আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

অভিমান অতঃপর ভালবাসা

অভিমান অতঃপর ভালবাসা
লিখেছেন- sesh rater adhar

- এইটা কি চা না সরবত?
মনে হইতেছে ফ্রিজ থেকে চিনির সরবত বের করে দিছিস। তুই মানিক দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিস। আর এইটা রুটি? এত শক্ত কেন? মনে হয় ইট চাবাচ্ছি মুখের ভিতর দিয়ে। বাসি রুটি দিস আমাকে ? যা আজ তোকে কোন টাকা দিব না।
সকালের ব্রেকফাস্ট করছে স্পর্শ। কথাগুলো বলছে দোকানে বসা মানিককে। গত ৩ মাস ধরে এই মানিকের দোকানেই সকালের নাস্তাটা করছে স্পর্শ। এলোমেলো চুল, ময়লা শার্ট প্যান্ট, চোখে চশমা। দেখে মনে হবে কোন বড় মাপের কবি সাহিত্যিক। আসলে তা না।কখনও ভেতর থেকে কোন লাইন বের হয়নি, কবিতা হিসেবে বা গল্পের সূচনা হিসেবে। শুধু মাত্র একটা সময় বাদে। আগে অনেক পরিপাটি হয়েই চলত। তখন মনে হত পৃথিবীর মেধাবী ছাত্রদের একজন স্পর্শ। তবে এই ধারনাটাও ভুল। পড়ালেখা সারাজীবনই খুব বাজে লাগত। ভাগ্য গুণে বা অস্বাভাবিক কোন কারণে বরাবরই রেসাল্ট মোটামুটি করে আসছে স্পর্শ। আসলে স্পর্শ পৃথিবীর কিছু না পারা ছেলেগুলোর একজন। তবে ইদানীং একটা জিনিস খুব ভাল পারে। মানুষকে বকতে। তবে খারাপ ভাষায় না। মুখ দিয়ে খারাপ ভাষা বের হয় না।
মানিকের কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। তাই চুপ করে শুনে কথাগুলো। বলে না কিছু। স্পর্শকে অনেক ভাল লাগে মানিকের। খুব আদর করে মানিককে স্পর্শ। যে আদর করে তার মুখে ২-১ টা বকা খারাপ লাগার কথা না।

চা এর কাপটা ফেলে রেখে চলে গেল স্পর্শ। কিছুক্ষণ আবার ফিরে এসে টাকাটা দিয়ে গেল। ভালবাসার মানুষের উপর রাগ করে থাকা খুব কঠিন। মানিককে আদর করে তাই টাকাটা দিয়ে গেল ভালবেসে।
ধানমণ্ডি লেক এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্পর্শ। পছন্দ মতন কাপল খুঁজছে। গত কয়েকদিন ধরেই একটা কাজ করে স্পর্শ। প্রেমহীন জীবনে অন্য কারও প্রেম সহ্য হয় না। তাই এই কাজ করা। হ্যাঁ, পছন্দ মতন কাপল পেয়ে গেছে। লেকের পাড়ে দেয়ালের উপর বসে আছে দুজন। দুজনের মুখই হাসি হাসি। ভালবাসার চরম মুহূর্তে আছে তারা এখন। হাতটা ধরে আছে দুজন দুজনার। একটু নির্জনে বসেছে দুজন। ২ জন যেখানে বসে আছে সেখানে গিয়ে বসল স্পর্শ। মেয়েটার পাশে। দুজনের ভালবাসার আবেগে ব্যাঘাত ঘটল। স্পর্শ পকেট থেকে একটা গ্যাসলাইট আর বিড়ির বের করল। সিগারেট না বিড়ি।
কাপলদের ছেলেটা বলল - excuse me, ভাইয়া। কি এখানে? আপনি এসে এখানে বসেছেন কেন?
- বিড়ি খাবো ।
- বিড়ি খাবেন ভাল। কিন্তু এখানে কি?
- আমার এখানেই খেতে ইচ্ছা করছে। চারপাশটা অনেক সুন্দর। বিড়ি খাওয়ার জন্য একদম perfect. ভাব না আসলে কি খেয়ে মজা বলেন?
- আমরা এখানে বসে আছি আপনি দেখেন নি ?
- দেখেছি। আপনারা বসে আছেন তাতে আমার কি? আপনারা এখানে বসে আছেন মানে তো এই না যে আমি এখানে বসতে পারব না। এটা public place. সবার অধিকার সমান। আপনাদের পাশে বসে আমার বিড়ি খেতে সমস্যা না হলে আপনাদেরও হবে না। চালিয়ে যান।
বিড়িটা ধরাল স্পর্শ। উহহ, কি বিচ্ছিরি গন্ধ। কাপলদের মেয়েটা নেমে আসলো নিচে। ছেলেটার হাত ধরে বলল- চল, এর সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। আমরা অন্য কোথাও বসি।
দুজন একসাথে চলে গেল। যাবার আগে একটা কিছু বলে গেল যা স্পর্শর কান পর্যন্ত যায়নি। স্পর্শ এখন আনন্দে আছে। ওর কাজ সফল। বিড়িটা পুড়ে যাচ্ছে আর স্পর্শ দেখে যাচ্ছে। smoking করে না স্পর্শ। শুধু এই কাপলদের disturb করার জন্যই বিড়ি কেনা। জীবনটা অনেক এলোমেলো হয়ে গেছে। তবুও কিছু জিনিস এখনও মেনে চলছে স্পর্শ। কি কারণে জানে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, নাহ, যে আমার জীবনে নেই তার বারণগুলো কেন মানছি? তবে একটা উত্তরই আসে এই প্রশ্নের , মানো একটু। মানলে কি হয়? ভাল তো বাসই এখনও।
হ্যাঁ, ভালবাসে এখনও। মন থেকে কাউকে ভালবাসলে ভুলা যায় না। পৃথিবীর অসম্ভব কাজগুলোর একটা এটা। হঠাৎ খুব মনে পড়ছে আদ্রিতার কথা। মনে পড়ার পিছনে উপযুক্ত কারণও আছে। গত ২ দিন থেকে কল করছে আদ্রিতা। কিন্তু স্পর্শ ধরেনি। একটা সময় স্পর্শও অনেক কল করেছিল। ধরেনি আদ্রিতা। সব মনে আছে স্পর্শর। কিছু ভুলেনি। এখন আদ্রিতার ফোন কেন ধরবে? ৩ মাস চলে গেল। একবারও মনে করেছে? করেনি। স্পর্শকে ছাড়া থাকতে এত ভাল লাগে, থাকুক। পৃথিবীর সব মানুষের সব গুন থাকে না। থাকে কি? অবশ্যই না। হয়ত স্পর্শর মতন কারও ভিতর কোন গুনই থাকে না।
প্রেমের ৪ দিনের মাথায় আদ্রিতা বলেছিল - জানো আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে, মানুষ এত সুন্দর করে কবিতা লিখে কি করে? কবিতা পড়লে মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমি যদি অমন লিখতে জানতাম। অথবা আমার জন্য যদি কেউ লিখত। ওহ, কত্ত ভাল হত তাইনা বল?
- হ্যাঁ, অনেক ভাল হত।
- এই, তুমি আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবা?
- কি বল? তুমি বলছ আর লিখব না? এটা কোন ব্যাপার হল? বল কি টাইপ কবিতা লিখব?
- কি টাইপ মানে? আমাকে নিয়ে লিখবা, কি টাইপ জানো না?
- ও আচ্ছা। বুঝছি। just wait করো। আজ রাতেই পাঠাচ্ছি মেসেজ করে।
- সত্যি লিখতে পারবা তুমি?
- কেন পারব না? ভালবাসার মানুষের জন্য এইটুকু পারব না করতে?
আর কিছু বলার আগেই স্পর্শকে জড়িয়ে ধরল আদ্রিতা। জীবনে প্রথম কোন মেয়ের ছোঁয়া পেল এত কাছ থেকে স্পর্শ। হাত পা জমে যাচ্ছে। কিন্তু ভীষণ ভাললাগার একটা অনুভুতি হচ্ছে। যে অনুভুতি সারাটা জীবন ধরে পেতে ইচ্ছা করে। কখনও মনে হবে না, অনুভূতিগুলো বড্ড পুরাতন।
আদ্রিতা হাসি মুখে স্পর্শকে ছেড়ে দিয়ে বলল -আমার জন্য একটা করে কবিতা লিখবা আর একটা করে hug পাবা। বল তুমি প্রতিদিন এটা চাও না?
- হ্যাঁ, অবশ্যই চাই। সারাজীবন চাই।
রাতে খাতা কলম নিয়ে বসল স্পর্শ। সাথে কয়েকটা কবিতার বই। নাহ, কিছুই বের হচ্ছে না মাথা থেকে। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও না। ধুর। যে জীবনে কিছু লিখেনি, তাকে দিয়ে লেখা কি সম্ভব? সব কি সবাই কে দিয়ে হয়? না, হাল ছাড়া যাবে না। আদ্রিতা অনেক খুশি হবে ওর জন্য লেখা একটা কবিতা পেলে।
রাতের বেলা একটা মেসেজ আসলো আদ্রিতার মোবাইল এ। স্পর্শর দেওয়া। একটা কবিতা পাঠিয়েছে। ওহ। অসাধারণ। স্পর্শ এত সুন্দর করে লিখতে পারে? আদ্রিতার কি অনুভুতি হচ্ছে বলে বুঝানো যাবে না। জীবনের অনেক বেশি ভাল লাগার মুহূর্তগুলোর একটা এটা। কেউ ওকে নিয়ে কবিতা লিখেছে।
পরদিন থেকে প্রতিদিন কবিতা পাঠায় স্পর্শ। আর প্রতিদিন একটা করে hug পায়। জড়িয়ে ধরার সময়টুকু স্পর্শর কাছে সবচেয়ে মধুর সময় আর আদ্রিতার কাছে রাতের বেলা কবিতা পড়ার সময়টুকু।
পহেলা বৈশাখ। আজ সারাদিন ঘুরবে দুজন। আদ্রিতা শাড়ি পরে আর স্পর্শ সেই ছাগলের মতন একটা ফুল হাতা শার্ট পরে। এত করে বলল একটা পাঞ্জাবি পরতে। না তিনি শার্টই পরবেন। পহেলা বৈশাখে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিল আদ্রিতা। ১০ টা মেসেজ। সবগুলো পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুরা পাঠিয়েছে। সবার আগে স্পর্শর sms টা পড়ল। বাহ, অনেক সুন্দর একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। অসাধারণ। ছেলেটা অনেক ভালবাসে আমাকে। কত সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে আমার জন্য। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই চোখ পড়ল আর একটা sms এর দিকে। তুলি পাঠিয়েছে। বুকের ভিতরটায় ধক করে উঠল। কি করে সম্ভব এটা? তুলি আর স্পর্শ একই sms পাঠিয়েছে। অসম্ভব এটা। ঘুমের ঘোরে আবল তাবল দেখছে কিনা। তাই আবার চেক করল আদ্রিতা। না ঠিকই তো আছে। তুলি আর স্পর্শ একই এসএমএস পাঠিয়েছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? আদ্রিতা ফোন করল স্পর্শকে। ঘুম জড়ানো গলায় ফোন ধরে বলল- হ্যালো, লক্ষ্মী। কেমন আছো? শুভ নববর্ষ।
- শুভ নববর্ষ।তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। সত্যি কথা বলবা?
- আমি কখনও মিথ্যা বলি? বল কি জিজ্ঞাসা করবে?
- তুমি কি তুলিকে কোন এসএমএস করছ?
- তুলি? তুলি যেন কে?
- আমার ফ্রেন্ড। কাল আমি যার নাম্বার থেকে কল করেছিলাম তোমাকে। আমার মোবাইল এ টাকা ছিল না।
- নাতো। আমি কেন ওকে এসএমএস দিব? ওর নাম্বার তো আমি সেভ ই করি নায়। আর কল হিস্ট্রি থেকেও নাম্বার দেখি নায়।
- সত্যি তো?
- হ্যাঁ, কেন কি হইছে?
- আচ্ছা তুমি রাখো এখন। আমি পরে কল দিচ্ছি।
আদ্রিতা কল কেটে তারপর তুলিকে ফোন করল। তুলি যা বলল টা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ছিঃ, স্পর্শ এমন? ভাবতেই খারাপ লাগছে। আর একবার কল করল স্পর্শকে।
- তোমার লেখা কবিতাটা অনেক সুন্দর হইছে।
- ওটা তো সবসময়ই। লিখতে লিখতে এখন মান অনেক ভাল হয়ে গেছে। যদিও কষ্ট হয় লিখতে একটু । তাও তোমার hug পাওয়ার পর আর থাকেনা কষ্ট। সব ভুলে যাই।
- হ্যাঁ, আমি রাখি এখন। আর কষ্ট করতে হবে না তোমাকে।
কল কেটে দিল আদ্রিতা। খুব কষ্ট হচ্ছে। এতদিন কাকে ভালবেসেছে আদ্রিতা? ছিঃ, নিজের উপর খুব অভিমান হচ্ছে। চাপা কষ্টগুলো কেঁদে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু পানি পরছে না চোখ দিয়ে। খুব বেশি কষ্ট পেলে এমন হয় আদ্রিতার। হয়ত কষ্টগুলো আরও বাড়ানোর জন্য।
মোবাইল স্ক্রিনে চোখ পরল। স্পর্শ কল করে যাচ্ছে। ধরছে না আদ্রিতা। এরপরও কি সম্ভব? অবশ্যই না। এরপর থেকে আর কোনদিনই কল ধরেনি আদ্রিতা। অন্য কোনভাবেও যোগাযোগ করতে পারেনি স্পর্শ। কিন্তু গত ২ দিন ধরে কল দিচ্ছে কেন আদ্রিতা? কি দরকার?
বিড়িটা পুড়ে শেষ হয়ে হাতে যখন একটু আঁচ লাগল তখন ফেলে দিল বিড়িটা স্পর্শ। চশমাটা বড় ঝাপসা লাগছে। গ্লাস পুরাতন হয়ে গেছে না চোখের বৃষ্টি? ভাবতে ভাবতে ঝাপসা চোখে খুব পরিচিত কাউকে আসতে দেখছে স্পর্শ। সবুজ রঙের শাড়ি পরে আসছে। চশমা খুলে তাকাল। সবুজ রঙে সবাইকে মানায় না। কিছু কিছু মানুষকে সব কিছুতেই মানায়। আদ্রিতাকেও। তাই দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। পাশে এসে ক্লান্ত মুখে বসল আদ্রিতা। বিশ্বাস হচ্ছে না। আদ্রিতা এখানে। কি করে আসবে? জানবেই বা কি করে স্পর্শ এখানে?
- বাহ, খুব উন্নতি। সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিছ। ভাল। খাও। কি আর করবা!!!
কথাগুলো বলে স্পর্শর দিকে তাকাল আদ্রিতা। সেই ভালবাসাময় চোখে। তবে আগে ছিল শুধুই ভালবাসা আর এখন ভালবাসার সাথে ক্লান্তি। আর সেই ক্লান্তি থেকে মুক্তির আকুলতা।
- এটা সিগারেট না। বিড়ি।
- ঐ একই হল। খাচ্ছ তো?
- না। smoking করি না। এমনি কিনেছিলাম। কিন্তু তুমি এখানে আসলে কি করে? জানলে কিভাবে?
- জেনেছি যেভাবে হোক। সব তো সবাইকে বলে বেরাও। জানাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। মোবাইল ধর না কেন? কি, নতুন কাউকে পেয়ে গেছ? কবিতা শুনাও না তাকে? আমার সাথে কথা বললে সে রাগ করবে? এই যে পাগলের মত চল, সে একটুও খেয়াল রাখে বলে তো মনে হয় না। বল মোবাইল ধরলা না কেন?
স্পর্শ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কত রাগ ছিল আদ্রিতার উপর। ভেবেছিল, যদি আর কখনও দেখা হয়, কথা হয়, ইচ্ছা মতন কথা শুনিয়ে দিবে।সব রাগ অভিমান ঝাড়বে আদ্রিতার উপর। কিন্তু এখন কি হল? মনে হচ্ছে সামনে সেই ৩ মাস আগের আদ্রিতা বসে আছে। যে প্রতিদিন একটা কবিতার বিনিময়ে একবার করে জড়িয়ে ধরত। চুল আঁচড়ে দিত। শাসন করত। ছাগল বলে ডাকত। একবারও মনে হচ্ছে না টানা ৩ টা মাস মেয়েটা ইচ্ছা করে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। অশ্রু ছল ছল চোখের দিকের তাকিয়ে সব রাগ ভুলে গেল স্পর্শ। নিজের দোষ স্বীকার করে বলল- sorry. ভুল হয়ে গেছে। অনেক অভিমান ছিল তোমার উপর, তাই ধরি নায়। নতুন কেউ, পুরাতন কেউ, সব তুমিই। তুমি ছাড়া কাউকে ভালবাসা সম্ভব না। চেষ্টাও করিনি কখনও। আর খেয়াল রাখার মানুষ রাগ করে চলে গেলে আমি কি করব? এমন এলোমেলো তো থাকবই।
- চুপ, এসব কথা বইলো না। তোমার মুখে এসব মানায় না। তুমি আমাকে কখনও ভালবাসনি। বাসলে এমন করতে পারতা না। কিন্তু আমি কি করব? আমি তো সত্যি সত্যিই ভালবেসেছিলাম তোমাকে। কত চেষ্টা করলাম ভুলে যেতে। পারলাম কই? ঐ ঠিকই চলে আসলাম। যাকে একবার মন থেকে ভালবাসা যায়,তাকে ভোলা যায় না। তুমি বুঝবা না। তুমি কাউকে ভালবাসতে পার না। তোমার কাছে ঐ একটু জড়িয়ে ধরা তাই ই বড়। ভালবাসা না। মানুষের মনও না। আমি সত্যি অবাক হয়েছিলাম তোমার আর তুলির একই এসএমএস দেখে সেদিন। পরে তুলি বলল ঐ এসএমএস ও ইন্টারনেট থেকে পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি নায়। পরে ও আমাক লিঙ্ক দিল। আমি দেখলাম। জানো আমি এত কষ্ট কখনও পাই নায়। যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসি সে আমাকে এভাবে ঠকাবে আমি ভাবতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি? অন্য মানুষের কবিতা নিজের বলে চালিয়ে দিতে আমার কাছে, শুধু একটু জড়িয়ে ধরব এই লোভে। ছিঃ। সত্যি করে বলতো প্রথম দিকের কবিতাগুলো কার লেখা ছিল?
- আমি কয়েকটা বই থেকে মিলিয়ে মিলিয়ে কবিতা লিখতাম। সত্যি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি অনেকগুলো রাত জেগেছি শুধু একটা কবিতা লেখার জন্য। পারি নায়। সবাই সব পারে না। আমিও পারি নায়। কিন্তু বড্ড বেশি ইচ্ছা করত তোমার হাসি মুখটা দেখতে। তুমি একটু খুশি হবে তাই ঐ মিথ্যাটা বলা। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরবা এই লোভে না। হ্যাঁ জানি ব্যাপারটা উচিৎ হয়নি। তারপরও ভালবাসার মানুষটার একটু হাসি মুখ দেখতে কার না ইচ্ছা করে বল? আমি তোমাকে ভালবাসি এখনও। এই ৩ টা মাস আমি কাঁদছি। আর কাঁদতে চাই না। please, লাস্ট বারের মতন মাফ করে দাও। তুমি চলে যাবার পর খুব কষ্ট হত। একদিন খাতা কলম নিয়ে বসলাম। খুব কষ্ট নিয়েই। একটা কবিতা লিখে ফেললাম। জানি না কি করে। পরে আর কখনও চেষ্টা করিনি। পকেটে সেই কবিতা নিয়ে এখনও ঘুরি আমি। যদি কখনও তোমাকে দেখাতে পারি। দেখবে না বল? আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে না, শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না।
উত্তরের আশায় চেয়ে আছে স্পর্শ। চোখ দিয়ে পানি পরছে আদ্রিতার। হয়ত কষ্ট হচ্ছে না খুব। আনন্দ হচ্ছে। কষ্ট হারানোর আনন্দ। হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কিছু ফিরে পাবার আনন্দ।
- যাব না ছেড়ে। কবিতা বল।
পকেট থেকে কাগজটা বের করল স্পর্শ। ঘামে ভিজে গেছে কাগজটা। আদ্রিতা কিছুই বুঝছে না কি লেখা। কিন্তু স্পর্শ ঠিকই পড়ে যাচ্ছে। হয়ত আগেও অনেকবার পড়েছে নিজের লেখা প্রথম কবিতা।
- "" হারিয়ে যখন যাব আমি
ধরব না আর হাত,
আমায় ছাড়া একলা রাত
হবে তোমার প্রভাত।
জড়িয়ে তোমায় ধরবে না কেউ
দিবে না কেউ চুম,
চুপিচুপি ডাক দিয়ে কেউ
ভাঙাবে না ঘুম।
কাটবে তোমার একলা দিবা
কাটবে একলা নিশি,
আমায় ছাড়াই ঐ আকাশে
দেখবে একা শশী।
নদীর জলে পা ভিজিয়ে
থাকবে একা বসে,
হাতটি থাকবে না কেউ
আর তো তোমার পাশে।
কুড়িয়ে ফুল এনে তুমি
দিবে কারে বল?
দুঃখ তোমার ভুলাবে কে
যখন আঁখি ছলছল।
তোমার কোন কাজে আর
করবে না কেউ বারন,
বল গো হায় তখন তুমি
করবে কারে মিষ্টি শাসন?
একটু হেসে ভাঙাবে কে
বল না তোমার অভিমান?
আবল তাবল বলে আর
কে ভরাবে প্রাণ?
মন খারাপ করে যখন
নীরব থাকবে তুমি,
হাজার বার ভালবাসি বলে
কে করবে আর পাগলামি?
ছেড়ে তোমায় গেলে চলে
আমি চিরতরে,
আমায় ছাড়া তুমি বল
রবে কেমন করে?
কাঁদো যদি তুমি
কে থামাবে তখন?
আমার ছায়া থাকবে না'ক
তোমার পাশে যখন।
নতুন কেউ আসলে কি গো
জড়িয়ে নিবে তারে?
নাকি আমার স্মৃতি বুকে
রাখবে সারাজনম ধরে? ""
অবাক হয়ে কবিতা শুনছে আদ্রিতা। কবিতা শেষ করে তাকাল স্পর্শ আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা একটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরল স্পর্শকে। অনেক বেশি ভালবেসে। দুজনেরই মনে হচ্ছে অনেক দিনের চাপা কষ্ট হারিয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে এইটুকু স্পর্শের অপেক্ষায় ছিল দুজন। আদ্রিতা জড়িয়ে ধরা অবস্থাই বলল- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সত্যি। আমিও তোমাকে ভালবাসব তুমিও আমাকে বাসবে। আর অমন মানুষের কবিতা আমাকে শুনাবা না। এই যে কত সুন্দর লিখতে পার।তুমি আবল তাবল যাই লিখ ভাল লাগবে। এই smoking করো নাতো?
- এইটা কিন্তু আমিই লিখছি। নাহ, একদমই করি না। smoking করলে কবিতার ৬ নং লাইন এর জিনিসটা আমাকে করতে দিবে না আমি জানি।
- মনে থাকে যেন। আর আমি চলে আসছি আর এমন এলোমেলো, পাগল পাগল থাকবা না। ঠিক আছে? আর শুনো, তোমার তোমার কবিতার নাম দিবা " অবুঝ অভিমান" ।
- আচ্ছা।
দুজন দুজনকে কতটা ভালবাসে জানে না দুজনের কেউ ই।আদ্রিতা অনেক বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে স্পর্শকে। আশে পাশে কে আছে জানে না, বা তার দিকে খেয়াল নেই। স্পর্শ ভাবছে অন্য কথা। কতক্ষণ আগে যেই couple দের disturb করল, তারা না আবার বিড়ি নিয়ে এসে ওদের disturb করা শুরু করে। এই ভালবাসার মুহূর্তটাকে আর হারাতে চায় না স্পর্শ।

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা
লিখেছেন- Sesh rater adhar

রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগটা বের করল সিফার। হাতটা ধরে বাধা দিল নীরা।

- এই আমি দেই। আমার কাছে ভাংতি আছে। মানিব্যাগ রেখে দাও।
- আমার কাছেও ভাংতি আছে।
- চুপ। কম কথা বল। আমি দিচ্ছি না? এত কথা বল কেন?

সিফার চুপ করে মানিব্যাগ রেখে নীরার দিকে মুখ তুলে তাকাল। নীল রঙের একটা ড্রেস পরে আছে নীরা। দেখেই বোঝা যায় অনেক দামি ড্রেস। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নীরার পাশে নিজেকে মাঝে মাঝে খুব বেমানান লাগে। সিফারের জুতা জোড়াও ছেঁড়া। নিউ মার্কেট এর সামনে থেকে সস্তায় কিনেছিল জুতা জোড়া। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই শেষ। সেই কবে থেকে একই জামা কাপড় পরে দেখা করে সিফার। আর নীরাকে এখন পর্যন্ত এক ড্রেস ২ দিন পরতে দেখেছে বলে মনে হয় না। এমন কি জুতাগুলোও মনে হয় প্রতিদিন নতুন নতুন। নীরা কখনও জিজ্ঞাসা করেনি প্রতিদিন একই ড্রেস পরে আসে কেন? করবেও না কখনও। কিন্তু সিফার নিজে থেকেই বলে - জানো? আমার এই জামাটা অনেক প্রিয়। খুব ভাল লাগে জামাটা পরতে। জামাটা পরলে নিজেকে হিরো হিরো মনে হয়। দেখ দেখ, এখনও কালার একদমই ডিসকালার হয়নি। সেই আগের মতই আছে।

নীরা হাসে কথাগুলো শুনে। আর বলে - আসলেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে এই ড্রেস এ।

মেয়েটা অনেক ভাল। সব কিছু কত সহজে মেনে নেয়। ভাবতেই ভাল লাগে। ইচ্ছা করলেই সিফার এর চেয়ে অনেক ভাল ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে। কিন্তু না, এই অপদার্থের সাথেই পড়ে আছে। মেয়েটা একটু বোকাও মনে হয়। তবে নীরা ভাবে সিফার অনেক বোকা। দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝে না ছেলেটা। বোকা হোক, পাগল হোক, অসম্ভব সুন্দর একটা মন আছে সিফার এর। তাতেই চলবে। বেশি কিছু দরকার নেই।

রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে দেখে সিফার হাত ধরে থামাল নীরাকে। থামিয়ে বলল - কই যাও?
- সকাল থেকে কিছু খাইছ বলে তো মনে হয় না। ঘুম থেকে উঠেই চলে আসলা। চল কিছু খাওয়া দাওয়া করে আসি।
- না। খেয়ে আসছি সকালে। এখন ক্ষুধা নাই।
- আবার মিথ্যা বলে। আমি মোবাইল দিলাম আর চলে আসলা। আর বলে কি খেয়ে আসছি।
- এই রেস্টুরেন্টেই যাবে?
-হ্যাঁ।
- আসলে কি জানো, তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে। বলব কি করে বুঝছি না।
- এত লজ্জায় লাল হবার কিছু হয়নি। ছেলে মানুষ, এত লজ্জার কি আছে? বল কি হইছে?
- আমার loose motion কাল রাত থেকে। এর মধ্যে যদি এই ফাস্টফুড খাই, নির্ঘাত মারা যাব। এমন কি রেস্টুরেন্টেও কাজ করে দিতে পারি।

নীরা নাকটা উঁচু করে সিফারের দিকে তাকাল। পরক্ষনেই স্বাভাবিক হয়ে বলল - ছিঃ , কি সব কথা বল তুমি। loose motion মানে? সকাল থেকে তুমি আমার সাথে। একবারও তো যাও নায়।
- আসলে ব্যাপারটা হল, সকাল থেকে emotion এর মধ্যে আছি তো , তাই loose motion কাজ করছে না। তুমি পাশে থাকলে আমার emotion বেড়ে যায়।

নীরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- হইছে। খুব বুঝছি। এখন চল। আমি খাইয়ে দিব। so emotion এর মধ্যে থাকবা। loose motion এ প্রবলেম হবে না। চল।

সিফারের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নীরা। সিফার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নীরার সাথে গেল। আসলে loose motion না, পকেটের অবস্থা খুব একটা ভাল না। তাই আসতে চাচ্ছিল না সিফার। সত্যিই খুব সমস্যা চলছে ফ্যামিলিতে। বাসা থেকে যতটা সম্ভব বাহিরে থাকা যায়, তাই থাকছে সিফার। ঘরে এলেই এটা নাই, ওটা নাই, এই সমস্যা , ঐ সমস্যা, হাজারটা ঝামেলা। উফ!! বাবা খুবই কম বেতনের একটা চাকরি করেন। তার উপর কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। নিজেকে মাঝে মাঝে কাপুরুষ মনে হয়। পরিবারের কাছেও একটা অপদার্থ, নীরার কাছেও।

রেস্টুরেন্টে খাবার পর নীরা বলল - আমি বিলটা দিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে টাকা ভাংতি নাই তো। টাকাটা ভাংতি করা দরকার।

সিফার আবারও অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে। জমানো টাকাগুলো নিয়ে আসলেই হত। কিন্তু ঐ টাকা তো অন্য কাজের জন্য।

মেয়েগুলো হয়ত নীরার মত এত ভাল হয় না। এত সহজে সব কিছু মেনে নেয় না। নীরা জানে সিফারের ফ্যামিলিতে সমস্যা চলছে একটু। তাই একেকটা অজুহাতে সিফারের টাকাগুলো বাঁচিয়ে দিচ্ছে। বাসায় আসার ভাড়াটাও দিয়ে দিল নীরা। তখন খুব বেশিই লাগল নিজের আত্মসম্মানে সিফারের। তাই বলেই ফেলল নীরাকে - কি ব্যাপার ? কি শুরু করছ তুমি?আমার কাছে ভাড়া দেওয়ার টাকাটাও নাই নাকি? আমাকে এভাবে অপমান করার মানেটা কি ?

আবারও নীরা সেই মিষ্টি হাসি মুখে নিয়ে বলল- উহ। এত বুঝে ছেলেটা। বিয়ের আগ পর্যন্তই তো mutual খরচপাতি। বিয়ে হোক তারপর থেকে সব তোমার। আমার থেকে ১ টাকাও বের করতে পারবা না। জামাই হয়ে বউয়েরটা নিবা? তা হবে না। এখন তো ভালবেসে দিচ্ছি। আর তখন কিছু না পেলে ঝাড়ু দিয়ে পিটাব। বাচ্চাকাচ্চা বউ সংসার সব তোমাকেই দেখতে হবে। তুমি শুধু দিবা আর আমরা বসে বসে খাব। হি হি হি হি।

কি সরল হাসি মুখে। আর কিছু বলার পেল না সিফার। বাসে করে চলে আসল বাসায়। আসার সময় জানালা দিয়ে দেখল নীরা হাত নেড়ে যাচ্ছে এখনও। বাসের শব্দে শোনা যাচ্ছে না কি বলছে। হয়ত টাটা বাই বাই।

রুমে এসে ঢুকার পরই মায়ের ডাক,
- সিফার, সারাদিন থাকিস কই তুই? বলেও যাস না। তুই তো আগে এমন ছিলি না।

কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে সিফার। কথা বলতে গেলেই মায়ের সাথে ঝগড়া বেধে যাবে। ইদানীং খুব খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাচ্ছে। অল্প কিছুতেই রাগ উঠে যায়।

পরশু বার্থডে নীরার। জমানো টাকাগুলো বের করল সিফার। অনেক কয়েক মাস ধরেই জমাচ্ছে টাকাগুলো। রিকশাতে না গিয়ে হেঁটে গেছে। একটা কিছু খুব খেতে ইচ্ছা করল, না খেয়ে টাকাটা রেখে দিছে। অনেক দিনের শখ, একটা ভাল ব্রান্ড এর বডি স্প্রে কিনবে সিফার। কিন্তু তাও কিনেনি। আগে নীরার বার্থডেটা যাক তারপর। মেয়েটা অনেক ভাল। কখনও ভাল কোন গিফট দেয়নি সিফার। শুধু কিছু গোলাপ ছাড়া। কিন্তু সেই গোলাপ নিয়েই মেয়েটা কত খুশি। কখনও মুখ বাকিয়ে বলে না, তুমি তো আমাকে কিছুই দাও না।
অন্য মেয়ে হলে কবেই ভেগে যেত। সিফার টাকাগুলো গুনল। না খারাপ হয়নি। নীরাকে পিংক কালারের ড্রেস এ খুব মানায়। ওকে একটা সুন্দর দেখে ভাল পিংক কালারের ড্রেস কিনে দিবে সিফার। বার্থডে গিফট। অসাধারণ লাগবে সেই ড্রেস পরলে ওকে।
সিফার হঠাৎ হেসে উঠল। মনে পড়ছে যে সিফারের বার্থডেতে নীরা একটা কবুতরের বাচ্চা এনে সিফারকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল - Happy Birthday To You, জান। এই নাও, বার্থডে গিফট। তোমার গায়ে তো রক্ত কম। দেখেই বোঝা যায়। কবুতরের বাচ্চা রোস্ট করে খাবা। গায়ে রক্ত বাড়বে, শক্তিও বাড়বে। একটু তো মোটাসোটা হও।

এরপর নীরা ব্যাগ থেকে কত্তগুলা আপেল বের করে বলল- নাও, এগুলাও খাবা। শক্তি বাড়বে।

বাসায় এসে কবুতরের বাচ্চা মাকে দিয়ে বলেছিল- আম্মু, এটা রান্না কর। আমার বন্ধু এটা উপহার দিছে আমার জন্মদিনে। এটা খেলে নাকি অনেক শক্তি পাওয়া যায়, শরীরে রক্ত বাড়ে।

এরপর ঘরে এসে এক এক করে সবগুলো আপেল একসাথে খেয়েছিল সিফার। ১০ টার মতন হবে। সবগুলো। শক্তি বাড়াতে হবে শরীরে তাই।
নীরা এত কিছু দিল। আর নীরাকে একটা কিছু দিবে না, তা কি হয়?তাই তো সেই কবে থেকে টাকা জমাচ্ছে। মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছে। কাল পছন্দ মতন ড্রেসটা কিনবে সিফার।

মা ঘরে হাতে একটা প্লেট নিয়ে ঢুকল। সিফারের কাছে এসে বলল- মুড়ি মাখলাম। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে। আয় তোকে খাইয়ে দেই। কতদিন তুই আমার হাতে খাস না।

মা খাইয়ে দিচ্ছে সিফারকে। খুব কান্না পাচ্ছে। সবাই এত ভাল কেন? মা টা না পাগল একটা। ভেবেছে আমি রাগ করে আছি।
সিফার মাখানো মুড়ি খাচ্ছে আর গাল বেয়ে পানি পড়ছে। মা পানি মুছে দিয়ে বলল- কাঁদিস ক্যান বাবা ? মানুষের অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। আমাদেরও থাকবে না। তোর কষ্ট হয় বুঝি। তোর যা লাগবে চাবি। যেভাবে হোক আমরা জোগাড় করে দিব। তুই আমাদের এত আদরের ছেলে।

সিফারের কান্না থামার পরিবর্তে আরও বেশি পাচ্ছে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এই মানুষগুলোর ভালবাসা ফেরত দেবার মতন ক্ষমতা নেই ওর। কেঁদে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া আর কি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

মা বলল- আজও বাড়িওয়ালা এসেছিল। মানুষগুলোকে যে আর কত ঘুরাব!! তোর বাবা বেতনও পাচ্ছে না। আর যে কয়টা টাকা বেতন পায় তাতে কিছুই হয় না।
- মা, আমি একটা কথা বলি?
-বল, বাবা।
- আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। তুমি নিবে সেগুলো ? আমি তো কিছুই করতে পারি না। অন্তত এক মাসের ঘর ভাড়াটা দিয়ে দাও তা দিয়ে।
- আরে না। কি বলিস? তোর জমানো টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিব কেন? তুই বড় হইছিস। এখন তোর একটা হাত খরচ আছে না?তোকে তো ওভাবে টাকা আর দেওয়া হয় না। তোর টাকা রেখে দে। কি একই শার্ট পরে ভার্সিটিতে যাস প্রতিদিন। তার চেয়ে ২ টা শার্ট কিনিস। জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে দেখলাম। কম দামের মধ্যে একটা জুতাও কিনিস। তোর বাবা বেতন পেলেই ঘর ভাড়া দিয়ে দিব। আর এতদিন ধরে থাকি আমরা এখানে। বাড়িওয়ালাকে একটু বুঝিয়ে বললেই বুঝবে।

সিফার ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। হঠাৎ মায়ের পায়ের কাছে পরে বলল - মা, আমাকে মাফ করে দাও না। আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিছি। আমি অনেক খারাপ। টাকাটা নাও না। না নিলে আমার ভাল লাগবে না। আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি। এই কথাটা অনেকদিন বলতে চাইছি, বলতে পারি নায়। আমার নতুন জামা কাপড় জুতা কিছু লাগবে না। আমি বড় হয়ে যখন চাকরি করব তখন আর কষ্ট থাকবে না আমাদের। তখন ভুরি ভুরি জামা কাপড় কিনতে পারব।
- এই সিফার, কি হইছে বাবা? এই তাকা এইদিকে। কি হইছে? এমন পাগলামি করতেছিস কেন?আচ্ছা দে। নিচ্ছি টাকা। তোর বাবা বেতন পেলে নতুন জামা কাপড় কিনে দিব তোকে আচ্ছা?

সিফার চোখ মুছে মায়ের হাতে টাকাটা দিয়ে বলল- নাও, ঘর ভাড়া দিয়ে আসো।

মা ছেলের কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলেন।

সিফার জানালার পাশে বসল এসে। হালকা হালকা হাওয়া বইছে। চোখের পানিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে সেই হাওয়ায়। নিজেকে প্রথম বারের মতন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। নীরার জন্য গিফট কেনা হল না এবারও। মেয়েটা অনেক অনেক ভাল। হয়ত রাগ করবে না কিছু না দিলেও। হঠাৎ চোখ পড়ল শার্টটার দিকে। একটু খানি ছিঁড়ে গেছে শার্টটা। কিভাবে ছিঁড়ল কে জানে!!! ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সিফার। মনে মনেই ভাবল, প্রেম ভালবাসা, নীরা, এগুলো নিম্নবিত্তদের জন্য না। এদের সুখ ঐ মা বাবার একটু হাসি। অল্প কিছু টাকা, বেঁচে থাকার জন্য। ছেঁড়া শার্ট সেলাই করে পরা। সস্তা জুতা। ২ বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার মধ্যেই।
ভালবাসা সবার জন্য না হয়ত। নীরা ভাল মেয়ে অনেক। কিন্তু কতটা দিন এভাবে মানিয়ে নিবে? একটা সময় হয়ত ক্লান্ত হয়ে যাবে। নিম্নবিত্তদের ছেঁড়া শার্টের সাথে নীরার মত মেয়েদের মানানো আসলেই খুব কঠিন !!!

ღjrk

রবিবার, ১৯ মে, ২০১৩

অদ্ভুত ভালোবাসা!

অদ্ভুত ভালোবাসা!
লিখেছেনঃ আমি প্রান্ত

শনিবার সকাল। আমার নাম মেঘ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে English ডিপার্টমেন্টে ৩য় বর্ষে পড়ছি। রোজকাল সকালের মতই ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে শাটল ট্রেন ধরা । ট্রেনের বগি তে আড্ডা , গান, দুষ্টামি... এভাবেই প্রতি টা দিন শুরু হয় আমার । আজও সেই ভাবে শুরু করেছিলাম। ঠিক শেষ মুহুর্তে ট্রেন টা ধরতে পারলাম । বন্ধুদের সাথে দেখা। তারপর তুমুল আড্ডা। কখন যে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে চলে এসেছি খেয়াল করি নাই।

কিচ্ছুক্ষন পর খেয়াল করলাম আমাদের বগির একেবারে শেষে একটি ছেলে বসে আছে।
জানালার পাশে...মাথা ভর্তি চুল,মুখে দাঁড়ি। খুব চেনা চেনা মনে হল। জানালার বাইরে উদাস চোখে তাকিয়ে আছেন। হ্যাঁ! চিনতে পারলাম!

এটা তো আকাশ ভাই! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। কিন্ত এমন অবস্থা কেন উনার? চিনতে কষ্ট হচ্ছে! উনার চোখে পানি! নিশব্দে কাঁদছেন! অবাক হলাম খুব। অনেক দিন উনাকে ক্যাম্পাসে দেখি নাই।
কিন্তু আজকে উনি একা কেন? উনার সাথে তো মিলি আপার থাকার কথা!
আরো বেশি অবাক হলাম! খুব কথা বলতে ইচ্ছা করল উনার সাথে। খুব ভাল সম্পর্ক আমার সাথে উনার। কিন্তু এই অবস্থায় কথা বলা টা কি উচিত হবে? ভাবনার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম এমন সময় তার ডাক শুনলাম।
"এই মেঘ!!
এইদিকে আয়!!"
গেলাম তার কাছে।
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছি। তারপর অনেক কথা বললাম। একসময় সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম তার এই হাল কেন?
মিলি আপা কই? ও আচ্ছা! বলা হয় নাই!
মিলি আপা আর আকাশ ভাই একজন আরেকজন কে মন প্রান দিয়া ভালবাসত । দুই জন সবসময় একসাথে থাকত। মিলি আপাও আকাশ ভাইয়ের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ত।
একসাথে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করত। আজ নেই! তাই অবাক হয়েছিলাম।

আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। একটা সিগারেট ধরালেন। আমাকেও সাধলেন। আমি খাই না বলে নিলাম না। বললেন মিলি আপার খবর তিনি জানেন না! আমি আকাশ ভাই এর কথায় আকাশ থেকে পড়লাম! কেন???
তারপর আমাকে বলতে শুরু করলেন সেই কাহিনি যা শুনে আজও আমি অবাক হই!
নার্গিস আপা ছিলেন আকাশ ভাই আর মিলি আপার সব থেকে কাছের মানুষ। তাদের সাথেই পড়ত। দুই জনেরই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নার্গিস আপা। ভালই চলছিল সব কিছু।

আকাশ ভাই আর মিলি আপার প্রেম ভালোবাসা, সব কিছুই ছিলো স্বাভাবিক। প্রতিদিন এর মতই নাকি তাদের জীবন টা চলছিল । দুই জনের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে। আকাশ ভাই ভাল ঘরের ছেলে। মা আইনজীবী। বাবা ডাক্তার। মিলি আপাও অনেক ভাল ঘরের
মেয়ে।
আকাশ ভাই অনেক মেধাবী ছাত্র। এটা ক্যাম্পাস এর সবাই জানে। দুই জনের পরিবার থেকে যে প্রবলেম হবে ভবিষ্যতে এমন কোন সম্ভাবনাও নাকি ছিল না।

আমরা সবাই নিশ্চিত ছিলাম মিলি আপা আর আকাশ ভাই এর বিয়ে আমরা খাব! খাবই খাব! যেদিন থেকে আকাশ ভাইয়ের জীবনটা এমন
হয়ে গেলো আমি সেই কাহিনি আজকে বলছি: সেই দিনও প্রতি দিন এর মত মিলি আপা স্টেশন এ এসেছিলেন ক্যাম্পাসে যাবেন বলে। প্রতিদিন এর
মতই আকাশ ভাই অপেক্ষা করছিলেন মিলি আপার জন্য। প্রতিদিনের মতই একই বগি তে একই বেঞ্চ এ পাশাপাশি বসা । গল্প, দুষ্টামি । ক্যাম্পাসে ক্লাস, ঘুরাঘুরি । সব কিছুই ছিল সাধারন ।

মিলি আপার ফুচকা ছিল খুব প্রিয় । ওইদিন দুইজন মিলে ফুচকাও খেয়েছিলেন । তারপর একইভাবে ক্যাম্পাস থেকে ফিরে আসা! কিন্তু
তখনও আকাশ ভাই জানতেন না তার জীবনের সব থেকে ভয়াবহ
দিনটি ছিল সেইদিন। ওইদিন রাতে অনেক ট্রাই করেও মিলি আপার ফোন টা বন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি।

তারপর...
আকাশ ভাই কোনরকমে রাতটা পার করলেন।

সারা রাত ছটফট করে কাটালেন।
পরেরদিন খুব সকালে উঠে স্টেশনে এসে বসে রইলেন মিলি আপার অপেক্ষায় । একসময় তিনি আসলেন । সুন্দর একটি নীল সালোয়ার কামিজ পড়ে । তাকে নাকি অপূর্ব লাগছিল।

আকাশ ভাই যেন একটু শান্তি পেল। সব কিছুই নরমাল ছিল। নার্গিস আপা যেহেতু মিলি আপা আর আকাশ ভাই দুই জনেরই খুব ভালো বন্ধু ছিলেন সেহেতু নার্গিস আপাও তাদের সাথে একই বগিতে আসা যাওয়া করতেন। সেই দিন আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা কেন জানি একটু অদ্ভুত আচরন করছে। পাত্তা দিলেন না।

মিলি আপা কে পেয়ে সব ভুলে তিনি শুধু মিলি আপাতেই মগ্ন। প্রতিদিনের মতই ক্লাস আড্ডা। একসময় আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা তাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা......

ওইদিন অনেক খুশি দেখাচ্ছিল মিলি আপাকে। আকাশ ভাইও মিলি আপার এমন খুশি দেখে আটখানা। দুই জন মিলে অনেকখন ছিলেন । একসময় যাওয়ার সময় হল ।

ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে আসলো নার্গিস আপা, আকাশ ভাই, মিলি আপা । হঠাৎ মিলি আপা একটা কাজ করে বসলেন যা আকাশ ভাই কখন স্বপ্নে ভাবেন নি ।
প্রতিদিন আকাশ ভাই এর সাথে এই বিষয় নিয়া তুমুল ঝগড়া হত। সেটা হল
সিগারেট খাওয়া! মিলি আপা নাকি অনেক মানা করতেন না খাওয়া এর জন্য। কিন্তু ওইদিন মিলি আপা নিজেই আকাশ ভাই কে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দেন !!!

আকাশ ভাই অবাক হলেন বললে ভুল হবে!
তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি যে মিলি আপা এমন একটা কাজ করতে পারেন। ট্রেন আসল। মিলি আপাকে নিয়া উঠতে যাবেন এমন সময় নার্গিস
আপা ভাই কে পিছন থেকে ডাকলেন। বললেন ভাই এর সাথে তার পড়ালেখা নিয়া কিছু কথা আছে। একটু পর যাতে যায়। মিলি আপা আজকে একা গেলে কিছু হবে না......

ভাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলেন। মিলি আপাকে একাই ট্রেন এ উঠাই দিলেন । নার্গিস আপার সাথে বসলেন এক পুকুর পাড়ে। অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর আকাশ ভাই বিরক্ত হলেন।

তারপর আবার জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার। নার্গিস... আপা এতক্ষনে মুখ খুললেন ।

তার কথার সারমর্ম হল. . .
(গতকাল রাতে মিলি আপার বাগদান হয়ে গেছে। মিলি আপা এখন আর আকাশ ভাই এর নেই। সে এখন অন্য একজন এর স্ত্রী!)

আকাশ ভাই প্রথমে বিশ্বাস করলেন না! করার কথাও না! আজকে ৪ বছর এর সম্পর্ক! যে মেয়ে তাকে এত বেশি ভালবাসে সে কখনো এমনকাজ করতে পারে না!

অনেক বুঝালো নার্গিস আপা। আকাশ ভাই কোন ভাবেই বিশ্বাস করলো না! এক সময় নার্গিস আপা মিলি আপার বাগদান এর একটা ছবি দেখালো!
আকাশ ভাই আকুল হয়ে কাঁদলেন। অনেক বেশী!

একসময় অজ্ঞান হয়ে যান। সেই দিনই তিনি এই দুনিয়ার মায়া ছাড়তে চেয়েছিলেন। একসময় মিলি আপার ফোন আসলো। আকাশ ভাই শুধু এতটুকু জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তার সাথে এমন করা হল?

সেই মেয়ে যদি তাকে ভাল নাই বাসত তাইলে কেন তার সাথে এমন করল? কি দোষ ছিল তার? আর যদি মিলি আপার ফ্যামিলি থেকে কোন প্রবলেম থাকত তাইলে সেটা আকাশ ভাই কে জানাইলেই পারত!

এভাবে লুকিয়ে তার লাইফটা কে নষ্ট করে কি লাভ ছিল তার? কেন এই ছলনা? বাগদান হওয়ার পরের দিন পর্যন্ত কিভাবে এই মেয়ে নরমাল ভাবে আবার প্রেমের অভিনয় করল? নার্গিস আপা যদি না জানাত তাহলে হয়ত আর জানাই হত না এই চরম কথা টা! নার্গিস আপার খারাপ লেগেছিল এই
ভেবে যে এভাবে একটা মানুষ এর সাথে প্রতারনা করা যায় না! তাই তিনি সব বলে দিয়েছিলেন। জানি না মেয়েরা কেন এত টা ছলনাময়ী!

সব শেষে আকাশ ভাই আমাকে একটা কথাই বলেছিলেন!... "জানিস
আমাকে তো মিলি ছেড়ে চলে গেল কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে একটা চরম উপহার দিয়া গেল! সিগারেট । ও ছেড়ে গেছে কিন্তু এই সিগারেট আমাকে ছেড়ে যাবে না! "

আমি আকাশ ভাই এর কথা গুলো শুনছিলাম আর মনের মাঝে কোথায় যেন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। তখন ও আকাশ ভাই এর দুই চোখের পানি অঝর ধারায় ঝরছিল!

উনার জীবনের কাহিনী শুনতে শুনতে বাইরের প্রকৃতি দেখছিলাম। দুই চোখ যেন বার বার প্রকৃতের মাঝে অতীত খুঁজে ফিরছিল!! জানি না এরই নাম কি ভালবাসা???

গল্প টা কোন বানানো গল্প না। এটি একটি সত্য কাহিনী । মিলি আপা বর্তমানে তার স্বামী নিয়ে সুখেই আছে বলে শুনেছি । এখনও মাঝে মাঝে আকাশ ভাইকে ক্যাম্পাসে দেখি ।

একমনে সিগারেট খেতে খেতে একা হেটে বেড়ান। মাঝে মাঝে ফুচকার
দোকানে দেখা হলে একটা কথা বলেন, "এই আমার সামনে থেকে সর! আমার সামনে ফুচকা খাবিনা। আর যা ইচ্ছা খা, কিন্তু ফুচকা খাবি না!!"

আর কেও না বুঝলেও আমি জানি কেন তিনি এই কথা বলেন!! সেইদিন, সেই মিলি আপা, সেই মিলি আপার ফুচকা!! সবই মনে পড়ে যায়!!

(সঙ্গত কারনেই গল্পে চরিত্র গুলোর নাম এবং ডিপার্টমেন্টের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে । কিন্তু এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সত্য ঘটনা। মেয়েদের কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই গল্প আমি লেখি নাই । তবে কিছু মেয়ে আছে যাদের জন্য আজকে এই আকাশ নামের ছেলেগুলোর জীবন অনেকটাই এলোমেলো আজ! আমি নতুন লেখক। আগে কখনো গল্প লেখি নাই। যদি কোন ভুল, অথবা অসঙ্গগতি চোখে পড়ে তাহলে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করছি!! সবাইকে ধন্যবাদ!)

এডমিনঃ আজ রাতেও কেন জানি ঘুমাতে পারছিলাম না, তাই বন্ধুদের পাঠানো গল্প গুলো পরছিলাম, আর হঠাৎ ই চোখে পড়লো এই গল্পটি, গল্পটি পরে মনের অনেকটা যায়গা জুড়ে ফাকা ফাকা লাগছে!!

সত্যি কিছু বাস্তবতা চোখের কোনে অঝর শ্রাবণ ধারাও এনে দিতে পারে!!

আজকের গল্পটি আপনার মনে যদি একটুও অনুভুতির দোলা দিয়ে থাকে, তাহলে আপনারাই বলুন কত লাইক হবে???

ღজয় রাজ খান

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

ভালবাসা শিরোনামহীন

ভালবাসা শিরোনামহীন
লিখেছেন- sesh rater adhar

- আমি একটা কথা বলব।

বলে হঠাৎ করে মিষ্টির সামনে এসে বসল হৃদ্য।

- এতক্ষণও তো বলতেছিলা।
- হ্যাঁ, অন্য কথা।
- আচ্ছা বল।

মিষ্টি অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাল হৃদ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি। যে হাসি খুব খেয়াল করে না তাকালে দেখা যায় না। হৃদ্য অনেক খেয়াল করেই তাকিয়েছে তাই চোখে পরেছে। অনেক দিন থেকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না কথাটা। রিলেশন হয়ে গেল আজ ৩ মাস, এখন পর্যন্ত বলা হল না। ছিঃ,ছিঃ !কি লজ্জার কথা।

মিষ্টি বলল- কি হল? বল। অমন গাধার মত তাকিয়ে আছ কেন? আমাকে দেখনি কখনও?
- হ্যাঁ বলব। একটু সাহস দাও না আমাকে। খুব ভয় লাগছে।
- খুব সিরিয়াস কোন কথা?
- হ্যাঁ । আমি তোমাকে অনেক ভয় পাই।
-এইটাই তোমার কথা?
- না।
- আসো বুকে ফুঁ দিয়ে দেই। ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না? আমি তো আর তোমাকে খেয়ে ফেলব না। বল। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে।
- i love you.

মিষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে রইল হৃদ্যর দিকে। কথাটা পুরোপুরিও মুখ থেকে বের হয়নি হৃদ্যর, বলার মাঝে আটকে যাচ্ছিল। সামনাসামনি আজ প্রথম বলল ভালবাসার কথা। মোবাইল এ মেসেজ এ কত কিছু বলে, সামনে আসলে চুপ। কোন কথাই বের হয় না।

মিষ্টি বলল- এই কথাটা বলার জন্য এত কিছু?এমন পাগল কেন তুমি? জানো, তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার চেয়ে মায়া হয় অনেক বেশি। তুমি কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতন আচরন করো।সামনাসামনি i love you বলবা, তাও এত কিছু....... পাগল একটা।

মিষ্টি হৃদ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হৃদ্য হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠোঁটের কোণায় সেই হাসি নিয়ে বলল- " এই, উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যাব।"

হৃদ্য উঠে বলল-আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- আমি জানি। চল এখন।

দুজন হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা ধরে।আশেপাশে অনেক মানুষ।কেউ কেউ ওদের দিকে আড়-চোখে তাকাচ্ছে, কেউ কেউ ফ্যালফ্যাল করে। সুন্দরী মেয়ের পাশে ছেলে মানুষ দেখলেই মানুষ ভাবে, কি দেখে এই ছেলের সাথে প্রেম করেছে? তার চেয়ে ভাবনাকর্তা নিজেই কত সুন্দর !!!!

- হৃদ্য, তুমি যাও এখন। রাত হয়ে যাবে বাসায় যেতে তোমার। আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
- আমি আসি সাথে?তোমার হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত যাই?
-না না। ওখান দিয়ে বাজে ছেলেরা বসে থাকে। তোমার সাথে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
- একা থাকলে আরও বেশি বলবে। চল আমি যাই।
- লাগবে না।
- আরে লাগবে। চল তো।

হৃদ্য মিষ্টির সাথে ওর হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত গেল। রাস্তায় বখাটেগুলো ছিল। কয়েকটা বাজে কথাও বলল। সবগুলো গা জ্বালা করার মত। মিষ্টিকেই বলেছে কথাগুলো।

হোস্টেলের সামনে এসে হৃদ্যকে বলল মিষ্টি - শুধু শুধু আসলা তুমি। এসে কি হল? ঐ ছেলেগুলো বাজে কথা বলল আর তুমি বেকুবের মতন শুনলা। তুমি তো দেখতে একেবারে পালোয়ান বীরপুরুষের মতন না যে তোমাকে দেখে কিছু বলবে না ওরা। তুমি ইচ্ছা করলেও ওদের কিছু করতে পারবা না।মানা করলাম, তারপরও আসলা।

হৃদ্যর নিজেকে কিছু সময়ের জন্য অনেক ছোট মনে হতে লাগল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল শুধু।

- আমি দেখতে পালোয়ানের মতন হলে তুমি খুব happy হতে?
- সব মেয়েই চায় তার বয়ফ্রেন্ড এর তাকে সেভ করার মতন, security দেবার মতন abilty থাকুক। তোমার মতন হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শুধু কোথাও বসে থাকতেই ভাল লাগে, কোথাও চলাফেরা করতে না।
- তুমি কি আমাকে নিয়ে unhappy?
-না যা হবার হয়ে গেছে। আমি তোমাকে আমার লাইফ এ মেনে নিছি। যাও বাসায় যাও।
- না বাসায় যাব না।ভার্সিটি খোলা , একেবারে হল এ যাব।
- আচ্ছা দেখে শুনে যেও ।

হৃদ্য চলে গেল।
--------------------------------------------

মিষ্টির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আগে থেকেই হৃদ্যর উপর রাগ উঠে ছিল। তার উপর আবার মোবাইল রিসিভ করছে না। এমনি সারাদিন ২৪ ঘণ্টা মিষ্টিকে কল করতে থাকে হৃদ্য। আজ কি হল? না দিচ্ছে কল না ধরছে। কি বলেছে সন্ধায়? তাতেই এত রাগ করতে হবে? যাহ্‌ না ধরল। মিষ্টিও কথা না বলে থাকতে পারবে।মিষ্টি মোবাইলটা বন্ধ করে রাখল।

হৃদ্য হাসপাতালের বেড এ শুয়েই ডাক্তারকে বলল- ডাক্তার আংকেল, আমার মোবাইলটা ?
- রেস্ট নিন। হাত পা নাড়াতে পারছেন না, মোবাইল চাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুমান।
- please, আমার মোবাইলটা খুব দরকার। একটু দিন না।

ডাক্তার টেবিল এর উপর থেকে মোবাইলটা হৃদ্য কে দিল। মোবাইল পেয়েই মিষ্টিকে ফোন করল। switched off মোবাইল। অনেক বার চেষ্টা করল। নাহ, মোবাইল বন্ধ। পরে একটা মেসেজ করল মিষ্টিকে।

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠল সকাল ১১ টার দিকে। মোবাইলটা অন করল। সাথে সাথেই হৃদ্যর মেসেজ- আমি হাসপাতালে । তোমাদের medical college hospital এ। একটু দেখতে আস না আমাকে ।আব্বু আম্মুকে ভয়ে বলিনি। তুমি please আসো। আমার উপর রাগ করে থেকো না, প্লিজ।

মিষ্টি কিছু সময়ের জন্য অনুভুতিশূন্য হয়ে গেল। তারপর তারাতারি হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখল হৃদ্য বেড এ শুয়ে আছে। নাক, গাল, বাম হাত, ডান পা, মাথায় ব্যান্ডেজ। আর ডান হাত দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মাথার কাছে ওর বন্ধু শিমুল বসে বসে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে হৃদ্যর পাশে বসল।কাঁদোকাঁদো গলায় বলল- কি হইছে তোমার? কিভাবে এই অবস্থা?

হৃদ্য মুখ থেকে আপেল বের করে চুপ করে রইল। মিষ্টি বলল- কি হল? কথা বল না কেন?

শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দাঁড়াল। বলল- তোমরা কথা বল। আমি আসতেছি।

মিষ্টি আবারও জিজ্ঞাসা করল- বল,প্লিজ কি হইছে?কিভাবে?

হৃদ্য এতক্ষণে মুখ খুলল- তোমাকে যে ছেলেগুলো বাজে কথা বলেছিল, তাদের মারতে গিয়েছিলাম। একটাও মারতে পারি নায়। ওরাই উল্টা আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিসে। এলাকার মানুষ এনে পরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিছে।
- তোমাকে ওদের সাথে মারামারি করতে যেতে বলছে কে?
- ওরা তোমাকে বাজে কথা বলল আর আমি শুনব? তুমিই তো বলছ যে তোমার সাহসী বীরপুরুষ ছেলে পছন্দ।আমি না মারতে পারলাম, সহ্য তো করি নায় কথাগুলো। কাপুরুষের মত চলে আসি নায় ওদের ভয়ে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার জন্য সব করতে পারব।বিশ্বাস করো আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি তো একা ওরা অনেকগুলা ছিল,সবগুলোর পাঠার মত শরীর,তাই মেরে দিছে আমাকে । আমাকে ছেড়ে যেও না, please.

মিষ্টি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।দু চোখ দিয়ে টলটল পানি করে পড়ছে।
মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বলল-তুমি এমন পাগল কেন?আমি কি না কি বলছি তাতেই তুমি এমন করবা? তোমার যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যেত? আমাকে এত ভালবাস তো কষ্ট দাও কেন?আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি জানি তুমি অনেক ভাল। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক happy. আমাকে মাফ করবা না বল? আমি অমন কথা আর কখনও বলব না। আর এমন পাগলামি করো না !!!!
- এই কাঁদছ কেন? আমার খারাপ লাগছে।
- আচ্ছা কাঁদবো না আর। তুমি আমাকে শুধু ভালবাসবা অনেক বেশি বাসবা, তাতেই হবে। বাসবা না বল?
- হ্যাঁ, বাসব।
- তাহলে i love you বল।
- i love you.তুমি আমকে ছেড়ে যাবে নাত কখনও?
- কখনও না।

মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বসে রইল।হৃদ্য বলল- আপেল খাব। হাত ছাড়ো।
- না ছাড়ব না। আমি খাইয়ে দেই।এই যে হাত ধরেছি, সারাজীবনের জন্য। আর কখনও ছাড়ব না।

ღjrk

বন্ধু আমার একলা প্রহর

বন্ধু আমার একলা প্রহর
লিখেছেন- sesh rater adhar

- বের হচ্ছিছ না কেন এখনও ? তুই কি ওখানে ঐ কাজই করতে যাস না অন্য কিছু ? কি করিস এতক্ষণ ধরে ?

চিৎকার করছে বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আবির। প্রতিদিনকার রেগুলার রুটিন। কত যে সময় লাগে সাব্বিরের? বাথরুমে একবার ঢুকলে আর বের হবার খবর থাকে না। কি করে আল্লাহই জানে!

আবির আর সাব্বির ৩ রুমের একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ২ জন এক রুমে । বাকি ২ রুমে ৫ বড় ভাই থাকেন । সাব্বির আর আবির স্কুল কলেজে একসাথে পড়ত। এখন সাব্বির পড়ে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে computer science and engineering আর আবির পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানে। হলে সিট পেয়েছিল আবির। কিন্তু হলে উঠার পর থেকেই প্রতিদিন রাতে মিটিং-এ ডাক পড়ত। আর সেখানে বড় ভাইদের দেশ উদ্ধারের লেকচার শুনার জন্য বসে থাকতে হত।একদিন লেকচার শুনতে শুনতে হঠাৎ-ই তন্দ্রা চলে আসাতে হাই তুলেছিল আবির।আর সেই হাই তোলার অপরাধে কান ধরে ১ ঘণ্টা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তারপর হল থেকে চলে আসল। আর গেল না ।

এরপর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিল। ৩ রুমেই অ্যাটাচড বাথরুম। কারও সমস্যা হয় না। যত সমস্যা এই দুজনের। তাও সাব্বিরের জন্য।এই যে এখনও বের হওয়ার খবর নাই।আবির আবারও চিৎকার করে উঠল- তুই বের হবি নাকি দরজা ভেঙ্গে ফেলব?
- ছিঃ আবির , তুই এমন অশ্লীল কথাবার্তা বলতেছিস কেন? দরজা ভাঙ্গি মানে ? আমার লজ্জা শরম নাই নাকি ?
- তুই আবারও বাথরুমে বসে কথা বলতেছিস ? আমি বলছি না তোকে এই কাজ না করতে ?
-হেহ ! দুনিয়ার সব জায়গায় বসে কথা বলা সিদ্ধ থাকলে,বাথরুমে বসে কেন নিষিদ্ধ থাকবে ?আমি বলব , আরও বেশি বেশি বলব। গান গাইব আমি বসে বসে। ওহো ...হো....আহা ...আহা ... হাহা ....
-সাব্বির ,আমি তোরে খুন করে ফেলব।আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। বের হ।

সাব্বির বের হয়ে আসল। রাগে তাকিয়ে আছে আবির।
সাব্বির উলটা রাগ দেখিয়ে বলল - তোর জন্য একটু শান্তি মত .....যাহ্‌, তোকে বলে লাভ নেই। মানুষের অনুভুতি তুই বুঝিস না।
- বাথরুমে ২ ঘণ্টা ধরে বসে থাকার মধ্যে কী অনুভুতি আছে? আমি তো দেখছি না কিছু।
-তুই always এমন। আমি তোর বন্ধু না শত্রু মাঝে মাঝে বুঝি না। যা যা। এতক্ষণ চিৎকার করছিস আর এখন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?

আবির লুঙ্গি নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। আবির প্রতিদিন ২ বার গোসল করে। ঠাণ্ডা গরম সবসময় । সকালে একবার বিকালে একবার।আর সাব্বির ২-৩ দিন পর পর। ঠাণ্ডার সময় সপ্তাহেও একবার করে না। তবে কেউ যেন না বুঝে তাই গোসল করার কথা বলে শুধু মাথা ভিজিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে আসে। কত্ত বুদ্ধি !!!!

আবির আর সাব্বির সারাদিনই ঝগড়া করে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। মানুষ তার কাছের মানুষের সাথেই ঝগড়া করে বেশি। বন্ধুত্ব যত বেশি ঝগড়ার মাত্রাটাও তত বেশি। ছোট খাটো বিষয়ে দোষ ধরা ,সব কিছুতে খারাপ দিক খোঁজা, আর তা নিয়ে ঝগড়া। হালকা পাতলা মারামারি। এইতো বন্ধুত্ব। আবির এর রাগ বেশি , কিন্তু মারামারি পারে না। সাব্বির অনেক মোটা, সাব্বিরকে আবির মারলে সাব্বিরের কোনো feelings ই হয় না।

আবির গোসল করে বের হল। সাব্বির সঙ্গীত চর্চা শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালের নিয়মিত কাজ। বারান্দায় বসে একটা গিটার নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় সাব্বির। প্রতিদিন একই গান.... আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি..
গিটার হাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত , আবিরের খুব একটা ভাল লাগেনা জিনিসটা। তবুও সহ্য করতে হয়। কারও তো ভাল লাগে!!সাব্বিরের গানের একজন নিয়মিত শ্রোতা আছে। আবিরদের ফ্ল্যাটের সোজা এক ফ্ল্যাটে এক মেয়ে থাকে।বারান্দায় বসে সাব্বিরের এই গান সেই মেয়ে প্রতিদিন শুনে। এই গানও কারও ভাল লাগে?যে গলা !!!!মেয়েই নাকি সাব্বিরকে একদিন বলেছে-" ভাইয়া, আপনি সেদিন, 'আমার হিয়ার মাঝে' গানটা গাচ্ছিলেন, খুব ভাল লাগছিল।আমার অনেক প্রিয় গান । আমি প্রতিদিন আপনার গান লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।আপনার ভয়েসটা অনেক sweet . "
সেই থেকে ঐ একই গান। আগে তাও একেক দিন একেক গান ছিল। আর এখন গিটার হাতে প্রতিদিন আমার হিয়ার মাঝে।

আবির শার্ট পরতে পরতে বলল- হইছে, থাম এখন। সারারাত তো ফুছুর ফুছুর করে একজনের সাথে প্রেম করলি মোবাইলে। এখন সকালে উঠে আর একজনকে গান শুনাইতেছিস। তুই যে কী!!!
- তুই এত রাগ করিস কেন?তুই এক নিরামিষ । আর আমারেও চাস নিরামিষ বানাইতে। দোস্ত, একটু enjoy কর life. দেখ আমাকে দেখ। শিখ কিছু আমার থেকে।খালি তো পারিস, ঐ সার্কিট মিলাইতে আর বই নিয়া বসে থাকতে।একটু মজা কর ।
- আমি অনেক enjoy করি লাইফ।
- কত যে করিস জানি। একটা গার্লফ্রেন্ড, তার সাথে দিনে ১০ মিনিটও কথা বলতে দেখি না ।
- চুপ কর। তুই গান গা। ঐটাই ভাল ছিল।

আবার শুরু আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে...

আবির বের হয়ে গেল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।যাবার সময় দেখল বড় ভাইরা সবাই ঘুমাচ্ছে। এরা সারারাত card খেলে আর movie দেখে।দিনের বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। উঠে দুপুরের খাবার খায় একবারে। আবিরের তা করলে চলে না। সকালে বুয়া আসেন না। তাই বাহিরে খেতে হয়। প্রতিদিন একই দোকানে সকালের নাস্তা করে।একটা কলা , একটা রুটি।খাবার পর প্রতিদিন দোকানদার বলবে - মামা , কোনটা দিব ?
-মামা, আপনাকে এক কথা প্রতিদিন বলতে হয়? আমি smoke করি না।
- ও, মামা মনে থাকে না।

আবির একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটিতে যায়।আজ একটা মাত্র ক্লাস।
ক্লাস শেষ করে বের হল।অরিন অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছে। মেয়েটার কি কোন কাজ নেই নাকি ? আর মাত্র কয়েকদিন পর admission test.পড়াশুনা কিছু করে বলে তো মনে হয় না। অরিন ঢাকাতে এসেছে intermediate এর সময়। ঢাকার একটা কলেজে পড়ত, কলেজের হোস্টেলে থেকে।এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছে। থাকে একটা গার্লস হোস্টেলে।অরিনের এক বান্ধবী জেনিকে প্রাইভেট পড়াত আবির।মাঝে মাঝে অরিন যেত জেনিদের বাসায়।জেনির থেকেই নাম্বার নিয়ে পরে আবির এর সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা।খুবই ভাব ধরা ছেলে আবির, অরিনের ধারণা।ফোন দিলেই একটা busy busy ভাব দেখাত।অনেক কিছুর পর রিলেশন হল।
আবির ফোন ধরল।
অরিন বলল - কি খবর? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি?
-আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি ? ক্লাসে ছিলাম।আর তোমাকে এত বার কল করতে মানা করছি না?আমার ইচ্ছা হলে আমি তোমাকে এমনিই ফোন দিব ।
-সবসময় এমন করে কথা বল কেন?
- এক type কথা always . আমি রাখি, ভাল লাগছে না।
- আমি TSC তে । তুমি আস।
-তোমার কি আজ আসার কথা?
-না, তুমি আস। সবসময় যেখানে থাকি , সেখানেই আছি।আস ।

আবিরের এসব ভাল লাগেনা। ভাল-বাসা-বাসি ওর কাছে ন্যাকামি লাগে। কোন পাগলে পেয়েছিল , রিলেশন করতে গেল। প্রতিদিনই ঝগড়া হয়। মেয়েরা কথায় কথায় অভিমান করে, রাগ করে। আর আবির কখনই অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মত রাগ ভাঙ্গাতে যায় না। বরং যে কয়টা দিন ঝগড়া ,ঐ দিনগুলোই ভাল থাকে মনে হয়। অভিমান পর্ব শেষ করে অরিন নিজেই আসে কথা বলতে। আবির মাঝে মাঝে ভাবে ,না এত রাগ ভাল না। রাগ কমাতে হবে। কিন্তু হয়ে উঠে না।

- আবির , এই দিকে আয়।

ইলিয়াস ডাক আবিরকে। ইলিয়াস আবিরের ক্লাসমেট , কবিতা লিখে। আবির ছাড়া কেউ ওর কবিতা শুনে না । আবিরের কবিতা কখনই ভাল লাগে না। তাও শুনে। বন্ধুর লেখা বলে কথা। কোন ছন্দ নাই , শুনে বুঝা যায় না গল্প না কবিতা । তবুও আবির কখনও বিরক্ত হয় না।আবিরকে কবিতা শুনানোর পর ইলিয়াস বলে সবসময় - "কেমন হইছে রে?"
আর আবিরের কথা -অনেক সুন্দর দোস্ত। তুই বই বের কর। অনেক চলবে।তোর কবিতার সাথে জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনেক মিল । আমার তো মনে হয় তোর কবিতা তার চেয়েও সুন্দর হয়। খালি বের কর বই , famous হয়ে যাবি।
ইলিয়াস কথাগুলো শুনলে ওর মুখটা লাজুক ভাবে ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ইলিয়াসকে এত খুশি দেখতে আবিরের অনেক ভালই লাগে।
আবির ইলিয়াসের কাছে গিয়ে বলল - কবি, কি খবর?নতুন কবিতা আছে?
- হ্যাঁ রে , নতুন একটা লিখলাম।আমাদের ক্লাস এর নদীকে চিনিস না? ওকে নিয়ে লিখlলাম। তুই কিন্তু আবার ওকে বলে দিস না। ওকে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগে। সব উলট-পালট হয়ে যায়।
- দোস্ত , কি বলিস? আচ্ছা শুনা তারাতারি।
-
ও নদী,
জানো কি,
তোমাকে ভালবেসে
আমি কাঁদি?

তুমি এমন
একবারও দেখ না ,
আমাকে মনে
রাখো না।

আমি বসি
তোমার পিছনে ,
চুল দেখি
ঘ্রাণ শুকি।

তবুও তুমি
বুঝ না,
ভালবাসি
বুঝ না।

- দোস্ত, তুই তো ফাটাইয়া দিছিস। কি লিখলি এইটা? অসাধারণ হইছে। তুই যে এত ভাল লিখতে পারিস আমি জানতাম না, খালি একবার নদীর সামনে যাবি,আর কবিতাটা পড়ে শুনাবি। দেখবি ও পাগল হয়ে গেছে।
-তুই সত্যি বলছিস?
-আমার মিথ্যা বলে লাভ কি বল?তোর মত কেউ কি ওকে কবিতা লিখছে নাকি ? একবার গিয়ে বল, রাজি না হলে আমার রিস্ক।
-নদী কি লাইব্রেরিতে আছে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাই। ওকে কবিতা শুনিয়ে আসি।তুই একটু দোয়া কর।
-ok, যা দোস্ত। কি হয় জানাস।

ইলিয়াস দৌড়ে চলে গেল নদীকে কবিতা শুনাতে। আবিরের কারনে ওর কোন বন্ধুর মন ভাল হয়ে গেল। ভাবতেই ভাল লাগছে। আবিরেরও মন ভাল।
আবির TSC তে আসল। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। আবির গিয়ে দাঁড়াল অরিনের সামনে। অরিনের চোখ ছল ছল। অরিন বলল- তুমি সবসময় আমাকে দাড় করিয়ে রাখো। তুমি এমন কেন?আমার কষ্ট হয় না?
- ওহ! আবার এই টাইপ কথা? আমার শুনতে ভাল লাগছে না । অন্য কিছু বলার থাকলে বল। এসব ন্যাকামি আমার ভাল লাগে না।
-তুমি সারাজীবন এমন থাকবে? সারাদিনে একটু খোঁজখবরও নাও না। একটা sms কখনও কর না। কথা বলতে গেলে ৫ মিনিটের পর বল তোমার বিরক্ত লাগছে।আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
-তোমাকে কখন বললাম, তুমি দেখতে খারাপ?এসব কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পার না? শুনতে একদমই ভাল লাগছে না।চুপ করে থাক।
- তুমি আমাকে ভালবাস না, আমি জানি ।
-হ্যাঁ, ভাল হয়েছে ভালবাসি না।যাও এখান থেকে।আমি ভালবাসি না তাহলে আমার সাথে কথা বলছ কেন?বিরক্তিকর।

অরিন কিছু বলল না।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কাঁদতে শুরু করে দিল।নিঃশব্দ কান্না। মেয়েরা কখনই তাদের প্রতি অবহেলা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু অরিন অনেক সহ্য করেছে। আর না । এভাবে কারও সাথে থাকা যায় না। অরিন চলে গেল চোখ মুছতে মুছতে আবিরের সামনে থেকে।আবিরের কিছুই মনে হল না। মনে হচ্ছে সব আগের মতই আছে।

বাসায় চলে আসল আবির। রুমে গিয়ে দেখল সাব্বির সাজ-গোঁজে ব্যস্ত। ছেলে মানুষ ও কত সাজগোজ করে !!
আবিরকে দেখে বলল- যাবি চল।
-কোথায়?
-এই একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাব। কয়েকদিন ধরে কথা হচ্ছে ফেসবুক এ ।দেখতে না জোস।চল না ।
-এসব কি বাদ দিবি তুই?কোনদিন কোন ঝামেলায় পরিস দেখিস।এতগুলো মেয়ের সাথে তোর relation.
- দোস্ত, তুমি বুঝবা না। আমার তো মনে হয় তোমার প্রবলেম(!!!) আছে,তাই মেয়ে ভাল লাগে না ।
-ভাল হইছে।তোর মত অত মেয়ে আমার লাগে না।
- কি করা বল? কোন মেয়ে একটু সুন্দর করে কথা বললে আর ঠিক রাখতে পারিনা নিজেকে।আর মেয়েরাও আমাকে চায়।
-হ্যাঁ,থাক মেয়ে নিয়ে। যেদিন ঝামেলায় পড়বি সেদিন বুঝবি। তখন আমারে ডাকিস,যাব নি তোমাকে ভাল মত উদ্ধার করতে!!
- তুই কি বন্ধু নাকি?তুই তো আমার শত্রু। তাই বরদোয়া করিস।

এক গাদা body-spray শরীরে দিয়ে বের হয়ে গেল সাব্বির।পুরো রুম এত এলোমেলো হয়ে আছে। দেখলে মনে হয় যেন কিছুক্ষণ আগে ঝড় বয়ে গিয়েছে এখান দিয়ে।আবির সারাদিন রুম গুছিয়ে রাখে,আর সাব্বিরের দায়িত্ব তা এলোমেলো করা । এই ছেলেটা এত অগোছালো আর এত এমন কি করে???আবির খুঁজে পায় না।সারাদিন মেয়ে নিয়ে থাকে। আর কোনদিকে কোন মনোযোগ নেই ।
আবির গিয়ে বারান্দায় বসল। আজ অরিনের সাথে এতটা করা উচিৎ হয়নি।মেয়েটা এত ভালবাসে আর আবির কিনা সবসময় অপমান করে।আবিরও তো ভালবাসে, তাইতো রাগারাগি করে।আবির যাদের ভালবাসে তাদের ভালবাসা দেখাতে পারে না কখনও।তাদের সাথেই বেশি খারাপ ব্যবহার করে।সাব্বিরের সাথে করে, অরিনের সাথে করে।কিন্তু ওরা ভাবে আবির ওদের ভালবাসে না।নাহ! নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।
আবির যেই কাজ কখনই করেনি সেই কাজ আজ করল। অরিনকে কল করল । কল করে আরও একটা অবাক করা জিনিস করল,অরিনকে sorry বলল।

-অরিন, তুমি রাগ করনি তো?
-না।
- তুমি কোথায় এখন?
- রেল-স্টেশনে। টিকেট কাঁটি।
- কেন? কোথায় যাবে?
-আম্মুকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে।তাই একটু বাসায় যাব।
-ওও..আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।আচ্ছা তুমি ২ টা টিকেট কাটো। আমরা দুজন একসাথে যাব। তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।আমি আবার বাস এ চলে আসব ঢাকা।
- সত্যি, বলছ তুমি?
-হ্যাঁ, সত্যি। আমি কি ভাল কিছু করতে পারিনা নাকি? আচ্ছা ট্রেন কয়টায় ?
- সন্ধ্যা ৬ টা আর ৭ টায়।
- ৭ টার টিকেট কিনো। আমাক মেসেজ করে সিট নাম্বারটা বলে দিও। আমি এইদিকে একটু কাজ শেষ করে চলে আসব।
- আচ্ছা।

আবিরের ভাল লাগছে খুব।কিছু পড়াশুনা করে নিল।আবির কিছুটা excited. মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম ডেটিং-এ যাবে। তাও আবার ট্রেন-এ।

..............................................................................

সাব্বির ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে আছে। যেই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা তার আরও ১ ঘণ্টা আগে আসার কথা। এখনও আসেনি। মোবাইল-এ টাকাও নেই যে কল করবে ।

-সাব্বির ...চলে এসেছি।

সাব্বির দেখল ইমা এসে পড়েছে।

- ওহ আস, বস।আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। এত দেরি করলে কেন?
-বোলোনা আর। ভাইয়া এত ঝামেলা করল।বের হতে দিবেই না। কত মিথ্যা বলে বের হলাম।
- ও আচ্ছা। জানো, আমি না কখনও কোন মেয়ের হাত ধরিনি। তোমার হাত গুলো অনেক সুন্দর। আমি ধরি?
- ধর,আমিও কখনও কোন ছেলের হাত ধরিনি।

সাব্বির ইমার হাত ধরল। এর আগেও অনেকেরটা ধরেছে।

- কি সফট তোমার হাত। ইমা তুমি না খুব সুন্দর। i love you. আমার তোমার আগে অন্য কোন মেয়েকে এত ভাল লাগেনি।কত্ত মেয়ে ঘুরে আমার পিছনে ।পাত্তাই দেই না।
-তাই?
- হ্যাঁ, তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে অনেক। ধরব কি আমি?
- জানিনা। (লাজুক ভাবে)

সাব্বির ইমাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কোনভাবেই ইমাকে কাছে পাচ্ছে না। ইমা চোখ বুঝে আছে।সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে সাব্বিরকে।হ্যাঁ, সত্যি একটা অনেক লম্বা মোটাসোটা ছেলে সাব্বিরকে ধরে আছে।সাব্বির ও অনেক মোটা। তবুও ওকে টেনে তুলে ফেলল। তুলেই এক ঘুষি নাকে।
ইমা চোখ খুলেই অনেক ভয় পেয়ে গেল। ওর বড় ভাই সাব্বিরের গলা ধরে মারছে। ইমার বড় ভাই বলল- ইমা,তুই বাসায় যা। আমি আসছি।তারাতারি যা। একবারও তাকাবি না পিছনে।

ইমা দৌড়ে ছুটে গেল। সাব্বিরের দিকে তাকালও না।
সাব্বির বলল- ভাইয়া আর মারবেন না। আর জীবনে প্রেম করব না। মাফ করে দেন।
-কেন রে? প্রেম করার সখ শেষ?এখনও কিছুই হয়নি।চল তোমারে সাইজ করতেছি।

বলেই ছেলেটা সাব্বিরকে আরও কয়েকটা ঘুষি মারল। তারপর কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?সাথে আরও ৩ জন।মোবাইল এ টাকাও নেই যে আবিরকে কল করবে। বড় অসহায় লাগছে নিজেকে।

আবির রেডি হয়ে নিল।নতুন একটা শার্ট আর প্যান্ট পরল।ফার্স্ট ডেটিং বলে কথা।নিজেকে পরিপাটি করে নিল। ৬ টা বাজে এখন। একটু দেরি হয়ে গেল।অবশ্য এখনি বের হলে ৭ তার আগেই যাওয়া যাবে।অরিন ফোন করল আবিরকে।আবির বলল- তুমি ট্রেন-এ গিয়ে বস, আমি রওয়ানা দিয়েছি। আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আবির বের হয়ে একটা রিকশা নিল।কমলাপুর যাবে।কতদুর যাবার পর একটা unkonown নাম্বার থেকে কল আসল।unknown নাম্বার এর কল আবির এখন ধরে না।কিন্তু আজ ধরল যেন কি মনে করে।আবির হ্যালো বলার আগেই সাব্বিরের কান্না জড়ানো কথা - আবির দোস্ত,আমাকে বাঁচা। আমি ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের সামনে। আমাকে মারতেছে।please, দোস্ত আয়।

আবির কিছু বলার আগেই কল কেটে গেল।আবির অস্থির হয়ে উঠল।তারাতারি রিকশা থেকে নেমে একটা সিএনজি নিল। আবাহনী মাঠে যেতে বলল- মামা, তারাতারি যান। ডাবল ভাড়া দিব মামা। তারাতারি।

২০ মিনিট পর ওখানে পৌঁছে আবির। কয়েকজন ছেলের সাথে সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে।ওরা সাব্বিরকে ধরে রেখেছে। আবির ওখানে গিয়ে বলল- ভাইয়া, ওকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? কি হইছে?

-আরে, আবির তুমি? ওকে চিন নাকি?

ইমার বড় ভাই আবিরকে বলল। উনি আবিরের ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই।

- হ্যাঁ ভাইয়া। ও আমার বন্ধু।
- ও, তুমি এত ভদ্র। তোমার ফ্রেন্ড এমন কেন? আজ আমার বোনের সাথে ধরলাম ধানমণ্ডি লেকের ওখানে। যাও নিয়ে যাও।ভাল হয়ে যেতে বইল। তোমার ফ্রেন্ড, তাই কিছু বললাম না।

সাব্বিরকে নিয়ে আসল আবির। দুজন হাঁটছে রাস্তায়।৭ টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। মাঝে অরিন কতবার ফোন দিল।ধরা হল না।দুজনই চুপচাপ হাঁটছে, কেউ কিছু বলছে না। কতক্ষণ পর আবির বলল- দোস্ত চল, রেল-স্টেশন থেকে ঘুরে আসি।

সাব্বির হ্যাঁ না কিছুই বলল না। একটা সিএনজি নিয়ে রেল-স্টেশন এর দিকে যাচ্ছে দুজন।আবিরের মোবাইল বেজেই চলছে। ধরছে না। ধরে কি হবে?৭ টা পার হয়ে গেছে।রেল-স্টেশন এ যখন নামল তখন ৭ টা ১৫ । ট্রেন তো লেট ও করতে পারে।সাব্বিরকে নিয়ে দৌড়ে আবির অরিনের ট্রেন এর দিকে যাচ্ছে।কিন্তু না, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।সাব্বির বুঝছে না আবির কেন এমন করছে।

- দোস্ত কি হইছে তোর? এমন করছিস কেন?
- কিছু নারে। চল কিছুক্ষণ মানুষ দেখি রেল-স্টেশন এর।দেখ কত মানুষ , সবাই কত ব্যস্ত।

আবিরের মোবাইল বেজেই চলেছে। সাহস হচ্ছে না ধরার। মেয়েটা আবার অভিমান করল।ট্রেন চলে যাচ্ছে।আসতে আসতে গতি বাড়ছে।দূরে সরে যাচ্ছে। হয়ত এর থেকেও অনেক দূরে অরিন চলে যাচ্ছে, আবিরের জীবন থেকে।প্রথম কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছা করল। তাও হল না আবিরের।

সাব্বির পাশে এসে বলল- sorry, আবির। আমার জন্যই হল।
- কি হইছে?
- অরিন মেসেজ করল। তোর ওর সাথে যাবার কথা। আমাকে মাফ করে দে।আমি না অনেক খারাপ।আমি তোর কাছে promise করছি আমি ভাল হয়ে যাব। বিশ্বাস কর ,আর এমন থাকব না।আমি ভাবতাম তুই আমাকে দেখতে পারিস না। কিন্তু তুই আমাকে এতটা ভালবাসিস আমি জানতাম না। অরিনের সাথে যাওয়া হল না সে জন্য তুই মন খারাপ করিস না, please.
-ঐ, এত ভাব ধরিস না। বন্ধুর কাছে মাফ কিরে?তুই না বলিস, মেয়ে লাইফ এ একটা গেলে হাজারটা আসবে।
- হাহা, তুই অমন না আমি জানি।ঐ মেয়েকেই তোর জন্য ঠিক করে দিব। অরিন তোকে অনেক ভালবাসে।সব রাগারাগি manage করব আমি।তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

একটু হেসে আবির বলল- বুঝলাম। সাব্বির একটা গান শুনা তো। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে ...ঐটা।

সাব্বির গান গাচ্ছে আর আবির মুগ্ধ হয়ে শুনছে।

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি

বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
আমার হৃদয় পানে
চাইনি আমি .......

দুজন হেঁটে চলছে। অনেক দিনের চেনা বন্ধু তবুও এতদিন অচেনা ছিল। আজ থেকে অনেক বেশি আপন লাগছে।অরিনের জন্য মন খারাপ লাগছে একটু।কিন্তু সাব্বির যখন বলেছে, সব ও ঠিক করে দিবেই। এই বিশ্বাস আছে আবিরের। বন্ধুত্ব মানেই তো বিশ্বাস!!কখনও অন্ধ বিশ্বাস, কখনও দৃশ্যমান!!!!