আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

অন্ধকার আর চোখের জল

অন্ধকার আর চোখের জল
লিখেছেনঃ Noshin Samiha Khan Trisha


আজ মিথিলার বিয়ে। ও এখন পড়াশুনা শেষ করেনি। ওর কাছে তো আর বিয়ে দিবে না। ভাল পাত্র পেয়েছে। মেয়েটাকে বললাম চলো পালিয়ে যাই। কি সুন্দর করে না করে দিল। আমি কিছুই না ওর? আর জোড় করলাম না। ও আসলে আমাকে ভালই বাসেনি। সময়ের আবেগ। নয়ত ও কিভাবে পারবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে?

এমন একটা দিনে পরিচয় হয়েছিল মিথিলার সাথে সাইফের। একদিন রাস্তায় একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে কলেজ ড্রেস পরে। মেয়েটিকে দেখে মনে হল কিছু একটা হয়েছে। সাইফ কাছে গিয়ে বলল কোন সমস্যা? মেয়েটি বলল ভাইয়া আমি খুব বিপদে পরেছি। আমার গাড়ি আসেনি। আমি কি আপনার মোবাইল থেকে একটু ফোন করতে পারি? সাইফ মোবাইলটা মেয়েটাকে দিল।
-হ্যা আম্মু গাড়ি আসেনি কেন? আমি রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। কলেজ আরো ১ ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
-সাইফ বলল চলো আমি দিয়ে আসি।
-না অপরিচিত কারো সাথে আমি যাব না।
-তো আমার মোবাইল টা যে নিলে?
-আপনিই তো আগে কথা বলতে আসলেন।
-ফোন টা তো তুমিই চেয়েছ।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-সাইফ একটা রিক্সা ডাক দিল। এই মেয়ে ওঠো।
-আমার নাম মিথিলা, মেয়ে না।
-আচ্ছা আচ্ছা ওঠো।
-এক রিক্সায়?
-হ্যা। তুমি এতটুকু মেয়ে। খুব কথা বল।
-এতটুকু মেয়ে মানে? আর দুই মাস পর আমি এইচ এস সি দিবো। বুঝছেন?
-বাহ। তুমি এত বড়? কিন্তু একা বাসায় যেতে পারনা। হাহাহা।
মিথিলা কিছু না বলে রিক্সায় উঠলো।

-রাগ করলে নাকি?
-না। এত হাসছেন কেন? আপনি কিসে পরেন?
-আমি ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ার।
-ও। সারা রাস্তা আর কোন কথা হলনা।

মিথিলা রাতে পরতে বসল।ওই ভাইয়া তার কথা কেন জানি খুব মনে পরছে।আসলে কারো সাথে তেমন মিশা হয় না তো। তাই হয়ত। ভাইয়াটার নামটাই জানা হল না।ইশ......

মিথিলা ওর আম্মুর মোবাইল টা নিয়ে লুকিয়ে ফোন দিল।
-হ্যালো
-আচ্ছা,আপনার নাম কি?
-সাইফ,আপনি কে?
-আমি মিথিলা। আপনার নাম টা জানা হয়নি তো।
-আমার নাম দিয়ে তুমি কি করবে?
-কি করব? নাম তো আর চকলেট এর মত খাওয়া যায় না যে খাব।
-তুমি বেশি কথা বল।
-আপনি বেশি কথা বলেন। আচ্ছা রাখি। ফোন দিয়েন না। এটা আম্মুর নাম্বার। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

সাইফ এর খুব হাসি পাচ্ছে মেয়েটার কথা মনে হলে।কেমন বাচ্চাদের মত।এত বড় হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয় নাই। কিন্তু মেয়েটাকে খুব ভাল লেগেছে ওর। ফোন টা দেয়ার পর যেন আরো ভুলতে পারছে না ও। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল সাইফ।

পরদিন ঘুম থেকে উঠলো ৮ টায়। দৌরে ক্লাস এ গেল। আজকেও দেরি। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। কখন ১২টা বাজবে। কেন জানি মিথিলার কলেজ এর সামনে যেতে ইচ্ছা করছে। সাতপাঁচ না ভেবে ও মিথিলার কলেজ এর সামনে গেল। মাত্রই ছুটি হয়েছে মনে হয়। ও এদিক ওদিক মিথিলাকে খুজছে। হটাত দেখল মিথিলা কাল রঙের একটা গাড়িতে উঠছে। ওকে দেখে কেন জানি ওর হার্টবিট বেরে গেল। এমন হচ্ছে কেন ও নিজেও বুঝতে পারছে না। কেনই বা ওকে দেখতে এল। মেয়েটা দেখলে কি ভাববে। দেখলে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পরবে। কোন ভাবে মুখটা বাঁচিয়ে কেটে পড়ল ও। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে আরেকটু দেখতে কিন্তু উপায় নেই।

বিকাল ৫ টা বাজে। ফোনের সব্দে ঘুম ভাঙল সাইফের। ফোনটা ধরে কণ্ঠ শুনে লাফ দিয়ে উঠলো সাইফ।
-এরকম চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন কেন।
-মানে?
-মানে!! কলেজ এর সামনে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিলেন না?
-নাহ। আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম।
-তাই না? আমাকে দেখে খাতা দিয়ে আবার মুখটা তো সুন্দর করে ঢেকেছিলেন।
-আচ্ছা তোমার পড়াশুনার কি অবস্থা?
-কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?
-আজব তো। এই মেয়ে এত কথা বলে কেন?
-এই রাখি রাখি। আম্মু চলে এসেছে। ফোন দিয়েন না। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিল আরেকটু কথা বলবে।


আজকাল যেন কি হয়েছে সাইফের। কিছুতেই মন বসে না। খালি ফোন দেখে। মিথিলার ফোন কি আর আসবে না? ওর কিছুই ভাল লাগে না। দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায় কিন্তু মিথিলার কোন ফোন আসে না। ওর কলেজ এর সামনে প্রায় ই যায় কিন্তু পায় না মিথিলাকে। ও বুঝতে পারে এমনি হয়ত ফোন দিয়েছে দুই দিন। ওর ভাল লেগেছে বলেতো আর মিথিলার ও ওকে ভাল লাগবে তা না। সাইফ নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখে। মিথিলার আম্মুর নাম্বার এ ফোন দেয় না যদি ওর সমস্যা হয়। সাইফ ধরেই নেয় মিথিলা ওকে আর কোন দিন ফোন দিবে না। কেটে যায় ৩ মাস।

একদিন হটাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। সাইফ ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে ধরল। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। মিথিলার ফোন।
-কেমন আছেন?
-ভাল। তুমি এতদিন পর?
-খুব খুশি হয়েছেন মনে হচ্ছে?
-নাহ। খুশি হওয়ার কি আছে।
-হি হি হি।
-হাসো কেন?
-আপনি সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারেন না তো তাই।
-এই মেয়ে তুমি বেশি কথা বল।
-হি হি। -তারপর এতদিন কোথায় ছিলে?
-আপনি জানেন না আমার পরীক্ষা ছিল? পরশু শেষ হল। এটা আমার নাম্বার।
-তোমার কলেজ কি বন্ধ ছিল?
-আপনি আমাকে কলেজেও খুজেছেন?
-না জিজ্ঞেস করলাম এমনি।
-এমনি? হি হি হি।
-এই মেয়েটাকে নিয়ে তো আর পারা গেল না।
-আচ্ছা বলছি। আমার টেস্ট পরীক্ষা হয়ে কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
-ও, ভাল। এই নাম্বার কি তোমার কাছে থাকবে?
-হুম।
-তাহলে তো ভালই।
-আচ্ছা এখন রাখি।
এভাবে মাঝে মাঝে ওদের কথা হত। দুজনের মাঝে ভাল বন্ধুত্ত হল। মিথিলা মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হল। মাঝে মাঝে কোচিং পালিয়ে দেখা করতে যেত। এর মধ্যে সাইফ অনেক ভালবাসে ফেলেছে ওকে কিন্তু বলতে ভয় পাচ্ছে। ও বুঝে যে মিথিলাও ওকে ভালবাসে। সে ভাবল মেয়েটার ভর্তি পরীক্ষা টা যাক পরে বলবে।

মিথিলার রেজাল্ট দিল আজ। ও জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলল সাইফ কে। সাইফ ও খুব খুশি হল ওর খুশি দেখে। মিথিলার মেডিক্যাল পরীক্ষা চলে এসেছে কাছে। সাইফ কথা বলা কমিয়ে দিল।দেখতে দেখেতে পরীক্ষা চলে এল। মিথিলার পরীক্ষা ভালই হল। ও সিলেট মেডিক্যাল এ চান্স পেল। এখন সাইফ এর এল সেইক্ষণ। কিন্তু কিভাবে যে বলবে। সাইফ তখন ই মিথিলাকে ফোন দিয়ে বলল কাল দেখা করতে।


মিথিলা এসে দেখে সাইফ হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে। মিথিলা সামনে যেতেই হাবার মত দাড়িয়ে পড়ল। খুব রাগ হচ্ছে ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
... হিহিহি।
-এই মেয়ে হাস কেন?
-না এই যে, প্রপোজ করবে বলে বসে আছ তো কিন্তু করতে পারছ না।
-কে বলেছে তোমাকে? তুমি আসলে বেশি কথা বল।
-তুমি আসলে বেশি বুঝ। আচ্ছা যাও প্রপোজ করতে হবে না। আমার উত্তর হ্যা। বোকার মত কেদে দিল সাইফ। এই মেয়েটা ওকে এত বুঝে।
-ওমা প্রপোজ করতে পারেনি বলে কেমন কাঁদছে দেখ।
-সাইফ খুশিতে আর জোরে জোরে কেদে দিল। এভাবেই হয়েছিল সাইফ আর মিথিলার মিষ্টি একটা সম্পর্ক। খুনসুটি, ভালবাসা আর মিষ্টি ঝগড়ায় ভালই চলছিল ওদের। কেটে গেল দুইটা বছর। কিন্তু হটাত একদিন......

-আমার তোমাকে কিছু বলার ছিল।
-বল।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-মানে?
-মানে তো তুমি বুঝতেই পারছ।
-তুমি তোমার বাসায় না করো। কারন আমি তোমার বাসায় বললে তো এখন আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিবে না।
-আমি না করলেও মানবে না।
-চল পালিয়ে যাই।
-কি বল এসব? আমি পারব না।
-তবে কি করবে?
-যাই করি পালাতে পারব না।
-সাইফ আর জোর করল না। চলে গেল মিথিলা। তাকিয়ে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখল।

আজ মিথিলার বিয়ে। একটু পর মিথিলা অন্য কারো হবে। ভাবতে পাছে না কিছু মিথিলা। সাইফ কে ছাড়া ও এক মুহূর্তও থাকতে পারবেনা। না ওর মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কি করবে ও? ও কি তবে পালিয়ে যাবে সাইফের হাত ধরে? ও এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবে না...

অনেক কষ্টে ও বাসা থেকে বের হল। সাইফ কে ফোন দিচ্ছে যেন ও এসে নিয়ে যায়। কিন্তু সাইফের ফোন বন্ধ। ও এতবার চেষ্টা করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে একা ও কিভাবে যাবে, বাসায় ও ফিরে যাবে না। খুব রাগ হচ্ছে কেন তখন সাইফকে পালিয়ে যাওয়ার কথা না করে দিল। রাস্তায় মাইক্রো দেখে ও সাইফের বাসা ভাড়া করল। সে ড্রাইভার কে বলল ও নেমে ভাড়া দিবে। সাইফের কাছ থেকে নিতে হবে, কোন টাকা নিয়ে বের হয় নাই ও। কিন্তু ড্রাইভার এটা কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে? এই যে ভাই এইদিক দিয়ে না। আপনি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই যে শুনছেন? আপনি ঠিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন না।

দুই বছর পর.........

রাত ১১ টা। সেই নদীর পারে বসে আসে। বসে বসে ভাবছে তার পুরনো সৃতিগুলার কথা। হটাত পাশে তাকিয়ে দেখল ঘুমটা পরা কোন মেয়ে। ওর বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা হল নিশিকন্যা যারা পেটের দায়ে দেহ বিক্রি করে। এই যে মেয়ে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন, আমি এজন্য এখানে আসি নাই। এই যে আপনি কথা বলেন। আচ্ছা আপনি এরকম ঘুমটা দিয়ে আছেন কেন? আপনাদের কত ঢং। তবুও আপনারাই ভাল আছেন, কোন কষ্ট নাই। আর আপনাদের এই মেয়ে জাত টাকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। আপনি কথা বলছেন না কেন? আপনারা মেয়েরা খুব ভাল অভিনয় করতে জানেন। জানেন একটা মেয়েকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু মেয়েটার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেও করে নিল। দুই বছর আগে আজকের দিনেই ওর বিয়ে হয়েছিল। ওর বিয়ের দিন ভেবেছিলাম ওকে একবার ফোন দিব কিন্তু আর দিলাম না ফোন টা পানিতে ফেলে দিলাম। আর খোজ নেইনি, জানি সুখেই আছে। মেয়েটা আর কান্না আটকাতে পারল না। চিৎকার করে কাদতে শুরু করল।

-মি মিথিলা......মিথিলা তুমি? তু তুমি এখানে? কথা বল মিথিলা।
-তুমি ভুল জানো সাইফ। আমি এখন মিথিলা না মালা।
-এসব কি বলছ মিথিলা? তুমি কিভাবে এখানে বল আমাকে?
-এখন আর এসব জেনে লাভ কি?
-তুমি বল মিথিলা। ঘুমটা টা সরাও। মিথিলার ঘুমটা টা পরে গেল। এ কেমন রুপ মিথিলার। যেই মেয়েকে বলে একটু সাজাতে পারত না আজ তার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কড়া মেকাপ, মাথায় ফুল। এই কি সেই মিথিলা। আজ সে চিনতে পারছে না মিথিলাকে।
-সাইফ তোমাকে আমি খুব ভালবাসতাম।
-ভালবাসতে? এখন বাস না?
-এখন আর ভালবাসা। এখন তো প্রতিদিন ই ভালবাসা ভালবাসা খেলতে হয়।
-প্লিজ মিথিলা।
-সাইফ তোমাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পারিনি অন্য কারো বউ হতে। আমি বিয়ের দিন লুকিয়ে বাসা থেকে বের হই। তোমাকে ফোন দিয়ে দেখি তোমার ফোন বন্ধ। ফোন টা কি পানিতে ফালানো খুব জরুর ছিল? আমি একটা মাইক্রো ভাড়া করি। জানো আমার কাছে একটা টাকাও ছিল না, ভেবেছিলাম তোমার এখানে গিয়ে দিব। কিন্তু......

আবারো কাঁদতে শুরু করল মিথিলা, কথা বলতে পারছেনা মিথিলা।
-বল মিথিলা বল। তারপর ...
-তারপর আর কি তোমার কাছ পর্যন্ত যাওয়া হল না। জানো আমি চিৎকার করে বলছিলাম ভাই এইদিক দিয়ে না। এই রাস্তা না। ভাই কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন এটা আমার সাইফের কাছে যাওয়ার রাস্তা না.........

এরপর আর কিছু মনে নেই। আমার যখন হুশ আসে দেখি একটা ঘরের মাঝে পরে আছি হাত বাধা। জানো ওরা আমাকে দুইদিন খেতে দেইনি। জানো আমার না খুব কষ্ট হচ্ছিল। হটাত কয়েকজন আমার রুমে ঢুকল। তারপর...

তারপর শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার আর চোখের জল। এরপর আমার জায়গা হল এখানে। জানো আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। নাম রেখেছি তিতলি। মেয়েটাকে তো কখন বাবার পরিচয় দিতে পারব না কিন্তু আমি চাই না আমার মেয়ে টা বড় হয়ে আমার মত কোন এক মালা হোক। কিন্তু কি করব আমি?

আজ আমার এই অবস্থার জন্য এই সমাজ দায়ি। কিন্তু আমার এই মেয়েটাকে এই সমাজ কখনই মানবে না। এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই।
-মিথিলা ফিরে চল আমার সাথে। আমি তোমাকে এখনও অনেক ভালবাসি।
-না সাইফ এখন আর হয় না। এখন আমারা দুইজন দুই জগতের। সাইফ আমার একটা কথা রাখবে? আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবে। বাবার পরিচয় দিয়ে বড় করবে?

পাঁচ বছর পর......

-বাবা এই নাও তোমার পানি।
-মেয়েটা একদম ওর মায়ের মত হয়েছে। সেই মুখ। গালে সেই এক ই তিল।
-বাবা জানো আমি স্কুল থেকে আসার সময় একটা আন্টি আমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে। কিন্তু কোন কথা বলে না। কে বাবা?
-কেও না মা।
-জানো বাবা অ্যান্টির গালে একটা তিল আছে ঠিক আমারটার মত।
-তিতলি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সাইফ। এই কান্নার অর্থ জানে না এই ছোট্ট তিতলি।

অতঃপর শুভ্র মেঘ

অতঃপর শুভ্র মেঘ
লিখেছেনঃ মেঘলা কাব্য

এই এত জোড়ে হাঁটছ কেন?..ধ্যাত একটু আস্তে হাঁটো না,আমি তো শাড়ি পরে এত দ্রুত হাঁটতে পারছি না,মেঘার এমন অভিযোগ এ :ভাবনার তারগুলো যেন কাটা পরল পিছনে ফিরল শুভ্র...মেঘা হেঁটে আসছে ধীরে,আবার যেন চিন্তগুলো ঘিরে ধরল ওকে... নিজের মনেই ভাবতে থাকল মেয়েটাকে এত ভালবাসল কখন.. মেয়েটাকে যে সবসময় আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ওর যেন কোন আধাঁর ওকে স্পর্শ করতে না পারে,আজ সকাল থেকেই বুকে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছে শুভ্র ব্যাথা টা হটাত্ একটা কাঁপুনি দিল যেন..নাহ্ এসব কি ভাবছে সে এভাবে নিজেকে দূর্বল করতে চায় না সে ...মেঘা একেবারে কাছে চলে এসেছে...আজ ও একটা নীল শাড়ি পরেছে,নীল শাড়ি তে যে ওকে এত মানায় তা আগে তো দেখা হয়নি.. এই আকাশ টা মেঘলা, কিছুটা ভারী কন্ঠে বলে উঠল মেঘা..আজ মেয়েটা যেন অনেকটা বড় হয়ে গেছে তবে মেঘার সরল পাগলামি তেই যেন মেঘাকে মানিয়ে যায় তাই কিছুটা যেন অপরিচিত লাগল ওকে.. মেঘা আবার বলল চুপ কেন? কই না তো..সরল উত্তর শুভ্রর।মেঘা আবার বলল আকাশে অনেক মেঘ করেছে,কেন বল তো.. প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেঘা..হয়ত আজকের জন্য,কথাটা বলে মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকে শুভ্র..মেঘা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল.. এরকম টা যে মেঘা করবে তা জানত শুভ্র.. শুভ্র জানে মেঘা কেন মুখ ফিরাল..কিন্তু তার জানার কথা মেঘাকে বুঝতে দিতে চায় না সে..তাই আবার বলতে লাগল, আকাশ টা আজ অনেক কষ্ট পাচ্ছে.. কেন জান, এতদিন কতনা স্মৃতি সঙ্গী ছিল এই আকাশটা,হেসেছে রৌদ্র হয়ে,কেঁদেছে বৃষ্টি হয়ে.. কত মন খারাপের গোধূলি তে হেঁটেছি তোমার সাথে.. আজ আবার ও কাঁদবে, বলে ওঠে মেঘা,এতখন চুপ করে ছিল ও... কথা শেষ করতে না পেরে শুভ্র তাকায় মেঘার দিকে..মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে বঝল শুভ্র.. অনেক ক্ষন চুপচাপ থাকে ওরা,,

শোন,তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে বুঝলে, নিজেকে কষ্ট দেব্ না,, নিরবতা ভাঙে শুভ্র.. আমার কথা ভেবো না.. আমি ভাল থাকব, নিজের খেয়াল রেখো তুমি..আনতমুখে কথাগুলো বলল মেঘা..এই তোমার হাত টা দাও না,ছুঁয়ে দেখব শেষবারের মত.. শুভ্র র চোখে আকুতি দেখতে পায় মেঘা..কিছু একটা বলতে যেয়ে ও বলতে পারে না মেঘা....

ওরা হাঁটছে অনেক ক্ষন.. মাঝেমাঝে দুজন দুজনার দিকে তাকাচ্ছে..আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে পাছে ধরা পরে যায়..

এই যা বৃষ্টি চলে এল..কথাটা বলেই মেঘার দিকে তাকায় শুভ্র..অবাক হযে় দেখল মেঘার সেই বৃষ্টিবিলাসী পাগলামি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে.. -মেঘা -হুম -তোমার বৃষ্টির বিলাসিতা কোথায় গেল.. চুপ থাকে মেঘা..কিছুক্ষন পর বলে ইচ্ছে করছে না.. কিছু বলে না শুভ্র.. আমাদের রাস্তা চলে এসেছে বলে শুভ্র.. -ভাল থেকো ,বলে মেঘা.. শুভ্রকে র কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হেঁটে যায় মেঘা,ও জানে শুভ্র তাকিয়ে আছে.. তাই সে তাকাবে না.. তাকিয়ে আছে শুভ্র মেঘার যাওয়ার পথে.. ও জানে মেঘা ফিরে তাকাবে না, তাই তাকিয়ে থাকতে সমস্যা নেই.. হাঁটছে মেঘা,অসম্ভব মায়াবী লাগছে ওকে.. আর তাকাতে পারে না সে.. কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে সব.....

(কিছু ভালবাসা পূর্নতা পাওয়ার আগেই হারাতে হয়,বাস্তবতায় চাপা পরে এমন অনেক মূহুর্ত, বেজে ওঠার আগেই কেটে যায় এমন অনেক অনুভূতির সুর...)

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

ছিলে মোর প্রথম সখা ...

ছিলে মোর প্রথম সখা ...
লিখেছেনঃ Pradyut Baran Chowdhury

বুকের উপর বিশাল জলাভূমি, ভয়ে কাঁপছি নানাভাই যদি ওখান থেকে পড়ে যায় ! আম্মুকে চিতকার করে ডাকছি । আম্মু শুনতে পাচ্ছেনা, বাইরে তুমুল বৃষ্টি । তাই আমিও যেতে পারছিনা নানাভাইকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য, নানাভাইয়ের লাঠিটা হঠাৎ নড়ে উঠল । আরেক পশলা ভয়, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম । নানাভাই… নানা… নানা ভাই……

আম্মু আমাকে স্বাভাবিক করার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর আমি নানা ভাইয়ের জন্য কেঁদেই যাচ্ছি। নানা মারা যাবার পরে প্রায়ই আমি এই দুঃস্বপ্ন টা দেখি । আমি তখন সাড়ে তিন বছরের, আমার ভাই তখন আম্মুর পেটে। আম্মুর পুনরায় জন্মধারন আমার মানসিক পীড়া্র কারণ ছিল । আমি তখনও বুকের দুধ না খেয়ে ঘুমাতাম না । আমাকে নিয়ে তাই নানী্র বাড়ীমুখী হলেন আম্মু । আমাদের বাড়ী থেকে সেখানে যেতে দুমিনিট সময় লাগে । এরপরে মেজমামা ছোট মামা নিয়ে ব্যস্তই থাকতাম একরকম । কিন্তু গোল বাধল, যখন দুই মামা মিলে বাইরে পড়তে চলে গেলেন ।

আম্মু প্রতিদিনের মত সকাল-বেলাতেই আমাকে নানার বাড়ীতে প্রেরন করলেন । বাড়ীতে শুধু অসুস্থ নানাভাই আর নানী । আমার স্থান হল নানার রোগশয্যার পাশে । আমার ছোট্ট মনে তখন এক পৃথিবী প্রশ্ন , এই মানুষটা সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন কেন ? হাঁটেন না কেন ? বাইরে বের হন না কেন ? সবার সঙ্গে বসে খান না কেন ? কারু বাসায় বেড়াতে যান না কেন ? কটর কটর করে সব নানাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম । সেই থেকে নানা ভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্যতার শুরু, আজো নানা আমার কাছে তেমনি প্রিয় একটি মানুষ । নানা একটু একটু করে সুস্থ হতে লাগলেন ।

আমাদের খেলাঘর তখন নানার রোগশয্যা শেষ খড়েড় গাদার উপরে । সারাদিন কি যে গল্প, সেই গল্পের ও কোনো শেষ ছিলনা । রাজা-রানী সুখে ঘর করতে লাগলেন, এরপরে কি নানাভাই ?? নানাভাই হেসে বলতেন এরপরে একদিন তোকে আমার সঙ্গে ওদের ওখানে যেতে বললেন । আমি তখন অভিমানে বলতাম তুমি আমাকে নিয়ে যাওনি কেন ? দিঘী্র জল তখন পাড় পেরিয়ে রাস্তায় ওঠার চিন্তায়, বর্ষাকাল এসে সেটাকে আরেকধাপ উতসাহিত করেছিল । আমি জানালার ধারে বিছানায় বসে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম, মনটা খুব খারাপ আমার । বৃষ্টির দাপটে পরাজিত হয়ে আজ আম্মু আমাকে নানাবাড়ীতে পাঠাতে ব্যার্থ হয়েছেন ।

হঠাৎ নানাভাইয়ের কন্ঠে আমার নাম শুনে চমকে যাই !! রাস্তায় তাকিয়ে দেখি দূর্বল পায়ে লাঠি হাতে নানা এঁটেল মাটির অমসৃ্ন পথ মাড়িয়ে আমাদের বাড়ীর দিকে আসছেন । আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসলাম । আম্মু বাইরে গিয়ে তাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন । সারাদিন আমি আর নানা অনেক গল্প করলাম । নানা আবার অসুস্থ, ঘোড়া হয়ে আমাকে আর পিঠে নিয়ে টগবগ করে ছুটতে পারছেন না । আমি কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করছি, নানা আজকি আমরা ঘোড়া ঘোড়া খেলবনা ??? নানী এসে বললেন মানুষটাকে এত বিরক্ত করিস কেন ? তারপর পুরো দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা নানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাটিয়েছিলাম ।

আম্মু আমাকে আর নানার কাছে পাঠায়না, নানা আর আমাকে নিয়ে খেলতে পারবেন না, উনি অসুস্থ । সেই ঈদের দিনটা আমার মানসপটে আজোবধি জ্বলজ্বলে । আমার ভাই কয়েকদিন আগে আম্মুর পেট ছেড়ে বাইরে বের হয়েছে ! ওকে সহ্য করতে পারছিনা, সারাক্ষণ ওকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকে । নানা ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে একটা মোটর গাড়ীর পেছনে বসে । আমার ভাইকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিতে গেলেন তিনি । আমি আমার ভাইকে সরিয়ে নানার কো্লে বসে বলতে লাগলাম, তুমি ওকে কোলে নেবেনা, ওকে সবাই খুব আদর করে ভালবাসে আর আমাকে কেউ এখন আদর করেনা । তুমি ভাল হয়ে গেছ, আবার আমার সঙ্গে খেলবেনা ?

নানা মুচকি হেসে বললেন, তুই যখন অনেক বড় হয়ে যাবি তখন আমাকে মনে রাখবি তো রাজকন্যা ? আমি নানার কথায় অস্বীকৃতি জানিয়ে বললাম, তুমি দেখ আমি কখনোই বড় হবনা, আমি শুধু তোমার সঙ্গেই খেলব । নানা আর দেরি করেনি, গাড়ী ছেড়ে দিল ড্রাইভার ।

আম্মু আমাকে এক হাতে টেনে ধরে রেখেছেন, নানা চলে যাচ্ছে, আমি কাঁদছি । আমার ভাই এর বয়স পনের দিন । আম্মু সকাল থেকে খুব কাঁদছেন, নানাবাড়ীতে মানুষের ঢল । সবাই বলছে নানা মরে গেছে । আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, নানা মরলে কি কিছু হবে ? আম্মু আরও জোরে কেঁদে উঠলেন । ছোটমামাকে সবাই অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে এনে মাথায় পানি ঢালছে । আমি আসলেই বুঝলাম না সবাই এরকম আচরন করছে কেন ?

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে যাচ্ছে, আমি একা একা চুপি চুপি নানাকে এঘর থেকে ওঘরে খুঁজে চলেছি । কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছেনা দেখে কাউকে জিগ্যেস করতে পারছিনা, নানা কোথায় ? পেয়ে গেলাম আব্বুকে আর জিগ্যেস ও করলাম ।

তিনি বললেন, নানাকে মাটির নিচে রেখে চলে এসেছেন, উনি আর কোনদিন উঠে আসবেন না । আমি রাগে আব্বুকে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগলাম, আম্মুর কান্না আরও বেড়ে গেল । আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, নানার রুপকথার রাজকন্যাও বড় হয়েছে । শুধু ছেলেবেলাটা ছেলেবেলায় রয়ে গেছে ।

নানাভাই প্রায় পনের বছর আগে আমাকে সাথী হারা করে চলে গেছে । আমার প্রথম সখা আমার নানাভাই, যার অনুপস্থিতি আজো আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্ন । ভালবাসি কথা টা বোঝার আগেই আমি নানার বিরহে বিরহিনী হয়ে গেছিলাম । সময় দ্রুত চলে গেছে, টের ই পায়নি । নানার সঙ্গে খড়ের গাদার উপর বসে শোনা গল্প গুলো মনে নেই, নানার চেহারা টাও স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে ম্লান হয়ে গেছে অনেকটা । কিন্তু দৃশ্য গুলো এখনো জীবন্ত মনে হয় ………………

নানার সঙ্গে কখনো যদি দেখা হয় তাহলে বলে দেব, “নানাভাই, তোমার সেই রাজকন্যা কোনদিন তোমাকে ভোলেনি, তুমি যে তার প্রথম সখা ! যেখানেই থেক, ভাল থেক !!!’’

বোঝেনা সে, বোঝেনা ...

বোঝেনা সে, বোঝেনা ...
লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ ইফাজ হাসবুল্লাহ

: এই রিমেল, দাড়া।
: কি? কিছু বলবি?
: কিছু না বললে কি তোকে এমনি ডেকেছি, আবুল।
: যা বলার দ্রুত বল , একটু পরেই আমার ফিজিয়ো ল্যাব।
: জি জনাব আমি জানি আপনার ফিজিয়ো ল্যাব আছে এবং ইহাও জানিযে কেউই ক্লাশটি করবেনা। শুধুমাত্র আতেল সমাজের অধিকর্তা রিমেল চৌধুরি ক্লাশটি করবেন।
: দেখ রিমি ফাজলামির একটা লিমিট আছে , তুই আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছিস।
: ওলে আমাল বাবুতা রেগে যাচ্ছেরে, চল্‌না কোথাও বসে গল্প করি। এত পড়ে কি হবে বল? পড়ালেখা করে কে পেয়েছে কিকবে?ঃ/
: ধুর, তোর মত এত আজাইরা গল্প করার সময় আমার নেই, আমি চললাম..
: রিমন গটগট করে ফিজিয়ো ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেল, সেদিকে তাকিয়ে রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ছেলেটা কি কিছুই বোঝেনা? নাকি ইচ্ছে করেই মফিজ সেজে থাকে।

রিমেলের সাথে রিমির পরিচয় মেডিকেল কোচিঙ্গে। একই সেকশনে ছিল দুজন। বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই রিমেল সর্বোচ্চ নম্বর পেত। এক পরীক্ষায় রিমি সর্বোচ্চ পায়, আর তা দেখে রিমেলের সেকি কান্না। এই কান্নাই কাল হয়ে দাড়াল রিমির, এত্ত কিউট করে একটা ছেলে কিভাবে কাঁদে। ছেলেটার জন্য কেমন জানি করতে লাগল। সবাই চলে যাওয়ার পর্‌ও রিমেল রেজাল্ট বোর্ডের সামনে দাড়িয়ে কাঁদতে থাকে।

: এই ছেলে ধর! টিশ্যু এগিয়ে দেয় রিমি। এমন ছিঁচকাদুনে ছেলেতো আমি বাপের জন্মেয় দেখিনি। এখনো ফেচফেচ করে কাঁদছে। থামবি? না কশে এক চড় লাগাব!
: আমার ইচ্ছে আমি কাঁদব, আপনার কি? জানেন, আম্মু যদি জানতে পারে আমি সেকেন্ড হয়েছি তবে আমার পিঠের চামড়া রাখবেনা!
: আহারে বুদ্ধূ, তুই বলবি তুই প্রথম হয়েছিস, তাহলেইতো হয়।
: রিমেলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ফিক করে হেসে দিল। কি চিন্তা করে পরক্ষনেই রাজ্যের মেঘ এসে জমল। "যদি আম্মু বুঝে ফেলে? তাহলে আমি শেষ!"
: আরে বেকুব, আন্টি কিছুই বুঝবেনা। বল, অল ইজ ওয়েল.. বল বল।
: এটা আবার কি?
: কেন?? থ্রি ইডিয়টস মুভিটা দেখস নাই??
: না, আমি টিভি দেখি না। এমনকি আমাদের টিভিই নেই। মা বলেছেন, ছাত্রনং অধিয়নং তপ। না পড়লে আমি বড় হতে পারবনা, তাই আমি সারাদিন পড়ি।

রিমি মনে মনে ভাবে " কত্ত বড় হয়েছিস তাতো দেখতেই পারছি। "শুন, এখন থেকে আমি কম আনসার করব, না হলেতো আবার ফেচফেচ করে কাঁদবি। আর তুই আমাকে তুই করে বলবি, আজ হতে আমরা ফেন্দু।
: ফেন্দু?
: গান্ধা, ফেন্দু মানে হল ফ্রেন্ড, বুঝলি!
: হুম.. আচ্ছা যাইরে, দেরি করলে আবার আম্মুর কাছে জবাবদিহি করতে হবে..
: রিমির চোখে বিদ্রুপের হাসি, এমন মাম্মি ড্যাডির ছেলে খুব কম দেখেছে। যাগা, আর দেখে পথ চলিস না হয় উষ্ঠা খেয়ে নাকমুখ ভাংবি। একটা স্মিত হাসি দিয়ে রিমেল চলতে শুরু করল।
: এরপর থেকে তাদের প্রায় প্রতিদিন ই দেখা হতে লাগল, ক্লাশ শেষে একসাথে ফেরা, গল্প করা। একদিন ফেরার পথে রিমি জিজ্ঞেশ করল, আচ্ছা, তুইতো অনেক কিছুই বুঝিস না, আমি বুঝিয়ে দেই। ধর রাতে পড়ার সময় একটা টপিকস বুঝছিস না, তখন কি করবি??
: পরদিন এসে তোর থেকে বুঝে নেব।
: ধর তোর ঐ মুহুর্তেই বোঝা প্রয়োজন, তখন কি করবি?
: কি করব?
: আমাকে কল দিবি।
: ওকে, তোকে কল দিব।
: কিভাবে কল দিবি?
: কেন? মোবাইল দিয়ে।
: ঊফফ, কলতো মোবাইল দিয়েই দেয়। আমার নম্বর তোর কাছে আছে?
: নাহ, নেই।
: নিবি না??
: ওহ হ্যা, বল।
: ০১৬********
: ধর, আমার দরকার হল তোকে কল করার , তাহলে আমি কি করব?
: কি করবি??
: আরে বোকচোদ নম্বর দে।
: ওউ, ০১৯********
: তুই এমন বোকা কেন বলত? কিছুই কি বুঝিস না?
: কি বুঝব?
: কিচ্ছু না। চল ফুচকা খাই।

এভাবেই চলে গেল তাদের দিনগুলো। কিছুদিন পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে দুজন ই সি.এম.সি তে চানস পেল। গ্রীষ্ম যায়, বর্ষা যায়, বসন্ত এসে উপস্থিত। রিমি কিছুতেই তার মনের কথাগুলো বলতে পারেনা। ছেলেরা বোকা হয়, তাই বলে এত!!! নাহ তার আর সয্য হয়না। দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে।

রিমন ফিজিয়ো ল্যাব এর কথা বলে ফুলেরদোকানের সামনে এসেছে। টকটকে ৫টা লালগোলাপ কিনল। রিমি মেয়েটা তাকে যতটা বোকাভাবে, সে আসলে ঠিক ততোটা নয়। রিমিকে প্রথম দেখাতেই তার ভাল লাগে। ইচ্ছেকরেই এতদিন সে অভিনয় করে এসেছে। তার বাবা বিজনেসম্যান ইংল্যান্ডে থাকে, মাকে হারিয়েছে ২ বছর বয়সে। বড় হয়েছে দাদির কাছে, মায়ের আদর সে পায়নি। তাই যখন রিমির সাথে পরিচয় হয়, তার কাছে আসার চেষ্টা করে, প্রতিটি মুহুর্তে নিজের সাজানো বাগানে রিমির ভালবাসার ফুল ফোটানর চেষ্টা করে গিয়েছে। আর তাইতো এত অভিনয়।

আজ যা হওয়ার হবে, রিমিকে তার ভালবাসার কথা বলবেই। এতদিনের সব অভিনয় প্রকাশ করে দিবে। যে ডিসিশন ইরিমি নিক, মাথা পেতে নিবে।

রিমেল মুক্তমঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। রিমি পা দুটো ভাজ করে দু'হাতের উপর মাথা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছে। রিমেল তার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে।

: রিমি?
: রিমি অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকায়। চোখভর্তি জল। মুখদুটো ফুলে আছে। রিমন রিমিকে এই প্রথম কাঁদতে দেখল। মেয়েটা এমনিতেই অসাধারন রুপবতী, কান্না যেনো রুপের আগুন দ্বিগুন বাড়িয়ে দিল।

: রিমন ধীরে ধিরে পাঁচটি লাল গোলাপ রিমির সামনে মেলে ধরল।

: ঠাস!!! রিমি কশে এক চড় লাগাল।
রিমন হতভম্ব!!

: হারামি, বজ্জাত, শয়তান ছেলে, এতদিন লাগছে বুঝতে!
আহ! রিমনের বুক হতে যেন এক টন বোঝা নেমে গেল।

ধীরে ধীরে মেঘ সরে গেল, সুয্যি মামা ফিক করে হেসে দিল।
বসন্তের হিমেল হাওয়ায় কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে ছাওয়া ডালগুলো দুলে উঠল।

দুরে কোথাও কোকিল গেয়ে উঠল, কুহু, কুহু, কুহু....

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়
লিখেছেনঃ রিদওয়ান এইচ ইমন

বিকেলটা ছিল বিষন্ন। বিষন্ন দিনে গুমোট ভাব নিয়ে বিষন্ন বনে যাওয়াটা আমার একদম ভাল লাগেনা। তাই প্রকৃতির এরুপ বিরুপ আচরনেও গ্যারেজ থেকে নিজের ২০০৩ মডেলের করোলা জি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লং ড্রাইভিং এর উদ্দেশ্যে।

আমার সারাটা সময় রচনাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বিষন্ন দিনে তাকে আমার সঙ্গী করিনা। রচনা ব্যানার্জী আমার স্ত্রী। দীর্ঘ তিন বছর অক্লান্ত ভালবেসে লাভ করা আমার অমূল্য রতন।

জীবনের ঝড়-তুফানের প্রতিটি মোড়ে দক্ষ সঙ্গীর মত আমাকে পাশে রাখলেও আমি এসব সিচুয়েশানে তাকে আমার যাত্রাসঙ্গী করিনা। একারনে রচনা ব্যানার্জীর অনেক ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের সীমা যখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে নিঙড়ে পড়ে, রচনা তখন তার বাপের বাড়ি গমন করে। সাধারনত তিন-চার দিনের বেশী রাগের ব্যাপ্তি বাড়েনা। ব্যাপ্তি কমলে আবার এই অধমের মাঝে ফিরে এসে মাথা গুজায়।

এবার রচনা গেল দিনপঞ্জিকার পাতায় পাতায় প্রায় এক বছর হয়ে গেল, সেই যে গেল জীবনের প্রতিটি মোড়ে তাকে খুঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু আমার প্রাণপাখিটাকে সঙ্গে করে নিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে গেল আর খুঁজেই পায়নি। শ্বশুরের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে দেখি দরজায় 'তিন রিংয়ের' সেই ঐতিহাসিক তালা ঝুলছে।

প্রথম দিকে বারকয়েক এভাবে খুঁজাখুজি করলেও এখন আর করিনা। যে চলে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও যখন ফিরে পাওয়া যায়না, তখন তাকে তার মতই থাকতে দেয়া উচিত। আমিও মানুষ। সুতরাং এর ব্যতিক্রম আমিও করতে পারলাম না।

আষাঢ়ে মাস। বৃষ্টি বাদল দিন। ব্রেকটা ঠিকমত কাজ করছেনা। তাই নির্জন গাছের ছায়ায় ঢাকা পিচঢালা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই গাড়িটা 'ঠাস' করে শব্দ করে উঠল। বামে ইন্ডিকেটর শো করে রাস্তার এক পাশে গাড়িটা সাইড করে দেখি সামনের ডান সাইডের চাকায় লিক করেছে।

বেজায় মুশকিলে পড়ে গেলাম। আশেপাশে যতটুকূ চোখ যায় তাতে একটা ছোট ঝুপড়ি টাইপের চায়ের দোকান ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায়না। এদিকে বৃষ্টিটাও ঝুম করে বেড়ে গেছে। এভাবে জানালা বন্ধ করে গাড়ির ভেতর বসে থাকলে দম বন্ধ করে নির্ঘাত মারা যাব। উপায়ান্তর না দেখে তাই ছোট ঝুপড়িটার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

ঝুপড়িটাতে ঢুকেই এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। মেঘেদের গর্জনের সাথে তাল মিলিয়ে চামচ দিয়ে কাপে টুংটাং শব্দ করেই দোকানদার আমাকে এক কাপ গরম চা উপহার দিল। বৃষ্টির সাথে সাথে এবার হাওয়াটাও বাড়তে লাগল। বেশ কাঁপন লাগানো হাওয়া। হাতে এক কাপ গরম চা থাকাতে শীতল হাওয়াটাকে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। এই ধরনের রোমাঞ্চের সাধ আজ থেকে কয়েক বছর আগে আরো একবার পেয়েছিলাম, যেদিন রচনাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিলাম।

চায়ের কাপ খালি করে ফেলেছি প্রায় আধঘন্টা হল। বৃষ্টি এখনো থামেনি। এদিকে সকাল থেকে সূর্য্যের কড়া রৌদের দেখা না মিললেও বিকেল যে হয়ে আসছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারছি। দিগন্ত জোড়া আকাশ, বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। তার মাঝ ঝুড়ে ছোট একটা পরিসরে এই চায়ের দোকান আর তার খালিকটা দূরেই হাতের বা পাশে আমার করোলা জি এর রাজত্ব। গাড়িটার দিকে চোখ যেতেই মনে হল এই বৃষ্টি বাদল দিনে কাউকে না পেয়ে গাড়িটা মনের দুঃখে একা ভিজছে, ঠিক যেন রচনাবিহীন আমার মত.…