আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

-এই অবনি শোনো
-কি হইছে?
-না কিছু না
-কিছু বলবা?
-না বলবো না
-ডাকলে যে
-এমনেই ডাকলাম। আমি আসি বাই
-আচ্ছা বাই

কয়েকদিন ধরে অবনি খুব টেনশনে আছে। নীরব ছেলেটা কি ওকে কিছু বলতে চাইছে বা বোঝাতে চাইছে। ছেলের নাম যেমন নীরব কাজ-কারবারও নীরব। ওর কান্ড কারখানা একটুও ভালো ঠেকছে না অবনির।

সেদিন রাত ১২টার সময় ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে, ইংলিশ এক্সাম কবে? এতো রাতে কেউ কাউকে নিশ্চয়ই এটা জিজ্ঞেস করতে ফোন করে না। গভীর রাত প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য বরাদ্দ। এই সময় টা অযথা নষ্ট করা উচিত না। নীরবকে নিয়ে চিন্তা দিনদিন বেড়েই চলছে। এরকম মিনমিনিয়ে থাকা ছেলেরা খুব ডেন্জারাস হয়। হঠাত কোন একদিন কাপা কাপা হাতে গোলাপ নিয়ে ভাঙা গলায় বলবে আই লাভ ইয়ু। আর এদের না করলে নানান রকম পাগলামী শুরু করে। তাই এদের থেকে সাবধান হওয়া দরকার।

নাহ আজকেও অবনিকে ভালবাসি কথাটা বলা হলো না। আচ্ছা ও বাঘ না ভাল্লুক যে ওকে এতো ভয় করতে হবে? আরে বাবা ভালবাসার অফারই তো দিবো এতে রাগ তো করার কথা না। নাহ আর দেরী করা ঠিক হবে না। সুন্দরী মেয়েরা বেশিদিন সিঙ্গেল থাকেনা। যদি আরও দেরি করি তবে কোন সময় কোন বজ্জাত এসে অবনীকে নিয়ে উড়েও যেতে পারে। অবনীকে উড়তে দেয়া যাবেনা, আটকে রাখতে হবে মনের কোটরে। মনে মনে কথাগুলো ভেবে নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছে নীরব। আজ সে সিদ্ধান্ত নেয়, যে করে হোক ভালবাসি বলবেই। যে করে হোক অবনির হাতটা ধরবেই।

-এই নীরব শুনো। তোমার কাছে ম্যাথ নোট আছে?
-হুম আছে তো কেন লাগবে?
-হুম আজকেই লাগবে প্লিজ একটু দিবা?
-আচ্ছা এখন তো আমার কাছে নাই তোমাকে বিকেলে দিয়ে আসবো ।
-আমার নোট তুমি কষ্ট করে দিবে কেন, আমি নিজে গিয়ে নিয়ে আসবো তাছাড়া আন্টির সাথে অনেকদিন কথা হয়না একবারে কথা বলেও আসবো।
-না আমার কষ্ট হবে না। তাছাড়া তুমি কেন কষ্ট করে আসবা আমিই নাহয় দিয়ে আসবো।
-বলছিনা আমি আসবো বেশি কথা বললে তোমার নোট নিবোই না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমিই আইসো ।

নীরবের রুমের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। একটা ছেলের রুমের ঠিক যে এরকম হয় অগোছালো হয় তা অবনির জানা ছিল না। বুকসেলফে বইগুলো এলোমেলো, বিছানায় টিশার্ট পড়ে আছে, গিটার একটা খাটের উপর, রুমে সব বিদেশি ব্যান্ডের ছবি। রুমের এই করুন অবস্থা দেখে অবনীর চোঁখ ছানাবড়া। যাইহোক বহু কষ্টে রুমের একপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত খুঁজে ম্যাথ নোট পেলো। কিন্তু হঠাত করে টেবিলের উপর রাখা একটা কালো ডায়রীর দিকে চোঁখ পড়লো। একজন মানুষ ডায়রী লিখতেই পারে, কিন্তু তবুও নীরবের ডায়রীটা নিজের অজান্তেই হাতে নিল অবনি। অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস পড়ার অভ্যাস নেই ওর, তবে কেন জানি নীরবের ডায়রী পড়তে খুব ইচ্ছে করছে তার। তাই নীরবের ডায়রীটা সংগে নিয়েই চলে আসলো। মানুষ ডায়রীতে তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো লিখে রাখে। নীরবের মনের কথাগুলো জানা দরকার।

-কি ব্যাপার অবনি হঠাৎ ডাকলে যে?
-ডাকলাম তোমার সাথে কথা আছে।
-কি কথা?
-এই নাও তোমার নোট
-ও থ্যাংকস। এক্সাম শেষ? না। "তবে দিয়ে দিচ্ছো যে" এমনেই দিয়ে দিলাম।
-আজ এতো সাজগোজ করছো কেন? কোন অনুষ্ঠান আছে?
-হুম আছে তো। আচ্ছা তুমি রাসেল ভাই কে চিনো?
-কোন রাসেল?
-ঐ যে লম্বা করে হ্যান্ডসাম দেখতে ।
-ঐটার ভিতর হ্যান্ডসামের কি দেখছো?
সারাদিন একটা কালো সানগ্লাস পড়ে বসে থাকে। আমার মনে হয় উনার এক চোখ নাই। কানা হয়তো ।
-এই ওকে নিয়ে খারাপ কথা বলবা না। ওকে আমার খুব ভালো লাগে। উফফ কি জোশ দেখতে।
-কি, কি বলো এইসব?
-ঠিকই বলি। আচ্ছা এখান থেকে যাও তো রাসেল এখুনিই এসে পড়বে। আজ ওর সাথে সারাদিন ঘুরবো তাই সাঁজগোঁজ করেছি।
-সত্যি বলছো ।
-তোমার সাথে মিথ্যে বলবো কেন? তুমি আমার কে?
-হুম তাও ঠিক আমি তোমার কে যে আমাকে এইসব উত্তর দিবা। আচ্ছা আসি তাহলে ।
-বাই বাই ...

অবনিকে রেখে নোট টা নিয়ে চলে আসলে নীরব । ওর ধারনা তাহলে সত্যিই হলো, এক ছেছড়া এসে অবনিকে নিয়েই গেল। ধুর নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে। এখন ওর মনে অনেকগুলো কষ্ট জমা হয়েছে। সে পার্কের বেষ্ণে বসে মেঘ দেখছে। মেঘ দেখলে তার দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়।

-এই ছেলে এখানে কি করো অবনির ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসলো নীরব।
- আরে তুমি এখানে কি করো তোমার না রাসেল ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা।
-যাই নাই
-কেন?
-এমনিতেই। আচ্ছা আমি রাসেল ভাইয়ের সাথে গেলে তোমার কষ্ট হতো, তুমি কি দুঃখ পেতে?
-পেতাম বলেই এখানে শুয়ে শুয়ে মেঘ দেখছি। মেঘ দেখলে আমার কষ্ট লাঘব হয়।
-কি?
-হুম সত্যি তুমিও একদিন ট্রাই করে দেখো কষ্ট কমে যাবে। তুমি না আসলেই একটা গলটু ।
-এই তুমি গলটু নামটা তুমি কি করে জানলে? এটা তো শুধু আমার মা ডাকে। মা তোমাকে বলছে তাই না? আজব সব কথা বলে দেয় ।
-না আন্টি বলে নাই। আচ্ছা তোমার রুম থেকে কি কোন ডায়রী মিসিং হইছে।
-ডায়রী.. হ্যা হইছে তো। তুমি জানো কিভাবে?
-আমি সব জানি ।
-হ্যাঁ? বুঝছি তুমি নোট নিতে আসছো তখন আমার ডায়রীটাও সাথে নিয়ে গেছে তাই না?
-হুম হয়তো।
-কি বললা ?
-হয়তো নিছি দুজনেই এখন চুপ, আমাকে ভালবাসো?
-ইয়ে মানে ডায়রীতে সব এমনেই লিখছি কিছু প্লিজ রাগ করো না ।
-আমার সাথে সারাজীবন থাকতে পারবা?
-ইয়ে না মানে...
-ইয়ে ইয়ে কি করছো মনের কোন কথা থাকলে বল তাড়াতাড়ি। মনে রাখবা সুন্দরীরা সিঙ্গেল বেশিদিন থাকেনা ।
-না মানে মারবে নাতো ।
-আরে গাঁধারাম এখন যদি ভালবাসি না বলো তবে সত্যি সত্যি কিন্তু মারবো।
-ইয়ে মানে আই লাভ ইয়ু ।
-এরকম কেউ কাউকে প্রপোজ করে নাকি? হাটু গেড়ে ফুল দিয়ে বলো তা নাহলে গুড বাই ।
-কি হাটু গেড়ে বসতে হবে? ফুলতো নাই ।
-আচ্ছা যাও শুধু হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করো তাহলেই চলবে।
-এটা সত্যি করা লাগবে ।
-হ্যা লাগবেই নীরব নিরুপায় হয়ে হাটু গেড়ে বসে বললো, আই লাভ ইয়ু অবনী অবনি মুচকি হেসে বললো ।
-আই লাভ ইয়ু টু গলটু ।
-এই তোমার হাতটা একটু ধরি?
-না -ধরি না -আচ্ছা ধরো ।
-থ্যাংকস ।
-হিহি সারাজীবন এভাবে ধরে রাখতে পারবা তো?
-হ্যা পারবো, সারাজীবন ধরে রাখবো...

লিখেছেনঃ Nahid Amin

" রি "

 " রি "
লিখেছেনঃ ( পুপে )

— রি, শোন না একটু।
— হু ?
— ভালো আছিস?
— হু
— ঘুমাচ্ছিলি?
— উহু
— কি এত হু হু করছিস ! একটু কথা বল না।
— তোর মত গাধার সঙ্গে আমার কোন কথা নেই।
— মানে কি? আমি আবার কি করলাম?
— কি করিসনি সেটা জিজ্ঞেস কর।
— আরে আজব, না বললে বুঝবো ক্যামনে?
— আমি আজব ই। তোর ইয়ের কাছে যা, সে আজব না।
— আমার ইয়ে?
— কেন এখন আপনার ইয়ে কে চিনতে পারছেন না? রাত জেগে আপনার নোট লিখে দেয় আরও কত্তো কি !
— ও আচ্ছা, এবার বুঝলাম।
— কিছুই বুঝিসনি, রাখছি এখন।

অর্ক কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাইন কেটে দিল রিদান্নিতা । কিছুই ভালো লাগছে না তার। ইদানিং খুব অল্পতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে, এটা যে ভালো হচ্ছেনা দিব্যি বুঝতে পারছে কিন্তু তবুও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অর্ক আর রিদান্নিতা দুজনেই ভীষণ ভালো বন্ধু। বন্ধু ছাড়া অন্য কিছুই কখনো ভাবেনি অর্ককে কিন্তু ইদানিং স্পর্শীয়ার সঙ্গে অর্কের বন্ধুত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। আর স্পর্শীয়া মেয়েটাও ভীষণ গায়েপড়া স্বভাবের যেন অর্ক ছাড়া আর কোন ছেলেই নেই পৃথিবীতে ! আচ্ছা অর্ককে কি ভালোবাসে সে ? এটা ভেবেই নিজের উপর খুব রাগ হল রিদান্নিতার। কিসব ছাইপাশ ভেবেই যাচ্ছে কখন থেকে। অর্ককে কেন ভালোবাসবে সে, অর্ক তার বেষ্ট ফ্রেন্ড, ব্যস আর কিচ্ছুনা।

ღ দুইদিন পরের দৃশ্যপট...

— রি,এই রি, কই যাচ্ছিস ?

দৌড়ে রিদান্নিতার সামনে গিয়ে হাঁটুতে দু'হাত দিয়ে দাঁড়ালো অর্ক।

— কি হল কথা বলছিস না কেন রি ?
— কোথায় যাব আর, আমার তো দুটা পাঁচটা শশুরবাড়ি আছে, ওখানে যাচ্ছি।
— যাচ্চলে। তোর এত শশুরবাড়ি আর আমিই জানলাম না। এইটা কিছু হইল !

চুপ করে আছে রিদান্নিতা। চোখ জলছে, এক্ষুনি জলে ভিজে যাবে। অর্ককে এই চোখের জল দেখানো যাবেনা। দুইদিন নিজের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত যুদ্ধ করার পর আজ ভার্সিটি এসেছে সে। এসেই অর্ককে স্পর্শীয়ার সঙ্গে দেখবে ভাবতে পারেনি ।

— কিছুনা, আমাকে যেতে দে।
— যেতে তো দেবই, তার আগে বল তোর মুখ চোখ শুকনো লাগছে কেন ? — আমাকে কি তোর ইয়ের মতো ন্যাকা মেয়ে পাইছিস যে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদব আর ভেজা ভেজা লাগবে ?

এই বলেই মুখ নিচু করে ফেলল রিদান্নিতা। পৃথিবী উজার করে কান্না পাচ্ছে ওর। এই পাগলটা কেন বুঝেনা সে ওকে ভালোবাসে।

বেশ কিছুটা মুহূর্ত কেটে গেল, কেউ কোন কথা বলছেনা। অর্ক হাত বাড়িয়ে রিদান্নিতার হাত ধরলো, যেন স্পর্শেই "রি" কে সব বুঝিয়ে দিতে চাইছে।

— ন্যাকা মেয়েটা বোধহয় আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, বুঝলি রি।

নিরবতা ভেঙে বলল অর্ক।

— মানে?

ইতিওতি তাকালো "রি", কোথাও স্পর্শীয়াকে দেখতে পেলনা ।

— এভাবে খুঁজলে হবে?

কিছু না বলে প্রশ্নচোখে তাকাল রিদান্নিতা অর্কের দিকে।

— আমার ইয়েকে দেখতে হলে যে আমার চোখের দিকে তাকাতে হবে মিস হিংসুটে !

অদ্ভুত এক ভালো লাগা মুহুর্তেই সব অভিমান ভুলিয়ে দিল রিদান্নিতার। অনেকক্ষণ ধরে জমে থাকা মুক্তোদানার মতন অশ্রু জল টা গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। কনে দেখা আলোয় ভেজা চোখ আর ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি নিয়ে রিদান্নিতা অর্কের হাত খুব করে আকঁড়ে ধরলো !