আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

মেঘ বৃষ্টি

মেঘ বৃষ্টি লিখেছেনঃ-মুহাম্মদ ইফাজ হাসবুল্লাহ

মোতাহের সাহেব বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছেন, মুখে রাজ্যের মেঘ জমে আছে, যেকোন মুহুর্তেই বজ্রপাতসহ বর্ষন শুরু হতে পারে। ঘুম থেকে উঠেইতার চা চাই, একটু দেরি হলেই চিতকার চেচামেচি শুরু করে দেন। সকালে তার মেজাজ এম্নিতেই একটু চড়া থাকে, তাই মনিরা আগেভাগেই চা রেডি করে রাখে। কিন্তু আজ অনেক্ষন হয়ে গেল চা এর নাম গন্ধ ও নেই। মোতাহের সাহেব রাগেফুসছেন, চিত্কার দেয়ার জন্য মুখ খুলেছেন সবে ঠিক তখনি মেঘ এর প্রবেশ।
.
মেঘ হল মোতাহের সাহেবের একমাত্র ছেলে। খুবই শান্ত ভদ্র ছেলে। এবার ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হল, বর্তমানে বেকার।
.
বাবা, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
.
কি বলবি দ্রুত বল, তারপর তোর মাকে বলচা দিতে।
.
আমি বিয়ে করব।
.
কী করবি?
.
I want to marry, my dear father.
.
মোতাহের সাহেব ঠিক প্রস্তুত ছিলেন না , থতমত খেয়ে গেলেন,মেয়ে কি করে?
.
মেয়ে না বাবা ছেলে।
.
মানে? বাপ আমার তুই কি পাগল হয়ে গেলি ?
.
No dad, I am absolutely alright
.
মোতাহের সাহেব বুক চেপে ধরে ককাতে লাগলেন,একি বলছিস তুই, আহ! আহ!
.
বাবা, তুমি আবার ডান দিকে হাত দিয়েছ । তোমাকে না বলেছি হার্ট বামদিকে থাকে। ঠিক করে অভিনয় করতেও পারনা!
.
.
মোতাহের সাহেব প্রতিবারের মত এবারোধরা পড়ে গেলেন, তার ছেলের সাথে কিছুতেই পেরে উঠেন না,মেঘ , তুই আর যাই করিস একাজ করিস না বাবা। সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবনা।
ঠিক সেই মুহুর্তেই মুনিরা চা নিয়ে ঢুকলেন । মাকে দেখেই মেঘ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মোতাহের সাহেব সেদিকেহতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন।
.
চা নাও, কি ব্যাপার আজ একেবারে চুপচাপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই।
তোমার ছেলে কি বলেছে শুনেছ, সে নাকি বিয়ে করবে, তাও একটা ছেলেকে।
সেকি, এগুলো কি বলছে! পাগল হয়ে গেল নাকি? বিলাপ শুরু করে দিল মুনিরা।
আরে রাখ তো এসব। ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে, এমন পাগলামি করবেই।
কিন্তু তাই বলে একটা ছেলে কে কেন?
নাহ, ওকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে।
এই শুনছ , আমাদের পাশের বাসায় বৃষ্টি নামের একটা মিষ্টি মেয়ে আছে, মেঘ এর জন্যে কথা বলে দেখব নাকি?
তুমি যা করার কর, শুধু একটা মেয়ে হলেই চলবে। একে বিয়ে না দিয়ে আর শান্তি পাচ্ছিনা।
.
***
.
তিন মাস পর, মেঘ বৃষ্টির বিয়ে আজ। আকাশে মেঘের ঘনঘটা, মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে । দুই জনই চরম খুশি। দীর্ঘ ৫ বছরের প্রণয়ের মধুর সমাপ্তি ঘটল। মেঘ তার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ । মাকে সে আগেই বৃষ্টির কথা বলেছিল। কিন্তু মাঝে বেরসিক বাবা বেকে বসলেন। তাই এই ছোট অভিনয়্টুকু করতে হল।
.
.
.
রাত ৩ টা। হঠাত মোতাহের সাহেবের ঘুমভেঙে গেল। তুমুল বর্ষন হচ্ছে। এমনই এক দিনে মুনিরা তার ঘরে এসেছিল। সেদিন রাতেও বৃষ্টি হয়েছিল, তারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল। ভাবিতে ভাবতেই তিনি ছাদে চলে গেলেন।
হঠাত খেয়াল করলেন এক জোড়া কপোত কপোতি বৃষ্টিতে ভিজছে। আকাশের মেঘ গর্জে উঠ্ল, সেই আলোয় দেখতে পেলেন মেঘ ও বৃষ্টিকে।
আজ নিজেকে তার সার্থক মনে হচ্ছে। দুর হতে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে আশির্বাদ করে গেলেন।

(গল্প ভালো লাগলে কমেন্টস করে লেখকদের আরো গল্প দিতে উৎসাহিত করুন)
-কী? কেমন আছ তুমি?
-ভাল-ই।
-মন খারাপ নাকি?
-নাহ।
-সকালে খাও নাই?
-হুম ম ম ম।
-হুম ম ম ম কি?
-খায়ছি।
-তা হুম ম ম ম করার কী আছে?
-(দীর্ঘশ্বাস, পরে নিঃশ্চুপ)
-কী হল? কথা বলো না কেন?
-বলতেছি তো।
-কই কথা বলো? আমার সাথে নাকি অন্য কারো সাথে?
-তোমার।
-আমি কী তাহলে কালা নাকি তুমি বোবা দের ভাষায় কথা বল?
-না। কথায় বলতেছি।
-আচ্ছা বাদ দিলাম। এখন বল কী সিদ্ধান্ত নিলা?
-কী বলব?
-কী বলবা মানে? সিদ্ধান্ত কী?
- তুমি যা বলতেছ তা হয় না।
-কেন হয় না?আমি কী দেখতে খারাপ?
-না। তা না। আসলে তুমি যা, আমি তার সমান নয়।
-তোমার সমান না হলে ও চলবে। শুধু সমান ভাবে ভালোবেসো।
-আমি মনে হয় পারব না।
-তোমাকে পারতে হবে না। তুমি শুধু সারা জীবন পাশে থেকো। যখন আমি ক্লান্ত হব তখন তোমার বুকে আমার মাথা রাখার ঠাঁই দিয়ো।
-আমি কী পারব?
-অবশ্যই পারবা। এবার বল।
-কী বলব?
-গাধা! এইটা ও বলে দিতে হবে?
-হুম ম ম ভালোবাসি।
-কী, ভালোবাসি? বল আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ টু।

এভাবেই শুরু হয় সমাজের চোখে অসম এক ভালোবাসার গল্প।যেখানে কিছু পাওয়ার চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধ বেশি।
 

লিখাঃ Duronto Shahin
মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড কে কল দিয়ে বলছে তার সাথে রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে । বয়ফ্রেন্ড হ্যা বইল্লা দিল যে সে আসিবে।
মেয়ে আগে রেস্টুরেন্ট এ পৌছে গেছে , বয়ফ্রেন্ড কে কল দিচ্ছে বলছে এখনো আসনি, আর কত দেরি??
বয়ফ্রেন্ড- আসতেছি আর মাত্র ৫ মিনিট।(কিন্ত এখনো সে রেডি হয় নাই)
১৫ মিনিট পর,
মেয়ে- তোমার ৫ মিনিট হয় নাই। আজ আর আসতে হবে না।

ছেলে- আরে রাস্তায়, হ্যালো, হ্যালো (লাইন কেটে দিছে। ছেলেটা এখন বের হইছে)
১ ঘন্টা পর, ছেলে রেস্টুরেন্ট এ পৌছালো
ছেলে- জান ও জান আমার মন্টুস পাখি একবার আমার দিকে তাকাও।

মেয়ে- তুমি আমারে পাইছ কি আমি তোমার জন্য সবসময় অপেক্ষা করব আর তুমি দেরিতে এসে একটা একটা করে এক্সকিউজ দেখাবা?

ছেলে- জান আমি তো অনেক আগেই বের হইছি কিন্তু রাস্তায় জ্যাম ছিল। বুঝনা এইডা তো ঢাকার রাস্তা তাই না। গ্রামের রাস্তা অইলে তো আমি সুপার ম্যান অইয়্যা তোমার কাছে আইস্যা পরতাম।

মেয়ে- আমি আগেই জানতাম তুমি আইস্যা এই টাইপের হুতুবুতু করবা। তোমার এই গুলা হুতুবুতু আর ভালো লাগে না। তোমার এই জ্যাম রে কোনো দোকানে নিয়া বেইচ্চা দাও। নাম দিবা গাধা জ্যাম।

ছেলে- আমি হুতুবুতু করি তুমি কি কর? হুম তুমি কি কর? দুইদিন আগে আইস্যা পক পক করবা আমি যখন তোমার জন্য দিনের সূর্যের আলোয় খারাইয়্যা খারাইয়্যা সুন্দর চেহেরা ডা কালা বানাইয়্যা ফালাইছি ফর্সা হয়ার ক্রিম কি তুমি কিন্না দিবা??
তখন তো একটা কাজই পারো ৩২ টা দাত বার কইরা "ও সোনা তোমাকে দেখতে তো আজ হেন্ডসাম লাগছে।" হাহ।

মেয়ে- কি আমি পক পক করি। ৩২ টা দাত বের করে হাসি।তোমারে কালো বানিয়ে ফেলছি। ঠিক আছে আমার সাথে আর কথা বলতে হবে না দেখাও করতে হবে না।তুমি থাকো তোমার সুন্দর চেহেরা নিয়া।।

ছেলে- দেখা না করলে কি, (চুপ করে গেল কেননা মেয়েটাকে একদিনের জন্য না দেখে থাকতে পারে না)

মেয়ে- কি বলো, বলো না কেন??

দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল,
মেয়ে- Sorry জান। আর তোমাকে রৌদ্দে দাড় করিয়ে রাখব না। একটু পর মার্কেটে গিয়ে তোমাকে "ফেয়ার এন্ড হেন্ডসাম" কিন্না দিব।

ছেলে- আমিও আর লেইট করব না আমার মন্টুস পাখি।Sorry !!
Sorry !! Sorry !!

মেয়ে- হইছে আর ডং করেতে হবে না।

ছেলে- কি আমি ডং করি?

*এইভাবেই চলে তাদের কিছু মিষ্টি জগড়া আর কিছু ভালোবাসা। —

লিখাঃ মাসুদ রানা (এডমিন)

সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

আজ অনেকদিন পর রাতে ছাদে বসে আছে নাবিলা। সে সচরাচর রাতে ছাদে আসেনা কিন্তু আজ একটি বিশেষ দিন। আজ নাবিলার জন্মদিন। আগে জন্মদিনের দিনটা ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় দিন। এই দিন বাবা-মা, মামা-খালা, কাজিনরা সবাই একসাথে হয়ে সেলিব্রেট করতো। ছোট্ট নাবিলা সবার স্নেহ-ভালবাসার কেন্দ্রে থাকতো।
কিন্তু আজ আর সেই সময় নেই। ওর মায়ের মৃত্যুর পর তার জীবন অবিশ্বাস্য ভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের কাছের মানুষদের অনেকেই আজ
দূরে চলে গেছে। মানুষের ভালো সময়ের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে যায়। সে এখন আর আগের মত নেই। সারাদিনের হাসিখুশি,হাস্যোজ্জ্ব­ল,চঞ্চল নাবিলাকে কবর দিয়ে নতুন নাবিলার জন্ম
নিতে হয়েছে। একদম চুপচাপ ঠান্ডা এক নাবিলা।

নাবিলার মা রাজিয়া আহমেদ মারা গেছেন অনেক বছর হলো। ব্লাড ক্যান্সার তাকে নাবিলার কাছ
থেকে কেড়ে নিয়েছে। রাজিয়া আহমেদের শেষ সময়টা বেশ কষ্টেরই ছিল। ক্যান্সার ধরা পরার পর
একমাত্র ট্রিটমেট ছিল ৩ মাস পর পর রক্ত পাল্টানো। নাবিলার বাবা আতিকুর আহমেদ একজন
বড় মাপের ব্যবসায়ী। স্ত্রীর চিকিত্সার কোন ত্রুটি তিনি করেন নি। তবুও যে যাওয়ার সে তো চলে যাবেই। তিনিও চলে যান।রেখে যান সদ্য
কিশোরে পা দেয়া অবুঝ এক মেয়েকে। আতিকুর আহমেদ স্ত্রীর মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে পারেন নি।
বিষন্নতায় ভুগে অনেকটা পাগলামীই শুরু করেন। ছেলের এরকম আচরণ দেখে আতিকুরের
বাবা তাকে আবার বিয়ে দেন। বিয়ের পর আস্তে আস্তে তিনি সুস্থ হতে থাকেন। একসময় পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠেন। দ্বিতীয় সংসারে তার দুটো ছেলেও আছে। চারজনে দিব্যি ভালো জীবন
কাটাচ্ছে।

সত্ মায়ের কাছে নাবিলাকে রাখতে রাজি হননি তার নানা আবদুল করিম। নিজের কাছে নিয়ে আসেন নাতিনকে। নিজের কাছে রেখেই বড় করে ওকে তোলেন।

সকালে আতিকুর আহমেদ নাবিলাকে ফোন দিয়ে উইস করেছে। সকালে পি.এস কে দিয়ে গিফটও পাঠিয়েছেন।
বাবার ফোন এখন আরে ভালো লাগে না। গিফটটা খুলেও এখনো দেখা হলো না। সত্ ভাইয়েরাও ফোন দিয়েছে। ওদের সাথে আগে সম্পর্ক ভালো ছিল।
এখন আর ভালো নেই। ওদের সাথেও
কথা বলতে ভালো লাগে না। ওদের কথায় আবেগ নেই,
সামাজিকতার করুন বাধ্যবাধকতা আছে। সারাদিনের
অনেকগুলো অনিচ্ছাকৃত ফোনে উইস,আর টেক্সট ম্যাসেজ পড়ে এখন সে ক্লান্ত। রাতের আঁধারের
নিস্তব্ধতায় ক্লান্তি গুলো হারিয়ে যেতে চায়। জীবন থেকে ক্লান্তি ঝেরে ফেলা দরকার।

হঠাত করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি নাবিলার খুব প্রিয়। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছে সে। ওর
মা ও বৃষ্টি ভালবাসতেন। মায়ের রুম
থেকে যে ডায়রী পেয়েছিল সেখানে লেখা আছে। বৃষ্টিতে ভেজার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই যে, বৃষ্টির পানিতে চোঁখের জল বোঝা যায় না। এসময়
কাঁদলে কেউ বুঝতে পারে না। তাই এসময় প্রায়ই কাঁদে সে, কেউ তা বুঝতে পারে না। এখন
কাঁদতে ইচ্ছে করছে না বরং জন্মদিনের
সবচেয়ে সুন্দর উপহার পেয়ে সে খুব খুশি। বৃষ্টি অসম ধারায় সে ভিজেই যাচ্ছে। চোঁখ বন্ধ করে সে কল্পনার দুনিয়ায় হারিয়ে গেল। সেখানে ওর
মা আছে। নাবিলা ছাদে ভিজছে আর তার মা দূর থেকে তাকে বকুনি দিচ্ছে।
সে মাকে বৃষ্টিতে নিয়ে এলো। মা-মেয়ে দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজছে।
কল্পনা থেকে সে বাস্তবে ফিরে আসে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় সে মায়ের ভালবাসা খোঁজ করছে।
মায়ের ভালবাসা খোঁজ করতে হয় না। এদের ভালবাসা নিঃস্বার্থভাবে সহজলভ্য। কিছু মানুষ এটা পেয়েও বোঝে না আর কিছু মানুষ প্রতিটা মুহূর্তে এ ভালবাসার খোঁজ করে যায়।

লিখেছেনঃ Nahid Amin

ভালবাসার গন্ধ

ভালবাসার গন্ধ
লিখেছেন- মুহাইমিনুল ইসলাম অভি

আজ অনেকদিন পর দেখা সুমীর সাথে। এখনো আগের মতোই আছে সুন্দর, স্নিগ্ধ। এইতো আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে, রাস্তার ওপাশেই। ভার্সিটিতে আমার ডিপার্টমেন্ট ছিলো এপারেল আর ওর ইয়ার্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সবাই যখন সবার সাথে নতুন বন্ধুত্ব পাতাতে মশগুল আমার তখন ত্রাহি অবস্থা। একে তো সবার সাথে মিশতে পারি না তার উপর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজনের আগমন, বিভিন্ন উচ্চারণের কথাবার্তা আমাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তাই যখন ভার্সিটি লাইফের দুইমাস পার করার পরও অন্যদের বন্ধুর সংখ্যা দুই অঙ্ক ছুয়ে ফেলেছে আমার তখন কোন বন্ধু নাই। ক্লাসে যাই, ক্লাস করি, বাসায় ফিরে আসি। এইভাবেই চলছিলো। একদিন বারান্দা দিয়ে হাঁটছি তখন ইয়ার্নের রুম থেকে ডাক, এই এইদিকে আয় তো। যা বিটাক মোড় থেকে আমার জন্য এই নোটটা ফটোকপি করে এনে দে। আমিও আদেশ পালনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। শত হোক বড় আপু বলে কথা। ভার্সিটিতে সিনিয়রদের কথা অগ্রাহ্য করবে এমন সাহস কার আছে? তো আমিও ছুট দিলাম, নোট কপি করার জন্য।
আমার সিনিয়র যিনি আমাকে নোট ফটোকপি করতে দিয়েছিলেন তারই নাম সুমী। আমার অবশ্যই তাঁকে আপু বলে ডাকা উচিত কিন্তু কি করবো বলুন, আপু বলে ডাকতে তো মন সায় দেয় না ।
ঐদিন নোট কপি করে এনে দেওয়ার পর ও মিষ্টি করে হেসে যখন থ্যাংক ইউ বলেছিলো তখন আমাকে আর পায় কে? এরপর প্রতিদিনই ওর সাথে দেখা হতো। ওর টুকিটাকি কাজ করে দিতাম। ওর কাজ করতে আমার বেশ আনন্দই হতো। এভাবে দেখা হতে হতে আর কথাবার্তা বলতে বলতে ওর সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। ও একটা পারফিউম মাখতো, বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ ছিলো ওটার। ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় যাওয়া লাগতো তখন ওর জন্য রিকশা করে দেয়ার দায়িত্বটুকু আমার। ক্যাম্পাস থেকে মোড় পর্যন্ত হেঁটে আসার সময়টাই ছিলো আমার দিনের সবচেয়ে আনন্দময় উপলক্ষ। এসময় আমরা পাশাপাশি হাঁটতাম। সারাদিনের ব্যস্ততার সাথে ওর পারফিউমের গন্ধ মিলে এক বুনো গন্ধ তৈরি করতো। ভার্সিটি বন্ধের দিনও আমি এই বুনো গন্ধ খুঁজে বেড়াতাম, বন্ধের দিনেও ক্যাম্পাসে চলে যেতাম এই বুনো গন্ধটার টানে।
এভাবেই চলছিলো বেশ। দিন দিন ভালোবাসার গাছটা মনের মধ্যে আরো শেকড় গেড়ে বসলো। দিন দিন গাছের শাখা প্রশাখা বাড়তেই থাকলো। একদিন শুনলাম কোন এক ভাইয়ার সাথে নাকি ওর রিলেশন চলছে। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। কথাচ্ছলে একদিন বলেই ফেললাম ঐ ভাইয়ার সাথে ওর রিলেশনের কথাটা। মুচকি হাসি দিয়ে ওর উত্তর তুই এটা এতোদিন পরে জানলি?
কিছুই ভালো লাগতো এরপর থেকে। সবসময় চাইতাম এড়িয়ে চলতে। দেখা হলেও খুব একটা কথা বলতাম না। একদিন ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলো ভাইয়ার সাথে। ভাইয়া ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। আমাদের ভার্সিটির টপারদের একজন। জি স্টারের সাথে অলরেডি চুক্তি হয়ে গেছে। পাশ করে বেরোলেই চাকরি। ভার্সিটিতে যতোদিন ছিলাম ততোদিনই ওর কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যেতো ।
সময়ের চেয়ে বড় স্বার্থপর আর কেউ নেই। ও কারো পরোয়া করে না। স্বার্থপর সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরাও স্বার্থপর হয়ে ওঠি, আর তখনই ভালোবাসা আবেগ একপাশে সরে যায়। আস্তে আস্তে আমিও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠি আর ভালোবাসা একপাশে সরে যায়। কিন্তু ওকে ভোলা কখনো সম্ভব ছিলো না কিংবা ভোলার চেষ্টাও করিনি হয়তো ।
আজ অনেকদিন পর ওকে দেখে বেশ আনন্দ লাগছিলো। কাছে যেতেই ঐ বুনো গন্ধটা ঝাপটা মারলো নাকে। আহ!কতদিন পর পরিচিত গন্ধটা আবার পেলাম।
সুমী আপু, কেমন আছো?
ঘুরে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, আরে তুই কেমন আছিস?
ভালো, এই স্কুলের সামনে দাড়িয়ে কি করছো?
আরে আমার মেয়েটা এই স্কুলে পড়ে, এ বছরই ভর্তি করালাম।
বেশ ভালো। তো কি করছো? ইন্জ্ঞিনিয়ারিং ফলাচ্ছো কোথাও না পুরোপুরি হাউজওয়াইফ।
নারে এখন পুরোপুরি হাউজওয়াইফ। চল, বাসায় যাই । তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করবি। ওর দুপুরে আসার সময় হয়ে গেলো। পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা কর। স্কুলটা এখনই ছুটি হয়ে যাবে।
আরে আপু আজকে যাওয়া তো অসম্ভব । কাজ আছে । তুমি তোমার বাসার ঠিকানা দিয়ে যাও আমি অবশ্যই তোমার বাসায় যাবো কথা দিলাম।
কি কাজ এতো? আচ্ছা এই নে ঠিকানা । বাসায় আসিস কিন্তু । যাই রে এখন । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ।
আচ্ছা ঠিক আছে । যাও, আসবো বাসায় ।
চলে যাচ্ছে সুমী । আমি এই দুপুরের চিড়বিড় রোদে ঠিকানা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি । একদম খারাপ লাগছে না । বরং ভালোই লাগছে । শুধু সুমীকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে, খুব ইচ্ছা করছে, সুমী তুমি জানো কি এখনো সময় পেলে আমি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে যাই তোমার বুনো গন্ধটার খোঁজে।