আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

অসঙ্গায়িত জীবন

অসঙ্গায়িত জীবন  
লিখেছেনঃ Salma Suma

নিঝুম রাত,চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আনুমানিক ৪ টা হবে। ঘরে ঘড়ি নেই, সময় দেখতে হলে মোবাইলটাই এখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু মোবাইল ধরতে ইচ্ছে করছে না।

বিছানা থেকে ওঠে বাথরুমে গেল সুমি। মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখল ও। কেমন বিষন্ন লাগছে নিজেকে। লাগবেইতো গত কয়েকদিন ধরে ওর সাথে যেটা হচ্ছে, তার জন্য ও একেবারেই তৈরী ছিল না। সে জানে না আজ তার জীবনে কি ঘটতে চলেছে। সে অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন সমাধান সে বের করতে পারছে না।

সুমি,পরিবারের বড় মেয়ে।তার আরো ছোট ছোট ৩ ভাইবোন রয়েছে। ওর বাবা একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ওর বাবা মারা যায়। ওর বিধবা মা একা সংসার টানতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ওকে ঠেলে দিল চাকরির খোজে।

প্রথম প্রথম ওর খুব কষ্ট হত।বাবা নেই,ওর লেখাপড়া বন্ধ ,কিন্তুকিছু করার নেই। নিরবে চোখের জল ফেলত। কিন্তু এখন তা সয়ে গেছে সময়ের বির্বতনে। এখন সে কয়েকটা বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আর মাস শেষে যে টাকাটা পায় তা মার হাতে গুযে দেয়।ভালভাবেই চলছিল ওদের জীবন।

দুসস্বপ্নের মা ওর জীবনে নেমে এল অন্ধকারের ছায়া।
হঠাত্‍ করে সে একদিন খেয়াল করল কেউ একজন তাকে ফলো করছে। সে বাড়ি থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে স্টুডেন্টের বাড়ি অবধি তাকে চোখে চোখে রাখছে।

হঠাত ওর মোবাইলে একদিন ফোন আসে অপরিচিত নাম্বার থেকে। ও রিসিভ করে। ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল। কিছুক্ষন কথা বলার পর সুমি বুঝতে পারল যে ফোনের এই লোকটাই ওকে কয়েকদিন ধরে ফলো করছে। লোকটার নাম সবুজ। সবুজ সরাসরি সুমিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকে সুমি বিয়ে, স্বামী, সংসার নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যে ভাবনাগুলো এতদিন তার মনের গহীন কোনে লুকায়িত ছিল। তারপর থেকে সবুজ ওকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন দেয়া শুরু করে। সুমি নাও করতে পারে না আবার হ্যা ও বলতে পারছে না। কেননা ওর উপর এখনো ওর বিধবা মা,ভাইবোনের দায়িত্ব পরে আছে।ওদিকে ওর ওতো
একটা জীবন আছে, চাওয়া পাওয়া আছে। কিন্তু কি করবে ও, ওর যে কিছু করার নেই।

হঠাত্‍ আযানের শব্দে সুমির হুশ ফিরে এল। ঘরে ফিরে এসে সকালের নাস্তা তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মনে মনে সে সুযোগ খুজতে থাকে কখন কিভাবে মাকে কথাটা বলবে। সুমিকে অবাক করে দিয়ে মা ওকে বলে আজ পাত্রপক্ষ ওকে দেখতে আসবে। ছেলে বিদেশ থাকে। খুব শীঘ্রই আবার চলে যাবে। ওরা চাইলে আজই বিয়ে হবে।

একথা শোনার পর সুমির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। উপায় না পেয়ে সুমি সবুজকে ফোন করে। সব শুনে সবুজ সুমিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসতে বলে।সুমি এক কথায় না করে দেয়।  ওর পক্ষে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা সম্ভব নয়।ওর ছোট ভাই বোনদের মুখের হাসি, ওর মার একমাত্র ভরসা ও।ও যদি চলে পালিয়ে যায় তবে ওর মা পাড়ায় কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। কিন্তু সবুজ কোন কখাই শুনতে রাজি নয়। সুমির সাথে ও রাগারাগি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে সবুজ ফোন কেটে দেয়। সুমি হাজার চেষ্টা করেও ওকে আর ফোনে পায়নি।

ছেলেপক্ষ চলে এসেছে।আজই বিয়ে হবে। সুমির মা খুব ব্যস্ত অতিথিদের আপ্যায়ন নিয়ে। সুমির ভাইবোন এদিক ওদিক দোড়াদৌড়ি করছে। সুমি বউ সেজে বসে আছে। আচমকা ও সবুজের ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই চিত্‍কার দিয়ে ওঠল। ওর চিত্‍কার শুনে সবাই ছুটে এল। কিন্তু ততক্ষনে ওর ঐ সুন্দর মুখখানা জ্বলসে গেছে। এ অবস্থা দেখে বরপক্ষ পগার পার। সুমির মা ও আর সহ্য করতে না পেরে ওপারে চলে গেলেন। আর ওদিকে ওর ভাইবোন ও ওকে ওদের মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করতে থাকে। আর ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগল।

এতকিছুর পরেও ও আজ ও বেচে আছে শুধুমাত্র ওর ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে।ও চায়না ওর সাথে যে অবিচার করা হয়েছে তা ওর ভাইবোনদের সাথে হোক। ওদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।ওর মার রেখে যাওয়া আমানত রক্ষা করভে। সে দিন হয়তো আর বেশিদিন দূরে নয় যে দিন ওর ভাইবোনরা ওদের ভুল বুঝতে পারবে ।আর এই সংগ্রামে তার জয় সুনিশ্চিত ।

এভাবেই দিনের পর দিন ওরা আমাদের সমাজে অত্যাচারিত লাঞ্চিত হয়ে আসছে।অথচ ওরাই আমাদের ঘরের একান্ত আপনজন। ওরাই তো আমাদের কন্যা, জায়া, জননী।

ঊপসংহারহীন অবতরণিকা

ঊপসংহারহীন অবতরণিকা
লিখেছেনঃ Mongovirer Mounota

তোমাকে প্রথম দেখা কলেজে। জানি না কেন, তোমাকে দেখলে চোখটা কিছুক্ষনের জন্য স্থির হয়ে যেত। তোমার কি দেখে আমি এত মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা আজ ও বুঝতে পারলাম না। হয়তোবা তোমার পারসোনালিটিটাই আমাকে মুগ্ধ করেছিল! জানি না, কি সেটা। কেন যেন তোমাকে দেখলে মনে হতো, তুমি প্রফেশনাল লাইফে অনেক ঊন্নতি করবে। অন্য কিছু তখন মনে আসেনি। কারন, তোমার নাম জানতাম না। তাই দ্বিধায় ছিলাম তুমি অন্য ধর্মের যদি হও। চাইলেই নামটা জানা যেত, কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে করেই নামটা জানতে চাইলাম না। কিন্তু হায়! উপরওয়ালা ও বোধ হয় আমার পিছে লেগেই আছেন যে নামটা জানিয়েই ছাড়বেন।

হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর কাছে তোমার নামটা শুনলাম। বুঝলাম, তুমি আর আমি এক ই ধর্মের। পুরো নামটা জানার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কারও কাছে জানতে চাইনি। সেটা ও দেখি উপরওয়ালা নিজ দায়িত্বে একদিন জানিয়ে দিলেন! তো আর কি করা! ঊনি নিজ দায়িত্বে কার্য সমাধান করলে আমার কি করার আছে! যাই হোক, সব যখন নিজে নিজেই হয়ে যাচ্ছে তখনতো আমার কিছু না করলে ও হয়। তাই আমি শুধু দেখাতেই সীমাবদ্ধ থাকলাম।

আর ও সুবিধা রেখেছেন উনি আমার জন্য! তোমাকে উনি ঠিক আমার আশেপাশেই বসাতেন ক্লাসে। যেন আমাকে কষ্ট করে খুঁজতে না হয়! কি যে শুরু করছে উপরওয়ালা আমার সাথে! কিন্তু আমার সাথে ওসব করে লাভ নেই, আমি এসবে নাই। আমার দ্বারা এসব প্রেম-টেম হবে না। সব্সময় নিজেকে এসব থেকে ১০০ হাত দূরে রেখেছি। তাই উনি যতই চাইতেন, আমি ততই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু হায়! উপরওয়ালার সাথে কি আর আমি পারি! ধীরে ধীরে তোমার প্রতি আর ও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়লাম। একদিন তোমার চেহারাটা একটু না দেখলে ভাল লাগতো না। অবশ্য তুমি প্রতিদিনই ক্লাস করতে, সেই সুবাদে এ না দেখতে পাওয়ার সমস্যাটা ছিল না।


ক্লাসের সবাই সবার সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলাম, অনেক দুষ্টুমি করতাম সবাই মিলে। শুধু তোমার সাথেই কখনও সামনাসামনি কথা হয়নি। তবে সরাসরি না হলে ও অন্যভাবে মাঝে মাঝে কথা হতো। একদিন সবার আড্ডায় দুস্টুমি করে তোমার একটা নাম দেই। আড্ডায় কিছু না বললে ও এর পর তুমি অনেক বকেছিলে আমায়। বুঝতে পারছি তুমি এসব পছন্দ কর না, তোমার মাথা তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়, কিন্তু একটু ফান করলে দোষ কি! আমি অনেকভাবে তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তুমিতো একটা ঘাড়ত্যাঁড়া। নিজে যা বুঝ, তা। কারো কথা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন ই মনে কর না। একটা পর্যায়ে যেয়ে আমার ও মাথা গরম হয়ে গেলো। তখন আমি ও তোমায় কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। কিন্তু সেগুলো ছিলো শুধুই অভিমান করে বলা। আর তুমিতো তুমি ই!

এরপর থেকে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলে। খুব খারাপ লেগেছিলো তখন, জানো? আর একটাই উপায় ছিল, ফেইসবুক। অন্য নাম দিয়ে তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিলাম। এরপর তোমার সাথে মেসেজ এ সব্সময় কথা হতো সকাল থেকে রাত পর্য্ন্ত যখন ই সময় হতো। বুঝতে পারনি, কারণ পুরো পরিচয় ই যে মিথ্যে বলেছিলাম। অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলাম তোমার সম্পর্কে। অনেক কিছু বের করতে চেয়েছিলাম তোমার মুখ থেকে। কিন্তু পারিনি। আচ্ছা, তুমি এমন কেন বলতো? নিজের আবেগ কে এভাবে লুকিয়ে রাখতে কিভাবে পারো? তাই মাঝে মাঝে তোমার পাত্তা না দেয়া টাইপ কথাবার্তা শুনলে মাথা গরম হয়ে যেত। কিন্তু, কিছুই বলতে পারতাম না, পাছে না আবার ধরা পড়ে যাই। তুমি এত অদ্ভুত কেন বলতো? এভাবে না বললে হয় না? সবসময় এত কঠিন হয়ে কথা বল কেন? মাঝে মাঝে প্রচণ্ড রাগ হয় তোমার উপর।

তখন ইচ্ছে করে তোমার মাথার চুলগুলো সব ছিঁড়ে দেই। আজব মানুষ তুমি! তোমার এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারলাম না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। বুঝতে পারলাম মানসিকতা বা চিন্তাভাবনার দিক থেকে আমি উত্তর মেরু আর তুমি দক্ষিণ মেরু। আমার চিন্তাধারার সাথে তোমারটা কখনই মেলে না। আমার ভাবনার সাথে তুমি কখনই একাত্ম হতে পারো না, সব্সময় সব কথার বিপক্ষে তুমি যাবেই। তাই ভালোলাগাটা শুধু তার জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকল। ভালোবাসা পর্যন্ত আর যেতে পারল না। আর আমিও বুঝলাম, ভালোবাসা শব্দটির অর্থ কত নিগুঢ়। ভালো অনেককেই লাগে, কিন্তু সবাইকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাটা শুধুই একজনের জ্ন্য, যে তোমাকে বুঝতে চাইবে, তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিবে, তোমার সাথে তার সব সুখ-দুঃখ গুলো শেয়ার করবে। পারস্পরিক বোঝাপড়াটা অনেক জরুরী এক্ষেত্রে। আর তাইতো আমার গল্পটি তার উপসংহারে পৌঁছাতে পারলো না। ঊপসংহারহীন অবতরণিকা হয়ে রয়ে গেলো জীবনে…...


ღ গল্পটি ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্টস দিয়ে লেখককে আরো নতুন নতুন নতুন গল্প লিখতে উৎসাহিত করুন। ღ
১.
বৃষ্টির বুকের ভিতর টা হঠাত করে কেপে উঠলো। আজকে নতুন না, এরকম প্রায় প্রতি রাতেই হয়। পাশ ফিরে রাতুলের মুখটা একবার দেখল। কতটা ভালবাসে ওকে রাতুল। কি অবুঝ নিস্পাপ শিশুর মত লাগছে ওকে। রাতুলের মুখটা দেখেই মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল বৃষ্টির। এই মানুষটাকে কত কষ্ট দেয় ও। একটুও প্রতিবাদ নেই। কত পার্থক্য রাতুলের সাথে ওই মানুষটার যাকে সে হারিয়েছে আরো একটা বছর আগে। কাল ওদের বিবাহ বার্ষিকী। এই এক বছর এ কিছুই করেনি এই মানুষটার জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অন্য এক জগতে।

২.
কলেজ লাইফ টা আসলেই খুব সুন্দর। তার উপর ফাইয়াজ এর মত প্রেমিক থাকলে সবকিছুই অন্য রকম লাগে। এক মাস হল সম্পর্কটা হয়েছে। ও অনেক কেয়ার করে বৃষ্টির।বৃষ্টি যা বলে তাই। ওর কথার বাইরে যায় না। একটু রাগ করলে সুন্দর করে রাগ ভাঙায়।  এভাবে দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেল।এর মাঝে ফাইয়াজ কে ও পাগলের মত ভালবাসে ফেলেছে। ওকে একটুকু চোখের আরাল হতে দিতে ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে সারাদিন ওর পাশে থাকতে। ওকে ওর পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াতে। ও কোন মেয়ের সাথে কথা বললে মনে হয় ও হারিয়ে ফেলছে ফাইয়াজকে। একটু কথা না হলে দম বন্ধ হয়ে আসে ওর।

৩.
ফাইয়াজ এই বছর ভার্সিটি শেষ করে সেখানেই লেকচারার হিসেবে চাকরি পেয়েছে। একদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় গিয়ে দেখে ওদের পাসের বাসায় নতুন এসেছে একটা মেয়ে এসেছে। ওর বাবা মা আর ছোট একটা ভাই। মেয়েটাকে এক দেখাতেই প্রেমে পরে যায় সে। মাঝে মাঝে ভার্সিটি থেকে আসার সময় দেখত সে। সে খেয়াল করত মেয়েটাও ওকে মনে হয় পছন্দ করে। একদিন ছোট ভাইটাকে ওর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলল এটা তোমার আপুকে দিও। দুইদিন পর ফাইয়াজ এর মোবাইল এ একটা ফোন এল।বৃষ্টির ফোন...... এভাবেই দেখতে দেখতে সম্পরক টা হয়ে গেল। বৃষ্টি মেয়েটা খুব ভাল। কোন প্যাঁচ নাই মনে। খুব সহজ সরল। কিন্তু একটু বেশিই বোকা। আর সব কিছুতে বেশি সিরিয়াস।

৪ .
ভালই চলছিল সব। এর মধ্যে বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ছেলে ডাক্তার। বৃষ্টি ফাইয়াজ কে বলল। ফাইয়াজ শুনেও না শুনার ভান করল। বৃষ্টি বলল তুমি তোমার বাসায় বল না প্লিজ। বৃষ্টি আমি এখন ই বিয়ে করতে চাই না,তুমি তোমার বাবা মার কথা শুনো। বৃষ্টি অনেক বুঝাতে চাইল। কোনভাবেই সে বুঝাতে পারল না ফাইয়াজ কে।

৫.
রাতুলের সাথে বৃষ্টির বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের রাতে রাতুলকে ওর সব বলে বৃষ্টি। সাথে গর গর করে বলে গেল ওর দেয়া চিঠি, ছবি কোনটাই ও নষ্ট করবে না। ও ভেবেছিল রাতুল খুব রেগে যাবে। রাতুল ওকে বলে যদি ওকে কখন ভুলতে পার তবে নষ্ট কর। আমি তোমার হাত ছারব না কখনো। সেই থেকে শুরু ওর সংসার জীবন। ব্যস্ততার ভিরে সে তার এই জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছে। আর এই দেবতার মত মানুষটা এত ভাল। ওকে এত ভালবাসা দিয়েছে যে ওর এখন আর খুব একটা মনে পরে না ফাইয়াজ আর কথা। এই মানুষটার সব কিছুই ওর ভাল লাগে। মানুষটার হাসি, কথা বলা, মানুষটার কবিতা, চলাফেরা। সব কিছু ভাল লাগে আজ বৃষ্টির। এই মানুষটার ভালবাসায় সে আজ ভুলেই গিয়েছে এক বছর আগের সেই ছেলেটিকে যে একদিন ছেড়ে দিয়েছিল বৃষ্টির হাত। তবে কি এই মানুষটাকে ভালবেসে ফেলেছে বৃষ্টি? হ্যা, তাই সে সত্তিই ভালবাসে এই মানুষটিকে। প্রায় কয়েকদিন ধরেই ওর বুকটা কেপে ওঠে, এই মানুষটাকে কষ্ট দেয় এই ভেবে। এই মানুষটাকে বলা হয়নি যে সে তাকে অনেক ভালবাসে। সারা রাত ঘুমায় না বৃষ্টি। রাতুল প্রতিদিনের মত ওর হসপিটালে চলে যায় সকালে ওঠে। একটু পর ওর ফোনে একটা মেসেজ বিছানার পাসের ড্রয়ের টা খুলো। বৃষ্টি খুলেই পেল একটা হিরার আংটি,আর এক গুচ্ছ গোলাপ। আর একটা কাগজে লিখা- অনেক ভালবাসি তাই বিবাহ বার্ষিকীতে ফুলগুলো দিয়েছি, জানি তুমি খুব রাগ করেছ। জানি তুমি আমাকে ভালবাস না। তবুও আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। সরি...

বৃষ্টি ওই কাগজ টা বুকে জরিয়ে পাগলের মত কাঁদতে লাগল।

৬.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে রাতুল এখন ই চলে আসবে। বৃষ্টি একটা নিল শাড়ি পরল। রাতুলের প্রিয় রং। আলমারি থেকে বের করল সেই পুরনো জিনিস গুলো। কি আশ্চর্য এখন আগের মত আর ওর চোখের কোনে পানি আসছে না। কষ্টে বুকের ভিতর কোন ব্যথাও হচ্ছে না। রাতুল চলে এসেছে। দৌরে গিয়ে দরজা খুলল বৃষ্টি। রাতুল অবাক। বৃষ্টি রাতুলের হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেল। রাতুল বলল কি করছ? এগুলো কি করবে? বৃষ্টি ছাদে গিয়ে কেরোসিন আর আগুন দিয়ে পুরিয়ে দিল তার সব পুরনো সৃতি। সে রাতুল কে জরিয়ে ধরে বল্ল।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি। আমাকে মাফ কর। খুশিতে রাতুল নিজের কান্না আটকাতে পারল না। সেও জরিয়ে ধরল বৃষ্টিকে। সে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু শুনছে আজ বৃষ্টির সব কথা।

লিখেছেনঃ Noshin Samiha Khan Trisha

তারাভরা আকাশের খোঁজে

তারাভরা আকাশের খোঁজে
লিখেছেনঃ মুহাইমিনুল ইসলাম অভী

আস্তে আস্তে চোখ খুললো রুমেল। সারা শরীরে ব্যথা করছে। হঠাৎ করে পড়ে যাওয়াতে মাথায় ব্যথা লেগেছে। জায়গাটা দপদপ করছে। রাতের আকাশে তারা দেখা রুমেলের অনেক পুরনো অভ্যাস। মাঝরাতের এক থেকে দুই ঘন্টা পর সে ছাদে ওঠে আসে রাতের তারা দেখার জন্য। এটা এক প্রকার নেশা হয়ে গেছে তার।অন্যান্য দিনের মত আজও তারা দেখার জন্য ছাদে এসেছিলো ও।আকাশ পরিষ্কার থাকায় তারাগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে রয়েছে।কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো। ও শুধু বুঝতে পারলো ও ছাদে লুটিয়ে পড়ছে।এরপর সব অন্ধকার।

শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে রুমেল। রাত কয়টা বাজে এখন? ভোর হতে কত দেরি?উঠে ছাদের কোনার দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সে। এ কোন অদ্ভুত প্রাণী। মাথাটা বেলুন ফুলালে যেরকম লাগে ঠিক সেইরকম। চোখগুলো ঘোলাটে কিন্তু বড়।মুখ নাক কিছুই নেই। হাতগুলো বেশ ছোট ছোট সেই তুলনায় পাগুলো বেশ লম্বা।
হঠাৎ প্রাণীটা নড়ে ওঠলো। আশ্চর্য ব্যাপার ওর মুখ না থাকলেও কীভাবে যেন কথা বলছে? আর রুমেলেরও মুখ নাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। কি এক আশ্চর্য উপায়ে ওদের যোগাযোগ হচ্ছে।
রুমেল আমরা তোমাকে এক সপ্তাহ যাবৎ পর্যবেক্ষণ করছি। বলছে প্রাণীটা। এই গ্রহের মানুষ নিয়ে আমাদের গবেষণায় সাহায্য করার জন্য তোমাকে যেতে হবে আমাদের সাথে। আমরা এসেছি এক্সথ্রিফাইভ গ্রহ থেকে।
এবার রুমেল বলছে আমরা কথা বলছি কীভাবে? কারো তো মুখ নড়ছে না।
আমি তোমার মস্তিষ্কের নিউরণের কোডের মাধ্যমে তোমার তৈরী কথা বুঝতে পারছি এবং তা তোমার মুখ দিয়ে বের হবার আগেই ধ্বংস করে দিচ্ছি। এবার চলো।
কোথায় যাবো?
আমাদের গ্রহে।
কেন?
ওনাকে তোমার শরীর, মস্তিষ্ক এসব নিয়ে গবেষণা করা হবে।
না,আমি যাবো না। আমি এইখানেই ভালো আছি।
যেতে তোমাকে হবেই।
না আমি যাবো... কথা শেষ করতে পারলো না রুমেল। ওর শরীরের কোন কিছু কাজ করছে না। শুধু চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছে ওকে ধোয়ার এক কুন্ডলীর ভেতর করে অতি ঠান্ডা এক রুমে ঢুকানো হচ্ছে। চারদিকে তীব্র আলো।
রুমেলের মস্তিষ্ক তখন ভাবছে আবার কি এই গ্রহে আসতে পারবো? আবার কি দেখতে পাবো তারাভরা আকাশ?

ওর চিন্তাধারা বুঝতে পেরে অদ্ভুত প্রাণীটাও বিচিত্র ভঙ্গিতে তারাজ্বলা আকাশের দিকে তাকালো।