অসঙ্গায়িত জীবন
লিখেছেনঃ Salma Suma
নিঝুম রাত,চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আনুমানিক ৪ টা হবে। ঘরে ঘড়ি নেই, সময়
দেখতে হলে মোবাইলটাই এখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু মোবাইল ধরতে ইচ্ছে করছে না।
বিছানা থেকে ওঠে বাথরুমে গেল সুমি। মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে আয়নায় নিজের
চেহারাটা দেখল ও। কেমন বিষন্ন লাগছে নিজেকে। লাগবেইতো গত কয়েকদিন ধরে ওর সাথে
যেটা হচ্ছে, তার জন্য ও একেবারেই তৈরী ছিল না। সে জানে না আজ তার জীবনে কি
ঘটতে চলেছে। সে অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন সমাধান সে বের করতে পারছে না।
সুমি,পরিবারের বড় মেয়ে।তার আরো ছোট ছোট ৩ ভাইবোন রয়েছে। ওর বাবা একটা
ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ওর বাবা মারা
যায়। ওর বিধবা মা একা সংসার টানতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ওকে ঠেলে দিল
চাকরির খোজে।
প্রথম প্রথম ওর খুব কষ্ট হত।বাবা নেই,ওর লেখাপড়া
বন্ধ ,কিন্তুকিছু করার নেই। নিরবে চোখের জল ফেলত। কিন্তু এখন তা সয়ে গেছে
সময়ের বির্বতনে। এখন সে কয়েকটা বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আর
মাস শেষে যে টাকাটা পায় তা মার হাতে গুযে দেয়।ভালভাবেই চলছিল ওদের জীবন।
দুসস্বপ্নের মা ওর জীবনে নেমে এল অন্ধকারের ছায়া।
হঠাত্ করে সে একদিন খেয়াল করল কেউ একজন তাকে ফলো করছে। সে বাড়ি থেকে বের
হওয়া থেকে শুরু করে স্টুডেন্টের বাড়ি অবধি তাকে চোখে চোখে রাখছে।
হঠাত ওর মোবাইলে একদিন ফোন আসে অপরিচিত নাম্বার থেকে। ও রিসিভ করে। ওপাশ থেকে
পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল। কিছুক্ষন কথা বলার পর সুমি বুঝতে পারল যে ফোনের এই
লোকটাই ওকে কয়েকদিন ধরে ফলো করছে। লোকটার নাম সবুজ। সবুজ সরাসরি সুমিকে
বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকে সুমি বিয়ে, স্বামী, সংসার নিয়ে ভাবতে শুরু
করে। যে ভাবনাগুলো এতদিন তার মনের গহীন কোনে লুকায়িত ছিল। তারপর থেকে সবুজ
ওকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন দেয়া শুরু করে। সুমি নাও করতে পারে না আবার হ্যা ও
বলতে পারছে না। কেননা ওর উপর এখনো ওর বিধবা মা,ভাইবোনের দায়িত্ব পরে
আছে।ওদিকে ওর ওতো
একটা জীবন আছে, চাওয়া পাওয়া আছে। কিন্তু কি করবে ও, ওর যে কিছু করার নেই।
হঠাত্ আযানের শব্দে সুমির হুশ ফিরে এল। ঘরে ফিরে এসে সকালের নাস্তা তৈরীর
কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মনে মনে সে সুযোগ খুজতে থাকে কখন কিভাবে মাকে কথাটা
বলবে। সুমিকে অবাক করে দিয়ে মা ওকে বলে আজ পাত্রপক্ষ ওকে দেখতে আসবে। ছেলে
বিদেশ থাকে। খুব শীঘ্রই আবার চলে যাবে। ওরা চাইলে আজই বিয়ে হবে।
একথা শোনার পর সুমির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। উপায় না পেয়ে সুমি সবুজকে ফোন
করে। সব শুনে সবুজ সুমিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসতে বলে।সুমি এক কথায় না
করে দেয়। ওর পক্ষে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা সম্ভব নয়।ওর ছোট ভাই বোনদের মুখের
হাসি, ওর মার একমাত্র ভরসা ও।ও যদি চলে পালিয়ে যায় তবে ওর মা পাড়ায় কাউকে
মুখ দেখাতে পারবে না। কিন্তু সবুজ কোন কখাই শুনতে রাজি নয়। সুমির সাথে ও
রাগারাগি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে সবুজ ফোন কেটে দেয়। সুমি হাজার চেষ্টা
করেও ওকে আর ফোনে পায়নি।
ছেলেপক্ষ চলে এসেছে।আজই বিয়ে হবে। সুমির
মা খুব ব্যস্ত অতিথিদের আপ্যায়ন নিয়ে। সুমির ভাইবোন এদিক ওদিক দোড়াদৌড়ি
করছে। সুমি বউ সেজে বসে আছে। আচমকা ও সবুজের ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই
চিত্কার দিয়ে ওঠল। ওর চিত্কার শুনে সবাই ছুটে এল। কিন্তু ততক্ষনে ওর ঐ
সুন্দর মুখখানা জ্বলসে গেছে। এ অবস্থা দেখে বরপক্ষ পগার পার। সুমির মা ও আর
সহ্য করতে না পেরে ওপারে চলে গেলেন। আর ওদিকে ওর ভাইবোন ও ওকে ওদের মায়ের
মৃত্যুর জন্য দায়ী করতে থাকে। আর ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগল।
এতকিছুর পরেও ও আজ ও বেচে আছে শুধুমাত্র ওর ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে।ও
চায়না ওর সাথে যে অবিচার করা হয়েছে তা ওর ভাইবোনদের সাথে হোক। ওদেরকে
মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।ওর মার রেখে যাওয়া আমানত রক্ষা করভে। সে
দিন হয়তো আর বেশিদিন দূরে নয় যে দিন ওর ভাইবোনরা ওদের ভুল বুঝতে পারবে ।আর
এই সংগ্রামে তার জয় সুনিশ্চিত ।
এভাবেই দিনের পর দিন ওরা আমাদের
সমাজে অত্যাচারিত লাঞ্চিত হয়ে আসছে।অথচ ওরাই আমাদের ঘরের একান্ত
আপনজন। ওরাই তো আমাদের কন্যা, জায়া, জননী।
লিখেছেনঃ Salma Suma
নিঝুম রাত,চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আনুমানিক ৪ টা হবে। ঘরে ঘড়ি নেই, সময় দেখতে হলে মোবাইলটাই এখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু মোবাইল ধরতে ইচ্ছে করছে না।
বিছানা থেকে ওঠে বাথরুমে গেল সুমি। মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখল ও। কেমন বিষন্ন লাগছে নিজেকে। লাগবেইতো গত কয়েকদিন ধরে ওর সাথে যেটা হচ্ছে, তার জন্য ও একেবারেই তৈরী ছিল না। সে জানে না আজ তার জীবনে কি ঘটতে চলেছে। সে অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন সমাধান সে বের করতে পারছে না।
সুমি,পরিবারের বড় মেয়ে।তার আরো ছোট ছোট ৩ ভাইবোন রয়েছে। ওর বাবা একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ওর বাবা মারা যায়। ওর বিধবা মা একা সংসার টানতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ওকে ঠেলে দিল চাকরির খোজে।
প্রথম প্রথম ওর খুব কষ্ট হত।বাবা নেই,ওর লেখাপড়া বন্ধ ,কিন্তুকিছু করার নেই। নিরবে চোখের জল ফেলত। কিন্তু এখন তা সয়ে গেছে সময়ের বির্বতনে। এখন সে কয়েকটা বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে। আর মাস শেষে যে টাকাটা পায় তা মার হাতে গুযে দেয়।ভালভাবেই চলছিল ওদের জীবন।
দুসস্বপ্নের মা ওর জীবনে নেমে এল অন্ধকারের ছায়া।
হঠাত্ করে সে একদিন খেয়াল করল কেউ একজন তাকে ফলো করছে। সে বাড়ি থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে স্টুডেন্টের বাড়ি অবধি তাকে চোখে চোখে রাখছে।
হঠাত ওর মোবাইলে একদিন ফোন আসে অপরিচিত নাম্বার থেকে। ও রিসিভ করে। ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল। কিছুক্ষন কথা বলার পর সুমি বুঝতে পারল যে ফোনের এই লোকটাই ওকে কয়েকদিন ধরে ফলো করছে। লোকটার নাম সবুজ। সবুজ সরাসরি সুমিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকে সুমি বিয়ে, স্বামী, সংসার নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যে ভাবনাগুলো এতদিন তার মনের গহীন কোনে লুকায়িত ছিল। তারপর থেকে সবুজ ওকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন দেয়া শুরু করে। সুমি নাও করতে পারে না আবার হ্যা ও বলতে পারছে না। কেননা ওর উপর এখনো ওর বিধবা মা,ভাইবোনের দায়িত্ব পরে আছে।ওদিকে ওর ওতো
একটা জীবন আছে, চাওয়া পাওয়া আছে। কিন্তু কি করবে ও, ওর যে কিছু করার নেই।
হঠাত্ আযানের শব্দে সুমির হুশ ফিরে এল। ঘরে ফিরে এসে সকালের নাস্তা তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মনে মনে সে সুযোগ খুজতে থাকে কখন কিভাবে মাকে কথাটা বলবে। সুমিকে অবাক করে দিয়ে মা ওকে বলে আজ পাত্রপক্ষ ওকে দেখতে আসবে। ছেলে বিদেশ থাকে। খুব শীঘ্রই আবার চলে যাবে। ওরা চাইলে আজই বিয়ে হবে।
একথা শোনার পর সুমির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। উপায় না পেয়ে সুমি সবুজকে ফোন করে। সব শুনে সবুজ সুমিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসতে বলে।সুমি এক কথায় না করে দেয়। ওর পক্ষে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা সম্ভব নয়।ওর ছোট ভাই বোনদের মুখের হাসি, ওর মার একমাত্র ভরসা ও।ও যদি চলে পালিয়ে যায় তবে ওর মা পাড়ায় কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। কিন্তু সবুজ কোন কখাই শুনতে রাজি নয়। সুমির সাথে ও রাগারাগি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে সবুজ ফোন কেটে দেয়। সুমি হাজার চেষ্টা করেও ওকে আর ফোনে পায়নি।
ছেলেপক্ষ চলে এসেছে।আজই বিয়ে হবে। সুমির মা খুব ব্যস্ত অতিথিদের আপ্যায়ন নিয়ে। সুমির ভাইবোন এদিক ওদিক দোড়াদৌড়ি করছে। সুমি বউ সেজে বসে আছে। আচমকা ও সবুজের ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই চিত্কার দিয়ে ওঠল। ওর চিত্কার শুনে সবাই ছুটে এল। কিন্তু ততক্ষনে ওর ঐ সুন্দর মুখখানা জ্বলসে গেছে। এ অবস্থা দেখে বরপক্ষ পগার পার। সুমির মা ও আর সহ্য করতে না পেরে ওপারে চলে গেলেন। আর ওদিকে ওর ভাইবোন ও ওকে ওদের মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করতে থাকে। আর ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগল।
এতকিছুর পরেও ও আজ ও বেচে আছে শুধুমাত্র ওর ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে।ও চায়না ওর সাথে যে অবিচার করা হয়েছে তা ওর ভাইবোনদের সাথে হোক। ওদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।ওর মার রেখে যাওয়া আমানত রক্ষা করভে। সে দিন হয়তো আর বেশিদিন দূরে নয় যে দিন ওর ভাইবোনরা ওদের ভুল বুঝতে পারবে ।আর এই সংগ্রামে তার জয় সুনিশ্চিত ।
এভাবেই দিনের পর দিন ওরা আমাদের সমাজে অত্যাচারিত লাঞ্চিত হয়ে আসছে।অথচ ওরাই আমাদের ঘরের একান্ত আপনজন। ওরাই তো আমাদের কন্যা, জায়া, জননী।