আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

"অতঃপর তাকে পাওয়া"

বৃষ্টি বেশ ভাল লাগত রিফাতের। একদম ঝমঝমানো বৃষ্টি না, আবার একদম ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও না। এ দুটোর ঠিক মাঝামাঝি বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হত সে। তবে গত দু বছর ধরে বৃষ্টি হোক আর নাই হোক রিফাতের ভেতরে এক ঠাণ্ডা ঝড় বয়ে চলেছে অবিরত। বিয়ের পর থেকেই যেন কোন কিছুই ব্যাটে বলে হচ্ছে না। একা একাই নিউইর্কের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানসিক প্রশান্তির জন্য কিন্তু কিছুতেই যেন হিসেব মিলছে না। ভাল
বেসেই বিয়ে করেছিল আনিসাকে। যদিও আনিসার আগের নাম ছিল আনা। বিয়ের পর ধর্মান্তরিত হয় সে। তবে হতে পারে নি খাঁটি বাঙালি বউদের মত একজন যা রিফাতের তথা বাঙালি ছেলেদের আজন্ম এক সুপ্ত বাসনা। যার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবকিছুই কানাডা, আমেরিকা বা মেক্সিকোর মত পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব রীতি-নিয়মের বলয়ে আবদ্ধ তারই বা কি দোষ। একসময় মনে হত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঐ মনে হওয়া পর্যন্তই। শেষমেশ যা হবার তাই হল। আলাদা ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি, মনমানসিকতা, চাহিদার দুজন মানুষের মাঝে আর যাই হোক, সংসার করা সম্ভব না – দেরিতে হলেও এ উপলব্ধি তারা করতে পারে। এরপর আর কি! বিয়ের তিন বছর পর ডিভোর্স!

প্রথম ভালবাসার মানুষের সাথে সংসারের ইতি টানলেও স্মৃতিগুলো প্রতি নিয়ত অসহ্য রকমের যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে রিফাতকে। এ অবস্থার মধ্যেও জীবিকার তাগিদেই নিউইয়র্কের এক দোকানে কর্মজীবন অব্যহত রাখল। আমি নায়লা। ইতিমধ্যে আমিসহ তার অন্যান্য কলিগরাও ব্যপারটা জেনে গেছে। খারাপ সময়ে ছেলের পাশে থাকার জন্য রিফাতের মা হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে চলে এলেন দেশ থেকে। বাপহারা রিফাতের মা’ই যেন সবকিছু।

রিফাত প্রচণ্ড ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের। যাই বলবে সেটা যেভাবেই হোক করে ছাড়বে। এতটা জেদ দেখে আমি খুব অবাক হতাম। শুধু যে অবাক হতাম তা না, মাঝে মাঝে খুব বিরক্তও হতাম। একই জায়গায় কাজ করা লাগত বলে ঝগড়া হত প্রায় প্রতিদিনই। সব কিছুই ওর মত হওয়া লাগবে কেন! আমার কি মতামতের কোন দাম নেই! একবার খুব সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে ওর সাথে তুমুল ঝগড়া হল। অবস্থা এতটাই খারাপ হল যে আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। বাসায় গিয়ে খুব কাঁদলাম। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি, ‘আচ্ছা, ও এমন কেন?’ এরপর থেকে আমার মাঝে কি যেন একটা নেই নেই ভাব কাজ করত কিন্তু ধরতে পারতাম না। পরে বুঝতে পারি রিফাতের সাথে ঝগড়া করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজগুলোরই একটা। ফোনালাপ চলতে লাগল আস্তে আস্তে। যত দিন যাচ্ছে কথা বলার সময় ততই বাড়তে লাগল। অথচ কয়েক ঘণ্টা কথা বললেও যেন মনে হত কয়েক মিনিট কথা হয়েছে। অনেক রাত কেটে গেছে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়ে। কখনও কখনও ঘুম পাড়িয়ে দেয়া লাগত ওকে। মজার ব্যপার হল ফোনেও ঝগড়া চলত। প্রতিবারই ওর রাগের কাছে আমি হেরে যেতাম। প্রতিবারই আমাকেই ঠাণ্ডা করা লাগত রিফাতকে। কিন্তু আমিতো এরকম মেয়ে না। তবু কেন যেন ও সামনে থাকলে আমি আর আমি থাকতাম না। তাহলে কি আমি ওকে… যাহ! কি ভাবছি। আমার কি মাথা খারাপ যে এমন একগুয়ে টাইপের ছেলের সাথে সংসার করব। এ নিয়ে তেমন একটা ভাবতাম না যদি ওর কথা আমার মাঝে কোন আলোড়ন সৃষ্টি না করত। ওর কথাতে বুঝতে পারতাম ও আমার প্রতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম ওর গলা টিপে ধরলেও আমাকে ও আগে প্রপোজ করবে না। যা করার আমাকেই করতে হবে।

বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়াতে বাসা থেকে আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু হয় জানতে পারলাম। টেনশান গেল বেড়ে। আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম রিফাতকে আর অন্য কারও হতে দেব না। এও বুঝতে পারি ঘৃণা করার জন্য নির্দিষ্ট কারণ লাগলেও ভালবাসার জন্য কোন নির্দিষ্ট কারণ লাগে না। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ‘তোমায় ভালবাসি’ কথাটা রিফাতকে জানিয়ে দিলাম। আনন্দ, চাপা টেনশান, মানসিক চাপ, আতংক সব মিলিয়ে যেন আমি অন্য গ্রহের মানুষ হয়ে যাই। রিফাত রাজি হবে জানা ছিল তবে আমার পরিবার কিছুতেই মেনে নিল না। খুব স্বাভাবিক কেনই বা মেনে নেবে? রিফাত তখন ভাল কোন পেশায় নিয়োজিত ছিল না। ওর ইনকাম দিয়ে কোনরকমে নিজের চলে যায় কিন্তু সংসার করার মত আর্থিক অবস্থা তখন নেই। তবে ছিল আমার প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা আর মায়া। সব পরিবারই চায় তাদের মেয়ে সুখী হোক। এজন্য অলরেডি স্ট্যাব্লিশ এমন ছেলে খোঁজা হচ্ছিল আমার জন্য। কিন্তু আমার সব সুখ যে রিফাতকে ঘিরে এটা কিছুতেই আমার বাবা-মা মেনে নিল না, কিছুতেই না। আমার পরিবারের একজনকেও পেলাম না আমার পক্ষে থাকতে এমনকি দুলাভাইরাও আমার ঘোর বিপক্ষে। অনেক চড়াই উতড়াইয়ের মধ্যে প্রবাসে আমি আমার গ্র্যাজুয়েশান শেষ করলাম।

আমরা মোট চার বোন, এবং আমিই সবার ছোট; ভাই নেই। সেজ বোনের বিয়ের কথা চলছে। আমি, মা, বড় দুবোন এই চারজন বাংলাদেশে রওনা দিলাম সেজ বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এটেন্ড করার জন্য। তিন মাস পরেই রিটার্ণ টিকিট আমাদের। রিফাতের ধারণা ছিল দেশে গেলে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে পারে, এজন্য আমরা বিকল্প প্ল্যানিং করলাম। তবে তখনও বুঝিনি প্ল্যানগুলো এত কাজে আসবে। এও বুঝিনি আমার মত সাধারণ এক মেয়ের সামনে অপেক্ষা করছে দুঃসাহসিক কিছু অভিযান।
কলাবাগানের বাসায় ফিরেই বুঝতে পারলাম বাবা আমার উপর যথেষ্ট ক্ষ্যাপা। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যখন পাসপোর্ট আর ফোন কেড়ে নেয়া হল। আমি অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম। পায়ের নিচে যেন মাটি নেই আমার। রিফাতের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র উপায় বন্ধ হয়ে গেল আমার। সারা দিন রাত কাঁদলাম। কিন্তু বাসার সবার একই কথা- রিফাতকে ভুলে যাও। তোমার জন্য আরও ভাল ছেলে দেখা হচ্ছে, বিয়ে করে তবেই এখান থেকে যাবে। কথা ফাইনাল। আমিও চাইনি মা-বাবার অবাধ্য হতে। ছোট মেয়ে বলে আলাদা আদর যত্ন সবসময়ই পেয়েছি। কিন্তু রিফাতের চেহারা যখনই আমার মনের অতৃপ্ত আকাশে ভেসে ওঠে তখন আমি আর আমি থাকি না। এখন আসি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর আর চ্যালেঞ্জিং দিনগুলোর প্রসঙ্গে।

তখন রোজার মাস। বাসায় একরকম বন্দি আমি। ঢাকা শহরের পথ ঘাট আমি কিছুই চিনি না। সেহরি খেয়ে সবাই ঘুমে। কেউ সকাল নয়টার আগে উঠবে না। হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। মাকে চিরকুট লিখে সকালে বাসা থেকে পালিয়ে গেলাম দরজা খুলে। দোকান থেকে প্রথমেই ফোন দিলাম রিফাতকে, এরপর প্ল্যান অনুযায়ী রিফাতের দুই বড় ভাইকে ফোন দিলাম। উনারা আমার হবু ভাসুরের বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানেই হল আমার আশ্রয়। কিন্তু বিপত্তি হল আমার কাছে পাসপোর্ট নেই। দেশ থেকে পালাতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যেই। কি যে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাচ্ছে আমার বুঝাতে পারব না। ফোন দিলাম আমেরিকান এম্বেসিতে। ওদের জানালাম, আমি আমেরিকান সিটিজেন। এখানে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আমার পরিবার কিন্তু আমি রাজি নই। ইউএসএ তে যেন ফিরতে না পারি এজন্য আমার পাসপোর্ট এমনকি সেল ফোনও কেড়ে নিয়েছে। প্লিজ, হেল্প করুন। আমি বাসার ঠিকানা আর বড় দুলাভাই এর ফোন নাম্বার ওদের দিলাম যোগাযোগ করার জন্য। রুলস অনুযায়ী এখন আমেরিকান এম্বেসি আমাকে হেল্প করবে। এম্বেসী থেকে দুলাভাইকে ফোন দিয়ে বলা হল আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে এম্বেসিতে এসে পাসপোর্ট ফেরত না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব, প্রয়োজনে এরেস্ট করব। রাগে পরিবারের সবাই অগ্নিশর্মা আমার ওপর। কিন্তু তখন আমার আর করণীয়ই বা কি ছিল। দুলাভাই এসে পাসপোর্ট ফেরত দিল ঠিকই কিন্তু সারাদিন এম্বেসির চারপাশেই ঘুরঘুর করত আমাকে ধরার জন্য। আমি কয়েকদিন পর অবস্থা বুঝে পাসপোর্ট আনতে গেলাম এম্বেসি থেকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। রিটার্ণ টিকিটের তারিখ আগাতে হবে নাহলে আমি যে কোন সময় কট খেয়ে যেতে পারি।

নির্ঘুম রাত যাচ্ছে আমার। বাইরে বের হলেই গা হাত পা কাঁপে। কিচ্ছু ভাল লাগছে না। একদিকে মা-বাবার কান্না আরেক দিকে রিফাত। মা-বাবার আদর ভালবাসা আর রিফাতের ভালবাসা দুটোই দরকার আমার জন্য। আমি কোনটাই হারাতে চাই না। কিন্তু তখন এমন অবস্থা যে কোন একটা আমাকে বিসর্জন দিতে হবে। ইতিমধ্যে আমার হবু শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে খুব পছন্দ করলেন। এমনকি উনার পরিবারের সকলের অপ্রত্যাশিত ওয়েলকাম পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত। রিফাতের বড় ভাই দুজন অনেক চেষ্টা করে আমার টিকিট ওকে করলেন তিনদিন পর। রিফাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্য আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। তবে এ কথা সত্য যে শ্বাশুড়ির সাপোর্ট না পেলে হয়ত আমার আর আগানো হত না। পরিবারের মায়া-মমতা, স্নেহ ত্যাগ করে ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে আমি চলে এলাম নিউইয়র্কে। রিফাতকে জড়িয়ে ধরে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। তার অশ্রুসিক্ত কোমল আলিঙ্গনের উষ্ণতায় আমি আবার শক্তি ফিরে পেলাম নিজের মধ্যে। আর সময় নেই হাতে। হ্যা, আমরা বিয়ে করে ফেললাম।

এ খবর জানার পর থেকে আমার পরিবারে মুখ দেখানো বন্ধ, সাথে কথা বলাও। রিফাতকে হারানোর আর ভয় নেই এই বিশ্বাস আমার মনের মধ্যে ছিল, আছে, থাকবে। তবে কিছুতেই মা-বাবা মেনে নিলেন না। রিফাতের ইনকাম তেমন না থাকায় কষ্ট করেই দিন চলতে লাগল। যেদিন আমার ছেলে হল সেদিনই রিফাত খুব ভাল চাকরির কনফার্মেশান পেল। আমাদের তখন আনন্দের সীমা ছিল না। প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলাম এবার অন্তত মা-বাবা ঠিক হবেন। কিন্তু না তখনও তারা অনড়। আমি আমার দিক দিয়ে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখলাম না। ভাল খারাপ মিলিয়ে দিন পার করতে থাকলাম আমরা। এক বছর পর আমাদের এক মেয়ে হল। দুই সন্তান এর মুখের দিকে তাকালে কোন দুঃখ কষ্টই যেন আর থাকেনা। ক্লান্তিও দূর হয়ে যায় এক নিমিষে। এরপর থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয় নি।

এখন আমরা খুব হ্যাপি কাপল। বাবা-মার সাথে কথা হয় নিয়মিত। উনারা আলাদা স্টেটে থাকেন। সময় সুযোগ পেলে বাসায় এসে ঘুরে যান। আমাদের এখন বাড়ি আছে। আছে চমৎকার এক গাড়ি যেটাতে করে আমরা সবাই ঘুরতে যাই। বাসার পেছনের বাগানে বাচ্চা দুটো খেলে আর ‘মা’ ‘মা’ ডাক দিয়ে দৌড়ে এসে আমার কোলে ওঠে। এ ভাল লাগার কি কোন তুলনা হয়? এখনও মাঝে মাঝে মনে করি, পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়েটা কি আমি?

লিখেছেন-Rajeen Reasat (রাজিন রিয়াসাত)

কিছু কাল্পনিক কথোপকথন


-হ্যালো, হ্যালো! রিয়া?? 
-কে?? হুজ দিস??
-রিয়া, আমি মুনা। 
-ওহ। হ্যাঁ মুনা বল
-দোস্ত খবর শুনেছিস? হাইকোর্ট নাকি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে। 
আরে এটাতো অনেক আগের খবর। 
-আসলে আমি ফোন করেছিলাম এটা জানার জন্য যে আংকেল তো অনেক বড় পোস্টে আছেন সচিবালয়ে, তুই আসলে কি হবে জানিস কিছু? সরকার কি সিদ্ধান্ত বদলাবে??? 
-আরে ধুর! সরকার কেন সিদ্ধান্ত বদলাবে। মনে হয় না কিছু হবে।
-দোস্ত! তাহলে আমার কি হবে। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করলাম। মেডিকেলে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
-আরে তোর চিন্তা কি?? এবার গোল্ডেন পেয়েছিস।
-আরে গোল্ডেন পেয়েছি বলেই তো আর চান্স শিওর না। শুনেছি এখানে অনেক ধরাধরি হবে। আমার তো বলার মত কেউ নেই।
-হুম। আমি অবশ্য বাপি-কে বলেছি। দেখি বাপি কাল কথা বলবে বলেছে।
-ইয়ে, মানে রিয়া, তুই কি একটু আমার জন্য বলতে পারবি আংকেল কে। প্লিজ দোস্ত আমার জন্য এটুকু কর। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বাব-মার খুব ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হবো।
-ইয়ে মানে মুনা, বাপি ডাকছে রে। এখন রাখি। পরে এব্যাপারে কথা হবে। বাই।



-আব্বু
-কি মা?
-আব্বু, তোমার কি উপরের লেভেলে কারো সাথে পরিচয় আছে? মানে সুপারিশ করার মত?
-নারে মা। আমি সামান্য শিক্ষক মানুষ। আমার কারও সাথে তেমন পরিচয় নেই। তুই কি মেডিকেল নিয়ে বেশী চিন্তা করছিস?
-হ্যাঁ বাবা। সরকার নাকি সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আর সবাই বলছে এবার মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক ধরাধরি হবে। বাবা, আমারতো মনে হয় মেডিকেলে পড়া হবে না।
-আমি কী বলবো রে মা। কপালে থাকলে হবে। তাও আমি দেখি ধরাধরি করার মত কাউকে পাই কিনা। তুই মন খারাপ করিস না মা। একি?? কাদছিস কেন পাগলী??
-আব্বু, আমার খুব খারাপ লাগছে আব্বু। অনেক অ-নে-ক কষ্ট হচ্ছে।
-কাদিস না মা। সবার কপালে সব কিছু থাকেনা।
-তোমার চোখে পানি কেন আব্বু?? আচ্ছা দেখো আমি আর কাঁদছি না। তুমি কেঁদো না বাবা।


-বাপি? ওহ বাপি, ম্যাগাজিনটা রাখো না।
-ইয়েস মাই ডিয়ার। বল কি হয়েছে??
-আচ্ছা বাপি, আমি তো এবার শুধু এ প্লাস পেয়েছি। আর এসএসসিতে শুধু এ। মেডিকেলেতো আবার ভর্তি পরীক্ষা হবেনা। তাহলে আমার কি হবে, বাপি?
-আরে? কি হবে মানে? তোমার বাপি আছে কেন?? আমি কালকেই আবুলকে ফোন দিবো। কোন চিন্তা করো না ডিয়ার। জাস্ট চিল।
-ওহ বাপি! ইউ আর সো সুইট। বাপি, চলো আজ বাইরে খাই।
-হুম। ওকে। গেট রেডি দেন।


-হ্যালো, আপনি কি জনাব আবুল সাহেবের পিএস বলছেন??
-জ্বী না, আমি উনার পিএস এর পিএস বলছি। কি দরকার বইলা ফালান।
-না, মানে আমি আসলে
-আরে, এত আমি, আসলে করতেছেন ক্যান??? সোজা কামের কথায় আসেন। মেডিকেলের লাইগ্যা ফোন দিছেন??
-জ্বী, জ্বী ! আপনি ঠিক ধরেছেন।
-জিপি কত??
-জিপি মানে?? আপনি কি জিপিএর কথা বলছেন?
-ঐ হইলো। কত?
-জিপিএ তো এ প্লাস। তবে দুটা গোল্ডেন না। এসএসসিতে খুব শরীর খারাপ ছিল বলে গোল্ডেন পায়নি।
-ধুর মিয়া। সোনাগুলা নিয়াই ভেজালে আছি। আপনে তো সোনাও পান নাই।
-জ্বী মানে আমি তো না। আমার মেয়ে।
-ঐ হইলো। সরকারীতে হবে না। বেসরকারী মেডিকেলে চেষ্টা করতে পারি। তয় খরচা বেশী পড়বো।
-মানে বলছিলাম কি যে, সরকারীতেই যদি একটু দেখতেন। বেসরকারীতে পড়ানোর ক্ষমতা নাই আমাদের।
-বলেন কি?? আপনি কি করেন আগে এইডা বলেন।
-জ্বী, আমি একজন শিক্ষক।
-ও। বুঝছি। তাইলে ভাই চেষ্টা কইরেন না। অনেক টাকার মামলা।
-কেন ভাই? ২-৩ লাখেও কি হবে না??
-হা হা হা। ধুর মিয়া। আপনার কোন আক্কেলই নাই। এইবারের রেট কত জানেন?? এইবারে সরকারী মেডিকেলের রেট হলো ১০- ২০ লাখ। বেসরকারি ৫-১০, সাথে বেসরকারি মেডিকেলের নিজের ফি তো আছেই।
-ওহ। ঠিক আছে ভাই। ধন্যবাদ।


-হ্যালো, স্লামালাইকুম স্যার।
-জ্বী, আমজাদ সাহেব। কেমন আছেন বলেন?
-স্যার, সবই আপনাদের দোয়া। আপনার শরীরটা ভালো তো স্যার?
-আর বলেন না, এই পোলাপান গুলা কি সব মানব-বন্ধন টন্ধন করতেছে। কেমন লাগে বলেন। ওদিকে ম্যাডাম আবার বলতেছেন সিদ্ধান্ত যেন ঠিক থাকে।
-স্যার, আপনি চিন্তা করেন না। কয়েকদিন পর এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া আমরা তো আর বসে নেই। আমরাও সরকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে মিছিল করার লোক লাগিয়ে দিয়েছি।
-তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
-স্যার, এবার একটা অনুরোধ ছিল।
-বলে ফেলেন।
-স্যার, আমার মেয়েটাকে কিন্তু ঢাকা মেডিকেলেই রাখতে হবে। ও এবার এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু এসএসসিতে নরমাল এ।
-তাহলে তো একটু কেমন হয়ে গেলো না?
-স্যার, কি যে বলেন? আপনার কাছে এগুলো কোন ব্যাপার নাকি? আপনি শুধু বলেন বাকিটা আমি কালই ব্যবস্থা করে ফেলবো।
-হে হে হে। আপনি সাথে সাথেই বুঝে ফেলেন ভাই। যাই হোক সময়মত আমাকে একটু মনে করিয়ে দিয়েন। আর কাল একজন ঠিকাদার পাঠাবো আপনার কাছে। কাজটা দিয়ে দিয়েন। সে আবার আমার শালার শালা হয়। হা হা হা।
-হা হা হা। শালার শালা। খুব কাছের সম্পর্ক স্যার। আপনি চিন্তা করেন না। ওটা আমি দেখছি।

পরিশিষ্টঃ
কথোপকথন লেখার একটা সমস্যা হলো আবেগ দেয়া যায় না। শুধু সংলাপ বলে যেতে হয়। তবে মাঝে মাঝে সংলাপে লুকিয়ে থাকা আবেগটাকে ধারণ করার মত যোগ্যতা লেখকের থাকেনা। আমিও সে যোগ্যতা রাখিনা। শুধু হতাশা আর কষ্টের হাহাকারের উষ্ণতাটা টের পাই। লেখার সময় নিজের জীবনের সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেলো। কত চোখের পানি ঝড়ালে আজকাল উচ্চশিক্ষার সিড়িটা পাওয়া যায়???

লিখেছেন-Tanvir Islam

"লুকায়িত ভালোবাসা"

"লুকায়িত ভালবাসা"
-তোর কি একটু সময় হবে?
-কেন?
-তোর সাথে কিছু কথা ছিল
-আমার কাজ আছে
-তোর কি হয়েছে বলবি? তুই ইদানিং আমাকে এড়িয়ে চলছিস কেন?
-তোকে কেনও এড়িয়ে চলব? তোর সাথে এইসব ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই।

কথাটা বলেই হন হন করে হেটে চলে এলাম । কি বলব ওকে ? কেন ওকে এড়িয়ে চলি? ও মানে অহনা আমার অনেক ভালো বন্ধু । এই বন্ধুত্ব যে কখন কিভাবে ভালোলাগার উপরের পর্যায়ে চলে গেছে বুঝতেও পারিনি । এটাকে ভালোবাসা ব
লব না কিন্তু তার চেয়ে খুব কম কিছুও বলতে পারবনা । কিন্তু এটা কি তা নিয়ে আমার ভাবার অধিকার ও নেই কারণ আমার এক বন্ধু সজীবওকে ভালোবাসে । সজীব আমার সাহায্য চেয়েছে ওকে পাওয়ার জন্য । আমিও কথা দিয়েছি ওকে সাহায্যও করবো . যদিও জানি অহনা সজীব কে কখনও মানবেনা । তবু সাহস করে একদিন বলেই দিয়েছিলাম-

-অহনা শুন আর কতদিন single খেতাব লাগিয়ে ঘুরবি,এবার তো double হয়ে যা
-তাই? কার সাথে হবো , তোর সাথে?
-আরে না , আমার সাথে কেন হবি? কত ভাল ছেলে আছে!
-হম, তা তুই কোন ভাল ছেলের হয়ে চামচামি করতে আসছিস?
-এভাবে কেন বলছিস? বন্ধু হিসেবে তোর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
-এতো চাপাবাজি না করে সরাসরি নাম বল।
-তুই তো চিনিসই আমাদের পাড়ার সজীব।
-সজীব?
-হম, অনেক ভাল ছেলে । তোকে অনেক ভালবাসে
-কিন্তু আমার পছন্দের না।
-কেন?
-কোন কেন টেনো নেই, পছন্দ না তো না। কার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা । তার উপর তোর বন্ধু
-তুই শোন
-ফারিক, এটা নিয়ে আর কোন কথা হবেনা

আমিও ভালমানুষের মত চলে এলাম। এই মেয়ের রাগ যা । একবার রাগলে আমার খবর আছে।

আমার ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স হয়ে গেল আর আমি বাড়ি ছাড়লাম । বাড়ি ছাড়ার পরই বুঝতে পারলাম আমি অহনাকে আসলে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু বন্ধু যেখানে ভালবাসে সেখানে আমি কিভাবে বলি, তাই কিছু বললাম না । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো ।ওর প্রতি আর দুর্বল হতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত নাম্বার বদলে ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। ওকে ভুলার জন্য ভার্সিটির একটা মেয়েকে propose করে বসলাম ।ওর জন্য পাগলামি করলাম বন্ধুদের পরামর্শে ।কিন্তু মেয়েটা পাত্তা দিল না ।আমিও নাছোড়বান্দা । ওর পিছনে লেগেই রইলাম ।মেয়েটার কপাল ভাল যে সে এসবে কোন রিএক্সান দেখায়নি । দেখালে পস্তাতে হত। কারন কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম আমি অহনার সাথে এই মেয়েকে তুলনা করছি।
আরে অহনার সাথে তো এই মেয়ের অনেক মিল ।
দোস্ত অহনা ঠিক এভাবে হাসে
আরে দেখ অহনা হাঁটেও এভাবে

আমি এবং আমার বন্ধুরা বুঝতে পারলাম অহনা ছাড়া আর কাউকে আমার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । তাই মেয়েটাকে সব খুলে বললাম আর মাফ চাইলাম ;মেয়েটা অনেক ভাল তাই বলল
-ভাইয়া , আপনি যাকে এতটা ভালবাসেন তাকে নিশ্চয় পাবেন । সাহস করে তাকে বলে দিন। আমি আপনাদের জন্য দুয়া করব

সিধান্ত নিলাম এবার বাড়ি গিয়ে বলে দিব । বন্ধুর পরোয়া আর করবো না। অহনার ভালবাসা তো ও পাবেই না । ওর জন্য আমার ভালবাসা কেন হারাবো

কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা সবসময় হয়না । তাই তো বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের কাছে শুনলাম অহনা প্রেম করছে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কিই বা করার আছে । ব্যার্থ প্রেমিক হয়েই থাকতে হবে

হঠাৎ করেই একদিন অহনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। ঐ ডাকল
- ফারিক, কবে আসছিস?
-কয়েকদিন আগে
-দেখা করলি না কেন?
-আমাদের সাথে দেখা করার সময় কি তোর আছে?
-মানে কি?
-কিছুনা । শুনলাম প্রেম করছিস?
-ও , এজন্য এত অভিমান?
-অভিমানের কি দেখলি?
-কি করব বল ?তুই তো বললি double হতে
-তাই বলে যার তার সাথে?
-কেন সজীবের সাথে করলে খুশি হতি ?
-তা কখন বললাম?
- তাহলে কার সাথে করবো?
-আমি কি জানি?
-তোর সাথে?
-না, আমার সাথে কেন করবি?
-হায় রে কপাল !তুই এখন বোকাই রইলি
-কেন কি করলাম? তোর মত প্রেম করতে পারিনাই বলে?
-আমি কার সাথে প্রেম করি?
-আমি কি জানি?
-জানার চেষ্টা করছিস?
-না, কিন্তু সবাই বলে
-এটা এমনি বলছি,যাতে কেউ জ্বালাতন না করে
-সত্যি?
-হ্যাঁ রে ছাগল

এই সুযোগ নষ্ট করা যায়না । তাই তো ওর চোখে চোখ রেখে বলেই দিলাম
-অহনা , তোকে আমি অনেক ভালোবাসি

কিন্তু ও পাত্তা না দিয়ে হাসতে লাগল । মেজাজ খারাপ হয়না? হা বা না কিছু না বলে হাসছে
-হাসিস কেন?
-তো কি কাঁদবো?
-তা বলছি নাকি? কিন্তু এভাবে হাসবি নাকি? কিছু তো বল
-গাধা, তোর এই একটা কথা বলতে ৪ বছর লাগলো?
-মানে?
-মানে আমি এটা জানতাম
-তাই? তাহলে বল তোর হ্যাঁ নাকি না?
- না
বলে আবার হাসতে লাগলো। আমি গাধা,ছাগল, বোকা হলেও বুঝতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটিকে আমি পেয়ে গেছি। আর ওকে হারাতে দেব না।

(ভালবাসার মানুষ টিকে বলে দিন ভালবাসি। হয়ত সে আপনার কাছ থেকে এটা শোনার আশায় আছে । আর যদি না বলে তবে ক্ষতি কি ভালবাসলে পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই । কিন্তু তাকে জানাতে তো পারলেন এটাই বা কম কিসের?)

লিখেছেন-Zannatun Naeem Keya

বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১২

কদম ফুল......।।

কদম ফুল......।।

গল্প কি ভাবে লিখে তা জানি না। বাস্তব কোন কথা যদি গল্প বলা যায় তাহলে এই লেখা টা গল্প বলা যাবে। তবে কিছুটা কল্পনা তো থাকবেই। যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই গল্পের নায়ক আর নায়িকা এর নাম তা বদলে দিলাম। বাকি মুল কাহিনি তা বাস্তব থেকে তুলে ধরলাম।

ছেলে টার নাম শুভ্র। তৃতীয় বর্ষ এর ছাত্র। কিছুটা লাজুক আর অনেক টা আবেগময় একটা ছেলে। ও চাইত ওকে কেউ অনেক ভালবাসুক। যে ভালবাসা তে কোন রকম মিথ্যা বা ছলনা থাকবে না। কিন্তু পাওয়া আর হয়ে ওঠে নি। প্রথম বর্ষ এর নবীন বরন অনুষ্ঠান। বন্ধু দের জোরাজোরি তে শেষ পরজন্ত শুভ্র কে ও যেতে হল। সেখানেই গল্পের নায়িকার সাথে প্রথম দেখা। মেয়েটার নাম কথা। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দেখেই শুভ্র এর ভাল লেগে যায়। এর পর ৫-৭ দিন শুভ্র দূর থেকে মেয়েটিকে দেখতে থাকে। ওর কথা বলা।, ব্যাবহার, চলাফেরা সব ই ঠিক তেমন যেমন টা শুভ্র কল্পনা করেছিল। বন্ধু দের বলে ওর মন এর কথা , সবাই বলে যে তাকে যেয়ে সরাসরি বলতে। কিন্তু শুভ্র র সাহস হয় না। অনেক কষ্টে একদিন শুভ্র কথা কে ডাক দেয়।
আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? এইটুকু বলার পর যখন কথা বলে হ্যাঁ বলুন। ব্যাস শুভ্র কিছুক্ষণ তোতলাতে থাকে তারপর দৌর মেরে পলায়। কথা আর বলা হল না। কথা তো অবাক।
শুভ্র এর পর অনেক দিন কথা কে ডেকে কথা টা বলতে চেয়েছে কিন্তু সাহস করে আর বলা হয় নাই। শেস এ একদিন আবার কথা কে ডাক দেয়। এবার কথা বলে যে আপনি কি কিছু বলবেন নাকি পলাবেন। ? হি হি ......
শুভ্র র আবার ও সব গোলমাল হতে থাকে তাই তারাতারি চোখ টা বন্ধ করে এক নিশ্বাস এ বলে ফেলে
দেখুন আমি কথা টা বললে আপনি আমাকে থাপ্পর মারতে পারেন। কলেজ এ নালিশ করতে পারেন। বা কাউকে দিয়ে আমাকে মার ও খাওয়াতে পারেন। কিন্তু তবু আমি বলব আর কথা হল যে আমি আপনাকে আমার মন এর মাঝে সেই জায়গা তে বসিয়েছি যেখানে ভালবেসে যারা জীবন এ একজন কেই বসানো যাবে আর কাউ কে কোন দিন ও না।
এইটুকু বলেই শুভ্র আবার ও দৌর, বলতে পার চোখ বন্ধ করেই দৌর। কথা তখন ও দারিয়ে আছে। মনে হয় একটা স্বপ্নের মাঝে চলে গিয়েছিল।
ভয় এ ভয় এ ১০ দিন পর শুভ্র কলেজ এ ঢুকল। ও ভাবছিল যে হয়ত এই বুঝি কেউ মারবে। হতাত কথা কে আসতে দেখে ভয় টা আর ও বেরে গেল। পলাতে যাবে ঠিক এইসময় কথা হাত ধরে ফেলল।
কি? আমি কি ভুত যে আমাকে দেক্লেই পালাও? ভালবাসার কথা বলে এত দিন কোথায় লুকিয়েছিলে। জানও প্রথম এ তোমার কথা গুল ভেবে অনেক হেসেছি, কিন্তু তুমি আসছ না দেখে কেন জানি না তোমাকে মিস করতে থাকি, আর মন এর অজান্তেই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
ঠিক শুভ্র যেমন এক নিশ্বাস এ কথা গুল বলেছিলও আজ কথাও তাই বলে ফেলল। বলেই কথা লজ্জা পেয়ে গেল। আর একদম চুপ। সেই থেকে ওদের ভালবাসা।
এর কিছু দিন বর্ষা কাল চলে এল। কথা একদিন বলল কি বেপার শুভ্র তুমি কিন্তু আজ ও আমাকে একটাও গোলাপ দাও নি? কেন?
শুভ্র শুধু মুচকি হাসল। সে দিন রাত এ অঝর ধারা তে বৃষ্টি নামল। বর্ষার প্রথম বৃষ্টি।
রাত ৯ টা। বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। হতাত শুভ্র ফোন করে কথা কে বলল যে একটু কি গেট খুলে বাড়ির বাহিরে আসতে পারবে? কথা ভাবল মজা করছে। কিন্তু পরে জানালা দিয়ে দেখল শুভ্র রাস্তা তে দারিয়ে। কথা অনেক কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে বাইরে এল।
শুভ্র এক গোছা কদম হাত এ বৃষ্টি তে ভিজতে ভিজতে কথা কাছে এগিয়ে এল। বলল
গোলাপ এর তো কাটা থাকে। , আমার ভালবাসা তে কোন কাটা নেই। আমার ভালবাসা এই বর্ষার প্রথম কদম ফুল এর মতন পবিত্র আর স্নিগ্ধ। আর এই ভালবাসা শুধু তোমার জন্য। বলে ফুল গুল কথার হাত এ তুলে দিল।
কথার দু চোখ দিয়ে তখন অঝর ধারা তে জল পরছে। বৃষ্টির জল এর মাঝেও শুভ্র তা লক্ষ করে কথার চোখ মুছে দিচ্ছে। , ..............................
এর পর ৩ টা বছর কেটে গেছে। কোন অনুষ্ঠান বা প্রতি বর্ষার বৃষ্টি মানেই শুভ্রর থেকে
কদম ফুল পাওয়া। শুভ্র ভাল একটা চাকরি পেয়েছে। পারিবারিক ভাবে ও ওদের বিয়ের দিন ঠিক হল।।
কথা বলেছিলও ওদের বাসর ঘর সাজানো হবে শুধু কদম ফুল দিয়ে। আর তার মাঝে আমি আর তুমি বসে থাকব।
শুভ্র বলল ঠিক আছে। কদম ফুল এর মাঝে মাঝে আজ অন্তত কয়েকটা লাল গোলাপ থাকবে।
কিন্তু এত কদম কই পাবে তাই শুভ্র গ্রাম এ চলে গেল।
বিয়ের দিন সকাল এ বৃষ্টি হচ্ছে। শুভ্র মোটর সাইকেল এর পিছনে অনেক কদম ফুল নিয়ে বারি আসছে। বাড়ি পেতে মাত্র আর ৫ মিনিট বাকি। ভাগ্যের কি পরিহাস। রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে একটা ট্রাক আসছিল যার নিয়ন্ত্রন নষ্ট হয়ে গেছিল।
শুভ্র কে চাপা দিয়ে চলে যায়। কদম ফুল গুল ছরিয়ে পরে আর শুভ্র ওখানেই মারা যায়। খবর পাওয়া মাত্র কথা দৌরে আসে।
চার দিকে তখন ও কদম ফুল গুল পরে আছে। কয়েকটা শুভ্র এর রক্তে লাল হয়ে গোলাপ ফুল এর মতন লাগছে আর ঠিক তার মাঝে শুভ্র পরে আছে। কথা ঝাপিয়ে পরে শুভ্র এর বুকে। তখন কদম ফুল র কয়েক টা রক্তে লাল গোলাপ আর মাঝে শুভ্র আর কথা। ঠিক যেমন ওদের আশা ছিল। .............................. .....................।।
কথার কথা আজ বন্ধ হয়ে গেছে। সুধু প্রতি বৃষ্টির রাত এ যখন কদম ফুল এর সুবাস ভেসে আসে তখন অঝর ধারা তে জল গরিয়ে পরে কথার দু চোখ দিয়ে.....কিন্তু আজ আর বর্ষার প্রথম কদম দিতে বা চোখ এর জল মুছে দিতে শুভ্র আসে না। ......................।।

গল্প লিখতে পারি না। জীবন আর প্রথম লিখলাম। জানি ভাল হয় নি। তবু কেউ বকা দিও না।
<< অনিক বসাক >>

ভালোবেসে তোমায় চাইবো কেমন করে সেইটা আমি জা��িনা, তাই তোমায় হারাতে বসেছি, কি করে ভালোবাস��ে হয়, অনেক বেশি... শুধু ��ইটাই আমি জানি, ভালোবে���ে মরে যাওয়ার কথা মুখে সবাইতো বলতে পারে,