আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

অন্ধকার আর চোখের জল

অন্ধকার আর চোখের জল
লিখেছেনঃ Noshin Samiha Khan Trisha


আজ মিথিলার বিয়ে। ও এখন পড়াশুনা শেষ করেনি। ওর কাছে তো আর বিয়ে দিবে না। ভাল পাত্র পেয়েছে। মেয়েটাকে বললাম চলো পালিয়ে যাই। কি সুন্দর করে না করে দিল। আমি কিছুই না ওর? আর জোড় করলাম না। ও আসলে আমাকে ভালই বাসেনি। সময়ের আবেগ। নয়ত ও কিভাবে পারবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে?

এমন একটা দিনে পরিচয় হয়েছিল মিথিলার সাথে সাইফের। একদিন রাস্তায় একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে কলেজ ড্রেস পরে। মেয়েটিকে দেখে মনে হল কিছু একটা হয়েছে। সাইফ কাছে গিয়ে বলল কোন সমস্যা? মেয়েটি বলল ভাইয়া আমি খুব বিপদে পরেছি। আমার গাড়ি আসেনি। আমি কি আপনার মোবাইল থেকে একটু ফোন করতে পারি? সাইফ মোবাইলটা মেয়েটাকে দিল।
-হ্যা আম্মু গাড়ি আসেনি কেন? আমি রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। কলেজ আরো ১ ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
-সাইফ বলল চলো আমি দিয়ে আসি।
-না অপরিচিত কারো সাথে আমি যাব না।
-তো আমার মোবাইল টা যে নিলে?
-আপনিই তো আগে কথা বলতে আসলেন।
-ফোন টা তো তুমিই চেয়েছ।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-সাইফ একটা রিক্সা ডাক দিল। এই মেয়ে ওঠো।
-আমার নাম মিথিলা, মেয়ে না।
-আচ্ছা আচ্ছা ওঠো।
-এক রিক্সায়?
-হ্যা। তুমি এতটুকু মেয়ে। খুব কথা বল।
-এতটুকু মেয়ে মানে? আর দুই মাস পর আমি এইচ এস সি দিবো। বুঝছেন?
-বাহ। তুমি এত বড়? কিন্তু একা বাসায় যেতে পারনা। হাহাহা।
মিথিলা কিছু না বলে রিক্সায় উঠলো।

-রাগ করলে নাকি?
-না। এত হাসছেন কেন? আপনি কিসে পরেন?
-আমি ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ার।
-ও। সারা রাস্তা আর কোন কথা হলনা।

মিথিলা রাতে পরতে বসল।ওই ভাইয়া তার কথা কেন জানি খুব মনে পরছে।আসলে কারো সাথে তেমন মিশা হয় না তো। তাই হয়ত। ভাইয়াটার নামটাই জানা হল না।ইশ......

মিথিলা ওর আম্মুর মোবাইল টা নিয়ে লুকিয়ে ফোন দিল।
-হ্যালো
-আচ্ছা,আপনার নাম কি?
-সাইফ,আপনি কে?
-আমি মিথিলা। আপনার নাম টা জানা হয়নি তো।
-আমার নাম দিয়ে তুমি কি করবে?
-কি করব? নাম তো আর চকলেট এর মত খাওয়া যায় না যে খাব।
-তুমি বেশি কথা বল।
-আপনি বেশি কথা বলেন। আচ্ছা রাখি। ফোন দিয়েন না। এটা আম্মুর নাম্বার। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

সাইফ এর খুব হাসি পাচ্ছে মেয়েটার কথা মনে হলে।কেমন বাচ্চাদের মত।এত বড় হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয় নাই। কিন্তু মেয়েটাকে খুব ভাল লেগেছে ওর। ফোন টা দেয়ার পর যেন আরো ভুলতে পারছে না ও। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল সাইফ।

পরদিন ঘুম থেকে উঠলো ৮ টায়। দৌরে ক্লাস এ গেল। আজকেও দেরি। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। কখন ১২টা বাজবে। কেন জানি মিথিলার কলেজ এর সামনে যেতে ইচ্ছা করছে। সাতপাঁচ না ভেবে ও মিথিলার কলেজ এর সামনে গেল। মাত্রই ছুটি হয়েছে মনে হয়। ও এদিক ওদিক মিথিলাকে খুজছে। হটাত দেখল মিথিলা কাল রঙের একটা গাড়িতে উঠছে। ওকে দেখে কেন জানি ওর হার্টবিট বেরে গেল। এমন হচ্ছে কেন ও নিজেও বুঝতে পারছে না। কেনই বা ওকে দেখতে এল। মেয়েটা দেখলে কি ভাববে। দেখলে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পরবে। কোন ভাবে মুখটা বাঁচিয়ে কেটে পড়ল ও। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে আরেকটু দেখতে কিন্তু উপায় নেই।

বিকাল ৫ টা বাজে। ফোনের সব্দে ঘুম ভাঙল সাইফের। ফোনটা ধরে কণ্ঠ শুনে লাফ দিয়ে উঠলো সাইফ।
-এরকম চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন কেন।
-মানে?
-মানে!! কলেজ এর সামনে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিলেন না?
-নাহ। আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম।
-তাই না? আমাকে দেখে খাতা দিয়ে আবার মুখটা তো সুন্দর করে ঢেকেছিলেন।
-আচ্ছা তোমার পড়াশুনার কি অবস্থা?
-কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?
-আজব তো। এই মেয়ে এত কথা বলে কেন?
-এই রাখি রাখি। আম্মু চলে এসেছে। ফোন দিয়েন না। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিল আরেকটু কথা বলবে।


আজকাল যেন কি হয়েছে সাইফের। কিছুতেই মন বসে না। খালি ফোন দেখে। মিথিলার ফোন কি আর আসবে না? ওর কিছুই ভাল লাগে না। দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায় কিন্তু মিথিলার কোন ফোন আসে না। ওর কলেজ এর সামনে প্রায় ই যায় কিন্তু পায় না মিথিলাকে। ও বুঝতে পারে এমনি হয়ত ফোন দিয়েছে দুই দিন। ওর ভাল লেগেছে বলেতো আর মিথিলার ও ওকে ভাল লাগবে তা না। সাইফ নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখে। মিথিলার আম্মুর নাম্বার এ ফোন দেয় না যদি ওর সমস্যা হয়। সাইফ ধরেই নেয় মিথিলা ওকে আর কোন দিন ফোন দিবে না। কেটে যায় ৩ মাস।

একদিন হটাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। সাইফ ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে ধরল। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। মিথিলার ফোন।
-কেমন আছেন?
-ভাল। তুমি এতদিন পর?
-খুব খুশি হয়েছেন মনে হচ্ছে?
-নাহ। খুশি হওয়ার কি আছে।
-হি হি হি।
-হাসো কেন?
-আপনি সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারেন না তো তাই।
-এই মেয়ে তুমি বেশি কথা বল।
-হি হি। -তারপর এতদিন কোথায় ছিলে?
-আপনি জানেন না আমার পরীক্ষা ছিল? পরশু শেষ হল। এটা আমার নাম্বার।
-তোমার কলেজ কি বন্ধ ছিল?
-আপনি আমাকে কলেজেও খুজেছেন?
-না জিজ্ঞেস করলাম এমনি।
-এমনি? হি হি হি।
-এই মেয়েটাকে নিয়ে তো আর পারা গেল না।
-আচ্ছা বলছি। আমার টেস্ট পরীক্ষা হয়ে কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
-ও, ভাল। এই নাম্বার কি তোমার কাছে থাকবে?
-হুম।
-তাহলে তো ভালই।
-আচ্ছা এখন রাখি।
এভাবে মাঝে মাঝে ওদের কথা হত। দুজনের মাঝে ভাল বন্ধুত্ত হল। মিথিলা মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হল। মাঝে মাঝে কোচিং পালিয়ে দেখা করতে যেত। এর মধ্যে সাইফ অনেক ভালবাসে ফেলেছে ওকে কিন্তু বলতে ভয় পাচ্ছে। ও বুঝে যে মিথিলাও ওকে ভালবাসে। সে ভাবল মেয়েটার ভর্তি পরীক্ষা টা যাক পরে বলবে।

মিথিলার রেজাল্ট দিল আজ। ও জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলল সাইফ কে। সাইফ ও খুব খুশি হল ওর খুশি দেখে। মিথিলার মেডিক্যাল পরীক্ষা চলে এসেছে কাছে। সাইফ কথা বলা কমিয়ে দিল।দেখতে দেখেতে পরীক্ষা চলে এল। মিথিলার পরীক্ষা ভালই হল। ও সিলেট মেডিক্যাল এ চান্স পেল। এখন সাইফ এর এল সেইক্ষণ। কিন্তু কিভাবে যে বলবে। সাইফ তখন ই মিথিলাকে ফোন দিয়ে বলল কাল দেখা করতে।


মিথিলা এসে দেখে সাইফ হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে। মিথিলা সামনে যেতেই হাবার মত দাড়িয়ে পড়ল। খুব রাগ হচ্ছে ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
... হিহিহি।
-এই মেয়ে হাস কেন?
-না এই যে, প্রপোজ করবে বলে বসে আছ তো কিন্তু করতে পারছ না।
-কে বলেছে তোমাকে? তুমি আসলে বেশি কথা বল।
-তুমি আসলে বেশি বুঝ। আচ্ছা যাও প্রপোজ করতে হবে না। আমার উত্তর হ্যা। বোকার মত কেদে দিল সাইফ। এই মেয়েটা ওকে এত বুঝে।
-ওমা প্রপোজ করতে পারেনি বলে কেমন কাঁদছে দেখ।
-সাইফ খুশিতে আর জোরে জোরে কেদে দিল। এভাবেই হয়েছিল সাইফ আর মিথিলার মিষ্টি একটা সম্পর্ক। খুনসুটি, ভালবাসা আর মিষ্টি ঝগড়ায় ভালই চলছিল ওদের। কেটে গেল দুইটা বছর। কিন্তু হটাত একদিন......

-আমার তোমাকে কিছু বলার ছিল।
-বল।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-মানে?
-মানে তো তুমি বুঝতেই পারছ।
-তুমি তোমার বাসায় না করো। কারন আমি তোমার বাসায় বললে তো এখন আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিবে না।
-আমি না করলেও মানবে না।
-চল পালিয়ে যাই।
-কি বল এসব? আমি পারব না।
-তবে কি করবে?
-যাই করি পালাতে পারব না।
-সাইফ আর জোর করল না। চলে গেল মিথিলা। তাকিয়ে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখল।

আজ মিথিলার বিয়ে। একটু পর মিথিলা অন্য কারো হবে। ভাবতে পাছে না কিছু মিথিলা। সাইফ কে ছাড়া ও এক মুহূর্তও থাকতে পারবেনা। না ওর মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কি করবে ও? ও কি তবে পালিয়ে যাবে সাইফের হাত ধরে? ও এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবে না...

অনেক কষ্টে ও বাসা থেকে বের হল। সাইফ কে ফোন দিচ্ছে যেন ও এসে নিয়ে যায়। কিন্তু সাইফের ফোন বন্ধ। ও এতবার চেষ্টা করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে একা ও কিভাবে যাবে, বাসায় ও ফিরে যাবে না। খুব রাগ হচ্ছে কেন তখন সাইফকে পালিয়ে যাওয়ার কথা না করে দিল। রাস্তায় মাইক্রো দেখে ও সাইফের বাসা ভাড়া করল। সে ড্রাইভার কে বলল ও নেমে ভাড়া দিবে। সাইফের কাছ থেকে নিতে হবে, কোন টাকা নিয়ে বের হয় নাই ও। কিন্তু ড্রাইভার এটা কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে? এই যে ভাই এইদিক দিয়ে না। আপনি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই যে শুনছেন? আপনি ঠিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন না।

দুই বছর পর.........

রাত ১১ টা। সেই নদীর পারে বসে আসে। বসে বসে ভাবছে তার পুরনো সৃতিগুলার কথা। হটাত পাশে তাকিয়ে দেখল ঘুমটা পরা কোন মেয়ে। ওর বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা হল নিশিকন্যা যারা পেটের দায়ে দেহ বিক্রি করে। এই যে মেয়ে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন, আমি এজন্য এখানে আসি নাই। এই যে আপনি কথা বলেন। আচ্ছা আপনি এরকম ঘুমটা দিয়ে আছেন কেন? আপনাদের কত ঢং। তবুও আপনারাই ভাল আছেন, কোন কষ্ট নাই। আর আপনাদের এই মেয়ে জাত টাকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। আপনি কথা বলছেন না কেন? আপনারা মেয়েরা খুব ভাল অভিনয় করতে জানেন। জানেন একটা মেয়েকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু মেয়েটার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেও করে নিল। দুই বছর আগে আজকের দিনেই ওর বিয়ে হয়েছিল। ওর বিয়ের দিন ভেবেছিলাম ওকে একবার ফোন দিব কিন্তু আর দিলাম না ফোন টা পানিতে ফেলে দিলাম। আর খোজ নেইনি, জানি সুখেই আছে। মেয়েটা আর কান্না আটকাতে পারল না। চিৎকার করে কাদতে শুরু করল।

-মি মিথিলা......মিথিলা তুমি? তু তুমি এখানে? কথা বল মিথিলা।
-তুমি ভুল জানো সাইফ। আমি এখন মিথিলা না মালা।
-এসব কি বলছ মিথিলা? তুমি কিভাবে এখানে বল আমাকে?
-এখন আর এসব জেনে লাভ কি?
-তুমি বল মিথিলা। ঘুমটা টা সরাও। মিথিলার ঘুমটা টা পরে গেল। এ কেমন রুপ মিথিলার। যেই মেয়েকে বলে একটু সাজাতে পারত না আজ তার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কড়া মেকাপ, মাথায় ফুল। এই কি সেই মিথিলা। আজ সে চিনতে পারছে না মিথিলাকে।
-সাইফ তোমাকে আমি খুব ভালবাসতাম।
-ভালবাসতে? এখন বাস না?
-এখন আর ভালবাসা। এখন তো প্রতিদিন ই ভালবাসা ভালবাসা খেলতে হয়।
-প্লিজ মিথিলা।
-সাইফ তোমাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পারিনি অন্য কারো বউ হতে। আমি বিয়ের দিন লুকিয়ে বাসা থেকে বের হই। তোমাকে ফোন দিয়ে দেখি তোমার ফোন বন্ধ। ফোন টা কি পানিতে ফালানো খুব জরুর ছিল? আমি একটা মাইক্রো ভাড়া করি। জানো আমার কাছে একটা টাকাও ছিল না, ভেবেছিলাম তোমার এখানে গিয়ে দিব। কিন্তু......

আবারো কাঁদতে শুরু করল মিথিলা, কথা বলতে পারছেনা মিথিলা।
-বল মিথিলা বল। তারপর ...
-তারপর আর কি তোমার কাছ পর্যন্ত যাওয়া হল না। জানো আমি চিৎকার করে বলছিলাম ভাই এইদিক দিয়ে না। এই রাস্তা না। ভাই কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন এটা আমার সাইফের কাছে যাওয়ার রাস্তা না.........

এরপর আর কিছু মনে নেই। আমার যখন হুশ আসে দেখি একটা ঘরের মাঝে পরে আছি হাত বাধা। জানো ওরা আমাকে দুইদিন খেতে দেইনি। জানো আমার না খুব কষ্ট হচ্ছিল। হটাত কয়েকজন আমার রুমে ঢুকল। তারপর...

তারপর শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার আর চোখের জল। এরপর আমার জায়গা হল এখানে। জানো আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। নাম রেখেছি তিতলি। মেয়েটাকে তো কখন বাবার পরিচয় দিতে পারব না কিন্তু আমি চাই না আমার মেয়ে টা বড় হয়ে আমার মত কোন এক মালা হোক। কিন্তু কি করব আমি?

আজ আমার এই অবস্থার জন্য এই সমাজ দায়ি। কিন্তু আমার এই মেয়েটাকে এই সমাজ কখনই মানবে না। এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই।
-মিথিলা ফিরে চল আমার সাথে। আমি তোমাকে এখনও অনেক ভালবাসি।
-না সাইফ এখন আর হয় না। এখন আমারা দুইজন দুই জগতের। সাইফ আমার একটা কথা রাখবে? আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবে। বাবার পরিচয় দিয়ে বড় করবে?

পাঁচ বছর পর......

-বাবা এই নাও তোমার পানি।
-মেয়েটা একদম ওর মায়ের মত হয়েছে। সেই মুখ। গালে সেই এক ই তিল।
-বাবা জানো আমি স্কুল থেকে আসার সময় একটা আন্টি আমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে। কিন্তু কোন কথা বলে না। কে বাবা?
-কেও না মা।
-জানো বাবা অ্যান্টির গালে একটা তিল আছে ঠিক আমারটার মত।
-তিতলি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সাইফ। এই কান্নার অর্থ জানে না এই ছোট্ট তিতলি।

অতঃপর শুভ্র মেঘ

অতঃপর শুভ্র মেঘ
লিখেছেনঃ মেঘলা কাব্য

এই এত জোড়ে হাঁটছ কেন?..ধ্যাত একটু আস্তে হাঁটো না,আমি তো শাড়ি পরে এত দ্রুত হাঁটতে পারছি না,মেঘার এমন অভিযোগ এ :ভাবনার তারগুলো যেন কাটা পরল পিছনে ফিরল শুভ্র...মেঘা হেঁটে আসছে ধীরে,আবার যেন চিন্তগুলো ঘিরে ধরল ওকে... নিজের মনেই ভাবতে থাকল মেয়েটাকে এত ভালবাসল কখন.. মেয়েটাকে যে সবসময় আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ওর যেন কোন আধাঁর ওকে স্পর্শ করতে না পারে,আজ সকাল থেকেই বুকে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছে শুভ্র ব্যাথা টা হটাত্ একটা কাঁপুনি দিল যেন..নাহ্ এসব কি ভাবছে সে এভাবে নিজেকে দূর্বল করতে চায় না সে ...মেঘা একেবারে কাছে চলে এসেছে...আজ ও একটা নীল শাড়ি পরেছে,নীল শাড়ি তে যে ওকে এত মানায় তা আগে তো দেখা হয়নি.. এই আকাশ টা মেঘলা, কিছুটা ভারী কন্ঠে বলে উঠল মেঘা..আজ মেয়েটা যেন অনেকটা বড় হয়ে গেছে তবে মেঘার সরল পাগলামি তেই যেন মেঘাকে মানিয়ে যায় তাই কিছুটা যেন অপরিচিত লাগল ওকে.. মেঘা আবার বলল চুপ কেন? কই না তো..সরল উত্তর শুভ্রর।মেঘা আবার বলল আকাশে অনেক মেঘ করেছে,কেন বল তো.. প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেঘা..হয়ত আজকের জন্য,কথাটা বলে মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকে শুভ্র..মেঘা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল.. এরকম টা যে মেঘা করবে তা জানত শুভ্র.. শুভ্র জানে মেঘা কেন মুখ ফিরাল..কিন্তু তার জানার কথা মেঘাকে বুঝতে দিতে চায় না সে..তাই আবার বলতে লাগল, আকাশ টা আজ অনেক কষ্ট পাচ্ছে.. কেন জান, এতদিন কতনা স্মৃতি সঙ্গী ছিল এই আকাশটা,হেসেছে রৌদ্র হয়ে,কেঁদেছে বৃষ্টি হয়ে.. কত মন খারাপের গোধূলি তে হেঁটেছি তোমার সাথে.. আজ আবার ও কাঁদবে, বলে ওঠে মেঘা,এতখন চুপ করে ছিল ও... কথা শেষ করতে না পেরে শুভ্র তাকায় মেঘার দিকে..মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে বঝল শুভ্র.. অনেক ক্ষন চুপচাপ থাকে ওরা,,

শোন,তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে বুঝলে, নিজেকে কষ্ট দেব্ না,, নিরবতা ভাঙে শুভ্র.. আমার কথা ভেবো না.. আমি ভাল থাকব, নিজের খেয়াল রেখো তুমি..আনতমুখে কথাগুলো বলল মেঘা..এই তোমার হাত টা দাও না,ছুঁয়ে দেখব শেষবারের মত.. শুভ্র র চোখে আকুতি দেখতে পায় মেঘা..কিছু একটা বলতে যেয়ে ও বলতে পারে না মেঘা....

ওরা হাঁটছে অনেক ক্ষন.. মাঝেমাঝে দুজন দুজনার দিকে তাকাচ্ছে..আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে পাছে ধরা পরে যায়..

এই যা বৃষ্টি চলে এল..কথাটা বলেই মেঘার দিকে তাকায় শুভ্র..অবাক হযে় দেখল মেঘার সেই বৃষ্টিবিলাসী পাগলামি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে.. -মেঘা -হুম -তোমার বৃষ্টির বিলাসিতা কোথায় গেল.. চুপ থাকে মেঘা..কিছুক্ষন পর বলে ইচ্ছে করছে না.. কিছু বলে না শুভ্র.. আমাদের রাস্তা চলে এসেছে বলে শুভ্র.. -ভাল থেকো ,বলে মেঘা.. শুভ্রকে র কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হেঁটে যায় মেঘা,ও জানে শুভ্র তাকিয়ে আছে.. তাই সে তাকাবে না.. তাকিয়ে আছে শুভ্র মেঘার যাওয়ার পথে.. ও জানে মেঘা ফিরে তাকাবে না, তাই তাকিয়ে থাকতে সমস্যা নেই.. হাঁটছে মেঘা,অসম্ভব মায়াবী লাগছে ওকে.. আর তাকাতে পারে না সে.. কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে সব.....

(কিছু ভালবাসা পূর্নতা পাওয়ার আগেই হারাতে হয়,বাস্তবতায় চাপা পরে এমন অনেক মূহুর্ত, বেজে ওঠার আগেই কেটে যায় এমন অনেক অনুভূতির সুর...)