"বাঁদর"
এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। বেহায়া, বাঁদর। যা ভাগ, নাহলে এইখানেই পাবলিকের হাতে গণধোলাই খাওয়াব।
শুনে ৩২টা দাঁত বের করে একটা ভিলেন টাইপ হাসি দিলাম। হাসিটা বিফলে গেল।
অন্তরার ভ্রুকুটি আরও বাড়ল। বিরক্ত হয়ে বলল তুই যাবি? নাকি মাইর খাবি?
মুখটা একটু ভোতা করে বললাম “দুলাভাইয়ের সাথে একটু দেখা করেই যাই?”
আমিই আজ প্রথম দেখা করতে এসেছি। প্রথম দেখায় এসে যদি দেখে তোর
মতো এক বাঁদরকে সাথে এনেছি তাহলে আমাদের প্রথম দেখাই শেষ দেখা হয়ে যাবে।
যা ফুট............ অন্তরার রাগি উত্তর। মুচকি হেসে চলে আসলাম। মনে মনে
বললাম সুন্দরী অনেক কিছুই তুমি জাননা। এই বাঁদর যে কত বড় বাঁদর সেটা যেদিন
জানবে সেদিন তোমার চেহারাটা দেখার মত হবে ............
চলুন
গল্পটা বোঝার জন্য আমরা কিছু পেছনে যাই। আমি তপু। বাঁদর বিশেষণ ইতিমধ্যে
অন্তরার মুখে শুনেছেন, আরও এরকম অনেক সুন্দর সুন্দর বিশেষণ আমার বন্ধুমহল
অকৃপণ হাতে আমাকে দান করেছে। মিথ্যা বলব না, পড়ালেখা ছাড়া বাকি সব
বিষয়েই আমি আমার বিশেষণের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছি শুধু পড়াশুনায় কিভাবে
কিভাবে জানি একটু বেশিই ভালো হয়ে গেলাম, যদিয়ও এ নিয়ে আমাকে বিস্তর
টিটকারি শুনতে হয়। যাই হোক, গল্পে ফিরে আসি গল্পের শুরু ফেইসবুক থেকে আমার
একটা গ্রুপ ছিল, “মুখোশে ঢাকা কবি” নামে। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা
লিখতাম। লুকিয়ে বলছি কারণ বন্ধুমহলে আমার যে ইমেজ,যদি তারা জানে আমি কবিতা
লিখি তবে দিন দুপুরে আমার বলাৎকার তথা ইজ্জত-হরণ হয়ে যাবে সে গ্রুপ
চালানোর জন্য আমার একটি ছদ্ম আইডি ছিল। গ্রুপটা অনেক পপুলার ছিল। গ্রুপে
আমাদের ক্লাসের একটি মেয়ে নিয়মিত পোস্ট করত, আমার কবিতায় কমেন্ট করত।
মেয়েটি আর কেউ নয়, অন্তরা আমাদের সেকেন্ড গার্ল। ফাস্ট কে ছিল জানেন? ঠিক
ধরেছেন, সেই অধম আমিই ছিলাম।অন্তরা সারাদিন পড়ত, পণ্ডিত গ্রুপ এর সাথে
গ্রুপ-স্টাডি করত। আমাকে দুচোখে দেখতে পারত না। সেকারণে গ্রুপে তার সকল
কমেন্ট এর উত্তর খুব মজা করে দিতাম । এভাবেই ফেইসবুকে তার সাথে আমার পরিচয়
ছদ্মনামের আড়ালে । দিন গড়িয়ে মাস বছর গেল । আমরা তখন থার্ড ইয়ারে
।ততদিনে ভার্সিটিতেও অন্তরার সাথে ভালো খাতির , খুব জ্বালাতন করতাম । সে
আমাকে ফেইসবুকে সব বলত , তার কথা , ভার্সিটির কথা , বন্ধুদের কথা , এমনকি
আমার কথা । আমাকে বলত “জান আমাদের ফাস্ট বয় পড়ালেখার ধার ধারেনা ,
সারাদিন বাঁদরামি করে । তার পরেও আমি তার নাগাল পাই না । মাথায় কি নিয়ে
জন্ম নিয়েছে কে জানে।’ আমি এসব শুনতাম আর মুচকি মুচকি হাসতাম । সে অনেকবার
আমার নাম্বার চেয়েছিল । আমি বলেছিলাম সময় হলে একেবারে দেখা করব । আমার
পরিচয় গোপন রাখার ব্যাপারে আমি অত্যন্ত সাবধানী ছিলাম । আমি চাইনি আমার
কবি-সত্তা সম্পর্কে আমার বিচ্ছু বন্ধুমহল জানুক আর আমার ইজ্জতের ফালুদা
হয়ে যাক ।
একসময় নিজেও দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম । সেই দুর্বলতা তার
সামনেও প্রকাশ হতে লাগল । ক্লাসে আনমনে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম । একসময়
সে বুঝতেও পারল হয়তো । অন্তরা অনেক শান্ত আর ভালো একটা মেয়ে । তাই
বিষয়টা অন্যরকমভাবে সমাধানের জন্য একদিন সে আমাকে ডেকে বলল “এই শোন , আমি
না একজনকে পছন্দ করি । ফেইসবুকে আমাদের পরিচয় ’’।
আমি হেসে বললাম ‘দেখেছিস’ ।
না ।
না দেখেই প্রেম ?
হম ।
যদি দেখিস পঞ্চাশ বছরের বুড়া ?
তাতে তোর কোন সমস্যা ?
না , আমার আর কি সমস্যা । বেস্ট অফ লাক......... আমি চলে আসলাম । সে ভাবল
আমি হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছি । আমি তখন হাসতে হাসতে পাগল হওয়ার দশা । আমার
প্রেমে পড়ে আমাকেই রিফিউজ । যাই হোক , সেদিন রাতে সে মোবাইলে কথা বলার
জন্য চাপাচাপি শুরু করল চেট এ । আমি বললাম ঠিক আছে , কাল দেখা করব । একদম
সামনা সামনি দেখা, কথা সব হবে । কাল বিকাল চারটায় , টি এস সি থাকবে । আমি
আসব ।
চিনব কিভাবে তোমায় ?
আমায় চিনতে হবে না । আমি তোমায় চিনি।
তার পরেও ।
ঠিক আছে , আমি কালো স্যুট পড়া থাকব আর তোমার ফুল তোলা নীল রুমালটা তোমায়
ফেরত দিব , গত সপ্তাহে যা হারিয়ে গিয়েছিল । তা দেখে চিনে নিও ।
মানে ? আমার রুমাল তুমি কিভাবে পেলে ? সত্যি করে বল কে তুমি ?
“বললাম তো দেখবে কাল । এত উতলা হউ কেন ? আমি যাই , ঘুম পেয়েছে । বাই ’’
এই বলে অন্তরাকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম ।
পরেরদিন ক্লাসে দেখি অন্তরা শুধু ছটফট করছে । আমি পিছনে বসে শুধু মজা
নিচ্ছিলাম । দুপুরের দিকে সে বাসায় চলে গেল । আমি বাসায় এসে গোসল করে
ভালভাবে তৈরি হলাম । তারপর ময়লা একটা টিশার্ট আর বিবর্ণ এক জিন্স পরে
সাড়ে তিনটার সময় বাইক নিয়ে অন্তরার বাসার কাছের একটা গলিতে গিয়ে
দাঁড়ালাম । অল্পক্ষণ পরে অন্তরা এসে রাস্তায় দাঁড়াল । নীল শাড়ী পরে
অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল । বাইকটা টান মেরে অন্তরার সামনে নিয়ে ব্রেক করে
দাঁড়ালাম ।
আরে অন্তরা , তুই ? কোথায় যাবি ?
টি এস সি ।
তাই নাকি ? আমি ও সেখানেই যাব । আয় ।
না থাক , আমি রিক্সা নিয়ে যাব ।
আয় তো , এত প্যাঁচাল পাড়িস না ।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্তরা বাইকে উঠে বসলো । যেতে যেতে বললাম “ কিরে । এত মাঞ্জা মারতে তো তোকে জীবনেও দেখলাম না । কাহিনী কি ?
প্রথমবার দেখা করতে যাচ্ছি ।
তাই?
হম ।
ভালো , ভালো ।
কিছুক্ষণের মাঝে টি এস সি এসে বসলাম দুজন । শুরু করলাম আমার শয়তানি ।
অন্তরা এমনিতেই টেনশনে ছিল । তার মাঝে আমার খোঁচাখোঁচিতে চরম বিরক্ত হয়ে
রেগে গেল ।
এই , তুই যাবি না ?
না , দুলাভাইকে দেখে যাই। ২৫ বছরের ছোকরা নাকি ৪৫ বছরের বুড়া ।
যা ভাগ । সময় হয়ে গেছে । এসে পরবে এখন ।
দোস্ত , একটা কথা বলি ?
কি ?
যদি ৪৫ বছরের বুড়া হয় তো সেকেন্ড অপশন হিসাবে আমাকে রাখিস ?
এখন ফাজলামি করার মুড নাই । তুই যা দোস্ত , প্লিজ ।
শুধু বল রাজি , তাহলেই আমি ভাগব ।
এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব । বাঁদর । যা ভাগ , নাহলে এইখানেই পাবলিকের হাতে গণধোলাই খাওয়াব ।
শুনে ৩২টা দাঁত বের করে একটা ভিলেন টাইপ হাসি দিলাম । হাসিটা বিফলে গেল ।
অন্তরার ভ্রুকুটি আরও বাড়ল । বিরক্ত হয়ে বলল তুই যাবি ? নাকি মাইর খাবি ?
মুখটা একটু ভোতা করে বললাম “দুলাভাইয়ের সাথে একটু দেখা করেই যাই ?”
আমিই আজ প্রথম দেখা করতে এসেছি । প্রথম দেখায় এসে যদি দেখে তোর মতো এক
বাঁদরকে সাথে এনেছি তাহলে আমাদের প্রথম দেখাই শেষ দেখা হয়ে যাবে । যা
ফুট............
বাইক নিয়ে চলে আসলাম কাছেই আপার বাসায় । এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করলাম । স্যুট পরে আপার কার নিয়ে গেলাম টি এস সি ।
কিরে ? তোর বুড়া আসেনি ?
চমকে গিয়ে অন্তরা আমার দিকে তাকালো । আমি তখন কালো স্যুট পড়া , কার থেকে
নেমে অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । “ এখনো ভেবে দেখ ,সেকেন্ড অপশন
হিসাবে আমি কিন্তু খারাপ না । কি বলিস ? ’’
চোখে সন্দেহ নিয়ে অন্তরা জিজ্ঞেস করল “ স্যুট পরেছিস কেন ?”
এইটা তোকে দেয়ার জন্য----- বলে আমি রুমালটা বের করলাম ।
অন্তরার মুখে তখন কোন কথা নেই । অনেক্ষন ডাগর ডাগর চোখ মেলে বোকার মতো
আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । তারপর হটাত মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করল ।
আমি জিগ্যেস করলাম “ কি , প্রথম অপশন নাকি দ্বিতীয় অপশন ?
আস্তে করে মাথা তোলে আমার চোখের দিকে তাকাল অন্তরা । তারপর তার বিখ্যাত
হাসিটি দিয়ে বলল............বাঁদর .........দ্বিতীয় অপশন............খুশি
?
লিখেছেন-দেবাশীষ মজুমদার সাগর