আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৫

ছোট গল্প-২ (সিকুয়াল পার্ট-২)



বিয়ের বছর পর, প্রতিদিনের মতই আজও সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেছে জয়!!

দরজায় এসে বেল টিপতেই দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো রাইনা, দরজার খুলে ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে সে, রাইনা আজও জয়ের প্রিয় কালো রংএর শাড়ি পরেছে, জয় নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে রাইনার দিকে!!

কাজল কালো চোখে জয়কে ইশারা করলো রাইনা!! কেমন লাগছে তাকে??
জয় রাইনাকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর চুলে তাঁর প্রিয় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিলো, রাইনা আজও প্রতিদিনের মতই অবাক হলো, তিন বছরে একটা দিনও এই ছেলেটা একদিনের জন্যে হলেও তাঁর প্রিয় বেলি ফুলের মালা আনতে ভুল করেনি

রাইনার চোখে পানি চলে এলো, জয় তাঁর চোখে পানি সহ্য করতে পারে না, তাই জয় দেখে ফেলার আগেই সে চোখের পানি মুছে বলল, হয়ে হয়েছে এখন ছাড়ো যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি!!
বলে রাইনা জয়ের হাত থেকে অফিস ব্যাগটা নিয়ে রুমে চলে গেলো, জয়ও পিছু পিছু গেলো...

রাইনা টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে, জয় ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলো, রাইনা প্রথমে জয়ের প্লেটে খাবার তুলে দিলো...


জয় খেতে খেতেঃ

- মাছের তরকারিতে লবন কম হইছে কেন??
: ওহ, আজ পাঁশের বাসার আদনান ভাই আমি রান্না করার সময় বারান্দায় এসছিলোতো জানো আজ ওনাকে এতো হ্যান্ডসাম লাগছিলো না?? ওনার দিক থেকে একদম চোখ সরাতে পারছিলাম না, তাই......
- তাই নাহ?? গুড... ভালো, বলে জয় খাবার রেখেই হাত ধুয়ে বেডরুমে চলে গেলো

পিছনে পিছনে হাঁসতে হাঁসতে বেডরুমে ঢুকলো রাইনা...
: বাহ!! এতো রাগ?? ভালো, বউ এর উপর রাগ করা ভালো, ঝগড়া করা আরও ভালো, ভালোবাসা বাড়ে ঝগড়া করবা??
- আমার সাথে কথা বলবা না তুমি, যাও...
: আরেহ!! ফাইজলামি করো?? কথা না বলার জন্য আমারে নিয়া ভাগাইয়া বিয়া করছিলা??

জয় কাঁদবে নাকি হাসবে বুঝতে পারছে না, এই মেয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন বাহানায় জয়কে রাগিয়ে দেয়

জয় জানে রাইনা তার সাথে ফাজলামো করে, সে তাকে রাগিয়ে মজা পায় কিন্তু রাইনা এটা জানে না, তার মুখে অন্য কোন ছেলের নাম শুনলে জয়ের রাগ হয় না, বরং যা হয় তা হলো কষ্ট আর রাইনার স্বভাব হলো সব কিছুতে পালিয়ে বিয়ে করা নিয়ে কথা তোলা, খোঁটা দেয়া রাইনা বুঝেও না যে সে এইকথাটা তুলে নিজের অজান্তেই আরও বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলে তাকে। কিন্তু তবুও জয় কিচ্ছু মনে করে না, কারন জিবনের সব কষ্ট মিলিয়ে যত কষ্ট হবে তার থেকেও বেশী ভালোবাসে সে তার বউ রাইনাকে

জয় মাঝে মাঝে বছর আগে তাঁদের বিয়ের দিনের কথা ভাবে, সেই দিনের কথা ভাবতেও ভালোলাগে তার

আজও জয় ভাবতে ভাবতে আবার আবার চলে গেলো ৩বছর আগের সেই দিনে !!

- আরও একবার ভেবে দেখো তুমি, তুমি সত্যি পারবে তো??
: দেখো জয়, তুমি পারলে আমি কেনো পারব না??
- দেখো রাইনা, বাস্তব জীবনটা এতো সহজ না, যেমন করে তুমি কল্পনা করতে পারো
: তুমি আর আমি মিলে ভালোবাসায় সব কিছু সহজ করে নিবো, কল্পনাকে বাস্তব করে নিবো
- আর একটু ভেবেদেখো রাইনা, অন্য কোন উপায় বের করা যায় না??
: আর কোন উপায় নেই জয়, আমি অনেক ভেবে দেখেছি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাবা কোন কিছুতেই তার পছন্দের ছেলে ছাড়া অন্য কার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি হবে না
- কিন্তু রাইনা এভাবে পালিয়ে বিয়ে করে তোমাকে কেমন করে সুখে রাখবো?? ছোট্ট একটা চাকরিতে কত টাকাই বা পাবো?? তাতে তোমার প্রয়োজন গুলোও তো মেটাতে পারবো না
: সুখ তো শুধু টাকা দিয়ে হয় না জয়, ভালোবাসার সুখ অনেক বড় আর সংসারের প্রয়োজন গুলো মেটাতে আমিও চাকরী করবো, দুজন মিলে আমাদের সব প্রয়োজন গুলো মিটিয়ে নিবো

রাইনার কথা গুলো শুনে জয়ের মনটা খুশীতে ভরে গেলো, রাইনা চাইলে জয়ের থেকে হাজার কোটি গুনে ভালো ছেলেকেও পেতে পারতো এমন কি তার এলাকার অনেক ছেলেরাই তার জন্য পাগল ছিলো, কিন্তু সে জয় ছাড়া কারো কথা ভাবতো না কখনো। সে শুধু জয়কেই পছন্দ করতো ভালোবাসতো

তার পরের দিন রেল ষ্টেশনে জয় আর রাইনাকে বিদায় জানাতে আসলো রাইনার বন্ধু আদিব তারপর তারা বিয়ে করে চলে গেলো রাইনার প্রিয় নীলগিরিতে, রাইনার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো নীলগিরিতে বেড়াতে যাওয়া!!

পালিয়ে খুব বেশিদিন থাকতে হলোনা তাঁদের, অল্প কিছুদিনের মাঝেই দুজনের বাড়ি থেকেই তাঁদের বিয়েটা মেনে নিলো সবাই

অতীতের অনিশ্চিত সুন্দর মুহূর্তের দিন গুলো থেকে আজকের বাস্তব ভালোবাসায় ঘেরা ভুবনে ফিরে এলো জয়, সামনেই প্লেটে খাবার হাঁতে দাঁড়িয়ে আছে রাইনা, জয়কে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে সে

জয় রাইনার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, আজ রাইনাকে পেয়ে তার জিবন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তার মাঝে ভালোবাসাকে আরও বেশী পূর্ণতা দিতে অল্পকিছুদিনের মাঝেই তাঁদের ঘর আলোকিত করে আসবে নতুন অতিথি, তাঁদের ভালোবাসার আরও একটা অংশ...

রাইনা, আজ দুমাসের প্রেগন্যান্ট......

রাইনা আর জয়ের স্বপ্ন, ইচ্ছে তাঁদের কোল জুড়ে আসুক তাঁদের ছোট্ট রাজ্যের একটি রাজকুমারি, তাঁদের দুজনেরই ইচ্ছে তাঁদের প্রথম বেবিটা হোক তাঁদের মেয়ে যাকে দুজন মিলে আদর ভালোবাসায় রাজকুমারীর মতই যত্নে রাখবে তারা!!

এখন শুধু অপেক্ষা . . . ( নতুন অতিথির!!)



লিখেছেনঃ জয় রাজ খান।

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

রূপালী রুপা (রাতের গল্প)

রূপালী রুপা (রাতের গল্প)
লিখেছেনঃ Nahid Amin

সোফায় অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে নাফিস। রূপাদের বসার রুমটা অনেক সুন্দর
করে সাজানো। জানালার পর্দা থেকে শুরু করে সুকেসে সোপিস পর্যন্ত সবকিছু মধ্যেই কেমন একটা মিল আছে। সবকিছু এতো পরিষ্কার যে দেখে মনে হয় এগুলো প্রতিদিন ধোয়ামোছা করা হয়। টি-টেবিলে কিছু পত্রিকা পড়ে আছে। 

পত্রিকা পড়ার অভ্যাস তার নেই তবু একটা পত্রিকা হাতে নিয়ে কিছুপাতা উল্টে পাল্টে দেখছে। অসময়ে রূপাদের বাসায় এসে পড়েছে। তার মামার মতে বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়িতে বেশি যাওয়া-আসা উচিত না।

নাফিস এখানে আসতেও চায়নি। অফিসের কাজে বের হয়েছিল, পথে হঠাত করে হবু শ্বশুর সাইফুল হকের সাথে দেখা হয়ে যায়।

মুরব্বি মানুষ অনেক জোরাজুরি করছেন তাই উনাকে না বলতে পারলো না। অনেকটা বাধ্য হয়েই সে এসেছে।

নাফিসকে বসার ঘরে বসিয়ে উনি তো উধাও! হয়তো ঘরে নাস্তার জন্য ভালো কিছু নেই তাই বাহির থেকে কিছু আনতে গেছেন। বাঙ্গালী নিজে খেতে পারবে না এতে মাথা ব্যথা নেই, তবে জামাইয়ের আদর যত্নে এরা ত্রুটি রাখেনা। যেভাবেই হোক জামাইকে ভালো কিছু খাওয়াবেই।

ভিতর রুম থেকেও কেউ আসছে না। সে কি রূপার নাম ধরে ডাকবে? নাফিসের মাথায় কিছু ঢুকছেনা। হঠাত পাশের রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো শিলা। শিলা রূপার ছোটবোন ক্লাস টেনে পড়ে।

আজকাল কার মেয়েরা খুব চালাক হয় বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা। নাফিস এই চালাক মেয়েদের কে বড়াবড়ই ভীষন ভয় পায়। এদের প্রশ্নের ধার, তলোয়ারের চেয়ে ধারালো।

-আরে ভাইয়া কখন আসলেন?
-এইতো দুমিনিট হবে।
-দেখছেন বাবার কান্ডটা! ভিতরে এসে বলছে, ভালো কিছু রান্না কর বাসায় স্পেশাল গেষ্ট এসেছে। মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আবার ছুট দিলেন।
-বয়স হইছে তো এজন্যই অনেক কিছু ভুলে যান।
-আপনি দেখি অনেক কিছু বোঝেন। হুম ভালো ভালো।
-তোমার আপু কোথায়...ভার্সিটি তে গেছে?
-আসতে না আসতে আপুর খোঁজখবর.... ভালোই তো খুব টান আছে দেখছি?
শিলা হাসতে হাসতে বললো।
-আরে না এমনেই জিজ্ঞেস করলাম
-আপু গোসল করছে আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে ।
-আমি ওর জন্য বসে আছি না। আংকেল বললো তাই আসছি।
-হইছে হইছে আর গীত গাইতে হবে না। আমি সব বুঝি।
-তা-ই নাকি?
-হুম তাই। চা খাবেন?
-হুম খাব।

শিলা মেয়েটা ভালো তবে খোঁচা মেরে কথা বলে, নাফিসের ধারনা সব শালিকারা এমনই হয়। এরা খোঁচা না মেরে কথা বলতে পারেনা। ভার্সিতে থাকতে ওর বন্ধুরা মিলে "শালিকা শাস্ত্র" বানিয়েছিল। সেখানে সবাই সাক্ষর করে বলেছিল, "শালি ছাড়া কখনো বিয়া করবে না"।

নাফিসের কপালে শালিকা জুটে গেছে বাকিগুলার কপালে জুটেছে কিনা কে জানে?
এতোবছর পর এই কথা মনে করে মনে মনে হাসছে নাফিস।
-দুলাভাই চা কেমন হইছে? সারাজীবন তো আপুর হাতে চা খাবেন। একবার
নাহয় শালিকার হাতের খেলেন
নাফিস একটু শুকনো কাশ দিয়ে বললো, দুলাভাই !
-ওহ সরি সরি। ডাকতেই যখন হবে তাই একটু প্রাকটিস করে নিচ্ছিলাম আর কি।
-এখনই দুলাভাই ডাকার দরকার নাই। বিয়েটা হোক তা যতখুশি ডাকবা।
-হিহি লজ্জা পাচ্ছেন নাকি?
-না। তবে চা টা ভালো হইছে।
-আপু এর থেকেও ভালো চা বানায়।
-ও ভালোই
-শুনেন আপনাকে একটা কথা বলি, আপু কিন্তু লজ্জাশীল ছেলে পছন্দ
করে না। আপুর সামনে লজ্জাপেয়ে বসে থাকবেন না। একটু আগ বাড়িয়ে কথা বইলেন। আর ওর রূপের প্রশংসা করবেন কাজে দিবে। মেয়েরা রূপের প্রশংসা পছন্দ করে ।
-হাহা সব জানো দেখছি ।
-হুম জানা দরকার। তাছাড়া শালি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলাম আর-কি
শিলার সাথে টুকটাক গল্প করতে করতে গোসল সেরে রূপা বের হলো। সে একটা নীল শাড়ি পড়েছে,
গায়ে ফোটায় ফোটায় পানি এখনো লেগে আছে, চুলগুলো এখনো ভেজা।
ভেজা চুলে মেয়েদের স্বাভাবিক থেকে বেশি সুন্দর লাগে। রূপাকেও অনেক সুন্দর লাগছে, নাফিস মেয়েদের দিকে কখনো তাকায় না, চোঁখের দিকে তো নয়ই। তবে রূপার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারছে না।

ওর চোঁখে চোঁখ রেখে কথা বলতে ইচ্ছা করে। বুকে একগাদা সাহস জমিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, "এই যে মিসেস রূপা, আপনি এতো সুন্দর কেন?
আপনাকে দেখে বুকে আমার হাতুড়ে পেটার শব্দ আসে কেন?
হার্ট প্রবলেম নাকি। আপনি একটু কম সুন্দর হতে পারলেন না?
আমার বুকের ব্যথা কিন্তু দিনদিন বেড়েই চলছে। হার্ট প্রবলেম হলে আপনি দায়ী"।

রূপালী চাঁদ ও রূপার মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করে। নাহ কল্পনায় নয় বাস্তবেই তুলনা করতে হবে। আফসোস এখন বাহিরে চাঁদ নেই। থাকলে হয়তো তুলনা করা যেত কে বেশি সুন্দর। রূপালি চাঁদ নাকি রূপা। রূপার জেতার সম্ভাবনা অতিরিক্ত রকম বেশি

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)

সীমাহীন (দুপুরের গল্প)
লিখেছেনঃ Tony Khan

(১)

মুমুর মুখটা হঠাৎ এত সুন্দর লাগছে কেন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন ভোরের সতেজ দুব্ল ঘাসের উপর ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। মাথার এলোমেলো চুলের কিছুটা কপালের ঘামের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মুখে অমৃতের হাসি নিয়ে রক্ত শুন্য চিকন ঠোট হাল্কা ফাঁক হয়ে রয়েছে। তার মধ্য দিয়ে শ্বেত পাথরের মত সাদা দাঁতের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। মোহনীয় একটি দৃশ্য। মুমু আমার বউ। এখন ও ঘুমাচ্ছে। শান্তির ঘুম। এই কিছুক্ষণ আগে ওকে আমি খুন করেছি। ঠান্ডা মাথায় খুন।

প্রথমে অবশ্য ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু পরে আর তা করেনি। ঘুমন্ত মুমুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দম বন্ধ করে মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারলে ওর সুন্দর মুখটা দেখব কিভাবে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ওর সুন্দর মুখটা কেমন দেখায় সেটা দেখব বলে বালিশ চাপা দিয়ে মারার পরিকল্পনাটা বাদ দিয়ে গলা টিপে মারার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে করে অন্তত দুজন দুজনার মুখটা তো দেখতে পাব। গলা টিপে ধরার সাথে সাথে ও চমকে উঠেছিল। দাপাদাপি করতে লাগল, নিস্বাসের জন্য মুখ হা হয়ে গিয়েছিল । হাতের চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার জোগাড় হল । মুখের চামড়া কুঁচকে বিকৃত হয়ে গেল । ঠোট দুটি লোভনীয় ভাবে নড়াচড়া শুরু করল হয়ত কিছু বলার জন্যে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না পরম ভালোবেসে চুমু খেলাম । ধীরে ধীরে ওর শরীর অসার হয়ে আসতে লাগল । চোখের মনি ঘোলা হয়ে গেল । হাহ........

চলে যাচ্ছে আমার মুমু । তারপর শান্ত হয়ে গেল ও । মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে ওর মুখটা দেখে মায়া হল আমার ।

আজই আমাদের বিয়ে হয়েছে। টানা তিন বছর প্রেম করার পর। বাসর রাতে সেকি কথা মুমুর। আনন্দে ও টগবগ করছিল।

এতদিন ধরে দেখা সপ্নগুলো কিভাবে সত্যি করবে তা নিয়ে ও খুব এক্সাইটেড ছিল। কিভাবে ঘর সাজাবে, কিচেন কেমন হবে, ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম ইত্যাদি কেমন হবে তার একটা বিশদ পরিকল্পনা ছিল ওর। এমনকি আমাদের ছেলের নামও ঠিক করে রেখেছিল। অবশ্য ও মনে মনে ভেবে শিওর ছিল যে ছেলেই হবে আমাদের । ও বলত ছেলেটা স্বভাবে আমার মতই সৎ হবে । যার বুকের গভীরতা হবে অসীম । যে মানুষকে ভালবাসবে বুক উজার করে । তাই ঠিক করেছিল ছেলের নাম রাখবে আকাশ । কিন্তু হায় মানুষের সব স্বপ্ন পুরণ হয় না ।

(২)

-হ্যালো পুলিশ স্টেশন।
-ইয়েস।
-ওসি সাহেব বলছেন।
-জ্বী বলছি। বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি।
-মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।
-হোয়াট, কি বললেন?
-জ্বী ঠিকই শুনছেন। কিছুক্ষণ আগে আমি আমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছি। বাসর ঘরে শুয়ে আছে সে ।
-কি বলছেন।
-জ্বী আপনি ঠিকই শুনছেন।
-আপনি এখন কোথায়।
-বাড়িতেই আছি।
-মানে?
-মানে আমি আমার স্ত্রীর পাশেই আছি। আপনি অযথা দেরি না করে জলদি আসুন।
-ঠিক আছে আমি আসছি।
-ঠিকানা নেবেন না।
-ও হ্যা তাইতো, আচ্ছা বলেন।
-৯৪/ডি, গ্রীন রোড।

(৩)

পরের দিন পত্রিকায় একটি নিউজ বের হলো।

স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা। গতকাল মধ্যরাত্রে শহরের গ্রীন রোডস্থ একটি বাসায় নববিবাহীতা স্ত্রীকে খুন করে স্বামী আত্মহত্যা করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে পৌছালে বাসর ঘরে নববধূর লাশ কোলে নিয়ে স্বামীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর নিজের হাতের রগ কেটে সে আত্মহত্যা করে। এলাকাবাসীকে জিঙ্গাসাবাদ করে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নিকটস্থ হাতপাতালের মর্গে লাশ সরিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

[গল্পটি অনেকটা রহস্য গল্প হলেও বাস্তব জিবনে এমনি অনেক রহস্য আমাদের জিবনেও আসে, প্রতিটি সম্পূর্ণ গল্প আমাদের যা কিছু শিখাতে পারে, অসমাপ্ত গল্প হয়তো তার থেকেও বেশি কিছুই শিখায় আমাদেরকে]

এটা কোন গল্প নয়

এটা কোন গল্প নয়
লিখেছেনঃ- শেষ রাতের আঁধার

ডাক্তারের সামনে রিপোর্ট হাতে বসে আছে রুম্মান। পাশে মা। মাত্রই কাল হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেল রুম্মান। বড় ধরণের কোন অসুখ হয়ত। তাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেবার পর আলাদাভাবে ডাক্তারের চেম্বারে দেখা করতে বলেছে। অসুখ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত লাগছে না রুম্মানকে। কিন্তু মায়ের মুখে রাজ্যের চিন্তা। কি হল ছেলেটার? ডাক্তাররা কেউ কিছু বলছে না। আলাদাভাবে এখানে আসতে বলল। ডাক্তার সাহেব কি যেন লিখছেন। চোখে চশমা। কিছু কিছু ডাক্তার অল্প বয়সেই বৃদ্ধ হয়ে যায়, মাথায় বিশাল টাক পরে যায়। কিন্তু এই ডাক্তারের মাথা ভর্তি চুল। চশমা দেখে মনে হয় না পাওয়ার অনেক বেশি। নিশ্চয় খুব ফাকিবাজ ডাক্তার। পড়াশুনা কম করেছে তাই এমন।
ডাক্তার সাহেব মুখ তুলে তাকালেন। রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বললেন - কি খবর এখন? শরীর ভাল তো তোমার?
- জি।

ডাক্তাররা রুগিদের বেশিরভাগ সময় আপনি করে বলেন। কিন্তু এই ডাক্তার রুম্মানকে প্রথম থেকে তুমি করে ডাকছে। হাসপাতালে দেখার সময়ও। চেম্বারেও।
ডাক্তার সাহেবের গম্ভীর মুখটা একটু হাসি হাসি করে বললেন- দাও রিপোর্টটা দাও। দেখি তো।

রুম্মান হাত বাড়িয়ে রিপোর্টটা দিল। চশমাটা ঠিক করে রিপোর্টটা দেখলেন। কিছুটা চিন্তিত মনে হল তাকে। খারাপ কিছু না তো?
ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট পড়ে তারপর রুম্মানের দিকে না তাকিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালেন।
- আপনি একটু বাহিরে যাবেন? ওর সাথে আমি একটু একা কথা বলি।

মা চিন্তিত মুখে বললেন- খারাপ কিছু?
- আরে না। খারাপ কিছু হলে আপনাকে রেখে ওকে বাহিরে পাঠিয়ে দিতাম। আপনি যান। আমি ওর সাথে একটু কথা বলি।

রুম্মানের মা বের হয়ে গেলেন।

ডাক্তার সাহেব রুম্মানের দিকে তাকালেন। অনেক বড় মাপের নিউরোলজিস্ট একজন তিনি। বড় মাপের লোকের সামনে গেলে হাত দুটো কিভাবে যেন এক হয়ে যায়। হয় সামনে এসে এক হয়, না হয় পিছনে গিয়ে। রুম্মানের হাত দুটো সামনে এসে এক হল। গুটিসুটি মেরে বসে আছে রুম্মান।

ডাক্তার সাহেবই কথা বলা শুরু করলেন- তুমি কথা অনেক কম বল তাই না?

রুম্মান একটু অবাক হল। ডাক্তারের সামনে কেউ কারণ ছাড়া পক পক করে না। একটু কম কথা বলাতেই ডাক্তার এই কথা বলল। রুম্মান বলল- জি।
- চুপচাপ থাকতে ভালবাস?
- হ্যাঁ।
- হাসতে ভাল লাগে না?
- লাগে।
- তাহলে কম হাসো, তাই তো? কারণ ছাড়া একদমই হাসো না। এক ঘটনা শুনে যদি কেউ হো হো করে হাসে। তুমি একটু মুচকি হাসি দাও তাই তো?
- অনেকটা সে রকম। সব কিছুতে হাসি পায় না।
- বলতো আমি এসব বলছি কি করে? আমি তো তোমাকে চিনি না, জানি না। আবার আমি তো জ্যোতিষী না তোমার চোখ দেখে সব বলে দিব।
- জানি না, স্যার।
- স্যার বলতে হবে না। আঙ্কেল বল ঠিক আছে? you are same age of my child.
- আচ্ছা আঙ্কেল।
- আচ্ছা তুমি বলতো তোমার কি হয়েছিল?
- গত শুক্রবার সকাল থেকে মাথা ব্যথা ছিল। জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে জায়গা না পাওয়াতে রোদে বসেছিলাম। বাসায় আসার পর খুব খারাপ লাগছিল। মাথা ঘুরে হঠাৎ পরে গেলাম। তারপর sense আসার পর দেখি আমি হাসপাতালে। পরে শুনলাম ১৯ ঘণ্টা জ্ঞানশূন্য ছিলাম। পরদিন থেকে অনেক গুলো test করল হাসপাতালে। ৬ দিন হাসপাতালে থাকা অবস্থায়, ১২ বার ব্লাড নিল test করার জন্য। মা বাবার অনুমুতি নিয়ে সিটি স্ক্যান করল। কিন্তু কিছুই পাচ্ছিল না। এরপর আপনি রিপোর্ট দেখার পর রিলিজ দিয়ে দিতে বললেন। আপনার চেম্বারে দেখা করতে বললেন।
- বাহ, তুমি তো দেখি অনেক কথা বললে। সবসময় এভাবে বললেই পার। আচ্ছা তোমার কি হয়েছে এখনও জানো না তাই তো?
- জি না আঙ্কেল।
- তোমার TSH হরমোন কমে গিয়েছিল। স্বাভাবিক মানুষের এটা রক্তে ১-৫ মিলিগ্রাম থাকতে হয়। তোমার সেটা ০.০২ মিলিগ্রাম। আর একটু হলে মারা যেতে।

রুম্মান চুপ করে শুনে কথাগুলো।

ডাক্তার সাহেব বলে চললেন - শোন বাবা, তোমার কোন অসুখ নেই। একটু ঠিক মতন চললেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কি সারাদিন মন খারাপ করে থাক নাকি? কিছু নিয়ে চিন্তা করো?

রুম্মান কিছু বলছে না। আসলেই সারাটাদিন মন খারাপ করে থাকে। পরিবারের অবস্থা নিয়ে, এ থেকে কবে রেহাই পাবে তা নিয়ে সারাদিনই ভাবে। ভাবে জীবনে এত কষ্ট কেন? চারপাশের মানুষগুলো কত সুখী। কারও কোন কষ্ট নেই, সব কষ্ট শুধু ওর কেন? হাসতে গেলে কষ্ট লাগে, কারও সাথে মিশতে গেলে কষ্ট লাগে, কাউকে কিছু বলতে গেলে কষ্ট লাগে। সারাক্ষণ তাই চুপ করেই থাকে।

-জি চুপচাপ থাকতে ভাল লাগে। বেশি কথা বলতে ভাল লাগে না।
- ভেরি ব্যাড। এমন থাকলে তো হবে না। তোমার কোন অসুখ নেই। তাই এই অসুখের কোন ওষুধও নেই। একটু হাসি খুশি থাকলে, চুপ চাপ না থাকলেই দেখবে একদম ঠিক হয়ে গেছ। TSH ও দেখবে বেড়ে গেছে।
- জি আচ্ছা।
-কথা বলতে হবে। ছেলেদের সাথে বলতে ইচ্ছা না করলে মেয়েদের সাথে বলতে হবে। গার্লফ্রেন্ড আছে তোমার?

ডাক্তারের মুখের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল, রুম্মান। ডাক্তার সাহেব মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল- আরে লজ্জার কিছু নেই। আমি এখন তোমার বন্ধু। আমার একটা মেয়ে আছে বুঝলে? ক্লাস ১০ এ পড়ে। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি জানি। কিছু বলি না। কিন্তু চোখে চোখে রাখি। লুকিয়ে লুকিয়ে রাতে কথা বলে। আমি নিজেও লাভ ম্যারেজ করেছি। তাই বল, শেয়ার কর।
- নাই।
- সত্যি নেই?
- না।
- তাই তোমার এই অবস্থা।না থাকলে বানাতে হবে শোন, যত বেশি কথা বলবে, হাসবে তত তারাতারি তোমার সমস্যা সমাধান হবে। বুঝলে? মনের মধ্যে কোন কথা জমিয়ে রাখা যাবে না। যা মনে আসবে বলে ফেলবে। গার্লফ্রেন্ড এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে পারফেক্ট। একটুও মন খারাপ করে থাকা যাবে না। জীবনটাকে কষ্টের ভাবলেই দেখবে জীবনটা কত কষ্টের। ভাল ভাবলেই দেখবে, কত সুখের। চারপাশে তাকালেই দেখবে ভাল থাকার কত কিছু। হাসবে, কারণে অকারণে। কষ্টকে আপন ভাবলে তোমাকে তাকে রেখে যেতে দিবে না। ভাল থাকতে এত এত জিনিস লাগে না। মন থেকে চাইলেই পাবে। বেঁচে থাকতে হবে না, বল? না হাসলে না কথা বললে, না ভাল থাকলে বেঁচে থাকবে না তো। আর বেঁচে না থাকলে এই যে তোমার পাশে যে মহিলাটা চিন্তা নিয়ে বসে ছিলেন, যেই লোকটা বাসায় বসে আছে চিন্তিত মুখে ছেলের কি হল, তাদের কে দেখবে বল?চিন্তা কষ্ট মন খারাপ ঝেরে ফেলে দাও। হাসি খুশি থেকে জীবনের কষ্টগুলোকে , বাধা গুলোকে ফেস কর। আর অবশ্যই, বেশি বেশি কথা বলবে। কে বাচাল বলল, কে খারাপ বলল, দেখতে হবে না।নিজের মত চলবে , তবে আগের থেকে একটু বদলে। একজন সুখী মানুষ হিসেবে। পারবে না? বেঁচে থাকতে হলে পারতে হবে।

রুম্মান আস্তে করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ভিতরে ভিতরে অন্যরকম , অন্যকিছু কাজ করছে। বুকের ভিতরের বোজার অর্ধেকটা নেমে গেছে। মুখে একটু হাসি দিল রুম্মান। ডাক্তার সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ডাক্তার সাহেবও হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করলেন। তারপর বললেন- ডাক্তারের কাছে এসেছ, কোন অসুধ ছাড়া গেলে খারাপ লাগে। লোকজনকে দেখাবে না, ডাক্তার দেখিয়েছ? নাও কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট নিয়ে যাও।

রুম্মান উঠে দাঁড়াল। হাতে কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট ও ডাক্তারের কার্ড। বের হয়ে আসবে তখন ডাক্তার সাহেব বললেন- গার্লফ্রেন্ড হলে একটা ফোন দিও। আর কখনও ব্রেক আপ হয়ে কষ্টে থাকলেও বন্ধু হিসেবে ফোন দিও।



রুম্মান, আবারও হেসে বের হয়ে আসল। ডাক্তাররা কঠিন হৃদয়ের মানুষ, ধারণাটা এই লোক কে দেখার আগ পর্যন্ত রুম্মানের মনে ছিল। বাহিরে আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। এখনও মুখে চিন্তার ছাপ। মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল রুম্মান, আম্মুকে গিয়ে বলল। কিছুই হয়নি। একটু হাসলেই বেশি বেশি সব ঠিক হয়ে যাবে। বলে হাসা শুরু করল রুম্মান। মা তাকিয়ে আছে রুম্মানের দিকে। রুম্মান হাসছে, হাসতে হবে, এই মায়াময় মুখগুলোকে অনেক দিন দেখার জন্য হলেও হাসতে হবে।
( এটা কোন গল্প না। এটা একটা বাস্তব ঘটনা। এরপর থেকে রুম্মান আসলেই অনেক বদলে গেছে। কারণে অকারণে হাসে, বেশি কথা বলে, দুঃখ গুলোকে ভেবে নেয়, থাকেই এসব জীবনে, বক বক করে মানুষকে জ্বালায়, কেউ কেউ বিরক্ত হয়।, কেউ মেনে নেয়, কেউ বাচাল ভাবে। বেঁচে থাকতে হলে হাসতে হবে, বেশি কথা বলতে হবে। তাই করছে রুম্মান। )