আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

গার্লফ্রেন্ড এবং আমার ক্ষমতা

গার্লফ্রেন্ড এবং আমার ক্ষমতা
 
যাক আবার প্রমানিত হল।কি ভাবছেন যে কি প্রমানিত হল?যেটা প্রমানিত হল সেটা হচ্ছে আমি যদি কোন মেয়েকে পছন্দ করি তাহলে সেই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকে।আর যদি বয়ফ্রেন্ড না থাকে তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে তার বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়।কোথা থেকে হয় আমি জানি না কিন্তু হয়ে যায়।এবং আমি কোন মেয়েকে পছন্দ করার পর তার যে বয়ফ্রেন্ড হবে এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারি।এমনকি ষ্ট্
যাম্প পেপার এ লিখে দিতে পারি।সৃষ্টিকর্তা সবাইকে পৃথিবীতে কোন না কোন ক্ষমতা দিয়ে পাঠায়।আমাকে বোধহয় এই ক্ষমতাটা দিয়েছেন।চিন্তা করছি এটা নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করব নাকি।যে সব মেয়ের বয়ফ্রেন্ড দরকার তারা আমার সাথে যোগাযোগ করবে।আমার ব্যবসার শ্লোগান হবে এমন “আপনি কি একাকী জীবন কাটাচ্ছেন?আপনার কি বয়ফ্রেন্ড দরকার?তাহলে এখনই যোগাযোগ করুন............”।এত কথা বললাম কারন কিছুদিন আগে একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল।আজ একটু আগে তাকে আমার সামনে দিয়ে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যেতে দেখলাম,এবং এটা নতুন না এর আগেও অনেকবার ঘটেছে।এই মেয়েটা আমাদের এলাকায় নতুন এসেছে।দেখতে মোটামুটি ভালই।কি ভাবছেন?যে আমি চেহারা দেখে ভালবাসি তার মানে আমি ভালোবাসা কি জানি না।আপনারা বলবেন যে ভালবাসতে গেলে চেহারা না মন দেখতে হয়।আমিও এক সময় এটাই বিশ্বাস করতাম।কিন্তু দেখলাম পৃথিবীটা “মন দেখে ভালোবাসায়” বিশ্বাস করে না।যদি তাই করত তাহলে মানুষ শাঁকচুন্নির সাথেও প্রেম করতো।যদি তাই হতো তাহলে সবাই তার বাহ্যিক সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টায় থাকতো না,সবাই তার মনের সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতো যেটা কেউই করে না।যদি তাই হতো তাহলে পার্লার গুলো কয়েকদিন এর মধ্যে ভুট হয়ে যেত।আর যারা মন দেখে ভালবাসে তারা অসাধারন ব্যাক্তি।আমি খুব সাধারন একটা মানুষ।তাই শুধু মন দেখে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।যাইহোক আসল কথায় ফিরে আসি।মেয়েটাকে প্রথম দেখে বেশ ভাল লেগেছিল।কিন্তু আজ সে আমার সামনে দিয়ে আরেক জনের হাত ধরে চলে গেল।এবং এই দৃশ্য টা দেখলাম রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময়।এমন সময় আমার পাশে একজনের চায়না মোবাইলে মমতাজের সেই বিখ্যাত গান বেজে উঠলো “বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায়............” ।মেয়েটাকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখে মেজাজ এমনিতেই গরম ছিল গানটা শুনে আরও গরম হয়ে গেল।আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম যিনি এই গানটা বাজাচ্ছেন তার বয়স ৪০-৪২ হবে।আমি তাকে বললাম“কাকার গার্লফ্রেন্ড কি ভেগে গেছে?”আমার প্রশ্ন শুনে তিনি আমার দিকে আগুন চোখে তাকালেন।আমি সেই আগুনে ঘি স্বরূপ একটা ছোট্ট হাসি দিলাম।“অসভ্য কোথাকার,বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় শেখনি?”আমি হাসিমুখে বললাম “জি না সেরকম কোন ইস্কুলে আমি ভর্তি হয়নি।তবে আপনি যে আমার দলের লোক সেটা বোঝা যাচ্ছে।কারন আমার জানামতে কোন সভ্য লোক রাস্তার ধারে দাড়ায় মোবাইলে ফুল সাউন্ড দিয়ে গান শোনে না”।আমার এই কথায় লোকটা বেশ দমে গেল।গজগজ করতে করতে তিনি সেখান থেকে বিদায় হলেন।লোকটা চলে যাওয়ার পর গানটা নিয়ে চিন্তা করলাম,আমার বেলায় বোধহয় গানটা এমন হবে “বান্ধবী যখন বয়ফ্রেন্ড লইয়া চায়ের দোকানের সামনে দিয়া হাইট্টা যায়............”।এমন সময় বন্ধু শিহাব এসে পাশে বসল।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখটা শুকনা।বুঝলাম তার কোন এক গার্লফ্রেন্ড তাকে ছ্যাকামাইসিন দিয়েছে।আমার এই বন্ধুটা একসাথে তিন চারটে প্রেম করে এবং কিছুদিন পর পর তার কোন এক গার্ল ফ্রেন্ড তাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে যায়।তার ফলে দুই একদিন তার মন খারাপ থাকে।আবার দু দিন পর আরেকটা জুটে যায়।কোথা থেকে পায় জানি না।তবে এটুকু জানি তার গার্লফ্রেন্ড দুটোর নিচে কখনও নামেনি।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
-কিরে কোনটা গেল?
-আর বলিস না মেয়ে মানুষ মানেই খারাপ।মৌয়ের যে আরও দুইটা বয়ফ্রেন্ড আছে তা আজকে জানলাম।কত্ত বড় বেয়াদপ মেয়ে চিন্তা কর।তিনটা ছেলের সাথে একসাথে প্রেম করে।
শিহাবের কথা শুনে খুব হাসি লাগলো।সে নিজে যখন একসাথে তিন চারটে প্রেম করে তখন সেটা কোন দোষ না।মানুষ বড়ই আজব প্রাণী।নিজের দোষগুলো সে কখনই খুজে পায় না।
আমি তাকে বললাম “তুই যখন একসাথে তিন চারটে প্রেম করিস তখন সেটা কোন দোষ হয় না তাই না?মানুষ নিজের দোষ কখনই খুজে পায় না বুঝলি।তোকে যদি একটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তোর নিজের দোষ খুঁজতে বলা হয়,তাও তুই তোর একটা দোষও ............?আমার কথা শেষ হল না সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে ড্রাইভার মাথা বের করে বলল “ভাইজান এই বাসাটা কোথায় একটু বলবেন”?শিহাবের মাথা গরম ছিল।ড্রাইভার এর কথা শুনে ধমকের সুরে বলল “ওই মিয়া আমি আপনার কোন জন্মের জান?আর ওই বাসা আপনার নানার বাসার পাশে,এখন সামনে থেকে যান”।ড্রাইভার শিহাবের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল।আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বললাম “সরি ভাই ওনার মাথা একটু গরম আছে,আমি আপনাকে ঠিকানা বলে দিচ্ছি”।ড্রাইভার কে যখন ঠিকানা বলছি তখন গাড়ির পেছন দিকে চোখ গেল।দেখলাম একজন রূপসী বসে মোবাইল এ কি যেন করেছেন।ওকে দেখে মনে হলে এই বার আমি আমার গার্লফ্রেন্ড পেলাম।মনে হওয়ার সাথে সাথে মনটা খারাপ হয়ে গেল কারন সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরেকটা ক্ষমতা দিয়েছেন আর সেটা হচ্ছে আমি যা চিন্তা করি ঠিক তার উল্টোটা ঘটে।তার মানে এইমেয়ে কোন দিন আমার গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।ড্রাইভার কে ঠিকানা বলে যখন আমার জায়গায় ফিরে যাচ্ছি তখন মেয়েটার সাথে একবার চোখাচোখি হল।আমি তার চোখের দিকে দেখে থেমে গেলাম।এমন সুন্দর চোখ আমি খুব কম দেখেছি।আমি মনে হয় মেয়েটার প্রেম এ পড়ে গেছি।সাথে সাথে আমার ক্ষমতার কথা মনে পড়ল।আমি প্রেম এ পড়েছি মানে এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে আর যদি না থাকে তবে কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।আমি আশাহত হয়ে আমার জায়গায় ফিরে গেলাম।

বন্ধুর সাথে মার্কেটে এসেছি কিছু কেনাকাটা করতে।মার্কেটে ঘোরাঘুরি করছি সেই সময় তাকে আবার দেখলাম,সেই “সুনয়না”।একটা দোকান থেকে বের হচ্ছে।আমি তাকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না,চিন্তা করলাম এখন গিয়ে কথা বলব।কিন্তু সাহস হল না।হটাত মনে হল এখন না কথা বললে আর হয়ত সুযোগ পাব না।তাই মনে সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে গেলাম।যখনি তার কাছাকাছি গেছি,তখনি দেখলাম একটি সুদর্শন যুবক তার কাছে গিয়ে বলল “তাড়াতাড়ি করো দেরি হয়ে যাচ্ছে”।সেই ছেলেটার সাথে একটা ছোট বাচ্চা ছিল।ছোট বাচ্চাটি সেই সুনয়নাকে উদ্দেশ্য করে আদো আদো কণ্ঠে বলল “আম্মু দেখ আমি এতা কিনেতি”।আমি তখনি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।আমার যে ক্ষমতাটা সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন সেটা আবার প্রমানিত হল,কিন্তু তিনি যে আমার ক্ষমতাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন তা আমি বুঝিনি।আগে কাউকে পছন্দ হলে তার বয়ফ্রেন্ড পর্যন্ত ব্যপারটা সীমাবদ্ধ থাকতো কিন্তু এখানে আরও বেশী,এই মেয়েটা বিবাহিত।তার মানে এখন থেকে আমি যদি কাউকে পছন্দ করি তাহলে সে বিবাহিত হবে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাকে হাসিমুখে একটা ধন্যবাদ দিলাম।এমন সময় দেখলাম শিহাব আমার পাশে।দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল “কিরে হাসিস কেন?না পেয়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি?”ওর হাসি দেখে মনে হল সিনেমায় নায়ক যেমন উড়ে গিয়ে ভিলেন কে লাথি মারে ওর দাঁতে যদি আমি তেমন করে একটা লাথি মারতে পারতাম,মনটা ভাল হয়ে যেত।আমি বললাম“না পা গোল হবে কেন,পা লম্বাই আছে।তবে মনে হচ্ছে আমার জ্যাকি চেনের কাছে যেতে হবে”।“কেন?”শিহাব বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।“কিভাবে লাথি মেরে মানুষের দাঁত ভাঙ্গা যায় সেটা শিখতে”বলে আমি হাটা শুরু করলাম।মনে মনে বললাম কবি বলেছেন “এক বার না পারিলে দেখ শতবার”।আর আমার তো মাত্র কয়েকবার হয়েছে।আমার একশবার হতে এখনো অনেক বাকি।তাই যতদিন না একশবার হচ্ছে ততদিন আমার গার্লফ্রেন্ড খোঁজার মিশন অব্যাহত থাকবে”।