আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২

গল্প -১

একটি অসাধারন গল্প।

আশা করি সবার ভাল লাগবে।

একদিন একটা গরীব ছেলে রাস্তায় হাঁটছিলো ।
সে তার লেখাপড়ার খরচ
জোগাড় করার জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতো ।
ছেলেটার গায়ে ছিলো একটা জীর্ন মলিন পোষাক ।
সে ভীষণ ছিলো ।
... সে ভাবলো যে পরে যে বাসায় যাবে , সেখানে গিয়ে সে কিছু খাবার চাইবে ।
কিন্তু সে যখন একটা বাসায় গেলো খাবারের আশা নিয়ে , সে ঘর
থেকে একজন সুন্দরী মহিলা বেরিয়ে এলেন ।
সে খাবারের কথা বলতে ভয় পেলো। সে খাবারের কথা না বলে শুধুএক
গ্লাস পানি চাইলো ।
মহিলা ছেলেটার অবস্থা দেখে বুঝলেন যে সে ক্ষুধার্থ । তাইতিনি ছেলেটাকে একটা বড় গ্লাস দুধ এনে দিলেন ।
ছেলেটা আস্তে আস্তে দুধটুকু খেয়ে বলল"আপনাকে আমার কত
টাকা দিতে হবে এই দুধের জন্য?"
মহিলা বলল "তোমাকে কোন কিছুই দিতে হবে না ।
ছেলেটা বলল "আমার মা আমাকে বলেছেন কখনোকরুণার দান
না নিতে । তাহলে আমি আপনাকে মনের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি ।"
ছেলেটার নাম ছিলো স্যাম কেইলি ।
স্যাম যখন দুধ খেয়ে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে এল , তখন
সে শারিরিকভাবে কিছুটা শক্তিঅনুভব করলো ।
স্যাম এর বিধাতার উপর ছিলো অগাধ বিশ্বাস ।
তাছাড়া সে কখনো কিছু ভুলতো না ।
অনেক বছর পর ঐ মহিলা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পরলো ।স্থানীয়
ডাক্তাররা তাকে সুস্থ করতে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হল ।তখন
তাকে পাঠানো হলো একটা বড় শহরের নামকরা হাসপাতালে ।
যেখানে দুলর্ভ ও মারাত্মক রোগ নিয়ে গবেষণা ও চিকিত্সা করা হয় ।
ডা: স্যামকেইলি কে এই মহিলার দায়িত্ব দেওয়া হলো । যখন ডাঃ স্যাম কেইলি শুনলেন যে মহিলা কোন শহর থেকে এসেছেন ,
তার চোখের দৃষ্টিতে অদ্ভুথ একটা আলো যেন জ্বলে উঠলো ।
তিনি তাড়াতাড়ি ঐ মহিলাকে দেখতে গেলেন ।ডাক্তারের এপ্রন
পরে তিনি মহিলার রুমে ঢুকলেন ।এবং প্রথম দেখাতেই
তিনি মহিলাকে চিনতে পারলেন ।তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন যে ,
যেভাবেই হোক তিনি মহিলাকে বাঁচাবেনই । ঐ দিন থেকে তিনি ঐ রোগীর আলাদাভাবে যত্ন নেওয়া শুরু করলেন ।
অনেক চেষ্টার পর মহিলাকে বাঁচানো সম্ভব হলো ।
ডাঃ স্যাম কেইলি হাসপাতালের একাউন্টেন্ ট কে ঐ মহিলার চিকিত্সার
বিল দিতে বললেন,কারণ তার সাইনছাড়া ঐ বিল কার্যকর হবে না ।
ডাঃ স্যাম কেইলি ঐ বিলের কোণায় কি যেনো লিখলেন এবং তারপর
সেটা ঐ মহিলার কাছে পাঠিয়ে দিলেন । মহিলা ভীষণ ভয় পাচ্ছিলেন বিলটা খুলতে। কারণতিনি জানেন
যে এতো দিনে যে পরিমাণ বিল এসেছে তা তিনি সারা জীবনেও শোধ
করতে পারবেন না ।
অবশেষে তিনি বিলটা খুললেন এবং বিলের পাশ দিয়ে লেখা কিছু
কথা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো ।
তিনি পড়তে লাগলেন "আপনার চিকিত্সার খরচ হলো পুরো এক গ্লাস দুধ।"
এবং বিলের নিচের সাইন করা ছিলো ডাঃ স্যাম কেইলির নাম ।
~

Moral:- মানুষকে সাহায্য করুন , যতটা আপনার পক্ষে সম্ভব ।

হয়তো এই অল্প সাহায্যের ফল হিসেবে আপনি এমন কিছু পাবেন
যা কখনো আপনি চিন্তাই করেননি!

সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২

শুধু ভালোলাগা নাকি ভালবাসার গল্প!!!

শুধু ভালোলাগা নাকি ভালবাসার গল্প!!!
Writer: জয় রাজ খাঁন


আজ ১৪ই ডিসেম্বর সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বাসায় এসেছি মাত্র । এখন রাত প্রায় ১১টা, দেরীতে ফিরেছি বলে আজ মা বকুনি দিল, তাই খুব খিদে পেয়েছে তবুও, না খেয়েই রইলাম ভাবলাম আজ সারা রাত জাগবো, facebook এর একটা পেজ এর এডমিন আমি, তাই রাত জেগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো, তাই আমার ROOMএ এসে PC টা On করে বসে পরলাম facebook এ, আর তখনি এক বন্ধুর ফোন...
ওপাশ থেকে...
মাসুদঃ জয় আজ রাতে তুমি পেজে আড্ডা মারো আমি গ্রামের বাড়ীতে এসেসি তাই আজ কিচ্ছু পোস্ট ও করতে পারছি না, মোবাইল নেট Prob...
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজ জেগেই আছি, পোস্ট করবো, তুমি ফিরে আসে ফোন দিয়...
মাসুদঃ আচ্ছা, Good N8...& Take care!!
আমিঃ ওকে Good N8 & Take Care!!! bye!
তার পরে আবার facebook এ, মাত্র আমাদের অনেক গুলো NEW FaN Join করেছে তাদের দিকে দেখেই, নিচের দিকে কারসর টানতেই চোখ পরল একটা নতুন জয়েন করা মেয়ের দিকে, নাম "ত্রিশা" দেখেই অবাক হলাম, আমার এক কাজিন এর নাম ও তাই, মামার সাথে একটু পারিবারিক ঝগড়ার কারনে ওদের সাথে যোগাযোগ নেই, আমি আমার কাজিন ভেবেই ওর প্রোফাইলে গেলাম, গিয়ে ঠিক চিনতে পারছিলাম না, প্রোফাইল PIC এ একটা মেয়ে কে দেখলাম দারিয়ে আছে আনমনে কি যেন একটা দেখছে, আমি ওকে মেসেজ পাঁঠাতে যেয়ে দেখি ওর মেসেজ ইনভিসিবল তাই মেসেজ পাঁঠাতে পারলাম না, তার পর ভাবলাম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই, Friend Request পাঠাতে গেলাম, কিন্তু ওর সাথে আমার কমন ফ্রেন্ড একজন ও ছিল না তাই, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা ও যাচ্ছিল না, তখন আর কি উপায়?? ভাবলাম থাক আর লাগবেনা, পরে মনে হল ইশ!! যদি ওর সাথে কথা না হয় ত সারা জীবন একটা দ্বিধায় থাকবো ও কি আমার কাজিন ছিল নাকি অন্য কেউ? তাই আর কোনো কিছু না পেয়ে ওর মেসেজ নয়তো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাবার আশায় Poke মেরে দিলাম, একটু পরেই Poke Back আসলো আমি আবার পাঠালাম এমন করতে করতে একবার ও পাঠায় আর একবার আমি পাঠাই এমন করতে করতে একসময় ওপার থেকে আর Poke আসা বন্ধ হয়ে গেলো, আমি ভাবলাম রাত দেড়টা বেজেগেছে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে নয়তো খুব জ্বালিয়ে ফেলেছি, ইস!! এত কেন জ্বালালাম?? যদি গালাগাল দেয়??  তাই ভোর ৪টা পর্যন্ত আড্ডা মেরে ঘুমিয়ে পরলাম, ঘুম থেকে উঠলাম ১২টায় উঠেই যথারীতি ফেসবুকে লগইন করলাম, আর দেখলাম Poke Back এসেছে আর সাথে একটা মেসেজ,
ওপার থেকেঃ "আপনি আমাকে এত Poke করছেন কেনো?"
আমিঃ আসলে আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে ত তাই ভাবলাম আপনি আমার কাজিন "ত্রিশা" কি না?? তাই, সরি আসলে আপনাকে কি আমি জানি কিনা বুজতে পারছি না?? আর তাই হয়তো একটু বেশী জ্বালাতন করে ফেললাম, আসলে আপনাকে মেসেজ আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট কোনোটাই যাচ্ছিলো না তাই একটু বেশিই জ্বালাতন করে ফেললাম, প্লিজ মাফ করে দিবেন!!
তার একটু পরেই মেসেজ এলো...
ওপাশ থেকেঃ আসলেই !! মেসেজ তো আপনি চাইলেও পাঁঠাতে পারতেন না, 'তো its ok, but প্লিজ আর Poke দিয়েন না...
আমিঃ আচ্ছা আর দিবোনা, আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন? আপনি কি আমার কাজিন "ত্রিশা" কিনা বললেন না তো? আমি কি আপনাকে জানি?
ওপার থেকেঃ না আমি আপনাকে চিনি না আর আপনিও আমাকে চিনেন না...
১৫ তারিখ সারাদিন আমাদের মেসেজে কথা হল, বিকেলে ওকে বললাম আপনাকে আমার ভালো লেগেছে কাল ১৬ ডিসেম্বর আমার জন্মদিন, আপনার কাছে আমার BIrthday Gift হিসেবে আপনাকে আমার ফ্রেন্ড হিসেবে চাইছি, জানিনা আপনি হবেন হবেন কিনা আমার ফ্রেন্ড, কিন্তু এই জন্মদিনে যদি আপনার ফ্রেন্ড হতে পারি তবে সেটা হবে আমার এই বছর পাওয়া সবচে বড় জন্মদিনের উপহার, আর যদি না হন, তাহলে এটা সুদু  আমার জন্মদিনের নয়, আমার সারা জিবনের একটা অপূর্ণ চাওয়া, যা হয়তো আর কখনো পূর্ণ হবার নয়...।

মেসেজ টা পাঠিয়ে দিলাম...
তারপর আমি আবার রাতে যখন সব বন্ধুরা আমাকে ফোনে জন্মদিনের Wish করছিলো তখন ফোনে কথা বলতে বলতে ফেসবুকে এসে দেখি একটা নিউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে, রিকোয়েষ্ট টা দেখে একরকম অবাক ই হলাম, একা ছিল "ত্রিশা"র ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, আমি তারাতারি Accept করেই মেসেজ এ গিয়ে দেখলাম, আমাকে ও Birthday Wish করেছে আর...
লিখেছেঃ আপনাকে জন্মদিনের উপহার টা হল আমার ফ্রেন্ডশিপ, এখন আপনি খুশি তো??
আমার তো মেসেজ দেখেই খুশির ঈদ নেমে এলো, তারাতারি তাকে যত ভাবে খুশি হওয়া টা প্রকাশ করা যায় তাই করলাম, তার পর সেই রাতে ঘুমালাম না, ভাবলাম আবার কখন সে facebook এ আসবে, যদি আবার এসে আমাকে মেসেজ করে, তো আমি তো তাকে মিস করে ফেলবো, ভোর ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমাতে গেলাম, আর ৯টায় ই ঘুম থেকে উঠে মন ভালোলাগছিল না তাই ফেস বুকে এলাম, আর এসেই তার মেসেজ পেয়ে মনটা খুশিতে নাচতে শুরু করলো, আর ১৬ডিসেম্বর আমার জন্ম দিন এর সারাদিন টা কাটলো তার সাথে ফেসবুকে Chat করতে করতে, যদি সে না থাকতো হয়তো, এবারের জন্মদিন টা আমার একদম ই ভালোকাটতো না, আজ সারা দিন ও তার সাথে মেসেজে মেসেজে কেটেছে, আজ সকাল থেকে নাস্তা খাওয়া, দুপুরে খাওয়ার কথাও ভুলে গেছি আর সবচে বড় ব্যাপার আজ গোসলে যাওয়ার ও ইচ্ছে করেনি তাকে একা রেখে, পরে শেষে সন্ধ্যায় সে একটু ফ্রেশ হবে আর মোবাইল টা Charge করবে বলে চলে গেলো, আর আমি এই মহা ঠাণ্ডার মাঝে তাড়াতাড়ি করে গোসল করে এলাম, জানিনা এটা কেমন ভালোবালাগা??? এটা কি শুধু ভালোলাগা নাকি একটা শুরু না হওয়া ভালবাসার গল্প???  (এটা ওকে Plzzz কেউ বলবেন না যেন? তাহলে কিন্তু ভীষণ বকা দিবে, ও আর আমি ওকে পাগলি বলে ডাকি...)...


<3 এই গল্পটার শেষ টা আমার জানানেই, তাই আপনারাই বলুন, এই গল্প টার শেষ টা কি হতে যাচ্ছে?? এটা কি শুধু ভালোলাগা নাকি একটা শুরু না হওয়া ভালবাসার গল্প??? <3
<3 লিখায় কোথাও কোনো ভুল থাকলে দয়াকরে ক্ষমা করে দিবেন, নিজের মত করে লিখতে গেলে কিছু তো ভুল হতেই পারে তাই না??? <3

<3 ভালোলাগলে লাইক, কমেন্ট করুন??? <3

রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২

''মায়াবিনী''
By- Abandøned Warriør Jamesbøy

এখন শীতকাল। সকাল ৯.০০ টা,
বিরক্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। আব্বু বাজারে যাচ্ছে তাই দরজা বন্ধ করার জন্য ডাকছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে দরজা লাগিয়ে লেপের নিচে ঢুকে পরলাম।
মহানিদ্রা প্রায় চোখের কাছে এসে পরেছে এমন সময় বিকট শব্দে মোবাইলের রিং-টোন বেজে উঠল। মেজাজ খারাপ করে কল রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে বলা হল-
-হ্যালো।
-হেলতে পারব না। শুয়ে আছি। কি চাই ?
-আজকে হরতাল, ঘর থেকে বের হবে না। চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে, ওকে ?
-কুইনাইন খাইসো ?
-মানে ?
-আমি রাতে কি বললাম ? আমি বললাম না যে আমি ১২টা পর্যন্ত ঘুমাব আজকে ? আমার ঘুমটা ভাঙ্গালে
কেন ?
-ওহ, সরি। ভুলে গিয়েছিলাম।
-হুম। ফোনটা রাখো।
-রাগ কোরো না প্লিজ।
-হুম। ফোনটা রাখো।
-সরি।
-ফোন রাখো।
-সরি বললাম তো!
-ঐ ছেমড়ি চুপ! তোর সরির থোড়াই কেয়ার করি আমি! ফোনটা রাখতে বলছি কানে যায় না ??? ফোন রাখ। আর একবারও ফোন দিবি না। পেত্নি কোথাকার।
বলে আমি নিজেই ফোন বন্ধ করে দিলাম ঘুম।
ঘুম ভাঙল এগারটায়।
উঠে যাবতীয় কাজকর্ম সেরে খেতে বসলাম। হঠাৎ সকালের ঘটনার কথা মনে পরল। সাথে সাথে মাথায় বাঁশ। হায় হায়! একি করলাম! ঐ মেয়ে নিশ্চয়ই রেগে ফায়ার হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে কল করলাম ওকে। যান্ত্রিক এক রমণী শুনিয়ে দিল “আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে, কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন, ধন্যবাদ!” কিন্তু আমারতো কিছুক্ষণ পরে ডায়াল করলে চলবে না। এর আগেই কিছু একটা করতে হবে। নাহলে আজ কেয়ামত হয়ে যাবে। দ্রুত একটা প্ল্যান বানিয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়িটা নিয়ে বের হয়ে পরলাম। সামনে একটা ফুলের দোকান পেয়ে বিভিন্ন ফুলসহ বেশ কয়েক রঙের গোলাপ কিনলাম। পাশে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকে একটা বিগ সাইজ ডেইরি মিল্ক কিনলাম। এইবার চললাম মিশন ইম্পসিবলকে পসিবল করতে। বেশ কয়েক জায়গায় ভাঙ্গা গাড়ি দেখে মনে পরল যে আজ হরতাল। কিন্তু এখন সেদিকে নজর দিলে আমার চলবে না। হরতালের থোড়াই কেয়ার করে এগিয়ে চললাম। মায়ার বাসা কমলাপুরে। বনানী থেকে ওদের বাসায় পৌঁছুতে পাক্কা ৩ ঘণ্টা সময় চলে গেল। যাইহোক অবশেষে ওর বাসার নিচে এসে কলিংবেল টিপে দিলাম। এর আগে সুন্দর করে ফুলগুলো একটা বক্সে সাজিয়ে নিলাম। দরজা খুলে দিল আমার একমাত্র ক্লাস ফোর এ পড়ুয়া শালা মীর। মীর আমার পুরো নেওটা। তাই আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে থামালাম। বললাম,
-যা জানতে চাইব ঠিক তাই বলবি, বাড়তি আওয়াজ করবি না। ঠিক আছে ?
মীর মাথা নাড়ল। আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।
-বাসায় কে কে আছে ?
-আমি আর আপু।
-আনটি কই ?
-আম্মুতো তোমাদের বাসায় গেছে।
-গুড। এইনে তোর ঘুষ, এটা নিয়ে চুপচাপ সামনের রুমে বসে থাক। এই বলে ওর হাতে ডেইরি মিল্কটা ধরিয়ে দিলাম। আর সে খুশিতে নাচতে নাচতে সামনের রুমে চলে গেল। বলে রাখা ভাল, আমার আর মায়ার ৭ বছরের প্রেমের কথা দুজনের পরিবারই জানে এবং খুশির সাথে মেনেও নিয়েছেন। আমাদের বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছে। সামনের সপ্তাহেই আমাদের বিয়ে। সেটা নিয়ে ২ বুড়ি সকাল বিকেল নানান রকমের পরিকল্পনা বানান, আজও তাই করছেন নিশ্চয়ই। আমি বাসায় কল করে আম্মুকে বলে দিলাম আনটিকে আজ বাসায় রেখে দিতে, কারন হরতালে বের হওয়া ঠিক হবে না। শুনতে পেলাম আমার শাশুড়ি আমার বিচক্ষণতার প্রশংসা করছেন। আমি মুচকি একটা হাসি দিলাম, কিছু বললাম না। আম্মু আমাকে সাবধানে থাকতে বলে ফোন রেখে দিলেন। তো এখন আমার পথ ক্লিয়ার। বিড়ালের মত নিঃশব্দে পা ফেলে মায়ার ঘরের দরজায় পৌঁছে গেলাম। আস্তে করে দরজা খুলে দেখি আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হচ্ছে। মায়া রাগ করে বারান্দায় বসে ইয়ারফোনে গান শুনছে। আমার দিকে পিঠ দিয়ে থাকায় আমাকে দেখতে পায়নি। ওকে রাগ করলে আরও অনেক বেশী মায়াবী লাগে। কিছুতেই নজর সরানো যায় না। তাই আমি মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে ওকে রাগিয়ে দেই। এখন আমি বহু কষ্টে নিজেকে সামলে ওর দিক থেকে নজর ফেরালাম। তারপর আমি চুপচাপ আমার কর্মে লেগে গেলাম। বাক্স থেকে ফুলগুলো বের করে ঘরটাকে সুন্দর করে সাজালাম। ২০ মিনিট পর নিজের কর্ম দেখে নিজেই গর্বিত। এইবার নিঃশব্দে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আশা করছিলাম ও ভয় পাবে, কিন্তু ও একটুও ভয় পেল না। শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। এরপর আমার দিকে ফিরে মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,
-এতো পিরিতি দেখাতে হবে না। সুন্দরী কোন মেয়েকে গিয়ে পিরিতি দেখাও। আমার মত পেত্নীকে না
দেখালেও চলবে।
-দেখ ১০টা না ৫টা না ১টা মাত্র বউ আমার, এরকম করলে চলে ? আমি ভীষণ সরি! প্লিজ মাফ করে
দাও। আর কখনও এইসব বলব না। প্রমিজ।
-সেটা নাহয় বাদই দিলাম। হরতালে দিয়ে বের হতে নিষেধ করলাম, এরপরও বের হলে কেন ?
-দেখ ১০টা না ৫টা না ১টা মাত্র বউ আমার, সে রাগ করলে আমি কিভাবে থাকি? তাই চলে এলাম।
তাছাড়া আনটিও আজ আমাদের বাসায় থেকে যাবেন তাই ভাবলাম তোমাকে একটু সঙ্গ দেই এসে।
-হুম। আর কোন কাজ নাই তার! আমাকে জ্বালাতে আসছে।
এইসব বলে গজগজ করতে করতে ও ঘরের ভিতর ঢুকল এবং ঘরের চেহারা দেখে পুরো থমকে গেল। এইবার ফিনিশিং টাচ দিয়ে ষোলকলা পূর্ণ করলাম। একটা কালো গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। ও চিৎকার দিয়ে সব রাগ ভুলে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। হঠাৎ কাবাবের হাড্ডি হয়ে হাজির হল মীর। আমাদের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি মায়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
-তোমাদের বাসায় খাওয়ার কিছু আছে ? থাকলে দাও। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।
-হায় হায়! আমিতো এখনও রান্নাই করিনি। আসলে সব দোষ তোমার। আমার মেজাজ খারাপ না করালে
আমি কখন রান্না করে ফেলতাম।
-সরি বললাম তো।
-ঠিক আছে। তুমি বস, আমি কিচেনে গেলাম।

এরপর আমি আর মীর প্লে-স্টেশনে ডুয়েল খেলতে লাগলাম আর মায়া কিচেনে আমাদের জন্য রান্না করতে চলে গেল। খেলতে খেলতে মায়ার নামে হাজারটা নালিশ দিতে লাগলো মীর। আর এসব শুনে মায়া কিচেন থেকে ওর সাথে ঝগড়া করতে লাগলো। আর আমি ওদের খুনসুটি দেখে হাসতে লাগলাম। যতই ঝগড়া আর মারামারি করুক না কেন আসলে ওদের গলায় গলায় মিল। খেতে বসে ২ ভাইবোন মিলে খাওয়াতে খাওয়াতে আমার ওজন ২ কেজি বাড়িয়ে দিল। খাওয়ার পর ৩ জনে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তারপর মায়া মীরকে ঘুম পারিয়ে দিল। ঘুমন্ত মীরের দিকে তাকিয়ে ছিল মায়া। আর আমি তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। হঠাৎ দেখি ওর চোখে পানি। আমি কিছু না বলে মায়াকে ওর রুমে নিয়ে এলাম। দেখি তখনও ও নিরবে কাঁদছে। আমি জানতে চাইলাম,
-কি ব্যাপার মায়াবিনী ? কাঁদছো কেন ?
-মীরকে ছেড়ে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হবে জাবির। আমি জানি ওরও অনেক কষ্ট হবে।
-আরিহ! আমি কি তোমাকে নিয়ে পরপারে যাচ্ছি নাকি ? আমিতো তোমাকে শুধু আমার বাসায় নিয়ে
যাচ্ছি। আর সেখানে মীর যখন খুশি যেতে পারবে। মন খারাপ করার দরকার কি ?
-হুম।
এরপরও ওর মন ভাল হচ্ছে না দেখে আমি উঠে গিয়ে সাউন্ডবক্সে গান ছাড়লাম এবং মায়াকে কাছে টেনে নিলাম। ও একটু লজ্জা পাচ্ছিল। তাই ওকে সহজ করার জন্য আমি বললাম,
-অবশ্য একটা কাজ করা যায়।
-কি ?
-আমি তোমাদের ঘর জামাই হয়ে যেতে পারি।(শয়তানি একটা হাসি দিলাম।)
-হাড্ডিগুলো সব ভেঙ্গে রেখে দেব। শয়তান! গ্ররররররর......
এবার আমি হা হা করে হেসে দিলাম। ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। ধীরে ধীরে আমরা গানের তালে তালে নাচতে শুরু করলাম। অস্তগামী সূর্যের লাল আভা এসে মায়ার ঘরটিকে আলোছায়ার খেলায় ভাসিয়ে দিল।
বাতাসে ছিল ফুলের সৌরভ, চোখে ছিল অদম্য ভালবাসা, কানে ভাসছিল মুগ্ধ করার মত গান, ঐ মুহূর্তে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি পুরুষ আমি।

হঠাৎ এই আবেগঘন মুহুর্তে আমাকে জড়িয়ে ধরল মায়া। বলল,
-কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো জাবির ? আমাকে সবসময় এভাবেই ভালবাসবেতো ?
-বাসব মায়াবিনী, বাসব। কোথাও যাবনা তোমায় ছেড়ে।
অস্তগামী লাল সূর্যের আলোতে দেখলাম ওর চোখে পানি চকচক করছে। কিন্তু আমি মুছে দিলাম না। কারন এ কান্না সুখের কান্না, এ কান্না আনন্দের কান্না, এ কান্না সফলতার কান্না, এ কান্না ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়ার কান্না। এরপরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেল। আমাদের বিয়ে, বউ ভাত সহ আরও যত কাজকর্ম ছিল সব হয়ে গেল। এরপর আমি আমার মায়াবিনী মায়াকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তুলি। মাঝেমধ্যে মীর আমাদের বাসায় এসে থাকে। সব মিলিয়ে আমরা একটি সুখী পরিবার। তবে আমাদের মধ্যেও ঝগড়া হয়, খুনসুটি হয়। তাই বলে একজনের প্রতি আরেকজনের ভালবাসা কমে না। কখনও কমবেও না। কারণ প্রকৃত ভালবাসা কখনও মুছে যায় না, হারিয়ে যায় না, কমে যায় না। আমরা ভালবাসি তাই, ভালবেসে যাই...

না বলা ভালোবাসা

না বলা ভালোবাসা

কি যে হল অপুটার সে মনে হয় নিজে ও জানে না !! সেই কবে থেকে হেসেই যাচ্ছেছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়ে যে তারাএকি স্কুল থেকে পাস করে একি কলেজে পড়ে৫ মিনিট বলে পরে ১৫ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু এখন ও সে বলতে পারছে না শিমু কে তার মনের কথাকিভাবে বলবে বুঝতে পারছে নাশিমু অপুর দিকে থাকিয়ে আছেখুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তারমনে মনে বলছে গাধা একটা !! শিমু জানে অপু আসলে কি বলতে চাই! গত রাতে সে অপুর এসএমএস দেখে রীতিমতো হতবাকশিমু জানে তার পরিবার এসব মেনে নিবে নাকিন্তু সে ও তো অপু কে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসেতখনই শিমু সিদ্ধান্ত নেই অপুকে না করে দিবেশিমু ক্লাস আছে বলে চলে যেতে যাচ্ছেএমন সময় অপু বলে ফেলল, আমার এসএমএস এর উত্তরটা ? শিমু না বলে দেয়আমার পক্ষে সম্ভব নাপরে কথা হবেএখন আসি বাসায় গিয়ে শিমু অনেকক্ষণ ভাবলকি করবে বুঝতে পারছে নাকত ৩০ মিনিট ধরে অপু অনবরত কল করেই যাচ্ছেশিমু ফোন ধরছে নাঅপু ও কম না, নাছোড়বান্দার মত ফোন দিয়েই আছেঅবশেষে শিমু ফোন ধরলশিমু অপুকে বুঝাতে লাগল কেন তার পক্ষে সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব নাকিন্তু অপু শিমু কে ছাড়া কোন কিছু বুঝতে চাই নাশিমুর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে অপুকে না বলতেশিমু অপুকে ফোন দিতে নিষেধ করেএইভাবে কেটে যায় কিছু দিন
এর কিছুদিন পর শিমুর ভাই সব জানতে পারেশিমুর পরিবারের সবাই তাকে ভুল বুঝতে থাকেবাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেসামনে ফাইনাল এক্সাম, দিন দিন সে খুব ভেঙ্গে পরছে,কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে নাকেয়ার তো দূরে থাক, সান্ত্বনা দেবার মত কেউ নাই তারসবাই থেকে ও নাইবড়ই একা হয়ে গেছে সেআজকাল অপুর কথা খুব মনে পড়ে শিমুরসব তার ভুলকেন সে অপুকে ফিরিয়ে দিলখুব মেজাজ খারাপ হয় নিজের উপর তারসব কিছু ভুলে সে তার পড়াশোনায় মন দেয়রাতদিন সে পড়াশোনা করতেই থাকেএক্সাম শুরু হয়ে গেলশিমু একদিন খেয়াল করল অপু প্রতিদিন শিমুর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্যশিমু দেখে ও না দেখার মত থাকেএর মধ্যে HSC এক্সাম শেষ হয়ে গেলশহর ছেড়ে ঢাকা চলে আসার পালা চলে আসছে ২ জনেরইএই কয়েকদিনের মধ্যে শিমুর অস্তিত্ব জুড়ে অপু বসবাস শুরু করে কিন্তু সে অপু কে তার মনের কথা বলতে পারে না পরিবারের কথা ভেবে
গন্তব্য আলাদা২জনে চলছে ২ জনের রাস্তায়শিমু প্রথম সুযোগে অ্যাডমিশন হয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ারিং একিন্তু অপুর কিছু হল নাশিমুর ভার্সিটি লাইফ শুরু গেলএর মধ্যে শিমুর পরিচয় হয় আকাশ নামের এক ছেলের সাথেভার্সিটি লাইফে শিমুর বেষ্ট বন্ধুএভাবে কেটে যাই দুই দুইটি বছরআকাশের সাথে সময় কাটে এখন শিমুরআকাশ যে কখন তাকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারল নাশিমু আকাশকে বুঝাই যে সে তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন কিছু কোন দিন ভাবেই নি আর কোনদিন ভাবতেও পারবে নাআকাশ তাকে ভুল বুঝেএতদিনের বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেআকাশ ভার্সিটি তে শিমুর কে জরিয়ে নানা রকম মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে বেড়াতে লাগলযা শিমুর অনেক কাছের মানুষ ও বিশ্বাস করতে লাগলশিমু দিনদিন একা হয়ে গেলশিমু মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়েছেশিমুর অপুকে খুব মনে পড়ে এখনওর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করেএইসব ভেবে ভেবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ল হসপিটালের সিটে সে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদেআবুল তাবুল কথা বলতে থাকেঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে শান্ত করা হতবাবা-মা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাইআস্তে আস্তে সে ঠিক হয়ে উঠতে থাকেহোস্টেলে ফিরে আসে সেনতুন করে সব কিছু শুরু করে সেএখন সে আগের মত চুপচাপ থাকে নাঅনেক কথা বলে সারাক্ষণ দুষ্টামি করে নিজেকে অনেক খুশি দেখাই সবার কাছেনিজেকে অনেক বেস্থ রাখতে চাইকিন্তু মনের গহীনে রাখা অপুর স্মৃতি ভুলতে পারে না কখনওসে শত বেস্ততার মাঝে ও অপুকে খুঁজে ফিরে বেড়ায়কিছুদিন পর শিমুর এক কলেজ বান্ধবী ইরার সাথে দেখা হয়তার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর খুঁজঅপু আর সে মেয়েটি ঢাকা ভার্সিটি তে এক সাথে পড়াশোনা করেওর কাছ থেকে অপুর নাম্বারটা নিলামএরপর কয়েকদিন কেটে গেলশিমু কি জানি কি ভেবে একদিন অপুকে কল দিয়ে বসেঐ পাশ দিয়ে হ্যালো শুনার পর শিমু কোন কথা বলতে পারে না, কথা যেন আঁটকে গেছেশিমু তার পরিচয় দেয়অপু খুশিতে কি বলবে বুঝতে পারছে নাএতদিন পর শিমু কেন কল দিল তা অপু বুঝতে পারছে নাএই ভাবে কয়েকদিন তাদের মধ্যে কথা হয়অপু শিমু কে দেখা করতে বলেশিমু প্রথমে না না করলে ও পরে অপুর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়TSC তে এক পড়ন্ত বিকেলে ২ জনে দেখা করেকেউ কোন কথা বলছে নাচুপচাপ বসে আছে শিমু জড়তা ভেঙ্গে কথা শুরু করেঅপু তুমি তো সেই আগের অপুই রয়ে গেছকথা বলতে লজ্জা পাও২ জনে অনেক কথা বলবশিমু এখন সারাদিন অপুর কথা ভাবেবলতে চাই অপুকে মনের না বলা কথা গুলোবলতে চাই সেই ছোট বেলা থেকে সে অপুকে কতটা ভালবাসেতার পরিবারের জন্য সে আর অপুকে হারাতে চাই নাইরার কাছ থেকে জানতে পারে অপুর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নাইশিমু বুঝতে পারে এখনই তার মনের কথা বলার সময়এমন সময় অপু কল করেশিমু অপুর সাথে দেখা করতে চাইঅপু বলে আমি ও দেখা করতে বলার জন্য কল করেছিতোমার জন্য একটা surprise আছে শিমু মনে মনে ভাবে অপু কি আমাকে তার ভালোবাসার কথা আবার বলতে চাই... সে কি আমাকে এখন ও ভালোবাসেশিমু আজ অপুর সাথে দেখা করবেসে অপুর পছন্দের নীল শাড়ি পড়েছে , কপালে নীল টিপখোলা চুল, হাত ভর্তি সাদা চুড়িসব টুকু ভালোবাসা দিয়ে আজ অপুর জন্য সাজবে সেজীবনের ২২ টি বসন্ত একা কাটানোর পর আজ নিজেকে অপুর হাতে তুলে দিবেঅপুর হাত ধরে বাকি জীবনটা পার করে দিবে শিমু TSC তে আধা ঘণ্টা ধরে অপুর জন্য অপেক্ষা করছেঅপুটা যে কবে আসবেসময় সম্পর্কে এই ছেলেটার একটু ও খেয়াল থাকে নাআগে সম্পর্কটা হোক, তারপর ওকে আমি আমার মনের মত করে সাজাবোঅপুটা কেন যে আসছে না এতক্ষণএকটা মেয়েকে এতক্ষণ কেউ বসিয়ে রাখেআসুক তারপর মজা দেখাব এক বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনল অপুর জন্যএকটুপর অপু আসল সাথে একটি মেয়েঅপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেশিমু কিছু বুঝে উঠার আগে অপু মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অপুর বাগদত্তাকিছু দিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছেশিমু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে নাসমস্ত আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়ল তার মাথার উপরবুক ফেটে কান্না আসছে তারনির্বাক দৃষ্টিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেকিন্তু সে কিছু বলতে পারছে নাঅপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে পাগলের মত ছুটে চলে হোস্টেলে দিকেযাওয়ার পথে গোলাপ টি ফেলে দেয়নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল নাকান্না ছাড়া তার কোন কিছু করার নাইখুব বড় ভুল করে ফেলেছে সেতার ভুলে শাস্তি তার পেতেই হবেকেন সে আর আগে বুঝল নালোক লজ্জা আর পরিবার পরিবার করে মরলকেন সে অপুকে দূরে সরিয়ে রাখলদিন দিন সে ধুঁকে ধুঁকে
মরছেএখন সে তার লাইফে আর কাউকে যাই নাবাবা মা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে বিয়ে দিতে কিন্তু শিমু রাজি হয় নাঅপুর স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাইশিমু পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে চাইসবায়কে নিষেধ করে দেয় যেন তাকে কেউ না খুঁজেশিমু কে আর খুঁজে পাওয়া গেল না
১০ বছর পর জানা গেল সে একটি অনাথ আশ্রমে থাকেবাচ্চা দের সেবা যত্ন লেখাপড়া করায়তার একটি ৭ বছরের বাচ্চা আছে, যাকে সে ট্রেন ষ্টেশনে কুঁড়িয়ে পেয়েছেবাকি জীবন টা এখানে কাটিয়ে দিতে চাই শিমুবুকের মাঝে একটি কষ্ট এখন ও বয়ে বেড়ায় সেসে অপুকে বলতে পারে নি তার না বলা ভালোবাসাএখন ও রাত হলে শিমু অপুর ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকেকখন যে চোখের কোণে জল চলে আসে বুঝতেই পারে না...
লিখেছেনঃ রোকসানা

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

ভাগ বসানো মেয়ে....

ভাগ বসানো মেয়ে....

আমি যে কলেজ টায় পড়তাম সেটা ছিল স্কুল এন্ড
কলেজ। সেদিন ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের
মহড়া চলছিল, মহড়া দেখতে আমার মত আর
অনেকে হাজির।
অডিটরিয়ামে কি একটা সেমিনার চলছিল তাই
বানিজ্য ভবনের ছোট্ট ক্লাসটাই মহড়া হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি ই শেষে আসলাম
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার পিঁছু পিঁছু আরও
একটি মেয়ে আসল, বসার জায়গা নেই, আমি ছোট্ট
একতা ধুলোমাখা বেঞ্চ পেলাম
ঝেঁড়েঝুঁড়ে বসে পড়লাম। মেয়েটি বসার কোন
জায়গা না পেয়ে দাড়িয়ে আছে, আমি কি বলব
পাশে বসতে? আবার কি না কি মনে করে?
ভাবতে লাগলাম্, অবশেষে বললাম- এই
যে আপনি চাইলে আমার পাশে বসতে পারেন,
আমার বলতে দেরী হল মেয়েটির বসতে দেরী হলনা, একটা ধন্যবাদ দিলনা।
মহড়া দেখার পাশাপাশি আঁড়চোঁখে আমাকে ও
দেখছিল, আমি যে দেখছিলামনা তা না,
তাইতো কয়েকবার চোঁখাচোঁখি হয়ে গেল। আমার
সিটে ভাগ বসিয়ে পুরো মহড়াটাই দেখল অথচ
আমার সাথে একটা কথাও বললনা। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি, এসময়
টা তে রিক্সা পাওয়া অনেক কষ্টকর।
অবশেষে একজন কে আসতে দেখে আমি ডাক
দিয়ে থামতে বললাম, পিছন থেকে আরও কে একজন
থামতে বলল, ফিরে দেখি সেই মেয়েটি। যেহেতু আমি আগে ডেকেছি তাই আমি পেলাম
রিক্সাটি, মেয়েটি হতাশ
ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। হতাশ হবারই কথা এ
সময় টা তে রিক্সা পেতে বহু হিমশিম
খেতে হবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে বসল,
- সজীব ভাইয়া, আমাকে কি নেয়া যাবে সাথে?
আমিতো থ বনে গেলাম তার মুখে আমার নাম শুনে,
- আপনি আমাকে চিনেন?
- না চেনার কি আছে? আপনাদের বাসার তিন
তলায় তো থাকি আমরা, নতুন এসেছি, আপনি চিনবেন কিভাবে সারাদিন তো বই
নিয়ে রুমেই পড়ে থাকেন্।
- আচ্ছা বসেন, আমি তাকে আমার পাশে বসার জন্য
ভাগ দিয়ে দিলাম। বাসায় পৌছলাম দুজনে। সুমির কথা বলছি, সে ক্লাস নাইনে পড়ে মাত্র,
আমাদের বাসায় এসেছে গত
মাসে আগে আশেপাশে কোথায় জানি থাকত। আমি ছোট বেলা থেকেই ঘরকুনো, আমার
রুমটা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মনে হয়,
বেশির ভাগ সময় আমার খাবার আম্মু
রুমে নিয়ে আসে। তাই নতুন ভাড়াটিয়া কে এল
কে গেল আমি জানিওনা। এরপর থেকে প্রায় আমার
সাথে আসা কিংবা যাওয়া হয়ে যেত কলেজে।
আমাদের বাসায় ও আসা বেড়ে গেছে সুমির,
আম্মুকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করত, আম্মু ও
ওর ভক্ত হয়ে গেছে দেখলাম। শীতকালে চিতই পিঠা টা আমার খুব প্রিয়, তবে ২
টার বেশি খেতে পারিনা। সেদিন আমার
রুমে আম্মু নাস্তা রেখে গেল, দেখি একটা মাত্র
পিঠা, মাকে বললাম একটা কেন? মা বললেন, ২
টাই রেখেছিলাম
একটা সুমি এসে খেয়ে ফেলেছে। দেখেন তো কেমন লাগে ? শেষ পর্যন্ত দেখি এই
মেয়ে আমার খাবারেও ভাগ বসাতে শুরু করেছে। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন শুনলাম আমার
রুমে এসে আমার অনুপস্থিতে আমার ল্যাপটপ, বই
নিয়ে ঘাটাঘাটি করে.. এইচ,এস,সি পরীক্ষার পর আমার
সেনাবাহীনি তে চান্স মিলে গেল, চট্টগ্রামের
ভাটিয়ারি তে চলে গেলাম ট্রেনিং এ, মা আমার
একা হয়ে গেলেন, সুমি হয়ে উঠলো আম্মুর একমাত্র
বন্ধু, সহযোগী সব কিছু। ট্রেনিং এ থাকাকালীন একদিন ফোন করলাম,
সুমি ই ধরল ফোনটা। - আন্টির শরীর খারাপ, তাই
আমি রান্না টা করে দিচ্ছি, আংকেল
এখনো আসেনি বাসায়।-সুমি, আমার মায়ের
দিকে একটু খেয়াল রেখ,
- আবার আমাকে খোঁচা দিবেন না তো আপনার মা'র
ভাগ বসাচ্ছি বলে? - না, দিবনা। মা 'র সাথে কথা হলেই শুধু সুমি'র কথা বলে,
আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা সুমি ঠিকই আমার
মা'র ভাগটাও নিয়ে নিয়েছে। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা, আমার
পোষ্টিং তখন রাঙামাটি। হঠাৎ খবর আসল আম্মু
অসুস্থ। সি,ও থেকে ছুটি মিলার পর
আমি ছুটে চললাম বাড়ির দিকে, একদম
বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া লাগেনি, আম্মু কে সদর
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোট্ট একটা অপারেশন করা হয়েছে আমি জানতাম না,
আমাকে জানানো হয়নি। রক্তক্ষরণ হয়েছে আম্মুর্, রক্তও দেয়া হয়েছে।
সুমি নাকি আম্মুর জন্য রক্ত দিয়েছে। সুমির
প্রতি কেন জানি মাথা নত
হয়ে আসতে থাকে আমার। আমাদের কেউ না অথচ
সব কিছুতেই আছে। এতদিন ভাবতাম শুধু ভাগ
নিয়ে যাচ্ছে আজ দেখলাম মেয়েটি ভাগ দিতেও জানে। আমার আম্মুর শরীরের রক্তেও এখন তার
ভাগ আছে। আম্মুর অপারেশন পর একদম দূর্বল হয়ে পড়েছেন।
কাজকর্ম তো দূরে থাক তাকে দেখতেও একজন
লাগে, সুমির এইচ,এস,সি, পরীক্ষা শেষ, তাই তার
অবসর থাকায় সে ই দেখছে আম্মু কে। আমার বিয়েটা একদম জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে,
মেয়ে দেখা হচ্ছে, আম্মুর কাছে ঘুরেফিরে সুমির
কথায় শুনছি, শেষ পর্যন্ত- আমার সব কিছুতেই
ভাগ বসানো মেয়েটিকেই ঠিক করা হল আমার
জীবনের ভাগ বসানোর জন্য। বাসর রাতে সুমি কে বলা আমার প্রথম
কথা কি ছিল জানেন? 'মেয়ে, শেষ পর্যন্ত তুমি আমার জীবনেও ভাগ
বসালে'? তবে একটা জিনিসে তুমি না কেউ ই ভাগ
বসাতে পারবেনা, সেটা হচ্ছে তোমার
প্রতি আমার ভালবাসা। সুমি ঘোমটা টা একটু
সরিয়ে বলল- 'আমারো'। আমাদের দুজনের ভালবাসাবাসি চলতেই থাকে।
আমার আম্মু ও এতদিনের বন্ধু,
সহযোগী কে পুত্রবধু হিসেবে পেয়ে খুব খুশী। সুখ
দুঃখ ভাগাভাগি করেই আমাদের সংসার চলছে। জানেন? এ মুহূর্তে অনেক খূশি লাগছে আমার।
একটু আগে সুমি ফোন করে জানালো আমাদের
দুজনের ভালবাসায় ভাগ বসাতে একজন
অথিতি আসতে যাচ্ছে। রেশমা আন্টি, আম্মুর
খালাতো বোন, গাইনি ডাক্তার, একটু আগে আম্মু
আর সুমি তার চেম্বার থেকে আসল। এসেই আমাকে ফোন টা করল। পাঠক আপনারাও আসুন আমাদের সুখের
সংসারে ভাগ বসাতে, আমাদের নতুন অতিথির
নামটা ঠিক করে দিয়ে ।