আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৩

শুন্যতা

শুন্যতা
✍লিখেছেনঃ অন্ধকারের রাজপুত্র


রাজ আজ বাসায় ফিরছে । ট্রেনের টিকিট না পাওয়াতে বাধ্য হয়ে ছাদে বসে আসতে হচ্ছে তাকে । অবশ্য এর আগে কখনও ছাদে বসার অভিজ্ঞতা ছিল না তাই কেমন যেন ভয় হচ্ছিল তার । কিন্তু আজ ভয়টা তাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না, আজ তার মাথায় অন্যকিছুর একটা মোহ কাজ করছে, কিসের মোহ সেটা বুঝতে তার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । রাজের পুরনো স্মৃতি ভুলে যাওয়ার একটা ছোটখাটো মানসিক রোগ আছে । তবে পুরনো দিনের সাথে মিলে যাওয়া ছোট খাটো কিছু ঘটনা চোখে পরলে আবার সেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় ।

ট্রেন অবিরাম ছুটে চলছে দিগন্তের পথ ধরে । ধু ধু বাতাসে রাজের চুলগুলো দিব্বি উড়ছে । কখনও বা ধূলি এসে চোখের কোণায় জমছে, রাজ বারবার হাত দিয়ে চোখ মুছে যায় কিন্তু আবার সেই ধূলির পুনারাবৃত্তি ঘটে । নিরুপায় হয়ে ব্যাগের ভেতরে কিছুক্ষন হাতরে সানগ্লাসটা খুঁজে পেলো । সানগ্লাসে চোখ পড়তেই খেয়াল করলো কোণার দিকটায় একটু ফেটে গিয়েছে। সানগ্লাস থেকে মনে পড়ে গেলো এটা অপূর্বের দেয়া গিফট ।

অপূর্ব প্রায় শপিং মলে গিয়ে অযথা ঘুরাঘুরি করতো আর মেয়ে দেখত । একদিন রাজকে কল দিয়ে জোর করে শপিং মলে ডেকে আনে । সেদিন অবশ্য রাজের জন্মদিন এটা সে জানতো না ।

“কিরে সারাদিন ঘরে বসে ডিম পারিস নাকি? এতো করে জোর করতে হয় কেন তোকে? এক ডাকে চলে আসতে পারিস না? শালা আস্ত একটা আঁতেল তুই, এভাবে বন্ধুত্ব চলে নাকি? ”।

“এসব কথা এখন ভালো লাগছে না আমার । আর বন্ধুত্তের লেকচার দিস না আমায় । তুই কোন ধরণের বন্ধু জানা হয়ে গিয়েছে আমার, আজ সবাই আমার জন্মদিনের উইশ করেছে । বাকি ছিলি তুই কিন্তু তুই তো আছিস রমণীদের পিছে পিছে”।

এই বলে রাজ চুপ হল যে আর কথাই বলছিল না অপূর্বের সাথে । অপূর্ব খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো । পরে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য অপূর্ব রাজকে একটা সানগ্লাস গিফট করে দিলো । রাজ নিতে চাইছিল না, অনেক জোরাজোরিতে সানগ্লাসটা খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো ঐদিন । পরে অপূর্ব বুঝতে পারলো কীভাবে রাজের রাগ ভাঙ্গান যায় । রাজ খাবারের প্রতি অনেক দুর্বল কিনা তাই ওকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে মন ভরে খাইয়েছিল ।

ট্রেনের অনবরত ঝাঁকুনিতে রাজের স্মৃতিচারণা থেমে যায় । দুপুর প্রায় গড়িয়ে পড়লো । রাজের খুব খিদে পেয়েছে । আসার পথে টিফিনে করে কে যেন নুডুলস পুরে দিয়েছিল । নুডুলস খেতে খেতে হঠাৎ হলুদ রঙের টিফিন বক্সের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো,

কলেজ লাইফে মেয়েদের মধ্যে অধরাই রাজের খুব কাছের বান্ধবী ছিল । ওরা একে অপরের সাথে এতোটাই সময় কাটাতো যে অনেকেই ভাবতো এরা সম্ভবত প্রেমিক-প্রেমিকা । তবে এটা নিয়ে ওরা কেউ মাথা ঘামাতো না । অধরা রাজকে অনেক দেখতে পারতো । রাজ নুডুলস খুব পছন্দ করে তাই ২ দিন পর পর একটা হলুদ টিফিন বক্স করে ওর পছন্দের নুডুলস রান্না করে আনত । রাজও অধরাকে নিরাশ করতো না । দোকান থেকে অধরার পছন্দের আইসক্রিমটা কিনে দিতো । এরপর দুইজন হাঁটতে হাঁটতে আর গল্প করতে করতে প্রতিদিন হারিয়ে যেত কোন এক অজানার পথে ।

একদিন শপিং করার কারনে অধরার ব্যাগে জায়গা হচ্ছিল না বলে রাজের ব্যাগে টিফিন বক্সটা রেখেছিল । পরে আর ফেরত দেয়ার কথা মনেই ছিল না।এভাবেই বক্সটা রাজের কাছে থেকে যায় ।

ট্রেন এখন এসে থামল কুলিল্লা জংশনে । অধরাকে নিয়ে অতীতের ঘোরটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো । কোন দিকে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলো খবরও পেলো না ।

ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে । কোথায় যেন একটা ঝামেলা হয়েছে তাই ছাড়তে ঘণ্টা খানেক লাগতে পারে । হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়া শুরু করলো । রাজ তাড়াতাড়ি ট্রেনের ছাদ থেকে নেমে এলো । ছাউনির নিচে এক টং এর দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো । এই বৃষ্টিভেজা পরিবেশে এক কাপ গরম চা খেতে পারলে মন্দ হতো না । ভেজা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দোকানীকে এক কাপ চা দিতে বলল । চায়ের কাপে চুমুক দিতেই হঠাৎ চোখ পড়লো সামনে । দুই বন্ধু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খুব জমবেশ আড্ডা দিয়েই চলেছে । কেন জানি ব্যাপারটা তার বহু কালের পরিচিত মনে হচ্ছে। খানিকটা চিন্তা করতে গিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো । এক মুহূর্তের জন্য কোন এক গভীর স্মৃতিতে হারিয়ে গেলো ।

“অরণ্য, ওই অরণ্য । ওই ব্যাটা ,রাস্তার এইদিকটায় আমি । ছাতাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি আয় , আমি ভিজে যাচ্ছি তো”
“ তুমি ভিজলে আমি কিতা করমু মামা? যাও খিচকাও!! ফুটবল খেলতে বের হইসিলা , আমারে ডাকো নাই ক্যান? অখন বিপদে পরস আর আমারে ডাকো। এতো খাতির নাই মামা, বেশি দরকার হইলে তুমি এইপারে আইসা যাও”
রাজ নিরুপায় হয়ে নিজেই রাস্তা পার হল । শীতের প্রকোপে খুব কাঁপছিল ।
“কিরে মামা এতো কাঁপিস ক্যান? শীত লাগতেসে নাকি?”
“হ্যাঁ,দোস্ত। এতো বৃষ্টির মধ্যে ধুম ধারাক্কা ফুটবল খেলে এখন শরীরের বারোটা বেজে গিয়েছে।খুব ক্লান্ত লাগছে এখন”
“এইসব কথা আমারে ক্যান কও? খেলার টাইমে তো একলা একলা খেলতে গেসিলা। আমারে ডাক দিলে কি ক্ষতি হইত তোমার?” অরণ্য বাগে পেয়ে এখন সব উসুল করছে।
“সরি রে । এতো কিছু খেয়াল ছিল না । প্লীজ রাগ করিস না । খুব ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে আমার , কিছু কর না দোস্ত?”
অরণ্য সব সময় উপরি রাগ দেখিয়ে মজা নিতো কিন্তু শেষমেশ ঠিকই সব কাজ করে দিতো । রাজকে নিয়ে একটা টং এর দোকানে বসে গেলো । রাজ কাঁপতে কাঁপতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ওদিকে অরণ্য খিলখিল করে হাসছে, মাঝে মধ্যে দু একটা গুঁতোও দিচ্ছে।

এক পশলা বৃষ্টিভেজা বিকেল । দুই বন্ধুর মাঝে চলছে খুনসুটি, চলছে হাসাহাসি । এই খুনসুটির মজা যেন আর শেষ হতে চায় না, এই আনন্দ যেন অনন্তকালের । সেই অন্তরঙ্গ হাসাহাসির কাছে যেন বৃষ্টির টুপটাপ শব্দও ফিকে হয়ে যাচ্ছিল ।

হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে ভ্রম থেকে বেরিয়ে এলো । বৃষ্টি প্রায় অনেকটা কমেছে এখন । চায়ের টাকাটা পরিশোধ করে ট্রেনের দিকে ছুটে গেলো । এখন ছাদে বসাটা খুব একটা সুবিধের হবে না । ট্রেনের ভেতরে একটা সিট খালি পেলো ওটাতেই বসে গেলো । আবার ট্রেন চলা শুরু হল । চলন্ত ট্রেনের জানালা হতে সূর্যাস্ত আর দেখা হল না, মেঘলা আকাশের কোন এক কোণায় লুকিয়ে পড়েছে সন্ধ্যা । সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ দুটো কখন যে বন্ধ হয়ে গেলো আর খবর পেলো না ।

“শতবর্ষ ধরে থাকা তোমার অপেক্ষা আমি । তোমার ঠোঁটের ওই রহস্যমাখা হাসি, তোমার অগ্নিঝরা আঁখি, তোমার গোধূলি বর্ণ চুল আর আবেগঘন কণ্ঠ। আজ সব আমার ভালোবাসায় জড়ানো সব স্মৃতি, আমার চোখের কোণ থেকে আজও বেয়ে পড়ে অশ্রু হয়ে”, অহনার ডায়েরি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ছিল রাজ ।

অহনা অনেকটা দার্শনিক টাইপ মেয়ে, সবসময় চুপচাপ থাকে আর সারাদিন কি যেন চিন্তা করে । পুরো সার্কেলে ওর প্রভাবটাও খারাপ ছিল না । সবাই যখন কোন সমস্যা নিয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় থাকতো তখন অহনা অনেক ভালো একটা সমাধান সবাইকে বাতলে দিতো । আর এই জন্যই রাজ যেকোনো সমস্যায় আগে অহনার সাথে কথা বলতো কিন্তু রাজের সাথে অহনার সব সময় কোন একটা পয়েন্টে গিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যেত । অনেক তর্কা-তর্কী শেষে রাজ ওর কথাই মেনে নিতো ।

ডায়েরীর লেখাটা পড়া শেষ হতে না হতেই আচমকা ঝড়ো বেগে কে যেন টান দিলো ডায়েরিটা ।
“দেখ ,মানুষের ডায়েরি এভাবে লুকিয়ে পড়া খুব বাজে একটা ব্যাপার । তুই আমার ভালো বন্ধু মানলাম কিন্তু তাই বলে...... প্লীজ সামনে থেকে এরকম আর করিস না” , অহনা অনেকটা রাগত স্বরে বলল ।
“এতো পার্ট নাও কেন আপু? এতো রোম্যান্টিক কথা কার জন্য লেখা হচ্ছে শুনি? তলে তলে এতদূর । হুম! বুঝি সব বুঝি । কবি- সাহিত্যিক মানুষ প্রেমে পড়লে এমন সব লুতুপুতু লেখাই লিখে। তোর মজনুটা কে একটু শুনি?”।

ঐদিন অবশ্য কোন কারনে অহনার মাথা খুব খারাপ ছিল । রাজের ঠেস মারা কথাটা গায়ে কাঁটা হয়ে লেগেছিল কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটা দিলো । অহনাকে থামানোর জন্য রাজ হঠাৎ পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে । এক মুহূর্তও দেরি হল না,রাগের মাথায় রাজকে সজোরে এমনভাবে ধাক্কা দিয়ে বসলো যে ধাক্কাটা পাবার পর সে একদম মাঝ রাস্তায় চলে এলো । রাজ শুধু দেখতে পেলো একটা বড় বাস ওর দিকে এগিয়ে আসছে । এরপর শুধুই অন্ধকার ......

হঠাৎ চোখ খুলে গেলো । খেয়াল করলো একজন লোক ওকে বার বার ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলতে চেষ্টা করছে ।
“এইযে ভাই উঠুন । ট্রেন চট্টগ্রাম চলে এসেছে । আর কত ঘুমাবেন? সবাই তো চলে গিয়েছে, পুরো বগি খালি এখন । আপনি বাসায় যাবেন না?”
চোখ মুছতে মুছতে এদিক ওদিক একবার ভালো করে তাকাল,কেউ নেই । লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করল । এরপর ব্যাগ নিয়ে ট্রেন হতে নেমে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।

রিকশায় চড়া অবস্থায় হাসছে আর ভাবছে, “ নাহ! অহনা ঐদিন কোন ধাক্কা মারে নি । একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বটে পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায় । এটা নিছক একটা দুঃস্বপ্ন ছিল । তবে ভালোই হল এই সুবাদে অহনার কথাও মনে পড়ে গেলো”
কতদিন যে দেখা হয় নি পুরনো বন্ধুগুলোকে । ট্রেন যাত্রায় একে একে সবার কথাই মনে পড়ে গেলো । এবার সবার সাথেই একত্রে দেখা করবে সে কিন্তু কাউকে কিছু জানাবে না । সে চায় এবার সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে ।

বাসায় ফিরতেই পাশের বাসার তাউসিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো । তাউসিফ বলল,
“কিরে কি খবর তোর? কখন এলি?”
“এইতো এলাম মাত্র । তোর কেমন যাচ্ছে? আচ্ছা শোন, আমি এখন অনেক টায়ার্ড তাই কথা বাড়াচ্ছি না । কাল আমি অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনার সাথে একত্রে দেখা করবো । আমি যে এসেছি এটা কাউকে জানাবি না। তুই সবাইকে কাল কল দিয়ে ডেকে আনবি”।
“সবার সাথেই তো দেখা করার কথা বললি। আচ্ছা সবাইকে ডাকবো কিন্তু ওর কথা .........। কি ভেবে যেন তাউসিফ এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো ।
“সরি, তোর কথা বুঝলাম না । আর কেউ বাকি আছে নাকি? এই চার জনই তো।” রাজ অনেকটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ।
“আরেহ না , আর কেউ বাকি নেই । আমি বলছিলাম কি আসলে আমি তো কালকে.........”
“দেখ আমি এতো কথা বুঝি না কাল তুই সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করবি বেস। এখন আমি যাই, টাটা”।
তাউসিফ হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ ঠিক আছে । আগামীকাল সবার সাথেই দেখা হবে।আল্লাহ্‌ হাফেজ” ।

ঘরে ঢুকতেই দেখে বাসায় শুধু আম্মু-আব্বু আছেন । বড় আপু একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছে । রাতের খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ভাবছে,
“কোথাও যেন কিছু একটা বাদ পড়ে আছে,তাউসিফের কথায় মনে হচ্ছে আরও একজনের অস্তিত্ব এখনও বাকি আছে কিন্তু কে সে ? নাহ! এমন হলে তো তাউসিফ আমাকে বলতো”।

বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় হাঁটা শুরু করলো । হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন রাজকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো, গালে একটা উষ্ণ চুমু অনুভব করলো রাজ । আচমকা পেছন ফিরতেই দেখে বড় আপু । ছোট ভাইটার সাথে কিছুক্ষন গল্প আর আদর করলো, শেষে “লাভ ইউ মাই সুইটু”বলে ঘুমুতে চলে গেলো ।

এক মুহূর্তের জন্য পুরো ব্যাপারটাই কেমন পরিচিত মনে হল । এর আগেও যেন ঠিক এইভাবেই কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরত, গালে চুমু দিতো।“ লাভ ইউ মাই সুইটু” এই ধরণের কিছু একটা এর আগেও রাজ কাউকে বার বার বলতো । খুব ভয়ানক একটা অস্থিরতা রাজকে মনে মনে খেয়ে যাচ্ছে এখন । কি হচ্ছে এসব? প্রত্যেকটা স্মৃতি এখন এক একটা প্রশ্ন রাজের কাছে । দরজাটা বন্ধ করে পুরো রুমে ছটফট শুরু করে দিলো । সারাটা রাত ঘুম হল না শুধুমাত্র এই কটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ।

পরদিন তাউসিফের সাথে দেখা হতেই পুরো ব্যাপারটা ওকে জানায় । তাউসিফ কিছুক্ষন চুপ করে ছিল তারপর বলল, “আচ্ছা ওটা নিয়ে পরে কথা হবে আগে সবার সাথে তোর দেখা করিয়ে আনি”।
দুজনেই একটা রিকশায় উঠে পড়লো । রিকশা থামল একটা নির্জন জায়গায় । তাউসিফ রাজের হাত ধরে ধীরেধীরে সামনে হাঁটছে । রাজ বুঝে উঠতে পারলো না তাউসিফ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । রাজ বলে উঠলো,
“কিরে এই কোথায় নিয়ে এসেছিস আমাকে? অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনা ওদের কাউকেই তো দেখছি না । ওরা সবাই কোথায় ?”
কিছুদূর আসার পর তাউসিফ আঙ্গুল দিয়ে সামনে দেখিয়ে দিলো । এক পলক সামনে তাকাতেই রাজের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হল । চারটা কবর । কবরের উপর খুদাই পাথরে একে একে লেখা আছে অপূর্ব, অহনা, অরণ্য আর অধরার নাম । রাজ কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছিল ওর সাথে, পুরো ব্যাপারটাই উলটপালট লাগছে ওর কাছে । তাউসিফ রাজের কাঁধে হাত রেখে এবার মুখ খুলল ।

“দেখ দোস্ত এখন আমি যা বলব তা হয়তো মেনে নিতে তোর খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সত্যটা জানা তোর প্রয়োজন । গত দুই বছর আগে তোরা সবাই একটা জীপে করে পিকনিকে যাচ্ছিলি । তুই ড্রাইভ করছিলি আর বাকিরা গান-আড্ডায় মেতে ছিল । কিন্তু মধ্যপথে তোর একটা ভুলের কারনে গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে । সবাই ওই এক্সিডেন্ট এ মারা যায় , শুধু বেচে যায় তুই আর অপ্সরা”।
“অপ্সরা” নামটা শুনে রাজের খটকা লেগে যায় । এখন অনেকটা আঁচ করতে পারছে কার স্মৃতি গত রাতে তাকে এতোটা চিন্তিত করেছিল । অপ্সরা রাজের প্রেমিকা । কীভাবে কি হল এখনও রাজের মাথায় আসছে না । রাজ কীভাবে ওকে ভুলে গেলো, অপ্সরা যদি বেচেই থাকে তাহলে কই এখন? আর যোগাযোগ কেন হল না আমাদের মাঝে? একের পর এক নিজেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে নিজেকে ।

“তোদের দুইজনকে হসপিটালে নেয়া হয়েছিল । তুই আর অপ্সরা অনেকটা সুস্থ হয়েছিলি । কিন্তু পরে জানতে পারলাম কেউ একজন এসে অপ্সরাকে ডিসচার্জ করে নিয়ে যায় । এরপর থেকে অপ্সরা আর ওর ফ্যামিলিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।নাম্বারটাও অফ ছিল । মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়াতে তুই অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলি । এতোগুলো কষ্ট তুই সহ্য করতে পারবি না জেনে আমরা কেউ তোকে আর কিছু জানাই নি । আজ দুই বছর পর তোর অনেক কিছুই মনে পড়ে যাওয়াতে ভাবলাম সত্য আর চাপা দেয়াটা ঠিক হবে না, তাই সব জানিয়ে দিলাম”।

রাজ পুরোপুরি নির্বাক হয়ে মাটিতে বসে পড়লো । চোখ দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে । যাদেরকে সাথে দেখা করবে বলে এতোটা পথ পাড়ি দিলো, পুরো যাত্রা জুড়ে যাদের স্মৃতিতে মনটা উচ্ছল হয়ে উঠেছিল, একটা ভুলের কারনে আজ তারা সবাই ওর উপর অভিমান করে ওকে ছেড়ে চলে গেলো । কিন্তু অপ্সরা কেন এমন করলো? কি দোষটা ছিল যে এভাবে কিছু না বলে চলে গেলো? সব কিছুই তো জানা হয়ে গেলো কিন্তু এরপরও হাজারো প্রশ্ন হৃদয়ের কোঠরে ছুরি দিয়ে চির চির করে ছিদ্র করে যাচ্ছে । বুকফাটা আর্তনাদ গুলো চিৎকার করে বলতে চাইছে কেন এমন হল? কেন আমার সব মনে পড়ে গেলো? ভালোবাসার মানুষগুলো কীভাবে এতোটা অভিমানী হয়ে গেলো?

রাজ এখনও মাটিতে বসে আছে । ওর চারপাশটা জানি কেমন ভারি হয়ে উঠেছে । আকাশটা আজ কাঁদছে, কাঁদছে রাজের চোখজোড়া । এই দুই কান্নার মিলনে রাজের অশ্রুগুলো আর খুঁজে পাওয়া গেলো না । আজ কোথাও কেউ নেই। চারিদিক কেবল শুন্যতা আর শুন্যতা ।

গল্পটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!

ღjrk

ভালোবাসা অবাক চোখে

ভালোবাসা অবাক চোখে
লিখেছেন- Sesh rater adhar

অনেক দূর থেকে দেখেই রক্তিম নীলিমা আসছে বুঝতে পারল । রক্তিম ১০ টাকার বাদাম কিনে তা খাচ্ছিল। নীলিমা কাছে আসাতেই জিজ্ঞাসা করল-কেমন আছো ? বাদাম খাবা ?
নীলিমা রক্তিম এর দিকে তাকিয়ে রইল । রক্তিম বুঝল না নীলিমার মনের অবস্থা রাগের দিকে না ঠাণ্ডা । আবার জিজ্ঞাসা করল - বাদাম খাবা না?
নীলিমা আবার অনেক রাগে রাগে তাকাল রক্তিমের দিকে ।
রক্তিম বলল- কি হল? কথা বলবা না ?
এতক্ষণে নীলিমা বলল - তুমি ছোলাসহ বাদাম খাচ্ছ কেন ?
- ওহ ! sorry . ভুল হয়ে গেছে ।
-ভুল হয়ে গেছে মানে ? এক ভুল মানুষ কতদিন করে ?
- আমার বাদাম এর ছোলা ছাড়াতে ঝামেলা লাগে ।
- তাহলে বাদাম খেতে কে বলছে ?
- আমার ভাল লাগে ।
- ছোলাসহ খেতে , তাই না ?
- না , খারাপ তো লাগে না । দেখ, বাদাম এর ছোলাও তো টাকা দিয়ে কিনি ।
- চুপ কর । কথা বইলো না ।
- আচ্ছা।

রক্তিম ঠোঁট ২ টা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল । নীলিমা রক্তিম এর পাশে বসল। বসে বলল - মুখটাকে এমন অদ্ভুত করে রাখছ কেন ? হাত নামাও মুখ থেকে ।

রক্তিম হাত নামাল ।

নীলিমা বলল - এবার কথা বল ।
রক্তিম বলল- কি বলব ?
- এতদিন পর দেখা হল, কিছুই বলার নাই ?
- আছে ।
- কি?
- i love u
- তোমাকে না টি -শার্ট পড়ে আসতে বলছি , এই পচা শার্ট পরে আসছ কেন ?
- sorry .ভুল হয়ে গেছে ।
- আমাকে চিনতে পারতেছ ?
- পারব না কেন ?
- না । ভাবলাম তাও ভুলে গেছ নাকি !
- কি যে বল তুমি ? আচ্ছা তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছ?
- না ।
- তাহলে এভাবে কেন কথা বলতেছ ?
- কিভাবে বলতেছি ?
- সবসময় যেভাবে বল সেভাবে বল ।
- আমি সেভাবেই বলতেছি , তোমার ভাল লাগতেছে না ।
রক্তিম কিছু বলল না । চুপ করে রইল । দুজন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নীলিমা বলে উঠল - নাহ ! তুমি এমন কেন ? আমার মনের মতন কিছুই করতে পারো না । তোমার কিছুই মনে থাকে না......
- কি হল আবার ?
- কি হবে , কিছুই হয় নায় । তোমার চুলের ঐ অবস্থা কেন? মানুষের চুলের অবস্থা এমন থাকে? একটা কথা কতদিন তোমাকে বলতে হয় ? আমার সাথে দেখা করতে আসছো এতদিন পর, আজ কে অন্তত চুলটা ঠিক করে আসতে পারতে !
- ভুল হয়ে গেছে sorry !!
- এই এত sorry sorry করবা না'ত ।
- তুমি কি রাগ করতেছ?
- তো কি করব ?
- ভাল করে কথা বল না , Please...
- আমি ভাল করে কথা বলতে পারি না ।

রক্তিম কি বলবে বুঝতে পারল না । তাই আবার চুপচাপ বসে রইল ।
নীলিমার রাগ বোধহয় আরও বাড়ছে । রক্তিম কে বলল - তুমি পাশ থেকে সরো তো । আমার ভাল লাগছে না ।
- কেন?
- তোমাক সরতে বলছি সরো ।
- না আমি তোমার পাশেই বসে থাকব।
- সরতে বলছি না তোমাকে । তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে ।
- দেখ , এমন কইরো না please.
- কি করতেছি ? তোমাকে আমার ভাল না লাগলেও ভাল বলতে হবে? তুমি আমার পাশ থেকে সরো তো ।
- plz, আর এমন করব না ।
- কেমন করবা না? তুমি তো আবার এমন করবা । তোমাকে চুল ঠিক করে রাখতে বলছি , একটা দিন করলা না । চুল দেখলে মনে হয় পাখির বাসা । বলছি ছোলাসহ বাদাম না খেতে, তুমি ওগুলা সহই খাবা । বলছি t-shirt পরতে , তুমি পরই না । বল কি t-shirt পরলে নাকি ছাগল এর মতন লাগে।
এই, তোমার কোন প্রবলেম আছে আমার ছাগল কে ভাল লাগলে ??
তোমাকে আমার ভাল লাগলেই তো হল । আর কাকে দেখাতে হবে তোমার?
- কাউকে না ।
-তাহলে আমার কথা শুননা কেন?
- শুনি তো ।
- কি শুনো তুমি? কি শুনো ?
- সবই তো ।
- এই আজ কত তারিখ জানো ?
- জানি তো
- তোমার মনে আছে আজকে কি? আজ কেন তোমাকে আসতে বলছি, আমার সাথে দেখা করতে বলছি?
- কিসের জন্য ?
- তাও জাননা তুমি?
- বল না plz. কেন?

নীলিমা এবার আরও রেগে গেল । কিছুক্ষণ পর কান্না শুরু করে দিল ।
রক্তিম বলল - এই , কি হইছে তোমার ?
বলে রক্তিম নীলিমার মাথায় হাত রাখল । নীলিমা রক্তিম এর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল - plz... তুমি আমাকে ছুঁইও না তো । আমি আর পারতেছি না ।
আমার তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা ইম্পসিবল। তোমার মতন ছেলের সাথে আমি relation রাখতে পারব না । plz leave me...

রক্তিম বলল - প্লিজ এত রাগ করো না প্লিজ ।
- বললাম না তোমাকে আমি তোমার সাথে relation রাখব না । তুমি যাও এখান থেকে ।
রক্তিম কিছু না বলে একটু দূরে সরে গেল । তারপর ব্যাগ থেকে কিছু বের করল । নীলিমার সামনে ৬ টা গোলাপ ধরে বলল- happy propose day !!! এই দিনে এই ছাগলটাকে propose করছিলা । আজ ১ বছর হল । এই ছাগলটা এখনও মানুষ হয় নাই , sorry !!

নীলিমা চোখ মুছে গোলাপ গুলো নিল । একটু হাসি ফুটল নীলিমার মুখে । নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বলল - এতক্ষণে দিলা কেন?
তুমি জানতে, তাই না? তবে আগে বললে না কেন ? আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভাল লাগে তাই না? কেন এমন করলা তুমি?
- তুমিও তো আমকে কষ্ট দিলা । ওওও তোমার জন্য আরও একটা জিনিস আনছি ।
রক্তিম ব্যাগ থেকে একটা চকবার আইসক্রিম বের করল ।

নীলিমা হাতে নিল আইসক্রিমটা । দেখল আইসক্রিম গলে পানি হয়ে গেছে। নীলিমা বলল - এটা তো আগে দিতে পারতে? দেখো কি অবস্থা !!!!
গোলাপ গুলো ও দেখছ ব্যাগ এর ভিতর চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ?
- sorry ! মনে ছিলনা ।
- তোমাকে নিয়ে কি যে করি? তুমি এমন পাগল কেন বলতো?

অবশ্য তোমার পাগলামির জন্যই তোমাকে আমি এত ভালবাসি । i love you. এই যে গলে যাওয়া চকবার , চ্যাপ্টা গোলাপ দিছো তাতে আমার যতটা ভাল লাগছে, ভাল গুলো দিলে এতটা লাগত না ।

বলেই নীলিমা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে বলল - আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি জান ।
- আমিও।

নীলিমা তারপর ২ টা t-shirt বের করল । বলল- নাও, তোমার জন্য আনছি।
এখন থেকে এগুলা পরবে, বুঝছ ? আর যেন ভুল না হয় । আর এগুলা পরলেই আমার কথা বেশি করে মনে পড়বে । মনে হবে আমি তোমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছি, বুঝতে পেরেছ?
- হ্যাঁ । থাঙ্কস। i love you, জান ।

রক্তিম আবার ও বাদাম নিয়ে ছোলাসহ খাওয়া শুরু করল । নীলিমা হেসে বলল - এই আবার? দাও আমি ছুলে দেই বাদাম আর তুমি খাও ।

নীলিমা বাদাম ছুলে দিতে লাগল আর রক্তিম খেতে লাগল । আবার হয়ত ঝগড়া হবে একটু পর । রক্তিম আবার উলটা পাল্টা কিছু করবে । নীলিমা বলবে রক্তিমকে ছেড়ে যাবার কথা । কিন্তু সব আবার একটু পর ঠিক হয়ে যাবে । এইতো ভালোবাসা । মধুর ভালোবাসা!!!!!!!



ভাললাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!!

ღjrk