আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

সময়টা ২০১৩ সালের জুলাই মাস। রবিন খুব অস্থির একটা সময় পার করছে। আগামী মাসের ৩ তারিখে রাখির জন্মদিন! কিভাবে কি করবে,কি গিফট দিবে এইটা সেইটা নিয়ে হাজারটা চিন্তা। এইদিক দিয়ে রমজান মাস চলছে। রাখির জন্মদিনটাও পড়লো একদম রমজান মাসেই। অনেক চিন্তা ভাবনা করে রবিন ঠিক করলো একটা এতিম খানায় রাখির মঙ্গলের জন্য এতিমদের তার জন্মদিনের দিন ইফতার করাবে! এটাই হবে সব থেকে উপযুক্ত গিফট! আবার এইদিক দিয়ে রবিন,রাখির সম্পর্কটাও ভালো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঝগড়া! গত দুই দিন হলো কথা পর্যন্ত বন্ধ!! দুইজনেই রাগ করে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছে। এইদিকে রবিনের খুব কষ্ট হলেও রাখির জন্মদিন নিয়েই সে মেতে ছিলো। দুই দিন পর রবিন নিজেই রাখির সাথে দেখা করলো রাগ ভাঙ্গানোর জন্য। স্বাভাবিক ভাবেই রাখির রাগ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু হয়ত বিধাতা সেদিন রবিনের কপালে অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন। ঝড়ের আগে পূর্ভাবাস পাওয়া যায়। কিন্তু রবিনের জীবনের সেই ঝড়ের আগে আকাশে কোন মেঘ পর্যন্ত ছিলো না।
রবিন বরাবরের মতই রাখির রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রতিউত্তরে রাখির আচরন রবিনকে হতভম্ব করে দিলো!
রবিন: তোমার কি হইসে বলো তো? এখনো রাগ?
রাখি: রবিন আমি একটা ডিসিশান নিলাম গত দুই দিন ধরে।
রবিন: হুম বলো।
রাখি: আমার পক্ষে এই রিলেশান রাখা সম্ভব না!
রবিন: মানে কি?? কি উল্টা পাল্টা কথা বলতেসো? তোমার মাথা ঠিক আছে? মাথা ঠান্ডা করে কথা বলো!
রাখি: আমি যা বলছি ভেবে চিন্তা করেই বলছি!
রবিন: কিন্তু কেন??
রাখি: আমার ফ্যামিলি কখনই আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। আমার বাবা মা কে আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
রবিন: তুমি তাহলে এসব দেড় বছর আগে চিন্তা করো নাই কেন? এখন কেন? আমার দোষটা কোথায়?
রাখি: হ্যাঁ। আমি চিন্তা করি নাই। এখন চিন্তা করছি। এটা আমার ভুল। আজকে দেড় বছর তোমার সাথে রিলেশান রাখাটাই ভুল ছিলো আমার! কারন আমরা সমবয়সী!!
রবিন: তুমি পারবে আমাকে ভুলে যেতে? পারবে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে?
রাখি: পারতে আমাকে হবেই! আমার পথ বন্ধ!
এভাবেই দুই জনের সম্পর্কের ভাঙ্গন। রবিন প্রচন্ড কষ্ট পায় সেইদিন। পরের দিনই রবিন রাখির দেওয়া সমস্ত গিফট রাখিকে ফেরত দিয়ে সম্পর্কের সুন্দর একটি ইতি টেনে দেয়। কিন্তু রবিনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়। সামনে পরীক্ষা। কিন্তু রবিন কোনভাবেই ভুলতে পারছিলো না সেই স্মৃতিগুলো। আক্ষরিক অর্থেই রবিনের জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায়। সেই ৩ আগস্ট চলে যায়,কিন্তু রবিনের জন্মদিন আর পালন করা হয় না! ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ানো বন্ধুদের সাথে,সিগারেট খাওয়া নিয়মিত,এভাবেই চলছিলো।
রবিনের খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো। নিনিত নামের মেয়েটি শুধু রবিনের বন্ধুই ছিলো না,তার থেকে বেশী কিছু ছিলো রবিনের কাছে। রাখির সাথে ঝগড়া থেকে শুরু করে যা কিছু হতো সব রবিন নিনিতের সাথেই শেয়ার করতো। শুধু ভালো বন্ধু ছিলো দুই জন। রবিনের যখন এই অবস্থা চলছিলো তখন রবিনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো নিনিত। রবিনের আগোছালো জীবনটাকে আবার সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিলো নিনিত। তখন পর্যন্তও শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরেই রবিনকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলো নিনিত। আস্তে আস্তে রবিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। নিনিতের প্রতি অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রবিন।সিগারেট ছেড়ে দেয় শুধুই নিনিতের চাপাচাপিতে। পুরোনো স্মৃতিগুলো ভুলে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে রবিন! সময় গড়াতে থাকে তার মত করে।
এখন একদিন নিনিতকে না দেখলে রবিন অস্থির হয়ে থাকে। পড়তে বসার আগে নিনিতের একটা মেসেজ না পেলে পড়ায় মন বসে না রবিনের। কিন্তু রবিন বুঝতে পারে না,কেন এমন হয়! নিনিতও বুঝতে পারে কিছুটা রবিনের এইসব ব্যাপার।
তারও কয়েকমাস পর,রবিন বুঝতে পারে,বিপদের সময় যেই মানুষটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো,যেই মানুষটি তাকে সাহস যুগিয়েছিলো সেই মানুষটিই তার জীবনসঙ্গী হওয়ার যোগ্য! হ্যাঁ,রবিন সেই মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছে!! সত্যিকার অর্থেই সে নিনিতকে ভালোবেসে ফেলেছে!অপরদিকে নিনিতও বুঝতে পারে,একটা মানুষের অতীত হয়ত খারাপ হতে পারে,কিন্তু তাতে তো মানুষটার কোন দোষ ছিলো না। হ্যাঁ,রবিনই তার জন্য উপযুক্ত সব দিক থেকে! হ্যাঁ,রবিনকে সে ভালোবাসে!
এভাবেই চলতে থাকে দুই জনের মনে কথাগুলো। কিন্তু কখনও সামনাসামনি কেন জানি বলা হয় না! থাক না,যেভাবে আছে সেভাবেই! ভালোবাসা না হয় অন্তরের পিঞ্জরেই বন্দী থাক! সময় হলে ভালোবাসার পাখি নিজে থেকেই পিঞ্জর থেকে উড়ে সেই মানুষটার কাছে চলে যাবে! এটাইতো ভালোবাসা!

লেখকঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক