আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)
লিখেছেনঃ Tony Khan

(১)

মুমুর মুখটা হঠাৎ এত সুন্দর লাগছে কেন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন ভোরের সতেজ দুব্ল ঘাসের উপর ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। মাথার এলোমেলো চুলের কিছুটা কপালের ঘামের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মুখে অমৃতের হাসি নিয়ে রক্ত শুন্য চিকন ঠোট হাল্কা ফাঁক হয়ে রয়েছে। তার মধ্য দিয়ে শ্বেত পাথরের মত সাদা দাঁতের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মোহনীয় একটি দৃশ্য। মুমু আমার বউ। এখন ও ঘুমাচ্ছে। শান্তির ঘুম। এই কিছুক্ষণ আগে ওকে আমি খুন করেছি। ঠান্ডা মাথায় খুন।

প্রথমে অবশ্য ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু পরে আর তা করেনি। ঘুমন্ত মুমুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দম বন্ধ করে মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারলে ওর সুন্দর মুখটা দেখব কিভাবে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ওর সুন্দর মুখটা কেমন দেখায় সেটা দেখব বলে বালিশ চাপা দিয়ে মারার পরিকল্পনাটা বাদ দিয়ে গলা টিপে মারার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে করে অন্তত দুজন দুজনার মুখটা তো দেখতে পাব। গলা টিপে ধরার সাথে সাথে ও চমকে উঠেছিল। দাপাদাপি করতে লাগল, নিস্বাসের জন্য মুখ হা হয়ে গিয়েছিল । হাতের চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার জোগাড় হল । মুখের চামড়া কুঁচকে বিকৃত হয়ে গেল । ঠোট দুটি লোভনীয় ভাবে নড়াচড়া শুরু করল হয়ত কিছু বলার জন্যে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না পরম ভালোবেসে চুমু খেলাম । ধীরে ধীরে ওর শরীর অসার হয়ে আসতে লাগল । চোখের মনি ঘোলা হয়ে গেল । হাহ........

চলে যাচ্ছে আমার মুমু । তারপর শান্ত হয়ে গেল ও । মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে ওর মুখটা দেখে মায়া হল আমার ।

আজই আমাদের বিয়ে হয়েছে। টানা তিন বছর প্রেম করার পর। বাসর রাতে সেকি কথা মুমুর। আনন্দে ও টগবগ করছিল।

এতদিন ধরে দেখা সপ্নগুলো কিভাবে সত্যি করবে তা নিয়ে ও খুব এক্সাইটেড ছিল। কিভাবে ঘর সাজাবে, কিচেন কেমন হবে, ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম ইত্যাদি কেমন হবে তার একটা বিশদ পরিকল্পনা ছিল ওর। এমনকি আমাদের ছেলের নামও ঠিক করে রেখেছিল। অবশ্য ও মনে মনে ভেবে শিওর ছিল যে ছেলেই হবে আমাদের । ও বলত ছেলেটা স্বভাবে আমার মতই সৎ হবে । যার বুকের গভীরতা হবে অসীম । যে মানুষকে ভালবাসবে বুক উজার করে । তাই ঠিক করেছিল ছেলের নাম রাখবে আকাশ । কিন্তু হায় মানুষের সব স্বপ্ন পুরণ হয় না ।

(২)

-হ্যালো পুলিশ স্টেশন।
-ইয়েস।
-ওসি সাহেব বলছেন।
-জ্বী বলছি। বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি।
-মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।
-হোয়াট, কি বললেন?
-জ্বী ঠিকই শুনছেন। কিছুক্ষণ আগে আমি আমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছি। বাসর ঘরে শুয়ে আছে সে ।
-কি বলছেন।
-জ্বী আপনি ঠিকই শুনছেন।
-আপনি এখন কোথায়।
-বাড়িতেই আছি।
-মানে?
-মানে আমি আমার স্ত্রীর পাশেই আছি। আপনি অযথা দেরি না করে জলদি আসুন।
-ঠিক আছে আমি আসছি।
-ঠিকানা নেবেন না।
-ও হ্যা তাইতো, আচ্ছা বলেন।
-৯৪/ডি, গ্রীন রোড।

(৩)

পরের দিন পত্রিকায় একটি নিউজ বের হলো।

স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা। গতকাল মধ্যরাত্রে শহরের গ্রীন রোডস্থ একটি বাসায় নববিবাহীতা স্ত্রীকে খুন করে স্বামী আত্মহত্যা করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে পৌছালে বাসর ঘরে নববধূর লাশ কোলে নিয়ে স্বামীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর নিজের হাতের রগ কেটে সে আত্মহত্যা করে। এলাকাবাসীকে জিঙ্গাসাবাদ করে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নিকটস্থ হাতপাতালের মর্গে লাশ সরিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

[গল্পটি অনেকটা রহস্য গল্প হলেও বাস্তব জিবনে এমনি অনেক রহস্য আমাদের জিবনেও আসে, প্রতিটি সম্পূর্ণ গল্প আমাদের যা কিছু শিখাতে পারে, অসমাপ্ত গল্প হয়তো তার থেকেও বেশি কিছুই শিখায় আমাদেরকে]

এটা কোন গল্প নয়

এটা কোন গল্প নয়
লিখেছেনঃ- শেষ রাতের আঁধার

ডাক্তারের সামনে রিপোর্ট হাতে বসে আছে রুম্মান। পাশে মা। মাত্রই কাল হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেল রুম্মান। বড় ধরণের কোন অসুখ হয়ত। তাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেবার পর আলাদাভাবে ডাক্তারের চেম্বারে দেখা করতে বলেছে। অসুখ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত লাগছে না রুম্মানকে। কিন্তু মায়ের মুখে রাজ্যের চিন্তা। কি হল ছেলেটার? ডাক্তাররা কেউ কিছু বলছে না। আলাদাভাবে এখানে আসতে বলল। ডাক্তার সাহেব কি যেন লিখছেন। চোখে চশমা। কিছু কিছু ডাক্তার অল্প বয়সেই বৃদ্ধ হয়ে যায়, মাথায় বিশাল টাক পরে যায়। কিন্তু এই ডাক্তারের মাথা ভর্তি চুল। চশমা দেখে মনে হয় না পাওয়ার অনেক বেশি। নিশ্চয় খুব ফাকিবাজ ডাক্তার। পড়াশুনা কম করেছে তাই এমন।
ডাক্তার সাহেব মুখ তুলে তাকালেন। রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বললেন - কি খবর এখন? শরীর ভাল তো তোমার?
- জি।

ডাক্তাররা রুগিদের বেশিরভাগ সময় আপনি করে বলেন। কিন্তু এই ডাক্তার রুম্মানকে প্রথম থেকে তুমি করে ডাকছে। হাসপাতালে দেখার সময়ও। চেম্বারেও।
ডাক্তার সাহেবের গম্ভীর মুখটা একটু হাসি হাসি করে বললেন- দাও রিপোর্টটা দাও। দেখি তো।

রুম্মান হাত বাড়িয়ে রিপোর্টটা দিল। চশমাটা ঠিক করে রিপোর্টটা দেখলেন। কিছুটা চিন্তিত মনে হল তাকে। খারাপ কিছু না তো?
ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট পড়ে তারপর রুম্মানের দিকে না তাকিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালেন।
- আপনি একটু বাহিরে যাবেন? ওর সাথে আমি একটু একা কথা বলি।

মা চিন্তিত মুখে বললেন- খারাপ কিছু?
- আরে না। খারাপ কিছু হলে আপনাকে রেখে ওকে বাহিরে পাঠিয়ে দিতাম। আপনি যান। আমি ওর সাথে একটু কথা বলি।

রুম্মানের মা বের হয়ে গেলেন।

ডাক্তার সাহেব রুম্মানের দিকে তাকালেন। অনেক বড় মাপের নিউরোলজিস্ট একজন তিনি। বড় মাপের লোকের সামনে গেলে হাত দুটো কিভাবে যেন এক হয়ে যায়। হয় সামনে এসে এক হয়, না হয় পিছনে গিয়ে। রুম্মানের হাত দুটো সামনে এসে এক হল। গুটিসুটি মেরে বসে আছে রুম্মান।

ডাক্তার সাহেবই কথা বলা শুরু করলেন- তুমি কথা অনেক কম বল তাই না?

রুম্মান একটু অবাক হল। ডাক্তারের সামনে কেউ কারণ ছাড়া পক পক করে না। একটু কম কথা বলাতেই ডাক্তার এই কথা বলল। রুম্মান বলল- জি।
- চুপচাপ থাকতে ভালবাস?
- হ্যাঁ।
- হাসতে ভাল লাগে না?
- লাগে।
- তাহলে কম হাসো, তাই তো? কারণ ছাড়া একদমই হাসো না। এক ঘটনা শুনে যদি কেউ হো হো করে হাসে। তুমি একটু মুচকি হাসি দাও তাই তো?
- অনেকটা সে রকম। সব কিছুতে হাসি পায় না।
- বলতো আমি এসব বলছি কি করে? আমি তো তোমাকে চিনি না, জানি না। আবার আমি তো জ্যোতিষী না তোমার চোখ দেখে সব বলে দিব।
- জানি না, স্যার।
- স্যার বলতে হবে না। আঙ্কেল বল ঠিক আছে? you are same age of my child.
- আচ্ছা আঙ্কেল।
- আচ্ছা তুমি বলতো তোমার কি হয়েছিল?
- গত শুক্রবার সকাল থেকে মাথা ব্যথা ছিল। জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে জায়গা না পাওয়াতে রোদে বসেছিলাম। বাসায় আসার পর খুব খারাপ লাগছিল। মাথা ঘুরে হঠাৎ পরে গেলাম। তারপর sense আসার পর দেখি আমি হাসপাতালে। পরে শুনলাম ১৯ ঘণ্টা জ্ঞানশূন্য ছিলাম। পরদিন থেকে অনেক গুলো test করল হাসপাতালে। ৬ দিন হাসপাতালে থাকা অবস্থায়, ১২ বার ব্লাড নিল test করার জন্য। মা বাবার অনুমুতি নিয়ে সিটি স্ক্যান করল। কিন্তু কিছুই পাচ্ছিল না। এরপর আপনি রিপোর্ট দেখার পর রিলিজ দিয়ে দিতে বললেন। আপনার চেম্বারে দেখা করতে বললেন।
- বাহ, তুমি তো দেখি অনেক কথা বললে। সবসময় এভাবে বললেই পার। আচ্ছা তোমার কি হয়েছে এখনও জানো না তাই তো?
- জি না আঙ্কেল।
- তোমার TSH হরমোন কমে গিয়েছিল। স্বাভাবিক মানুষের এটা রক্তে ১-৫ মিলিগ্রাম থাকতে হয়। তোমার সেটা ০.০২ মিলিগ্রাম। আর একটু হলে মারা যেতে।

রুম্মান চুপ করে শুনে কথাগুলো।

ডাক্তার সাহেব বলে চললেন - শোন বাবা, তোমার কোন অসুখ নেই। একটু ঠিক মতন চললেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কি সারাদিন মন খারাপ করে থাক নাকি? কিছু নিয়ে চিন্তা করো?

রুম্মান কিছু বলছে না। আসলেই সারাটাদিন মন খারাপ করে থাকে। পরিবারের অবস্থা নিয়ে, এ থেকে কবে রেহাই পাবে তা নিয়ে সারাদিনই ভাবে। ভাবে জীবনে এত কষ্ট কেন? চারপাশের মানুষগুলো কত সুখী। কারও কোন কষ্ট নেই, সব কষ্ট শুধু ওর কেন? হাসতে গেলে কষ্ট লাগে, কারও সাথে মিশতে গেলে কষ্ট লাগে, কাউকে কিছু বলতে গেলে কষ্ট লাগে। সারাক্ষণ তাই চুপ করেই থাকে।

-জি চুপচাপ থাকতে ভাল লাগে। বেশি কথা বলতে ভাল লাগে না।
- ভেরি ব্যাড। এমন থাকলে তো হবে না। তোমার কোন অসুখ নেই। তাই এই অসুখের কোন ওষুধও নেই। একটু হাসি খুশি থাকলে, চুপ চাপ না থাকলেই দেখবে একদম ঠিক হয়ে গেছ। TSH ও দেখবে বেড়ে গেছে।
- জি আচ্ছা।
-কথা বলতে হবে। ছেলেদের সাথে বলতে ইচ্ছা না করলে মেয়েদের সাথে বলতে হবে। গার্লফ্রেন্ড আছে তোমার?

ডাক্তারের মুখের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল, রুম্মান। ডাক্তার সাহেব মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল- আরে লজ্জার কিছু নেই। আমি এখন তোমার বন্ধু। আমার একটা মেয়ে আছে বুঝলে? ক্লাস ১০ এ পড়ে। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি জানি। কিছু বলি না। কিন্তু চোখে চোখে রাখি। লুকিয়ে লুকিয়ে রাতে কথা বলে। আমি নিজেও লাভ ম্যারেজ করেছি। তাই বল, শেয়ার কর।
- নাই।
- সত্যি নেই?
- না।
- তাই তোমার এই অবস্থা।না থাকলে বানাতে হবে শোন, যত বেশি কথা বলবে, হাসবে তত তারাতারি তোমার সমস্যা সমাধান হবে। বুঝলে? মনের মধ্যে কোন কথা জমিয়ে রাখা যাবে না। যা মনে আসবে বলে ফেলবে। গার্লফ্রেন্ড এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে পারফেক্ট। একটুও মন খারাপ করে থাকা যাবে না। জীবনটাকে কষ্টের ভাবলেই দেখবে জীবনটা কত কষ্টের। ভাল ভাবলেই দেখবে, কত সুখের। চারপাশে তাকালেই দেখবে ভাল থাকার কত কিছু। হাসবে, কারণে অকারণে। কষ্টকে আপন ভাবলে তোমাকে তাকে রেখে যেতে দিবে না। ভাল থাকতে এত এত জিনিস লাগে না। মন থেকে চাইলেই পাবে। বেঁচে থাকতে হবে না, বল? না হাসলে না কথা বললে, না ভাল থাকলে বেঁচে থাকবে না তো। আর বেঁচে না থাকলে এই যে তোমার পাশে যে মহিলাটা চিন্তা নিয়ে বসে ছিলেন, যেই লোকটা বাসায় বসে আছে চিন্তিত মুখে ছেলের কি হল, তাদের কে দেখবে বল?চিন্তা কষ্ট মন খারাপ ঝেরে ফেলে দাও। হাসি খুশি থেকে জীবনের কষ্টগুলোকে , বাধা গুলোকে ফেস কর। আর অবশ্যই, বেশি বেশি কথা বলবে। কে বাচাল বলল, কে খারাপ বলল, দেখতে হবে না।নিজের মত চলবে , তবে আগের থেকে একটু বদলে। একজন সুখী মানুষ হিসেবে। পারবে না? বেঁচে থাকতে হলে পারতে হবে।

রুম্মান আস্তে করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ভিতরে ভিতরে অন্যরকম , অন্যকিছু কাজ করছে। বুকের ভিতরের বোজার অর্ধেকটা নেমে গেছে। মুখে একটু হাসি দিল রুম্মান। ডাক্তার সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ডাক্তার সাহেবও হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করলেন। তারপর বললেন- ডাক্তারের কাছে এসেছ, কোন অসুধ ছাড়া গেলে খারাপ লাগে। লোকজনকে দেখাবে না, ডাক্তার দেখিয়েছ? নাও কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট নিয়ে যাও।

রুম্মান উঠে দাঁড়াল। হাতে কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট ও ডাক্তারের কার্ড। বের হয়ে আসবে তখন ডাক্তার সাহেব বললেন- গার্লফ্রেন্ড হলে একটা ফোন দিও। আর কখনও ব্রেক আপ হয়ে কষ্টে থাকলেও বন্ধু হিসেবে ফোন দিও।



রুম্মান, আবারও হেসে বের হয়ে আসল। ডাক্তাররা কঠিন হৃদয়ের মানুষ, ধারণাটা এই লোক কে দেখার আগ পর্যন্ত রুম্মানের মনে ছিল। বাহিরে আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। এখনও মুখে চিন্তার ছাপ। মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল রুম্মান, আম্মুকে গিয়ে বলল। কিছুই হয়নি। একটু হাসলেই বেশি বেশি সব ঠিক হয়ে যাবে। বলে হাসা শুরু করল রুম্মান। মা তাকিয়ে আছে রুম্মানের দিকে। রুম্মান হাসছে, হাসতে হবে, এই মায়াময় মুখগুলোকে অনেক দিন দেখার জন্য হলেও হাসতে হবে।
( এটা কোন গল্প না। এটা একটা বাস্তব ঘটনা। এরপর থেকে রুম্মান আসলেই অনেক বদলে গেছে। কারণে অকারণে হাসে, বেশি কথা বলে, দুঃখ গুলোকে ভেবে নেয়, থাকেই এসব জীবনে, বক বক করে মানুষকে জ্বালায়, কেউ কেউ বিরক্ত হয়।, কেউ মেনে নেয়, কেউ বাচাল ভাবে। বেঁচে থাকতে হলে হাসতে হবে, বেশি কথা বলতে হবে। তাই করছে রুম্মান। )

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

তৃপ্তি

তৃপ্তি
লিখেছেন- sadik awal

রফিক সাহেব হচ্ছেন টাক মাথার মোটা মানুষ। যারা ভাল ব্যবসায়ী তারা সাধারণত টাক মাথার অধিকারী হয়।। হাঁ, রফিক সাহেবও একজন বড়মাপের ব্যবসায়ী। তাই বলে আলু-পোটলের পাইকারী ব্যবসায়ীর মতো না। দেশের নামীদামী কয়েকটা প্রতিষ্ঠান তার। এক-ছেলে আর একমেয়ে। সংসারে অভাব বলতে কিছু নেই।
জীবনে এত টাকা উপার্জন করেছেন যে সেইসব টাকা উড়ানার জন্য দুই হাতও কম হয়ে যায়। ভাল খাবারেরও কমতি নেই। এত কিছু আছে, তবুও কি যেন নেই। সেই ‘কি’ জিনিসটা কি তা তিনি খুঁজে পান না।
- ছ্যার, দুইডা টাকা দেন
- এই যা যা
- দ্যান ছ্যার, খুব খিদা লাগছে
রফিক সাহেব গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দেন। গাড়ি একটু থামলেই হয়, বস্তির সব টোকাইগুলো গাড়ির সামনে পিছনে ঘুরঘুর শুরু করবে।
তার অফিসে যাওয়ার দুইটা রাস্তা। এদিকের রাস্তা দিয়ে তিনি যান না। এই নতুন ড্রাইভারটাকে অনেক বার বলেছেন এই দিকের রাস্তা দিয়ে না যেতে। এক কথা বারবার বলতে রফিক সাহেবের ভাল লাগে না।
রফিক সাহেব সাধারণত ”তুই“ করে কথা বলেন না। রেগে গেলে অবশ্য আলাদা কথা। কিন্তু তার মতো মানুষদের “তুই” করে কথা বলা শুনতে খারাপ লাগে। তাই যতদূর পারেন মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করেন। টাক মাথার লোকেরা মাথা ঠান্ডা রাখতে দক্ষ।
- তোমাকে ওই দিকের রাস্তাটা দিয়ে যেতে বলি তবুও তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাও কেন?
- এই দিকের রাস্তা দিয়ে ছ্যার তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়।
- আমি তোমাকে যা বলি তুমি তাই করবে।
- আচ্ছা, ছ্যার
মেজাজটা আরো খারাপ হল। ”ছ্যার” আবার কেমন শব্দ। ”গ” তে গাঁধা, “গ” তে গাড়ি। সব গাঁধারা গাড়ির ড্রাইভার হয়। এদের ড্রাইভিংয়ের সাথে সাথে উচ্চারণের পরীক্ষাও নেওয়া দরকার।
 

 - কি হল, থামলে কেন?
- ছ্যার, চাকার হাওয়া গেইছে।
- আলাদা চাকা নেই?
- না ছ্যার
- এখন কি করব? এখানে বসে থাকব?
- না ছ্যার, আপনেরে একটা রিসকা ধরে দিচ্ছি। ওইটাতে চড়ে যান।
মুখে গালি দিতে গিয়েও তিনি দিলেন না। মাথা গরম করা ঠিক না। মনে মনে বললেন, ”কাল থেকেই তোর চাকরী নট।”

রিক্সায় মনে হয় কিছু সমস্যা আছে। আসলে রিক্সায় নাকি রিক্সাওয়ালায় তিনি বুঝতে পারছেন না। সোজা সামনে তাকালে রিক্সাওয়ালার পশ্চাৎদেশ দেখা যাচ্ছে। প্রবলেমটা খুব আনকমন। এমন হওয়ার কোন মানেই হয় না। তাছাড়া জিনিসটা কোন দর্শনীয় বস্তু নয় যে তাকিয়ে থাকা লাগবে। তাই তিনি আশেপাশে দেখছিলেন। এদিক সেদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছিলেন। এরকমভাবে দেখতে দেখতে সেই টোকাই ছেলেকে আবার চোখে পরল। না, কোন ভুল না। এইটাই সেই ছেলে। রফিক সাহেবের স্মৃতিশক্তি ভাল।
যাই হোক, ছেলেটা কোথায় থেকে যেন একটা বরফ-কুচি কিনেছে। ভুল হল। কেউ তাকে বরফ-কুচি কিনে দিয়েছে। ছেলেটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বরফ-কুচি খাচ্ছে সাথে কান পর্যন্ত ঠেকানো হাসি। হাসিটাতে তৃপ্তি দেখা যাচ্ছে। ময়লা সেই মুখই যেন হাসিটার জন্য উপযুক্ত। লাল, হলুদ, সবুজ রঙয়ের বরফ-কুচি পেয়ে সে খুব খুশি। এই তিনটা রঙকে কি যেন বলে? রফিক সাহেব মনে করতে পারছেন না। কিংবা চেষ্টা করছেন না। তিনি এখন ছেলেটার আনন্দ দেখছেন।
হাঁ, এই তো সেই জিনিসগুলো। আনন্দ,খুশি এইগুলোই তিনি পান না। সবাই বলে তার সব আছে। কিন্তু এই জিনিসগুলোই তো নেই। এই পিচ্চি ছেলেটা এক বরফ-কুচির মাঝে তা কিভাবে পায়!
বড় ব্যবসায়ীরা অবাক হন না। তারা কাস্টমারদের অবাক করেন। একারণেই মনে হয় তিনিও সহজে অবাক হন না। কিন্তু আজ অবাক হয়েছেন। অনেক অবাক। এখনকার ইয়ং ছেলেদের ভাষায় ”টাশকিত হওয়া”। তিনি শুনেছেন আনন্দ এমন একটা জিনিস যা মানুষকে যতই দেওয়া হয় ততই ফিরে আসে। এমন হবে কেন? ব্যাপারটা রহস্যময়।

পথচারীদের অনেকেই অবাক হয়ে টাক মাথার মোটা একটা লোককে দেখছে। কোট-টাই পরা একটা মধ্য বয়ষ্ক লোক টোকায়ের মতো বাচ্চাগুলোকে লাল, হলুদ, সবুজ রঙয়ের বরফ-কুচি বিলিয়ে বেড়াচ্ছে। টোকাইগুলো বরফ-কুচি পেয়ে হাসছে আর লোকটা বিলিয়ে মজা পাচ্ছে। চোখে সেকারনেই হয়ত হাসি হাসি ভাব। শেয়ার বাজারে লস খেয়ে মাথা খারাপ হইছে মনে হয়। তবে হাসিটা দেখে মাথা খারাপ টাইপের মনে হচ্ছে না। হাসিটায় প্রাণ আছে। যাকে বাংলা ভাষায় বলে ”তৃপ্তির হাসি”
সময়টা ২০১৩ সালের জুলাই মাস। রবিন খুব অস্থির একটা সময় পার করছে। আগামী মাসের ৩ তারিখে রাখির জন্মদিন! কিভাবে কি করবে,কি গিফট দিবে এইটা সেইটা নিয়ে হাজারটা চিন্তা। এইদিক দিয়ে রমজান মাস চলছে। রাখির জন্মদিনটাও পড়লো একদম রমজান মাসেই। অনেক চিন্তা ভাবনা করে রবিন ঠিক করলো একটা এতিম খানায় রাখির মঙ্গলের জন্য এতিমদের তার জন্মদিনের দিন ইফতার করাবে! এটাই হবে সব থেকে উপযুক্ত গিফট! আবার এইদিক দিয়ে রবিন,রাখির সম্পর্কটাও ভালো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঝগড়া! গত দুই দিন হলো কথা পর্যন্ত বন্ধ!! দুইজনেই রাগ করে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছে। এইদিকে রবিনের খুব কষ্ট হলেও রাখির জন্মদিন নিয়েই সে মেতে ছিলো। দুই দিন পর রবিন নিজেই রাখির সাথে দেখা করলো রাগ ভাঙ্গানোর জন্য। স্বাভাবিক ভাবেই রাখির রাগ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু হয়ত বিধাতা সেদিন রবিনের কপালে অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন। ঝড়ের আগে পূর্ভাবাস পাওয়া যায়। কিন্তু রবিনের জীবনের সেই ঝড়ের আগে আকাশে কোন মেঘ পর্যন্ত ছিলো না।
রবিন বরাবরের মতই রাখির রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রতিউত্তরে রাখির আচরন রবিনকে হতভম্ব করে দিলো!
রবিন: তোমার কি হইসে বলো তো? এখনো রাগ?
রাখি: রবিন আমি একটা ডিসিশান নিলাম গত দুই দিন ধরে।
রবিন: হুম বলো।
রাখি: আমার পক্ষে এই রিলেশান রাখা সম্ভব না!
রবিন: মানে কি?? কি উল্টা পাল্টা কথা বলতেসো? তোমার মাথা ঠিক আছে? মাথা ঠান্ডা করে কথা বলো!
রাখি: আমি যা বলছি ভেবে চিন্তা করেই বলছি!
রবিন: কিন্তু কেন??
রাখি: আমার ফ্যামিলি কখনই আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। আমার বাবা মা কে আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
রবিন: তুমি তাহলে এসব দেড় বছর আগে চিন্তা করো নাই কেন? এখন কেন? আমার দোষটা কোথায়?
রাখি: হ্যাঁ। আমি চিন্তা করি নাই। এখন চিন্তা করছি। এটা আমার ভুল। আজকে দেড় বছর তোমার সাথে রিলেশান রাখাটাই ভুল ছিলো আমার! কারন আমরা সমবয়সী!!
রবিন: তুমি পারবে আমাকে ভুলে যেতে? পারবে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে?
রাখি: পারতে আমাকে হবেই! আমার পথ বন্ধ!
এভাবেই দুই জনের সম্পর্কের ভাঙ্গন। রবিন প্রচন্ড কষ্ট পায় সেইদিন। পরের দিনই রবিন রাখির দেওয়া সমস্ত গিফট রাখিকে ফেরত দিয়ে সম্পর্কের সুন্দর একটি ইতি টেনে দেয়। কিন্তু রবিনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়। সামনে পরীক্ষা। কিন্তু রবিন কোনভাবেই ভুলতে পারছিলো না সেই স্মৃতিগুলো। আক্ষরিক অর্থেই রবিনের জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায়। সেই ৩ আগস্ট চলে যায়,কিন্তু রবিনের জন্মদিন আর পালন করা হয় না! ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ানো বন্ধুদের সাথে,সিগারেট খাওয়া নিয়মিত,এভাবেই চলছিলো।
রবিনের খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো। নিনিত নামের মেয়েটি শুধু রবিনের বন্ধুই ছিলো না,তার থেকে বেশী কিছু ছিলো রবিনের কাছে। রাখির সাথে ঝগড়া থেকে শুরু করে যা কিছু হতো সব রবিন নিনিতের সাথেই শেয়ার করতো। শুধু ভালো বন্ধু ছিলো দুই জন। রবিনের যখন এই অবস্থা চলছিলো তখন রবিনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো নিনিত। রবিনের আগোছালো জীবনটাকে আবার সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিলো নিনিত। তখন পর্যন্তও শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরেই রবিনকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলো নিনিত। আস্তে আস্তে রবিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। নিনিতের প্রতি অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রবিন।সিগারেট ছেড়ে দেয় শুধুই নিনিতের চাপাচাপিতে। পুরোনো স্মৃতিগুলো ভুলে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে রবিন! সময় গড়াতে থাকে তার মত করে।
এখন একদিন নিনিতকে না দেখলে রবিন অস্থির হয়ে থাকে। পড়তে বসার আগে নিনিতের একটা মেসেজ না পেলে পড়ায় মন বসে না রবিনের। কিন্তু রবিন বুঝতে পারে না,কেন এমন হয়! নিনিতও বুঝতে পারে কিছুটা রবিনের এইসব ব্যাপার।
তারও কয়েকমাস পর,রবিন বুঝতে পারে,বিপদের সময় যেই মানুষটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো,যেই মানুষটি তাকে সাহস যুগিয়েছিলো সেই মানুষটিই তার জীবনসঙ্গী হওয়ার যোগ্য! হ্যাঁ,রবিন সেই মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছে!! সত্যিকার অর্থেই সে নিনিতকে ভালোবেসে ফেলেছে!অপরদিকে নিনিতও বুঝতে পারে,একটা মানুষের অতীত হয়ত খারাপ হতে পারে,কিন্তু তাতে তো মানুষটার কোন দোষ ছিলো না। হ্যাঁ,রবিনই তার জন্য উপযুক্ত সব দিক থেকে! হ্যাঁ,রবিনকে সে ভালোবাসে!
এভাবেই চলতে থাকে দুই জনের মনে কথাগুলো। কিন্তু কখনও সামনাসামনি কেন জানি বলা হয় না! থাক না,যেভাবে আছে সেভাবেই! ভালোবাসা না হয় অন্তরের পিঞ্জরেই বন্দী থাক! সময় হলে ভালোবাসার পাখি নিজে থেকেই পিঞ্জর থেকে উড়ে সেই মানুষটার কাছে চলে যাবে! এটাইতো ভালোবাসা!

লেখকঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

আলাপন

আলাপন
লিখেছেন-শায়েরী রায়

- তোমরা এত খারাপ কেনো বলোতো?
- কি ভুল হলো আবার!
- তুমি আমার একার হয়ে থাকতে পারোনা!কেনো অন্য মেয়েদের দিকে তাকাও?
- ও।
- ও কি!আমি মিথ্যা বলি নি।আমি খুব করে খেয়াল করেছি।সুন্দরের পূজারী বুঝলাম,তাই বলে সুন্দরীদের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকায় থাকবা?
কি চুপ কেনো?
- না বলো শুনছি।
- তোমার জন্য শুধু চুল একপাশে মেলিয়ে আসি,বিন্দু টিপটা কি খেয়াল করেছো কখনো!কিংবা হাতে কাঁচের চুড়িগুলো?
এগুলো বলতে ইচ্ছা করেনা,আজ বাধ্য হয়ে বলছি।
- কই দেখি?
- ঢং করবানা!তোমার সব ঢং আমার চেনা। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হলো,তবে কেনো পিছু নিয়েছিলে। কেনো বলেছিলে বাঁচবেনা আমাকে ছাড়া।এখন সব ফুরিয়ে গেছে তাইনা?
খুব বিরক্তি লাগে।ন্যাকামো লাগে। তাহলে কে বলেছিলো ন্যাকামোকে আশ্রয় দিতে?
- কাজল ছড়িয়ে যাচ্ছে!কিছুক্ষণ বাদে পেত্নী লাগবে, ঠিক করো।
- লাগুক পেত্নী। পেত্নীর সাথে প্রেম করতে হবেনা। যাই আমি। তুমি বসে বসে সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করো।
- আহা শুনো না, একটু বসো। অনেক রোঁদ! এই রোঁদে পিছু নিতে গেলে হাঁপায় যাবো।
- বলছেটা কে পিছু নিতে?
- আরে! ঐ!

ক্রিং ক্রিং..ক্রিং ক্রিং....ক্রিং ক্রিং.......
- হ্যালো..
- ঐ একটু বের হওনা। খুব ক্ষুদা পাইসে। চলো হোটেল থেকে কিছু খেয়ে আসি নাহলে কিছু বানায় আনো।
- আমি কি তোমার চাকর নাকি আর তোমাকে না বলেছি বাসায় ফোন দিতে না। বাবা যদি ধরতো ফোনটা?
- ঔ হিটলারকে ভয় পাই নাকি?
- খবরদার হিটলার বলবেনা! আর সময় মতো দেখবো সাহস কতোখানি আপনার।
- আচ্ছা বাদ দাও। বের হওনা একটু।
- পারবোনা।
- তাইলে আর কি। ঐ কথাই। রাণী ভুখা রাখতে চাইলে প্রজার কি দুঃসাহস!
- এখন এতো ভাল ভাল কথা বের হচ্ছে ব্যাপার কি?
- আরে সকালবেলা এক পাখি লোভ দেখাইয়া, হাতের নাগাল থেকে বের হয়ে গেলো।খাচার পাখি আমার!
আটকায় রাখতে হবেনা!
- ইশ্! কতো পাখি আশেপাশে, যাকে ইচ্ছা ধরো না!
- নাহ্। এক পাখিই ওলোটপালোট করে মারছে। আর লাগবেনা।
- ও। খুব জ্বালায় না?
- জ্বালায় মানে! কি সাবধানে রাখতে হয় জানো। কখন কে না কে শিকার করে ফেলে। শান্তিমতো একটু আদরও করতে পারিনা। চোখে চোখে রাখতে হয়!
পাখির রূপ যে কতো, পাখি নিজেও বুঝেনা। কিচিরমিচির করলেও যে শ্রবণসুখ পাই, সে বুঝেনা! কিভাবে বুঝাই বলোতো?
- অন্য পাখিদের দিকে তাকাবেনা!
- আরে কই আর তাকাই! একটু জ্বালা দিয়ে দেখি পাখি আমার জন্য ছটফট করে কিনা।
- ও তাহলে পাখিও বুঝায় দিবে জ্বালা কাকে বলে।
- আরে থাক থাক, এমনেই বুঝি! প্রতিদিন কতো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয় জানো।
বেড়ি লাগায় দিতে হবে পায়ে। উড়ার দেওয়ার পায়তারা করে শুধু। আর এদিকে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়।
- হইসে, আর ঢং করতে হবেনা।
- ঢং। ও আচ্ছা না বললে লুকাই আর সব বলে দিলে ঢং?
- হুম ঢং ই তো। কবি সাহিত্যিকরা বলে মেয়েরা ছলনাময়ী, ঐটা আসলে তোমরা!
- সব যদি বলেই দিই তবে তুমি বুঝে নিবে কোনটা?
- না বললে আমি বুঝবো কিভাবে। আমি মনোবিজ্ঞানী না!
- আমি যে সব বলতেও পারিনা!
- (দীর্ঘশ্বাস) তোমার না ক্ষুদা লাগসে?
- হুম
- কই তুমি?
- তোমার লেবু মিয়ার দোকানে। ব্যাটা তোমার ব্যালকনির সামনে আমার পায়চারি দেখে সন্দেহ করছে!
- কোনদিন যে বিপদে ফালাবা!
- হে হে হে। জলদি বের হও।
- হুম, কি খাবা বলো?
- ইয়ে মানে একটু ভাল্লুবাসাহ দিও! হা হা হা...
- কচু দিবো! ( মৃদু লাজুক হাসি) —