তুইও তো একা হয়ে গেলি । আমাদের কথা কি মনে পড়ে না ?
-হুম ।
-আচ্ছা যাই হোক । শোন , আজকে বিকেলে বের হতে পারবি ? ছুটিতে সবাই এসেছে । সেই কবে সবাই একসাথে হয়েছিলাম । আজ বিকেলে সবাই একসাথে ঘুরব ।
-নারে , আমি আসতে পারব না । শরীরটা বেশি ভাল না ।
-কি হয়েছে ?
-তেমন কিছু না । মাথা ব্যথা ।
-মাথা ব্যথা কমে যাবে । তুই চলে আসিস ।তুই তো এমনভাবে কথা বলতি না ! আগে তো আমরা না চাইলেও জোর করে ঘুরতে বের হতি। ফুচকা না খেলে তো পেটের ভাত হজম হত না । আর এখন বাসা থেকে বের হতে চাইছিস না !
-তোরা যা । আমি আরেক দিন আসব ।
লাইনটা কেটে দিল মেঘ ।
সত্যিই তো , সে তো আগে এরকম ছিল না । আগের মেঘের সাথে এখনকার মেঘের কোন মিলই নেই । যেই মেয়ে কথায় কথায় হাসত , হাসি ছাড়া থাকতে পারত না , সেই মেয়ে এখন হাসতে ভুলে গেছে । শেষ কবে প্রাণ খুলে হেসেছিল তাও মনে করতে পারে না । মাঝে মাঝে ওর মনে হয় জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে । কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হয় আসলে জীবন তাকে কিছুই দেয়নি । শুধু তার সাথে সব কিছু দিয়ে কেড়ে নেয়ার একটা খেলা খেলে গেছে ।
ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার বাধ্য মেয়ে ছিল মেঘ । পড়াশুনাতেও ভাল ছিল । সবার চোখের মণি ছিল সে । গার্লস স্কুলে পড়ার কারণে কোন ছেলে বন্ধু ছিল না । কলেজে উঠার পর কোচিং এ কিছু ছেলের সাথে পরিচয় হয় । ওরা একই কলেজে পরে । ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয় । শুধু মেঘ একানা , রূপা , মনীষা , পায়েল মানে যাদের সাথে মেঘ সবসময় থাকত সবার সাথেই ওদের ভাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ।
সবার আগে বন্ধুত্ব হওয়ার জন্যই হোক কিংবা অন্য কারণেই হোক , রিফাত এর সাথেমেঘের বন্ধুত্বটা ছিল একটু বেশি । ওর সাথে মোবাইলে কথাও হত বেশি ।
ভিন্ন ধর্ম তাদের বন্ধুত্বে কখনও প্রভাব ফেলে নি । মেঘ তার সব কথা শেয়ার করত রিফাত এর সাথে । রিফাত এর কেয়ারও করত খুব । কিন্তু সে কখনও ভাবেনি যে এই নিষ্পাপ বন্ধুত্বতা , বন্ধুর ভাল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা,বন্ধুকে অনুপ্রেরণা দেওয়া এ সবকিছুর ফলাফল কখনও খারাপ হবে ।
সবকিছু ভালই চলছিল । সেদিন থেকে সবকিছু ঝাপসা হতে শুরু করল যেদিন মেঘ জানতে পারল যে রিফাত তাকে ভালবাসে । কথাটা রিফাতই তাকে বলেছিল কেঁদে কেঁদে । খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন তার । তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটি তার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে । সেদিন কান্না ছাড়া আর কিছু বলতে পারে নি মেঘ । রিফাত তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু । কিন্তু তাই বলে..... । ওকে বন্ধু ছাড়া কখনও অন্য কিছু ভাবে নি মেঘ । ভাবতে পারবেও না কখনও ।
প্রথমে মেঘ ভেবেছিল এটা হয়ত সাময়িক ভাললাগা । হয়ত কিছুদিন পরে এমনিতেই সবঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু এ ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগে না তার । রিফাতকে বোঝানোর চেষ্টা করে সে । এটা কখনও সম্ভব না । অন্য ধর্মের একটা ছেলেকে কখনই মেনে নেবে না তার পরিবার । আর সবচেয়ে বড় কথা সে কখনও রিফাতকে বন্ধুরচেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারবে না ।
এর মধ্যে আরেকটা ছেলে প্রোপোজ করে মেঘকে । নাম অভি , একই কলেজে পড়ে । মেঘ ওকে সরাসরি না করে দেয় । কিন্তু অভি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে । তাছাড়া কলেজে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকা , ছুটির পর দাঁড়িয়ে থাকা , বাসার সামনে ঘুরাঘুরি করা ইত্যাদি তো আছেই । প্রথম প্রথম মেঘ একদম পাত্তা দিত না ।সবার কাছে শুনেছে অভি ছেলে হিসেবে ভাল । দেখতে ততটা সুন্দর নয় , তবে মেঘ ওকে এ কারণে না করেনি । বাহ্যিক সৌন্দর্যকে কখনও মেঘ গুরুত্ব দেয় নি ।
একদিন অভি মেঘকে কল করে । অনেক কথা বলে । মেঘ বুঝতে পারে যে অভি ওকে সত্যিই অনেক ভালবাসে । কিন্তু তবুও ও অভিকে না করেদেয় । বলে যে তার পক্ষে রিলেশন করা সম্ভব না ।
অনেক দিন কেটে যায় । যেদিন থেকে মেঘ জানতে পারে রিফাত ওকে ভালবাসে সেদিন থেকে সে রিফাতের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় । আগের মত এত কথাও বলে না । এর কারণ রাগ বা অভিমান নয় , কারণ মেঘ চাইত রিফাত যেন তার প্রতি আর দুর্বল না হয় ।
আবার অন্যদিকে অভি মেঘকে ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করত । সঙ্গত কারণেই রিফাত অভিকে পছন্দ করত না । সে চাইত না মেঘ অভির ফোন রিসিভ করুক । মেঘ কোন এক অজ্ঞাত কারণে রিফাতের কথা রাখতে পারত না । অভি ফোন করলে সে রিসিভ না করে থাকতে পারত না । অভির সাথে কথা বলতে ওর ভাল লাগত । ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । কিন্তু রিফাত এটা শুনে কষ্ট পাবে বলে তাকে জানাত না ।
এই লুকোচুরি বেশি দিন চলতে পারে নি । একদিন রিফাত জেনে যায় একথা । মেঘের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে , অনেক কষ্ট পায় । মেঘকে সে বার বার জিজ্ঞেস করে যে তার বারণ করা সত্ত্বেও কেন মেঘ অভির ফোন রিসিভ করল ? মেঘ কোন উত্তর দিতে পারে না । শুধু নীরবে কাঁদে । কি উত্তর দিবে সে ? সে নিজেও তো জানে না কেন সে অভির সাথে কথা বলে ।
এ প্রশ্নের উত্তর সেদিন খুঁজে পেয়েছিল মেঘ যেদিন রিফাত তাকে কসম দিয়ে বলে যে যদি সে অভির ফোন রিসিভ করে তাহলে সে পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতচলে যাবে । একটা কথাও সেদিন মুখ থেকে বের হয়নি তার । শুধু চোখ থেকে অশ্রু নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছিল । সেদিনের পর সে বুঝতে পেরেছিল যে তার মনে তার অজান্তে অভি কতটা জায়গা করে নিয়েছিল । কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস । যে ভালবাসা তার হাতে এসে ধরা দিয়েছিল ,তাকে সে ধরতে পারে নি ।
প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে মেঘ অভির সাখে কোন কথা বলে নি । সেদিন শুধু অভিকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল সে ।নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে ভাল রাখার জন্য নিজের ভালবাসাকে নিজের হাতে ধ্বংস করে দিয়েছিল সে ।
তবে এ ঘটনার পরে রিফাতের সাথেও সে ভালভাবে কথা বলতে পারত না । রিফাতকে কখনও কিছু বলে নি সে । কিন্তু রিফাতের উপর মনে মনে একটা রাগ জমে ছিল । নিজের অজান্তেই কথায় কথায় রিফাতের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলত সে ।
এইচ.এস.সি র পর রিফাত মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায় । মেঘ রিফাতের সাথে যোগাযোগ মোটামুটি বন্ধ করে দেয় । কিন্তু অভির কথা একমূহুর্তের জন্যও ভুলতে পারে নি সে । অভি মেঘের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিল । শুনেছে এখন নাকিঅভির ফ্যামেলি ঢাকায় চলে গেছে ।
এসবের কোন কিছুই মেঘ কখনও কাউকে বলে নি । তার বান্ধবীদের কেউও জানে না । মন খারাপ থাকলেও কাউকে বুঝতে দিত না সে ।সবসময় হৈ হুল্লোর করে কষ্টগুলোকে ঢেকে রাখত ।
তারপর একে একে সবাই আলাদা হয়ে যায় । মেঘ পুরোপুরি একা হয়ে যায় । তখন থেকে আনন্দ জিনিসটা হরিয়ে যায় তার জীবন থেকে । নিঃসঙ্গতা আর অভির কিছু স্মৃতিআজ তার সবথেকে প্রিয় সঙ্গী । একটু একটু করে বুকে জমতে থাকা কষ্টগুলো মাঝে মাঝে ঝেরে ফেলতে ইচ্ছে করে তার । কিন্তু চোখের জলে তার বিন্দুমাত্রও কমে না ।
মধ্যরাতে নির্ঘুম চোখে মেঘ প্রায়ই ভাবে যদি সে আকাশের মেঘ হতে পারত , বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তো পৃথিবীর বুকে , তারপর মিশে যেত মাটির সাথে । খুব ইচ্ছে করে তার আকাশের মেঘ হতে , খুব ইচ্ছে করে ।
.................---¬¬¬¬---..............¬.¬.¬