আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২

না বলা ভালোবাসা

না বলা ভালোবাসা

কি যে হল অপুটার সে মনে হয় নিজে ও জানে না !! সেই কবে থেকে হেসেই যাচ্ছেছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়ে যে তারাএকি স্কুল থেকে পাস করে একি কলেজে পড়ে৫ মিনিট বলে পরে ১৫ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু এখন ও সে বলতে পারছে না শিমু কে তার মনের কথাকিভাবে বলবে বুঝতে পারছে নাশিমু অপুর দিকে থাকিয়ে আছেখুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তারমনে মনে বলছে গাধা একটা !! শিমু জানে অপু আসলে কি বলতে চাই! গত রাতে সে অপুর এসএমএস দেখে রীতিমতো হতবাকশিমু জানে তার পরিবার এসব মেনে নিবে নাকিন্তু সে ও তো অপু কে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসেতখনই শিমু সিদ্ধান্ত নেই অপুকে না করে দিবেশিমু ক্লাস আছে বলে চলে যেতে যাচ্ছেএমন সময় অপু বলে ফেলল, আমার এসএমএস এর উত্তরটা ? শিমু না বলে দেয়আমার পক্ষে সম্ভব নাপরে কথা হবেএখন আসি বাসায় গিয়ে শিমু অনেকক্ষণ ভাবলকি করবে বুঝতে পারছে নাকত ৩০ মিনিট ধরে অপু অনবরত কল করেই যাচ্ছেশিমু ফোন ধরছে নাঅপু ও কম না, নাছোড়বান্দার মত ফোন দিয়েই আছেঅবশেষে শিমু ফোন ধরলশিমু অপুকে বুঝাতে লাগল কেন তার পক্ষে সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব নাকিন্তু অপু শিমু কে ছাড়া কোন কিছু বুঝতে চাই নাশিমুর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে অপুকে না বলতেশিমু অপুকে ফোন দিতে নিষেধ করেএইভাবে কেটে যায় কিছু দিন
এর কিছুদিন পর শিমুর ভাই সব জানতে পারেশিমুর পরিবারের সবাই তাকে ভুল বুঝতে থাকেবাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেসামনে ফাইনাল এক্সাম, দিন দিন সে খুব ভেঙ্গে পরছে,কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে নাকেয়ার তো দূরে থাক, সান্ত্বনা দেবার মত কেউ নাই তারসবাই থেকে ও নাইবড়ই একা হয়ে গেছে সেআজকাল অপুর কথা খুব মনে পড়ে শিমুরসব তার ভুলকেন সে অপুকে ফিরিয়ে দিলখুব মেজাজ খারাপ হয় নিজের উপর তারসব কিছু ভুলে সে তার পড়াশোনায় মন দেয়রাতদিন সে পড়াশোনা করতেই থাকেএক্সাম শুরু হয়ে গেলশিমু একদিন খেয়াল করল অপু প্রতিদিন শিমুর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্যশিমু দেখে ও না দেখার মত থাকেএর মধ্যে HSC এক্সাম শেষ হয়ে গেলশহর ছেড়ে ঢাকা চলে আসার পালা চলে আসছে ২ জনেরইএই কয়েকদিনের মধ্যে শিমুর অস্তিত্ব জুড়ে অপু বসবাস শুরু করে কিন্তু সে অপু কে তার মনের কথা বলতে পারে না পরিবারের কথা ভেবে
গন্তব্য আলাদা২জনে চলছে ২ জনের রাস্তায়শিমু প্রথম সুযোগে অ্যাডমিশন হয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ারিং একিন্তু অপুর কিছু হল নাশিমুর ভার্সিটি লাইফ শুরু গেলএর মধ্যে শিমুর পরিচয় হয় আকাশ নামের এক ছেলের সাথেভার্সিটি লাইফে শিমুর বেষ্ট বন্ধুএভাবে কেটে যাই দুই দুইটি বছরআকাশের সাথে সময় কাটে এখন শিমুরআকাশ যে কখন তাকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারল নাশিমু আকাশকে বুঝাই যে সে তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন কিছু কোন দিন ভাবেই নি আর কোনদিন ভাবতেও পারবে নাআকাশ তাকে ভুল বুঝেএতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেআকাশ ভার্সিটি তে শিমুর কে জরিয়ে নানা রকম মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে বেড়াতে লাগলযা শিমুর অনেক কাছের মানুষ ও বিশ্বাস করতে লাগলশিমু দিনদিন একা হয়ে গেলশিমু মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়েছেশিমুর অপুকে খুব মনে পড়ে এখনওর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করেএইসব ভেবে ভেবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ল হসপিটালের সিটে সে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদেআবুল তাবুল কথা বলতে থাকেঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে শান্ত করা হতবাবা-মা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাইআস্তে আস্তে সে ঠিক হয়ে উঠতে থাকেহোস্টেলে ফিরে আসে সেনতুন করে সব কিছু শুরু করে সেএখন সে আগের মত চুপচাপ থাকে নাঅনেক কথা বলে সারাক্ষণ দুষ্টামি করে নিজেকে অনেক খুশি দেখাই সবার কাছেনিজেকে অনেক বেস্থ রাখতে চাইকিন্তু মনের গহীনে রাখা অপুর স্মৃতি ভুলতে পারে না কখনওসে শত বেস্ততার মাঝে ও অপুকে খুঁজে ফিরে বেড়ায়কিছুদিন পর শিমুর এক কলেজ বান্ধবী ইরার সাথে দেখা হয়তার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর খুঁজঅপু আর সে মেয়েটি ঢাকা ভার্সিটি তে এক সাথে পড়াশোনা করেওর কাছ থেকে অপুর নাম্বারটা নিলামএরপর কয়েকদিন কেটে গেলশিমু কি জানি কি ভেবে একদিন অপুকে কল দিয়ে বসেঐ পাশ দিয়ে হ্যালো শুনার পর শিমু কোন কথা বলতে পারে না, কথা যেন আঁটকে গেছেশিমু তার পরিচয় দেয়অপু খুশিতে কি বলবে বুঝতে পারছে নাএতদিন পর শিমু কেন কল দিল তা অপু বুঝতে পারছে নাএই ভাবে কয়েকদিন তাদের মধ্যে কথা হয়অপু শিমু কে দেখা করতে বলেশিমু প্রথমে না না করলে ও পরে অপুর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়TSC তে এক পড়ন্ত বিকেলে ২ জনে দেখা করেকেউ কোন কথা বলছে নাচুপচাপ বসে আছে শিমু জড়তা ভেঙ্গে কথা শুরু করেঅপু তুমি তো সেই আগের অপুই রয়ে গেছকথা বলতে লজ্জা পাও২ জনে অনেক কথা বলবশিমু এখন সারাদিন অপুর কথা ভাবেবলতে চাই অপুকে মনের না বলা কথা গুলোবলতে চাই সেই ছোট বেলা থেকে সে অপুকে কতটা ভালবাসেতার পরিবারের জন্য সে আর অপুকে হারাতে চাই নাইরার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নাইশিমু বুঝতে পারে এখনই তার মনের কথা বলার সময়এমন সময় অপু কল করেশিমু অপুর সাথে দেখা করতে চাইঅপু বলে আমি ও দেখা করতে বলার জন্য কল করেছিতোমার জন্য একটা surprise আছে শিমু মনে মনে ভাবে অপু কি আমাকে তার ভালোবাসার কথা আবার বলতে চাই... সে কি আমাকে এখন ও ভালোবাসেশিমু আজ অপুর সাথে দেখা করবেসে অপুর পছন্দের নীল শাড়ি পড়েছে , কপালে নীল টিপখোলা চুল, হাত ভর্তি সাদা চুড়িসব টুকু ভালোবাসা দিয়ে আজ অপুর জন্য সাজবে সেজীবনের ২২ টি বসন্ত একা কাটানোর পর আজ নিজেকে অপুর হাতে তুলে দিবেঅপুর হাত ধরে বাকি জীবনটা পার করে দিবে শিমু TSC তে আধা ঘণ্টা ধরে অপুর জন্য অপেক্ষা করছেঅপুটা যে কবে আসবেসময় সম্পর্কে এই ছেলেটার একটু ও খেয়াল থাকে নাআগে সম্পর্কটা হোক, তারপর ওকে আমি আমার মনের মত করে সাজাবোঅপুটা কেন যে আসছে না এতক্ষণএকটা মেয়েকে এতক্ষণ কেউ বসিয়ে রাখেআসুক তারপর মজা দেখাব এক বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনল অপুর জন্যএকটুপর অপু আসল সাথে একটি মেয়েঅপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেশিমু কিছু বুঝে উঠার আগে অপু মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অপুর বাগদত্তাকিছু দিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছেশিমু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে নাসমস্ত আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়ল তার মাথার উপরবুক ফেটে কান্না আসছে তারনির্বাক দৃষ্টিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেকিন্তু সে কিছু বলতে পারছে নাঅপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে পাগলের মত ছুটে চলে হোস্টেলে দিকেযাওয়ার পথে গোলাপ টি ফেলে দেয়নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল নাকান্না ছাড়া তার কোন কিছু করার নাইখুব বড় ভুল করে ফেলেছে সেতার ভুলে শাস্তি তার পেতেই হবেকেন সে আর আগে বুঝল নালোক লজ্জা আর পরিবার পরিবার করে মরলকেন সে অপুকে দূরে সরিয়ে রাখলদিন দিন সে ধুঁকে ধুঁকে
মরছেএখন সে তার লাইফে আর কাউকে যাই নাবাবা মা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে বিয়ে দিতে কিন্তু শিমু রাজি হয় নাঅপুর স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাইশিমু পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে চাইসবায়কে নিষেধ করে দেয় যেন তাকে কেউ না খুঁজেশিমু কে আর খুঁজে পাওয়া গেল না
১০ বছর পর জানা গেল সে একটি অনাথ আশ্রমে থাকেবাচ্চা দের সেবা যত্ন লেখাপড়া করায়তার একটি ৭ বছরের বাচ্চা আছে, যাকে সে ট্রেন ষ্টেশনে কুঁড়িয়ে পেয়েছেবাকি জীবন টা এখানে কাটিয়ে দিতে চাই শিমুবুকের মাঝে একটি কষ্ট এখন ও বয়ে বেড়ায় সেসে অপুকে বলতে পারে নি তার না বলা ভালোবাসাএখন ও রাত হলে শিমু অপুর ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকেকখন যে চোখের কোণে জল চলে আসে বুঝতেই পারে না...
লিখেছেনঃ রোকসানা