না বলা ভালোবাসা
কি যে হল অপুটার সে মনে হয় নিজে ও জানে না !! সেই কবে থেকে হেসেই যাচ্ছে। ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়ে যে তারা। একি স্কুল থেকে পাস করে একি কলেজে পড়ে।৫ মিনিট বলে পরে ১৫ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু এখন ও সে বলতে পারছে না শিমু কে তার মনের কথা। কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। শিমু অপুর দিকে থাকিয়ে আছে। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। মনে মনে বলছে গাধা একটা !! শিমু জানে অপু আসলে কি বলতে চাই! গত রাতে সে অপুর এসএমএস দেখে রীতিমতো হতবাক। শিমু জানে তার পরিবার এসব মেনে নিবে না। কিন্তু সে ও তো অপু কে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসে।তখনই শিমু সিদ্ধান্ত নেই অপুকে না করে দিবে। শিমু ক্লাস আছে বলে চলে যেতে যাচ্ছে। এমন সময় অপু বলে ফেলল, আমার এসএমএস এর উত্তরটা ? শিমু না বলে দেয়। আমার পক্ষে সম্ভব না। পরে কথা হবে। এখন আসি। বাসায় গিয়ে শিমু অনেকক্ষণ ভাবল। কি করবে বুঝতে পারছে না। কত ৩০ মিনিট ধরে অপু অনবরত কল করেই যাচ্ছে। শিমু ফোন ধরছে না। অপু ও কম না, নাছোড়বান্দার মত ফোন দিয়েই আছে। অবশেষে শিমু ফোন ধরল। শিমু অপুকে বুঝাতে লাগল কেন তার পক্ষে সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব না। কিন্তু অপু শিমু কে ছাড়া কোন কিছু বুঝতে চাই না।শিমুর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে অপুকে না বলতে। শিমু অপুকে ফোন দিতে নিষেধ করে।এইভাবে কেটে যায় কিছু দিন।
এর কিছুদিন পর শিমুর ভাই সব জানতে পারে। শিমুর পরিবারের সবাই তাকে ভুল বুঝতে থাকে। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। সামনে ফাইনাল এক্সাম, দিন দিন সে খুব ভেঙ্গে পরছে,কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কেয়ার তো দূরে থাক, সান্ত্বনা দেবার মত কেউ নাই তার। সবাই থেকে ও নাই। বড়ই একা হয়ে গেছে সে। আজকাল অপুর কথা খুব মনে পড়ে শিমুর। সব তার ভুল। কেন সে অপুকে ফিরিয়ে দিল। খুব মেজাজ খারাপ হয় নিজের উপর তার। সব কিছু ভুলে সে তার পড়াশোনায় মন দেয়। রাতদিন সে পড়াশোনা করতেই থাকে। এক্সাম শুরু হয়ে গেল। শিমু একদিন খেয়াল করল অপু প্রতিদিন শিমুর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য। শিমু দেখে ও না দেখার মত থাকে।এর মধ্যে HSC এক্সাম শেষ হয়ে গেল। শহর ছেড়ে ঢাকা চলে আসার পালা চলে আসছে ২ জনেরই। এই কয়েকদিনের মধ্যে শিমুর অস্তিত্ব জুড়ে অপু বসবাস শুরু করে। কিন্তু সে অপু কে তার মনের কথা বলতে পারে না পরিবারের কথা ভেবে।
গন্তব্য আলাদা।২জনে চলছে ২ জনের রাস্তায়। শিমু প্রথম সুযোগে অ্যাডমিশন হয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। কিন্তু অপুর কিছু হল না। শিমুর ভার্সিটি লাইফ শুরু গেল। এর মধ্যে শিমুর পরিচয় হয় আকাশ নামের এক ছেলের সাথে। ভার্সিটি লাইফে শিমুর বেষ্ট বন্ধু। এভাবে কেটে যাই দুই দুইটি বছর। আকাশের সাথে সময় কাটে এখন শিমুর। আকাশ যে কখন তাকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারল না। শিমু আকাশকে বুঝাই যে সে তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন কিছু কোন দিন ভাবেই নি আর কোনদিন ভাবতেও পারবে না। আকাশ তাকে ভুল বুঝে। এতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। আকাশ ভার্সিটি তে শিমুর কে জরিয়ে নানা রকম মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে বেড়াতে লাগল। যা শিমুর অনেক কাছের মানুষ ও বিশ্বাস করতে লাগল।শিমু দিনদিন একা হয়ে গেল। শিমু মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়েছে। শিমুর অপুকে খুব মনে পড়ে এখন। ওর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে। এইসব ভেবে ভেবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। হসপিটালের সিটে সে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদে।আবুল তাবুল কথা বলতে থাকে।ঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে শান্ত করা হত। বাবা-মা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাই। আস্তে আস্তে সে ঠিক হয়ে উঠতে থাকে। হোস্টেলে ফিরে আসে সে। নতুন করে সব কিছু শুরু করে সে। এখন সে আগের মত চুপচাপ থাকে না। অনেক কথা বলে সারাক্ষণ দুষ্টামি করে। নিজেকে অনেক খুশি দেখাই সবার কাছে। নিজেকে অনেক বেস্থ রাখতে চাই। কিন্তু মনের গহীনে রাখা অপুর স্মৃতি ভুলতে পারে না কখনও। সে শত বেস্ততার মাঝে ও অপুকে খুঁজে ফিরে বেড়ায়। কিছুদিন পর শিমুর এক কলেজ বান্ধবী ইরার সাথে দেখা হয়। তার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর খুঁজ। অপু আর সে মেয়েটি ঢাকা ভার্সিটি তে এক সাথে পড়াশোনা করে। ওর কাছ থেকে অপুর নাম্বারটা নিলাম।এরপর কয়েকদিন কেটে গেল। শিমু কি জানি কি ভেবে একদিন অপুকে কল দিয়ে বসে। ঐ পাশ দিয়ে হ্যালো শুনার পর শিমু কোন কথা বলতে পারে না, কথা যেন আঁটকে গেছে। শিমু তার পরিচয় দেয়। অপু খুশিতে কি বলবে বুঝতে পারছে না। এতদিন পর শিমু কেন কল দিল তা অপু বুঝতে পারছে না। এই ভাবে কয়েকদিন তাদের মধ্যে কথা হয়। অপু শিমু কে দেখা করতে বলে। শিমু প্রথমে না না করলে ও পরে অপুর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়। TSC তে এক পড়ন্ত বিকেলে ২ জনে দেখা করে। কেউ কোন কথা বলছে না। চুপচাপ বসে আছে। শিমু জড়তা ভেঙ্গে কথা শুরু করে। অপু তুমি তো সেই আগের অপুই রয়ে গেছ। কথা বলতে লজ্জা পাও। ২ জনে অনেক কথা বলব। শিমু এখন সারাদিন অপুর কথা ভাবে। বলতে চাই অপুকে মনের না বলা কথা গুলো। বলতে চাই সেই ছোট বেলা থেকে সে অপুকে কতটা ভালবাসে। তার পরিবারের জন্য সে আর অপুকে হারাতে চাই না। ইরার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নাই। শিমু বুঝতে পারে এখনই তার মনের কথা বলার সময়।এমন সময় অপু কল করে। শিমু অপুর সাথে দেখা করতে চাই। অপু বলে আমি ও দেখা করতে বলার জন্য কল করেছি। তোমার জন্য একটা surprise আছে। শিমু মনে মনে ভাবে অপু কি আমাকে তার ভালোবাসার কথা আবার বলতে চাই... সে কি আমাকে এখন ও ভালোবাসে। শিমু আজ অপুর সাথে দেখা করবে। সে অপুর পছন্দের নীল শাড়ি পড়েছে , কপালে নীল টিপ। খোলা চুল, হাত ভর্তি সাদা চুড়ি।সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে আজ অপুর জন্য সাজবে সে। জীবনের ২২ টি বসন্ত একা কাটানোর পর আজ নিজেকে অপুর হাতে তুলে দিবে। অপুর হাত ধরে বাকি জীবনটা পার করে দিবে। শিমু TSC তে আধা ঘণ্টা ধরে অপুর জন্য অপেক্ষা করছে। অপুটা যে কবে আসবে। সময় সম্পর্কে এই ছেলেটার একটু ও খেয়াল থাকে না। আগে সম্পর্কটা হোক, তারপর ওকে আমি আমার মনের মত করে সাজাবো। অপুটা কেন যে আসছে না এতক্ষণ। একটা মেয়েকে এতক্ষণ কেউ বসিয়ে রাখে। আসুক তারপর মজা দেখাব । এক বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনল অপুর জন্য। একটুপর অপু আসল সাথে একটি মেয়ে। অপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শিমু কিছু বুঝে উঠার আগে অপু মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অপুর বাগদত্তা। কিছু দিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছে। শিমু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সমস্ত আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়ল তার মাথার উপর। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। নির্বাক দৃষ্টিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না। অপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে পাগলের মত ছুটে চলে হোস্টেলে দিকে। যাওয়ার পথে গোলাপ টি ফেলে দেয়। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। কান্না ছাড়া তার কোন কিছু করার নাই। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে। তার ভুলে শাস্তি তার পেতেই হবে। কেন সে আর আগে বুঝল না। লোক লজ্জা আর পরিবার পরিবার করে মরল। কেন সে অপুকে দূরে সরিয়ে রাখল। দিন দিন সে ধুঁকে ধুঁকে
মরছে। এখন সে তার লাইফে আর কাউকে যাই না। বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে বিয়ে দিতে কিন্তু শিমু রাজি হয় না। অপুর স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। শিমু পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে চাই। সবায়কে নিষেধ করে দেয় যেন তাকে কেউ না খুঁজে।শিমু কে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
১০ বছর পর জানা গেল সে একটি অনাথ আশ্রমে থাকে। বাচ্চা দের সেবা যত্ন লেখাপড়া করায়। তার একটি ৭ বছরের বাচ্চা আছে, যাকে সে ট্রেন ষ্টেশনে কুঁড়িয়ে পেয়েছে। বাকি জীবন টা এখানে কাটিয়ে দিতে চাই শিমু। বুকের মাঝে একটি কষ্ট এখন ও বয়ে বেড়ায় সে। সে অপুকে বলতে পারে নি তার না বলা ভালোবাসা। এখন ও রাত হলে শিমু অপুর ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। কখন যে চোখের কোণে জল চলে আসে বুঝতেই পারে না...
লিখেছেনঃ রোকসানা
কি যে হল অপুটার সে মনে হয় নিজে ও জানে না !! সেই কবে থেকে হেসেই যাচ্ছে। ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়ে যে তারা। একি স্কুল থেকে পাস করে একি কলেজে পড়ে।৫ মিনিট বলে পরে ১৫ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু এখন ও সে বলতে পারছে না শিমু কে তার মনের কথা। কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। শিমু অপুর দিকে থাকিয়ে আছে। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। মনে মনে বলছে গাধা একটা !! শিমু জানে অপু আসলে কি বলতে চাই! গত রাতে সে অপুর এসএমএস দেখে রীতিমতো হতবাক। শিমু জানে তার পরিবার এসব মেনে নিবে না। কিন্তু সে ও তো অপু কে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসে।তখনই শিমু সিদ্ধান্ত নেই অপুকে না করে দিবে। শিমু ক্লাস আছে বলে চলে যেতে যাচ্ছে। এমন সময় অপু বলে ফেলল, আমার এসএমএস এর উত্তরটা ? শিমু না বলে দেয়। আমার পক্ষে সম্ভব না। পরে কথা হবে। এখন আসি। বাসায় গিয়ে শিমু অনেকক্ষণ ভাবল। কি করবে বুঝতে পারছে না। কত ৩০ মিনিট ধরে অপু অনবরত কল করেই যাচ্ছে। শিমু ফোন ধরছে না। অপু ও কম না, নাছোড়বান্দার মত ফোন দিয়েই আছে। অবশেষে শিমু ফোন ধরল। শিমু অপুকে বুঝাতে লাগল কেন তার পক্ষে সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব না। কিন্তু অপু শিমু কে ছাড়া কোন কিছু বুঝতে চাই না।শিমুর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে অপুকে না বলতে। শিমু অপুকে ফোন দিতে নিষেধ করে।এইভাবে কেটে যায় কিছু দিন।
এর কিছুদিন পর শিমুর ভাই সব জানতে পারে। শিমুর পরিবারের সবাই তাকে ভুল বুঝতে থাকে। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। সামনে ফাইনাল এক্সাম, দিন দিন সে খুব ভেঙ্গে পরছে,কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কেয়ার তো দূরে থাক, সান্ত্বনা দেবার মত কেউ নাই তার। সবাই থেকে ও নাই। বড়ই একা হয়ে গেছে সে। আজকাল অপুর কথা খুব মনে পড়ে শিমুর। সব তার ভুল। কেন সে অপুকে ফিরিয়ে দিল। খুব মেজাজ খারাপ হয় নিজের উপর তার। সব কিছু ভুলে সে তার পড়াশোনায় মন দেয়। রাতদিন সে পড়াশোনা করতেই থাকে। এক্সাম শুরু হয়ে গেল। শিমু একদিন খেয়াল করল অপু প্রতিদিন শিমুর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য। শিমু দেখে ও না দেখার মত থাকে।এর মধ্যে HSC এক্সাম শেষ হয়ে গেল। শহর ছেড়ে ঢাকা চলে আসার পালা চলে আসছে ২ জনেরই। এই কয়েকদিনের মধ্যে শিমুর অস্তিত্ব জুড়ে অপু বসবাস শুরু করে। কিন্তু সে অপু কে তার মনের কথা বলতে পারে না পরিবারের কথা ভেবে।
গন্তব্য আলাদা।২জনে চলছে ২ জনের রাস্তায়। শিমু প্রথম সুযোগে অ্যাডমিশন হয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। কিন্তু অপুর কিছু হল না। শিমুর ভার্সিটি লাইফ শুরু গেল। এর মধ্যে শিমুর পরিচয় হয় আকাশ নামের এক ছেলের সাথে। ভার্সিটি লাইফে শিমুর বেষ্ট বন্ধু। এভাবে কেটে যাই দুই দুইটি বছর। আকাশের সাথে সময় কাটে এখন শিমুর। আকাশ যে কখন তাকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারল না। শিমু আকাশকে বুঝাই যে সে তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন কিছু কোন দিন ভাবেই নি আর কোনদিন ভাবতেও পারবে না। আকাশ তাকে ভুল বুঝে। এতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। আকাশ ভার্সিটি তে শিমুর কে জরিয়ে নানা রকম মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে বেড়াতে লাগল। যা শিমুর অনেক কাছের মানুষ ও বিশ্বাস করতে লাগল।শিমু দিনদিন একা হয়ে গেল। শিমু মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়েছে। শিমুর অপুকে খুব মনে পড়ে এখন। ওর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে। এইসব ভেবে ভেবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। হসপিটালের সিটে সে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদে।আবুল তাবুল কথা বলতে থাকে।ঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে শান্ত করা হত। বাবা-মা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাই। আস্তে আস্তে সে ঠিক হয়ে উঠতে থাকে। হোস্টেলে ফিরে আসে সে। নতুন করে সব কিছু শুরু করে সে। এখন সে আগের মত চুপচাপ থাকে না। অনেক কথা বলে সারাক্ষণ দুষ্টামি করে। নিজেকে অনেক খুশি দেখাই সবার কাছে। নিজেকে অনেক বেস্থ রাখতে চাই। কিন্তু মনের গহীনে রাখা অপুর স্মৃতি ভুলতে পারে না কখনও। সে শত বেস্ততার মাঝে ও অপুকে খুঁজে ফিরে বেড়ায়। কিছুদিন পর শিমুর এক কলেজ বান্ধবী ইরার সাথে দেখা হয়। তার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর খুঁজ। অপু আর সে মেয়েটি ঢাকা ভার্সিটি তে এক সাথে পড়াশোনা করে। ওর কাছ থেকে অপুর নাম্বারটা নিলাম।এরপর কয়েকদিন কেটে গেল। শিমু কি জানি কি ভেবে একদিন অপুকে কল দিয়ে বসে। ঐ পাশ দিয়ে হ্যালো শুনার পর শিমু কোন কথা বলতে পারে না, কথা যেন আঁটকে গেছে। শিমু তার পরিচয় দেয়। অপু খুশিতে কি বলবে বুঝতে পারছে না। এতদিন পর শিমু কেন কল দিল তা অপু বুঝতে পারছে না। এই ভাবে কয়েকদিন তাদের মধ্যে কথা হয়। অপু শিমু কে দেখা করতে বলে। শিমু প্রথমে না না করলে ও পরে অপুর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়। TSC তে এক পড়ন্ত বিকেলে ২ জনে দেখা করে। কেউ কোন কথা বলছে না। চুপচাপ বসে আছে। শিমু জড়তা ভেঙ্গে কথা শুরু করে। অপু তুমি তো সেই আগের অপুই রয়ে গেছ। কথা বলতে লজ্জা পাও। ২ জনে অনেক কথা বলব। শিমু এখন সারাদিন অপুর কথা ভাবে। বলতে চাই অপুকে মনের না বলা কথা গুলো। বলতে চাই সেই ছোট বেলা থেকে সে অপুকে কতটা ভালবাসে। তার পরিবারের জন্য সে আর অপুকে হারাতে চাই না। ইরার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নাই। শিমু বুঝতে পারে এখনই তার মনের কথা বলার সময়।এমন সময় অপু কল করে। শিমু অপুর সাথে দেখা করতে চাই। অপু বলে আমি ও দেখা করতে বলার জন্য কল করেছি। তোমার জন্য একটা surprise আছে। শিমু মনে মনে ভাবে অপু কি আমাকে তার ভালোবাসার কথা আবার বলতে চাই... সে কি আমাকে এখন ও ভালোবাসে। শিমু আজ অপুর সাথে দেখা করবে। সে অপুর পছন্দের নীল শাড়ি পড়েছে , কপালে নীল টিপ। খোলা চুল, হাত ভর্তি সাদা চুড়ি।সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে আজ অপুর জন্য সাজবে সে। জীবনের ২২ টি বসন্ত একা কাটানোর পর আজ নিজেকে অপুর হাতে তুলে দিবে। অপুর হাত ধরে বাকি জীবনটা পার করে দিবে। শিমু TSC তে আধা ঘণ্টা ধরে অপুর জন্য অপেক্ষা করছে। অপুটা যে কবে আসবে। সময় সম্পর্কে এই ছেলেটার একটু ও খেয়াল থাকে না। আগে সম্পর্কটা হোক, তারপর ওকে আমি আমার মনের মত করে সাজাবো। অপুটা কেন যে আসছে না এতক্ষণ। একটা মেয়েকে এতক্ষণ কেউ বসিয়ে রাখে। আসুক তারপর মজা দেখাব । এক বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনল অপুর জন্য। একটুপর অপু আসল সাথে একটি মেয়ে। অপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শিমু কিছু বুঝে উঠার আগে অপু মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অপুর বাগদত্তা। কিছু দিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছে। শিমু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সমস্ত আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়ল তার মাথার উপর। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। নির্বাক দৃষ্টিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না। অপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে পাগলের মত ছুটে চলে হোস্টেলে দিকে। যাওয়ার পথে গোলাপ টি ফেলে দেয়। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। কান্না ছাড়া তার কোন কিছু করার নাই। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে। তার ভুলে শাস্তি তার পেতেই হবে। কেন সে আর আগে বুঝল না। লোক লজ্জা আর পরিবার পরিবার করে মরল। কেন সে অপুকে দূরে সরিয়ে রাখল। দিন দিন সে ধুঁকে ধুঁকে
মরছে। এখন সে তার লাইফে আর কাউকে যাই না। বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে বিয়ে দিতে কিন্তু শিমু রাজি হয় না। অপুর স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। শিমু পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে চাই। সবায়কে নিষেধ করে দেয় যেন তাকে কেউ না খুঁজে।শিমু কে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
১০ বছর পর জানা গেল সে একটি অনাথ আশ্রমে থাকে। বাচ্চা দের সেবা যত্ন লেখাপড়া করায়। তার একটি ৭ বছরের বাচ্চা আছে, যাকে সে ট্রেন ষ্টেশনে কুঁড়িয়ে পেয়েছে। বাকি জীবন টা এখানে কাটিয়ে দিতে চাই শিমু। বুকের মাঝে একটি কষ্ট এখন ও বয়ে বেড়ায় সে। সে অপুকে বলতে পারে নি তার না বলা ভালোবাসা। এখন ও রাত হলে শিমু অপুর ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। কখন যে চোখের কোণে জল চলে আসে বুঝতেই পারে না...
লিখেছেনঃ রোকসানা