তখন এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ। কোচিং শুরু করবো ভর্তি পরীক্ষার জন্যে। ঠিক করতে পারছিলাম না কোথায় কোচিং করা যায়। যখন ঠিক করলাম, তখন কিছুটা দেরিও হয়ে গেছে। এক ভাইয়া বেশ ভালো পড়ান, তার কাছে যেয়ে বললাম, পড়তে চাই। সমস্যা হলকোন ব্যাচেই জায়গা নেই। নতুন একটা ব্যাচ শুরু হয়েছে, সেই ব্যাচের বেশিরভাগই মেয়ে। ভাইয়া কোন উপায়ন্তর না দেখে আমাকে সেই ব্যাচেই ঢুকিয়ে দিলেন।
সুবোধ বালকের মতো আমার কোচিং কাল শুরু হল। কয়েকদিনের মাঝেই টপাটপ কয়েকটা পরীক্ষায় বেশ ভালো করে ফেললাম। প্রতিদিন পরীক্ষায় সবার উপরে থাকার অদম্য আগ্রহ মাথা চারা দিয়ে কেন উঠেছিল জানিনা। এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, কি আতেলটাই না ছিলাম!! আর এখন?? এখনকার কথা না বলাই ভালো!!!
অবশ্য রমণী প্রধান ব্যাচে থেকে তাদের চেয়ে বেশি পাওয়ার আনন্দ পুরাপুরি পৈশাচিক। আমার পড়াশুনার আগ্রহ তিনগুন বেড়ে গেলো। তার একভাগ ও যদি এখন থাকতো! ইশ,ভাবতেও দুঃখ লাগে!!
যাই হোক, এখনকার কথা বলে লাভ নেই। বরং গল্পে ফেরত যাই। রমণীপ্রধান ব্যাচে থাকলে যা হয় আর কি, কাউকেই চোখে লাগেনা। এমনসময় একদিন ব্যাচের এক সুন্দরী ললনা আমার কাছে এসে উপস্থিত হইলেন। কয়দিন ধরেই খেয়াল করছিলাম,রমণীর ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার না!! ব্যাচের বাকি যে দুটো ছেলে ছিল, তারাও আমাকে বার বার খোঁচাত এই বলে যে উনি নাকি আমার প্রতি একটু অনুরক্ত। আমি তাই একটু দূরে দূরে চলতাম। কিন্তু যা ভয় করেছিলাম, তাই হল।
সুন্দরী এসেই শুধালেন -
“এ্যাই শোন, তুমি ইংলিশ গ্রামার কোন বই থেকে পড়?”
মনে
মনে ভাবলাম বলে দেই যে-ইংলিশ গ্রামার ওরকম ভাবে কোন বই থেকে ঘটা করে পড়া
হয়না। পরক্ষনেই ভাবলাম- এটা বলার পর যে প্রশ্নগুলি শুনতে হতে পারে, তা হল-
“তাহলে এতো বেশি নম্বর পাও কি করে!!!?”
“দৈনিক কয় ঘণ্টা লেখা পড়া করো?”
“না পড়ে গ্রামার পারলে তো তোমার বেসিক নিশ্চয়ই ভালো, এতো ভালো বেসিক কি করে হল?”
এরকম
প্রশ্ন করে ফেললে আমি খুব বিপদে পড়ে যাবো। কারন এর কোনটারই উত্তর আমার
জানা নেই। তাই প্রশ্নবাণের হাত থেকে বাচার জন্য ঠাস করে বলে দিলাম-
“এইতো, মহিউদ্দিন-কাসেম এর বইটা থেকে গ্রামার পড়ি। কেন?”
রমণী কইলেন-
“ও, শোন, আমার বইটা না উই পোকায় কেটেছে। তুমি কয়েকদিনের জন্যে তোমার বইটা আমাকে একটু ধার দিতে পারবে?”
(আশ্বস্ত হলাম শুনে, খালি বইই তো চাইছে,আর তো কিছুনা।)“ হ্যা হ্যা,অবশ্যই। দিতে পারবো।“
যদিও আমার এই বিনয়ী উত্তরই বোধহয় কাল হল।
“এ্যাই শোন, তোমার ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে?”
সেরেছে!!! প্রথমে বই, পরে ফোন নাম্বার!!! তার পরে আর কি চাইবে তা ভেবে মন শংকিত হল।
“ক্যান? ফোন নাম্বার দিয়ে কি হবে?”
“না মানে, তুমি যদি ভুলে যাও আনতে, তাই রাতে মনে করিয়ে দিতাম আর কি।“
“না না !!! আমার ভুল হবে না আমি ঠিক নিয়ে আসবো , চিন্তা করোনা।” এই বলে ভুজুং ভাজুং দিয়ে সটকে পড়লাম।
বাসায় এসেই সবার আগে ব্যাগে বই ভরলাম। কোনোমতে ভুলে গেলে বিশাল দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে!!!দুর্ঘটনা ঘটাতে চাই না। এমন অবস্থা যে নাও বলতে পারিনা, বলবে-“ভালো ছাত্র, তাই দেমাগে তোমার মাটিতে পা পড়েনা।”
কি যে অবস্থা!!! :s
পরের দিন রমণীর আগমনের সাথে সাথেই তার হাতে বইখানা ট্রান্সফার করলাম। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছিলাম, আবার কি না কি বলে বসে!
বই পেয়ে রমণী আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল- “আমি তোমাকে দু দিনের মাঝেই বইটা ফেরত দিবো , চিন্তা করোনা , তোমাকে অনেক থ্যাংকস ।
ইয়ে, তবে তুমি আমার ফোন নাম্বার টা রাখতে পারো। ”
আবারো ফোন নাম্বার !!! আমি আকাশ থেকে পড়লাম – “তোমার ফোন নাম্বার রেখে কি হবে ? ”
“না মানে , এবার যদি আমি বইটা আনতে ভুলে যাই- রমণী বললেন,তাহলে তুমি মনে করিয়ে দিতে পারবা।”
“না না, আমার বই লাগবেনা ওটা, মাথা নাড়লাম আমি !!! আমার আরেকটা বই আছে।”(আসলে বই নাই , দরকার হলে কিনে নিবো একটা তবু মাফ চাই)
পরপর দুবার ব্যর্থ হয়ে রমণী চরম অপমানিত বোধ করলেন বোধহয়।
রমণীর লাস্যময়ী দৃষ্টি ক্রমেই বিষদৃষ্টিতে রুপান্তরিত হইলো। আর কিছু না বলে নিজের বেঞ্চে ফেরত যেয়ে হাঁড়ির মতো মুখ করে বসে রইলো।
এই ঘটনায় ব্যাচের বাকি রমণীরা যে বিশেষ পুলকিত হয়েছিলো, তা পরে বেশ বুঝেছি। তাদের হাসাহাসির জন্য রমণী বেশ কয়েক সপ্তাহ অনুপস্থিত থাকলেন। পরে অবশ্য বই একটা কিনতেই হয়েছিলো আমার। :p
১৫ দিন পরে পরীক্ষা দিচ্ছি, এমন সময় বেঞ্চে ঠাস করে কোন একটা ভারী বস্তু অবতরন করলো। চেয়ে দেখি , সুন্দরী হন হন করে হাটা দিয়েছেন। বইখানা তার মালিকের কাছে আবারো ফেরত আসলো।
-তারপর? তারপরে কি হল?
তারপরে যা হওয়ার তাই হল। কেউ তো কারো জন্য সারাজীবন বসে থাকবেনা। কিছুদিন পরে আমার এক বন্ধুর সাথে উইপোকা সুন্দরীর প্রেম হয়ে গেলো।
-তারপর?
তারপর, তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।
এটা
কোন কষ্টের গল্প নয়। এখানে কোন বিচ্ছেদও নেই। যে আমার জীবনে আসেইনি কখনো
তার সাথে বিচ্ছেদ কি করে হয়? ভালোবাসা কাকে বলে, তখনো জানতাম না। হয়তো
তখনো শিখিনি কিভাবে ভালবাসতে হয়। হয়তো ভালবাসতে শিখিনি বলেই এই গল্পের
শেষে কোন দুঃখ নেই। পরে অবশ্য জেনেছিলাম ভালোবাসা কাকে বলে। সেটা অন্য
গল্প। আরেকদিন বলবো।
অনেক
বছর পার হয়ে গেছে। আমার বন্ধুর প্রতি উইপোকা সুন্দরীর ভালোবাসা এতটুকুও
কমেনি। আমার বন্ধুও তার প্রেয়সীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে। আমি দুর
থেকে আমার বন্ধু আর উইপোকা সুন্দরীকে দেখি।
তাদের ভালোবাসা দেখতে আমার বড় ভালো লাগে।