আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

রূপালী রুপা (রাতের গল্প)

রূপালী রুপা (রাতের গল্প)
লিখেছেনঃ Nahid Amin

সোফায় অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে নাফিস। রূপাদের বসার রুমটা অনেক সুন্দর
করে সাজানো। জানালার পর্দা থেকে শুরু করে সুকেসে সোপিস পর্যন্ত সবকিছু মধ্যেই কেমন একটা মিল আছে। সবকিছু এতো পরিষ্কার যে দেখে মনে হয় এগুলো প্রতিদিন ধোয়ামোছা করা হয়। টি-টেবিলে কিছু পত্রিকা পড়ে আছে। 

পত্রিকা পড়ার অভ্যাস তার নেই তবু একটা পত্রিকা হাতে নিয়ে কিছুপাতা উল্টে পাল্টে দেখছে। অসময়ে রূপাদের বাসায় এসে পড়েছে। তার মামার মতে বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়িতে বেশি যাওয়া-আসা উচিত না।

নাফিস এখানে আসতেও চায়নি। অফিসের কাজে বের হয়েছিল, পথে হঠাত করে হবু শ্বশুর সাইফুল হকের সাথে দেখা হয়ে যায়।

মুরব্বি মানুষ অনেক জোরাজুরি করছেন তাই উনাকে না বলতে পারলো না। অনেকটা বাধ্য হয়েই সে এসেছে।

নাফিসকে বসার ঘরে বসিয়ে উনি তো উধাও! হয়তো ঘরে নাস্তার জন্য ভালো কিছু নেই তাই বাহির থেকে কিছু আনতে গেছেন। বাঙ্গালী নিজে খেতে পারবে না এতে মাথা ব্যথা নেই, তবে জামাইয়ের আদর যত্নে এরা ত্রুটি রাখেনা। যেভাবেই হোক জামাইকে ভালো কিছু খাওয়াবেই।

ভিতর রুম থেকেও কেউ আসছে না। সে কি রূপার নাম ধরে ডাকবে? নাফিসের মাথায় কিছু ঢুকছেনা। হঠাত পাশের রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো শিলা। শিলা রূপার ছোটবোন ক্লাস টেনে পড়ে।

আজকাল কার মেয়েরা খুব চালাক হয় বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা। নাফিস এই চালাক মেয়েদের কে বড়াবড়ই ভীষন ভয় পায়। এদের প্রশ্নের ধার, তলোয়ারের চেয়ে ধারালো।

-আরে ভাইয়া কখন আসলেন?
-এইতো দুমিনিট হবে।
-দেখছেন বাবার কান্ডটা! ভিতরে এসে বলছে, ভালো কিছু রান্না কর বাসায় স্পেশাল গেষ্ট এসেছে। মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আবার ছুট দিলেন।
-বয়স হইছে তো এজন্যই অনেক কিছু ভুলে যান।
-আপনি দেখি অনেক কিছু বোঝেন। হুম ভালো ভালো।
-তোমার আপু কোথায়...ভার্সিটি তে গেছে?
-আসতে না আসতে আপুর খোঁজখবর.... ভালোই তো খুব টান আছে দেখছি?
শিলা হাসতে হাসতে বললো।
-আরে না এমনেই জিজ্ঞেস করলাম
-আপু গোসল করছে আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে ।
-আমি ওর জন্য বসে আছি না। আংকেল বললো তাই আসছি।
-হইছে হইছে আর গীত গাইতে হবে না। আমি সব বুঝি।
-তা-ই নাকি?
-হুম তাই। চা খাবেন?
-হুম খাব।

শিলা মেয়েটা ভালো তবে খোঁচা মেরে কথা বলে, নাফিসের ধারনা সব শালিকারা এমনই হয়। এরা খোঁচা না মেরে কথা বলতে পারেনা। ভার্সিতে থাকতে ওর বন্ধুরা মিলে "শালিকা শাস্ত্র" বানিয়েছিল। সেখানে সবাই সাক্ষর করে বলেছিল, "শালি ছাড়া কখনো বিয়া করবে না"।

নাফিসের কপালে শালিকা জুটে গেছে বাকিগুলার কপালে জুটেছে কিনা কে জানে?
এতোবছর পর এই কথা মনে করে মনে মনে হাসছে নাফিস।
-দুলাভাই চা কেমন হইছে? সারাজীবন তো আপুর হাতে চা খাবেন। একবার
নাহয় শালিকার হাতের খেলেন
নাফিস একটু শুকনো কাশ দিয়ে বললো, দুলাভাই !
-ওহ সরি সরি। ডাকতেই যখন হবে তাই একটু প্রাকটিস করে নিচ্ছিলাম আর কি।
-এখনই দুলাভাই ডাকার দরকার নাই। বিয়েটা হোক তা যতখুশি ডাকবা।
-হিহি লজ্জা পাচ্ছেন নাকি?
-না। তবে চা টা ভালো হইছে।
-আপু এর থেকেও ভালো চা বানায়।
-ও ভালোই
-শুনেন আপনাকে একটা কথা বলি, আপু কিন্তু লজ্জাশীল ছেলে পছন্দ
করে না। আপুর সামনে লজ্জাপেয়ে বসে থাকবেন না। একটু আগ বাড়িয়ে কথা বইলেন। আর ওর রূপের প্রশংসা করবেন কাজে দিবে। মেয়েরা রূপের প্রশংসা পছন্দ করে ।
-হাহা সব জানো দেখছি ।
-হুম জানা দরকার। তাছাড়া শালি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলাম আর-কি
শিলার সাথে টুকটাক গল্প করতে করতে গোসল সেরে রূপা বের হলো। সে একটা নীল শাড়ি পড়েছে,
গায়ে ফোটায় ফোটায় পানি এখনো লেগে আছে, চুলগুলো এখনো ভেজা।
ভেজা চুলে মেয়েদের স্বাভাবিক থেকে বেশি সুন্দর লাগে। রূপাকেও অনেক সুন্দর লাগছে, নাফিস মেয়েদের দিকে কখনো তাকায় না, চোঁখের দিকে তো নয়ই। তবে রূপার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারছে না।

ওর চোঁখে চোঁখ রেখে কথা বলতে ইচ্ছা করে। বুকে একগাদা সাহস জমিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, "এই যে মিসেস রূপা, আপনি এতো সুন্দর কেন?
আপনাকে দেখে বুকে আমার হাতুড়ে পেটার শব্দ আসে কেন?
হার্ট প্রবলেম নাকি। আপনি একটু কম সুন্দর হতে পারলেন না?
আমার বুকের ব্যথা কিন্তু দিনদিন বেড়েই চলছে। হার্ট প্রবলেম হলে আপনি দায়ী"।

রূপালী চাঁদ ও রূপার মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করে। নাহ কল্পনায় নয় বাস্তবেই তুলনা করতে হবে। আফসোস এখন বাহিরে চাঁদ নেই। থাকলে হয়তো তুলনা করা যেত কে বেশি সুন্দর। রূপালি চাঁদ নাকি রূপা। রূপার জেতার সম্ভাবনা অতিরিক্ত রকম বেশি