আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

তৃপ্তি

তৃপ্তি
লিখেছেন- sadik awal

রফিক সাহেব হচ্ছেন টাক মাথার মোটা মানুষ। যারা ভাল ব্যবসায়ী তারা সাধারণত টাক মাথার অধিকারী হয়।। হাঁ, রফিক সাহেবও একজন বড়মাপের ব্যবসায়ী। তাই বলে আলু-পোটলের পাইকারী ব্যবসায়ীর মতো না। দেশের নামীদামী কয়েকটা প্রতিষ্ঠান তার। এক-ছেলে আর একমেয়ে। সংসারে অভাব বলতে কিছু নেই।
জীবনে এত টাকা উপার্জন করেছেন যে সেইসব টাকা উড়ানার জন্য দুই হাতও কম হয়ে যায়। ভাল খাবারেরও কমতি নেই। এত কিছু আছে, তবুও কি যেন নেই। সেই ‘কি’ জিনিসটা কি তা তিনি খুঁজে পান না।
- ছ্যার, দুইডা টাকা দেন
- এই যা যা
- দ্যান ছ্যার, খুব খিদা লাগছে
রফিক সাহেব গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দেন। গাড়ি একটু থামলেই হয়, বস্তির সব টোকাইগুলো গাড়ির সামনে পিছনে ঘুরঘুর শুরু করবে।
তার অফিসে যাওয়ার দুইটা রাস্তা। এদিকের রাস্তা দিয়ে তিনি যান না। এই নতুন ড্রাইভারটাকে অনেক বার বলেছেন এই দিকের রাস্তা দিয়ে না যেতে। এক কথা বারবার বলতে রফিক সাহেবের ভাল লাগে না।
রফিক সাহেব সাধারণত ”তুই“ করে কথা বলেন না। রেগে গেলে অবশ্য আলাদা কথা। কিন্তু তার মতো মানুষদের “তুই” করে কথা বলা শুনতে খারাপ লাগে। তাই যতদূর পারেন মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করেন। টাক মাথার লোকেরা মাথা ঠান্ডা রাখতে দক্ষ।
- তোমাকে ওই দিকের রাস্তাটা দিয়ে যেতে বলি তবুও তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাও কেন?
- এই দিকের রাস্তা দিয়ে ছ্যার তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়।
- আমি তোমাকে যা বলি তুমি তাই করবে।
- আচ্ছা, ছ্যার
মেজাজটা আরো খারাপ হল। ”ছ্যার” আবার কেমন শব্দ। ”গ” তে গাঁধা, “গ” তে গাড়ি। সব গাঁধারা গাড়ির ড্রাইভার হয়। এদের ড্রাইভিংয়ের সাথে সাথে উচ্চারণের পরীক্ষাও নেওয়া দরকার।
 

 - কি হল, থামলে কেন?
- ছ্যার, চাকার হাওয়া গেইছে।
- আলাদা চাকা নেই?
- না ছ্যার
- এখন কি করব? এখানে বসে থাকব?
- না ছ্যার, আপনেরে একটা রিসকা ধরে দিচ্ছি। ওইটাতে চড়ে যান।
মুখে গালি দিতে গিয়েও তিনি দিলেন না। মাথা গরম করা ঠিক না। মনে মনে বললেন, ”কাল থেকেই তোর চাকরী নট।”

রিক্সায় মনে হয় কিছু সমস্যা আছে। আসলে রিক্সায় নাকি রিক্সাওয়ালায় তিনি বুঝতে পারছেন না। সোজা সামনে তাকালে রিক্সাওয়ালার পশ্চাৎদেশ দেখা যাচ্ছে। প্রবলেমটা খুব আনকমন। এমন হওয়ার কোন মানেই হয় না। তাছাড়া জিনিসটা কোন দর্শনীয় বস্তু নয় যে তাকিয়ে থাকা লাগবে। তাই তিনি আশেপাশে দেখছিলেন। এদিক সেদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছিলেন। এরকমভাবে দেখতে দেখতে সেই টোকাই ছেলেকে আবার চোখে পরল। না, কোন ভুল না। এইটাই সেই ছেলে। রফিক সাহেবের স্মৃতিশক্তি ভাল।
যাই হোক, ছেলেটা কোথায় থেকে যেন একটা বরফ-কুচি কিনেছে। ভুল হল। কেউ তাকে বরফ-কুচি কিনে দিয়েছে। ছেলেটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বরফ-কুচি খাচ্ছে সাথে কান পর্যন্ত ঠেকানো হাসি। হাসিটাতে তৃপ্তি দেখা যাচ্ছে। ময়লা সেই মুখই যেন হাসিটার জন্য উপযুক্ত। লাল, হলুদ, সবুজ রঙয়ের বরফ-কুচি পেয়ে সে খুব খুশি। এই তিনটা রঙকে কি যেন বলে? রফিক সাহেব মনে করতে পারছেন না। কিংবা চেষ্টা করছেন না। তিনি এখন ছেলেটার আনন্দ দেখছেন।
হাঁ, এই তো সেই জিনিসগুলো। আনন্দ,খুশি এইগুলোই তিনি পান না। সবাই বলে তার সব আছে। কিন্তু এই জিনিসগুলোই তো নেই। এই পিচ্চি ছেলেটা এক বরফ-কুচির মাঝে তা কিভাবে পায়!
বড় ব্যবসায়ীরা অবাক হন না। তারা কাস্টমারদের অবাক করেন। একারণেই মনে হয় তিনিও সহজে অবাক হন না। কিন্তু আজ অবাক হয়েছেন। অনেক অবাক। এখনকার ইয়ং ছেলেদের ভাষায় ”টাশকিত হওয়া”। তিনি শুনেছেন আনন্দ এমন একটা জিনিস যা মানুষকে যতই দেওয়া হয় ততই ফিরে আসে। এমন হবে কেন? ব্যাপারটা রহস্যময়।

পথচারীদের অনেকেই অবাক হয়ে টাক মাথার মোটা একটা লোককে দেখছে। কোট-টাই পরা একটা মধ্য বয়ষ্ক লোক টোকায়ের মতো বাচ্চাগুলোকে লাল, হলুদ, সবুজ রঙয়ের বরফ-কুচি বিলিয়ে বেড়াচ্ছে। টোকাইগুলো বরফ-কুচি পেয়ে হাসছে আর লোকটা বিলিয়ে মজা পাচ্ছে। চোখে সেকারনেই হয়ত হাসি হাসি ভাব। শেয়ার বাজারে লস খেয়ে মাথা খারাপ হইছে মনে হয়। তবে হাসিটা দেখে মাথা খারাপ টাইপের মনে হচ্ছে না। হাসিটায় প্রাণ আছে। যাকে বাংলা ভাষায় বলে ”তৃপ্তির হাসি”