আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

" ধূসর ভালোবাসা "

" ধূসর ভালোবাসা "
লিখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

সত্যিই তাহলে আর অপেক্ষা করব না ?
--- না, করবে না ।
কেন ?
--জানি না ।
কিন্তু তুমি তো বলেছিলে অপেক্ষা করতে ?!
---না, আমি কখনোই বলিনি ।
হাত ছুয়ে কথা দিয়েছিলে!
---আমি কথা দিতে চাইনি...তুমিই জোর করেছিলে...পাগলামী শুরু করেছিলে!
তাই বাধ্য হয়ে প্রমিজ করেছিলাম ।
তুমি তো জানতে আমি পাগলামো করব!
তবুও কেন দেখা করতে এসেছিলে ?
---জানি না !
তোমার সাথে আমার আগে পরিচয় হয়নি, এটা কি আমার দোষ ?
---একই কথা বারবার বলবা না!
এটা তোমারই দোষ ।
তুমি আগে আসলে না কেন ?
এখন এসেছ পেইন দিতে!
টাইম এন্ড টাইড ওয়েটস ফর নান !
ছোটবেলায় " সময়ের মূল্য" রচনা লিখতে গিয়ে কতবার এই বাক্যটা লিখেছে ।
লেখার ছলে ।
কখনো রিয়েলাইজ করেনি রুদ্র ।
ইউনিভার্সিটিতে আসার পর এই বাক্যটা যে কতটা নির্মম, সেটা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এখন।
মাত্র তিনটা দিনের ব্যবধান!
৭২ ঘন্টা!
নিজের পছন্দের মানুষকে অন্যের হয়ে যেতে দেখল!
সে কল্পনাও করতে পারেনি, অবন্তী এমন একটা ডিসিশন নিতে পারে!
অবন্তীকে যখন বলল ভাল লাগার কথা অবন্তী স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল ।
সেদিনই প্রথম অবন্তীকে কাঁদতে দেখেছিল রুদ্র ।
কাঁদতে কাঁদতে অবন্তী বলেছিল, কুত্তা ! তুই আগে আসলি না ক্যান ?!
রুদ্র ধরা গলায় বলেছিল, আমি কি জানতাম এমন হবে!
সেদিন অবন্তী রুদ্রকে কথা দিয়েছিল, যদি কোনদিন সে তার মন চেঞ্জ করে তাহলে রুদ্রকে বিয়ে করবে ।
আগামীকাল অবন্তীর এনগেজম্যান ।
বিয়ের পর চলে যাবে ম্যারিকা ।
স্বপ্নের দেশ ।
রুদ্রকে আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না কারো ।
ফোন দিয়ে কেউ বলবে না, বড়ইয়ের আচার খেয়ে আমার ব্যাগে বিচি গুলো তুই রেখেছিলি শয়তান!
লাল-নীল, কালো-সাদা স্বপ্ন আর দেখা হবে না ।
দুইটা টুইন মেয়ে বেবির স্বপ্ন দেখা হবে না ।
দেখা হবে না, তাদের চুলে ঝুটি বাঁধার স্বপ্ন!
কখনই হবে না............কোনদিন না....

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

রিসিভ কর না , খালি ভয়েস টা একবার শুনমু...

'' আমারে আর ফোন দিবিনা তুই , খবরদার না , একদম না ! '' একবার , দুইবার , তিনবার......ষাটবার...তারপর থেমে যায় লামিস , আর দেয়না ফোন । কেনো দেবে ? কতক্ষণ সহ্য করা যায় উপেক্ষা ??

লামিসটা একটু পাগলা টাইপ । একদম আজাইরা !! দিনে সত্তর বার সে সত্তর জনের প্রেমে পড়ে , নিজেই বলেছে এই কথা । কোনটা যে তার আসল প্রেম আর কোনটা আসল না , কখনোই নিমু বুঝতে পারেনি । পারবে কেমন করে ? নিমুরই বান্ধবী অনিত্রাকে যখন লামিস ভালোবেসেছিলো , সবার প্রথমে কিন্তু নিমুকেই বলেছিলো ।

নিমুকেও বোঝা মুশকিল । সে নিজেই নিজেকে বুঝতে পারেনা , অন্যেরা পারবে কীভাবে ? আর দশটা মেয়ের মতো নয় সে । বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়িয়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাচ্চা ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি , ম্যাচিউরড ভাবটা আনতে পারেনি আচার-আচরণে । নিজস্ব অনুভূতি , ভালো লাগা , খারাপ লাগা , রাগ , অভিমান , ভালোবাসা...এই ব্যাপারগুলোকে নিমু ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করতো , এগুলো যেনো তার কাছে লুকিয়ে রাখার বিষয় , প্রকাশ করবার নয় ।

খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের মেয়ে নিমু , লামিস একদম উলটো প্রকৃতির । নিমু আগ বাড়িয়ে মিশতে যায়নি লামিসের সাথে , লামিসই এসেছিলো বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে , এসেছিলো খুব ভালো একজন বন্ধু হয়ে । নিমুও মিশে গিয়েছিলো , একেবারে একে একে দুই হয়ে ! ভেবেছিলো , বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ভালোই যাবে , লামিসের মতো একটা বন্ধু আছে যে পাশে !

'' লামিস ! লামিস ! লামিস ! তুই খুব ভালো রে , খুব ভালো তুই !''- মনে মনে এরকমটাই ভাবতো নিমু ।

স্বভাবসুলভ ভাবেই হাসতে হাসতে নিমু নিজের সব কথা ভাগাভাগি করে নিয়েছিলো লামিসের সাথে । না , না , অন্য কিছু নয় , বন্ধু হিসেবেই । আর লামিস হতচ্ছাড়াটা কী করলো ?? বোকা মেয়েটার বোকামির সুযোগ নিয়ে তাকে ভালোবেসে ফেললো ! আজব !

ও ভালোবাসার কথা বোঝানোর চেষ্টা করলো নিমুকে , এভাবে-ওভাবে-নানা ভাবে ! নিমু বুঝেনি প্রথমে , কীভাবে বুঝবে ? ঐ যে বলেছিলাম অনিত্রার কথা , হুম...এজন্যই বুঝতে পারেনি নিমু । নিমু কখনোই ভাবেনি লামিস এভাবে ভালোবেসে ফেলবে নিমুকে । বেচারী নিমু বিপাকে পড়ে গেলো লামিসের অনুভূতিগুলোকে নিয়ে , ভালোবাসা বিষয়টা ওর সহজে আসেনা , কেনো আসেনা কে জানে !

নিমু এই লামিসকে চায়নি , চেয়েছিলো একজন খুব কাছের বন্ধু , নিমুকে ভালোবেসে ফেলার আগে লামিস যেরকমটা ছিলো ঠিক সেইরকম একজনকে । বন্ধু লামিসকে হারাতে চায়না সে ।

''লামিস অসভ্যটার কী দরকার ছিলো ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করার ? না করলে হতো না ?? এখন হয়তো বন্ধুত্বটাই শেষ করে দেবে এই ফাজিলটা !'' রাজ্যের চিন্তা-ভাবনা তাড়া করে বেড়ায় নিমুকে ! লামিসকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হতো নিমুর , কিন্তু কোথায় যেনো আটকে যেতো । লামিসকে কী বিশ্বাস করা যায় ? ওর ভালোবাসাটা কি আসলেই ভালোবাসা? নাকি মোহ ? মোহটা যদি কেটে যায় ?? শেষ পর্যন্ত নিমুর সাথে যদি না থাকে ও ?? কাল যদি আরেক নিমুকে মন দিয়ে বসে ?? নাহ্ , আর ভাবতে পারেনা নিমু ! এই ভয়গুলো প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াতো নিমুকে । একারণেই হয়তো নিমুর রিক্ত-সিক্ত মনে কচি সবুজ ভালোবাসার পাতা গজাতে শুরু করেও মরে যেতো বারবার ।

দ্বিধা আর দোটানার মধ্যে এভাবেই চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রথম বর্ষের দিনগুলো । বাচ্চা নিমুর আনন্দগুলো কেউ যেনো শুষে নিচ্ছিলো , নিমুর দমে থাকা মন-চিন্তা-ভাবনা সব কিছুকে গ্রাস করে ফেলছিলো কেউ , কে সে ? লামিস নয়তো ? নিজেকে বড় অসহায় লাগছিলো নিমুর ।

সমস্যাটা আরো গভীর হতে শুরু করলো তখনি , যখন লামিস অযথা জ্বালানো শুরু করলো নিমুকে । নিমুর দিকে অযথা সন্দেহের আঙ্গুল তুলতো সে , অন্য কারো সাথে নিমুকে সহ্যই করতে পারতো না , জ্বলে যেতো একদম , দুনিয়ার সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইতো নিমুকে !

আচ্ছা লামিস আসলেই কি ভালোবাসত ওকে ?? সত্যিই ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে পারত না কেনো ?? ওভাবে কষ্ট দিত কেনো ?? সন্দেহ আর অবিশ্বাসের তীর যখন লামিস বারবার বিঁধিয়ে দিচ্ছিলো ওর বুকে একের পর এক , নীরবে অশ্রু ঝরাতো মেয়েটা । মুঠোফোনের ওপাশ থেকে কিছুই কি টের পেতোনা লামিস ??

একরাশ কষ্ট উপহার দেবার পর লামিস যখন বারবার অনুরোধ করতো নিমুকে , ''প্লীজ নিমু , রিসিভ কর না ফোন , রিসিভ করলে কী হয় ? একবার শুধু ভয়েসটা শুনতে মন চাইতেছে , প্লীজ ''.... খুব খারাপ লাগতো তখন নিমুর , খুব , খুব কষ্ট হতো । কিন্তু বুঝতে দেয়নি লামিসকে একবারের জন্যেও । করেছে উপেক্ষা......'' আমারে আর ফোন দিবিনা তুই , খবরদার না , একদম না ! ''

নিমু হয়তো ভালোবাসতে চেয়েছিলো লামিসকে , উজাড় করে ভালোবাসতে চেয়েছিলো । লামিসের একের পর এক ওলোটপালট ব্যবহারই বাধ্য করতো নিমুকে পিছিয়ে যেতে ।

এরপর ? এরপর , ধীরে ধীরে নিমু নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে শুরু করল । লামিসকে দেখলে ওর মন চাইতো ডেকে কথা বলতে , কিন্তু ডাকতো না । লামিস নিজ থেকে কথা বলতে আসলেও ফিরিয়ে দিত ওকে । আরেকদিনের কথা,
-কাউকে ভালোবেসে যদি তাকে নিয়ে ঘরই না বাঁধতে পারলি তো ভালোবেসে লাভটা হলো কি হুম ??
-ক্যান ? পারমু না ক্যান ! চল নিমু , বিয়া টা কইরা ফালাই !
-এহ! হাহ! যা যা !
-কই যামু ?? সুখে রাখমু তোরে , আমার কাছে দুই টাকা থাকলে , দুই টাকার মধ্যেই সবচাইতে ভালো জিনিসটা কিইন্যা দিমু !
-তোর অনিত্রা কি মরছে ?? ওর কাছে যা ! ওরে দুই টাকা দেগা যাহ !
-ও বাদ !
-মনটা স্থির করতে পারিস না তুই ? এতো কনফিউজড কেনো ? আজ একে , কাল ওকে , কেনো ? একজনকে চাইতে পারিস না তুই ?? উঠে চলে যায় নিমু ।

করিডোর ধরে হেঁটে যাবার সময় নিমুর সাথে সাথে ছুটে আসতো লামিস , বলতো - তোর সমস্যা কী ?? অ্যাভয়েড করস ক্যান আমারে ?? নিমুর উত্তর জানা নেই , সে বলতো - আমার কোনোই সমস্যা নাই , আমি নিজেই একটা সমস্যা ! যা তুই ! লামিস মন খারাপ করে চলে যাবার পর নিমু হাসলো মনে মনে- পাগলা ! আগেতো খেয়াল করি নাই তোর একটা দাঁত একটু ফাঁকা ! হাহাহা , খারাপ নাহ , ভালোই লাগে ।

একদিন হঠাৎ খুব করে বকে দেওয়ার পর থেকে লামিস আর আসেনা নিমুর কাছে । বিরক্ত করেনা । কেমন কেমন যেন লাগে নিমুর । পাগলাটা জ্বালাইলেও ভাল্লাগেনা , না জ্বালাইলেও ভাল্লাগেনা ! ধুর !

এভাবে চলতে থাকে দিনগুলো । লেভেল-১, টার্ম-১ এর রেসাল্টের পালা । নিজের জিপিএ দেখার আগে লামিসেরটা দেখলো নিমু , নাহ! পড়ায় একদম মন নাই ছেলেটার ! নিমুর রেসাল্ট অবশ্য আশানুরূপই হয়েছে ।

লামিসের সাথে কথা হয়না অনেকদিন । নিমুর জন্মদিন চলে এলো , ভেবেছিল লামিস হয়তো উইশ করবে , কিন্তু না । বড় অভিমানী লামিসটা ।

একদিন নিজেই ফোন দিয়ে বসলো লামিসকে । -কি ব্যাপার ? হঠাৎ ফোন দিলা ? -কেনো দেয়া যাবেনা ? -না , তা না । আমি কল দিলে তো খুব বিরক্ত হইতা । -ও , আচ্ছা রাখি । -ঐ শালী ! ঐ ঐ ঐ ! রাখিস না ! ওপাশে চুপ করে নিমু । -কি হইলো কথা কস না ক্যা ?? কথা ক ! -কিছু নাই বলার , তুই বল । -স্যরি , আর বিরক্ত করমু না তোরে , বকমু না , ধমকামুও না । স্যরি । আয় আবার ফ্রেন্ড হইয়া যাই । -হুম...?? -হুম হুম করবি না শালী ! -ধমক দিলি আবার ?? -ওহ ভুল হইয়া গেছে । ফ্রেন্ড ? -ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালসে মার্ক এতো কম ক্যান । কালকে আসিস , বুঝায়ে দিবোনে । -কি ???? আরে বাবা ! আমার মার্কস ও দেখো তুমি ?? এতো খেয়াল রাখো ?? -ফোন রাখলাম । কেটে যায় লাইন টা । এদিকে লামিস খুশি , ওদিকে নিমুও , অনেক খুশি ।

পরদিন । ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারটায় বসে নিমু । হঠাৎ দূর থেকে- -কি ?? এইখানে বসছো ক্যান ?? যার্গ খাওয়ার শখ হইছে খুব ?? বড় ভাইদের ডাকমু ?? -ও তুই ?? ডাক তোর ভাইরে ! -নাহ । বকা দিবো দেখলে , ওঠ , চল । -আমারে বকলে তোর কি ?? -আমার অনেক কিছু , এতো দিনেই বুঝোনাই , আর বুঝবাও কিনা মাবূদ জানে ! চল্ শালী ! -লামিস !! থাপ্পড় খাবি বদ ! -চল !

দুজন হেঁটে যাচ্ছে পাশাপাশি , অনেকদিন পর । চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে ।

-নিমু আমারে আনব্লক কর প্লিজ , তুই ছাড়া ভাল্লাগেনা ফেবু । -এতো ভালো লাগার দরকার নাই । -প্লিজ নিমু , এমন করস ক্যান ?? -চলে যাইতেছি , পরে দেখা হবে ।

সেদিন সন্ধাবেলা , লামিস তার আইডিতে লগিন করতেই নিউজ ফিডে দেখতে পেলো নিমুর স্ট্যাটাস-

''কিতনা কুছ কেহনা হ্যায় ফির ভি হ্যায় দিলমে সাওয়াল কাহি ছাপ্নো মে যো রোজ কাহা হ্যায় ও ফিরছে কাহু ইয়া নেহি ?''

লামিস ভেবে ভেবে দিশেহারা , এই স্ট্যাটাসের মানে কি ?! সেদিন থেকেই তাদের সামার ভ্যাকেশন শুরু হয়ে যাওয়ায় আর নিমুকে সামনাসামনি কিছু বলার সুযোগ পেলোনা লামিস ।

-ফোনও রিসিভ করেনা , চ্যাটে আসেনা , ম্যাসেজ রিপ্লাই করেনা , কি হইলো আবার নিমুর ?? ধুর!!

আবার নিমুর স্ট্যাটাস-

"লস্ট এন্ড লনলি কজ ইউ আর দা অনলি ওয়ান দ্যাট নোজ মি এন্ড আই ক্যান্ট বি উইদাউট ইউ"

-কি হছে নিমু তোর ?? এগুলা কি স্ট্যাটাস দ্যাছ !!? উত্তর নেই নিমুর ।

নিরুপায় হয়ে অস্থির হয়ে লামিসও স্ট্যাটাস আপডেট করে-

''যদি অজানা মনে খোঁজো আমায় , তাকাবেনা , তবু চোখ চলে যায় আমার পানে , যদি সুখের ছবি আঁকতে গিয়ে না চাইতেই পাও আমাকে অজান্তে , তবে ভাবো আবার , আর একবার , ভালোবাসো কি না আমাকে ?''

স্ট্যাটাসটা দেখে চোখ ভরে জল এল নিমুর , চিৎকার করে ওর বলতে ইচ্ছে হল - হ্যাঁ ! হ্যাঁ ! তোকেই ভালোবাসি , তোকেই আমি ভালোবাসি...। কিন্তু বললোনা । সেদিনের পর আবার যোগাযোগ বন্ধ দুজনের ।

ভ্যাকেশনটা এবার এত লম্বা মনে হচ্ছে কেন লামিসের ?? নিমুকে ছাড়া প্রতিটা দিন অসহ্য লাগছে তার !

অবশেষে ক্লাস শুরু হলো । নিমু আসেনি । ছুটির পর দেখা গেল গেটে দাঁড়িয়ে সে । লামিস ছুটে গেলো ওর কাছে । -কিরে কি হইছে তোর , খোঁজ খবর নাই , শরীর ভালো ?? কথা কস না ক্যান ?? -সব ভালো , চল আমার সাথে । -কই ? -আমার বিয়া হারামি ! তোরে সাক্ষী বানামু ! চল! -নিমু কি হইছে তোর ?? -তুই যাবি ?? নাকি আমি বাসায় ফিরা যাবো ??! -আচ্ছা আচ্ছা চল ।

দুজনে হেঁটে যাছে , নিমু কিছু বলছেনা , লামিসের টেনশন হচ্ছে খুব । -কিছু তো বল নিমু ? -অনিত্রার সাথে নাকি তোর রিলেশন চলে ? -এই কথা কে কইছে তোরে ?? -আচ্ছা তাইলে ঘটনা সত্য ? কংগ্রেচুলেশান । -নিমু ! এরকম কিছুই না ! কছম নিমু ! বিলিভ মি ! -এরকম কিছু না ? তাইলে কিরকম শুনি ? -আমি কেমনে বুঝামু তোরে ?? আই লাভ ইউ নিমু ! আই লাভ ইউ ! তুই আমার লাইফে আসার পর আর কোনো মেয়ের কথা একবারের জন্যও মনে আনি নাই ! -সবার সাথে ফ্লার্ট করতি ক্যান তাইলে ? আমি কিছু বুঝিনা না ?? কি ? মাথা নীচে ক্যান ? কথার জবাব দাও এখন!

চোখ ভিজে আসলো লামিসের , মাথা নীচু করেই হাঁটু গেড়ে বসলো মাটিতে, -আমি জানি , তোমারে অনেক কষ্ট দিছি , বার বার তুমি আমারে মাফ কইরা দিছো । আমি স্যরি । আমার লাইফটা তুমি ছাড়া ইনকমপ্লিট , প্লিজ আমারে একটা বার ভালোবাইসা দ্যাখো , কথা দিলাম- আর কষ্ট দিমুনা , ভালো হইয়া যামু , তুমি যেমন বলবা ঠিক তেমন । -লজ্জা করেনা তোর ?? রাস্তার মধ্যে কাঁদে কেমনে মানুষ ?! ওঠ ! চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো লামিস । -আর কিছু বলবি না লামিস ? -বলতে বলতে আমি ক্লান্ত , আজকে শুনতে চাই ।

নিমু লামিসের হাত দুটো নিজের হাতে চেপে ধরে বললো -শুধু একটা বার তোর বন্ধনে আবদ্ধ করে নে আমায় , এরপর তোকে দেবো জনম জনম ভালোবাসার শাস্তি । প্রতিদিন একটা ছোট লাল টিপ দিবি আমায় , দুই টাকার টা দিলেও চলবে ।

লামিসের জলে ভেজা চোখ দুটো চকচক করে উঠলো , এতো শান্তি সে জীবনে পায়নি । হঠাৎ অঝরে বৃষ্টি শুরু হলো , নিমুর চোখের জলটুকু ধুঁয়ে দিলো । নাহ , আর কাঁদতে চায়না সে , অতীতকে ভুলে গিয়ে এখন শুধুই সামনে এগিয়ে চলা , লামিসকে নিয়ে এগিয়ে চলা ।

-টিপ দিমু , যা চাইবি তাই দিমু , নিমু , চল বিয়া টা কইরাই ফালাই ! -মাইর খাবি বদ ! চল !

এভাবে, হতে হতে না হওয়া একটা ভালোবাসার গল্প হয়েই গেলো শেষমেষ, নিমুর জন্য লামিস আর লামিসের জন্য নিমু ।

লিখেছেনঃ প্রিয় স্বপ্ন

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

অন্ধকার আর চোখের জল

অন্ধকার আর চোখের জল
লিখেছেনঃ Noshin Samiha Khan Trisha


আজ মিথিলার বিয়ে। ও এখন পড়াশুনা শেষ করেনি। ওর কাছে তো আর বিয়ে দিবে না। ভাল পাত্র পেয়েছে। মেয়েটাকে বললাম চলো পালিয়ে যাই। কি সুন্দর করে না করে দিল। আমি কিছুই না ওর? আর জোড় করলাম না। ও আসলে আমাকে ভালই বাসেনি। সময়ের আবেগ। নয়ত ও কিভাবে পারবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে?

এমন একটা দিনে পরিচয় হয়েছিল মিথিলার সাথে সাইফের। একদিন রাস্তায় একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে কলেজ ড্রেস পরে। মেয়েটিকে দেখে মনে হল কিছু একটা হয়েছে। সাইফ কাছে গিয়ে বলল কোন সমস্যা? মেয়েটি বলল ভাইয়া আমি খুব বিপদে পরেছি। আমার গাড়ি আসেনি। আমি কি আপনার মোবাইল থেকে একটু ফোন করতে পারি? সাইফ মোবাইলটা মেয়েটাকে দিল।
-হ্যা আম্মু গাড়ি আসেনি কেন? আমি রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। কলেজ আরো ১ ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
-সাইফ বলল চলো আমি দিয়ে আসি।
-না অপরিচিত কারো সাথে আমি যাব না।
-তো আমার মোবাইল টা যে নিলে?
-আপনিই তো আগে কথা বলতে আসলেন।
-ফোন টা তো তুমিই চেয়েছ।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-সাইফ একটা রিক্সা ডাক দিল। এই মেয়ে ওঠো।
-আমার নাম মিথিলা, মেয়ে না।
-আচ্ছা আচ্ছা ওঠো।
-এক রিক্সায়?
-হ্যা। তুমি এতটুকু মেয়ে। খুব কথা বল।
-এতটুকু মেয়ে মানে? আর দুই মাস পর আমি এইচ এস সি দিবো। বুঝছেন?
-বাহ। তুমি এত বড়? কিন্তু একা বাসায় যেতে পারনা। হাহাহা।
মিথিলা কিছু না বলে রিক্সায় উঠলো।

-রাগ করলে নাকি?
-না। এত হাসছেন কেন? আপনি কিসে পরেন?
-আমি ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ার।
-ও। সারা রাস্তা আর কোন কথা হলনা।

মিথিলা রাতে পরতে বসল।ওই ভাইয়া তার কথা কেন জানি খুব মনে পরছে।আসলে কারো সাথে তেমন মিশা হয় না তো। তাই হয়ত। ভাইয়াটার নামটাই জানা হল না।ইশ......

মিথিলা ওর আম্মুর মোবাইল টা নিয়ে লুকিয়ে ফোন দিল।
-হ্যালো
-আচ্ছা,আপনার নাম কি?
-সাইফ,আপনি কে?
-আমি মিথিলা। আপনার নাম টা জানা হয়নি তো।
-আমার নাম দিয়ে তুমি কি করবে?
-কি করব? নাম তো আর চকলেট এর মত খাওয়া যায় না যে খাব।
-তুমি বেশি কথা বল।
-আপনি বেশি কথা বলেন। আচ্ছা রাখি। ফোন দিয়েন না। এটা আম্মুর নাম্বার। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

সাইফ এর খুব হাসি পাচ্ছে মেয়েটার কথা মনে হলে।কেমন বাচ্চাদের মত।এত বড় হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয় নাই। কিন্তু মেয়েটাকে খুব ভাল লেগেছে ওর। ফোন টা দেয়ার পর যেন আরো ভুলতে পারছে না ও। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল সাইফ।

পরদিন ঘুম থেকে উঠলো ৮ টায়। দৌরে ক্লাস এ গেল। আজকেও দেরি। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। কখন ১২টা বাজবে। কেন জানি মিথিলার কলেজ এর সামনে যেতে ইচ্ছা করছে। সাতপাঁচ না ভেবে ও মিথিলার কলেজ এর সামনে গেল। মাত্রই ছুটি হয়েছে মনে হয়। ও এদিক ওদিক মিথিলাকে খুজছে। হটাত দেখল মিথিলা কাল রঙের একটা গাড়িতে উঠছে। ওকে দেখে কেন জানি ওর হার্টবিট বেরে গেল। এমন হচ্ছে কেন ও নিজেও বুঝতে পারছে না। কেনই বা ওকে দেখতে এল। মেয়েটা দেখলে কি ভাববে। দেখলে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পরবে। কোন ভাবে মুখটা বাঁচিয়ে কেটে পড়ল ও। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে আরেকটু দেখতে কিন্তু উপায় নেই।

বিকাল ৫ টা বাজে। ফোনের সব্দে ঘুম ভাঙল সাইফের। ফোনটা ধরে কণ্ঠ শুনে লাফ দিয়ে উঠলো সাইফ।
-এরকম চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন কেন।
-মানে?
-মানে!! কলেজ এর সামনে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিলেন না?
-নাহ। আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম।
-তাই না? আমাকে দেখে খাতা দিয়ে আবার মুখটা তো সুন্দর করে ঢেকেছিলেন।
-আচ্ছা তোমার পড়াশুনার কি অবস্থা?
-কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?
-আজব তো। এই মেয়ে এত কথা বলে কেন?
-এই রাখি রাখি। আম্মু চলে এসেছে। ফোন দিয়েন না। আমি পরে ফোন দিবো। বলেই রেখে দিল মিথিলা।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিল আরেকটু কথা বলবে।


আজকাল যেন কি হয়েছে সাইফের। কিছুতেই মন বসে না। খালি ফোন দেখে। মিথিলার ফোন কি আর আসবে না? ওর কিছুই ভাল লাগে না। দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায় কিন্তু মিথিলার কোন ফোন আসে না। ওর কলেজ এর সামনে প্রায় ই যায় কিন্তু পায় না মিথিলাকে। ও বুঝতে পারে এমনি হয়ত ফোন দিয়েছে দুই দিন। ওর ভাল লেগেছে বলেতো আর মিথিলার ও ওকে ভাল লাগবে তা না। সাইফ নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখে। মিথিলার আম্মুর নাম্বার এ ফোন দেয় না যদি ওর সমস্যা হয়। সাইফ ধরেই নেয় মিথিলা ওকে আর কোন দিন ফোন দিবে না। কেটে যায় ৩ মাস।

একদিন হটাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। সাইফ ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে ধরল। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। মিথিলার ফোন।
-কেমন আছেন?
-ভাল। তুমি এতদিন পর?
-খুব খুশি হয়েছেন মনে হচ্ছে?
-নাহ। খুশি হওয়ার কি আছে।
-হি হি হি।
-হাসো কেন?
-আপনি সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারেন না তো তাই।
-এই মেয়ে তুমি বেশি কথা বল।
-হি হি। -তারপর এতদিন কোথায় ছিলে?
-আপনি জানেন না আমার পরীক্ষা ছিল? পরশু শেষ হল। এটা আমার নাম্বার।
-তোমার কলেজ কি বন্ধ ছিল?
-আপনি আমাকে কলেজেও খুজেছেন?
-না জিজ্ঞেস করলাম এমনি।
-এমনি? হি হি হি।
-এই মেয়েটাকে নিয়ে তো আর পারা গেল না।
-আচ্ছা বলছি। আমার টেস্ট পরীক্ষা হয়ে কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
-ও, ভাল। এই নাম্বার কি তোমার কাছে থাকবে?
-হুম।
-তাহলে তো ভালই।
-আচ্ছা এখন রাখি।
এভাবে মাঝে মাঝে ওদের কথা হত। দুজনের মাঝে ভাল বন্ধুত্ত হল। মিথিলা মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হল। মাঝে মাঝে কোচিং পালিয়ে দেখা করতে যেত। এর মধ্যে সাইফ অনেক ভালবাসে ফেলেছে ওকে কিন্তু বলতে ভয় পাচ্ছে। ও বুঝে যে মিথিলাও ওকে ভালবাসে। সে ভাবল মেয়েটার ভর্তি পরীক্ষা টা যাক পরে বলবে।

মিথিলার রেজাল্ট দিল আজ। ও জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলল সাইফ কে। সাইফ ও খুব খুশি হল ওর খুশি দেখে। মিথিলার মেডিক্যাল পরীক্ষা চলে এসেছে কাছে। সাইফ কথা বলা কমিয়ে দিল।দেখতে দেখেতে পরীক্ষা চলে এল। মিথিলার পরীক্ষা ভালই হল। ও সিলেট মেডিক্যাল এ চান্স পেল। এখন সাইফ এর এল সেইক্ষণ। কিন্তু কিভাবে যে বলবে। সাইফ তখন ই মিথিলাকে ফোন দিয়ে বলল কাল দেখা করতে।


মিথিলা এসে দেখে সাইফ হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে। মিথিলা সামনে যেতেই হাবার মত দাড়িয়ে পড়ল। খুব রাগ হচ্ছে ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
... হিহিহি।
-এই মেয়ে হাস কেন?
-না এই যে, প্রপোজ করবে বলে বসে আছ তো কিন্তু করতে পারছ না।
-কে বলেছে তোমাকে? তুমি আসলে বেশি কথা বল।
-তুমি আসলে বেশি বুঝ। আচ্ছা যাও প্রপোজ করতে হবে না। আমার উত্তর হ্যা। বোকার মত কেদে দিল সাইফ। এই মেয়েটা ওকে এত বুঝে।
-ওমা প্রপোজ করতে পারেনি বলে কেমন কাঁদছে দেখ।
-সাইফ খুশিতে আর জোরে জোরে কেদে দিল। এভাবেই হয়েছিল সাইফ আর মিথিলার মিষ্টি একটা সম্পর্ক। খুনসুটি, ভালবাসা আর মিষ্টি ঝগড়ায় ভালই চলছিল ওদের। কেটে গেল দুইটা বছর। কিন্তু হটাত একদিন......

-আমার তোমাকে কিছু বলার ছিল।
-বল।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-মানে?
-মানে তো তুমি বুঝতেই পারছ।
-তুমি তোমার বাসায় না করো। কারন আমি তোমার বাসায় বললে তো এখন আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিবে না।
-আমি না করলেও মানবে না।
-চল পালিয়ে যাই।
-কি বল এসব? আমি পারব না।
-তবে কি করবে?
-যাই করি পালাতে পারব না।
-সাইফ আর জোর করল না। চলে গেল মিথিলা। তাকিয়ে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখল।

আজ মিথিলার বিয়ে। একটু পর মিথিলা অন্য কারো হবে। ভাবতে পাছে না কিছু মিথিলা। সাইফ কে ছাড়া ও এক মুহূর্তও থাকতে পারবেনা। না ওর মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কি করবে ও? ও কি তবে পালিয়ে যাবে সাইফের হাত ধরে? ও এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবে না...

অনেক কষ্টে ও বাসা থেকে বের হল। সাইফ কে ফোন দিচ্ছে যেন ও এসে নিয়ে যায়। কিন্তু সাইফের ফোন বন্ধ। ও এতবার চেষ্টা করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে একা ও কিভাবে যাবে, বাসায় ও ফিরে যাবে না। খুব রাগ হচ্ছে কেন তখন সাইফকে পালিয়ে যাওয়ার কথা না করে দিল। রাস্তায় মাইক্রো দেখে ও সাইফের বাসা ভাড়া করল। সে ড্রাইভার কে বলল ও নেমে ভাড়া দিবে। সাইফের কাছ থেকে নিতে হবে, কোন টাকা নিয়ে বের হয় নাই ও। কিন্তু ড্রাইভার এটা কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে? এই যে ভাই এইদিক দিয়ে না। আপনি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই যে শুনছেন? আপনি ঠিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন না।

দুই বছর পর.........

রাত ১১ টা। সেই নদীর পারে বসে আসে। বসে বসে ভাবছে তার পুরনো সৃতিগুলার কথা। হটাত পাশে তাকিয়ে দেখল ঘুমটা পরা কোন মেয়ে। ওর বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা হল নিশিকন্যা যারা পেটের দায়ে দেহ বিক্রি করে। এই যে মেয়ে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন, আমি এজন্য এখানে আসি নাই। এই যে আপনি কথা বলেন। আচ্ছা আপনি এরকম ঘুমটা দিয়ে আছেন কেন? আপনাদের কত ঢং। তবুও আপনারাই ভাল আছেন, কোন কষ্ট নাই। আর আপনাদের এই মেয়ে জাত টাকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। আপনি কথা বলছেন না কেন? আপনারা মেয়েরা খুব ভাল অভিনয় করতে জানেন। জানেন একটা মেয়েকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু মেয়েটার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেও করে নিল। দুই বছর আগে আজকের দিনেই ওর বিয়ে হয়েছিল। ওর বিয়ের দিন ভেবেছিলাম ওকে একবার ফোন দিব কিন্তু আর দিলাম না ফোন টা পানিতে ফেলে দিলাম। আর খোজ নেইনি, জানি সুখেই আছে। মেয়েটা আর কান্না আটকাতে পারল না। চিৎকার করে কাদতে শুরু করল।

-মি মিথিলা......মিথিলা তুমি? তু তুমি এখানে? কথা বল মিথিলা।
-তুমি ভুল জানো সাইফ। আমি এখন মিথিলা না মালা।
-এসব কি বলছ মিথিলা? তুমি কিভাবে এখানে বল আমাকে?
-এখন আর এসব জেনে লাভ কি?
-তুমি বল মিথিলা। ঘুমটা টা সরাও। মিথিলার ঘুমটা টা পরে গেল। এ কেমন রুপ মিথিলার। যেই মেয়েকে বলে একটু সাজাতে পারত না আজ তার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কড়া মেকাপ, মাথায় ফুল। এই কি সেই মিথিলা। আজ সে চিনতে পারছে না মিথিলাকে।
-সাইফ তোমাকে আমি খুব ভালবাসতাম।
-ভালবাসতে? এখন বাস না?
-এখন আর ভালবাসা। এখন তো প্রতিদিন ই ভালবাসা ভালবাসা খেলতে হয়।
-প্লিজ মিথিলা।
-সাইফ তোমাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পারিনি অন্য কারো বউ হতে। আমি বিয়ের দিন লুকিয়ে বাসা থেকে বের হই। তোমাকে ফোন দিয়ে দেখি তোমার ফোন বন্ধ। ফোন টা কি পানিতে ফালানো খুব জরুর ছিল? আমি একটা মাইক্রো ভাড়া করি। জানো আমার কাছে একটা টাকাও ছিল না, ভেবেছিলাম তোমার এখানে গিয়ে দিব। কিন্তু......

আবারো কাঁদতে শুরু করল মিথিলা, কথা বলতে পারছেনা মিথিলা।
-বল মিথিলা বল। তারপর ...
-তারপর আর কি তোমার কাছ পর্যন্ত যাওয়া হল না। জানো আমি চিৎকার করে বলছিলাম ভাই এইদিক দিয়ে না। এই রাস্তা না। ভাই কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন এটা আমার সাইফের কাছে যাওয়ার রাস্তা না.........

এরপর আর কিছু মনে নেই। আমার যখন হুশ আসে দেখি একটা ঘরের মাঝে পরে আছি হাত বাধা। জানো ওরা আমাকে দুইদিন খেতে দেইনি। জানো আমার না খুব কষ্ট হচ্ছিল। হটাত কয়েকজন আমার রুমে ঢুকল। তারপর...

তারপর শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার আর চোখের জল। এরপর আমার জায়গা হল এখানে। জানো আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। নাম রেখেছি তিতলি। মেয়েটাকে তো কখন বাবার পরিচয় দিতে পারব না কিন্তু আমি চাই না আমার মেয়ে টা বড় হয়ে আমার মত কোন এক মালা হোক। কিন্তু কি করব আমি?

আজ আমার এই অবস্থার জন্য এই সমাজ দায়ি। কিন্তু আমার এই মেয়েটাকে এই সমাজ কখনই মানবে না। এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই।
-মিথিলা ফিরে চল আমার সাথে। আমি তোমাকে এখনও অনেক ভালবাসি।
-না সাইফ এখন আর হয় না। এখন আমারা দুইজন দুই জগতের। সাইফ আমার একটা কথা রাখবে? আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবে। বাবার পরিচয় দিয়ে বড় করবে?

পাঁচ বছর পর......

-বাবা এই নাও তোমার পানি।
-মেয়েটা একদম ওর মায়ের মত হয়েছে। সেই মুখ। গালে সেই এক ই তিল।
-বাবা জানো আমি স্কুল থেকে আসার সময় একটা আন্টি আমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে। কিন্তু কোন কথা বলে না। কে বাবা?
-কেও না মা।
-জানো বাবা অ্যান্টির গালে একটা তিল আছে ঠিক আমারটার মত।
-তিতলি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সাইফ। এই কান্নার অর্থ জানে না এই ছোট্ট তিতলি।

অতঃপর শুভ্র মেঘ

অতঃপর শুভ্র মেঘ
লিখেছেনঃ মেঘলা কাব্য

এই এত জোড়ে হাঁটছ কেন?..ধ্যাত একটু আস্তে হাঁটো না,আমি তো শাড়ি পরে এত দ্রুত হাঁটতে পারছি না,মেঘার এমন অভিযোগ এ :ভাবনার তারগুলো যেন কাটা পরল পিছনে ফিরল শুভ্র...মেঘা হেঁটে আসছে ধীরে,আবার যেন চিন্তগুলো ঘিরে ধরল ওকে... নিজের মনেই ভাবতে থাকল মেয়েটাকে এত ভালবাসল কখন.. মেয়েটাকে যে সবসময় আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ওর যেন কোন আধাঁর ওকে স্পর্শ করতে না পারে,আজ সকাল থেকেই বুকে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছে শুভ্র ব্যাথা টা হটাত্ একটা কাঁপুনি দিল যেন..নাহ্ এসব কি ভাবছে সে এভাবে নিজেকে দূর্বল করতে চায় না সে ...মেঘা একেবারে কাছে চলে এসেছে...আজ ও একটা নীল শাড়ি পরেছে,নীল শাড়ি তে যে ওকে এত মানায় তা আগে তো দেখা হয়নি.. এই আকাশ টা মেঘলা, কিছুটা ভারী কন্ঠে বলে উঠল মেঘা..আজ মেয়েটা যেন অনেকটা বড় হয়ে গেছে তবে মেঘার সরল পাগলামি তেই যেন মেঘাকে মানিয়ে যায় তাই কিছুটা যেন অপরিচিত লাগল ওকে.. মেঘা আবার বলল চুপ কেন? কই না তো..সরল উত্তর শুভ্রর।মেঘা আবার বলল আকাশে অনেক মেঘ করেছে,কেন বল তো.. প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেঘা..হয়ত আজকের জন্য,কথাটা বলে মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকে শুভ্র..মেঘা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল.. এরকম টা যে মেঘা করবে তা জানত শুভ্র.. শুভ্র জানে মেঘা কেন মুখ ফিরাল..কিন্তু তার জানার কথা মেঘাকে বুঝতে দিতে চায় না সে..তাই আবার বলতে লাগল, আকাশ টা আজ অনেক কষ্ট পাচ্ছে.. কেন জান, এতদিন কতনা স্মৃতি সঙ্গী ছিল এই আকাশটা,হেসেছে রৌদ্র হয়ে,কেঁদেছে বৃষ্টি হয়ে.. কত মন খারাপের গোধূলি তে হেঁটেছি তোমার সাথে.. আজ আবার ও কাঁদবে, বলে ওঠে মেঘা,এতখন চুপ করে ছিল ও... কথা শেষ করতে না পেরে শুভ্র তাকায় মেঘার দিকে..মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে বঝল শুভ্র.. অনেক ক্ষন চুপচাপ থাকে ওরা,,

শোন,তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে বুঝলে, নিজেকে কষ্ট দেব্ না,, নিরবতা ভাঙে শুভ্র.. আমার কথা ভেবো না.. আমি ভাল থাকব, নিজের খেয়াল রেখো তুমি..আনতমুখে কথাগুলো বলল মেঘা..এই তোমার হাত টা দাও না,ছুঁয়ে দেখব শেষবারের মত.. শুভ্র র চোখে আকুতি দেখতে পায় মেঘা..কিছু একটা বলতে যেয়ে ও বলতে পারে না মেঘা....

ওরা হাঁটছে অনেক ক্ষন.. মাঝেমাঝে দুজন দুজনার দিকে তাকাচ্ছে..আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে পাছে ধরা পরে যায়..

এই যা বৃষ্টি চলে এল..কথাটা বলেই মেঘার দিকে তাকায় শুভ্র..অবাক হযে় দেখল মেঘার সেই বৃষ্টিবিলাসী পাগলামি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে.. -মেঘা -হুম -তোমার বৃষ্টির বিলাসিতা কোথায় গেল.. চুপ থাকে মেঘা..কিছুক্ষন পর বলে ইচ্ছে করছে না.. কিছু বলে না শুভ্র.. আমাদের রাস্তা চলে এসেছে বলে শুভ্র.. -ভাল থেকো ,বলে মেঘা.. শুভ্রকে র কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হেঁটে যায় মেঘা,ও জানে শুভ্র তাকিয়ে আছে.. তাই সে তাকাবে না.. তাকিয়ে আছে শুভ্র মেঘার যাওয়ার পথে.. ও জানে মেঘা ফিরে তাকাবে না, তাই তাকিয়ে থাকতে সমস্যা নেই.. হাঁটছে মেঘা,অসম্ভব মায়াবী লাগছে ওকে.. আর তাকাতে পারে না সে.. কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে সব.....

(কিছু ভালবাসা পূর্নতা পাওয়ার আগেই হারাতে হয়,বাস্তবতায় চাপা পরে এমন অনেক মূহুর্ত, বেজে ওঠার আগেই কেটে যায় এমন অনেক অনুভূতির সুর...)

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

ছিলে মোর প্রথম সখা ...

ছিলে মোর প্রথম সখা ...
লিখেছেনঃ Pradyut Baran Chowdhury

বুকের উপর বিশাল জলাভূমি, ভয়ে কাঁপছি নানাভাই যদি ওখান থেকে পড়ে যায় ! আম্মুকে চিতকার করে ডাকছি । আম্মু শুনতে পাচ্ছেনা, বাইরে তুমুল বৃষ্টি । তাই আমিও যেতে পারছিনা নানাভাইকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য, নানাভাইয়ের লাঠিটা হঠাৎ নড়ে উঠল । আরেক পশলা ভয়, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম । নানাভাই… নানা… নানা ভাই……

আম্মু আমাকে স্বাভাবিক করার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর আমি নানা ভাইয়ের জন্য কেঁদেই যাচ্ছি। নানা মারা যাবার পরে প্রায়ই আমি এই দুঃস্বপ্ন টা দেখি । আমি তখন সাড়ে তিন বছরের, আমার ভাই তখন আম্মুর পেটে। আম্মুর পুনরায় জন্মধারন আমার মানসিক পীড়া্র কারণ ছিল । আমি তখনও বুকের দুধ না খেয়ে ঘুমাতাম না । আমাকে নিয়ে তাই নানী্র বাড়ীমুখী হলেন আম্মু । আমাদের বাড়ী থেকে সেখানে যেতে দুমিনিট সময় লাগে । এরপরে মেজমামা ছোট মামা নিয়ে ব্যস্তই থাকতাম একরকম । কিন্তু গোল বাধল, যখন দুই মামা মিলে বাইরে পড়তে চলে গেলেন ।

আম্মু প্রতিদিনের মত সকাল-বেলাতেই আমাকে নানার বাড়ীতে প্রেরন করলেন । বাড়ীতে শুধু অসুস্থ নানাভাই আর নানী । আমার স্থান হল নানার রোগশয্যার পাশে । আমার ছোট্ট মনে তখন এক পৃথিবী প্রশ্ন , এই মানুষটা সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন কেন ? হাঁটেন না কেন ? বাইরে বের হন না কেন ? সবার সঙ্গে বসে খান না কেন ? কারু বাসায় বেড়াতে যান না কেন ? কটর কটর করে সব নানাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম । সেই থেকে নানা ভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্যতার শুরু, আজো নানা আমার কাছে তেমনি প্রিয় একটি মানুষ । নানা একটু একটু করে সুস্থ হতে লাগলেন ।

আমাদের খেলাঘর তখন নানার রোগশয্যা শেষ খড়েড় গাদার উপরে । সারাদিন কি যে গল্প, সেই গল্পের ও কোনো শেষ ছিলনা । রাজা-রানী সুখে ঘর করতে লাগলেন, এরপরে কি নানাভাই ?? নানাভাই হেসে বলতেন এরপরে একদিন তোকে আমার সঙ্গে ওদের ওখানে যেতে বললেন । আমি তখন অভিমানে বলতাম তুমি আমাকে নিয়ে যাওনি কেন ? দিঘী্র জল তখন পাড় পেরিয়ে রাস্তায় ওঠার চিন্তায়, বর্ষাকাল এসে সেটাকে আরেকধাপ উতসাহিত করেছিল । আমি জানালার ধারে বিছানায় বসে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম, মনটা খুব খারাপ আমার । বৃষ্টির দাপটে পরাজিত হয়ে আজ আম্মু আমাকে নানাবাড়ীতে পাঠাতে ব্যার্থ হয়েছেন ।

হঠাৎ নানাভাইয়ের কন্ঠে আমার নাম শুনে চমকে যাই !! রাস্তায় তাকিয়ে দেখি দূর্বল পায়ে লাঠি হাতে নানা এঁটেল মাটির অমসৃ্ন পথ মাড়িয়ে আমাদের বাড়ীর দিকে আসছেন । আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসলাম । আম্মু বাইরে গিয়ে তাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন । সারাদিন আমি আর নানা অনেক গল্প করলাম । নানা আবার অসুস্থ, ঘোড়া হয়ে আমাকে আর পিঠে নিয়ে টগবগ করে ছুটতে পারছেন না । আমি কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করছি, নানা আজকি আমরা ঘোড়া ঘোড়া খেলবনা ??? নানী এসে বললেন মানুষটাকে এত বিরক্ত করিস কেন ? তারপর পুরো দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা নানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাটিয়েছিলাম ।

আম্মু আমাকে আর নানার কাছে পাঠায়না, নানা আর আমাকে নিয়ে খেলতে পারবেন না, উনি অসুস্থ । সেই ঈদের দিনটা আমার মানসপটে আজোবধি জ্বলজ্বলে । আমার ভাই কয়েকদিন আগে আম্মুর পেট ছেড়ে বাইরে বের হয়েছে ! ওকে সহ্য করতে পারছিনা, সারাক্ষণ ওকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকে । নানা ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে একটা মোটর গাড়ীর পেছনে বসে । আমার ভাইকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিতে গেলেন তিনি । আমি আমার ভাইকে সরিয়ে নানার কো্লে বসে বলতে লাগলাম, তুমি ওকে কোলে নেবেনা, ওকে সবাই খুব আদর করে ভালবাসে আর আমাকে কেউ এখন আদর করেনা । তুমি ভাল হয়ে গেছ, আবার আমার সঙ্গে খেলবেনা ?

নানা মুচকি হেসে বললেন, তুই যখন অনেক বড় হয়ে যাবি তখন আমাকে মনে রাখবি তো রাজকন্যা ? আমি নানার কথায় অস্বীকৃতি জানিয়ে বললাম, তুমি দেখ আমি কখনোই বড় হবনা, আমি শুধু তোমার সঙ্গেই খেলব । নানা আর দেরি করেনি, গাড়ী ছেড়ে দিল ড্রাইভার ।

আম্মু আমাকে এক হাতে টেনে ধরে রেখেছেন, নানা চলে যাচ্ছে, আমি কাঁদছি । আমার ভাই এর বয়স পনের দিন । আম্মু সকাল থেকে খুব কাঁদছেন, নানাবাড়ীতে মানুষের ঢল । সবাই বলছে নানা মরে গেছে । আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, নানা মরলে কি কিছু হবে ? আম্মু আরও জোরে কেঁদে উঠলেন । ছোটমামাকে সবাই অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে এনে মাথায় পানি ঢালছে । আমি আসলেই বুঝলাম না সবাই এরকম আচরন করছে কেন ?

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে যাচ্ছে, আমি একা একা চুপি চুপি নানাকে এঘর থেকে ওঘরে খুঁজে চলেছি । কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছেনা দেখে কাউকে জিগ্যেস করতে পারছিনা, নানা কোথায় ? পেয়ে গেলাম আব্বুকে আর জিগ্যেস ও করলাম ।

তিনি বললেন, নানাকে মাটির নিচে রেখে চলে এসেছেন, উনি আর কোনদিন উঠে আসবেন না । আমি রাগে আব্বুকে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগলাম, আম্মুর কান্না আরও বেড়ে গেল । আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, নানার রুপকথার রাজকন্যাও বড় হয়েছে । শুধু ছেলেবেলাটা ছেলেবেলায় রয়ে গেছে ।

নানাভাই প্রায় পনের বছর আগে আমাকে সাথী হারা করে চলে গেছে । আমার প্রথম সখা আমার নানাভাই, যার অনুপস্থিতি আজো আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্ন । ভালবাসি কথা টা বোঝার আগেই আমি নানার বিরহে বিরহিনী হয়ে গেছিলাম । সময় দ্রুত চলে গেছে, টের ই পায়নি । নানার সঙ্গে খড়ের গাদার উপর বসে শোনা গল্প গুলো মনে নেই, নানার চেহারা টাও স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে ম্লান হয়ে গেছে অনেকটা । কিন্তু দৃশ্য গুলো এখনো জীবন্ত মনে হয় ………………

নানার সঙ্গে কখনো যদি দেখা হয় তাহলে বলে দেব, “নানাভাই, তোমার সেই রাজকন্যা কোনদিন তোমাকে ভোলেনি, তুমি যে তার প্রথম সখা ! যেখানেই থেক, ভাল থেক !!!’’