আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

মরীচিকা

লিখেছেনঃ Mahidul Islam Nakib

১৪ই ফেব্রুয়ারী বলে কথা…! জীবনে প্রথমবারের মত কোন প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরতে যাব। অনেক কষ্টে আজকের দিনটা মেনেজ করেছি।একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই সব কাজ শুরু করলাম। তাড়াতাড়ি গোসল করে নাস্তা করে নিলাম কোনরকম।
মা বলল, “আজ কি হল তোর? এমন ছোটা ছুটি করছিস কেন তুই?”
আমি বললাম বসন্ত এসেছে… মা বলল এ আর নতুন কি… সেটা তো সব সময়ই আসে।
আমি বললাম… নতুন কিছু আছে মা…পরে বলবো ।
এদিকে আমি ব্যস্ত হয়ে পরলাম আমার ড্রেসিং নিয়ে। শার্ট ম্যাচ করেছে কিনা… প্যান্ট ম্যাচ করেছে কিনা… কোনরকমে ড্রেসিং শেষ করে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি বাসা থেকে। মা বললেন… “কিরে, আজ মা কে বলে যাবিনা?” (এমনি সময় কখনও মা কে না বলে বাহিরে যাইনা… যাওয়ার আগে মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন)
আজ বললাম…”অনেক কষ্টে জেল দিয়ে Lovely লুক বানিয়েছি। আজ মাথায় হাত না বুলিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দাও।”
মা বলল… “তুই কি সারা জীবন এরকমই থাকবি? আজ তোর বাবা আসুক…”
আল্লাহ হাফিয বলে বের হয়ে আসলাম।। আসার সময় ছোট বোন ডাক দিয়ে বলল “তোমার মানি ব্যাগ” — ভুল করে রেখে এসেছিলাম।
তাড়াতাড়ি করে মেইন রোড এ এলাম। বাবার চাকরির জন্য আমরা শহরের বাহিরে থাকি। কোন ট্যাক্সি আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাবেনা… সবাই বলে সিটি গেট। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা পেলাম যে আগ্রাবাদ যেতে রাজি হল। বিসমিল্লাহ বলে উঠে পরলাম। বললাম ভাই একটু জোরে চালান। দেরি হলে আমার খবর আছে। এবার ড্রাইভার এর সাথে আলাপ শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তার খবর। বললাম… “আজ ভালবাসা দিবস… ভাবির জন্য কিছু কেনেননি?”
তিনি বললেন গরিবের আবার ভালবাসা…
বড়পোল এসে ট্যাক্সি থামিয়ে দিল।। আমি বললাম… “কি হল আবার?”
সে বলল… ট্যাক্সি আর যাবেনা। নষ্ট হয়ে গেছে। কথা বাড়ালাম না। ভাড়া দিলাম। সে বলল তার কাছে Change নাই। আমি বললাম… “বাকিটা রেখে দেন। ভাবির জন্য ফুল কিনে নিয়ে যেয়েন।” কথাটা সুনে সে আনন্দ পেল নাকি কষ্ট পেল তা শুনার সময় আমার নেই। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা রিকশা নিলাম। তার ফাকে আরও একটা কাজ করলাম…
লাকি প্লাজার সামনে গিয়ে দেখি মহারানী আমার জন্য দাড়িয়ে আছেন! “Ladies First” — কথাটার কথা মনে পড়ল। মনে হয় বেশীক্ষণ হয়নি তিনি এসেছেন।। চোখে মুখে এখনও রাগ দেখা যাচ্ছে না। তিনি কিছু বলার আগেই আমি ট্যাক্সি থেকে নেমে কেনা ফুলগুলো তাকে দিলাম। আমাকে থ্যাংকস বলে আমার গিফটটা এগিয়ে দিলেন। ওমা! এটা কি।। অবাক হলাম। একটা ব্রেসলেট,স্কাই কালার এর স্টোন বসানো।। ওই যে , আমার ফেভারিট সালমান খান এর টা ! অনেক আনন্দ পেলাম। সাইলেন্ট হয়ে গেলাম।
আবার মহারানীর ডাকে নীরবতা ভাঙল। কুশল বিনিময় শেষ করে আজকের প্ল্যান গুলো বাস্তবায়ন এর জন্য রেডি হলাম। যেহেতু Ice-Cream খুব ফেভারিট তাই ঠাণ্ডার মধ্যেও ওটা দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলেন। Ice-Cream নেয়া হল। তিনি আমাকে আগে দিলেন। প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করলাম। ওমা! এটা কেমন Ice-Cream এত শক্ত কেন??? আবার ট্রাই করলাম। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম.. ও ভাই, ইগলু কোম্পানি Ice-Cream শক্ত বানাচ্ছে কবে থেকে? একটু জোরেই বলেছিলাম।
এমন সময় আমার পাকিস্তানি রুম-ম্যাট আমাকে ডেকে বলল, “Yaar!! Kabh tak ice-cream somaj ke mobile khate rowge??”
ধড়পড় করেউঠে বসলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম এতক্ষণ কি হচ্ছিল।
দেখি আমার Nokia C-1 এর কী-প্যাড শেষ। ভাগ্য ভাল ডিসপ্লে তে কামড় পরেনি। পরলেই বা কি? মোবাইল তো হাজার হাজার পাব। এমন স্বপ্ন কি কখনও পাব?
দুঃখ হল বাকিটা দেখতে পারিনি।


উৎসর্গ- অজানা মেয়ে রুদ্মি