আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

(১)
-আমি কি তোমার কাছে কিছুদিন থাকতে পারি?
- হ্যাঁ, পারো। বাড়িতো তোমারই। তোমার নামেই আছে কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর পর কেন থাকতে চাইছ সেটা জানার কৌতূহল হচ্ছে।
-কৌতূহলটা আমি চলে যাওয়ার দিন পর্যন্ত দমন করে রাখো। আমি চলে যাওয়ার আগে তোমাকে সব বলে যাব।
-আচ্ছা, ঠিক আছে। যা ভালো বুঝবে করবে। ১৫ বছর আগে তোমাকে বাঁধা দেইনি। এখন তো আরও দেবনা।
-কেন দেবেনা জানতে পারি?"
-ভেবে নাও, ভালোবাসা কমে গেছে।"
বলেই হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল সৌরভ।তিথি কিছুই না বলে সৌরভের দিকে তাকিয়ে দেখল... সৌরভ একটু-ও পাল্টায়নি। তার হাসিও পাল্টায়নি শুধু কোথায় যেন কিছু নেই। খেয়াল করে দেখল, সৌরভের চুলে পাক ধরেছে। ১৫ বছর !!! অনেক দীর্ঘ সময় !!!!

(২)
টেবিলে খেতে বসে সৌরভ তিথিকে তার বাংলাদেশে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলো। বাংলাদশে কি কোন কাজে এসেছ? অনেক ভালো একটা চাকরী পেয়েছ শুনেছিলাম। সেটার কাজেই কী এসেছ?না, ঘুরতে এসেছি।ঘুরতে? হঠাৎ?ইচ্ছে হলো। সত্যিই কোন কাজে আসোনি?তোমাকে দেখতে এসেছি। সেটাও তো একটা কাজ, তাই না?সৌরভ অপ্রস্তুত চোখে তিথির চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নিল। নিজেকে দুর্বল করে দিতে সে চায়না। 


(৩)
সৌরভ তৈরি হচ্ছিল বাইরে যাবে বলে। হঠাৎ বৃষ্টি এসে গেল। আর সেটা যেন তেন বৃষ্টি না, কঠিন বৃষ্টি। যাকে বলে ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে একা ভিজতে ভালো লাগেনা, সাথে কাউকে থাকতে হয়। যে সাথে ভিজবে তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেয়ে বলবে, "আর ভিজোনা। ঠাণ্ডা লাগবে। " তারপর এক কাপ ধোয়া ওঠা গরম চা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটা রবীন্দ্র সংগীত গাইবে।সৌরভের জীবনে তিথি এমন একজন হতে পারত কিন্তু হয়নি। সংসার যখন শুরু করেছিল তারা তখন চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল,আশা ছিল। একে অপরের বন্ধু হবার প্রত্যয় ছিল।কিন্তু ঠিক কী কারণে তিথি সব ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেটা সৌরভ জানেনা। জানার চেষ্টাও করেনি। যে চলে যাবে বলে ঠিক করে তার উপর যুক্তি খাটেনা, ভালোবাসা খাটে কিন্তু সেই ভালোবাসাও যাকে আটকাতে পারেনি তাকে আর নতুন করে কিছু বলার বা বোঝানোর নেই।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখল বারান্দায় একটা মেয়ে ভিজছে। খোলা বারান্দা দিয়ে বৃষ্টির পানি তার শরীরে পড়ছে। সে কেঁপে কেঁপে উঠছে কিন্তু কিছুতেই যেন নিজেকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে পারছেনা। সৌরভ দেখল মেয়েটা তিথি। যাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল আর কোন এক রাতে এভাবেই ওই বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিল। আর আজ যাকে ডাকার ক্ষমতা তার নেই।সৌরভের হঠাৎ মনে হলো তিথি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।

(৪)
জ্বরের ঘোরে অচেতন তিথি। মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে সৌরভ আর মনে মনে নিজেকে দোষ-ও দিচ্ছে। কেন যে তিথিকে আটকালো না সে। অবশ্য না আটকানোর কারণটাও খুব স্পষ্ট।আজ আর সৌরভ তিথির কেউ না । যদিও তাদের ডিভোর্স হয়নি কিন্তু মনের বিচ্ছেদ অনেক আগেই হয়েছে। সময় তাদের আলাদা করেছে। আবার সময়-ই তাদের আজ এই পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।সৌরভের হঠাৎ মনে হলো সত্যিই কি সে তিথির কেউ না? যদি তাই হবে তাহলে কেন সে নতুন করে তার জীবনটা শুরু করতে পারেনি? কেন সবকিছু ভুলে যেতে পারেনি? কেন একটা অপেক্ষা তার মনকে প্রতিটা সময় আশ্রয় দিয়েছে? তারমানে কী সে এখনো তিথিকে আগের মতই ভালোবাসে? ১৫ বছরের ব্যবধান তার ভালোবাসার পরিমান একটুও কমাতে পারেনি? কিন্তু কী দাম আছে এই ভালোবাসার? কে মূল্য দিয়েছে তার ইচ্ছা আর প্রতীক্ষার? তিথি ফিরে এসেছে কিন্তু তার কাছে নয়। অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে। আর তার কাছে ফিরে আসলেও কী সে আগের মত করে তাকে মেনে নিতে পারবে? নিজের মত করে ভালোবেসে যাওয়া যায়, কারণ মন কোন যুক্তি ছাড়াই ১৫ বছর সময়টাকে ভুলিয়ে দেয় কিন্তু একসাথে থাকার ক্ষেত্রে ১৫ বছরের ব্যবধানটা অনেক বড়। কোন যুক্তিই এই ব্যবধানকে কমিয়ে দিতে পারবেনা।

(৫)
এক সপ্তাহ জ্বরে ভোগার পর তিথি সুস্থ হলো। তারপর আবার ব্যস্ত হয়ে গেল কোন একটা বিষয় নিয়ে। সৌরভ প্রথম দিন থেকেই দেখছে ব্যাপারটা কিন্তু জিজ্ঞেস করেনি কিছুই। জিজ্ঞেস করলেই উত্তর পাওয়া যাবে তাও নয়। তিথি নিজে থেকে কিছু না বললে তাকে কিছু বলানো যায়না।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই সৌরভ একটা ছোট চিরকুট পেল। তাতে একটা ঠিকানা দেয়া এবং ঠিকানা অনুযায়ী বিকেল চারটায় সেখানে যেতে বলেছে তিথি। খুব জরুরী ব্যাপার, সেটাও বলেছে। সৌরভ অফিসে যেয়ে তাই খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে লাগল। তবে একটা কথা তার বারবারই মনে হলো যে কী এমন ব্যাপার যে তিথি মুখে বলল না, চিরকুট লিখতে হলো? কাল রাতে চা খাওয়ার সময় ও তো বলা যেত।এসব ভাবতে ভাবতে সে তিথির দেয়া ঠিকানায় রওনা হলো।সবকিছু যেন তৈরি-ই ছিল। সবাই যেন তার আসার অপেক্ষাতেই ছিল। এক বুড়োমত ভদ্রলোক তার দিকে এগিয়ে এল।তাকে একটা চেয়ারে বসতে বলল। সৌরভ বসতেই লোকটি একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে বলল, এখানে সিগনেচার করুন, ম্যাডাম বলে গেছেন। সৌরভ কাগজটি হাতে নিয়ে দেখল সেটা ডিভোর্সের কাগজ এবং সেখানে তিথির সিগনেচার-ও আছে। সৌরভ খুব অবাক হলো এটা ভেবে যে, এত বছর পর ফিরে এসে তিথি এই নাটকটা কেন করল? সে তো কখনো তিথিকে আটকে রাখতে চাইনি। সে তার মত করে তিথিকে ভালোবেসেছে এতদিন। তিথি কাছে না থাকলেও সে জেনেছে এই পৃথিবীতে একজন মানুষ আছে যে শুধুই তার। যাকে অধিকার করেছিল সে ভালোবাসা দিয়ে। আজ সে সেই স্মৃতিটুকুও আর ধরে রাখতে চায়না। সৌরভ কিছু না বলে সিগনেচার করে উঠে দাঁড়াল। তখন লোকটি তাকে একটা চিঠি দিয়ে বলল, " ম্যাডাম দিয়ে গেছেন।"

(৬)
একটা রেললাইনের পাশে বসে সৌরভ চিঠিটা খুলল। তিথির হাতের লেখায় ভালোবাসার স্পর্শ যেন সে অনুভব করল। সৌরভ,
তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি বাংলাদেশে কেন এসেছি। আমি জানি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছ কিন্তু ভাবছ এত নাটকীয়তার
প্রয়োজন কী ছিল। নাটক তো জীবনেরই অংশ সৌরভ। মানুষ নাটকের আশ্রয় নেয় নতুন নাটক তৈরি করতে। আমি শুধু আমার
জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে একটা সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দেব বলে নাটকটা করলাম। তোমার নিশ্চয়ই মনে অনেক প্রশ্ন আসছে? আমি আজ তোমাকে সব বলব সৌরভ। সব বলব বলেই এই চিঠি।তোমার মনে পড়ে তুমি আমাকে কী বলতে? তোমার খুব ইচ্ছা আমাকে 'মা' হলে কেমন লাগে সেটা দেখবে। আমি যখন আমার সন্তানদের পড়াবো তখন আমাকে রাগী লাগে নাকী সেটা দেখবে। তোমার এই সুন্দর সুন্দর চিন্তা গুলো কবে যে আমারো স্বপ্ন হয়ে উঠেছিলো আমি জানিনা। আমি মনে মনে প্রতিদিন তোমার সন্তানের মা হয়ে উঠছিলাম ঠিক তুমি যেভাবে আমাকে ভাবতে। কিন্তু একদিন জানতে পারলাম 'মা' শব্দটা আমার জন্য নয়। আমি কখনো 'মা' হতে পারবোনা। কোন চিকিৎসা আমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণ করাতে পারবেনা। আমি চাইনি তুমি কষ্ট পাও । তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে নিজের অপারগতার জন্য আমিও কষ্ট পেতাম তাই তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম আমি সামনে থাকলে তুমি কখনো নতুন করে কিছু করার কথা ভাবতেও পারবেনা। ভেবেছিলাম আমি চলে গেলে সবার চাপে, দায় এড়াতে তুমি নতুন করে জীবনটা শুরু করতে পারবে। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম। গত ১৫ টা বছরের প্রত্যেকটা হিসেব আমার কাছে আছে। তুমি কীভাবে আমার অপেক্ষা করে চলছিলে আমি জানি। আমার খুব ভালো লাগত ভাবতে যে একটা মানুষ আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তাই আজও সে আমার অপেক্ষায় একা। তাই সম্পর্কটা পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারিনি। এই পৃথিবীর একটা কঠিন মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এই নির্লোভ ভালোবাসা আমাকে লোভী করে তুলেছিল তাই সম্পর্কটার শেষ সুতোটা ইচ্ছে করেই আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু বিধাতা চাননা সেই সুতোটা আমার হাতে থাকুক তাই তিনি এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার শেষ সুতোটা তাঁর মত করে টেনে ধরেছেন। আমি আর খুব বেশীদিন তোমাদের সাথে থাকব না। তাই দায়িত্ব নিয়ে সম্পর্কটা পুরোপুরি শেষ করলাম। আজ আমি গ্লানি মুক্ত। তোমার জীবনটা আমি নষ্ট করেছি। আজ যে সিদ্ধান্তটা নিলাম সেটা অদি ১৫ বছর আগেও নিতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আজ তোমার স্বপ্নটা সত্যি দেখতে পেতে। একটা সুন্দর জীবন, একটা সুন্দর পরিবার, একটা সুন্দর শিশুর বাবা হতে পারতে। আমি তোমাকে অধিকার করে রাখার লোভ সংবরণ করতে পারিনি তাই আজ আমরা কেউই সুখী নই। আমি অপরাধী। আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার স্বপ্নকে ধ্বংস করেছি, তোমার জীবনকে এই পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছি। জীবনের শেষ কিছু সময় তোমার সাথে কাটিয়ে আমি আরো লোভী হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমাকে হারাতে ইচ্ছে করছিল না একদমই। তাই সবকিছু শেষ করে দিয়ে নিজেও শেষ পথের যাত্রীদের সাথে মিশে যাচ্ছি । তোমার অপেক্ষা শেষ সৌরভ। তুমি ভালো থেকো।তিথি চিঠিটা হাতে নিয়ে সৌরভ চুপচাপ বসে থাকল। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। সে যেন দেখতে পেল সে আর তিথি রেললাইনের ধারে পাশাপাশি বসে আছে। কেউ কোন কথা বলছেনা কিন্তু দুজনেরই চোখ ছলছল করছে। নিয়তির কাছে হারার কষ্ট তারা প্রানপণে চেপে রাখা চেষ্টা করছে। যে প্রকৃতি তাদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছে তাকে তারা তাদের দুঃখ টাও দেখাতে চায়না।


লিখেছেনঃ Ramisa Anjum Rusmi

কমা অথবা দাড়ির গল্প

কমা অথবা দাড়ির গল্প
লিখেছেনঃ-শেষ রাতের আঁধার

- না সম্পর্কে আর কোন কমা, সেমিকোলন না। একেবারে দাড়ি।
- আর একবার কমা দাও। এইবার তুমি যতদিন চাও কমা থাকবে। আমি এর মাঝে তোমাকে জ্বালাবো না।
- জ্বালানো নিভানো জানি না। তোমার সাথে আমার আর সম্পর্ক রাখা চলে না।
-আরে।,আর একবারই তো।
- না বলছি। না।

এভাবে আরও কয়েকবার দাড়ি দিতে গিয়ে কমা হয়ে গেছে ইমামার। এবার আর না। আর কোনভাবেই ইমামা সম্পর্ক রাখবে না সাব্বিরের সাথে।অনেক হেয়ালিপানা সহ্য করেছে। আর না। কাল রাতেও সাব্বির ফেসবুকে গিয়েছে, নিশ্চয়ই মেয়েদের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে চ্যাট করেছে। এতবার করে মানা করার পরও।

- তুমি কাল রাতেও ফেসবুকে গিয়েছিলে?
- মানে? কে বলল তোমাকে?
- আমাকে কে বলল ওটা তোমার জানতে হবে না। গিয়েছিলে কিনা বল?
- না তো।
- আবার মিথ্যা বল। কেন গেছিলা বল?
- যাই নায় তো।
- রাগ উঠাবা না। তুমি না গেলে তোমার ভুতে স্ট্যাটাস দিছে? "আজ আমার মন খারাপ।"
এক থাপ্পড় দিব বেয়াদব।মেয়েলি স্ট্যাটাস। এইসব দিয়ে তুমি কি বুঝাতে চাও? তোমার গার্লফ্রেন্ড তোমারে ছ্যাকা দিছে, সেই দুঃখে তোমার মন খারাপ। এখন দল বেধে মেয়েরা আসবে সান্ত্বনা দিতে, প্রেম করতে, তাই তো? দেখলাম এক মেয়েও কমেন্ট করছে," গার্লফ্রেন্ড সমস্যা?" ঐ মেয়ে জানে কি করে? ঐ মেয়েকে কি বলছ তুমি আমার ব্যাপারে?
- না ঐ মেয়েকে তো আমি তোমার ব্যাপারে কিছু বলি নায়।
- তাহলে কি বলছ? তুমি সিঙ্গেল? জীবনে কোন মেয়ের দিকে তাকাও নি। প্রেম করনি, তাই তো?
- না না। ঐ মেয়ের সাথে আমার কোনদিন কথাই হয় নি।
- তাই না? কোন কোন মেয়ের সাথে চ্যাট করছ বল?
- কারও সাথে না। সত্যি।
- তাহলে গেছিলা কেন?
- সরি।
- সরি মানে? এইটা কি অভ্যাস? আমার সাথে যেদিন ঝগড়া হয়,ঝগড়া হওয়ার সাথে সাথে তুমি ফেসবুকে দৌড় দাও। কে আছে ওখানে? আমার প্রক্সি আছে?
- ছিঃ ছিঃ।এগুলো কি বল তুমি? আর যাব না। বিশ্বাস কর। এইবারের মত কমা দাও।
- তোমাকে আমি কতদিন বলছি তুমি আর ফেসবুক চালাবে না। তারপরও তুমি!! আমি তো চালাই না। তোমার কেন এত শখ?
- আচ্ছা তোমার সামনে এই accout deactivate করছি। আর কখনও যাব না।

ইমামা আর সম্পর্কে কমা দিবে না।এর আগেও কয়েকবার ব্যাপারটা ঘটেছে। রাগারাগি করে চলে গেছে । প্রতিবারই ফিরে এসেছে। রাগ করে চলে যাবার পরই, কলের পর কল করে যাবে সাব্বির। ধরবে না জেনেও। এরপরই ফাজিলটা একটা ফাজিল মার্কা কথাসহ এস এম এস দিবে।যার নমুনা থাকবে এমন,
"আর কখনও জ্বালাবো না তোমাকে, আর তোমাকে কল দিব না। থাকো সুখে থাকো, আর জ্বালাতে আসব না। আমি কার কে?আমার কিছু হলে কার কি?"
সবসময় এই ধরনের একটা মেসেজ দিয়ে আর কোন খোঁজ খবর থাকবে না। ইমোশনাল ব্লাকমেইল। ফাজিল একটা। অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়ে হাওয়া। ইমামাই পরে কল করে খোঁজ নিবে। শেষ বার খুব খারাপ একটা কাজ করেছে সাব্বির।বড়সড় মাপের ঝগড়া।গতানুগতিক ইমোশনাল ব্লাকমেইল মেসেজে কাজ হচ্ছিল না। ইমামার অভিমান শক্তিশালী। ভাঙ্গা সম্ভব না এবার। হঠাৎ সেদিন ইমামার নাম্বারে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসল," আপনার বয়ফ্রেন্ড তো accident করছে।অবস্থা খুব খারাপ।"
মেসেজ দেখে ইমামার বুকের ভিতর ঘ্যাচ করে কি যেন বিঁধল। তারাতারি সাব্বিরকে কল করল। নাম্বার বন্ধ। অনেকক্ষণ ধরে কল করল । তাও বন্ধ। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ ইমামা সে মুহূর্তে। বুকের ভিতরের কষ্ট সারা শরীর বেয়ে চোখের দিকে যাচ্ছিল। চোখে অসহ্য কষ্টে পানি গাল বেয়ে পরা শুরু করে দিয়েছিল। সেই মুহূর্তে কল ঢুকল। সাব্বির মোবাইল ধরার পর ইমামা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল- কই তুমি?
- এইতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আলুর চপ খাই।তোমার কি হইছে কাঁদো কেন?
- কিছু না। তুমি এখন আসো আমাদের এখানে। আমি তোমার সাথে দেখা করব।
- আচ্ছা।

এরপর দেখা, সব ঠিক। ইমামা ভাল করে জানে,অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজটাও সাব্বির দিয়েছিল।নাম্বার পরে বন্ধ করে রেখেছে।টেনশনে রাখার জন্য।কিন্তু এই কথা ও কখনই স্বীকার করবে না। মুখ চোখ এমন অসহায় করে কথা বলবে, যেন মনে হবে একটা বাচ্চা কথা বলছে। সে কোন অপরাধই করতে পারে না।

ইমামা এবার অমন আলতু ফালতু মেসেজেও ভুলবে না।
তাই কড়া করে বলে দিল- তুমি যাও, ফেসবুকই চালাও। থাকো তোমার ফেসবুক বান্ধবী নিয়ে।আমার সাথে থাকার কোন দরকার নেই। অত মেয়ে ওখানে। আমি অনুমুতি দিয়ে দিচ্ছি। আর ঝগড়া হলে লুকিয়ে ফেসবুক চালাতে হবে না। দেখিয়ে দেখিয়ে চালাবা। এখনি একটা স্ট্যাটাস দাও, "আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে ছ্যাকা দিয়ে পুড়ে ফেলছে। "তোমার সাথে আর আমার চলে না।

ইমামা পাশ থেকে উঠে গেল। সাব্বিরের দেয়া দুটি গোলাপ হাতে নিয়ে। সম্পর্কে দাড়ি টেনে যাচ্ছে, তাও ফুলগুলো ফেলে দিচ্ছে না। ভালবেসে প্রতিবারই সাব্বির দুটি করে গোলাপ দেয়। বেশিও না ,কমও না। সব পছন্দ জঘন্য হলেও গোলাপ দুটি সবসময় অনেক সুন্দর হয়। প্রতিটা মানুষের ভিতর সুন্দর কিছু থাকে। তার টানেই কারও না কারও তার প্রতি আজন্ম মায়া জন্মে যায়। মায়া কাটানো খুব কঠিন। ভালবাসার মায়া। বাহির থেকে দেখে যাকে মনে হয়, একে ভালবাসার কি আছে? তার প্রতিই কেউ না কেউ এমন কিছু সুন্দরের মায়ায় বেধে আছে।যে মায়া কাটানো যায় না।
ইমামা চলে যাচ্ছে। সাব্বির ছোট্ট একটা মেসেজ করল," খুব কান্না পাচ্ছে। যেও না। আমি তোমাকে ভালবাসি। আর ভুল হবে না।"
ইমামা মুখ ফিরে তাকাল। সাব্বির মুখ নিচু করে বসে আছে । ইমামা হয়ত সম্পর্কে দাড়ি টেনে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে যাবে। নয়ত কান্নার মায়ায় অথবা ২ টা সুন্দর গোলাপ ফুলের ভালবাসায় সম্পর্কে কমা দিয়ে ফিরে আসবে।