আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

আমি এবং আমার অতঃপর

আমি এবং আমার অতঃপর
লিখেছেনঃ Pradyut Baran Chowdhury

কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা জগত,ভার্সিটিতে উঠলাম মিশ্র অনুভূতি নিয়ে -পুরানো সব বন্ধুদের ফেলে আসা চুটিয়ে আড্ডা, পছন্দের জায়গাগুলোর মায়া কাটিয়ে চলে আসা আর সবকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছিল প্রথম ভাললাগার ব্যর্থতা,শাব্দিক অর্থে যাকে ‘ছ্যাঁক খাওয়া’ বলে।জীবনের প্রথম ছ্যাঁক খাওয়ার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ভার্সিটিতে এসে দেখি এখানে মেধার ছড়াছড়ি, মফস্বলে যেখানে হাজারে একটা পাওয়া দায়,সেখানে এত শতশত মেধাবি দেখে চক্ষুদ্বয় ছানাবড়া, সবাই এক্সপার্ট- কিছু না কিছু করছে রাত-দিন, আমি অধম গোবেচারা শুধু দূর থেকে দেখছি আর আফসোস করছি।ক্লাস শুরু হতেই ব্যাপারটা যেন নতুনমাত্রা পেল,প্রথমদিনেই এক ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করার ট্রাই করলাম,তবে সূচনার দিনগুলো কষ্টে কাটলেও দিন যেতে যেতে আরও কিছু বন্ধু হল যারা নিতান্ত আপন।আরেকটা বিষয় একটু দেরিতে হলেও নজর কাড়ল,চারপাশে সুন্দরী ললনা,কেউ সিনিয়র,কেউ জুনিয়র আবার কেউবা ব্যাচমেট... প্রেমিক মনটা একটার পর একটা ক্রাশ খাওয়ার ভয়ে কাউকেই কিছু বলতে পারছে না,তবে এফবি নামক রম্যবিনোদনের চ্যাটকেন্দ্রে অনেকের সাথে প্রনয় বিনিময় হচ্ছে কিন্তু আসল কাজের কিছুই হচ্ছেনা, মাথার মাঝে একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রথম ছ্যাঁকার কাহিনী, রুমমেটদের ঘণ্টাব্যাপি ফোন ফাইট দেখে নিজেকে দূর্ভিক্ষের পাণি প্রার্থীর মতো অসহায় লাগছে, কিন্তু আমি তো বদ্ধ পরিকর প্রেম করবো না- বলেছি তো করবোই না!-তো করবোই না!... ইতিমধ্যে বন্ধু সকল প্রেম করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে আমাকেই বিভিন্ন সময় প্রেমবিষয়ক উপদেশ দিচ্ছে,মনে মনে বলি,‘কোন লাভ নেই, ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়...’আর এভাবেই দিন কাটতে লাগলো...

যখন আমি চতুর্থ বর্ষে তখন এক চায়ের আড্ডায় এক বন্ধু বলেই বসলো ‘জীবনের এতগুলো বসন্ত একা একাই পার করলাম, দু’কা আর হতে পারলাম না, কি করলাম এই জীবনে ??’ কথাটা অনেকটা হাসিতে উড়িয়ে দিলে তখন আরেক প্রেমবিরোধী বন্ধু বলে উঠলো,‘ধুর,তোরা সব কি যে বলছিস? জানিস না,সিঙ্গেল লাইফ রক্স, একটা মেয়েকে ভালবাসা মানে বুঝিস?? নিজের পায়ে নিজেই বেড়ি বাঁধা, শুধু শুধু নিজের স্বাধীনতাকে হস্থক্ষেপ মানা যায়,যায় না ?...’ এরকম আরো রাশভারি কথায় সে প্রমাণ করলো যে ছেলেগুলা প্রেম করে তাদের ছাগল বললে ভুল হবে তারা একএকটা মস্তবড় রামছাগল ... আড্ডায় উপস্থিত প্রায় সববন্ধুই সিঙ্গেল তাই কেউ আর পাল্টা যুক্তি না দেখিয়ে বলল ,‘দোস্ত ,একদম মনের কথা বলেছিস...’ চায়ের কাপ শেষ না হতেই চোখে পড়লো এক সহপাঠী বন্ধু জুনিয়র একটা মেয়েকে নিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছে, আমার বন্ধুদের মনে কি হলো জানি না, কিন্তু আমার মনে হল,‘ইশ !আমার যদি কেউ এমন একজন থাকতো যার সাথে দিল খুলে কথা বলতে পারতাম, আমার দুঃখের সময়ে জড়িয়ে ধরে বলতো, কেঁদো না!আমি আছি না তোমার পাশে...’ নিজেকে সান্ত্বনা দেই এইভেবে,সবকিছুর একটা সময় থাকে ,হয়তো বা এখন সেটা না ,এর মানে এই নয় যে এখন প্রেম কখনই আসবে না আর প্রেমের প্রতি বিশ্বাস থাকলে বিধাতাও মাথা ঝুঁকে যায় তখন সময় কি! প্রেম আসবেই। তবে ,যা নিজের খুশিতে না হয় তা অন্যেরে খুশি করতে পারে না, হৃদয়ের ইচ্ছা মনের মাঝে লুকিয়ে রাখলেও একসময় তা প্রকাশ পাবে ,হতো তা জানান দিয়ে হয়তো নিরালায় নিশ্চুপে ভালোবাসা এবং আবেগের রঙ মখিয়ে।
এরপর,কয়েকমাস হল প্রবাসে পড়াশুনা করতে এলাম, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বাইরে উচ্চশিক্ষা করবো,কিন্তু কথায় আছে না -স্বপ্ন ঘুমের মধ্যেই সুন্দর, স্বপ্ন যখন বাস্তবে আসে তখন সেটা অসুন্দরের পর্যায়ে পড়ে। কথাগুলো বলছি একারনেই,এখানে আসার পর একদিনও মন খুলে কথা বলা হয়নি কারো সাথে, আর কিভাবেই হবে!-আমার জানা মতে,আশেপাশের ক্যাম্পাসে বাঙালি বলতে গেলে নেই... চাপা কষ্টটা অনেকটা বুকে রেখেই প্রতিদিন ক্লাস করি, আজও করে ক্যাম্পাস এর মাঠে বসে আছি, মনটা খানিকটা বিষণ্ণ,তাই কিছুই ভালো লাগছে না আর মনটা কিছুটা ভালো করার আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে গান করছি -বাংলা গান, আশে পাশের ছেলে-মেয়েরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে আর আমি অনেকটা কাউকে তোয়াক্কা না করেই বেসুরে গেয়ে চলেছি...

হটাৎ করে পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো তোমার গলা তো অনেক সুন্দর ,বাংলা শব্দ শুনে আমি বেশ অনেকটাই চমকে উঠলাম, পিছনে ফিরে দেখি শ্যামলা বর্ণের একটা মেয়ে হাসি হাসি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে,উল্লাসিত কণ্ঠে আমি বললাম,‘বাঙালি!!’ মেয়ে মাথা নেড়ে বলল,‘হ্যাঁ,তোমাকে ক্যাম্পাসে দেখেছি দুদিন,কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু হয়ে ওঠেনি, আমি এইখানেই পড়ি...’আমি পুরাই অবাক হয়ে গেলাম,একজন বাঙালীর সাথে কথা বলার জন্য আমার মন ছটফট করে যাচ্ছে গত তিন মাস ধরে আর এই মেয়ে কিনা এই ভার্সিটিতেই পড়ে আর আমি তা জানতামই না,নিজেকেই গালি দিতে মনে চাইছে...দুজন অপরিচিত বাঙালি একে অপরের সাথে বহুদিনের পরিচিত বন্ধুর মতো মন খুলে অনেকক্ষণ কথা বললাম আর মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল,আলাপে চলে আসল নিজের গল্প,পরিবারের গল্প,ওইখানকার গল্প,কিছু আজগুবি গল্প ... আর হটাৎই সময়টা দেখে মেয়েটি বলে উঠলো,‘আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে এখন উঠতে হবে’। আমি বাই দিয়ে বললাম,‘আমারও ক্লাস আছে’ মেয়েটি বলল পরে কথা হবে, হাতে শিট নিয়ে মেয়েটি একটু এগুতে শুরু করলো, আমি ভাবলাম আবার কখন দেখা হতে পারে জিজ্ঞেস করি, ওকে ডাকতে যাবো, তখন মনে পড়ল ওর নামটাই তো জানা হয়নি,ও কিছুটা দূরে চলে গেছে হাঁটতে হাঁটতে, আমি চেচিয়ে বললাম,‘তোমার নামটা তো বললে না???’পিছনে ফিরেই বলল,‘আমি!!! আমি অদিতি...’আমি আবার চিৎকার করে বললাম,‘আমি শুভ্র !আমরা কি কাল দেখা করতে পারি???’অদিতি ইশারায় এইখানে বলে মুচকি হাসি দিয়ে হেঁটে চলে গেলো...
পরদিন বিকেলে আমাদের আবার দেখা হলো,মন খুলে আলাপ চলল, একে অপরকে আরেকটু ভালোভাবে চেনা হল,দিনে দিনে কিভাবে জানি,আড্ডার পরিসরের সাথে পাল্লা দিয়ে সাক্ষাতের পরিমাণও বাড়তে লাগলো... দিনগুলো ভালই কাটতে লাগলো দুজনের ভালো-মন্দ লাগাগুলো শেয়ার করে... ওইখানে আমাদের দুজনের প্রিয় একটা নদী আছে, নদীর পাড়ে বসেই আমরা জীবনের টুকিটাকি বিষয়গুলো ভাগাভাগি করতাম...

মাঝে একবার আমি অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলাম -ভয়ানক জ্বর,কোথাও যাবার যো নেই, ডাক্তার দেখাবো তার পয়সাও টাও ছিল না... অগত্যা বিছানায় পড়ে ভোগ ছিলাম,তিনদিন হচ্ছে ক্লাস করতে পারছি না।একদিন দরজায় নক শোনে কোন মতে উঠে দরজা খুলে দেখি-অদিতি দাঁড়িয়ে,আমি বললাম,‘ঠিকানা পেলে কোথায়?’ ‘ভার্সিটি থেকে নিয়েছে !!!!এতই দূরের যে একবার একটা ফোন করা যেত না’,অভিমানী সুরে বলল অদিতি। প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বললাম,‘ভিতরে এসো। তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি,তাছাড়া এখন ঠিক আছি...’আমার মাথায় কাছে হাত নিয়ে রাগান্বিত সুরে বলল,‘সেরেছে অনেক জ্বর!কত দুর্বল হয়ে পড়েছে।’আমি কিছু বলব তার আগেই বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,‘আমি এসে গেছি সো নো টেনশন, দুই দিনের মাঝেই জ্বর সারিয়ে দেবে...’পরের দুইটা দিন অদিতি অনেক পরিশ্রম করলো আমাকে সত্যি সারিয়েও তুলল...

সমস্যা বাঁধল আরো কিছুদিন পর... আমার সেমিস্টার ক্লাস চলছিলো আর ওর ভ্যাকেশন শুরু হল, ওর ক্লাসমেটরা ঠিক করলো ক্যাম্পিং এ যাবে, আমি ও উৎসাহ দিলাম যাবার জন্য, ও চলে গেল বন্ধুদের সাথে, এদিকে ক্যাম্পাসে একা হয়ে গেলাম আমি, দিন তো আর কাটতেই চায় না অদিতিকে ছাড়া, দুজনের গল্প, নদীর পাশ দিয়ে হাতে হাত রেখে হেঁটে বেড়ানো সব কিছুই মিস করতে লাগলাম... অন্যরকম একটা শূন্যতা মনে ফিল করতে লাগলাম,দিন যত যায় শূন্যতা তত বাড়তেই থাকলো,আমি বুঝতে পারলাম অদিতির জন্যে মনে একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে... মাথার ভিতর তখন শত চিন্তা ভর করলো,অদিতি আমাকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করে কিনা,আমিই কি ভুল কিছু ভাবছি কিনা,অদিতিকে কিভাবে বলবো,যদি সে মেনে না নেয় তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের কি হবে? এরকম হাজারটা প্রশ্ন... সমাধান একটাই ছিল অদিতিকে সবকিছু খুলে বলা...সে ম্যাচিউর,সে খারাপ ভাবে নিবে না,যে কাউকেই যে কারো ভালো লাগতেই পারে,তাই না !

প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা বার বার মনে শঙ্কা প্রাচীর সৃষ্টি করছিল, ভাষাগুলোকে নিরেট করে দিচ্ছিলো... অদিতি ক্যাম্পিং থেকে ফিরে যেদিন ক্লাস এ আসলো ঐদিন শত চেষ্টা করেও মুখ খুলতে পারিনি, বরঞ্চ অস্বস্তি অনুভব করছিলাম কথা বলতে গিয়ে, আনমনা হয়ে পড়ছিলাম একটু পরপর,অদিতি একবার জিজ্ঞেসও করলো,আমার কিছু হয়েছে কিনা-আমি এড়িয়ে গেলাম... দিনগুলো আরো অস্বস্তিকর হতে লাগলো,সিদ্ধান্ত নিলাম এই বৈশাখে বলে ফেলব সব মনের কথা যদিও এখানে কিছু বাঙ্গালি বৈশাখ পালনের চেষ্টা করে ,...আজ ২৭ এপ্রিল-বাঙ্গালি ক্যালেন্ডার অনুসারে বৈশাখের প্রথমদিন,অদিতির দেখা করার কথা ছিল সকালে, এখনও আসেনি, আকাশটাও মেঘ করছে এই বুঝি বৃষ্টি নামবে,এই মৌসুমটাতে এমনেও এখানে একটু বেশিই বৃষ্টি হয়।আমি ঘাসের উপর বসে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখছি... হটাৎ অদিতি এসে পাশে বসলো, ওর পড়নে নীল শাড়ি, লাল টিপ... আমি বললাম,‘বৈশাখে কেউ নীল পড়ে নাকি, সবাই তো সাদা লাল পড়ে...’ ও মৃদু হাসিতে বলল,‘তুমি একবার বলেছিলে নীলে আমাকে সুন্দর দেখায় তাই পড়েছি...আর তুমি না বলেছিলে,আমাকে কি দিবে আজকে!! দাও ?’ আমি বললাম,‘চল, নদীর পাড়টায় যাই।’দুজনে হাঁটছি ,ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে গেল অনেকটা বার্তা না দিয়েই,অদিতি একটু দ্রুত হাঁটতে লাগলে আমি ওকে বললাম,‘চল! বৃষ্টিতে ভিজি...’ও মৃদু হাসলো,তারপর দুজনেই বৃষ্টিতে হাঁটতে লাগলাম,ও আবার বলল,‘কই দিবে না,কি দিবে! দাও??’ আমি পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে ওর হাতে দিলাম, কিছু বলতে যাবো তার আগেই চিঠি পানিতে ভিজে ছিঁড়ে একাকার,আমি কি করবো না বুঝে উল্টো দিকে তাকিয়ে রইলাম, এক সময় অনুভব করলাম আমার হাতটা ধরেছে অদিতি,আমার বুকের মাঝে এক লক্ষ প্রজাপতি উড়ে গেলো।

ওর চোখে চোখ পড়তে দেখি বৃষ্টিতে গাল বেয়ে কাজল জলের স্রোত বইছে,চোখের নোনা জল বৃষ্টির পানিতে বাঁধ সাচ্ছে,আমি অপলক নয়নে ওর দিকে তাকিয়েই বলে দিলাম জীবনের সবচেয়ে দামি কিন্তু কাউকে না গোপনীয় কথা,“আজ পর্যন্ত অনেক মেয়েকেই ভাল লেগেছে কিন্তু কাউকেই মন দিতে পারিনি,কেননা তোমার মতো কোন মেয়েই পায়নি।তোমার সারাক্ষণ হাসিমাখা মুখ,ঠুঁটের ওই শুভ্র কাঁপন ,আমায় আনমনা করে দেয়,চোরা হাসিতে পাগল আমি। তোমার ওই আড়চোখের চাহনি আমায় বধ্য উন্মাদ করে দেয়,নিজের মাঝে নিজেকে অচেনা। আমার আত্মার প্রতিটি স্পন্দনের সাথে তুমি মিশে গেছো,তোমাকে ছাড়া এ জীবন অর্থহীন খা খা মরুভূমি।এই চেনা অলি-গলি,ধুলোবালি, বাতাসের মাঝে তোমার শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে আর তা আমায় মাতিয়ে দেয়। বুঝিনি এতোটুকু তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি স্বপ্নের ঘোরে......”


…… to be continued

বৃষ্টি ভেজা মেঘ

বৃষ্টি ভেজা মেঘ
লিখেছেনঃ odhora chowdhury meghla (আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন)

সকাল সাতটায় টিউশন,ধ্যাত…এটা কোনটাইমিং হলো?মেঘের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ|কারন সে কখনোই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারেনা|ছয়টা পঞ্চাশ বাজে|ফোনে ৪৩টা মিসকল,ঘুমের ঘোরে কেবল চোখ খুলে তাকালসে|নিজের উপর নিজেরি রাগ লাগছে ওর|কেন যে কাল রাতে ফোনটা সাইল্যান্ট মুড করেছিল সে!!

যাব নাকি যাবনার দোটানায় জলদি করে ব্রাশ করে,কলেজ ড্রেস পড়ে তৈরী হয়ে নিল সে|সাতটা দশ বেজে গেছে|ওদিকে আবার টুপটাপ বৃষ্টি|গাধাটার উপর আবার রেগে আছে মেয়েটা|তার গাধা?মানে হচ্ছে শ্রাবন|গত পরশুদিন রাতে শ্রাবনের
ফোন ওয়েটিং ছিল|তাই সর্বশেষ বত্রিশ ঘন্টায় একবারো গাধাটার সাথে কথা বলেনি সে| মনে মনে ভাবে ভাগ্যিস রাতে ফোনটা সাইল্যান্ট মুডে রেখেছিলাম,নাহলে কি রাগটা ধরে রাখতে পারতাম? নাকি ফোনটা রিসিভ না করে থাকতে পারতাম?

ছাতাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল সে|অলরেডি দশ মিনিট দেরি হয়ে গেছে| আজ রিক্সা ডেকে নিল … স্যারের বাসায় যেতে আরো দশ মিনিট!সর্বমোট বিশ মিনিট দেরি!| উহু আজোস্যার শুরু করে দিয়েছেন|তবে মন্দের ভাল এই যে সে পৌছুবার পর মুসলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল|তার মানে আজ আর কলেজে যাওয়া হলনা|শ্রাবনের ঠিক সামনের সিটটা ফাকা|অগত্যা সেখানেবসে পড়ল,আর স্যারের কথায় মন দেবার চেষ্টা করল…

ফোনের মেসেজটোনটা বাজছে|এই টিউশনের মাঝে কে মেসেজ দেয়! বিরক্তিমুখে ওপেন করে দেখল একটা ফাকা মেসেজ|গাধাটা আবারো শুরু করে দিয়েছে… রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা|শ্রাবনের সাথে কোন ভালবাসার সম্পর্ক নেই মেঘের|শুধুমাত্র ভাল বন্ধু|সারাদিন একসাথে টিউশন,কলেজ,ল্যাব ক্লাশ,একসাথে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত আর রাতভর মেসেজ চালাচালি-এই পর্যন্তই তাদের সম্পর্ক|মাঝে মাঝে ফোনে কথাও হত___ তবুও দুজন দুজনকে বন্ধুর থেকে বেশি ভাবতে পারেনি|যাই হোক মেসেজটার রিপ্লাইনা দিয়েই ফোনটা রেখেদিল|এরপর দুইটা মিসকল আর তারপর আবারো মেসেজ,“চল বৃষ্টিতে ভিজি|” এবার রিপ্লাইদিল মেঘ|“স্যারের কথায় মনদে, আজকের পড়াটা না বুঝলে পরে ঢং করতে পারবি না|” আবার শ্রাবন মেসেজ দিল,“টিউশন শেষে ভিজবি?” রিপ্লাই দিল,“না কলেজ আছে|”
টিউশন শেষ|সবাই কলেজ যাচ্ছে|শ্রাবন মেঘের হাত ধরেআ টকাল|আর বলল,“আজ তোর কলেজ যাওয়া হবেনা|” আর কলেজে যাওয়া হলনা|তারা দুজনেই রাস্তায় হাটছে|সারাদিন আজ একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে|হঠাত শ্রাবন বলে উঠল,“এই দাড়া বর্ষা আসছে|আমরা তিনজনই ভিজব|বর্ষা চলে এল,মুচকি হেসে বলল,“আমিও আজ কলেজে যাবনা|” শ্রাবন সাইকেলে আর তার দুপাশে দুজন হাটছে|মেঘ শ্রাবন আর বর্ষা তিনজনই কাকভেজা হয়ে আছে |তবুও খুব ভাল লাগছে সবারই…বৃষ্টির টিপ টাপ শব্দে তিনজনের নিশব্দতার ছন্দপতন ঘটিয়ে শ্রাবন বলল,”আমি বর্ষাকে ভালবেসে ফেলেছি|আর বর্ষাও আমাকে……|একটু দেখে বলতো আমাদের কেমন মানাবে?” মেঘ মুচকি হেসে বলল,‘‘ভালই মানাবে|”

বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েই চলেছে|সাথে মেঘের মনেরও কষ্টের তীব্রতা সমানুপাতিকহারে বাড়ছে|বর্ষা বলল,“বৃষ্টিটা বোধহয়বেড়েছে|চল চল ঐ ঝাপির নিচে দাড়াই|”এই বলে দৌড়ে ঝাপির নিচে চলে গেল সে|মেঘ আর শ্রাবন এখনো বৃষ্টিতে ভিজছে|তাই শ্রাবন ওরহাতটা টেনে ঝাপির নিচে নিয়ে যাচ্ছে|আর ব্যাটারী চালিত পুতুলের মত মেঘ চলছে শ্রাবনের সাথে|

হ্যাচকা টান দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল মেঘ|কারন শ্রাবন তো আজ বাইরেরবৃষ্টির হাত থেকে তাকে বাচাতে পারবে,তবে অন্তরের বৃষ্টি থেকে কে বাঁচাবে ওকে!! তাই আজ মেঘ একাই বৃষ্টি বিলাস করবে|আজ যে তাকে ভিজতেই হবে|চোখের জল লুকাতেই হবে..........

[গল্পের প্রত্যেকটি চরিত্র কাল্পনিক| এটা আমার লেখা প্রথম গল্প| কোনভুল ত্রুটি পাঠক নিজগুনেমার্জনা করবেন]

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

`` ভাগ্য `` [ গল্প ]

`` ভাগ্য `` [ গল্প ]
লেখকঃ তারেক চৌধুরী জয়
১.
অভি,ঢাকা ভার্সিটিতে সি এস ই পড়ুয়া একজন ছাত্র। অত্যন্ত নম্র,ভদ্র আর শান্ত একটি ছেলে। অভির অসংখ্য গুণের মধ্যে একটি অন্যতম গুণ হল সারাদিন তার মুখে হাসি লেগে থাকে আর আশে-পাশের সবাইকে সারাদিন হাসিতে মাতিয়ে রাখে। মন খারাপ করা একজন মানুষ যদি অভির পাশে এসে বসে আর তা যদি অভি বুঝে যায় তাহলে সে ঐ মানুষের মুখে হাসি তো আনবেই সাথে খারাপ মন ও সে ভালো করে দিবে মাঝে মাঝে সবার মনে হয় যে,সৃষ্টিকর্তা অভিকে এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যে ক্ষমতার দ্বারা সে তার চারপাশের মানুষকে হাসি-খুশি রাখতে পারে ।
এইরকম একজন ছেলের একজন মনের মানুষ নেই ! তা কি কখনো হয় ? হয়তো হয় না,তাই সৃষ্টিকর্তা এই রকম সুন্দর একটা ছেলের জন্য মিষ্টি একটা মেয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন !
তৃষা ,অত্যন্ত চঞ্চল আর মিষ্টি একটা মেয়ে। অভির বেস্ট ফ্রেন্ড আর মনের মানুষ ! এক ভার্সিটিতে পড়ে দুইজন কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা। ডিপার্টমেন্ট হোক আলাদা,কিন্তু এই দুইজনকে ক্লাস বাদে অন্য কোনসময় ভার্সিটিতে আলাদা পাওয়া যাবে না। দুইটি দেহ কিন্তু একটি আত্মা।
২.
ভার্সিটিতে ওদের ডাকা হত রাজপুত্র আর রাজকন্যা নামে। একজন,আরেকজনকে এত ভালবাসতো যে তা কখনো বলে শেষ করা যাবে না। ওদের ভালবাসা দেখে মনে হয় গ্রিকপুরাণের ভালবাসার দেবী ও হিংসা করতেন। পৃথিবী হয়তো সুন্দর এবং পবিত্র এক ভালবাসার মিলন দেখার অপেক্ষায় ছিল !
সুন্দরভাবে কেটে যাচ্ছে রাজপুত্র আর রাজকন্যার ভালবাসার দিনগুলো। ক্লাস,পড়ালেখা,আড্ডা আর মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া সব মিলিয়ে অসাধারণ এক এক দিন। দুইজনের পরিবার ই জানতো তাদের এই ভালবাসার কথা। কোন পরিবারের কোন প্রকার আপত্তি ছিল না এই বিষয়ে। আপত্তি থাকবেই বা কেন? এযে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা !
৩.
পড়ালেখা নিয়ে বেশ চাপে আছে অভি।এই চাপের কারণ তৃষাকে একদম সময় দিতে পারছে না। তার উপর আবার গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে অভির। অভির প্রায় ই মাথা ব্যথা হয় কিন্তু অভি এসবকে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু ,গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। অভি ঠিক করলো,এই সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়ে ই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবে।
অভি যে পড়ালেখা নিয়ে চাপে আছে তা তৃষা নিজেও বুঝতে পারে। আর এই কারণে অভি সময় না দিলেও তৃষা অভিকে কখনো কিছু বলে না। বুদ্ধিমতী মেয়েটার এই ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে অভির। বুঝতে পারার গুণটা সব মেয়ের মধ্যে থাকে না আর যাদের মধ্যে থাকে,তারা হল অনেকের মধ্যে অন্যতম।
কিছুদিনের মধ্যেই অভির পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সবকিছুর মধ্যেও মাথা ব্যথাটা অভির পিছু ছাড়ে না। প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে খুব কষ্ট করে পরীক্ষা দেয় অভি। কিন্তু ,এই ব্যাপারে কখনোই কাউকে কিছু বলে নি,এমনকি তৃষাকেও না। যেদিন পরীক্ষা শেষ হয় সেদিন প্রথমে তৃষাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় অভি। তারপর অনেক সময় ঘুরে তৃষাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় অভি। অনেক ভোগান্তির পর ডাক্তারের সিরিয়াল পায় অভি। রাত দশটার দিকে ডাক পড়ে অভির।
ডাক্তারের কাছে সব বলার পর ডাক্তার কিছু ঔষুধ,বেশ কিছু টেস্ট দেন অভিকে আর বলে দেন টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে সপ্তাহখানেক পর যোগাযোগ করতে। ডাক্তারের কাছ থেকে বেরিয়ে ঔষুধ কিনে তারপর বাসার দিকে পা বাড়ায় অভি ।
এক সপ্তাহের মধ্যে সবকয়টি টেস্ট করিয়ে ফেলে অভি। এর মধ্যেমাথা ব্যথাটা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। ঠিক এক সপ্তাহ পর সবগুলো রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে হাজির হয় সে। ডাক্তার ওর কাছ থেকে রিপোর্টগুলো নিয়ে অত্যন্ত মনযোগের সাথে দেখতে থাকেন। সবগুলো রিপোর্ট দেখার পর ডাক্তারের মুখ কালো হয়ে যায় কিন্তু সেদিকে কোন খেয়াল নেই অভির। সে হাসিমুখে ডাক্তারের সামনের চেয়ারে বসে আছে।
৫.
ডাক্তার প্রশ্ন করলেন ...
-আপনার সাথে কি আর কেউ আসেনি ?
-না ডাক্তার,আমি একা ই এসেছি
-কিছু কথা বলার ছিল কিন্তু অন্য কেউ হলে ভালো হতো !
অভির ভেতরটা হঠাত্ করে মোচড় দিয়ে উঠলো
-কি ডাক্তার?খারাপ কিছু?আপনি আমাকেই বলতে পারেন,আমি সবকিছু শোনার জন্য প্রস্তুত আছি
-মিঃ অভি,আসলে কথাগুলো আপনাকে সরাসরি বলা উচিত না কিন্তু তারপরও অন্য কেউ না থাকার কারণে আপনাকে ই কথাগুলো বলতে হচ্ছে !
-ডাক্তার,যা বলবেন তা প্লিজ তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন
-মিঃ অভি,আপনার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং বর্তমানে তা খুব ই নাজুক অবস্থায় পৌঁছে গেছে !
ডাক্তারের কথা শোনার পর অভির মাথা ঘুরতে লাগলো , চারপাশ কেমন যেন অন্ধকার লাগছে অভির কাছে
অভি প্রশ্ন করলো ,
-এর কি কোন প্রতিকার নেই?
-একমাত্র অপারেশন এর প্রতিকার কিন্তু আপনার টিউমারের বর্তমানে যা অবস্থা তাতে অপারেশনে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫% আর এই অপারেশনে প্রচুর টাকা প্রয়োজন !
অভি আর কিছু বললো না !
ডাক্তারের সাথে হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে আসলো চেম্বার থেকে আর রাস্তা ধরে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো কিছুক্ষণ হাঁটার পর অভি লেকের পাশে এসে দাঁড়াল !
৬.
অভি অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লেকের পানির দিকে তারপর হাতে থাকা রিপোর্টগুলোর দিকে একবার তাকালো।লেকের পাশে ঘাসের উপর বসে পড়লো অভি আর ভাবতে লাগলো ...
" যা হবার হয়ে গেছে ! আসলে আমার ভাগ্যে এরকম লেখা ছিল আর ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই ! এখন আমাকে শক্ত হতে হবে আর যেখানে বাঁচার সম্ভাবনা ৫% সেখানে অপারেশন করেও কোন লাভ নেই ! সবচেয়ে বড় কথা আমার মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির উপর অযথা চাপ সৃষ্টি করে লাভ নেই !
এখন আমাকে খেয়াল রাখতে হবে আমার পরিবার যেন কিছু জানতে না পারে আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৃষাকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে ! হোক সেটা অভিনয়ের মাধ্যমে ! আমি জানি আমি অল্প কয়েকদিনের অতিথি সুতরাং এই অল্প কয়েকদিনের জন্য ঐ মেয়েটাকে জীবনের সাথে জড়িয়ে কষ্ট দেয়ার কোন মানে হয় না ! ভবিষ্যতে ও আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবে ! "
অভি উঠে দাঁড়াল,ওর চোখ জলে ভরে উঠেছে ! হাতে থাকা রিপোর্টগুলো ছিঁড়ে বাতাসে ছড়িয়ে দিল !
অভি ঘুরে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো ! এখন ওর অনেক কাজ কিন্তু সময় অনেক কম , অনেক দ্রুততার সাথে কাজ করতে হবে !
হেঁটে চলছে অভি কিন্তু এই হেঁটে চলা বেশি দিনের জন্য নয় .....
( সমাপ্ত )

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

মেঘ বৃষ্টি

মেঘ বৃষ্টি লিখেছেনঃ-মুহাম্মদ ইফাজ হাসবুল্লাহ

মোতাহের সাহেব বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছেন, মুখে রাজ্যের মেঘ জমে আছে, যেকোন মুহুর্তেই বজ্রপাতসহ বর্ষন শুরু হতে পারে। ঘুম থেকে উঠেইতার চা চাই, একটু দেরি হলেই চিতকার চেচামেচি শুরু করে দেন। সকালে তার মেজাজ এম্নিতেই একটু চড়া থাকে, তাই মনিরা আগেভাগেই চা রেডি করে রাখে। কিন্তু আজ অনেক্ষন হয়ে গেল চা এর নাম গন্ধ ও নেই। মোতাহের সাহেব রাগেফুসছেন, চিত্কার দেয়ার জন্য মুখ খুলেছেন সবে ঠিক তখনি মেঘ এর প্রবেশ।
.
মেঘ হল মোতাহের সাহেবের একমাত্র ছেলে। খুবই শান্ত ভদ্র ছেলে। এবার ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হল, বর্তমানে বেকার।
.
বাবা, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
.
কি বলবি দ্রুত বল, তারপর তোর মাকে বলচা দিতে।
.
আমি বিয়ে করব।
.
কী করবি?
.
I want to marry, my dear father.
.
মোতাহের সাহেব ঠিক প্রস্তুত ছিলেন না , থতমত খেয়ে গেলেন,মেয়ে কি করে?
.
মেয়ে না বাবা ছেলে।
.
মানে? বাপ আমার তুই কি পাগল হয়ে গেলি ?
.
No dad, I am absolutely alright
.
মোতাহের সাহেব বুক চেপে ধরে ককাতে লাগলেন,একি বলছিস তুই, আহ! আহ!
.
বাবা, তুমি আবার ডান দিকে হাত দিয়েছ । তোমাকে না বলেছি হার্ট বামদিকে থাকে। ঠিক করে অভিনয় করতেও পারনা!
.
.
মোতাহের সাহেব প্রতিবারের মত এবারোধরা পড়ে গেলেন, তার ছেলের সাথে কিছুতেই পেরে উঠেন না,মেঘ , তুই আর যাই করিস একাজ করিস না বাবা। সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবনা।
ঠিক সেই মুহুর্তেই মুনিরা চা নিয়ে ঢুকলেন । মাকে দেখেই মেঘ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মোতাহের সাহেব সেদিকেহতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন।
.
চা নাও, কি ব্যাপার আজ একেবারে চুপচাপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই।
তোমার ছেলে কি বলেছে শুনেছ, সে নাকি বিয়ে করবে, তাও একটা ছেলেকে।
সেকি, এগুলো কি বলছে! পাগল হয়ে গেল নাকি? বিলাপ শুরু করে দিল মুনিরা।
আরে রাখ তো এসব। ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে, এমন পাগলামি করবেই।
কিন্তু তাই বলে একটা ছেলে কে কেন?
নাহ, ওকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে।
এই শুনছ , আমাদের পাশের বাসায় বৃষ্টি নামের একটা মিষ্টি মেয়ে আছে, মেঘ এর জন্যে কথা বলে দেখব নাকি?
তুমি যা করার কর, শুধু একটা মেয়ে হলেই চলবে। একে বিয়ে না দিয়ে আর শান্তি পাচ্ছিনা।
.
***
.
তিন মাস পর, মেঘ বৃষ্টির বিয়ে আজ। আকাশে মেঘের ঘনঘটা, মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে । দুই জনই চরম খুশি। দীর্ঘ ৫ বছরের প্রণয়ের মধুর সমাপ্তি ঘটল। মেঘ তার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ । মাকে সে আগেই বৃষ্টির কথা বলেছিল। কিন্তু মাঝে বেরসিক বাবা বেকে বসলেন। তাই এই ছোট অভিনয়্টুকু করতে হল।
.
.
.
রাত ৩ টা। হঠাত মোতাহের সাহেবের ঘুমভেঙে গেল। তুমুল বর্ষন হচ্ছে। এমনই এক দিনে মুনিরা তার ঘরে এসেছিল। সেদিন রাতেও বৃষ্টি হয়েছিল, তারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল। ভাবিতে ভাবতেই তিনি ছাদে চলে গেলেন।
হঠাত খেয়াল করলেন এক জোড়া কপোত কপোতি বৃষ্টিতে ভিজছে। আকাশের মেঘ গর্জে উঠ্ল, সেই আলোয় দেখতে পেলেন মেঘ ও বৃষ্টিকে।
আজ নিজেকে তার সার্থক মনে হচ্ছে। দুর হতে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে আশির্বাদ করে গেলেন।

(গল্প ভালো লাগলে কমেন্টস করে লেখকদের আরো গল্প দিতে উৎসাহিত করুন)
-কী? কেমন আছ তুমি?
-ভাল-ই।
-মন খারাপ নাকি?
-নাহ।
-সকালে খাও নাই?
-হুম ম ম ম।
-হুম ম ম ম কি?
-খায়ছি।
-তা হুম ম ম ম করার কী আছে?
-(দীর্ঘশ্বাস, পরে নিঃশ্চুপ)
-কী হল? কথা বলো না কেন?
-বলতেছি তো।
-কই কথা বলো? আমার সাথে নাকি অন্য কারো সাথে?
-তোমার।
-আমি কী তাহলে কালা নাকি তুমি বোবা দের ভাষায় কথা বল?
-না। কথায় বলতেছি।
-আচ্ছা বাদ দিলাম। এখন বল কী সিদ্ধান্ত নিলা?
-কী বলব?
-কী বলবা মানে? সিদ্ধান্ত কী?
- তুমি যা বলতেছ তা হয় না।
-কেন হয় না?আমি কী দেখতে খারাপ?
-না। তা না। আসলে তুমি যা, আমি তার সমান নয়।
-তোমার সমান না হলে ও চলবে। শুধু সমান ভাবে ভালোবেসো।
-আমি মনে হয় পারব না।
-তোমাকে পারতে হবে না। তুমি শুধু সারা জীবন পাশে থেকো। যখন আমি ক্লান্ত হব তখন তোমার বুকে আমার মাথা রাখার ঠাঁই দিয়ো।
-আমি কী পারব?
-অবশ্যই পারবা। এবার বল।
-কী বলব?
-গাধা! এইটা ও বলে দিতে হবে?
-হুম ম ম ভালোবাসি।
-কী, ভালোবাসি? বল আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ টু।

এভাবেই শুরু হয় সমাজের চোখে অসম এক ভালোবাসার গল্প।যেখানে কিছু পাওয়ার চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধ বেশি।
 

লিখাঃ Duronto Shahin