আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

ছিলে মোর প্রথম সখা ...

ছিলে মোর প্রথম সখা ...
লিখেছেনঃ Pradyut Baran Chowdhury

বুকের উপর বিশাল জলাভূমি, ভয়ে কাঁপছি নানাভাই যদি ওখান থেকে পড়ে যায় ! আম্মুকে চিতকার করে ডাকছি । আম্মু শুনতে পাচ্ছেনা, বাইরে তুমুল বৃষ্টি । তাই আমিও যেতে পারছিনা নানাভাইকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য, নানাভাইয়ের লাঠিটা হঠাৎ নড়ে উঠল । আরেক পশলা ভয়, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম । নানাভাই… নানা… নানা ভাই……

আম্মু আমাকে স্বাভাবিক করার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর আমি নানা ভাইয়ের জন্য কেঁদেই যাচ্ছি। নানা মারা যাবার পরে প্রায়ই আমি এই দুঃস্বপ্ন টা দেখি । আমি তখন সাড়ে তিন বছরের, আমার ভাই তখন আম্মুর পেটে। আম্মুর পুনরায় জন্মধারন আমার মানসিক পীড়া্র কারণ ছিল । আমি তখনও বুকের দুধ না খেয়ে ঘুমাতাম না । আমাকে নিয়ে তাই নানী্র বাড়ীমুখী হলেন আম্মু । আমাদের বাড়ী থেকে সেখানে যেতে দুমিনিট সময় লাগে । এরপরে মেজমামা ছোট মামা নিয়ে ব্যস্তই থাকতাম একরকম । কিন্তু গোল বাধল, যখন দুই মামা মিলে বাইরে পড়তে চলে গেলেন ।

আম্মু প্রতিদিনের মত সকাল-বেলাতেই আমাকে নানার বাড়ীতে প্রেরন করলেন । বাড়ীতে শুধু অসুস্থ নানাভাই আর নানী । আমার স্থান হল নানার রোগশয্যার পাশে । আমার ছোট্ট মনে তখন এক পৃথিবী প্রশ্ন , এই মানুষটা সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন কেন ? হাঁটেন না কেন ? বাইরে বের হন না কেন ? সবার সঙ্গে বসে খান না কেন ? কারু বাসায় বেড়াতে যান না কেন ? কটর কটর করে সব নানাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম । সেই থেকে নানা ভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্যতার শুরু, আজো নানা আমার কাছে তেমনি প্রিয় একটি মানুষ । নানা একটু একটু করে সুস্থ হতে লাগলেন ।

আমাদের খেলাঘর তখন নানার রোগশয্যা শেষ খড়েড় গাদার উপরে । সারাদিন কি যে গল্প, সেই গল্পের ও কোনো শেষ ছিলনা । রাজা-রানী সুখে ঘর করতে লাগলেন, এরপরে কি নানাভাই ?? নানাভাই হেসে বলতেন এরপরে একদিন তোকে আমার সঙ্গে ওদের ওখানে যেতে বললেন । আমি তখন অভিমানে বলতাম তুমি আমাকে নিয়ে যাওনি কেন ? দিঘী্র জল তখন পাড় পেরিয়ে রাস্তায় ওঠার চিন্তায়, বর্ষাকাল এসে সেটাকে আরেকধাপ উতসাহিত করেছিল । আমি জানালার ধারে বিছানায় বসে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম, মনটা খুব খারাপ আমার । বৃষ্টির দাপটে পরাজিত হয়ে আজ আম্মু আমাকে নানাবাড়ীতে পাঠাতে ব্যার্থ হয়েছেন ।

হঠাৎ নানাভাইয়ের কন্ঠে আমার নাম শুনে চমকে যাই !! রাস্তায় তাকিয়ে দেখি দূর্বল পায়ে লাঠি হাতে নানা এঁটেল মাটির অমসৃ্ন পথ মাড়িয়ে আমাদের বাড়ীর দিকে আসছেন । আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসলাম । আম্মু বাইরে গিয়ে তাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন । সারাদিন আমি আর নানা অনেক গল্প করলাম । নানা আবার অসুস্থ, ঘোড়া হয়ে আমাকে আর পিঠে নিয়ে টগবগ করে ছুটতে পারছেন না । আমি কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করছি, নানা আজকি আমরা ঘোড়া ঘোড়া খেলবনা ??? নানী এসে বললেন মানুষটাকে এত বিরক্ত করিস কেন ? তারপর পুরো দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা নানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাটিয়েছিলাম ।

আম্মু আমাকে আর নানার কাছে পাঠায়না, নানা আর আমাকে নিয়ে খেলতে পারবেন না, উনি অসুস্থ । সেই ঈদের দিনটা আমার মানসপটে আজোবধি জ্বলজ্বলে । আমার ভাই কয়েকদিন আগে আম্মুর পেট ছেড়ে বাইরে বের হয়েছে ! ওকে সহ্য করতে পারছিনা, সারাক্ষণ ওকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকে । নানা ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে একটা মোটর গাড়ীর পেছনে বসে । আমার ভাইকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিতে গেলেন তিনি । আমি আমার ভাইকে সরিয়ে নানার কো্লে বসে বলতে লাগলাম, তুমি ওকে কোলে নেবেনা, ওকে সবাই খুব আদর করে ভালবাসে আর আমাকে কেউ এখন আদর করেনা । তুমি ভাল হয়ে গেছ, আবার আমার সঙ্গে খেলবেনা ?

নানা মুচকি হেসে বললেন, তুই যখন অনেক বড় হয়ে যাবি তখন আমাকে মনে রাখবি তো রাজকন্যা ? আমি নানার কথায় অস্বীকৃতি জানিয়ে বললাম, তুমি দেখ আমি কখনোই বড় হবনা, আমি শুধু তোমার সঙ্গেই খেলব । নানা আর দেরি করেনি, গাড়ী ছেড়ে দিল ড্রাইভার ।

আম্মু আমাকে এক হাতে টেনে ধরে রেখেছেন, নানা চলে যাচ্ছে, আমি কাঁদছি । আমার ভাই এর বয়স পনের দিন । আম্মু সকাল থেকে খুব কাঁদছেন, নানাবাড়ীতে মানুষের ঢল । সবাই বলছে নানা মরে গেছে । আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, নানা মরলে কি কিছু হবে ? আম্মু আরও জোরে কেঁদে উঠলেন । ছোটমামাকে সবাই অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে এনে মাথায় পানি ঢালছে । আমি আসলেই বুঝলাম না সবাই এরকম আচরন করছে কেন ?

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে যাচ্ছে, আমি একা একা চুপি চুপি নানাকে এঘর থেকে ওঘরে খুঁজে চলেছি । কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছেনা দেখে কাউকে জিগ্যেস করতে পারছিনা, নানা কোথায় ? পেয়ে গেলাম আব্বুকে আর জিগ্যেস ও করলাম ।

তিনি বললেন, নানাকে মাটির নিচে রেখে চলে এসেছেন, উনি আর কোনদিন উঠে আসবেন না । আমি রাগে আব্বুকে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগলাম, আম্মুর কান্না আরও বেড়ে গেল । আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, নানার রুপকথার রাজকন্যাও বড় হয়েছে । শুধু ছেলেবেলাটা ছেলেবেলায় রয়ে গেছে ।

নানাভাই প্রায় পনের বছর আগে আমাকে সাথী হারা করে চলে গেছে । আমার প্রথম সখা আমার নানাভাই, যার অনুপস্থিতি আজো আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্ন । ভালবাসি কথা টা বোঝার আগেই আমি নানার বিরহে বিরহিনী হয়ে গেছিলাম । সময় দ্রুত চলে গেছে, টের ই পায়নি । নানার সঙ্গে খড়ের গাদার উপর বসে শোনা গল্প গুলো মনে নেই, নানার চেহারা টাও স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে ম্লান হয়ে গেছে অনেকটা । কিন্তু দৃশ্য গুলো এখনো জীবন্ত মনে হয় ………………

নানার সঙ্গে কখনো যদি দেখা হয় তাহলে বলে দেব, “নানাভাই, তোমার সেই রাজকন্যা কোনদিন তোমাকে ভোলেনি, তুমি যে তার প্রথম সখা ! যেখানেই থেক, ভাল থেক !!!’’

বোঝেনা সে, বোঝেনা ...

বোঝেনা সে, বোঝেনা ...
লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ ইফাজ হাসবুল্লাহ

: এই রিমেল, দাড়া।
: কি? কিছু বলবি?
: কিছু না বললে কি তোকে এমনি ডেকেছি, আবুল।
: যা বলার দ্রুত বল , একটু পরেই আমার ফিজিয়ো ল্যাব।
: জি জনাব আমি জানি আপনার ফিজিয়ো ল্যাব আছে এবং ইহাও জানিযে কেউই ক্লাশটি করবেনা। শুধুমাত্র আতেল সমাজের অধিকর্তা রিমেল চৌধুরি ক্লাশটি করবেন।
: দেখ রিমি ফাজলামির একটা লিমিট আছে , তুই আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছিস।
: ওলে আমাল বাবুতা রেগে যাচ্ছেরে, চল্‌না কোথাও বসে গল্প করি। এত পড়ে কি হবে বল? পড়ালেখা করে কে পেয়েছে কিকবে?ঃ/
: ধুর, তোর মত এত আজাইরা গল্প করার সময় আমার নেই, আমি চললাম..
: রিমন গটগট করে ফিজিয়ো ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেল, সেদিকে তাকিয়ে রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ছেলেটা কি কিছুই বোঝেনা? নাকি ইচ্ছে করেই মফিজ সেজে থাকে।

রিমেলের সাথে রিমির পরিচয় মেডিকেল কোচিঙ্গে। একই সেকশনে ছিল দুজন। বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই রিমেল সর্বোচ্চ নম্বর পেত। এক পরীক্ষায় রিমি সর্বোচ্চ পায়, আর তা দেখে রিমেলের সেকি কান্না। এই কান্নাই কাল হয়ে দাড়াল রিমির, এত্ত কিউট করে একটা ছেলে কিভাবে কাঁদে। ছেলেটার জন্য কেমন জানি করতে লাগল। সবাই চলে যাওয়ার পর্‌ও রিমেল রেজাল্ট বোর্ডের সামনে দাড়িয়ে কাঁদতে থাকে।

: এই ছেলে ধর! টিশ্যু এগিয়ে দেয় রিমি। এমন ছিঁচকাদুনে ছেলেতো আমি বাপের জন্মেয় দেখিনি। এখনো ফেচফেচ করে কাঁদছে। থামবি? না কশে এক চড় লাগাব!
: আমার ইচ্ছে আমি কাঁদব, আপনার কি? জানেন, আম্মু যদি জানতে পারে আমি সেকেন্ড হয়েছি তবে আমার পিঠের চামড়া রাখবেনা!
: আহারে বুদ্ধূ, তুই বলবি তুই প্রথম হয়েছিস, তাহলেইতো হয়।
: রিমেলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ফিক করে হেসে দিল। কি চিন্তা করে পরক্ষনেই রাজ্যের মেঘ এসে জমল। "যদি আম্মু বুঝে ফেলে? তাহলে আমি শেষ!"
: আরে বেকুব, আন্টি কিছুই বুঝবেনা। বল, অল ইজ ওয়েল.. বল বল।
: এটা আবার কি?
: কেন?? থ্রি ইডিয়টস মুভিটা দেখস নাই??
: না, আমি টিভি দেখি না। এমনকি আমাদের টিভিই নেই। মা বলেছেন, ছাত্রনং অধিয়নং তপ। না পড়লে আমি বড় হতে পারবনা, তাই আমি সারাদিন পড়ি।

রিমি মনে মনে ভাবে " কত্ত বড় হয়েছিস তাতো দেখতেই পারছি। "শুন, এখন থেকে আমি কম আনসার করব, না হলেতো আবার ফেচফেচ করে কাঁদবি। আর তুই আমাকে তুই করে বলবি, আজ হতে আমরা ফেন্দু।
: ফেন্দু?
: গান্ধা, ফেন্দু মানে হল ফ্রেন্ড, বুঝলি!
: হুম.. আচ্ছা যাইরে, দেরি করলে আবার আম্মুর কাছে জবাবদিহি করতে হবে..
: রিমির চোখে বিদ্রুপের হাসি, এমন মাম্মি ড্যাডির ছেলে খুব কম দেখেছে। যাগা, আর দেখে পথ চলিস না হয় উষ্ঠা খেয়ে নাকমুখ ভাংবি। একটা স্মিত হাসি দিয়ে রিমেল চলতে শুরু করল।
: এরপর থেকে তাদের প্রায় প্রতিদিন ই দেখা হতে লাগল, ক্লাশ শেষে একসাথে ফেরা, গল্প করা। একদিন ফেরার পথে রিমি জিজ্ঞেশ করল, আচ্ছা, তুইতো অনেক কিছুই বুঝিস না, আমি বুঝিয়ে দেই। ধর রাতে পড়ার সময় একটা টপিকস বুঝছিস না, তখন কি করবি??
: পরদিন এসে তোর থেকে বুঝে নেব।
: ধর তোর ঐ মুহুর্তেই বোঝা প্রয়োজন, তখন কি করবি?
: কি করব?
: আমাকে কল দিবি।
: ওকে, তোকে কল দিব।
: কিভাবে কল দিবি?
: কেন? মোবাইল দিয়ে।
: ঊফফ, কলতো মোবাইল দিয়েই দেয়। আমার নম্বর তোর কাছে আছে?
: নাহ, নেই।
: নিবি না??
: ওহ হ্যা, বল।
: ০১৬********
: ধর, আমার দরকার হল তোকে কল করার , তাহলে আমি কি করব?
: কি করবি??
: আরে বোকচোদ নম্বর দে।
: ওউ, ০১৯********
: তুই এমন বোকা কেন বলত? কিছুই কি বুঝিস না?
: কি বুঝব?
: কিচ্ছু না। চল ফুচকা খাই।

এভাবেই চলে গেল তাদের দিনগুলো। কিছুদিন পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে দুজন ই সি.এম.সি তে চানস পেল। গ্রীষ্ম যায়, বর্ষা যায়, বসন্ত এসে উপস্থিত। রিমি কিছুতেই তার মনের কথাগুলো বলতে পারেনা। ছেলেরা বোকা হয়, তাই বলে এত!!! নাহ তার আর সয্য হয়না। দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে।

রিমন ফিজিয়ো ল্যাব এর কথা বলে ফুলেরদোকানের সামনে এসেছে। টকটকে ৫টা লালগোলাপ কিনল। রিমি মেয়েটা তাকে যতটা বোকাভাবে, সে আসলে ঠিক ততোটা নয়। রিমিকে প্রথম দেখাতেই তার ভাল লাগে। ইচ্ছেকরেই এতদিন সে অভিনয় করে এসেছে। তার বাবা বিজনেসম্যান ইংল্যান্ডে থাকে, মাকে হারিয়েছে ২ বছর বয়সে। বড় হয়েছে দাদির কাছে, মায়ের আদর সে পায়নি। তাই যখন রিমির সাথে পরিচয় হয়, তার কাছে আসার চেষ্টা করে, প্রতিটি মুহুর্তে নিজের সাজানো বাগানে রিমির ভালবাসার ফুল ফোটানর চেষ্টা করে গিয়েছে। আর তাইতো এত অভিনয়।

আজ যা হওয়ার হবে, রিমিকে তার ভালবাসার কথা বলবেই। এতদিনের সব অভিনয় প্রকাশ করে দিবে। যে ডিসিশন ইরিমি নিক, মাথা পেতে নিবে।

রিমেল মুক্তমঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। রিমি পা দুটো ভাজ করে দু'হাতের উপর মাথা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছে। রিমেল তার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে।

: রিমি?
: রিমি অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকায়। চোখভর্তি জল। মুখদুটো ফুলে আছে। রিমন রিমিকে এই প্রথম কাঁদতে দেখল। মেয়েটা এমনিতেই অসাধারন রুপবতী, কান্না যেনো রুপের আগুন দ্বিগুন বাড়িয়ে দিল।

: রিমন ধীরে ধিরে পাঁচটি লাল গোলাপ রিমির সামনে মেলে ধরল।

: ঠাস!!! রিমি কশে এক চড় লাগাল।
রিমন হতভম্ব!!

: হারামি, বজ্জাত, শয়তান ছেলে, এতদিন লাগছে বুঝতে!
আহ! রিমনের বুক হতে যেন এক টন বোঝা নেমে গেল।

ধীরে ধীরে মেঘ সরে গেল, সুয্যি মামা ফিক করে হেসে দিল।
বসন্তের হিমেল হাওয়ায় কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে ছাওয়া ডালগুলো দুলে উঠল।

দুরে কোথাও কোকিল গেয়ে উঠল, কুহু, কুহু, কুহু....

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়
লিখেছেনঃ রিদওয়ান এইচ ইমন

বিকেলটা ছিল বিষন্ন। বিষন্ন দিনে গুমোট ভাব নিয়ে বিষন্ন বনে যাওয়াটা আমার একদম ভাল লাগেনা। তাই প্রকৃতির এরুপ বিরুপ আচরনেও গ্যারেজ থেকে নিজের ২০০৩ মডেলের করোলা জি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লং ড্রাইভিং এর উদ্দেশ্যে।

আমার সারাটা সময় রচনাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বিষন্ন দিনে তাকে আমার সঙ্গী করিনা। রচনা ব্যানার্জী আমার স্ত্রী। দীর্ঘ তিন বছর অক্লান্ত ভালবেসে লাভ করা আমার অমূল্য রতন।

জীবনের ঝড়-তুফানের প্রতিটি মোড়ে দক্ষ সঙ্গীর মত আমাকে পাশে রাখলেও আমি এসব সিচুয়েশানে তাকে আমার যাত্রাসঙ্গী করিনা। একারনে রচনা ব্যানার্জীর অনেক ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের সীমা যখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে নিঙড়ে পড়ে, রচনা তখন তার বাপের বাড়ি গমন করে। সাধারনত তিন-চার দিনের বেশী রাগের ব্যাপ্তি বাড়েনা। ব্যাপ্তি কমলে আবার এই অধমের মাঝে ফিরে এসে মাথা গুজায়।

এবার রচনা গেল দিনপঞ্জিকার পাতায় পাতায় প্রায় এক বছর হয়ে গেল, সেই যে গেল জীবনের প্রতিটি মোড়ে তাকে খুঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু আমার প্রাণপাখিটাকে সঙ্গে করে নিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে গেল আর খুঁজেই পায়নি। শ্বশুরের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে দেখি দরজায় 'তিন রিংয়ের' সেই ঐতিহাসিক তালা ঝুলছে।

প্রথম দিকে বারকয়েক এভাবে খুঁজাখুজি করলেও এখন আর করিনা। যে চলে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও যখন ফিরে পাওয়া যায়না, তখন তাকে তার মতই থাকতে দেয়া উচিত। আমিও মানুষ। সুতরাং এর ব্যতিক্রম আমিও করতে পারলাম না।

আষাঢ়ে মাস। বৃষ্টি বাদল দিন। ব্রেকটা ঠিকমত কাজ করছেনা। তাই নির্জন গাছের ছায়ায় ঢাকা পিচঢালা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই গাড়িটা 'ঠাস' করে শব্দ করে উঠল। বামে ইন্ডিকেটর শো করে রাস্তার এক পাশে গাড়িটা সাইড করে দেখি সামনের ডান সাইডের চাকায় লিক করেছে।

বেজায় মুশকিলে পড়ে গেলাম। আশেপাশে যতটুকূ চোখ যায় তাতে একটা ছোট ঝুপড়ি টাইপের চায়ের দোকান ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায়না। এদিকে বৃষ্টিটাও ঝুম করে বেড়ে গেছে। এভাবে জানালা বন্ধ করে গাড়ির ভেতর বসে থাকলে দম বন্ধ করে নির্ঘাত মারা যাব। উপায়ান্তর না দেখে তাই ছোট ঝুপড়িটার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

ঝুপড়িটাতে ঢুকেই এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। মেঘেদের গর্জনের সাথে তাল মিলিয়ে চামচ দিয়ে কাপে টুংটাং শব্দ করেই দোকানদার আমাকে এক কাপ গরম চা উপহার দিল। বৃষ্টির সাথে সাথে এবার হাওয়াটাও বাড়তে লাগল। বেশ কাঁপন লাগানো হাওয়া। হাতে এক কাপ গরম চা থাকাতে শীতল হাওয়াটাকে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। এই ধরনের রোমাঞ্চের সাধ আজ থেকে কয়েক বছর আগে আরো একবার পেয়েছিলাম, যেদিন রচনাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিলাম।

চায়ের কাপ খালি করে ফেলেছি প্রায় আধঘন্টা হল। বৃষ্টি এখনো থামেনি। এদিকে সকাল থেকে সূর্য্যের কড়া রৌদের দেখা না মিললেও বিকেল যে হয়ে আসছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারছি। দিগন্ত জোড়া আকাশ, বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। তার মাঝ ঝুড়ে ছোট একটা পরিসরে এই চায়ের দোকান আর তার খালিকটা দূরেই হাতের বা পাশে আমার করোলা জি এর রাজত্ব। গাড়িটার দিকে চোখ যেতেই মনে হল এই বৃষ্টি বাদল দিনে কাউকে না পেয়ে গাড়িটা মনের দুঃখে একা ভিজছে, ঠিক যেন রচনাবিহীন আমার মত.…

আমাদের পথচলা…

আমাদের পথচলা…
লিখেছেনঃ Farzbee

২০০৮ সাল… জুন মাস... কলেজের ১ম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। শান্তি… ঝামেলা শেষ… এর মধ্যে বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম ইংরেজির জন্যে কোচিং করব সাইকি তে, ওখানে পড়া কম, গল্প বেশি। আহা! কি মজা…
সব কোচিং যদি এমন হত… তাই একদিনও কোচিং বাদ দিতাম না। গল্পে গল্পে আমার দিন ভালই যাচ্ছিল, এর মধ্যে নতুন করে যোগ হল mig33.. কে পায় আর আমাকে। মজা আর মজা। বন্ধু, আডডা,চ্যাটিং… কি দিনটাই না ছিল। বন্ধুদের মাধ্যমে একটা ছেলের সাথে চ্যাটে পরিচয়। হুমম, খারাপ না ছেলেটা… ভালই। আমাদের সাথে একই কোচিং এ পড়ে। আর সেখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু। Mig33 বন্ধুরা তোমাকে আর আমাকে নিয়া খেপাতো, এটা নিয়া বিরক্ত হয়ে বোকার মত কাজ করলে, আমিও তোমাকে সাহায্য করলাম। ঠিক করলাম সবাইকে বলবো আমাদের সম্পর্ক আছে, অনেক আগে থেকেই। কাউকে বলিনি, তাই আমাদের নিয়া আর যেন মজা না করে, আর তাই বলে ফেললাম বন্ধুদের, বন্ধুরা বুঝলো আমাদের অভিনয়ের কথা, শুরু হল আরো খেপানো। বুঝলাম বড় বোকামি করে ফেলেছি।

কিন্তু সেদিন বুঝিনি আমরা আসলেই সত্য কথাটাই বলেছিলাম নিজেদের অজান্তে। আস্তে আস্তে তোমার সাথে চ্যাটিং বেড়ে গেল। তোমার প্রতি ভাললাগা শুরু হল। ভাবলাম এটা কিছুই না, এমনি ভাললাগা, ভালবাসা না। আমিতো কাউকে ভালবাসবো না, এভাবে চলে গেল সময়, হঠাৎ করে তোমার ব্যবহার বদলে যেতে থাকলো, আমার সাথে অন্যরকম ব্যবহার শুরু করলে। কোচিংএ একদিন ফি জমা দেয়ার সময় তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি খেয়াল করোনি বলে সেটা নিয়া আফসোস করা, ঘন ঘন ফোন করে আমার খবর নেওয়া.... সবকিছুই বুঝতে পারছিলাম আমি, কিন্তু আমিতো ভালবাসা চাই না, ভাল বন্ধু চেয়েছি।

উপেক্ষা করার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। কারণ নিয়তি যে তোমার সাথেই লেখা ছিল। আগষ্ট মাসের ২০ তারিখ, তুমি হঠাৎ করে বলে ফেললে তোমার ভাললাগার কথা। অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে এটা তুমি না বলো। কারণ আমি জানতাম আমি তোমাকে না বলবো। চাইনি আমার বন্ধুটিকে হারাতে। তুমি দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে, কিন্তু আমার জন্যেই বন্ধুত্বটা ধরে রেখেছিলে। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে আমাকে খুশি করার জন্যে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তুমি আরো কষ্ট পাচ্ছিলে। তোমার কষ্ট আমি বুঝতে পারতাম তবে সাহস ছিল না তোমাকে হ্যাঁ বলার, আবার পারছিলাম ও না তোমার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙ্গে ফেলতে। তুমি বুঝতে পারছিলে যে আমিও আস্তে আস্তে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার মুখ থেকে তুমি এই কথাটা শুনতে পারোনি।

আরো দ্বিধায় পড়ে গেলে। আমাকে অনেকবার বলেছ সত্য বলতে, আমি বলিনি। এভাবেই বলবো না করতে করতেই কখন যে তুমি আমার সবচেয়ে আপন জন হয়ে গেলে জানি না। ওইভাবেই আর বলা হয়ে উঠেনি ভালবাসি তোমাকে। দুইজনই বুঝে নিলাম যে আমরা একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারব না। সামনে এইচ.এস.সি পরীক্ষা, অনেক পড়া পড়তে হবে, তোমার সাথে দেখা হতো খুব কম কেননা আমরা একই কলেজে পড়তাম না। যা দেখা হতো কোচিং এ, তেমন কথা বলাও হতো না সামনাসামনি, তারপরও আমাদের নিশ্চুপ ভালবাসা নিজের গতিতে চলতে থাকলো। এইচ.এস.সি দিলাম, রেজাল্ট দিলো। তুমি চলে গেলে ঢাকাতে পড়ার জন্যে। আমি রয়ে গেলাম চট্রগ্রাম।

নিজেদের ইচ্ছাতেই আমরা একসাথে পড়লাম না। তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া শুরু করলে আর আমি মেডিকেলে। কারণ তোমাকে আমার আগেই প্র্তিষ্ঠিত হতে হবে। শুরু হলো “Long distance love story”. সবাই বলতো এভাবে ভালবাসা টিকে না, কিন্তু আমাদের জন্যে এটা কষ্টের ছিল না। আমরা অলপতেই খুশি হতাম। তুমি ঢাকা থেকে বেড়াতে আসতে, তখন দেখা হত দুই কি এক বার। কোন কোন সময় দেখাও হতো না, মেনে নিতাম। খারাপ লাগতো অন্যদের দেখে, কিন্তু মন খারাপ করতাম না। তুমি চট্রগ্রা্ম আসলেই ঈদ ঈদ লাগতো। আবার তুমি যখন চলে যেতে, লাগতো আমার চট্র্রগ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। কান্নাও করতাম, তুমি বুঝাতে। এভাবেই ৪টা বছর কেটে গেল আমাদের। এরপর তোমার আব্বু বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন, সাথে তোমার পুরো পরিবার। আমার চট্রগ্রাম শহর এখন পুরো ফাঁকা। ঈদের সময় ও আর ঈদ ঈদ লাগে না, ভুলাক্কার।

যেবার চলে গেলে তোমরা, তোমার সাথে সেবারো দেখা হয়নি। আমি বাসা থেকে একা বের হতে পারিনি, আর তুমিও বাসার কাজ শেষ করে আমার সাথে দেখা করতে আসতে পারছিলে না। চলে গেলে তোমরা। মন খারাপ করেছিলাম খুব। তোমার চট্র্রগ্রাম আসা হতো না। এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর তুমি এলে এক কাজে। তখন দেখা হলো এক ঘন্টার জন্যে। এবারও আসলে কিন্তু দেখা হলো না, আমার পরীক্ষার জন্যে সময় দিতে পারলাম না। জানি তোমার খারাপ লেগেছে, কিছুই বলোনি।

মাঝে মাঝে লাগে কেন একসাথে পড়লাম না, রাগ ও লাগে, কান্না পায় খুব। জানো, তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে আমি আজো বৃষ্টিতে ভিজিনি। তোমার সাথে রিকশাতে ঘুরবো বলে আমি আজো কোন ছেলেবন্ধুর সাথে রিকশাতে উঠিনি, আমার পাশের সিটটা যে শুধুই তোমার জন্যেই খালি। আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা এসেছে এই ৫টা বছরে, তাও ভেঙ্গে পড়িনি, এসবই সম্ভব হয়েছে শুধু তোমার জন্যে, তোমার ভালবাসার জন্যে আর আমাদের একজন এর প্রতি আরেকজনের শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের জন্যে।

তুমি এত ভাল কেন, আমার সব আবদার মাথা পেতে মেনে নাও, আমাকে বকতেও পারোনা। আর আমি তোমাকে সারাদিন বকি। এটা করো নাই কেন, ওটা কেন করেছ, তোমার ভুলে যাওয়া, আর কত কিছু নিয়া তোমার মাথা খাই, অথচ তুমি আমাকে কিছুই বলোনা। এত কেন ভাল তুমি?

তুমি বলো আমাকে পেয়ে তুমি ভাগ্যবান, বরং আমি তোমাকে পেয়ে ভাগ্যবতী। ভাগিস ৫ বছর আগে আমাকে বলেছিলে তোমার ভাললাগার কথা, তা না হলে এই দিনটা আসতো না আমার জীবনে। আমাদের ভালবাসার সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে কবে এটা শুরু হয়েছে আমরা জানিনা। নিজের অজান্তেই আমাদের একসাথে পথচলা।

তাও প্রতি বছর আমরা ২০শে আগষ্ট একজন আরেকজনকে উইশ করি, যেদিন কিনা আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়াছিলাম। তুমি যদি সেদিন আমাকে তোমার ভাললাগার কথা না বলতে তাহলে আজ আমাদের এই পথচলা হত না।

Thank u so much ভুলাক্কার, আমার জীবনে আসার জন্যে, আমাকে ভালবাসার জন্যে। হয়তো আমরা অন্যদের মতো ঘুরতে পারিনা, সময় দিতে পারিনা, দেখা করতেও পারিনা, তাও আমাদের ভালবাসা অন্যদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। আমাদের অনেক না পাওয়া আছে তাও আমরা হাসিমুখে তা মেনে নেই। একটা সম্পর্কে এটাইতো অনেক বড় পাওয়া, তাই না?

শুধু বলবো অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে। সবসময় আমার ভুলাক্কার হয়ে থেকো। যেমন আছ ঠিক তেমন।

# সোনালি রঙা কার্ড #

# সোনালি রঙা কার্ড #
লিখেছেনঃ Jahid Hasan Ruhan

মাথাটা ঝিমঝিম করছে রবিনের। বুকে কেউ পাথর চেপে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে তার। সে কখনো কাঁদে না। আজ তার খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।


ঘন্টা খানিক আগের কথাঃ - ড্রয়ার খুলতেই একটি সোনা চকচকে কার্ডের উপর রবিনের চোখ আঁটকে গেল। এই তো সেই বিয়ের কার্ডটি। বড় ভাইয়ার এক বন্ধুর বিয়ের কার্ড। গত বছরে এই বিয়ের মাধ্যমেই মেয়েটির সাথে প্রথম তার দেখা হয়।

বিয়ে বাড়ি কিংবা বিয়ে বাড়ির লোকারন্য কোনটাই রবিনের পছন্দ না। যদিও সে সুস্থির গোছের ছেলে নয়। সেবার ডিসেম্বরে সব কাজিনেরা রবিনের বাসায় একত্রিত হয় বলেই তাকে ওই বিয়ে বাড়িতে যেতে হয়েছে।

ক্যামেরা হাতে সবার ছবি তুলছিল রবিন। টুকিটাকি ফটোগ্রাফির ঝোঁক ছিল বলেই খুব একটা খারাপ ছবি তোলে না সে।

সেই সময় রবিনের চোখে পড়ে লম্বা চুলো লাল শাড়ি পড়া মেয়েটি। আর তা তখনই ঘটে গেল যাকে বলে, লাভ ইন ফার্স্ট সাইথ। মেয়েটির চোখ দুটি অসম্ভব মায়াময়। যেন তার চোখের দিকে তাকালেই সব ক্লান্তি হারিয়ে যায়। তার চোখের মাদকতায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। রোদ চশমার কল্যাণে রবিন তাকে প্রায় সারাটি সময় দেখছিলো। লুকিয়ে লুকিয়ে তার কয়েকটি ফটোগ্রাফও তুলেছে।

এরপর অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে কথা বলার সাহস করে উঠতে পারেনি রবিন। তবে আশেপাশে বলাবলি করে মেয়ের নাম জানতে পারে অর্পিতা।

একসময় রবিন মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলে। অনেক খুঁজেছিল সেদিন রবিন, হয়তো মেয়েটি ততক্ষণে বিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।

অর্পিতার মোবাইল নম্বর, বাসার ঠিকানা এসব জোগাড় করার অনেক চেষ্টা করেছিল রবিন কিন্তু কিছুই সে পায়নি।এরপর অর্পিতার ছবি গুলো দেখে আর তাকে খুঁজে দিন পাড় করবে বলে ঠিক করে রবিন।


হঠাৎ করে কলিং বেলের আওয়াজে চিন্তার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো রবিন। ড্রয়ার বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগোলো কে এসেছে দেখার জন্য। সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই একটা হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ অনুভব করলো। ঘ্রাণটা এত পরিচিত লাগছে কেন তার? আগে কোথায় পেয়েছিল সে এই ঘ্রাণ? সেই বিয়ে বাড়িতে নয় তো??

ড্রইংরুমে যেতেই ধাক্কার মত খেল রবিন। রবিনের মায়ের সামনে সোফায় বসে আছে দুইটি মেয়ে, ডান সাইডে বসে থাকা মেয়েটি অর্পিতা।

রবিন চিন্তা করতে থাকে, অর্পিতা এখানে কেন? সে কি রবিনকে খুঁজতে এসেছে? সে কি জানে রবিন তাকে কয়েকটি মাস হন্নে হয়ে খুঁজেছে? মেয়েটা কি জেনে গেছে রবিন তাকে কতটা ভালবাসে?


মাথা নিচু করে বসে থাকা অর্পিতার হাতে ধরা একটি সোনালি রঙা কার্ড। কার্ডটি সে বাড়িয়ে দিল রবিনের মায়ের দিকে। কিসের কার্ড জানতে চাইলে অর্পিতা জানালো এটা তার নিজেরই বিয়ের কার্ড।


হঠাৎ করে রবিনের সব প্রশ্নের উত্তর রবিন পেয়ে গেল। ড্রইংরুমে এগোলোনা সে, ওখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে অর্পিতাকে প্রশ্ন করল, "বেশ তো হারিয়ে ফেলেছিলাম। তোমার ছবি গুলোর মাঝে সুখ খুঁজতাম। সুখ খুঁজতাম তোমাকে খোঁজার মাঝেই। আবারও যখন হারিয়ে যাবে নিজ থেকে দেখা দিতে এলে কেন?"

মাথা ব্যথা ক্রোমোস বাড়ছে রবিনের। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি এসে পড়ল সোনালি রঙা কার্ডটির উপর।