আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

"লুকায়িত ভালোবাসা"

"লুকায়িত ভালবাসা"
-তোর কি একটু সময় হবে?
-কেন?
-তোর সাথে কিছু কথা ছিল
-আমার কাজ আছে
-তোর কি হয়েছে বলবি? তুই ইদানিং আমাকে এড়িয়ে চলছিস কেন?
-তোকে কেনও এড়িয়ে চলব? তোর সাথে এইসব ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই।

কথাটা বলেই হন হন করে হেটে চলে এলাম । কি বলব ওকে ? কেন ওকে এড়িয়ে চলি? ও মানে অহনা আমার অনেক ভালো বন্ধু । এই বন্ধুত্ব যে কখন কিভাবে ভালোলাগার উপরের পর্যায়ে চলে গেছে বুঝতেও পারিনি । এটাকে ভালোবাসা ব
লব না কিন্তু তার চেয়ে খুব কম কিছুও বলতে পারবনা । কিন্তু এটা কি তা নিয়ে আমার ভাবার অধিকার ও নেই কারণ আমার এক বন্ধু সজীবওকে ভালোবাসে । সজীব আমার সাহায্য চেয়েছে ওকে পাওয়ার জন্য । আমিও কথা দিয়েছি ওকে সাহায্যও করবো . যদিও জানি অহনা সজীব কে কখনও মানবেনা । তবু সাহস করে একদিন বলেই দিয়েছিলাম-

-অহনা শুন আর কতদিন single খেতাব লাগিয়ে ঘুরবি,এবার তো double হয়ে যা
-তাই? কার সাথে হবো , তোর সাথে?
-আরে না , আমার সাথে কেন হবি? কত ভাল ছেলে আছে!
-হম, তা তুই কোন ভাল ছেলের হয়ে চামচামি করতে আসছিস?
-এভাবে কেন বলছিস? বন্ধু হিসেবে তোর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
-এতো চাপাবাজি না করে সরাসরি নাম বল।
-তুই তো চিনিসই আমাদের পাড়ার সজীব।
-সজীব?
-হম, অনেক ভাল ছেলে । তোকে অনেক ভালবাসে
-কিন্তু আমার পছন্দের না।
-কেন?
-কোন কেন টেনো নেই, পছন্দ না তো না। কার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা । তার উপর তোর বন্ধু
-তুই শোন
-ফারিক, এটা নিয়ে আর কোন কথা হবেনা

আমিও ভালমানুষের মত চলে এলাম। এই মেয়ের রাগ যা । একবার রাগলে আমার খবর আছে।

আমার ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স হয়ে গেল আর আমি বাড়ি ছাড়লাম । বাড়ি ছাড়ার পরই বুঝতে পারলাম আমি অহনাকে আসলে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু বন্ধু যেখানে ভালবাসে সেখানে আমি কিভাবে বলি, তাই কিছু বললাম না । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো ।ওর প্রতি আর দুর্বল হতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত নাম্বার বদলে ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। ওকে ভুলার জন্য ভার্সিটির একটা মেয়েকে propose করে বসলাম ।ওর জন্য পাগলামি করলাম বন্ধুদের পরামর্শে ।কিন্তু মেয়েটা পাত্তা দিল না ।আমিও নাছোড়বান্দা । ওর পিছনে লেগেই রইলাম ।মেয়েটার কপাল ভাল যে সে এসবে কোন রিএক্সান দেখায়নি । দেখালে পস্তাতে হত। কারন কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম আমি অহনার সাথে এই মেয়েকে তুলনা করছি।
আরে অহনার সাথে তো এই মেয়ের অনেক মিল ।
দোস্ত অহনা ঠিক এভাবে হাসে
আরে দেখ অহনা হাঁটেও এভাবে

আমি এবং আমার বন্ধুরা বুঝতে পারলাম অহনা ছাড়া আর কাউকে আমার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । তাই মেয়েটাকে সব খুলে বললাম আর মাফ চাইলাম ;মেয়েটা অনেক ভাল তাই বলল
-ভাইয়া , আপনি যাকে এতটা ভালবাসেন তাকে নিশ্চয় পাবেন । সাহস করে তাকে বলে দিন। আমি আপনাদের জন্য দুয়া করব

সিধান্ত নিলাম এবার বাড়ি গিয়ে বলে দিব । বন্ধুর পরোয়া আর করবো না। অহনার ভালবাসা তো ও পাবেই না । ওর জন্য আমার ভালবাসা কেন হারাবো

কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা সবসময় হয়না । তাই তো বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের কাছে শুনলাম অহনা প্রেম করছে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কিই বা করার আছে । ব্যার্থ প্রেমিক হয়েই থাকতে হবে

হঠাৎ করেই একদিন অহনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। ঐ ডাকল
- ফারিক, কবে আসছিস?
-কয়েকদিন আগে
-দেখা করলি না কেন?
-আমাদের সাথে দেখা করার সময় কি তোর আছে?
-মানে কি?
-কিছুনা । শুনলাম প্রেম করছিস?
-ও , এজন্য এত অভিমান?
-অভিমানের কি দেখলি?
-কি করব বল ?তুই তো বললি double হতে
-তাই বলে যার তার সাথে?
-কেন সজীবের সাথে করলে খুশি হতি ?
-তা কখন বললাম?
- তাহলে কার সাথে করবো?
-আমি কি জানি?
-তোর সাথে?
-না, আমার সাথে কেন করবি?
-হায় রে কপাল !তুই এখন বোকাই রইলি
-কেন কি করলাম? তোর মত প্রেম করতে পারিনাই বলে?
-আমি কার সাথে প্রেম করি?
-আমি কি জানি?
-জানার চেষ্টা করছিস?
-না, কিন্তু সবাই বলে
-এটা এমনি বলছি,যাতে কেউ জ্বালাতন না করে
-সত্যি?
-হ্যাঁ রে ছাগল

এই সুযোগ নষ্ট করা যায়না । তাই তো ওর চোখে চোখ রেখে বলেই দিলাম
-অহনা , তোকে আমি অনেক ভালোবাসি

কিন্তু ও পাত্তা না দিয়ে হাসতে লাগল । মেজাজ খারাপ হয়না? হা বা না কিছু না বলে হাসছে
-হাসিস কেন?
-তো কি কাঁদবো?
-তা বলছি নাকি? কিন্তু এভাবে হাসবি নাকি? কিছু তো বল
-গাধা, তোর এই একটা কথা বলতে ৪ বছর লাগলো?
-মানে?
-মানে আমি এটা জানতাম
-তাই? তাহলে বল তোর হ্যাঁ নাকি না?
- না
বলে আবার হাসতে লাগলো। আমি গাধা,ছাগল, বোকা হলেও বুঝতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটিকে আমি পেয়ে গেছি। আর ওকে হারাতে দেব না।

(ভালবাসার মানুষ টিকে বলে দিন ভালবাসি। হয়ত সে আপনার কাছ থেকে এটা শোনার আশায় আছে । আর যদি না বলে তবে ক্ষতি কি ভালবাসলে পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই । কিন্তু তাকে জানাতে তো পারলেন এটাই বা কম কিসের?)

লিখেছেন-Zannatun Naeem Keya