আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)
লিখেছেনঃ Tony Khan

(১)

মুমুর মুখটা হঠাৎ এত সুন্দর লাগছে কেন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন ভোরের সতেজ দুব্ল ঘাসের উপর ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। মাথার এলোমেলো চুলের কিছুটা কপালের ঘামের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মুখে অমৃতের হাসি নিয়ে রক্ত শুন্য চিকন ঠোট হাল্কা ফাঁক হয়ে রয়েছে। তার মধ্য দিয়ে শ্বেত পাথরের মত সাদা দাঁতের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মোহনীয় একটি দৃশ্য। মুমু আমার বউ। এখন ও ঘুমাচ্ছে। শান্তির ঘুম। এই কিছুক্ষণ আগে ওকে আমি খুন করেছি। ঠান্ডা মাথায় খুন।

প্রথমে অবশ্য ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু পরে আর তা করেনি। ঘুমন্ত মুমুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দম বন্ধ করে মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারলে ওর সুন্দর মুখটা দেখব কিভাবে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ওর সুন্দর মুখটা কেমন দেখায় সেটা দেখব বলে বালিশ চাপা দিয়ে মারার পরিকল্পনাটা বাদ দিয়ে গলা টিপে মারার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে করে অন্তত দুজন দুজনার মুখটা তো দেখতে পাব। গলা টিপে ধরার সাথে সাথে ও চমকে উঠেছিল। দাপাদাপি করতে লাগল, নিস্বাসের জন্য মুখ হা হয়ে গিয়েছিল । হাতের চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার জোগাড় হল । মুখের চামড়া কুঁচকে বিকৃত হয়ে গেল । ঠোট দুটি লোভনীয় ভাবে নড়াচড়া শুরু করল হয়ত কিছু বলার জন্যে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না পরম ভালোবেসে চুমু খেলাম । ধীরে ধীরে ওর শরীর অসার হয়ে আসতে লাগল । চোখের মনি ঘোলা হয়ে গেল । হাহ........

চলে যাচ্ছে আমার মুমু । তারপর শান্ত হয়ে গেল ও । মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে ওর মুখটা দেখে মায়া হল আমার ।

আজই আমাদের বিয়ে হয়েছে। টানা তিন বছর প্রেম করার পর। বাসর রাতে সেকি কথা মুমুর। আনন্দে ও টগবগ করছিল।

এতদিন ধরে দেখা সপ্নগুলো কিভাবে সত্যি করবে তা নিয়ে ও খুব এক্সাইটেড ছিল। কিভাবে ঘর সাজাবে, কিচেন কেমন হবে, ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম ইত্যাদি কেমন হবে তার একটা বিশদ পরিকল্পনা ছিল ওর। এমনকি আমাদের ছেলের নামও ঠিক করে রেখেছিল। অবশ্য ও মনে মনে ভেবে শিওর ছিল যে ছেলেই হবে আমাদের । ও বলত ছেলেটা স্বভাবে আমার মতই সৎ হবে । যার বুকের গভীরতা হবে অসীম । যে মানুষকে ভালবাসবে বুক উজার করে । তাই ঠিক করেছিল ছেলের নাম রাখবে আকাশ । কিন্তু হায় মানুষের সব স্বপ্ন পুরণ হয় না ।

(২)

-হ্যালো পুলিশ স্টেশন।
-ইয়েস।
-ওসি সাহেব বলছেন।
-জ্বী বলছি। বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি।
-মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।
-হোয়াট, কি বললেন?
-জ্বী ঠিকই শুনছেন। কিছুক্ষণ আগে আমি আমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছি। বাসর ঘরে শুয়ে আছে সে ।
-কি বলছেন।
-জ্বী আপনি ঠিকই শুনছেন।
-আপনি এখন কোথায়।
-বাড়িতেই আছি।
-মানে?
-মানে আমি আমার স্ত্রীর পাশেই আছি। আপনি অযথা দেরি না করে জলদি আসুন।
-ঠিক আছে আমি আসছি।
-ঠিকানা নেবেন না।
-ও হ্যা তাইতো, আচ্ছা বলেন।
-৯৪/ডি, গ্রীন রোড।

(৩)

পরের দিন পত্রিকায় একটি নিউজ বের হলো।

স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা। গতকাল মধ্যরাত্রে শহরের গ্রীন রোডস্থ একটি বাসায় নববিবাহীতা স্ত্রীকে খুন করে স্বামী আত্মহত্যা করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে পৌছালে বাসর ঘরে নববধূর লাশ কোলে নিয়ে স্বামীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর নিজের হাতের রগ কেটে সে আত্মহত্যা করে। এলাকাবাসীকে জিঙ্গাসাবাদ করে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নিকটস্থ হাতপাতালের মর্গে লাশ সরিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

[গল্পটি অনেকটা রহস্য গল্প হলেও বাস্তব জিবনে এমনি অনেক রহস্য আমাদের জিবনেও আসে, প্রতিটি সম্পূর্ণ গল্প আমাদের যা কিছু শিখাতে পারে, অসমাপ্ত গল্প হয়তো তার থেকেও বেশি কিছুই শিখায় আমাদেরকে]