আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

ভাগ বসানো মেয়ে....

ভাগ বসানো মেয়ে....

আমি যে কলেজ টায় পড়তাম সেটা ছিল স্কুল এন্ড
কলেজ। সেদিন ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের
মহড়া চলছিল, মহড়া দেখতে আমার মত আর
অনেকে হাজির।
অডিটরিয়ামে কি একটা সেমিনার চলছিল তাই
বানিজ্য ভবনের ছোট্ট ক্লাসটাই মহড়া হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি ই শেষে আসলাম
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার পিঁছু পিঁছু আরও
একটি মেয়ে আসল, বসার জায়গা নেই, আমি ছোট্ট
একতা ধুলোমাখা বেঞ্চ পেলাম
ঝেঁড়েঝুঁড়ে বসে পড়লাম। মেয়েটি বসার কোন
জায়গা না পেয়ে দাড়িয়ে আছে, আমি কি বলব
পাশে বসতে? আবার কি না কি মনে করে?
ভাবতে লাগলাম্, অবশেষে বললাম- এই
যে আপনি চাইলে আমার পাশে বসতে পারেন,
আমার বলতে দেরী হল মেয়েটির বসতে দেরী হলনা, একটা ধন্যবাদ দিলনা।
মহড়া দেখার পাশাপাশি আঁড়চোঁখে আমাকে ও
দেখছিল, আমি যে দেখছিলামনা তা না,
তাইতো কয়েকবার চোঁখাচোঁখি হয়ে গেল। আমার
সিটে ভাগ বসিয়ে পুরো মহড়াটাই দেখল অথচ
আমার সাথে একটা কথাও বললনা। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি, এসময়
টা তে রিক্সা পাওয়া অনেক কষ্টকর।
অবশেষে একজন কে আসতে দেখে আমি ডাক
দিয়ে থামতে বললাম, পিছন থেকে আরও কে একজন
থামতে বলল, ফিরে দেখি সেই মেয়েটি। যেহেতু আমি আগে ডেকেছি তাই আমি পেলাম
রিক্সাটি, মেয়েটি হতাশ
ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। হতাশ হবারই কথা এ
সময় টা তে রিক্সা পেতে বহু হিমশিম
খেতে হবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে বসল,
- সজীব ভাইয়া, আমাকে কি নেয়া যাবে সাথে?
আমিতো থ বনে গেলাম তার মুখে আমার নাম শুনে,
- আপনি আমাকে চিনেন?
- না চেনার কি আছে? আপনাদের বাসার তিন
তলায় তো থাকি আমরা, নতুন এসেছি, আপনি চিনবেন কিভাবে সারাদিন তো বই
নিয়ে রুমেই পড়ে থাকেন্।
- আচ্ছা বসেন, আমি তাকে আমার পাশে বসার জন্য
ভাগ দিয়ে দিলাম। বাসায় পৌছলাম দুজনে। সুমির কথা বলছি, সে ক্লাস নাইনে পড়ে মাত্র,
আমাদের বাসায় এসেছে গত
মাসে আগে আশেপাশে কোথায় জানি থাকত। আমি ছোট বেলা থেকেই ঘরকুনো, আমার
রুমটা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মনে হয়,
বেশির ভাগ সময় আমার খাবার আম্মু
রুমে নিয়ে আসে। তাই নতুন ভাড়াটিয়া কে এল
কে গেল আমি জানিওনা। এরপর থেকে প্রায় আমার
সাথে আসা কিংবা যাওয়া হয়ে যেত কলেজে।
আমাদের বাসায় ও আসা বেড়ে গেছে সুমির,
আম্মুকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করত, আম্মু ও
ওর ভক্ত হয়ে গেছে দেখলাম। শীতকালে চিতই পিঠা টা আমার খুব প্রিয়, তবে ২
টার বেশি খেতে পারিনা। সেদিন আমার
রুমে আম্মু নাস্তা রেখে গেল, দেখি একটা মাত্র
পিঠা, মাকে বললাম একটা কেন? মা বললেন, ২
টাই রেখেছিলাম
একটা সুমি এসে খেয়ে ফেলেছে। দেখেন তো কেমন লাগে ? শেষ পর্যন্ত দেখি এই
মেয়ে আমার খাবারেও ভাগ বসাতে শুরু করেছে। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন শুনলাম আমার
রুমে এসে আমার অনুপস্থিতে আমার ল্যাপটপ, বই
নিয়ে ঘাটাঘাটি করে.. এইচ,এস,সি পরীক্ষার পর আমার
সেনাবাহীনি তে চান্স মিলে গেল, চট্টগ্রামের
ভাটিয়ারি তে চলে গেলাম ট্রেনিং এ, মা আমার
একা হয়ে গেলেন, সুমি হয়ে উঠলো আম্মুর একমাত্র
বন্ধু, সহযোগী সব কিছু। ট্রেনিং এ থাকাকালীন একদিন ফোন করলাম,
সুমি ই ধরল ফোনটা। - আন্টির শরীর খারাপ, তাই
আমি রান্না টা করে দিচ্ছি, আংকেল
এখনো আসেনি বাসায়।-সুমি, আমার মায়ের
দিকে একটু খেয়াল রেখ,
- আবার আমাকে খোঁচা দিবেন না তো আপনার মা'র
ভাগ বসাচ্ছি বলে? - না, দিবনা। মা 'র সাথে কথা হলেই শুধু সুমি'র কথা বলে,
আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা সুমি ঠিকই আমার
মা'র ভাগটাও নিয়ে নিয়েছে। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা, আমার
পোষ্টিং তখন রাঙামাটি। হঠাৎ খবর আসল আম্মু
অসুস্থ। সি,ও থেকে ছুটি মিলার পর
আমি ছুটে চললাম বাড়ির দিকে, একদম
বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া লাগেনি, আম্মু কে সদর
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোট্ট একটা অপারেশন করা হয়েছে আমি জানতাম না,
আমাকে জানানো হয়নি। রক্তক্ষরণ হয়েছে আম্মুর্, রক্তও দেয়া হয়েছে।
সুমি নাকি আম্মুর জন্য রক্ত দিয়েছে। সুমির
প্রতি কেন জানি মাথা নত
হয়ে আসতে থাকে আমার। আমাদের কেউ না অথচ
সব কিছুতেই আছে। এতদিন ভাবতাম শুধু ভাগ
নিয়ে যাচ্ছে আজ দেখলাম মেয়েটি ভাগ দিতেও জানে। আমার আম্মুর শরীরের রক্তেও এখন তার
ভাগ আছে। আম্মুর অপারেশন পর একদম দূর্বল হয়ে পড়েছেন।
কাজকর্ম তো দূরে থাক তাকে দেখতেও একজন
লাগে, সুমির এইচ,এস,সি, পরীক্ষা শেষ, তাই তার
অবসর থাকায় সে ই দেখছে আম্মু কে। আমার বিয়েটা একদম জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে,
মেয়ে দেখা হচ্ছে, আম্মুর কাছে ঘুরেফিরে সুমির
কথায় শুনছি, শেষ পর্যন্ত- আমার সব কিছুতেই
ভাগ বসানো মেয়েটিকেই ঠিক করা হল আমার
জীবনের ভাগ বসানোর জন্য। বাসর রাতে সুমি কে বলা আমার প্রথম
কথা কি ছিল জানেন? 'মেয়ে, শেষ পর্যন্ত তুমি আমার জীবনেও ভাগ
বসালে'? তবে একটা জিনিসে তুমি না কেউ ই ভাগ
বসাতে পারবেনা, সেটা হচ্ছে তোমার
প্রতি আমার ভালবাসা। সুমি ঘোমটা টা একটু
সরিয়ে বলল- 'আমারো'। আমাদের দুজনের ভালবাসাবাসি চলতেই থাকে।
আমার আম্মু ও এতদিনের বন্ধু,
সহযোগী কে পুত্রবধু হিসেবে পেয়ে খুব খুশী। সুখ
দুঃখ ভাগাভাগি করেই আমাদের সংসার চলছে। জানেন? এ মুহূর্তে অনেক খূশি লাগছে আমার।
একটু আগে সুমি ফোন করে জানালো আমাদের
দুজনের ভালবাসায় ভাগ বসাতে একজন
অথিতি আসতে যাচ্ছে। রেশমা আন্টি, আম্মুর
খালাতো বোন, গাইনি ডাক্তার, একটু আগে আম্মু
আর সুমি তার চেম্বার থেকে আসল। এসেই আমাকে ফোন টা করল। পাঠক আপনারাও আসুন আমাদের সুখের
সংসারে ভাগ বসাতে, আমাদের নতুন অতিথির
নামটা ঠিক করে দিয়ে ।