আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ১৯ মে, ২০১৩

অদ্ভুত ভালোবাসা!

অদ্ভুত ভালোবাসা!
লিখেছেনঃ আমি প্রান্ত

শনিবার সকাল। আমার নাম মেঘ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে English ডিপার্টমেন্টে ৩য় বর্ষে পড়ছি। রোজকাল সকালের মতই ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে শাটল ট্রেন ধরা । ট্রেনের বগি তে আড্ডা , গান, দুষ্টামি... এভাবেই প্রতি টা দিন শুরু হয় আমার । আজও সেই ভাবে শুরু করেছিলাম। ঠিক শেষ মুহুর্তে ট্রেন টা ধরতে পারলাম । বন্ধুদের সাথে দেখা। তারপর তুমুল আড্ডা। কখন যে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে চলে এসেছি খেয়াল করি নাই।

কিচ্ছুক্ষন পর খেয়াল করলাম আমাদের বগির একেবারে শেষে একটি ছেলে বসে আছে।
জানালার পাশে...মাথা ভর্তি চুল,মুখে দাঁড়ি। খুব চেনা চেনা মনে হল। জানালার বাইরে উদাস চোখে তাকিয়ে আছেন। হ্যাঁ! চিনতে পারলাম!

এটা তো আকাশ ভাই! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। কিন্ত এমন অবস্থা কেন উনার? চিনতে কষ্ট হচ্ছে! উনার চোখে পানি! নিশব্দে কাঁদছেন! অবাক হলাম খুব। অনেক দিন উনাকে ক্যাম্পাসে দেখি নাই।
কিন্তু আজকে উনি একা কেন? উনার সাথে তো মিলি আপার থাকার কথা!
আরো বেশি অবাক হলাম! খুব কথা বলতে ইচ্ছা করল উনার সাথে। খুব ভাল সম্পর্ক আমার সাথে উনার। কিন্তু এই অবস্থায় কথা বলা টা কি উচিত হবে? ভাবনার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম এমন সময় তার ডাক শুনলাম।
"এই মেঘ!!
এইদিকে আয়!!"
গেলাম তার কাছে।
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছি। তারপর অনেক কথা বললাম। একসময় সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম তার এই হাল কেন?
মিলি আপা কই? ও আচ্ছা! বলা হয় নাই!
মিলি আপা আর আকাশ ভাই একজন আরেকজন কে মন প্রান দিয়া ভালবাসত । দুই জন সবসময় একসাথে থাকত। মিলি আপাও আকাশ ভাইয়ের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ত।
একসাথে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করত। আজ নেই! তাই অবাক হয়েছিলাম।

আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। একটা সিগারেট ধরালেন। আমাকেও সাধলেন। আমি খাই না বলে নিলাম না। বললেন মিলি আপার খবর তিনি জানেন না! আমি আকাশ ভাই এর কথায় আকাশ থেকে পড়লাম! কেন???
তারপর আমাকে বলতে শুরু করলেন সেই কাহিনি যা শুনে আজও আমি অবাক হই!
নার্গিস আপা ছিলেন আকাশ ভাই আর মিলি আপার সব থেকে কাছের মানুষ। তাদের সাথেই পড়ত। দুই জনেরই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নার্গিস আপা। ভালই চলছিল সব কিছু।

আকাশ ভাই আর মিলি আপার প্রেম ভালোবাসা, সব কিছুই ছিলো স্বাভাবিক। প্রতিদিন এর মতই নাকি তাদের জীবন টা চলছিল । দুই জনের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে। আকাশ ভাই ভাল ঘরের ছেলে। মা আইনজীবী। বাবা ডাক্তার। মিলি আপাও অনেক ভাল ঘরের
মেয়ে।
আকাশ ভাই অনেক মেধাবী ছাত্র। এটা ক্যাম্পাস এর সবাই জানে। দুই জনের পরিবার থেকে যে প্রবলেম হবে ভবিষ্যতে এমন কোন সম্ভাবনাও নাকি ছিল না।

আমরা সবাই নিশ্চিত ছিলাম মিলি আপা আর আকাশ ভাই এর বিয়ে আমরা খাব! খাবই খাব! যেদিন থেকে আকাশ ভাইয়ের জীবনটা এমন
হয়ে গেলো আমি সেই কাহিনি আজকে বলছি: সেই দিনও প্রতি দিন এর মত মিলি আপা স্টেশন এ এসেছিলেন ক্যাম্পাসে যাবেন বলে। প্রতিদিন এর
মতই আকাশ ভাই অপেক্ষা করছিলেন মিলি আপার জন্য। প্রতিদিনের মতই একই বগি তে একই বেঞ্চ এ পাশাপাশি বসা । গল্প, দুষ্টামি । ক্যাম্পাসে ক্লাস, ঘুরাঘুরি । সব কিছুই ছিল সাধারন ।

মিলি আপার ফুচকা ছিল খুব প্রিয় । ওইদিন দুইজন মিলে ফুচকাও খেয়েছিলেন । তারপর একইভাবে ক্যাম্পাস থেকে ফিরে আসা! কিন্তু
তখনও আকাশ ভাই জানতেন না তার জীবনের সব থেকে ভয়াবহ
দিনটি ছিল সেইদিন। ওইদিন রাতে অনেক ট্রাই করেও মিলি আপার ফোন টা বন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি।

তারপর...
আকাশ ভাই কোনরকমে রাতটা পার করলেন।

সারা রাত ছটফট করে কাটালেন।
পরেরদিন খুব সকালে উঠে স্টেশনে এসে বসে রইলেন মিলি আপার অপেক্ষায় । একসময় তিনি আসলেন । সুন্দর একটি নীল সালোয়ার কামিজ পড়ে । তাকে নাকি অপূর্ব লাগছিল।

আকাশ ভাই যেন একটু শান্তি পেল। সব কিছুই নরমাল ছিল। নার্গিস আপা যেহেতু মিলি আপা আর আকাশ ভাই দুই জনেরই খুব ভালো বন্ধু ছিলেন সেহেতু নার্গিস আপাও তাদের সাথে একই বগিতে আসা যাওয়া করতেন। সেই দিন আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা কেন জানি একটু অদ্ভুত আচরন করছে। পাত্তা দিলেন না।

মিলি আপা কে পেয়ে সব ভুলে তিনি শুধু মিলি আপাতেই মগ্ন। প্রতিদিনের মতই ক্লাস আড্ডা। একসময় আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা তাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা......

ওইদিন অনেক খুশি দেখাচ্ছিল মিলি আপাকে। আকাশ ভাইও মিলি আপার এমন খুশি দেখে আটখানা। দুই জন মিলে অনেকখন ছিলেন । একসময় যাওয়ার সময় হল ।

ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে আসলো নার্গিস আপা, আকাশ ভাই, মিলি আপা । হঠাৎ মিলি আপা একটা কাজ করে বসলেন যা আকাশ ভাই কখন স্বপ্নে ভাবেন নি ।
প্রতিদিন আকাশ ভাই এর সাথে এই বিষয় নিয়া তুমুল ঝগড়া হত। সেটা হল
সিগারেট খাওয়া! মিলি আপা নাকি অনেক মানা করতেন না খাওয়া এর জন্য। কিন্তু ওইদিন মিলি আপা নিজেই আকাশ ভাই কে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দেন !!!

আকাশ ভাই অবাক হলেন বললে ভুল হবে!
তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি যে মিলি আপা এমন একটা কাজ করতে পারেন। ট্রেন আসল। মিলি আপাকে নিয়া উঠতে যাবেন এমন সময় নার্গিস
আপা ভাই কে পিছন থেকে ডাকলেন। বললেন ভাই এর সাথে তার পড়ালেখা নিয়া কিছু কথা আছে। একটু পর যাতে যায়। মিলি আপা আজকে একা গেলে কিছু হবে না......

ভাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলেন। মিলি আপাকে একাই ট্রেন এ উঠাই দিলেন । নার্গিস আপার সাথে বসলেন এক পুকুর পাড়ে। অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর আকাশ ভাই বিরক্ত হলেন।

তারপর আবার জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার। নার্গিস... আপা এতক্ষনে মুখ খুললেন ।

তার কথার সারমর্ম হল. . .
(গতকাল রাতে মিলি আপার বাগদান হয়ে গেছে। মিলি আপা এখন আর আকাশ ভাই এর নেই। সে এখন অন্য একজন এর স্ত্রী!)

আকাশ ভাই প্রথমে বিশ্বাস করলেন না! করার কথাও না! আজকে ৪ বছর এর সম্পর্ক! যে মেয়ে তাকে এত বেশি ভালবাসে সে কখনো এমনকাজ করতে পারে না!

অনেক বুঝালো নার্গিস আপা। আকাশ ভাই কোন ভাবেই বিশ্বাস করলো না! এক সময় নার্গিস আপা মিলি আপার বাগদান এর একটা ছবি দেখালো!
আকাশ ভাই আকুল হয়ে কাঁদলেন। অনেক বেশী!

একসময় অজ্ঞান হয়ে যান। সেই দিনই তিনি এই দুনিয়ার মায়া ছাড়তে চেয়েছিলেন। একসময় মিলি আপার ফোন আসলো। আকাশ ভাই শুধু এতটুকু জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তার সাথে এমন করা হল?

সেই মেয়ে যদি তাকে ভাল নাই বাসত তাইলে কেন তার সাথে এমন করল? কি দোষ ছিল তার? আর যদি মিলি আপার ফ্যামিলি থেকে কোন প্রবলেম থাকত তাইলে সেটা আকাশ ভাই কে জানাইলেই পারত!

এভাবে লুকিয়ে তার লাইফটা কে নষ্ট করে কি লাভ ছিল তার? কেন এই ছলনা? বাগদান হওয়ার পরের দিন পর্যন্ত কিভাবে এই মেয়ে নরমাল ভাবে আবার প্রেমের অভিনয় করল? নার্গিস আপা যদি না জানাত তাহলে হয়ত আর জানাই হত না এই চরম কথা টা! নার্গিস আপার খারাপ লেগেছিল এই
ভেবে যে এভাবে একটা মানুষ এর সাথে প্রতারনা করা যায় না! তাই তিনি সব বলে দিয়েছিলেন। জানি না মেয়েরা কেন এত টা ছলনাময়ী!

সব শেষে আকাশ ভাই আমাকে একটা কথাই বলেছিলেন!... "জানিস
আমাকে তো মিলি ছেড়ে চলে গেল কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে একটা চরম উপহার দিয়া গেল! সিগারেট । ও ছেড়ে গেছে কিন্তু এই সিগারেট আমাকে ছেড়ে যাবে না! "

আমি আকাশ ভাই এর কথা গুলো শুনছিলাম আর মনের মাঝে কোথায় যেন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। তখন ও আকাশ ভাই এর দুই চোখের পানি অঝর ধারায় ঝরছিল!

উনার জীবনের কাহিনী শুনতে শুনতে বাইরের প্রকৃতি দেখছিলাম। দুই চোখ যেন বার বার প্রকৃতের মাঝে অতীত খুঁজে ফিরছিল!! জানি না এরই নাম কি ভালবাসা???

গল্প টা কোন বানানো গল্প না। এটি একটি সত্য কাহিনী । মিলি আপা বর্তমানে তার স্বামী নিয়ে সুখেই আছে বলে শুনেছি । এখনও মাঝে মাঝে আকাশ ভাইকে ক্যাম্পাসে দেখি ।

একমনে সিগারেট খেতে খেতে একা হেটে বেড়ান। মাঝে মাঝে ফুচকার
দোকানে দেখা হলে একটা কথা বলেন, "এই আমার সামনে থেকে সর! আমার সামনে ফুচকা খাবিনা। আর যা ইচ্ছা খা, কিন্তু ফুচকা খাবি না!!"

আর কেও না বুঝলেও আমি জানি কেন তিনি এই কথা বলেন!! সেইদিন, সেই মিলি আপা, সেই মিলি আপার ফুচকা!! সবই মনে পড়ে যায়!!

(সঙ্গত কারনেই গল্পে চরিত্র গুলোর নাম এবং ডিপার্টমেন্টের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে । কিন্তু এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সত্য ঘটনা। মেয়েদের কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই গল্প আমি লেখি নাই । তবে কিছু মেয়ে আছে যাদের জন্য আজকে এই আকাশ নামের ছেলেগুলোর জীবন অনেকটাই এলোমেলো আজ! আমি নতুন লেখক। আগে কখনো গল্প লেখি নাই। যদি কোন ভুল, অথবা অসঙ্গগতি চোখে পড়ে তাহলে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করছি!! সবাইকে ধন্যবাদ!)

এডমিনঃ আজ রাতেও কেন জানি ঘুমাতে পারছিলাম না, তাই বন্ধুদের পাঠানো গল্প গুলো পরছিলাম, আর হঠাৎ ই চোখে পড়লো এই গল্পটি, গল্পটি পরে মনের অনেকটা যায়গা জুড়ে ফাকা ফাকা লাগছে!!

সত্যি কিছু বাস্তবতা চোখের কোনে অঝর শ্রাবণ ধারাও এনে দিতে পারে!!

আজকের গল্পটি আপনার মনে যদি একটুও অনুভুতির দোলা দিয়ে থাকে, তাহলে আপনারাই বলুন কত লাইক হবে???

ღজয় রাজ খান