আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করুন http://www.facebook.com/vhalobashar.golpo

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

ভালবাসা শিরোনামহীন

ভালবাসা শিরোনামহীন
লিখেছেন- sesh rater adhar

- আমি একটা কথা বলব।

বলে হঠাৎ করে মিষ্টির সামনে এসে বসল হৃদ্য।

- এতক্ষণও তো বলতেছিলা।
- হ্যাঁ, অন্য কথা।
- আচ্ছা বল।

মিষ্টি অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাল হৃদ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি। যে হাসি খুব খেয়াল করে না তাকালে দেখা যায় না। হৃদ্য অনেক খেয়াল করেই তাকিয়েছে তাই চোখে পরেছে। অনেক দিন থেকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না কথাটা। রিলেশন হয়ে গেল আজ ৩ মাস, এখন পর্যন্ত বলা হল না। ছিঃ,ছিঃ !কি লজ্জার কথা।

মিষ্টি বলল- কি হল? বল। অমন গাধার মত তাকিয়ে আছ কেন? আমাকে দেখনি কখনও?
- হ্যাঁ বলব। একটু সাহস দাও না আমাকে। খুব ভয় লাগছে।
- খুব সিরিয়াস কোন কথা?
- হ্যাঁ । আমি তোমাকে অনেক ভয় পাই।
-এইটাই তোমার কথা?
- না।
- আসো বুকে ফুঁ দিয়ে দেই। ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না? আমি তো আর তোমাকে খেয়ে ফেলব না। বল। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে।
- i love you.

মিষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে রইল হৃদ্যর দিকে। কথাটা পুরোপুরিও মুখ থেকে বের হয়নি হৃদ্যর, বলার মাঝে আটকে যাচ্ছিল। সামনাসামনি আজ প্রথম বলল ভালবাসার কথা। মোবাইল এ মেসেজ এ কত কিছু বলে, সামনে আসলে চুপ। কোন কথাই বের হয় না।

মিষ্টি বলল- এই কথাটা বলার জন্য এত কিছু?এমন পাগল কেন তুমি? জানো, তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার চেয়ে মায়া হয় অনেক বেশি। তুমি কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতন আচরন করো।সামনাসামনি i love you বলবা, তাও এত কিছু....... পাগল একটা।

মিষ্টি হৃদ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হৃদ্য হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠোঁটের কোণায় সেই হাসি নিয়ে বলল- " এই, উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যাব।"

হৃদ্য উঠে বলল-আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- আমি জানি। চল এখন।

দুজন হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা ধরে।আশেপাশে অনেক মানুষ।কেউ কেউ ওদের দিকে আড়-চোখে তাকাচ্ছে, কেউ কেউ ফ্যালফ্যাল করে। সুন্দরী মেয়ের পাশে ছেলে মানুষ দেখলেই মানুষ ভাবে, কি দেখে এই ছেলের সাথে প্রেম করেছে? তার চেয়ে ভাবনাকর্তা নিজেই কত সুন্দর !!!!

- হৃদ্য, তুমি যাও এখন। রাত হয়ে যাবে বাসায় যেতে তোমার। আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
- আমি আসি সাথে?তোমার হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত যাই?
-না না। ওখান দিয়ে বাজে ছেলেরা বসে থাকে। তোমার সাথে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
- একা থাকলে আরও বেশি বলবে। চল আমি যাই।
- লাগবে না।
- আরে লাগবে। চল তো।

হৃদ্য মিষ্টির সাথে ওর হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত গেল। রাস্তায় বখাটেগুলো ছিল। কয়েকটা বাজে কথাও বলল। সবগুলো গা জ্বালা করার মত। মিষ্টিকেই বলেছে কথাগুলো।

হোস্টেলের সামনে এসে হৃদ্যকে বলল মিষ্টি - শুধু শুধু আসলা তুমি। এসে কি হল? ঐ ছেলেগুলো বাজে কথা বলল আর তুমি বেকুবের মতন শুনলা। তুমি তো দেখতে একেবারে পালোয়ান বীরপুরুষের মতন না যে তোমাকে দেখে কিছু বলবে না ওরা। তুমি ইচ্ছা করলেও ওদের কিছু করতে পারবা না।মানা করলাম, তারপরও আসলা।

হৃদ্যর নিজেকে কিছু সময়ের জন্য অনেক ছোট মনে হতে লাগল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল শুধু।

- আমি দেখতে পালোয়ানের মতন হলে তুমি খুব happy হতে?
- সব মেয়েই চায় তার বয়ফ্রেন্ড এর তাকে সেভ করার মতন, security দেবার মতন abilty থাকুক। তোমার মতন হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শুধু কোথাও বসে থাকতেই ভাল লাগে, কোথাও চলাফেরা করতে না।
- তুমি কি আমাকে নিয়ে unhappy?
-না যা হবার হয়ে গেছে। আমি তোমাকে আমার লাইফ এ মেনে নিছি। যাও বাসায় যাও।
- না বাসায় যাব না।ভার্সিটি খোলা , একেবারে হল এ যাব।
- আচ্ছা দেখে শুনে যেও ।

হৃদ্য চলে গেল।
--------------------------------------------

মিষ্টির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আগে থেকেই হৃদ্যর উপর রাগ উঠে ছিল। তার উপর আবার মোবাইল রিসিভ করছে না। এমনি সারাদিন ২৪ ঘণ্টা মিষ্টিকে কল করতে থাকে হৃদ্য। আজ কি হল? না দিচ্ছে কল না ধরছে। কি বলেছে সন্ধায়? তাতেই এত রাগ করতে হবে? যাহ্‌ না ধরল। মিষ্টিও কথা না বলে থাকতে পারবে।মিষ্টি মোবাইলটা বন্ধ করে রাখল।

হৃদ্য হাসপাতালের বেড এ শুয়েই ডাক্তারকে বলল- ডাক্তার আংকেল, আমার মোবাইলটা ?
- রেস্ট নিন। হাত পা নাড়াতে পারছেন না, মোবাইল চাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুমান।
- please, আমার মোবাইলটা খুব দরকার। একটু দিন না।

ডাক্তার টেবিল এর উপর থেকে মোবাইলটা হৃদ্য কে দিল। মোবাইল পেয়েই মিষ্টিকে ফোন করল। switched off মোবাইল। অনেক বার চেষ্টা করল। নাহ, মোবাইল বন্ধ। পরে একটা মেসেজ করল মিষ্টিকে।

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠল সকাল ১১ টার দিকে। মোবাইলটা অন করল। সাথে সাথেই হৃদ্যর মেসেজ- আমি হাসপাতালে । তোমাদের medical college hospital এ। একটু দেখতে আস না আমাকে ।আব্বু আম্মুকে ভয়ে বলিনি। তুমি please আসো। আমার উপর রাগ করে থেকো না, প্লিজ।

মিষ্টি কিছু সময়ের জন্য অনুভুতিশূন্য হয়ে গেল। তারপর তারাতারি হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখল হৃদ্য বেড এ শুয়ে আছে। নাক, গাল, বাম হাত, ডান পা, মাথায় ব্যান্ডেজ। আর ডান হাত দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মাথার কাছে ওর বন্ধু শিমুল বসে বসে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে হৃদ্যর পাশে বসল।কাঁদোকাঁদো গলায় বলল- কি হইছে তোমার? কিভাবে এই অবস্থা?

হৃদ্য মুখ থেকে আপেল বের করে চুপ করে রইল। মিষ্টি বলল- কি হল? কথা বল না কেন?

শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দাঁড়াল। বলল- তোমরা কথা বল। আমি আসতেছি।

মিষ্টি আবারও জিজ্ঞাসা করল- বল,প্লিজ কি হইছে?কিভাবে?

হৃদ্য এতক্ষণে মুখ খুলল- তোমাকে যে ছেলেগুলো বাজে কথা বলেছিল, তাদের মারতে গিয়েছিলাম। একটাও মারতে পারি নায়। ওরাই উল্টা আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিসে। এলাকার মানুষ এনে পরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিছে।
- তোমাকে ওদের সাথে মারামারি করতে যেতে বলছে কে?
- ওরা তোমাকে বাজে কথা বলল আর আমি শুনব? তুমিই তো বলছ যে তোমার সাহসী বীরপুরুষ ছেলে পছন্দ।আমি না মারতে পারলাম, সহ্য তো করি নায় কথাগুলো। কাপুরুষের মত চলে আসি নায় ওদের ভয়ে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার জন্য সব করতে পারব।বিশ্বাস করো আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি তো একা ওরা অনেকগুলা ছিল,সবগুলোর পাঠার মত শরীর,তাই মেরে দিছে আমাকে । আমাকে ছেড়ে যেও না, please.

মিষ্টি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।দু চোখ দিয়ে টলটল পানি করে পড়ছে।
মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বলল-তুমি এমন পাগল কেন?আমি কি না কি বলছি তাতেই তুমি এমন করবা? তোমার যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যেত? আমাকে এত ভালবাস তো কষ্ট দাও কেন?আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি জানি তুমি অনেক ভাল। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক happy. আমাকে মাফ করবা না বল? আমি অমন কথা আর কখনও বলব না। আর এমন পাগলামি করো না !!!!
- এই কাঁদছ কেন? আমার খারাপ লাগছে।
- আচ্ছা কাঁদবো না আর। তুমি আমাকে শুধু ভালবাসবা অনেক বেশি বাসবা, তাতেই হবে। বাসবা না বল?
- হ্যাঁ, বাসব।
- তাহলে i love you বল।
- i love you.তুমি আমকে ছেড়ে যাবে নাত কখনও?
- কখনও না।

মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বসে রইল।হৃদ্য বলল- আপেল খাব। হাত ছাড়ো।
- না ছাড়ব না। আমি খাইয়ে দেই।এই যে হাত ধরেছি, সারাজীবনের জন্য। আর কখনও ছাড়ব না।

ღjrk

বন্ধু আমার একলা প্রহর

বন্ধু আমার একলা প্রহর
লিখেছেন- sesh rater adhar

- বের হচ্ছিছ না কেন এখনও ? তুই কি ওখানে ঐ কাজই করতে যাস না অন্য কিছু ? কি করিস এতক্ষণ ধরে ?

চিৎকার করছে বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আবির। প্রতিদিনকার রেগুলার রুটিন। কত যে সময় লাগে সাব্বিরের? বাথরুমে একবার ঢুকলে আর বের হবার খবর থাকে না। কি করে আল্লাহই জানে!

আবির আর সাব্বির ৩ রুমের একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ২ জন এক রুমে । বাকি ২ রুমে ৫ বড় ভাই থাকেন । সাব্বির আর আবির স্কুল কলেজে একসাথে পড়ত। এখন সাব্বির পড়ে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে computer science and engineering আর আবির পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানে। হলে সিট পেয়েছিল আবির। কিন্তু হলে উঠার পর থেকেই প্রতিদিন রাতে মিটিং-এ ডাক পড়ত। আর সেখানে বড় ভাইদের দেশ উদ্ধারের লেকচার শুনার জন্য বসে থাকতে হত।একদিন লেকচার শুনতে শুনতে হঠাৎ-ই তন্দ্রা চলে আসাতে হাই তুলেছিল আবির।আর সেই হাই তোলার অপরাধে কান ধরে ১ ঘণ্টা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তারপর হল থেকে চলে আসল। আর গেল না ।

এরপর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিল। ৩ রুমেই অ্যাটাচড বাথরুম। কারও সমস্যা হয় না। যত সমস্যা এই দুজনের। তাও সাব্বিরের জন্য।এই যে এখনও বের হওয়ার খবর নাই।আবির আবারও চিৎকার করে উঠল- তুই বের হবি নাকি দরজা ভেঙ্গে ফেলব?
- ছিঃ আবির , তুই এমন অশ্লীল কথাবার্তা বলতেছিস কেন? দরজা ভাঙ্গি মানে ? আমার লজ্জা শরম নাই নাকি ?
- তুই আবারও বাথরুমে বসে কথা বলতেছিস ? আমি বলছি না তোকে এই কাজ না করতে ?
-হেহ ! দুনিয়ার সব জায়গায় বসে কথা বলা সিদ্ধ থাকলে,বাথরুমে বসে কেন নিষিদ্ধ থাকবে ?আমি বলব , আরও বেশি বেশি বলব। গান গাইব আমি বসে বসে। ওহো ...হো....আহা ...আহা ... হাহা ....
-সাব্বির ,আমি তোরে খুন করে ফেলব।আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। বের হ।

সাব্বির বের হয়ে আসল। রাগে তাকিয়ে আছে আবির।
সাব্বির উলটা রাগ দেখিয়ে বলল - তোর জন্য একটু শান্তি মত .....যাহ্‌, তোকে বলে লাভ নেই। মানুষের অনুভুতি তুই বুঝিস না।
- বাথরুমে ২ ঘণ্টা ধরে বসে থাকার মধ্যে কী অনুভুতি আছে? আমি তো দেখছি না কিছু।
-তুই always এমন। আমি তোর বন্ধু না শত্রু মাঝে মাঝে বুঝি না। যা যা। এতক্ষণ চিৎকার করছিস আর এখন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?

আবির লুঙ্গি নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। আবির প্রতিদিন ২ বার গোসল করে। ঠাণ্ডা গরম সবসময় । সকালে একবার বিকালে একবার।আর সাব্বির ২-৩ দিন পর পর। ঠাণ্ডার সময় সপ্তাহেও একবার করে না। তবে কেউ যেন না বুঝে তাই গোসল করার কথা বলে শুধু মাথা ভিজিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে আসে। কত্ত বুদ্ধি !!!!

আবির আর সাব্বির সারাদিনই ঝগড়া করে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। মানুষ তার কাছের মানুষের সাথেই ঝগড়া করে বেশি। বন্ধুত্ব যত বেশি ঝগড়ার মাত্রাটাও তত বেশি। ছোট খাটো বিষয়ে দোষ ধরা ,সব কিছুতে খারাপ দিক খোঁজা, আর তা নিয়ে ঝগড়া। হালকা পাতলা মারামারি। এইতো বন্ধুত্ব। আবির এর রাগ বেশি , কিন্তু মারামারি পারে না। সাব্বির অনেক মোটা, সাব্বিরকে আবির মারলে সাব্বিরের কোনো feelings ই হয় না।

আবির গোসল করে বের হল। সাব্বির সঙ্গীত চর্চা শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালের নিয়মিত কাজ। বারান্দায় বসে একটা গিটার নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় সাব্বির। প্রতিদিন একই গান.... আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি..
গিটার হাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত , আবিরের খুব একটা ভাল লাগেনা জিনিসটা। তবুও সহ্য করতে হয়। কারও তো ভাল লাগে!!সাব্বিরের গানের একজন নিয়মিত শ্রোতা আছে। আবিরদের ফ্ল্যাটের সোজা এক ফ্ল্যাটে এক মেয়ে থাকে।বারান্দায় বসে সাব্বিরের এই গান সেই মেয়ে প্রতিদিন শুনে। এই গানও কারও ভাল লাগে?যে গলা !!!!মেয়েই নাকি সাব্বিরকে একদিন বলেছে-" ভাইয়া, আপনি সেদিন, 'আমার হিয়ার মাঝে' গানটা গাচ্ছিলেন, খুব ভাল লাগছিল।আমার অনেক প্রিয় গান । আমি প্রতিদিন আপনার গান লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।আপনার ভয়েসটা অনেক sweet . "
সেই থেকে ঐ একই গান। আগে তাও একেক দিন একেক গান ছিল। আর এখন গিটার হাতে প্রতিদিন আমার হিয়ার মাঝে।

আবির শার্ট পরতে পরতে বলল- হইছে, থাম এখন। সারারাত তো ফুছুর ফুছুর করে একজনের সাথে প্রেম করলি মোবাইলে। এখন সকালে উঠে আর একজনকে গান শুনাইতেছিস। তুই যে কী!!!
- তুই এত রাগ করিস কেন?তুই এক নিরামিষ । আর আমারেও চাস নিরামিষ বানাইতে। দোস্ত, একটু enjoy কর life. দেখ আমাকে দেখ। শিখ কিছু আমার থেকে।খালি তো পারিস, ঐ সার্কিট মিলাইতে আর বই নিয়া বসে থাকতে।একটু মজা কর ।
- আমি অনেক enjoy করি লাইফ।
- কত যে করিস জানি। একটা গার্লফ্রেন্ড, তার সাথে দিনে ১০ মিনিটও কথা বলতে দেখি না ।
- চুপ কর। তুই গান গা। ঐটাই ভাল ছিল।

আবার শুরু আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে...

আবির বের হয়ে গেল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।যাবার সময় দেখল বড় ভাইরা সবাই ঘুমাচ্ছে। এরা সারারাত card খেলে আর movie দেখে।দিনের বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। উঠে দুপুরের খাবার খায় একবারে। আবিরের তা করলে চলে না। সকালে বুয়া আসেন না। তাই বাহিরে খেতে হয়। প্রতিদিন একই দোকানে সকালের নাস্তা করে।একটা কলা , একটা রুটি।খাবার পর প্রতিদিন দোকানদার বলবে - মামা , কোনটা দিব ?
-মামা, আপনাকে এক কথা প্রতিদিন বলতে হয়? আমি smoke করি না।
- ও, মামা মনে থাকে না।

আবির একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটিতে যায়।আজ একটা মাত্র ক্লাস।
ক্লাস শেষ করে বের হল।অরিন অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছে। মেয়েটার কি কোন কাজ নেই নাকি ? আর মাত্র কয়েকদিন পর admission test.পড়াশুনা কিছু করে বলে তো মনে হয় না। অরিন ঢাকাতে এসেছে intermediate এর সময়। ঢাকার একটা কলেজে পড়ত, কলেজের হোস্টেলে থেকে।এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছে। থাকে একটা গার্লস হোস্টেলে।অরিনের এক বান্ধবী জেনিকে প্রাইভেট পড়াত আবির।মাঝে মাঝে অরিন যেত জেনিদের বাসায়।জেনির থেকেই নাম্বার নিয়ে পরে আবির এর সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা।খুবই ভাব ধরা ছেলে আবির, অরিনের ধারণা।ফোন দিলেই একটা busy busy ভাব দেখাত।অনেক কিছুর পর রিলেশন হল।
আবির ফোন ধরল।
অরিন বলল - কি খবর? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি?
-আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি ? ক্লাসে ছিলাম।আর তোমাকে এত বার কল করতে মানা করছি না?আমার ইচ্ছা হলে আমি তোমাকে এমনিই ফোন দিব ।
-সবসময় এমন করে কথা বল কেন?
- এক type কথা always . আমি রাখি, ভাল লাগছে না।
- আমি TSC তে । তুমি আস।
-তোমার কি আজ আসার কথা?
-না, তুমি আস। সবসময় যেখানে থাকি , সেখানেই আছি।আস ।

আবিরের এসব ভাল লাগেনা। ভাল-বাসা-বাসি ওর কাছে ন্যাকামি লাগে। কোন পাগলে পেয়েছিল , রিলেশন করতে গেল। প্রতিদিনই ঝগড়া হয়। মেয়েরা কথায় কথায় অভিমান করে, রাগ করে। আর আবির কখনই অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মত রাগ ভাঙ্গাতে যায় না। বরং যে কয়টা দিন ঝগড়া ,ঐ দিনগুলোই ভাল থাকে মনে হয়। অভিমান পর্ব শেষ করে অরিন নিজেই আসে কথা বলতে। আবির মাঝে মাঝে ভাবে ,না এত রাগ ভাল না। রাগ কমাতে হবে। কিন্তু হয়ে উঠে না।

- আবির , এই দিকে আয়।

ইলিয়াস ডাক আবিরকে। ইলিয়াস আবিরের ক্লাসমেট , কবিতা লিখে। আবির ছাড়া কেউ ওর কবিতা শুনে না । আবিরের কবিতা কখনই ভাল লাগে না। তাও শুনে। বন্ধুর লেখা বলে কথা। কোন ছন্দ নাই , শুনে বুঝা যায় না গল্প না কবিতা । তবুও আবির কখনও বিরক্ত হয় না।আবিরকে কবিতা শুনানোর পর ইলিয়াস বলে সবসময় - "কেমন হইছে রে?"
আর আবিরের কথা -অনেক সুন্দর দোস্ত। তুই বই বের কর। অনেক চলবে।তোর কবিতার সাথে জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনেক মিল । আমার তো মনে হয় তোর কবিতা তার চেয়েও সুন্দর হয়। খালি বের কর বই , famous হয়ে যাবি।
ইলিয়াস কথাগুলো শুনলে ওর মুখটা লাজুক ভাবে ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ইলিয়াসকে এত খুশি দেখতে আবিরের অনেক ভালই লাগে।
আবির ইলিয়াসের কাছে গিয়ে বলল - কবি, কি খবর?নতুন কবিতা আছে?
- হ্যাঁ রে , নতুন একটা লিখলাম।আমাদের ক্লাস এর নদীকে চিনিস না? ওকে নিয়ে লিখlলাম। তুই কিন্তু আবার ওকে বলে দিস না। ওকে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগে। সব উলট-পালট হয়ে যায়।
- দোস্ত , কি বলিস? আচ্ছা শুনা তারাতারি।
-
ও নদী,
জানো কি,
তোমাকে ভালবেসে
আমি কাঁদি?

তুমি এমন
একবারও দেখ না ,
আমাকে মনে
রাখো না।

আমি বসি
তোমার পিছনে ,
চুল দেখি
ঘ্রাণ শুকি।

তবুও তুমি
বুঝ না,
ভালবাসি
বুঝ না।

- দোস্ত, তুই তো ফাটাইয়া দিছিস। কি লিখলি এইটা? অসাধারণ হইছে। তুই যে এত ভাল লিখতে পারিস আমি জানতাম না, খালি একবার নদীর সামনে যাবি,আর কবিতাটা পড়ে শুনাবি। দেখবি ও পাগল হয়ে গেছে।
-তুই সত্যি বলছিস?
-আমার মিথ্যা বলে লাভ কি বল?তোর মত কেউ কি ওকে কবিতা লিখছে নাকি ? একবার গিয়ে বল, রাজি না হলে আমার রিস্ক।
-নদী কি লাইব্রেরিতে আছে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাই। ওকে কবিতা শুনিয়ে আসি।তুই একটু দোয়া কর।
-ok, যা দোস্ত। কি হয় জানাস।

ইলিয়াস দৌড়ে চলে গেল নদীকে কবিতা শুনাতে। আবিরের কারনে ওর কোন বন্ধুর মন ভাল হয়ে গেল। ভাবতেই ভাল লাগছে। আবিরেরও মন ভাল।
আবির TSC তে আসল। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। আবির গিয়ে দাঁড়াল অরিনের সামনে। অরিনের চোখ ছল ছল। অরিন বলল- তুমি সবসময় আমাকে দাড় করিয়ে রাখো। তুমি এমন কেন?আমার কষ্ট হয় না?
- ওহ! আবার এই টাইপ কথা? আমার শুনতে ভাল লাগছে না । অন্য কিছু বলার থাকলে বল। এসব ন্যাকামি আমার ভাল লাগে না।
-তুমি সারাজীবন এমন থাকবে? সারাদিনে একটু খোঁজখবরও নাও না। একটা sms কখনও কর না। কথা বলতে গেলে ৫ মিনিটের পর বল তোমার বিরক্ত লাগছে।আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
-তোমাকে কখন বললাম, তুমি দেখতে খারাপ?এসব কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পার না? শুনতে একদমই ভাল লাগছে না।চুপ করে থাক।
- তুমি আমাকে ভালবাস না, আমি জানি ।
-হ্যাঁ, ভাল হয়েছে ভালবাসি না।যাও এখান থেকে।আমি ভালবাসি না তাহলে আমার সাথে কথা বলছ কেন?বিরক্তিকর।

অরিন কিছু বলল না।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কাঁদতে শুরু করে দিল।নিঃশব্দ কান্না। মেয়েরা কখনই তাদের প্রতি অবহেলা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু অরিন অনেক সহ্য করেছে। আর না । এভাবে কারও সাথে থাকা যায় না। অরিন চলে গেল চোখ মুছতে মুছতে আবিরের সামনে থেকে।আবিরের কিছুই মনে হল না। মনে হচ্ছে সব আগের মতই আছে।

বাসায় চলে আসল আবির। রুমে গিয়ে দেখল সাব্বির সাজ-গোঁজে ব্যস্ত। ছেলে মানুষ ও কত সাজগোজ করে !!
আবিরকে দেখে বলল- যাবি চল।
-কোথায়?
-এই একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাব। কয়েকদিন ধরে কথা হচ্ছে ফেসবুক এ ।দেখতে না জোস।চল না ।
-এসব কি বাদ দিবি তুই?কোনদিন কোন ঝামেলায় পরিস দেখিস।এতগুলো মেয়ের সাথে তোর relation.
- দোস্ত, তুমি বুঝবা না। আমার তো মনে হয় তোমার প্রবলেম(!!!) আছে,তাই মেয়ে ভাল লাগে না ।
-ভাল হইছে।তোর মত অত মেয়ে আমার লাগে না।
- কি করা বল? কোন মেয়ে একটু সুন্দর করে কথা বললে আর ঠিক রাখতে পারিনা নিজেকে।আর মেয়েরাও আমাকে চায়।
-হ্যাঁ,থাক মেয়ে নিয়ে। যেদিন ঝামেলায় পড়বি সেদিন বুঝবি। তখন আমারে ডাকিস,যাব নি তোমাকে ভাল মত উদ্ধার করতে!!
- তুই কি বন্ধু নাকি?তুই তো আমার শত্রু। তাই বরদোয়া করিস।

এক গাদা body-spray শরীরে দিয়ে বের হয়ে গেল সাব্বির।পুরো রুম এত এলোমেলো হয়ে আছে। দেখলে মনে হয় যেন কিছুক্ষণ আগে ঝড় বয়ে গিয়েছে এখান দিয়ে।আবির সারাদিন রুম গুছিয়ে রাখে,আর সাব্বিরের দায়িত্ব তা এলোমেলো করা । এই ছেলেটা এত অগোছালো আর এত এমন কি করে???আবির খুঁজে পায় না।সারাদিন মেয়ে নিয়ে থাকে। আর কোনদিকে কোন মনোযোগ নেই ।
আবির গিয়ে বারান্দায় বসল। আজ অরিনের সাথে এতটা করা উচিৎ হয়নি।মেয়েটা এত ভালবাসে আর আবির কিনা সবসময় অপমান করে।আবিরও তো ভালবাসে, তাইতো রাগারাগি করে।আবির যাদের ভালবাসে তাদের ভালবাসা দেখাতে পারে না কখনও।তাদের সাথেই বেশি খারাপ ব্যবহার করে।সাব্বিরের সাথে করে, অরিনের সাথে করে।কিন্তু ওরা ভাবে আবির ওদের ভালবাসে না।নাহ! নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।
আবির যেই কাজ কখনই করেনি সেই কাজ আজ করল। অরিনকে কল করল । কল করে আরও একটা অবাক করা জিনিস করল,অরিনকে sorry বলল।

-অরিন, তুমি রাগ করনি তো?
-না।
- তুমি কোথায় এখন?
- রেল-স্টেশনে। টিকেট কাঁটি।
- কেন? কোথায় যাবে?
-আম্মুকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে।তাই একটু বাসায় যাব।
-ওও..আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।আচ্ছা তুমি ২ টা টিকেট কাটো। আমরা দুজন একসাথে যাব। তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।আমি আবার বাস এ চলে আসব ঢাকা।
- সত্যি, বলছ তুমি?
-হ্যাঁ, সত্যি। আমি কি ভাল কিছু করতে পারিনা নাকি? আচ্ছা ট্রেন কয়টায় ?
- সন্ধ্যা ৬ টা আর ৭ টায়।
- ৭ টার টিকেট কিনো। আমাক মেসেজ করে সিট নাম্বারটা বলে দিও। আমি এইদিকে একটু কাজ শেষ করে চলে আসব।
- আচ্ছা।

আবিরের ভাল লাগছে খুব।কিছু পড়াশুনা করে নিল।আবির কিছুটা excited. মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম ডেটিং-এ যাবে। তাও আবার ট্রেন-এ।

..............................................................................

সাব্বির ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে আছে। যেই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা তার আরও ১ ঘণ্টা আগে আসার কথা। এখনও আসেনি। মোবাইল-এ টাকাও নেই যে কল করবে ।

-সাব্বির ...চলে এসেছি।

সাব্বির দেখল ইমা এসে পড়েছে।

- ওহ আস, বস।আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। এত দেরি করলে কেন?
-বোলোনা আর। ভাইয়া এত ঝামেলা করল।বের হতে দিবেই না। কত মিথ্যা বলে বের হলাম।
- ও আচ্ছা। জানো, আমি না কখনও কোন মেয়ের হাত ধরিনি। তোমার হাত গুলো অনেক সুন্দর। আমি ধরি?
- ধর,আমিও কখনও কোন ছেলের হাত ধরিনি।

সাব্বির ইমার হাত ধরল। এর আগেও অনেকেরটা ধরেছে।

- কি সফট তোমার হাত। ইমা তুমি না খুব সুন্দর। i love you. আমার তোমার আগে অন্য কোন মেয়েকে এত ভাল লাগেনি।কত্ত মেয়ে ঘুরে আমার পিছনে ।পাত্তাই দেই না।
-তাই?
- হ্যাঁ, তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে অনেক। ধরব কি আমি?
- জানিনা। (লাজুক ভাবে)

সাব্বির ইমাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কোনভাবেই ইমাকে কাছে পাচ্ছে না। ইমা চোখ বুঝে আছে।সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে সাব্বিরকে।হ্যাঁ, সত্যি একটা অনেক লম্বা মোটাসোটা ছেলে সাব্বিরকে ধরে আছে।সাব্বির ও অনেক মোটা। তবুও ওকে টেনে তুলে ফেলল। তুলেই এক ঘুষি নাকে।
ইমা চোখ খুলেই অনেক ভয় পেয়ে গেল। ওর বড় ভাই সাব্বিরের গলা ধরে মারছে। ইমার বড় ভাই বলল- ইমা,তুই বাসায় যা। আমি আসছি।তারাতারি যা। একবারও তাকাবি না পিছনে।

ইমা দৌড়ে ছুটে গেল। সাব্বিরের দিকে তাকালও না।
সাব্বির বলল- ভাইয়া আর মারবেন না। আর জীবনে প্রেম করব না। মাফ করে দেন।
-কেন রে? প্রেম করার সখ শেষ?এখনও কিছুই হয়নি।চল তোমারে সাইজ করতেছি।

বলেই ছেলেটা সাব্বিরকে আরও কয়েকটা ঘুষি মারল। তারপর কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?সাথে আরও ৩ জন।মোবাইল এ টাকাও নেই যে আবিরকে কল করবে। বড় অসহায় লাগছে নিজেকে।

আবির রেডি হয়ে নিল।নতুন একটা শার্ট আর প্যান্ট পরল।ফার্স্ট ডেটিং বলে কথা।নিজেকে পরিপাটি করে নিল। ৬ টা বাজে এখন। একটু দেরি হয়ে গেল।অবশ্য এখনি বের হলে ৭ তার আগেই যাওয়া যাবে।অরিন ফোন করল আবিরকে।আবির বলল- তুমি ট্রেন-এ গিয়ে বস, আমি রওয়ানা দিয়েছি। আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আবির বের হয়ে একটা রিকশা নিল।কমলাপুর যাবে।কতদুর যাবার পর একটা unkonown নাম্বার থেকে কল আসল।unknown নাম্বার এর কল আবির এখন ধরে না।কিন্তু আজ ধরল যেন কি মনে করে।আবির হ্যালো বলার আগেই সাব্বিরের কান্না জড়ানো কথা - আবির দোস্ত,আমাকে বাঁচা। আমি ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের সামনে। আমাকে মারতেছে।please, দোস্ত আয়।

আবির কিছু বলার আগেই কল কেটে গেল।আবির অস্থির হয়ে উঠল।তারাতারি রিকশা থেকে নেমে একটা সিএনজি নিল। আবাহনী মাঠে যেতে বলল- মামা, তারাতারি যান। ডাবল ভাড়া দিব মামা। তারাতারি।

২০ মিনিট পর ওখানে পৌঁছে আবির। কয়েকজন ছেলের সাথে সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে।ওরা সাব্বিরকে ধরে রেখেছে। আবির ওখানে গিয়ে বলল- ভাইয়া, ওকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? কি হইছে?

-আরে, আবির তুমি? ওকে চিন নাকি?

ইমার বড় ভাই আবিরকে বলল। উনি আবিরের ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই।

- হ্যাঁ ভাইয়া। ও আমার বন্ধু।
- ও, তুমি এত ভদ্র। তোমার ফ্রেন্ড এমন কেন? আজ আমার বোনের সাথে ধরলাম ধানমণ্ডি লেকের ওখানে। যাও নিয়ে যাও।ভাল হয়ে যেতে বইল। তোমার ফ্রেন্ড, তাই কিছু বললাম না।

সাব্বিরকে নিয়ে আসল আবির। দুজন হাঁটছে রাস্তায়।৭ টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। মাঝে অরিন কতবার ফোন দিল।ধরা হল না।দুজনই চুপচাপ হাঁটছে, কেউ কিছু বলছে না। কতক্ষণ পর আবির বলল- দোস্ত চল, রেল-স্টেশন থেকে ঘুরে আসি।

সাব্বির হ্যাঁ না কিছুই বলল না। একটা সিএনজি নিয়ে রেল-স্টেশন এর দিকে যাচ্ছে দুজন।আবিরের মোবাইল বেজেই চলছে। ধরছে না। ধরে কি হবে?৭ টা পার হয়ে গেছে।রেল-স্টেশন এ যখন নামল তখন ৭ টা ১৫ । ট্রেন তো লেট ও করতে পারে।সাব্বিরকে নিয়ে দৌড়ে আবির অরিনের ট্রেন এর দিকে যাচ্ছে।কিন্তু না, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।সাব্বির বুঝছে না আবির কেন এমন করছে।

- দোস্ত কি হইছে তোর? এমন করছিস কেন?
- কিছু নারে। চল কিছুক্ষণ মানুষ দেখি রেল-স্টেশন এর।দেখ কত মানুষ , সবাই কত ব্যস্ত।

আবিরের মোবাইল বেজেই চলেছে। সাহস হচ্ছে না ধরার। মেয়েটা আবার অভিমান করল।ট্রেন চলে যাচ্ছে।আসতে আসতে গতি বাড়ছে।দূরে সরে যাচ্ছে। হয়ত এর থেকেও অনেক দূরে অরিন চলে যাচ্ছে, আবিরের জীবন থেকে।প্রথম কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছা করল। তাও হল না আবিরের।

সাব্বির পাশে এসে বলল- sorry, আবির। আমার জন্যই হল।
- কি হইছে?
- অরিন মেসেজ করল। তোর ওর সাথে যাবার কথা। আমাকে মাফ করে দে।আমি না অনেক খারাপ।আমি তোর কাছে promise করছি আমি ভাল হয়ে যাব। বিশ্বাস কর ,আর এমন থাকব না।আমি ভাবতাম তুই আমাকে দেখতে পারিস না। কিন্তু তুই আমাকে এতটা ভালবাসিস আমি জানতাম না। অরিনের সাথে যাওয়া হল না সে জন্য তুই মন খারাপ করিস না, please.
-ঐ, এত ভাব ধরিস না। বন্ধুর কাছে মাফ কিরে?তুই না বলিস, মেয়ে লাইফ এ একটা গেলে হাজারটা আসবে।
- হাহা, তুই অমন না আমি জানি।ঐ মেয়েকেই তোর জন্য ঠিক করে দিব। অরিন তোকে অনেক ভালবাসে।সব রাগারাগি manage করব আমি।তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

একটু হেসে আবির বলল- বুঝলাম। সাব্বির একটা গান শুনা তো। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে ...ঐটা।

সাব্বির গান গাচ্ছে আর আবির মুগ্ধ হয়ে শুনছে।

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি

বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
আমার হৃদয় পানে
চাইনি আমি .......

দুজন হেঁটে চলছে। অনেক দিনের চেনা বন্ধু তবুও এতদিন অচেনা ছিল। আজ থেকে অনেক বেশি আপন লাগছে।অরিনের জন্য মন খারাপ লাগছে একটু।কিন্তু সাব্বির যখন বলেছে, সব ও ঠিক করে দিবেই। এই বিশ্বাস আছে আবিরের। বন্ধুত্ব মানেই তো বিশ্বাস!!কখনও অন্ধ বিশ্বাস, কখনও দৃশ্যমান!!!!

শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৩

শুন্যতা

শুন্যতা
✍লিখেছেনঃ অন্ধকারের রাজপুত্র


রাজ আজ বাসায় ফিরছে । ট্রেনের টিকিট না পাওয়াতে বাধ্য হয়ে ছাদে বসে আসতে হচ্ছে তাকে । অবশ্য এর আগে কখনও ছাদে বসার অভিজ্ঞতা ছিল না তাই কেমন যেন ভয় হচ্ছিল তার । কিন্তু আজ ভয়টা তাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না, আজ তার মাথায় অন্যকিছুর একটা মোহ কাজ করছে, কিসের মোহ সেটা বুঝতে তার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । রাজের পুরনো স্মৃতি ভুলে যাওয়ার একটা ছোটখাটো মানসিক রোগ আছে । তবে পুরনো দিনের সাথে মিলে যাওয়া ছোট খাটো কিছু ঘটনা চোখে পরলে আবার সেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় ।

ট্রেন অবিরাম ছুটে চলছে দিগন্তের পথ ধরে । ধু ধু বাতাসে রাজের চুলগুলো দিব্বি উড়ছে । কখনও বা ধূলি এসে চোখের কোণায় জমছে, রাজ বারবার হাত দিয়ে চোখ মুছে যায় কিন্তু আবার সেই ধূলির পুনারাবৃত্তি ঘটে । নিরুপায় হয়ে ব্যাগের ভেতরে কিছুক্ষন হাতরে সানগ্লাসটা খুঁজে পেলো । সানগ্লাসে চোখ পড়তেই খেয়াল করলো কোণার দিকটায় একটু ফেটে গিয়েছে। সানগ্লাস থেকে মনে পড়ে গেলো এটা অপূর্বের দেয়া গিফট ।

অপূর্ব প্রায় শপিং মলে গিয়ে অযথা ঘুরাঘুরি করতো আর মেয়ে দেখত । একদিন রাজকে কল দিয়ে জোর করে শপিং মলে ডেকে আনে । সেদিন অবশ্য রাজের জন্মদিন এটা সে জানতো না ।

“কিরে সারাদিন ঘরে বসে ডিম পারিস নাকি? এতো করে জোর করতে হয় কেন তোকে? এক ডাকে চলে আসতে পারিস না? শালা আস্ত একটা আঁতেল তুই, এভাবে বন্ধুত্ব চলে নাকি? ”।

“এসব কথা এখন ভালো লাগছে না আমার । আর বন্ধুত্তের লেকচার দিস না আমায় । তুই কোন ধরণের বন্ধু জানা হয়ে গিয়েছে আমার, আজ সবাই আমার জন্মদিনের উইশ করেছে । বাকি ছিলি তুই কিন্তু তুই তো আছিস রমণীদের পিছে পিছে”।

এই বলে রাজ চুপ হল যে আর কথাই বলছিল না অপূর্বের সাথে । অপূর্ব খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো । পরে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য অপূর্ব রাজকে একটা সানগ্লাস গিফট করে দিলো । রাজ নিতে চাইছিল না, অনেক জোরাজোরিতে সানগ্লাসটা খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো ঐদিন । পরে অপূর্ব বুঝতে পারলো কীভাবে রাজের রাগ ভাঙ্গান যায় । রাজ খাবারের প্রতি অনেক দুর্বল কিনা তাই ওকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে মন ভরে খাইয়েছিল ।

ট্রেনের অনবরত ঝাঁকুনিতে রাজের স্মৃতিচারণা থেমে যায় । দুপুর প্রায় গড়িয়ে পড়লো । রাজের খুব খিদে পেয়েছে । আসার পথে টিফিনে করে কে যেন নুডুলস পুরে দিয়েছিল । নুডুলস খেতে খেতে হঠাৎ হলুদ রঙের টিফিন বক্সের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো,

কলেজ লাইফে মেয়েদের মধ্যে অধরাই রাজের খুব কাছের বান্ধবী ছিল । ওরা একে অপরের সাথে এতোটাই সময় কাটাতো যে অনেকেই ভাবতো এরা সম্ভবত প্রেমিক-প্রেমিকা । তবে এটা নিয়ে ওরা কেউ মাথা ঘামাতো না । অধরা রাজকে অনেক দেখতে পারতো । রাজ নুডুলস খুব পছন্দ করে তাই ২ দিন পর পর একটা হলুদ টিফিন বক্স করে ওর পছন্দের নুডুলস রান্না করে আনত । রাজও অধরাকে নিরাশ করতো না । দোকান থেকে অধরার পছন্দের আইসক্রিমটা কিনে দিতো । এরপর দুইজন হাঁটতে হাঁটতে আর গল্প করতে করতে প্রতিদিন হারিয়ে যেত কোন এক অজানার পথে ।

একদিন শপিং করার কারনে অধরার ব্যাগে জায়গা হচ্ছিল না বলে রাজের ব্যাগে টিফিন বক্সটা রেখেছিল । পরে আর ফেরত দেয়ার কথা মনেই ছিল না।এভাবেই বক্সটা রাজের কাছে থেকে যায় ।

ট্রেন এখন এসে থামল কুলিল্লা জংশনে । অধরাকে নিয়ে অতীতের ঘোরটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো । কোন দিকে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলো খবরও পেলো না ।

ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে । কোথায় যেন একটা ঝামেলা হয়েছে তাই ছাড়তে ঘণ্টা খানেক লাগতে পারে । হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়া শুরু করলো । রাজ তাড়াতাড়ি ট্রেনের ছাদ থেকে নেমে এলো । ছাউনির নিচে এক টং এর দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো । এই বৃষ্টিভেজা পরিবেশে এক কাপ গরম চা খেতে পারলে মন্দ হতো না । ভেজা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দোকানীকে এক কাপ চা দিতে বলল । চায়ের কাপে চুমুক দিতেই হঠাৎ চোখ পড়লো সামনে । দুই বন্ধু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খুব জমবেশ আড্ডা দিয়েই চলেছে । কেন জানি ব্যাপারটা তার বহু কালের পরিচিত মনে হচ্ছে। খানিকটা চিন্তা করতে গিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো । এক মুহূর্তের জন্য কোন এক গভীর স্মৃতিতে হারিয়ে গেলো ।

“অরণ্য, ওই অরণ্য । ওই ব্যাটা ,রাস্তার এইদিকটায় আমি । ছাতাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি আয় , আমি ভিজে যাচ্ছি তো”
“ তুমি ভিজলে আমি কিতা করমু মামা? যাও খিচকাও!! ফুটবল খেলতে বের হইসিলা , আমারে ডাকো নাই ক্যান? অখন বিপদে পরস আর আমারে ডাকো। এতো খাতির নাই মামা, বেশি দরকার হইলে তুমি এইপারে আইসা যাও”
রাজ নিরুপায় হয়ে নিজেই রাস্তা পার হল । শীতের প্রকোপে খুব কাঁপছিল ।
“কিরে মামা এতো কাঁপিস ক্যান? শীত লাগতেসে নাকি?”
“হ্যাঁ,দোস্ত। এতো বৃষ্টির মধ্যে ধুম ধারাক্কা ফুটবল খেলে এখন শরীরের বারোটা বেজে গিয়েছে।খুব ক্লান্ত লাগছে এখন”
“এইসব কথা আমারে ক্যান কও? খেলার টাইমে তো একলা একলা খেলতে গেসিলা। আমারে ডাক দিলে কি ক্ষতি হইত তোমার?” অরণ্য বাগে পেয়ে এখন সব উসুল করছে।
“সরি রে । এতো কিছু খেয়াল ছিল না । প্লীজ রাগ করিস না । খুব ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে আমার , কিছু কর না দোস্ত?”
অরণ্য সব সময় উপরি রাগ দেখিয়ে মজা নিতো কিন্তু শেষমেশ ঠিকই সব কাজ করে দিতো । রাজকে নিয়ে একটা টং এর দোকানে বসে গেলো । রাজ কাঁপতে কাঁপতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ওদিকে অরণ্য খিলখিল করে হাসছে, মাঝে মধ্যে দু একটা গুঁতোও দিচ্ছে।

এক পশলা বৃষ্টিভেজা বিকেল । দুই বন্ধুর মাঝে চলছে খুনসুটি, চলছে হাসাহাসি । এই খুনসুটির মজা যেন আর শেষ হতে চায় না, এই আনন্দ যেন অনন্তকালের । সেই অন্তরঙ্গ হাসাহাসির কাছে যেন বৃষ্টির টুপটাপ শব্দও ফিকে হয়ে যাচ্ছিল ।

হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে ভ্রম থেকে বেরিয়ে এলো । বৃষ্টি প্রায় অনেকটা কমেছে এখন । চায়ের টাকাটা পরিশোধ করে ট্রেনের দিকে ছুটে গেলো । এখন ছাদে বসাটা খুব একটা সুবিধের হবে না । ট্রেনের ভেতরে একটা সিট খালি পেলো ওটাতেই বসে গেলো । আবার ট্রেন চলা শুরু হল । চলন্ত ট্রেনের জানালা হতে সূর্যাস্ত আর দেখা হল না, মেঘলা আকাশের কোন এক কোণায় লুকিয়ে পড়েছে সন্ধ্যা । সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ দুটো কখন যে বন্ধ হয়ে গেলো আর খবর পেলো না ।

“শতবর্ষ ধরে থাকা তোমার অপেক্ষা আমি । তোমার ঠোঁটের ওই রহস্যমাখা হাসি, তোমার অগ্নিঝরা আঁখি, তোমার গোধূলি বর্ণ চুল আর আবেগঘন কণ্ঠ। আজ সব আমার ভালোবাসায় জড়ানো সব স্মৃতি, আমার চোখের কোণ থেকে আজও বেয়ে পড়ে অশ্রু হয়ে”, অহনার ডায়েরি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ছিল রাজ ।

অহনা অনেকটা দার্শনিক টাইপ মেয়ে, সবসময় চুপচাপ থাকে আর সারাদিন কি যেন চিন্তা করে । পুরো সার্কেলে ওর প্রভাবটাও খারাপ ছিল না । সবাই যখন কোন সমস্যা নিয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় থাকতো তখন অহনা অনেক ভালো একটা সমাধান সবাইকে বাতলে দিতো । আর এই জন্যই রাজ যেকোনো সমস্যায় আগে অহনার সাথে কথা বলতো কিন্তু রাজের সাথে অহনার সব সময় কোন একটা পয়েন্টে গিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যেত । অনেক তর্কা-তর্কী শেষে রাজ ওর কথাই মেনে নিতো ।

ডায়েরীর লেখাটা পড়া শেষ হতে না হতেই আচমকা ঝড়ো বেগে কে যেন টান দিলো ডায়েরিটা ।
“দেখ ,মানুষের ডায়েরি এভাবে লুকিয়ে পড়া খুব বাজে একটা ব্যাপার । তুই আমার ভালো বন্ধু মানলাম কিন্তু তাই বলে...... প্লীজ সামনে থেকে এরকম আর করিস না” , অহনা অনেকটা রাগত স্বরে বলল ।
“এতো পার্ট নাও কেন আপু? এতো রোম্যান্টিক কথা কার জন্য লেখা হচ্ছে শুনি? তলে তলে এতদূর । হুম! বুঝি সব বুঝি । কবি- সাহিত্যিক মানুষ প্রেমে পড়লে এমন সব লুতুপুতু লেখাই লিখে। তোর মজনুটা কে একটু শুনি?”।

ঐদিন অবশ্য কোন কারনে অহনার মাথা খুব খারাপ ছিল । রাজের ঠেস মারা কথাটা গায়ে কাঁটা হয়ে লেগেছিল কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটা দিলো । অহনাকে থামানোর জন্য রাজ হঠাৎ পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে । এক মুহূর্তও দেরি হল না,রাগের মাথায় রাজকে সজোরে এমনভাবে ধাক্কা দিয়ে বসলো যে ধাক্কাটা পাবার পর সে একদম মাঝ রাস্তায় চলে এলো । রাজ শুধু দেখতে পেলো একটা বড় বাস ওর দিকে এগিয়ে আসছে । এরপর শুধুই অন্ধকার ......

হঠাৎ চোখ খুলে গেলো । খেয়াল করলো একজন লোক ওকে বার বার ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলতে চেষ্টা করছে ।
“এইযে ভাই উঠুন । ট্রেন চট্টগ্রাম চলে এসেছে । আর কত ঘুমাবেন? সবাই তো চলে গিয়েছে, পুরো বগি খালি এখন । আপনি বাসায় যাবেন না?”
চোখ মুছতে মুছতে এদিক ওদিক একবার ভালো করে তাকাল,কেউ নেই । লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করল । এরপর ব্যাগ নিয়ে ট্রেন হতে নেমে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।

রিকশায় চড়া অবস্থায় হাসছে আর ভাবছে, “ নাহ! অহনা ঐদিন কোন ধাক্কা মারে নি । একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বটে পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায় । এটা নিছক একটা দুঃস্বপ্ন ছিল । তবে ভালোই হল এই সুবাদে অহনার কথাও মনে পড়ে গেলো”
কতদিন যে দেখা হয় নি পুরনো বন্ধুগুলোকে । ট্রেন যাত্রায় একে একে সবার কথাই মনে পড়ে গেলো । এবার সবার সাথেই একত্রে দেখা করবে সে কিন্তু কাউকে কিছু জানাবে না । সে চায় এবার সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে ।

বাসায় ফিরতেই পাশের বাসার তাউসিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো । তাউসিফ বলল,
“কিরে কি খবর তোর? কখন এলি?”
“এইতো এলাম মাত্র । তোর কেমন যাচ্ছে? আচ্ছা শোন, আমি এখন অনেক টায়ার্ড তাই কথা বাড়াচ্ছি না । কাল আমি অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনার সাথে একত্রে দেখা করবো । আমি যে এসেছি এটা কাউকে জানাবি না। তুই সবাইকে কাল কল দিয়ে ডেকে আনবি”।
“সবার সাথেই তো দেখা করার কথা বললি। আচ্ছা সবাইকে ডাকবো কিন্তু ওর কথা .........। কি ভেবে যেন তাউসিফ এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো ।
“সরি, তোর কথা বুঝলাম না । আর কেউ বাকি আছে নাকি? এই চার জনই তো।” রাজ অনেকটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ।
“আরেহ না , আর কেউ বাকি নেই । আমি বলছিলাম কি আসলে আমি তো কালকে.........”
“দেখ আমি এতো কথা বুঝি না কাল তুই সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করবি বেস। এখন আমি যাই, টাটা”।
তাউসিফ হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ ঠিক আছে । আগামীকাল সবার সাথেই দেখা হবে।আল্লাহ্‌ হাফেজ” ।

ঘরে ঢুকতেই দেখে বাসায় শুধু আম্মু-আব্বু আছেন । বড় আপু একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছে । রাতের খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ভাবছে,
“কোথাও যেন কিছু একটা বাদ পড়ে আছে,তাউসিফের কথায় মনে হচ্ছে আরও একজনের অস্তিত্ব এখনও বাকি আছে কিন্তু কে সে ? নাহ! এমন হলে তো তাউসিফ আমাকে বলতো”।

বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় হাঁটা শুরু করলো । হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন রাজকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো, গালে একটা উষ্ণ চুমু অনুভব করলো রাজ । আচমকা পেছন ফিরতেই দেখে বড় আপু । ছোট ভাইটার সাথে কিছুক্ষন গল্প আর আদর করলো, শেষে “লাভ ইউ মাই সুইটু”বলে ঘুমুতে চলে গেলো ।

এক মুহূর্তের জন্য পুরো ব্যাপারটাই কেমন পরিচিত মনে হল । এর আগেও যেন ঠিক এইভাবেই কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরত, গালে চুমু দিতো।“ লাভ ইউ মাই সুইটু” এই ধরণের কিছু একটা এর আগেও রাজ কাউকে বার বার বলতো । খুব ভয়ানক একটা অস্থিরতা রাজকে মনে মনে খেয়ে যাচ্ছে এখন । কি হচ্ছে এসব? প্রত্যেকটা স্মৃতি এখন এক একটা প্রশ্ন রাজের কাছে । দরজাটা বন্ধ করে পুরো রুমে ছটফট শুরু করে দিলো । সারাটা রাত ঘুম হল না শুধুমাত্র এই কটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ।

পরদিন তাউসিফের সাথে দেখা হতেই পুরো ব্যাপারটা ওকে জানায় । তাউসিফ কিছুক্ষন চুপ করে ছিল তারপর বলল, “আচ্ছা ওটা নিয়ে পরে কথা হবে আগে সবার সাথে তোর দেখা করিয়ে আনি”।
দুজনেই একটা রিকশায় উঠে পড়লো । রিকশা থামল একটা নির্জন জায়গায় । তাউসিফ রাজের হাত ধরে ধীরেধীরে সামনে হাঁটছে । রাজ বুঝে উঠতে পারলো না তাউসিফ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । রাজ বলে উঠলো,
“কিরে এই কোথায় নিয়ে এসেছিস আমাকে? অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনা ওদের কাউকেই তো দেখছি না । ওরা সবাই কোথায় ?”
কিছুদূর আসার পর তাউসিফ আঙ্গুল দিয়ে সামনে দেখিয়ে দিলো । এক পলক সামনে তাকাতেই রাজের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হল । চারটা কবর । কবরের উপর খুদাই পাথরে একে একে লেখা আছে অপূর্ব, অহনা, অরণ্য আর অধরার নাম । রাজ কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছিল ওর সাথে, পুরো ব্যাপারটাই উলটপালট লাগছে ওর কাছে । তাউসিফ রাজের কাঁধে হাত রেখে এবার মুখ খুলল ।

“দেখ দোস্ত এখন আমি যা বলব তা হয়তো মেনে নিতে তোর খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সত্যটা জানা তোর প্রয়োজন । গত দুই বছর আগে তোরা সবাই একটা জীপে করে পিকনিকে যাচ্ছিলি । তুই ড্রাইভ করছিলি আর বাকিরা গান-আড্ডায় মেতে ছিল । কিন্তু মধ্যপথে তোর একটা ভুলের কারনে গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে । সবাই ওই এক্সিডেন্ট এ মারা যায় , শুধু বেচে যায় তুই আর অপ্সরা”।
“অপ্সরা” নামটা শুনে রাজের খটকা লেগে যায় । এখন অনেকটা আঁচ করতে পারছে কার স্মৃতি গত রাতে তাকে এতোটা চিন্তিত করেছিল । অপ্সরা রাজের প্রেমিকা । কীভাবে কি হল এখনও রাজের মাথায় আসছে না । রাজ কীভাবে ওকে ভুলে গেলো, অপ্সরা যদি বেচেই থাকে তাহলে কই এখন? আর যোগাযোগ কেন হল না আমাদের মাঝে? একের পর এক নিজেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে নিজেকে ।

“তোদের দুইজনকে হসপিটালে নেয়া হয়েছিল । তুই আর অপ্সরা অনেকটা সুস্থ হয়েছিলি । কিন্তু পরে জানতে পারলাম কেউ একজন এসে অপ্সরাকে ডিসচার্জ করে নিয়ে যায় । এরপর থেকে অপ্সরা আর ওর ফ্যামিলিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।নাম্বারটাও অফ ছিল । মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়াতে তুই অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলি । এতোগুলো কষ্ট তুই সহ্য করতে পারবি না জেনে আমরা কেউ তোকে আর কিছু জানাই নি । আজ দুই বছর পর তোর অনেক কিছুই মনে পড়ে যাওয়াতে ভাবলাম সত্য আর চাপা দেয়াটা ঠিক হবে না, তাই সব জানিয়ে দিলাম”।

রাজ পুরোপুরি নির্বাক হয়ে মাটিতে বসে পড়লো । চোখ দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে । যাদেরকে সাথে দেখা করবে বলে এতোটা পথ পাড়ি দিলো, পুরো যাত্রা জুড়ে যাদের স্মৃতিতে মনটা উচ্ছল হয়ে উঠেছিল, একটা ভুলের কারনে আজ তারা সবাই ওর উপর অভিমান করে ওকে ছেড়ে চলে গেলো । কিন্তু অপ্সরা কেন এমন করলো? কি দোষটা ছিল যে এভাবে কিছু না বলে চলে গেলো? সব কিছুই তো জানা হয়ে গেলো কিন্তু এরপরও হাজারো প্রশ্ন হৃদয়ের কোঠরে ছুরি দিয়ে চির চির করে ছিদ্র করে যাচ্ছে । বুকফাটা আর্তনাদ গুলো চিৎকার করে বলতে চাইছে কেন এমন হল? কেন আমার সব মনে পড়ে গেলো? ভালোবাসার মানুষগুলো কীভাবে এতোটা অভিমানী হয়ে গেলো?

রাজ এখনও মাটিতে বসে আছে । ওর চারপাশটা জানি কেমন ভারি হয়ে উঠেছে । আকাশটা আজ কাঁদছে, কাঁদছে রাজের চোখজোড়া । এই দুই কান্নার মিলনে রাজের অশ্রুগুলো আর খুঁজে পাওয়া গেলো না । আজ কোথাও কেউ নেই। চারিদিক কেবল শুন্যতা আর শুন্যতা ।

গল্পটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!

ღjrk

ভালোবাসা অবাক চোখে

ভালোবাসা অবাক চোখে
লিখেছেন- Sesh rater adhar

অনেক দূর থেকে দেখেই রক্তিম নীলিমা আসছে বুঝতে পারল । রক্তিম ১০ টাকার বাদাম কিনে তা খাচ্ছিল। নীলিমা কাছে আসাতেই জিজ্ঞাসা করল-কেমন আছো ? বাদাম খাবা ?
নীলিমা রক্তিম এর দিকে তাকিয়ে রইল । রক্তিম বুঝল না নীলিমার মনের অবস্থা রাগের দিকে না ঠাণ্ডা । আবার জিজ্ঞাসা করল - বাদাম খাবা না?
নীলিমা আবার অনেক রাগে রাগে তাকাল রক্তিমের দিকে ।
রক্তিম বলল- কি হল? কথা বলবা না ?
এতক্ষণে নীলিমা বলল - তুমি ছোলাসহ বাদাম খাচ্ছ কেন ?
- ওহ ! sorry . ভুল হয়ে গেছে ।
-ভুল হয়ে গেছে মানে ? এক ভুল মানুষ কতদিন করে ?
- আমার বাদাম এর ছোলা ছাড়াতে ঝামেলা লাগে ।
- তাহলে বাদাম খেতে কে বলছে ?
- আমার ভাল লাগে ।
- ছোলাসহ খেতে , তাই না ?
- না , খারাপ তো লাগে না । দেখ, বাদাম এর ছোলাও তো টাকা দিয়ে কিনি ।
- চুপ কর । কথা বইলো না ।
- আচ্ছা।

রক্তিম ঠোঁট ২ টা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল । নীলিমা রক্তিম এর পাশে বসল। বসে বলল - মুখটাকে এমন অদ্ভুত করে রাখছ কেন ? হাত নামাও মুখ থেকে ।

রক্তিম হাত নামাল ।

নীলিমা বলল - এবার কথা বল ।
রক্তিম বলল- কি বলব ?
- এতদিন পর দেখা হল, কিছুই বলার নাই ?
- আছে ।
- কি?
- i love u
- তোমাকে না টি -শার্ট পড়ে আসতে বলছি , এই পচা শার্ট পরে আসছ কেন ?
- sorry .ভুল হয়ে গেছে ।
- আমাকে চিনতে পারতেছ ?
- পারব না কেন ?
- না । ভাবলাম তাও ভুলে গেছ নাকি !
- কি যে বল তুমি ? আচ্ছা তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছ?
- না ।
- তাহলে এভাবে কেন কথা বলতেছ ?
- কিভাবে বলতেছি ?
- সবসময় যেভাবে বল সেভাবে বল ।
- আমি সেভাবেই বলতেছি , তোমার ভাল লাগতেছে না ।
রক্তিম কিছু বলল না । চুপ করে রইল । দুজন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নীলিমা বলে উঠল - নাহ ! তুমি এমন কেন ? আমার মনের মতন কিছুই করতে পারো না । তোমার কিছুই মনে থাকে না......
- কি হল আবার ?
- কি হবে , কিছুই হয় নায় । তোমার চুলের ঐ অবস্থা কেন? মানুষের চুলের অবস্থা এমন থাকে? একটা কথা কতদিন তোমাকে বলতে হয় ? আমার সাথে দেখা করতে আসছো এতদিন পর, আজ কে অন্তত চুলটা ঠিক করে আসতে পারতে !
- ভুল হয়ে গেছে sorry !!
- এই এত sorry sorry করবা না'ত ।
- তুমি কি রাগ করতেছ?
- তো কি করব ?
- ভাল করে কথা বল না , Please...
- আমি ভাল করে কথা বলতে পারি না ।

রক্তিম কি বলবে বুঝতে পারল না । তাই আবার চুপচাপ বসে রইল ।
নীলিমার রাগ বোধহয় আরও বাড়ছে । রক্তিম কে বলল - তুমি পাশ থেকে সরো তো । আমার ভাল লাগছে না ।
- কেন?
- তোমাক সরতে বলছি সরো ।
- না আমি তোমার পাশেই বসে থাকব।
- সরতে বলছি না তোমাকে । তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে ।
- দেখ , এমন কইরো না please.
- কি করতেছি ? তোমাকে আমার ভাল না লাগলেও ভাল বলতে হবে? তুমি আমার পাশ থেকে সরো তো ।
- plz, আর এমন করব না ।
- কেমন করবা না? তুমি তো আবার এমন করবা । তোমাকে চুল ঠিক করে রাখতে বলছি , একটা দিন করলা না । চুল দেখলে মনে হয় পাখির বাসা । বলছি ছোলাসহ বাদাম না খেতে, তুমি ওগুলা সহই খাবা । বলছি t-shirt পরতে , তুমি পরই না । বল কি t-shirt পরলে নাকি ছাগল এর মতন লাগে।
এই, তোমার কোন প্রবলেম আছে আমার ছাগল কে ভাল লাগলে ??
তোমাকে আমার ভাল লাগলেই তো হল । আর কাকে দেখাতে হবে তোমার?
- কাউকে না ।
-তাহলে আমার কথা শুননা কেন?
- শুনি তো ।
- কি শুনো তুমি? কি শুনো ?
- সবই তো ।
- এই আজ কত তারিখ জানো ?
- জানি তো
- তোমার মনে আছে আজকে কি? আজ কেন তোমাকে আসতে বলছি, আমার সাথে দেখা করতে বলছি?
- কিসের জন্য ?
- তাও জাননা তুমি?
- বল না plz. কেন?

নীলিমা এবার আরও রেগে গেল । কিছুক্ষণ পর কান্না শুরু করে দিল ।
রক্তিম বলল - এই , কি হইছে তোমার ?
বলে রক্তিম নীলিমার মাথায় হাত রাখল । নীলিমা রক্তিম এর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল - plz... তুমি আমাকে ছুঁইও না তো । আমি আর পারতেছি না ।
আমার তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা ইম্পসিবল। তোমার মতন ছেলের সাথে আমি relation রাখতে পারব না । plz leave me...

রক্তিম বলল - প্লিজ এত রাগ করো না প্লিজ ।
- বললাম না তোমাকে আমি তোমার সাথে relation রাখব না । তুমি যাও এখান থেকে ।
রক্তিম কিছু না বলে একটু দূরে সরে গেল । তারপর ব্যাগ থেকে কিছু বের করল । নীলিমার সামনে ৬ টা গোলাপ ধরে বলল- happy propose day !!! এই দিনে এই ছাগলটাকে propose করছিলা । আজ ১ বছর হল । এই ছাগলটা এখনও মানুষ হয় নাই , sorry !!

নীলিমা চোখ মুছে গোলাপ গুলো নিল । একটু হাসি ফুটল নীলিমার মুখে । নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বলল - এতক্ষণে দিলা কেন?
তুমি জানতে, তাই না? তবে আগে বললে না কেন ? আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভাল লাগে তাই না? কেন এমন করলা তুমি?
- তুমিও তো আমকে কষ্ট দিলা । ওওও তোমার জন্য আরও একটা জিনিস আনছি ।
রক্তিম ব্যাগ থেকে একটা চকবার আইসক্রিম বের করল ।

নীলিমা হাতে নিল আইসক্রিমটা । দেখল আইসক্রিম গলে পানি হয়ে গেছে। নীলিমা বলল - এটা তো আগে দিতে পারতে? দেখো কি অবস্থা !!!!
গোলাপ গুলো ও দেখছ ব্যাগ এর ভিতর চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ?
- sorry ! মনে ছিলনা ।
- তোমাকে নিয়ে কি যে করি? তুমি এমন পাগল কেন বলতো?

অবশ্য তোমার পাগলামির জন্যই তোমাকে আমি এত ভালবাসি । i love you. এই যে গলে যাওয়া চকবার , চ্যাপ্টা গোলাপ দিছো তাতে আমার যতটা ভাল লাগছে, ভাল গুলো দিলে এতটা লাগত না ।

বলেই নীলিমা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে বলল - আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি জান ।
- আমিও।

নীলিমা তারপর ২ টা t-shirt বের করল । বলল- নাও, তোমার জন্য আনছি।
এখন থেকে এগুলা পরবে, বুঝছ ? আর যেন ভুল না হয় । আর এগুলা পরলেই আমার কথা বেশি করে মনে পড়বে । মনে হবে আমি তোমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছি, বুঝতে পেরেছ?
- হ্যাঁ । থাঙ্কস। i love you, জান ।

রক্তিম আবার ও বাদাম নিয়ে ছোলাসহ খাওয়া শুরু করল । নীলিমা হেসে বলল - এই আবার? দাও আমি ছুলে দেই বাদাম আর তুমি খাও ।

নীলিমা বাদাম ছুলে দিতে লাগল আর রক্তিম খেতে লাগল । আবার হয়ত ঝগড়া হবে একটু পর । রক্তিম আবার উলটা পাল্টা কিছু করবে । নীলিমা বলবে রক্তিমকে ছেড়ে যাবার কথা । কিন্তু সব আবার একটু পর ঠিক হয়ে যাবে । এইতো ভালোবাসা । মধুর ভালোবাসা!!!!!!!



ভাললাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!!

ღjrk

শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

অপেক্ষা

ღঅপেক্ষাღ
ණলিখেছেনঃ আল আমিন মোহাম্মদ,

অনেকক্ষণ ধরে কফিশপে বসে আছি।কফি খাচ্ছি আর বাইরের তুষারপাত দেখছি। মওসুম শুরুর এই সময়টায় সিডনীতে তুষারপাতের ঘটনা খুবই সাধারণ। এই দৃশ্যটা অন্য সময় দেখতে বেশ ভাল লাগলেও এখন খুবই বিরক্ত লাগছে। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সবসময়য় সম্ভব না, অন্তত কারো জন্য অপেক্ষা করার সময় তো নয়ই। কিছুক্ষন পরপর গেটের দিকে তাকাচ্ছি । অনেকেই আসছে, যাচ্ছে। কিন্ত না, আমি যাকে খুঁজছি তার দেখা মিলছে না। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে আমি আসলে এক ললনার জন্য বসে আছি । সুমনা ওর নাম। ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। অথচ এ পর্যন্ত আমরা কেউই কাউকে দেখিনি । পারিবারিক ভাবেই সবকিছু হয়েছে । অবশ্য এখন দেখাশোনার ব্যাপারটা ফাউ । একারনে প্রথম প্রথম আমি আসতে চাইনি। কিন্ত মা জোর করে পাঠিয়ে দিল। কারন যদি বিয়ের পরে বউ পছন্দ না হয়, তখন তাদের দোষারোপ করব। আমি বলি, কেন তোমরা তো আগেই সবকিছু ঠিক করে ফেলেছ? তাতে কি হয়েছে? যদি তোর পছন্দ না হয় তবে বিয়ে ক্যানসেল। আচ্ছা ঠিক আছে, একদিন গিয়ে দেখে আসব। একদিন নয় তুই আজকেই যাবি। লিঙ্কন স্ট্রীটের ওই কফিশপে ওকে আমি পাঁচটায় আসতে বলেছি। আমি চোখ কপালে তুলে বলি -আজকেই, তাও পাঁচটায়। মা দেখো, এখন বাজে সাড়ে চারটা। এখন বের হতেই বাজবে সোয়া পাঁচটা। আর পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাচটা। মা তুমি ওনাকে বলে দাও, আজ না অন্যদিন। মা বিরক্ত হয়ে বলে-ওর অন্যদিন নাকি কাজ আছে। আজকেই ফ্রী। ও,তাহলে তোমার কাছে শুধু ওর কথারই দাম আছে । কাজ হচ্ছে না দেখে আবার বলি, বাইরে তুষার পড়ছে এখন বেরোলে নিশ্চিত ঠান্ডা লাগবে। তাছাড়া আজ আমার অনেক কাজ আছে ইত্যাদি। মা রাগ করে বলেন, তুই আসলেই তোর বাবার মত । খালি ক্যাচক্যাচ করিস। যা বলেছি, তাই কর। আর যদি তোর একদমই ইচ্ছে না থাকে, তবে নিজে ফোন করে ওকে আসতে মানা করে দে। আমি চললাম ।

মা'র কথামতো কফিশপে বসে আছি। এখানে লোকজন খুব একটা নেই। এদিকে সময় যেমন বাড়তে লাগল, বাইরে তুষারপাতও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু মেয়েটির আসার নাম নেই। আমার রাগ হতে শুরু করলো। মেয়েটি তাহলে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। ঠিক আছে, মহারাণী! সেয়ানা আমিও কম নই। আর আমি তোমার বাধ্যগত ছাত্র নই যে আমি সারাদিন বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আমি তোমার প্রেমেও পড়িনি যে, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। খালি মায়ের পছন্দ বলে বিয়েটা করার জন্য রাজি হয়েছি।

একঘন্টা পার হয়ে গেছে । ভাবলাম মা'কে জানিয়ে রাখি যে, তার হবু বৌ'মা মনে হয় ভুলে গেছে যে তার বেকুব হবু স্বামী তার দর্শন লাভের আশাই কফিশপে তপস্যা করছে। ফোন দিতেই করা একটা ধমক লাগাল মা, আর কিছুক্ষন কেন অপেক্ষা করছি না? সাথে এটাও বলতে ভুললেন না, যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি, তখন তো আর সময়ের কোন বালাই থাকে না। আমি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে ভাবি, বেগম রোকেয়া বৃথা চেষ্টা করেছেন। নারীজাতির উন্নতি হবে কি ভাবে? বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর নারীর জন্য অপেক্ষা কি এক জিনিস? মজনু, দেবদাসের কথা সেই মুহূর্ত্বে মনে করে খুব হাসি পেল। আহ বেকুবগুলো প্রেম করে কি ভুলটায় না করেছিল। হঠাৎ দেখি মায়ের ফোন। মা জানাল, সে আসছে। আমি যেন কোথাও না যাই। ফোন রেখে ভাবি, আমার কপালে সাঙ্ঘাতিক দুঃখ আছে। এই মেয়ে বিয়ে হওয়ার আগেই শাশুড়িকে পটিয়ে ফেলেছে, বিয়ের পরে না জানি আরও কি করবে?
মা'য়ের নিষেধ উপেক্ষা করার মত সাহস আমার নেই। শেষে চোখ বন্ধ করে ভেড়া গোণা শুরু করলাম। হঠাৎ মিহি গলার স্বর শুনে ধ্যান ভাংলো। কি ঘুমুচ্ছিলেন বুঝি?-না একদম না। ‘আমি সুমনা, আপনি নিশ্চয় আকাশ’। ‘জি বসুন প্লিজ’। কথাটা বলতে গিয়ে ওর দিকে ভালোমতো তাকালাম। তাতেই যেন আমার সর্বনাশটা হয়ে গেল। পরিবেশ হালকা করার জন্য ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ভাবে চিনলেন? এই প্রচণ্ড তুষারপাতের বিকেলে বিয়ে পাগল লোক ছাড়া আর কে বাইরে বের হবে বলুন? আর এই শপে এই মুহুর্ত্বে আমি আর আপনি ছাড়া কেউই নেই । তাকিয়ে দেখি আসলেই তো। তাছাড়া অবশ্য আন্টি আপনার একটা ফটো আমাকে দিয়েছিল। তবে আমি খুব সরি। আমার এতটা দেরি করাটা একেবারেই উচিত হয়নি। আসলে কি করবও বলুন? খুবই দরকারি একটা কাজ ছিল । না করে আসলে অনেক ঝামেলা হয়ে যেত। আমি বিগলিত হয়ে বলি, না না ঠিক আছে। কিন্তু মনে মনে ভাবি, সুন্দরী তোমার দেখার পরে একঘন্টা কেন সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারি, ওই মুখের মায়ায় আমি আমি দেবদাস হতেও রাজি। হয়ত আরো কিছু হতে চাইতাম, যদি না ও পাশ থেকে-আপনি কি কিছু বলবেন, না কি? আর কফিশপে ডেকে কি না খেয়ে রাখবেন? আমি ব্যস্ত হয়ে ওয়েটারকে ডাকি। কারন সুন্দরীদের কথা অগ্রাহ্য করতে নেই......



ღভাললাগলে লাইক কমেন্টস শেয়ার করুণღ

ღjrk