আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

ভালবাসার বৃষ্টি (গল্প)

ভালবাসার বৃষ্টি (গল্প)
লিখেছেনঃ Ami Sopnil
 
‘এই সোনিয়া দেখ দেখ সেই ছেলেটা, আজকেও কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে’ জানালার পাশ থেকে ফারিহা ডাক দেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ছেলেটা কে দেখছে ওদের পেছনে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল কার পেছনে ঘুরছে সেটা বের করতে পারছে না ওরা চার বান্ধবী। কারন ওরা চারজনই এক সাথে কলেজে আসে আবার এক সাথেই বের হয়ে যায়, ঘুরতে গেলেও একসাথে। তাই ছেলেটা ওদের কে যখনই দেখে এক সাথে। কাকে পছন্দ করে সেটা একে অন্যের উপরে চাপিয়ে দিলেও প্রত্যেকের মনে সূক্ষ্ম আশা ছেলেটা যেন তার পেছনে ঘুরে। এই ফিল টা প্রত্যেক মেয়ের কাছেই অনেক স্পেসাল। ফারিহার ডাক শুনে সোনিয়া, তন্বী দৌড়ে আসে। মীম যেখানে ছিল সেখানেই বসেই থাকে। দেখছে ছেলেটাকে, বুঝলি সোনিয়া ছেলেটার মোটেও ড্রেস সেন্স ভাল না, দেখছিস কি পড়ে আছে, ক্ষেত কোথাকার, তন্বী বলে উঠে। আরে ধুর এই ছেলের আবার ড্রেস সেন্স। কি যে বলিস, সায় দেয় সোনিয়া। এই মীম তুই বসে বসে কি করছিস, বিদ্যাসাগরের ছোট বোন হতে চাস? এদিকে আয় ছেলেটা কে দেখ, মনে হয় তার আর কাপড় নেই, বলে হিহি করে হেসে উঠে ফারিয়া। বিরক্ত হয় মীম। ফারিহা দেখতে অনেক সুন্দর, সম্ভবত কলেজের সেরা সুন্দরী। প্রায়ই দেখা যায় কিছু ছেলে পেলে ওর পেছনে ঘুরছে। তাতে অবশ্য ফারিয়া বেশ মজাই পায়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। ছেলেটা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তারপরও মীম এর কাছে ছেলেটাকে অনেক কিউট লাগল। মীম ফারিহার মত আহামরি সুন্দর না হলেও আট দশটা মেয়ের সাথে দাড়ালে ওকে আলাদাই লাগবে।


ক্লাস শেষ করে ওরা যখন কলেজ থেকে বের হচ্ছে তখনও ছেলেটি সেই একি জায়গায় দাড়িয়ে। চল ওকে গিয়ে ধমক দেই,প্রস্তাব দেয় সোনিয়া। তন্বী, ফারিহা তো এক পায়ে খাড়া, বাধা দেয় মীম। আরে বাদ দে। বাসায় কাজ আছে, চল চলে যাই। এই দাড়া, তুই এত ভীতু কেন রে মীম? ছেলেটাকে ভড়কে দিব, অনেক মজা হবে, তন্বী বলে উঠে। কি আর করা ইচ্ছে না থাকলেও মীমকে যেতে হয়।

এই আপনি আমাদের পিছু নেন কেন? কলেজের সামনেও প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকেন, আপনার সমস্যাটা কি? আপনি জানেন ইভটিজার বলে আপনাকে পুলিশে দিতে পারি? সোনিয়া বেশ রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল, আশা করল ছেলেটা ভয় পাবে।

কিন্তু ছেলেটা ভয় তো পেলই না বরং ওদের অবাক করে দিয়ে সুন্দর হাসল। বলল, না আপনারা পারেন না, কারন আমি তো ইভটিজিং করিনি বরং আপনারা এখানে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। জানেন আপনাদের বিরুদ্ধে ১৫৭ ধারার কেস করতে পারি? নিরীহ একটা ছেলেকে হুমকি দেবার অজুহাতে। থতমত খেয়ে যায় সোনিয়া, চুপ করে থাকে সে।

প্রথম দেখাতেই ভালবাসা, এতে বিশ্বাস করেন? ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলল। উত্তরের আশায় না থেকে নিজেই জবাব দিল আমিও করতাম না, কিন্তু এখন করতে বাধ্য হচ্ছি, তাকে দেখার পর থেকে লাইফ টা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে আছে মন, চিন্তা ভাবনা যেন তাকে কেন্দ্র করে বৃত্ত হয়ে চারপাশে ঘুরছে। রাতগুলো নির্ঘুম, স্বপ্নগুলো কেমন জানি এলোমেলো। মনে হচ্ছে তার জন্য সব কিছু করা যায়, হা সব কিছু। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, সে আসবে বলে, আমায় বলবে, এই অনেক হয়েছে এখন হাতটা ধর, দেখতো টিপটা ঠিকমত হয়েছে কিনা? বলতে বলতে ছেলেটার চোখ দুটো স্বপ্নিল হয়ে উঠে, দেখতে ভালই লাগে ওদের।

আপনি কাকে পছন্দ করেন? সোনিয়ার প্রশ্নে থামে ছেলেটা। যদিও ওরা ভেবে নিয়েছে কে হতে পারে।

সরি তার নাম বলা যাবে না, আমি চাচ্ছি সে যাতে নিজেই সেটা বুঝতে পারে কাকে আমি ভালবেসেছি। অনেকের মাঝে থেকেও আমার অনুভূতি গুলো যেন সে ধরতে পারে। ততদিন পর্যন্ত আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব তার পথ চেয়ে। আচ্ছা আমি আপনাদের দেরী করিয়ে দিচ্ছি,সরি । যদিও আমার খুব ভাল লাগছে। বাই দা ওয়ে আমি বৃত্ত।


এই চল যেতে হবে বকবক শুনলে হবে না। ফারিহা ওদের টেনে নিয়ে আসে। ফারিহা দেখছিস ও কত্ত রোমান্টিক? রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে তন্বী বলে। ইস আমাদের তন্বী সেই খেত ছেলের প্রেমে পরে গেল, হায় প্রেম! কিছুক্ষণ আগেও যার ড্রেস সেন্স নিয়া প্রশ্ন ছিল, এখন কিনা তার প্রেমেই পরে গেল। পাশ থেকে সোনিয়া বলে উঠে। এবার তন্বী খেপে যায়। বলে আমি না হয় ড্রেস সেন্স নিয়া বলছি, আর তুই সাহসী সিংহী, ছেলেটার সামনে গিয়ে এমন বিলাই হইলি কিভাবে?? হুম? বল বল?

আরে আমি কি জানতাম নাকি ও কিসব ধারা টারার কথা বলে আমাকে ভড়কে দিবে, বলে সোনিয়া, তাকিয়ে দেখে মীম হাসছে। কিরে এতক্ষণ তো চুপ ছিলি এখন তোর কি হল? এত হাসির কি আছে।

এত সাহসী একজন কে ভয়ে সিধিয়ে যেতে দেখে হাসব না, তোকে ছেলেটা বোকা বানাল বলে হাসছি। ১৫৭ ধারা হল পার্কিং ছাড়া রাস্তার পাশে গাড়ি রাখার কেস, মীম হেসে জবাব দেয়।

তুই জানলি কিভাবে? এবার তন্বী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। আরে ওই দিন আমাদের গাড়ি এই কেস খায়, ট্রাফিক পুলিশ কে বলতে শুনছি।

তুই তখন বললি না কেন? ফাজিল কোথাকার। সোনিয়া রেগে যায়। হিহি ! আমি যদি বলে দিতাম তাহলে কি তোর ওই সাহসী রূপ দেখতে পারতাম?? হাহাহা ,হাসতে থাকে মীম।

এই তোরা থামতো। কি সব শুরু করছিস। ফালতু একটা ছেলেকে নিয়া হাসাহাসি। ফারিহা কৃত্রিম রাগ দেখায়। ওর কথা শুনে বাকিরা ফিক করে হেসে দেয়। তন্বী বলে, আসলেই কত ফালতু ছেলে নইলে কি আর ধবল রোগীর প্রেম এ পরে? আমরা কি ছিলাম না ! হে হে! আসলেই, রোগীর জন্য বেচারার ঘুম নষ্ট, দিন রাত খালি পাউডার আপার স্বপ্ন, সোনিয়া যোগ করে। এই খবরদার ফাজলামি করবি না। ফালতু কথা শুনতে একদমই ভাল লাগে না। হয় তোরা চুপ কর নইলে আমি গেলাম। ফারিহা এবার সত্যই রেগে যায়। আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর তোকে খেপাব না, তবে এটা ঠিক তোর কপাল ভাল। এত কিউট, রোমান্টিক একটা ছেলে তোকে পছন্দ করে, এত দিন ধরে তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, কল্পনা করা যায়, তাও আবার এই যুগে, যেখানে ২ মিনিটে প্রেম আর ৪ মিনিটে ব্রেক-আপ। তুই স্পেশাল রে দোস্ত, আসলেই স্পেশাল। আমার জন্য দাড়ালে তো এক পায়ে রাজি হতাম, বলে মীম। অফ যা তো তোরা বললেও শুনতে ভালই লাগছিল ফারিহার।

কিছুদিন কলেজ বন্ধ ছিল, কলেজ যেদিন খুলল সেদিন ই ছুটির পর আবার বৃত্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ওরা। ফারিহাই শুরু করে, ভাব নিয়ে বলে দেখুন আপনার মত ছেলে অনেক দেখেছি, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার পেছনে ঘুর ঘুর করেন,তার প্রেমে পরে যান, তার জন্য হেন করবেন তেন করবেন। যতসব সস্তা মেন্টালিটি। শুনুন প্লিজ আমাদের আর ডিস্টার্ব করবেন না। নাহলে আমরা স্যারদের জানাতে বাধ্য হব।

‘আপনার কেন মনে হল যে আমি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার প্রেম এ পরে যাই, আর এমন যদি হত তাহলে তো আমি সবার আগে আপনার প্রেম এ পরতাম। কিন্তু আমি তো আপনাকে পছন্দ করি না। আমি ভালবাসি মীম কে। মীম আমি জানি না তোমার জবাব কি হবে, তবে যাই হোক আমি আর পারছি না। এভাবে দিনের পর দিন তোমার অপেক্ষায় থেকে আমি ক্লান্ত। আমি আগামী কাল ঠিক এসময় তোমার জবাবের অপেক্ষায় থাকব, বলে হাটা শুরু করে বৃত্ত। হতভম্ব মীম তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। ও স্বপ্নেও ভাবেনি ফারিহাকে বাদ দিয়ে বৃত্ত ওকে প্রপোজ করবে ।

একটা ছেলে ওকে এত ভালবাসে, এত দিন ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই কেমন জানি লাগে। বুকের বাম পাশে কেমন জানি অচেনা অনুভূতি। এ অনুভূতির সাথে সে কখনোই পরিচিত না। কিশোরী একটা মেয়ের জন্য এই অনুভূতির মূল্য অনেক। রাতের আকাশ দেখতে ভাল লাগছে, গুন গুন করে গান গাইতে ইচ্ছে করছে। মন ভরে আছে অচেনা এক ভাল লাগায়। কখন সকাল হবে কখন কলেজে যাবে এই চিন্তায় ঘুম আসছে না ওর, নিষ্ঠুর রাত যেন ফোরাতেই চাচ্ছে না। সোনিয়া কল দিয়েছিল, জানতে চেয়েছিল ওর জবাব কি হবে, মীম সত্য কথায় বলে দিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব বান্ধবীরা জেনে গেছে ব্যাপার টা, সোনিয়াটা যা ফাজিল। আপন মনে হাসে মীম।

ফিজিক্স ক্লাস শেষ হতেই ফারিহার ডাক, তুই নাকি হা বলবি? ছেলেটার ব্যাপারে জানিস কিছু? নাকি এমনিতেই প্রেমে পরে গেলি। তুই কি আজীবন গাধীই থাকবি?

কেন কি হয়েছে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে মীম।

আরে বলিস না ওই ছেলে দুনিয়ার বদ, ওর কাজ ই হচ্ছে সহজ সরল মেয়েদের মিষ্টি কথা বলে পটানো, কত মেয়ের যে সর্বনাশ করছে। আর তুই কিনা ওর প্রেমে পরে গেছিস। কয়েক দিন আগে দেখিস নি এক RJ কে লাইভ প্রোগ্রামে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করল আর কয়টা মেয়ের সর্বনাশ করবি তুই? এরা হচ্ছে মুখোশ-ধারী শয়তান। এদের মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করতে নেই।

ফারিহার কথায় যেন পায়ের নিচে মাটি সরে গেল মীমের। এও সম্ভব? ছেলেটা কে তো এমন মনে হয়নি। মনটাই খারাপ হয়ে গেল ওর। অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করল, তুই সিউর তো?

আমি কি তোর সাথে মিথ্যে বলব? তুই বি সেকশনের ইলা কে চিনিস না? ওকেও প্রপোজ করেছে। দাড়া ইলা কে ডেকে আনি। বলে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল ফারিহা।

ভীষণ কান্না পাচ্ছে মীমের। ঠোট কামড়ে কান্না চাপার চেষ্টা। কেন এমন হল? সাজানো স্বপ্নগুলো তাই বলে এভাবে ভেঙ্গে যাবে? ভালবাসা ছিল না জীবনে ভালই তো ছিল সে, কেন ভালবাস তে গেল? কেন একটা মানুষের নিষ্ঠুর খেলায় সে কষ্ট পাবে। অভিমান গুলো একসময় প্রচন্ড ক্ষোভ এ পরিণত হয়। ইলা এসে কি বলল তার কিছুই মাথায় ঢুকেনি। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদতে পারলে হয়ত ভাল হত।

কলেজ ছুটির পর বের হবে হঠাৎ ঝুপ বৃষ্টি। কি আর করা যাদের কাছে ছাতা নেই সবাই গেট এর পাশের ছাউনি তে আশ্রয় নিল। এই মীম দেখ বদমাশটা ছাতা হাতে এদিকে আসছে,ফাজিল কোথাকার, একটা শিক্ষা দিতে পারলে ভাল হত। মীম পারবি ব্যাটাকে একটা চরম শিক্ষা দিতে? ফারিহা উৎসাহের সাথে বলল। এই না না বাদ দে তো এসব, আমার ভাল লাগছে না, প্রতিবাদ করল সোনিয়া। এই হাঁদারামটাকে আজকে না তোর জবাব দেয়ার কথা? যা জবাব দিয়ে আয়। দেখিস আবার রাজি হয়ে না যাস। কত্ত কিউট ছেলে রে, খোঁচা মারে ফারিহা। ফারিহার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে যায় মীমের, বৃষ্টি ভিজতে ভিজতে ওর দিকে এগিয়ে যায়। দূর থেকে দেখে ফারিহা, ছেলেটা ছাতা হাতে দৌড়ে আসে, মীম এর উপর ছাতা ধরে, তখনি এক ঝটকায় ছাতা টা ফেলে দেয় মীম। মীম উত্তেজিত ভাবে কি যেন বলে বৃত্তকে, বৃত্ত ও কিছু বলে জবাব দেয়। ফারিহা সোনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায় যখন দেখল মীম ছেলেটা কে চর মেরেছে। ছেলেটার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল সে কতটা অবাক হয়েছে। জ্বর নিয়ে বাসায় ফিরল মীম। বিছানায় পরে সারাদিন ই কাঁদল। কিছুতেই ব্যাপারটা ভুলতে পারছে না। জ্বরের কারণে কয়েকটা দিন কলেজে যাওয়া হয়নি। এ কয় দিনে মীম কেমন জানি হয়ে গেছে, শুকিয়ে একদম কাঠ। দল বেধে ওকে দেখতে আসল সোনিয়া, ফারিহা, তন্নি। ওর অবস্থা দেখে ফারিহার কান্না পেয়ে গেল। হিংসার বশীভূত হয়ে বান্ধবীর এর বড় ক্ষতি করে ফেলবে বুঝতেই পারেনি। ও তো বুঝতে পারেনি যে মীম ছেলেটা কে এত ভালবেসে ফেলবে। মীম কে সব খুলে বলল। ওরা ভাবতেও পারেনি ফারিহা এমন করতে পারে, বৃত্তের ব্যাপারে যা বলেছিল সব মিথ্যে। ফারিহা কে বাদ দিয়ে মীম কে প্রপোজ করায় সে জেলাস ফিল করে বলে এমন করেছে। ইলাকেও সে শিখিয়ে দিয়েছিল। ফারিহার কান্না দেখে মীম ওকে মাফ করে দেয়। যা হবার তো হয়েছেই। ফারিহা কথা দেয় সবাই মিলে ওরা বৃত্তকে খুঁজে বের করবে। শুধু নামটাই ওরা জানে, বৃত্ত কোথায় থাকে, কোন ইউনিভারসিটিতে পড়ে কিচ্ছু জানে না। তাই ফেসবুক ই এক মাত্র ভরসা। হাজার হাজার বৃত্ত, কিন্তু সেই বৃত্ত কে তো আর পাওয়া যায় না, সবার আবার প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি নেই। এভাবে সময় চলে যায় ওরাও এক সময় ক্ষান্ত দেয়। শুধু ভুলতে পারে না মীম। প্রথম ভালবাসা কি এত সহজে ভোলা যায়। হোক না সেটা একদিনের ভালবাসা।

প্রায় দুমাস পর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে চার বান্ধবী শপিং করে বের হবে এমন সময় তন্বী বলে এই দেখ তো ছেলেটা বৃত্ত না? আরে তাই তো, মীম দেখ, ফারিহা বলে। ভয়ে ভয়ে তাকায় মীম, যদি আশা ভেঙ্গে যায়। আসলেই তো ছেলেটা বৃত্তর মত দেখতে, তবে ভীষণ রোগা, গায়ের রঙ টাও কেমন, বৃত্ত আরো ফর্সা। পাশের মেয়েটা কে আবার? গার্ল-ফ্রেন্ড নাতো? সোনিয়া জিজ্ঞেস করল।

মীম অবশ্য এত কিছুর ধার ধারতে গেল না গার্ল-ফ্রেন্ড হলে হবে। সোজা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, এত দিন কথায় ছিলে তুমি? জান ক্লাসের জানালার পাশে দাড়িয়ে কত অপেক্ষা করেছি তুমি আসবে বলে? এলে না কেন আমার রাগ ভাঙ্গাতে, জানি ভুল টা আমার, কিন্তু ক্ষমা চাইবার সুযোগ তো দিবা। অশ্রু টলমল চোখে মীম বলে। পাশের মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থাকে।

আপনি আমাকে কিছু বলছেন? কই আমি তো আপনাকে চিনি না, ছেলেটা বলল। বৃত্ত কেন আমাকে আরও কষ্ট দিচ্ছ? আমার উপর তুমি এখনো রেগে আছ? গত দুটা মাস আমি কিভাবে যে কাটিয়েছি তা যদি বোঝাতে পারতাম। কান্না ভেজা কণ্ঠে মীম বলে।

ও আপনি বৃত্তের পরিচিত? খুব অবাক হয় ছেলেটা । ও আমার যমজ ভাই। দুমাস আগে একটা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়, আস্তে আস্তে বলে ছেলেটা।

শুনে আর স্থির থাকতে পারে না মীম, মাথা ঘুরে আসে ওর। আকাশ যেন ভেঙ্গে পরছে । মেঝেতে পরার আগেই ছেলেটা ধরে ফেলে ওকে, কানে কানে হেসে বলে এত ভালবাস আমাকে? আমি তো এতক্ষণ মজা করলাম, ওইদিনের পর অবশ্য ভাবি নাই তুমি আমাকে ভালবাসতে পার, বলে বুকে জড়িয়ে ধরে বৃত্ত। সেই দিনের মত করে আজ ও বৃষ্টি নামে, হাত ধরে দুজন নেমে যায় বৃষ্টি ভিজবে বলে। পাশ থেকে সেই মেয়েটা বলে উঠে, ভাইয়া নিউমোনিয়া বাধিয়ে দুমাস বিছানায় ছিলা আবার থাকতে চাও? এই শব্দ গুলো কানে যায়না, ওরা বৃষ্টি ভেজায় মগ্ন। এ বৃষ্টি ভালবাসার বৃষ্টি, যা মুছে দেয় সব দুঃখ কষ্ট। চলুন না ওদের সাথে ভালবাসার বৃষ্টিতে ভিজি...

ღভালোবাসা দিবসেღ

ღভালোবাসা দিবসেღ
লিখেছেনঃ Ami Sopnil 

এই দিশা কোথায় ছিলি? স্কুল তো অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে! মা রাফার সাথে ছিলাম, ওর কিছু বই কেনার দরকার ছিল, কিনতে গিয়ে লেট হয়ে গেল, জবাব দেয় দিশা। যদিও মাকে মিথ্যা বলতে হল। মাকে তো বলা যায় না যে অভির সাথে ছিলাম। আজ ভালোবাসা দিবস কোথাও একটু ঘুরতে যাব তা না, বাসায় বসে কাটাতে হবে। ভাগ্যিস আজ স্কুল খোলা ছিল নয়ত অভির সাথে দেখাই হত না। আর না দেখা হলে ওর ৩ রাতের ঘুম নাই হয়ে যেত আর আমাকেও ওর কথা ভেবে জেগে থাকতে হত। ইস যদি গল্প করা যেত সারারাত কি মজাই না হত। কিন্তু ওর এস এস সি পরীক্ষা চলছে আর রাতে কারো সাথে কথা বলি শোনলে বাবা এমন বকা দিবে,আফসোস করে দিশা। আজ তার মন অনেক অনেক ভালো, অভির সাথে দেখা হল, এক সাথে আইসক্রিম খাওয়া হল। আচ্ছা আইসক্রিম তো প্রায়ই খায় কিন্তু আজকের মত এত ভালো তো লাগেনি কোনদিন? ভালবাসার মানুষটা সাথে থাকলে চারপাশ এমন রঙ্গিন হয় কেন? সব কিছুকেই ভাল লাগে, আচ্ছা এই সুখ কি সারাজীবন থাকবে? ভাবে দিশা। অভি তার পকেট মানির টাকা থেকে ওর জন্য গিফট এনেছে আজ।প্যাকেট তা খুলতে চাইলে সে বলে বাসায় নিয়ে দেখো। পছন্দ না হলে আমার খুব খারাপ লাগবে। খুশিতে জড়িয়ে ধরল অভিকে,কখন যে অভির গালে চুমো বসিয়ে দিল টেরই পেলনা দিশা। তাকিয়ে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে আছে অভি, দিশার দিকে তাকাতেই পারছে না। উফ অভি কে নিয়ে আর পারা গেল না, ছেলেটা এত লাজুক। এই শোন এটা তোমার ভ্যালেন্টাইন গিফট, আর হা এই গিফট এর সাথে কিছু চকলেট ফ্রি আছে নাও, বলে দিশা। এখন আমাকে যেতে হবে নইলে মা চিন্তা করবে। চলে আসার সময় খুব খারাপ লাগছিল দিশার, মনে হচ্ছিল কি যেন ফেলে আসছে সে, অভির অনেক প্লান ছিল দিনটা ঘিরে। কিন্তু কি আর করা। রুমের দরজা লাগিয়ে প্যাকেট টা খুলল দিশা, দেখে তিন সেট কাচের চুড়ি, কাজল, এক জোড়া নূপুর আর একটা ভয়াবহ সুন্দর ছোট আয়না। আয়নার উপর তাকাতেই নিজেকে দেখতে পেল সে, ভাল করে তাকাতেই দেখল ছোট করে লেখা সরি দিশা তোমার চেয়ে সুন্দর কিছু খুঁজে পেলাম না । দেখে দিশা বিশ্বাস ই করতে পারছিল না অভি এত রোমান্টিক একটা ছেলে। ওকে এত ভালবাসে। কান্না চলে আসে তার। ফোনটা হাতে নেবার সাথে সাথেই কাকতালীয় ভাবে অভির ফোন আসে, হ্যালোর জবাব না দিয়েই দিশা পাগলের মত বলতে থাকে আই লাভ ইউ অভি। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি...।

unpublished!!

যে ভালবাসা হারাতে নেই

যে ভালবাসা হারাতে নেই
লিখেছেন- sesh rater adhar


- আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? আমি দাঁড়িয়ে আছি তো।


বিছানায় শুয়ে ভাবছে আবির আসলে আর কতক্ষণ লাগবে।


- কি হল? কই তুমি?
- এইতো বের হলাম। বাস এ উঠবো। কতক্ষণ লাগে তা তো জানি না। তবে তারাতারি আসার চেষ্টা করব।


আসলেই বের হয়েছে আবির। খুব প্রিয় এক জায়গা থেকে। ঘুম। সারাদিন বিছানার সাথে লেপটে থাকতে পারে। শরীরের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এই ছেলে এত ঘুমায়। মারিয়া যে কয়েকটা দিন দেখা করেছে সবসময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কোনদিন আগে এসে পৌঁছাতে পারেনি আবির। মারিয়া নিজেও বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছে। ওর অনেক দিনের ইচ্ছা আবির অপেক্ষা করবে, আর মারিয়া বলবে, রাস্তায় অনেক জ্যাম। তাই দেরি হল। আজই হয়ত সেইদিন।
আবির কোনমতে উঠে রেডি হয়ে নিল। আবিরের নিজেরও অনেক ইচ্ছা একদিন আগে যাওয়ার। কিন্তু কোনদিনই হয় না। এই ঘুম আর জ্যাম সব কিছুর জন্য দায়ি। প্রতিটা বার লেট আর প্রতিটা বার শাস্তি। ওহ, সে কি শাস্তি। ভাবাই যায় না।

বাসের জন্য প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা শেষে অবশেষে বাস আসল। মনে মনে অনাগত শাস্তির কথা ভাবছে আবির। খুব ভাল করেই জানে আজকের প্রশ্নের উত্তর দিতেও ব্যর্থ হবে। আজ পর্যন্ত একটা দিনও উত্তর দিয়ে শাস্তি থেকে পার পায়নি আবির। বাসে উঠার পর জানালার পাশে বসল। পাশে কেউ নেই। ২ সিটের অধিকারী হয়ে খুবই খুশি আবির। সব সময় ভাগ্য এত ভাল হয় না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সব ভেঙ্গে এক মানুষ এসে আবিরের পাশে বসল। ২ সিটের সুখ এখন হাফ সিটে নেমে এসেছে। এত বড় শরীর নিয়ে পাশে যে মানুষটা বসে আছে তার দেড় সিটেও মনে হয় হচ্ছে না। ২ সিট পেলে সে হাসি মুখে দাঁত বের করে বসে পরবে। ধন্যবাদও দিবে না একবার আবিরকে। মারিয়ার সাথে দেখা হলে তো এমনিতেই শাস্তি অপেক্ষা করছে। তার আগে এই কোন শাস্তি পাচ্ছে আবির?
লাস্ট যেদিন দেরী করে গেল, মারিয়া রাগি রাগি চোখ করে বলল- দেরী হল কেন এত? প্রতিদিন আমি অপেক্ষা করব? কি পাইছ তুমি?
- জ্যাম ছিল রাস্তায়।
- প্রতিদিন এক কথা বলবা না। রাস্তায় জ্যাম ছিল? তো তুমি জামেই থাকতা। আমি যদি এর মাঝে অন্য কারও সাথে বসে গল্প করা শুরু করে দিতাম তুমি কিছু করতে পারতা?
- না না। কি বল তুমি? তুমি কত ভাল মেয়ে। তুমি অমন করতেই পার না।


একটু রাগি মুখে তাকাল মারিয়া। মুখটা নিচু করে ফেলল আবির। নিশ্চয় এখনি প্রশ্ন করবে আবিরকে।


- তুমি তো বাসে আসছ, তাই না?
- হ্যাঁ।
- পাশে কে বসছিল?
- একটা মেয়ে।
- বয়স কত?
- তোমার মত হবে।
- কি কালারের ড্রেস পরেছিল?
- কালো।
- আচ্ছা। ঠিক আছে। আচ্ছা বাসে সিট কয়টা ছিল?
- বাসে সিট? গুনছি নাকি আমি?
- পাশে বসা মেয়ের ড্রেসের কালার দেখতে পারছ আর বাসের সিট গুনতে পার নায়?
- না,ওটা কি সম্ভব নাকি? পাশে বসলে ড্রেস দেখব না?
- তাই দেখ। আমি প্রশ্ন করছি উত্তর দিতে পারনি তুমি। শেষ।
- আজ আবার কি শাস্তি দিবা?
- আজ আমার হাত ধরতে পারবা না। পাশে পাশে ঘুরবা, বসে থাকবা, খাবা একসাথে। কিন্তু হাত ধরতে পারবা না।
- এটা কেমন কথা? আমি কি করে থাকব হাত না ধরে?
- থাকতে হবে। অপরাধ করছ, আবার উত্তরও দিতে পার নায় প্রশ্নের।
- আর এমন হবে না। এরপর থেকে আর দেরী করে আসব না, বিশ্বাস করো।
- না। এর আগেও অনেকবার বলছ। তাও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আর সম্ভব না।
- একবারের জন্যও না? আমি না তোমাকে ভালবাসি? আমি হাত ধরব না?
- না।


সেদিন সত্যিই একবারের জন্যও হাত ধরতে দেয়নি মারিয়া। কয়েকবার ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল আবির। প্রতিবারই হতাশ।


একটু চলার পরই জ্যাম। সহ্য করার মতন না। মাঝে ২ বার মারিয়া ফোন দিল। প্রতিবারই বলল আবির, এই তো চলে এসেছি, আর একটু।
আজ কি প্রশ্ন করতে পারে? বাসে লাইট আছে ৪ টা। জানালা ১২ টা। একটা মাত্র ফ্যান যা ড্রাইভার এর মাথার উপর প্রাণপণ ঘুরে চলছে। selfish ড্রাইভার। খালি নিজেরটাই বুঝে। এইদিকে একজন যে হাফ সিটে বসে টিকে থাকার যুদ্ধ করছে সেই দিকে কোন খেয়াল নেই।
মনে হচ্ছে পাশে বসা লোকটাকে কিছু বলতে কিন্তু পরে আর বলা হল না। জানালা দিয়ে বাহিরের লোকজন দেখছে আবির। কত মিষ্টি করে শাসন করে মারিয়া। রাগ করে কত মিষ্টি করে। এত মিষ্টি ভালবাসার সম্পর্ক হয়ত খুব কম মানুষের ভাগ্যেই থাকে।

- ঐ জোরে চালা বাস।


জানালায় সজোরে বিশাল হাত নিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলল আবিরের পাশে বসা বিশাল দেহী মানুষটা। তার বগলের নিচে যে একজন পরে আছে সেই দিকে একদমই খেয়াল নেই।
ওহ, কি দুর্গন্ধ। কি দোষ করেছিল আবির আল্লাহই জানে। দেড় সিট নিয়েছে সমস্যা নেই। বগলের নিচে এভাবে রেখে বাস থাপড়াতে হবে। আরে বডি স্প্রে না থাকুক, অন্তত ঘামাচি পাউডার তো দিয়ে আসতে পারত। বমি আসছে দুর্গন্ধে।
বমির কথা ভাবতেই হঠাৎ মাথায় একটা কথা আসল, আচ্ছা বাসে উঠলে তো অনেকেই বমি করে। ড্রাইভারদের কখনও বমি আসে না? আসলে তখন কি হত?



আজও মারিয়া আগে চলে আসল। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ছেলেটা প্রতিদিন দেরি করে আসে। এই যে দেরি করে আসলে হাত ধরতে দেই না, রাগ করি, কথা বলি না। তাও একটা দিন আগে আসে না। আর ছেলেটা কেমন যেন, রাগ করে থাকতে পারিনা ওর উপর। চোখের দিকে তাকালেই রাগ চলে যায়। তাই যতটা সময় রাগ করে থাকি ভুলেও চোখের দিকে তাকাই না। চোখের দিকে তাকালেই এমন একটা অসহায়ের মত ভাব করবে যেন কত কষ্টে আছে। আসলে তো সব ঢঙ। তাও পারি না রাগ করতে। আর ফাজিলটাকে শাস্তি দিয়ে যেটা করতে মানা করব ঐটা আরও বেশি করে করবে। ফাজিল, শয়তান। আজ আসুক , আজ আর ফাজিলটার অসহায়ের মত তাকানো দেখে রাগ ভাঙবে না।


জ্যাম ছেড়েছে তাহলে। বেশি সময় লাগার কথা না আর। আসলেই বড্ড বেশি দেরি করে যাওয়া হয়। মেয়েটা প্রতিদিন একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। একটু সময় মত একদিনও যাওয়া হয় না। খারাপ লাগে অনেক, কিন্তু ঘুম না ভাঙলে আমার কি করা?

আবির বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনিতেই মারিয়ার জন্য মন খারাপ। আজ ও শাস্তি পেতে হবে। তার উপর পাশের দানবের যন্ত্রণা। কিছুক্ষণ ধরে অন্য এক যন্ত্রণা দিচ্ছে লোকটা। বাসের হেল্পার পিচ্চিটা যখনি বলছে, বায়ে পেলাস্টিক, বায়ে পেলাস্টিক।
আর আবিরের পাশের লোকটা উঠে উঠে জানালা দিয়ে " পেলাস্টিক " দেখার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে আবিরকে তার শরীরের সুগন্ধে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে যাচ্ছেন। আজব মানুষ।


বাস থেকে নেমে তারতারি একটা রিকশা নিয়ে গেল। রিকশা থেকে নেমে আস্তে করে মারিয়ার সামনে এসে দাঁড়াল আবির। আবির বলতে শুরু করল - জানো, আজ এত জ্যাম......
- চুপ। আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
- না, দেরি করলাম তো তাই।
- সে তো প্রতিদিনই করো, আর প্রতিদিন এসে একই কথা বল।
- সত্যি কথা বিশ্বাস করো...
- চুপ। বাসে আসছ তো?
- হ্যাঁ।
- বাসে চাকা ছিল কয়টা?
- লাইট ৪ টা, জানালা ১২ টা, ফ্যান একটা selfish ড্রাইভার এর মাথার উপর।
- এগুলো জানতে চাইছি? চাকা কয়টা ছিল?


বাসে চাকা কয়টা ছিল একটু চিন্তা করলেই বলা যাবে। কিন্তু মাথায় কোন কিছু ঢুকছে না এখন।মাথায় একটাই চিন্তা মারিয়া আজ কি শাস্তি দিবে।


- বলতে পারবা না, তাই তো?
- ঠিক মনে করতে পারছি না।
- আজ বাসা থেকে আসার সময় ভেবে এসেছিলাম, আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিব। একসাথে খেতে বসলেই তো বল, একটু খাইয়ে দাও না। ভেবেছিলাম আজ তোমার ইচ্ছাটা পূরণ করব। আজও তুমি দেরি করে আসলা। তোমার ইচ্ছাটা আর পূরণ হচ্ছে না।


আবির মুখ ঘোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল। কোন কথা বলল না। মারিয়াও চোখ নিচের দিকে দিয়ে তাকিয়ে আছে। আবিরের মুখের দিকে তাকানো যাবে না। প্রতিদিন দেরি করবে আর মাফ করে দিবে। কখনও না। মারিয়ার কষ্ট হয় না?
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মারিয়ার হঠাৎ মনে হল আবির চুপ করে আছে কেন? আজ আর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে না কেন? মারিয়া মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকাল। আবিরও মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

মারিয়া আবিরের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল- এই কি হইছে? এমন চুপ করে আছো কেন? আজ আর রাগ ভাঙ্গাবা না।
- আমি কি ইচ্ছা করে এমন করি? আমার ঘুম ভাঙতে চায় না সকাল বেলা। আর বাস কি আমি চালাই, জ্যাম বাধলে আমি কি করব? আমার খারাপ লাগে না তুমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাক? প্রতিদিন আমাকে শাস্তি দাও।

অসহায়ের মত মুখ করে কথা গুলো বলছে আবির। আবারও রাগ চলে গেল মারিয়ার। হাতটা আরও শক্ত করে ধরল মারিয়া। মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল- আহারে, আমার পাগলটা দেখি রাগ ও করতে পারে। কত্ত রাগ করছ দেখি তো?
- আমাকে খাইয়ে দিবে না,না?
- দিব তো। তোমাকে দিব না তো কাকে দিব বল? আচ্ছা বল, কি খাবা?
- ফুস্কা, আইস ক্রিম, বাদাম ...
- এই এই, আস্তে আস্তে বল। একটা একটা করে বল।
- সবগুলো খাবো।
- হ্যাঁ সবগুলো খাবে। কিন্তু একসাথে তো পারবা না। একটা একটা করে খাবা, আচ্ছা?
- না খাবো না, খাইয়ে দিবে।
- দিব তো, পাগল।


আইস ক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে মারিয়া আবিরকে। আবির খাওয়াতে ব্যাস্ত। আর মারিয়া তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে। বড্ড বেশি কান্না পাচ্ছে মারিয়ার। কষ্টে না। খুশিতে। এত ভালবাসে কেন আবিরকে ও? পাগলটার মাঝে কি আছে? জানা নেই। সব কিছু সবসময় জানতে নেই। ভালবাসে বাসুক। এত কিছু বুঝতে গেলে ভালো লাগাটুকু হারিয়ে যেতে পারে।

- আর একটা খাইয়ে দিবে?

আবির আবারও সেইরকম মুখ করে তাকিয়ে আছে। না করার উপায় নেই।

-আচ্ছা দিচ্ছি।
- একটা কথা বলি?
- বল।
- আমি আর কখনও দেরি করে আসব না। আমাকে প্রতিদিন এভাবে খাইয়ে দিবে?
- দিব।
- আমিও তোমাকে একটু খাইয়ে দেই।
- দাও।


আবির আইস ক্রিমটা নিয়ে মারিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে এখনও মারিয়ার। পাগলটার সে দিকে একদম খেয়াল নেই। শুধু খাওয়া নিয়েই ব্যাস্ত। মারিয়া আবিরের হাতটা আর একটু শক্ত করে ধরল। মনে মনে বলল, তোমাকে অনেক ভালবাসি, ছেড়ে যেওনা কখনও।
আবির বুঝল কিনা জানে না।

আবির সবই দেখছে সবই বুঝছে। সব কিছু সবসময় বুঝতে দিতে নেই। একটু রাগ করুক না মেয়েটা। রাগলে অনেক সুন্দর লাগে দেখতে মারিয়াকে।

শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

অভিমান অতঃপর ভালবাসা

অভিমান অতঃপর ভালবাসা
লিখেছেন- sesh rater adhar

- এইটা কি চা না সরবত?
মনে হইতেছে ফ্রিজ থেকে চিনির সরবত বের করে দিছিস। তুই মানিক দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিস। আর এইটা রুটি? এত শক্ত কেন? মনে হয় ইট চাবাচ্ছি মুখের ভিতর দিয়ে। বাসি রুটি দিস আমাকে ? যা আজ তোকে কোন টাকা দিব না।
সকালের ব্রেকফাস্ট করছে স্পর্শ। কথাগুলো বলছে দোকানে বসা মানিককে। গত ৩ মাস ধরে এই মানিকের দোকানেই সকালের নাস্তাটা করছে স্পর্শ। এলোমেলো চুল, ময়লা শার্ট প্যান্ট, চোখে চশমা। দেখে মনে হবে কোন বড় মাপের কবি সাহিত্যিক। আসলে তা না।কখনও ভেতর থেকে কোন লাইন বের হয়নি, কবিতা হিসেবে বা গল্পের সূচনা হিসেবে। শুধু মাত্র একটা সময় বাদে। আগে অনেক পরিপাটি হয়েই চলত। তখন মনে হত পৃথিবীর মেধাবী ছাত্রদের একজন স্পর্শ। তবে এই ধারনাটাও ভুল। পড়ালেখা সারাজীবনই খুব বাজে লাগত। ভাগ্য গুণে বা অস্বাভাবিক কোন কারণে বরাবরই রেসাল্ট মোটামুটি করে আসছে স্পর্শ। আসলে স্পর্শ পৃথিবীর কিছু না পারা ছেলেগুলোর একজন। তবে ইদানীং একটা জিনিস খুব ভাল পারে। মানুষকে বকতে। তবে খারাপ ভাষায় না। মুখ দিয়ে খারাপ ভাষা বের হয় না।
মানিকের কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। তাই চুপ করে শুনে কথাগুলো। বলে না কিছু। স্পর্শকে অনেক ভাল লাগে মানিকের। খুব আদর করে মানিককে স্পর্শ। যে আদর করে তার মুখে ২-১ টা বকা খারাপ লাগার কথা না।

চা এর কাপটা ফেলে রেখে চলে গেল স্পর্শ। কিছুক্ষণ আবার ফিরে এসে টাকাটা দিয়ে গেল। ভালবাসার মানুষের উপর রাগ করে থাকা খুব কঠিন। মানিককে আদর করে তাই টাকাটা দিয়ে গেল ভালবেসে।
ধানমণ্ডি লেক এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্পর্শ। পছন্দ মতন কাপল খুঁজছে। গত কয়েকদিন ধরেই একটা কাজ করে স্পর্শ। প্রেমহীন জীবনে অন্য কারও প্রেম সহ্য হয় না। তাই এই কাজ করা। হ্যাঁ, পছন্দ মতন কাপল পেয়ে গেছে। লেকের পাড়ে দেয়ালের উপর বসে আছে দুজন। দুজনের মুখই হাসি হাসি। ভালবাসার চরম মুহূর্তে আছে তারা এখন। হাতটা ধরে আছে দুজন দুজনার। একটু নির্জনে বসেছে দুজন। ২ জন যেখানে বসে আছে সেখানে গিয়ে বসল স্পর্শ। মেয়েটার পাশে। দুজনের ভালবাসার আবেগে ব্যাঘাত ঘটল। স্পর্শ পকেট থেকে একটা গ্যাসলাইট আর বিড়ির বের করল। সিগারেট না বিড়ি।
কাপলদের ছেলেটা বলল - excuse me, ভাইয়া। কি এখানে? আপনি এসে এখানে বসেছেন কেন?
- বিড়ি খাবো ।
- বিড়ি খাবেন ভাল। কিন্তু এখানে কি?
- আমার এখানেই খেতে ইচ্ছা করছে। চারপাশটা অনেক সুন্দর। বিড়ি খাওয়ার জন্য একদম perfect. ভাব না আসলে কি খেয়ে মজা বলেন?
- আমরা এখানে বসে আছি আপনি দেখেন নি ?
- দেখেছি। আপনারা বসে আছেন তাতে আমার কি? আপনারা এখানে বসে আছেন মানে তো এই না যে আমি এখানে বসতে পারব না। এটা public place. সবার অধিকার সমান। আপনাদের পাশে বসে আমার বিড়ি খেতে সমস্যা না হলে আপনাদেরও হবে না। চালিয়ে যান।
বিড়িটা ধরাল স্পর্শ। উহহ, কি বিচ্ছিরি গন্ধ। কাপলদের মেয়েটা নেমে আসলো নিচে। ছেলেটার হাত ধরে বলল- চল, এর সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। আমরা অন্য কোথাও বসি।
দুজন একসাথে চলে গেল। যাবার আগে একটা কিছু বলে গেল যা স্পর্শর কান পর্যন্ত যায়নি। স্পর্শ এখন আনন্দে আছে। ওর কাজ সফল। বিড়িটা পুড়ে যাচ্ছে আর স্পর্শ দেখে যাচ্ছে। smoking করে না স্পর্শ। শুধু এই কাপলদের disturb করার জন্যই বিড়ি কেনা। জীবনটা অনেক এলোমেলো হয়ে গেছে। তবুও কিছু জিনিস এখনও মেনে চলছে স্পর্শ। কি কারণে জানে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, নাহ, যে আমার জীবনে নেই তার বারণগুলো কেন মানছি? তবে একটা উত্তরই আসে এই প্রশ্নের , মানো একটু। মানলে কি হয়? ভাল তো বাসই এখনও।
হ্যাঁ, ভালবাসে এখনও। মন থেকে কাউকে ভালবাসলে ভুলা যায় না। পৃথিবীর অসম্ভব কাজগুলোর একটা এটা। হঠাৎ খুব মনে পড়ছে আদ্রিতার কথা। মনে পড়ার পিছনে উপযুক্ত কারণও আছে। গত ২ দিন থেকে কল করছে আদ্রিতা। কিন্তু স্পর্শ ধরেনি। একটা সময় স্পর্শও অনেক কল করেছিল। ধরেনি আদ্রিতা। সব মনে আছে স্পর্শর। কিছু ভুলেনি। এখন আদ্রিতার ফোন কেন ধরবে? ৩ মাস চলে গেল। একবারও মনে করেছে? করেনি। স্পর্শকে ছাড়া থাকতে এত ভাল লাগে, থাকুক। পৃথিবীর সব মানুষের সব গুন থাকে না। থাকে কি? অবশ্যই না। হয়ত স্পর্শর মতন কারও ভিতর কোন গুনই থাকে না।
প্রেমের ৪ দিনের মাথায় আদ্রিতা বলেছিল - জানো আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে, মানুষ এত সুন্দর করে কবিতা লিখে কি করে? কবিতা পড়লে মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমি যদি অমন লিখতে জানতাম। অথবা আমার জন্য যদি কেউ লিখত। ওহ, কত্ত ভাল হত তাইনা বল?
- হ্যাঁ, অনেক ভাল হত।
- এই, তুমি আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবা?
- কি বল? তুমি বলছ আর লিখব না? এটা কোন ব্যাপার হল? বল কি টাইপ কবিতা লিখব?
- কি টাইপ মানে? আমাকে নিয়ে লিখবা, কি টাইপ জানো না?
- ও আচ্ছা। বুঝছি। just wait করো। আজ রাতেই পাঠাচ্ছি মেসেজ করে।
- সত্যি লিখতে পারবা তুমি?
- কেন পারব না? ভালবাসার মানুষের জন্য এইটুকু পারব না করতে?
আর কিছু বলার আগেই স্পর্শকে জড়িয়ে ধরল আদ্রিতা। জীবনে প্রথম কোন মেয়ের ছোঁয়া পেল এত কাছ থেকে স্পর্শ। হাত পা জমে যাচ্ছে। কিন্তু ভীষণ ভাললাগার একটা অনুভুতি হচ্ছে। যে অনুভুতি সারাটা জীবন ধরে পেতে ইচ্ছা করে। কখনও মনে হবে না, অনুভূতিগুলো বড্ড পুরাতন।
আদ্রিতা হাসি মুখে স্পর্শকে ছেড়ে দিয়ে বলল -আমার জন্য একটা করে কবিতা লিখবা আর একটা করে hug পাবা। বল তুমি প্রতিদিন এটা চাও না?
- হ্যাঁ, অবশ্যই চাই। সারাজীবন চাই।
রাতে খাতা কলম নিয়ে বসল স্পর্শ। সাথে কয়েকটা কবিতার বই। নাহ, কিছুই বের হচ্ছে না মাথা থেকে। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও না। ধুর। যে জীবনে কিছু লিখেনি, তাকে দিয়ে লেখা কি সম্ভব? সব কি সবাই কে দিয়ে হয়? না, হাল ছাড়া যাবে না। আদ্রিতা অনেক খুশি হবে ওর জন্য লেখা একটা কবিতা পেলে।
রাতের বেলা একটা মেসেজ আসলো আদ্রিতার মোবাইল এ। স্পর্শর দেওয়া। একটা কবিতা পাঠিয়েছে। ওহ। অসাধারণ। স্পর্শ এত সুন্দর করে লিখতে পারে? আদ্রিতার কি অনুভুতি হচ্ছে বলে বুঝানো যাবে না। জীবনের অনেক বেশি ভাল লাগার মুহূর্তগুলোর একটা এটা। কেউ ওকে নিয়ে কবিতা লিখেছে।
পরদিন থেকে প্রতিদিন কবিতা পাঠায় স্পর্শ। আর প্রতিদিন একটা করে hug পায়। জড়িয়ে ধরার সময়টুকু স্পর্শর কাছে সবচেয়ে মধুর সময় আর আদ্রিতার কাছে রাতের বেলা কবিতা পড়ার সময়টুকু।
পহেলা বৈশাখ। আজ সারাদিন ঘুরবে দুজন। আদ্রিতা শাড়ি পরে আর স্পর্শ সেই ছাগলের মতন একটা ফুল হাতা শার্ট পরে। এত করে বলল একটা পাঞ্জাবি পরতে। না তিনি শার্টই পরবেন। পহেলা বৈশাখে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিল আদ্রিতা। ১০ টা মেসেজ। সবগুলো পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুরা পাঠিয়েছে। সবার আগে স্পর্শর sms টা পড়ল। বাহ, অনেক সুন্দর একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। অসাধারণ। ছেলেটা অনেক ভালবাসে আমাকে। কত সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে আমার জন্য। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই চোখ পড়ল আর একটা sms এর দিকে। তুলি পাঠিয়েছে। বুকের ভিতরটায় ধক করে উঠল। কি করে সম্ভব এটা? তুলি আর স্পর্শ একই sms পাঠিয়েছে। অসম্ভব এটা। ঘুমের ঘোরে আবল তাবল দেখছে কিনা। তাই আবার চেক করল আদ্রিতা। না ঠিকই তো আছে। তুলি আর স্পর্শ একই এসএমএস পাঠিয়েছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? আদ্রিতা ফোন করল স্পর্শকে। ঘুম জড়ানো গলায় ফোন ধরে বলল- হ্যালো, লক্ষ্মী। কেমন আছো? শুভ নববর্ষ।
- শুভ নববর্ষ।তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। সত্যি কথা বলবা?
- আমি কখনও মিথ্যা বলি? বল কি জিজ্ঞাসা করবে?
- তুমি কি তুলিকে কোন এসএমএস করছ?
- তুলি? তুলি যেন কে?
- আমার ফ্রেন্ড। কাল আমি যার নাম্বার থেকে কল করেছিলাম তোমাকে। আমার মোবাইল এ টাকা ছিল না।
- নাতো। আমি কেন ওকে এসএমএস দিব? ওর নাম্বার তো আমি সেভ ই করি নায়। আর কল হিস্ট্রি থেকেও নাম্বার দেখি নায়।
- সত্যি তো?
- হ্যাঁ, কেন কি হইছে?
- আচ্ছা তুমি রাখো এখন। আমি পরে কল দিচ্ছি।
আদ্রিতা কল কেটে তারপর তুলিকে ফোন করল। তুলি যা বলল টা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ছিঃ, স্পর্শ এমন? ভাবতেই খারাপ লাগছে। আর একবার কল করল স্পর্শকে।
- তোমার লেখা কবিতাটা অনেক সুন্দর হইছে।
- ওটা তো সবসময়ই। লিখতে লিখতে এখন মান অনেক ভাল হয়ে গেছে। যদিও কষ্ট হয় লিখতে একটু । তাও তোমার hug পাওয়ার পর আর থাকেনা কষ্ট। সব ভুলে যাই।
- হ্যাঁ, আমি রাখি এখন। আর কষ্ট করতে হবে না তোমাকে।
কল কেটে দিল আদ্রিতা। খুব কষ্ট হচ্ছে। এতদিন কাকে ভালবেসেছে আদ্রিতা? ছিঃ, নিজের উপর খুব অভিমান হচ্ছে। চাপা কষ্টগুলো কেঁদে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু পানি পরছে না চোখ দিয়ে। খুব বেশি কষ্ট পেলে এমন হয় আদ্রিতার। হয়ত কষ্টগুলো আরও বাড়ানোর জন্য।
মোবাইল স্ক্রিনে চোখ পরল। স্পর্শ কল করে যাচ্ছে। ধরছে না আদ্রিতা। এরপরও কি সম্ভব? অবশ্যই না। এরপর থেকে আর কোনদিনই কল ধরেনি আদ্রিতা। অন্য কোনভাবেও যোগাযোগ করতে পারেনি স্পর্শ। কিন্তু গত ২ দিন ধরে কল দিচ্ছে কেন আদ্রিতা? কি দরকার?
বিড়িটা পুড়ে শেষ হয়ে হাতে যখন একটু আঁচ লাগল তখন ফেলে দিল বিড়িটা স্পর্শ। চশমাটা বড় ঝাপসা লাগছে। গ্লাস পুরাতন হয়ে গেছে না চোখের বৃষ্টি? ভাবতে ভাবতে ঝাপসা চোখে খুব পরিচিত কাউকে আসতে দেখছে স্পর্শ। সবুজ রঙের শাড়ি পরে আসছে। চশমা খুলে তাকাল। সবুজ রঙে সবাইকে মানায় না। কিছু কিছু মানুষকে সব কিছুতেই মানায়। আদ্রিতাকেও। তাই দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। পাশে এসে ক্লান্ত মুখে বসল আদ্রিতা। বিশ্বাস হচ্ছে না। আদ্রিতা এখানে। কি করে আসবে? জানবেই বা কি করে স্পর্শ এখানে?
- বাহ, খুব উন্নতি। সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিছ। ভাল। খাও। কি আর করবা!!!
কথাগুলো বলে স্পর্শর দিকে তাকাল আদ্রিতা। সেই ভালবাসাময় চোখে। তবে আগে ছিল শুধুই ভালবাসা আর এখন ভালবাসার সাথে ক্লান্তি। আর সেই ক্লান্তি থেকে মুক্তির আকুলতা।
- এটা সিগারেট না। বিড়ি।
- ঐ একই হল। খাচ্ছ তো?
- না। smoking করি না। এমনি কিনেছিলাম। কিন্তু তুমি এখানে আসলে কি করে? জানলে কিভাবে?
- জেনেছি যেভাবে হোক। সব তো সবাইকে বলে বেরাও। জানাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। মোবাইল ধর না কেন? কি, নতুন কাউকে পেয়ে গেছ? কবিতা শুনাও না তাকে? আমার সাথে কথা বললে সে রাগ করবে? এই যে পাগলের মত চল, সে একটুও খেয়াল রাখে বলে তো মনে হয় না। বল মোবাইল ধরলা না কেন?
স্পর্শ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কত রাগ ছিল আদ্রিতার উপর। ভেবেছিল, যদি আর কখনও দেখা হয়, কথা হয়, ইচ্ছা মতন কথা শুনিয়ে দিবে।সব রাগ অভিমান ঝাড়বে আদ্রিতার উপর। কিন্তু এখন কি হল? মনে হচ্ছে সামনে সেই ৩ মাস আগের আদ্রিতা বসে আছে। যে প্রতিদিন একটা কবিতার বিনিময়ে একবার করে জড়িয়ে ধরত। চুল আঁচড়ে দিত। শাসন করত। ছাগল বলে ডাকত। একবারও মনে হচ্ছে না টানা ৩ টা মাস মেয়েটা ইচ্ছা করে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। অশ্রু ছল ছল চোখের দিকের তাকিয়ে সব রাগ ভুলে গেল স্পর্শ। নিজের দোষ স্বীকার করে বলল- sorry. ভুল হয়ে গেছে। অনেক অভিমান ছিল তোমার উপর, তাই ধরি নায়। নতুন কেউ, পুরাতন কেউ, সব তুমিই। তুমি ছাড়া কাউকে ভালবাসা সম্ভব না। চেষ্টাও করিনি কখনও। আর খেয়াল রাখার মানুষ রাগ করে চলে গেলে আমি কি করব? এমন এলোমেলো তো থাকবই।
- চুপ, এসব কথা বইলো না। তোমার মুখে এসব মানায় না। তুমি আমাকে কখনও ভালবাসনি। বাসলে এমন করতে পারতা না। কিন্তু আমি কি করব? আমি তো সত্যি সত্যিই ভালবেসেছিলাম তোমাকে। কত চেষ্টা করলাম ভুলে যেতে। পারলাম কই? ঐ ঠিকই চলে আসলাম। যাকে একবার মন থেকে ভালবাসা যায়,তাকে ভোলা যায় না। তুমি বুঝবা না। তুমি কাউকে ভালবাসতে পার না। তোমার কাছে ঐ একটু জড়িয়ে ধরা তাই ই বড়। ভালবাসা না। মানুষের মনও না। আমি সত্যি অবাক হয়েছিলাম তোমার আর তুলির একই এসএমএস দেখে সেদিন। পরে তুলি বলল ঐ এসএমএস ও ইন্টারনেট থেকে পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি নায়। পরে ও আমাক লিঙ্ক দিল। আমি দেখলাম। জানো আমি এত কষ্ট কখনও পাই নায়। যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসি সে আমাকে এভাবে ঠকাবে আমি ভাবতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি? অন্য মানুষের কবিতা নিজের বলে চালিয়ে দিতে আমার কাছে, শুধু একটু জড়িয়ে ধরব এই লোভে। ছিঃ। সত্যি করে বলতো প্রথম দিকের কবিতাগুলো কার লেখা ছিল?
- আমি কয়েকটা বই থেকে মিলিয়ে মিলিয়ে কবিতা লিখতাম। সত্যি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি অনেকগুলো রাত জেগেছি শুধু একটা কবিতা লেখার জন্য। পারি নায়। সবাই সব পারে না। আমিও পারি নায়। কিন্তু বড্ড বেশি ইচ্ছা করত তোমার হাসি মুখটা দেখতে। তুমি একটু খুশি হবে তাই ঐ মিথ্যাটা বলা। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরবা এই লোভে না। হ্যাঁ জানি ব্যাপারটা উচিৎ হয়নি। তারপরও ভালবাসার মানুষটার একটু হাসি মুখ দেখতে কার না ইচ্ছা করে বল? আমি তোমাকে ভালবাসি এখনও। এই ৩ টা মাস আমি কাঁদছি। আর কাঁদতে চাই না। please, লাস্ট বারের মতন মাফ করে দাও। তুমি চলে যাবার পর খুব কষ্ট হত। একদিন খাতা কলম নিয়ে বসলাম। খুব কষ্ট নিয়েই। একটা কবিতা লিখে ফেললাম। জানি না কি করে। পরে আর কখনও চেষ্টা করিনি। পকেটে সেই কবিতা নিয়ে এখনও ঘুরি আমি। যদি কখনও তোমাকে দেখাতে পারি। দেখবে না বল? আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে না, শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না।
উত্তরের আশায় চেয়ে আছে স্পর্শ। চোখ দিয়ে পানি পরছে আদ্রিতার। হয়ত কষ্ট হচ্ছে না খুব। আনন্দ হচ্ছে। কষ্ট হারানোর আনন্দ। হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কিছু ফিরে পাবার আনন্দ।
- যাব না ছেড়ে। কবিতা বল।
পকেট থেকে কাগজটা বের করল স্পর্শ। ঘামে ভিজে গেছে কাগজটা। আদ্রিতা কিছুই বুঝছে না কি লেখা। কিন্তু স্পর্শ ঠিকই পড়ে যাচ্ছে। হয়ত আগেও অনেকবার পড়েছে নিজের লেখা প্রথম কবিতা।
- "" হারিয়ে যখন যাব আমি
ধরব না আর হাত,
আমায় ছাড়া একলা রাত
হবে তোমার প্রভাত।
জড়িয়ে তোমায় ধরবে না কেউ
দিবে না কেউ চুম,
চুপিচুপি ডাক দিয়ে কেউ
ভাঙাবে না ঘুম।
কাটবে তোমার একলা দিবা
কাটবে একলা নিশি,
আমায় ছাড়াই ঐ আকাশে
দেখবে একা শশী।
নদীর জলে পা ভিজিয়ে
থাকবে একা বসে,
হাতটি থাকবে না কেউ
আর তো তোমার পাশে।
কুড়িয়ে ফুল এনে তুমি
দিবে কারে বল?
দুঃখ তোমার ভুলাবে কে
যখন আঁখি ছলছল।
তোমার কোন কাজে আর
করবে না কেউ বারন,
বল গো হায় তখন তুমি
করবে কারে মিষ্টি শাসন?
একটু হেসে ভাঙাবে কে
বল না তোমার অভিমান?
আবল তাবল বলে আর
কে ভরাবে প্রাণ?
মন খারাপ করে যখন
নীরব থাকবে তুমি,
হাজার বার ভালবাসি বলে
কে করবে আর পাগলামি?
ছেড়ে তোমায় গেলে চলে
আমি চিরতরে,
আমায় ছাড়া তুমি বল
রবে কেমন করে?
কাঁদো যদি তুমি
কে থামাবে তখন?
আমার ছায়া থাকবে না'ক
তোমার পাশে যখন।
নতুন কেউ আসলে কি গো
জড়িয়ে নিবে তারে?
নাকি আমার স্মৃতি বুকে
রাখবে সারাজনম ধরে? ""
অবাক হয়ে কবিতা শুনছে আদ্রিতা। কবিতা শেষ করে তাকাল স্পর্শ আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা একটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরল স্পর্শকে। অনেক বেশি ভালবেসে। দুজনেরই মনে হচ্ছে অনেক দিনের চাপা কষ্ট হারিয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে এইটুকু স্পর্শের অপেক্ষায় ছিল দুজন। আদ্রিতা জড়িয়ে ধরা অবস্থাই বলল- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সত্যি। আমিও তোমাকে ভালবাসব তুমিও আমাকে বাসবে। আর অমন মানুষের কবিতা আমাকে শুনাবা না। এই যে কত সুন্দর লিখতে পার।তুমি আবল তাবল যাই লিখ ভাল লাগবে। এই smoking করো নাতো?
- এইটা কিন্তু আমিই লিখছি। নাহ, একদমই করি না। smoking করলে কবিতার ৬ নং লাইন এর জিনিসটা আমাকে করতে দিবে না আমি জানি।
- মনে থাকে যেন। আর আমি চলে আসছি আর এমন এলোমেলো, পাগল পাগল থাকবা না। ঠিক আছে? আর শুনো, তোমার তোমার কবিতার নাম দিবা " অবুঝ অভিমান" ।
- আচ্ছা।
দুজন দুজনকে কতটা ভালবাসে জানে না দুজনের কেউ ই।আদ্রিতা অনেক বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে স্পর্শকে। আশে পাশে কে আছে জানে না, বা তার দিকে খেয়াল নেই। স্পর্শ ভাবছে অন্য কথা। কতক্ষণ আগে যেই couple দের disturb করল, তারা না আবার বিড়ি নিয়ে এসে ওদের disturb করা শুরু করে। এই ভালবাসার মুহূর্তটাকে আর হারাতে চায় না স্পর্শ।

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা
লিখেছেন- Sesh rater adhar

রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগটা বের করল সিফার। হাতটা ধরে বাধা দিল নীরা।

- এই আমি দেই। আমার কাছে ভাংতি আছে। মানিব্যাগ রেখে দাও।
- আমার কাছেও ভাংতি আছে।
- চুপ। কম কথা বল। আমি দিচ্ছি না? এত কথা বল কেন?

সিফার চুপ করে মানিব্যাগ রেখে নীরার দিকে মুখ তুলে তাকাল। নীল রঙের একটা ড্রেস পরে আছে নীরা। দেখেই বোঝা যায় অনেক দামি ড্রেস। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নীরার পাশে নিজেকে মাঝে মাঝে খুব বেমানান লাগে। সিফারের জুতা জোড়াও ছেঁড়া। নিউ মার্কেট এর সামনে থেকে সস্তায় কিনেছিল জুতা জোড়া। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই শেষ। সেই কবে থেকে একই জামা কাপড় পরে দেখা করে সিফার। আর নীরাকে এখন পর্যন্ত এক ড্রেস ২ দিন পরতে দেখেছে বলে মনে হয় না। এমন কি জুতাগুলোও মনে হয় প্রতিদিন নতুন নতুন। নীরা কখনও জিজ্ঞাসা করেনি প্রতিদিন একই ড্রেস পরে আসে কেন? করবেও না কখনও। কিন্তু সিফার নিজে থেকেই বলে - জানো? আমার এই জামাটা অনেক প্রিয়। খুব ভাল লাগে জামাটা পরতে। জামাটা পরলে নিজেকে হিরো হিরো মনে হয়। দেখ দেখ, এখনও কালার একদমই ডিসকালার হয়নি। সেই আগের মতই আছে।

নীরা হাসে কথাগুলো শুনে। আর বলে - আসলেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে এই ড্রেস এ।

মেয়েটা অনেক ভাল। সব কিছু কত সহজে মেনে নেয়। ভাবতেই ভাল লাগে। ইচ্ছা করলেই সিফার এর চেয়ে অনেক ভাল ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে। কিন্তু না, এই অপদার্থের সাথেই পড়ে আছে। মেয়েটা একটু বোকাও মনে হয়। তবে নীরা ভাবে সিফার অনেক বোকা। দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝে না ছেলেটা। বোকা হোক, পাগল হোক, অসম্ভব সুন্দর একটা মন আছে সিফার এর। তাতেই চলবে। বেশি কিছু দরকার নেই।

রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে দেখে সিফার হাত ধরে থামাল নীরাকে। থামিয়ে বলল - কই যাও?
- সকাল থেকে কিছু খাইছ বলে তো মনে হয় না। ঘুম থেকে উঠেই চলে আসলা। চল কিছু খাওয়া দাওয়া করে আসি।
- না। খেয়ে আসছি সকালে। এখন ক্ষুধা নাই।
- আবার মিথ্যা বলে। আমি মোবাইল দিলাম আর চলে আসলা। আর বলে কি খেয়ে আসছি।
- এই রেস্টুরেন্টেই যাবে?
-হ্যাঁ।
- আসলে কি জানো, তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে। বলব কি করে বুঝছি না।
- এত লজ্জায় লাল হবার কিছু হয়নি। ছেলে মানুষ, এত লজ্জার কি আছে? বল কি হইছে?
- আমার loose motion কাল রাত থেকে। এর মধ্যে যদি এই ফাস্টফুড খাই, নির্ঘাত মারা যাব। এমন কি রেস্টুরেন্টেও কাজ করে দিতে পারি।

নীরা নাকটা উঁচু করে সিফারের দিকে তাকাল। পরক্ষনেই স্বাভাবিক হয়ে বলল - ছিঃ , কি সব কথা বল তুমি। loose motion মানে? সকাল থেকে তুমি আমার সাথে। একবারও তো যাও নায়।
- আসলে ব্যাপারটা হল, সকাল থেকে emotion এর মধ্যে আছি তো , তাই loose motion কাজ করছে না। তুমি পাশে থাকলে আমার emotion বেড়ে যায়।

নীরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- হইছে। খুব বুঝছি। এখন চল। আমি খাইয়ে দিব। so emotion এর মধ্যে থাকবা। loose motion এ প্রবলেম হবে না। চল।

সিফারের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নীরা। সিফার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নীরার সাথে গেল। আসলে loose motion না, পকেটের অবস্থা খুব একটা ভাল না। তাই আসতে চাচ্ছিল না সিফার। সত্যিই খুব সমস্যা চলছে ফ্যামিলিতে। বাসা থেকে যতটা সম্ভব বাহিরে থাকা যায়, তাই থাকছে সিফার। ঘরে এলেই এটা নাই, ওটা নাই, এই সমস্যা , ঐ সমস্যা, হাজারটা ঝামেলা। উফ!! বাবা খুবই কম বেতনের একটা চাকরি করেন। তার উপর কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। নিজেকে মাঝে মাঝে কাপুরুষ মনে হয়। পরিবারের কাছেও একটা অপদার্থ, নীরার কাছেও।

রেস্টুরেন্টে খাবার পর নীরা বলল - আমি বিলটা দিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে টাকা ভাংতি নাই তো। টাকাটা ভাংতি করা দরকার।

সিফার আবারও অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে। জমানো টাকাগুলো নিয়ে আসলেই হত। কিন্তু ঐ টাকা তো অন্য কাজের জন্য।

মেয়েগুলো হয়ত নীরার মত এত ভাল হয় না। এত সহজে সব কিছু মেনে নেয় না। নীরা জানে সিফারের ফ্যামিলিতে সমস্যা চলছে একটু। তাই একেকটা অজুহাতে সিফারের টাকাগুলো বাঁচিয়ে দিচ্ছে। বাসায় আসার ভাড়াটাও দিয়ে দিল নীরা। তখন খুব বেশিই লাগল নিজের আত্মসম্মানে সিফারের। তাই বলেই ফেলল নীরাকে - কি ব্যাপার ? কি শুরু করছ তুমি?আমার কাছে ভাড়া দেওয়ার টাকাটাও নাই নাকি? আমাকে এভাবে অপমান করার মানেটা কি ?

আবারও নীরা সেই মিষ্টি হাসি মুখে নিয়ে বলল- উহ। এত বুঝে ছেলেটা। বিয়ের আগ পর্যন্তই তো mutual খরচপাতি। বিয়ে হোক তারপর থেকে সব তোমার। আমার থেকে ১ টাকাও বের করতে পারবা না। জামাই হয়ে বউয়েরটা নিবা? তা হবে না। এখন তো ভালবেসে দিচ্ছি। আর তখন কিছু না পেলে ঝাড়ু দিয়ে পিটাব। বাচ্চাকাচ্চা বউ সংসার সব তোমাকেই দেখতে হবে। তুমি শুধু দিবা আর আমরা বসে বসে খাব। হি হি হি হি।

কি সরল হাসি মুখে। আর কিছু বলার পেল না সিফার। বাসে করে চলে আসল বাসায়। আসার সময় জানালা দিয়ে দেখল নীরা হাত নেড়ে যাচ্ছে এখনও। বাসের শব্দে শোনা যাচ্ছে না কি বলছে। হয়ত টাটা বাই বাই।

রুমে এসে ঢুকার পরই মায়ের ডাক,
- সিফার, সারাদিন থাকিস কই তুই? বলেও যাস না। তুই তো আগে এমন ছিলি না।

কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে সিফার। কথা বলতে গেলেই মায়ের সাথে ঝগড়া বেধে যাবে। ইদানীং খুব খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাচ্ছে। অল্প কিছুতেই রাগ উঠে যায়।

পরশু বার্থডে নীরার। জমানো টাকাগুলো বের করল সিফার। অনেক কয়েক মাস ধরেই জমাচ্ছে টাকাগুলো। রিকশাতে না গিয়ে হেঁটে গেছে। একটা কিছু খুব খেতে ইচ্ছা করল, না খেয়ে টাকাটা রেখে দিছে। অনেক দিনের শখ, একটা ভাল ব্রান্ড এর বডি স্প্রে কিনবে সিফার। কিন্তু তাও কিনেনি। আগে নীরার বার্থডেটা যাক তারপর। মেয়েটা অনেক ভাল। কখনও ভাল কোন গিফট দেয়নি সিফার। শুধু কিছু গোলাপ ছাড়া। কিন্তু সেই গোলাপ নিয়েই মেয়েটা কত খুশি। কখনও মুখ বাকিয়ে বলে না, তুমি তো আমাকে কিছুই দাও না।
অন্য মেয়ে হলে কবেই ভেগে যেত। সিফার টাকাগুলো গুনল। না খারাপ হয়নি। নীরাকে পিংক কালারের ড্রেস এ খুব মানায়। ওকে একটা সুন্দর দেখে ভাল পিংক কালারের ড্রেস কিনে দিবে সিফার। বার্থডে গিফট। অসাধারণ লাগবে সেই ড্রেস পরলে ওকে।
সিফার হঠাৎ হেসে উঠল। মনে পড়ছে যে সিফারের বার্থডেতে নীরা একটা কবুতরের বাচ্চা এনে সিফারকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল - Happy Birthday To You, জান। এই নাও, বার্থডে গিফট। তোমার গায়ে তো রক্ত কম। দেখেই বোঝা যায়। কবুতরের বাচ্চা রোস্ট করে খাবা। গায়ে রক্ত বাড়বে, শক্তিও বাড়বে। একটু তো মোটাসোটা হও।

এরপর নীরা ব্যাগ থেকে কত্তগুলা আপেল বের করে বলল- নাও, এগুলাও খাবা। শক্তি বাড়বে।

বাসায় এসে কবুতরের বাচ্চা মাকে দিয়ে বলেছিল- আম্মু, এটা রান্না কর। আমার বন্ধু এটা উপহার দিছে আমার জন্মদিনে। এটা খেলে নাকি অনেক শক্তি পাওয়া যায়, শরীরে রক্ত বাড়ে।

এরপর ঘরে এসে এক এক করে সবগুলো আপেল একসাথে খেয়েছিল সিফার। ১০ টার মতন হবে। সবগুলো। শক্তি বাড়াতে হবে শরীরে তাই।
নীরা এত কিছু দিল। আর নীরাকে একটা কিছু দিবে না, তা কি হয়?তাই তো সেই কবে থেকে টাকা জমাচ্ছে। মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছে। কাল পছন্দ মতন ড্রেসটা কিনবে সিফার।

মা ঘরে হাতে একটা প্লেট নিয়ে ঢুকল। সিফারের কাছে এসে বলল- মুড়ি মাখলাম। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে। আয় তোকে খাইয়ে দেই। কতদিন তুই আমার হাতে খাস না।

মা খাইয়ে দিচ্ছে সিফারকে। খুব কান্না পাচ্ছে। সবাই এত ভাল কেন? মা টা না পাগল একটা। ভেবেছে আমি রাগ করে আছি।
সিফার মাখানো মুড়ি খাচ্ছে আর গাল বেয়ে পানি পড়ছে। মা পানি মুছে দিয়ে বলল- কাঁদিস ক্যান বাবা ? মানুষের অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। আমাদেরও থাকবে না। তোর কষ্ট হয় বুঝি। তোর যা লাগবে চাবি। যেভাবে হোক আমরা জোগাড় করে দিব। তুই আমাদের এত আদরের ছেলে।

সিফারের কান্না থামার পরিবর্তে আরও বেশি পাচ্ছে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এই মানুষগুলোর ভালবাসা ফেরত দেবার মতন ক্ষমতা নেই ওর। কেঁদে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া আর কি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

মা বলল- আজও বাড়িওয়ালা এসেছিল। মানুষগুলোকে যে আর কত ঘুরাব!! তোর বাবা বেতনও পাচ্ছে না। আর যে কয়টা টাকা বেতন পায় তাতে কিছুই হয় না।
- মা, আমি একটা কথা বলি?
-বল, বাবা।
- আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। তুমি নিবে সেগুলো ? আমি তো কিছুই করতে পারি না। অন্তত এক মাসের ঘর ভাড়াটা দিয়ে দাও তা দিয়ে।
- আরে না। কি বলিস? তোর জমানো টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিব কেন? তুই বড় হইছিস। এখন তোর একটা হাত খরচ আছে না?তোকে তো ওভাবে টাকা আর দেওয়া হয় না। তোর টাকা রেখে দে। কি একই শার্ট পরে ভার্সিটিতে যাস প্রতিদিন। তার চেয়ে ২ টা শার্ট কিনিস। জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে দেখলাম। কম দামের মধ্যে একটা জুতাও কিনিস। তোর বাবা বেতন পেলেই ঘর ভাড়া দিয়ে দিব। আর এতদিন ধরে থাকি আমরা এখানে। বাড়িওয়ালাকে একটু বুঝিয়ে বললেই বুঝবে।

সিফার ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। হঠাৎ মায়ের পায়ের কাছে পরে বলল - মা, আমাকে মাফ করে দাও না। আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিছি। আমি অনেক খারাপ। টাকাটা নাও না। না নিলে আমার ভাল লাগবে না। আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি। এই কথাটা অনেকদিন বলতে চাইছি, বলতে পারি নায়। আমার নতুন জামা কাপড় জুতা কিছু লাগবে না। আমি বড় হয়ে যখন চাকরি করব তখন আর কষ্ট থাকবে না আমাদের। তখন ভুরি ভুরি জামা কাপড় কিনতে পারব।
- এই সিফার, কি হইছে বাবা? এই তাকা এইদিকে। কি হইছে? এমন পাগলামি করতেছিস কেন?আচ্ছা দে। নিচ্ছি টাকা। তোর বাবা বেতন পেলে নতুন জামা কাপড় কিনে দিব তোকে আচ্ছা?

সিফার চোখ মুছে মায়ের হাতে টাকাটা দিয়ে বলল- নাও, ঘর ভাড়া দিয়ে আসো।

মা ছেলের কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলেন।

সিফার জানালার পাশে বসল এসে। হালকা হালকা হাওয়া বইছে। চোখের পানিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে সেই হাওয়ায়। নিজেকে প্রথম বারের মতন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। নীরার জন্য গিফট কেনা হল না এবারও। মেয়েটা অনেক অনেক ভাল। হয়ত রাগ করবে না কিছু না দিলেও। হঠাৎ চোখ পড়ল শার্টটার দিকে। একটু খানি ছিঁড়ে গেছে শার্টটা। কিভাবে ছিঁড়ল কে জানে!!! ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সিফার। মনে মনেই ভাবল, প্রেম ভালবাসা, নীরা, এগুলো নিম্নবিত্তদের জন্য না। এদের সুখ ঐ মা বাবার একটু হাসি। অল্প কিছু টাকা, বেঁচে থাকার জন্য। ছেঁড়া শার্ট সেলাই করে পরা। সস্তা জুতা। ২ বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার মধ্যেই।
ভালবাসা সবার জন্য না হয়ত। নীরা ভাল মেয়ে অনেক। কিন্তু কতটা দিন এভাবে মানিয়ে নিবে? একটা সময় হয়ত ক্লান্ত হয়ে যাবে। নিম্নবিত্তদের ছেঁড়া শার্টের সাথে নীরার মত মেয়েদের মানানো আসলেই খুব কঠিন !!!

ღjrk